তাহযীরুন্নাস সহ অগণিত কিতাবের নাম ভেঙ্গে কাদিয়ানীদের অপপ্রচার

0
তাহযীরুন্নাস সহ অগণিত কিতাবের নাম ভেঙ্গে কাদিয়ানীদের অপপ্রচার

দারুল উলুম দেওবন্দের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা কাসেম নানুতুবী (রহ.) (মৃ. ১২৯৭ হি.)-এর ‘তাহযীরুন্নাস’ কিতাব থেকে কাদিয়ানীরা ‘ইজরায়ে নবুওয়তের’ (নবুওয়তের ক্রমধারা অব্যাহত) ইস্তিদলাল করার চেষ্টা করে যেমন, তেমনি পবিত্র কুরআনের সূরা নিসা আয়াত নং ৬৯ এর مع النبيين و الصديقين আর মুসলিম শরীফের ‘কিতাবুল ফিতান’ হাদীস নং ৭০৭৮ এর عيسى نبي الله চার চার বার এসেছে, উপবাক্যটি দ্বারাও ইজরায়ে নবুওয়তের ইস্তিদলাল করে থাকে…!

  • (আসলে তাহযীরুন্নাস কিতাবটির কোন কথাটিকে কাদিয়ানীরা বেঁকিয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে? পড়তে এখানে ক্লিক করুন – https://markajomar.org/?p=564)

এখন আমার প্রশ্ন হল, কাদিয়ানীদের ঐ সকল ইস্তিদলাল কি সঠিক বা বাস্তবসম্মত? আমার এ প্রশ্নটি বিশেষতঃ বেরেলভি মাসলাকের সেসব ভাই ও বন্ধুদের প্রতি যারা তাহযীরুন্নাস এর “যদি ধরে নেয়া হয় যে….” এরূপ খণ্ডিত ইবারত (اگر بالفرض آپ کے زمانہ میں بھی کہیں اور کوئی نبی ہو جب بھی آپ کا خاتم ہونا بدستور باقی رہتا ہے۔) দিয়েই কাদিয়ানীদের কৃত ইস্তিদলালের দরুন মওলানা কাসেম নানুতবী (রহ.)-কে ‘কাফের’ আখ্যা দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না! এখন আমার প্রশ্নের উত্তর যদি ‘হ্যাঁ’ হয়—তাহলে একই রকম ইস্তিদলালের কারণে তবে কি পবিত্র কুরআন এবং মুসলিম শরীফের হাদীসও অভিযুক্ত হচ্ছেনা? অর্থাৎ তখন কি আপনারা এটাও মেনে নিবেন যে, কুরআন এবং হাদীসের আলোকে কাদিয়ানীদের উল্লিখিত ইস্তিদলাল সঠিক? নাউযুবিল্লাহ।

মোটেও না।

বরং আপনি একমত হন আর যাই হোন; সত্য এটাই যে, কাদিয়ানীরা তাদের মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর নবুওয়ত দাবীর বৈধতা খুঁজতে পূর্ববর্তী আরও অনেক বুযূর্গ আলেমদের কিতাবের নাম ভেঙ্গে ইস্তিদলাল চালিয়ে দিয়েছে, তাদের মধ্যে মাওলানা কাসেম নানুতবী (রহ.) এর রচনাটিও অন্যতম। পবিত্র কুরআন এবং হাদীসকে পর্যন্ত তারা ছাড়েনি, ইচ্ছেমতো তাবিল আর অপব্যাবহার নিশানায় পরিণত করেছে। সুতরাং, মাওলানা কাসেম নানুতবী (রহ.)-এর কিতাবটির মূল ভাষা ফার্সী হলেও এর উর্দূটাও শেষ পর্যন্ত পড়ে দেখুন, তবেই মনে হবে আকাশটা যেন আপনার মাথার উপর ভেঙ্গে পড়েছে। আপনি অবাক হবেন! আর অবাক হওয়ারই কথা, কেননা তিনি কিতাবটি আকীদায়ে খতমে নবুওয়তের পক্ষেই দলিল ও যুক্তি দিয়েই লিখে গেছেন। তিনি নবীকরীম (সা.)-এর খাতামিয়তকে একই সাথে যামানিরুতবিমাকানি (যুগ, মর্যাদা ও স্থান) সর্বোপরিভাবে সাব্যস্ত করে গেছেন। সব চেয়ে বড় কথা হল, তিনি তাঁর একই পুস্তকে পরিষ্কার করে লিখে গেছেন, যে রাসূল (সা.)-কে মুক্ত ও স্বাধীন অর্থে খাতামান নাবিয়্যীন স্বীকার করেনা সে কাফের। যেমন একই বইয়ের ৩৭ নং পৃষ্ঠায় পরিষ্কার এও লিখেছেন যে, اطلاق خاتم اس بات کو مقتضی ہے کہ تمام انبیاء علیہم السلام کا سلسلہ نبوت آپ پر ختم ہوتا ہے অর্থাৎ “খাতাম (خاتم)-এর প্রয়োগ এই কথারই দাবী রাখে যে, হুজুর (সা:)-এর উপরই সমস্ত নবীর নবুওয়তেরধারা শেষ হয়ে গেছে।” (তাহযীরুন্নাস, হুজ্জাতুল ইসলাম একাডেমী ওয়াক্বফে দারুলউলুম দেওবন্দ, সাহারানপুর হতে প্রকাশিত)। স্ক্রিনশট থেকে দেখুন,

.

মাওলানা কাসেম নানুতবী (রহ.) আরও লিখেছেন, ‘রাসূল (সা.)-কে শেষ নবী অস্বীকারকারী কাফের। এই আকীদা ‘খাতামান নাবিয়্যীন’ সম্বলিত আয়াত, হাদীস ও ইজমা’য়ে উম্মত দ্বারা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত।’ (তাহযীরুন্নাস-এর নবম পৃষ্ঠার শেষ থেকে এগারতম পৃষ্ঠার শুরু)। নিচে স্ক্রিনশট থেকে দেখুন,

.

তিনি আরো বলেন, ‘আমার দীন ও ঈমান এই যে, রাসূল (সা.)-এর পরে অন্য কারো নবী হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। যে এতে কোনো প্রকারের তাবীল (ব্যাখ্যা) করবে তাকে কাফের মনে করি।‘ (মুনাযারায়ে আজীবাহ পৃষ্ঠা নং ১০৩; জওয়াবে মাখদূরাত পৃষ্ঠা নং ৫০ আরো দেখুন, মুতালাআয়ে বেরেলবিয়্যাত ১: ৩০০-৩২২)

আসুন! এখন থেকে ঐ একই কারণে আমরা কুরআন এবং হাদীসকেও দোষারোপ করতে থাকি!!! লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ!!

উল্লেখ্য, জনৈক শায়খ মরহূম’ তাহযীরুন্নাস’ কিতাবের তিন জায়গা থেকে মন মতো ইবারত উঠিয়ে এনে ও আগপাছ কেটেকুটে ‘হুসামুল হারামাইন’ নাম দিয়ে তৈরি করে গেছেন শতাব্দীর জঘন্য খেয়ানতপূর্ণ রচনা। আফসোস! এর মুতা’আল্লেকীন ও ভক্তবৃন্দ এ তথ্যপ্রযুক্তির যুগেও অন্ধকারে পড়ে আছে। একটিবারের জন্যও তারা যাচাই-বাছাই করে দেখেনা যে, হুসামুল হারামাইনে উদ্ধৃত ইবারতটি কতখানি স্বচ্ছ এবং লিগ্যাল?

‘তাহযীরুন্নাস’ কিতাবের বাস্তবতা ও শায়খ মরহুমের জঘন্য মিথ্যাচার তুলে ধরার জন্য বিক্ষিপ্ত ও স্বতন্ত্র অনেক কিতাব লেখা হয়েছে। বিশেষতঃ হযরত মাওলানা ইদ্রিস কান্দলভী, সারফারাজ খান সফদার ও শহীদে ইসলাম ইউসুফ লুধিয়ানাবি রাহিমাহুমুল্লাহ স্বতন্ত্র রিসালা লিখেছেন।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক
মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here