মুন্সী জফর আহমদ ছিলেন মির্যা কাদিয়ানীর একজন ঘনিষ্ঠ মুরিদ। আজকে তারই উদ্ধৃতিতে মুহাম্মদ সাদিক এর বই “যিকরে হাবীব” থেকে চমৎকার একটা ঘটনা তুলে ধরছি।
উল্লেখ্য, মুহাম্মদ সাদিককে মির্যা কাদিয়ানীর যুগে কাদিয়ানীরা “মুফতি” সম্বোধন করত। তাই তার বইতেও দেখবেন مفتى محمد صادق এভাবেই লিখা। মুসলিম উম্মাহার অন্যতম সুনান গ্রন্থ “তিরমিজি শরীফ” এর রচয়িতা ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ঈসা আত তিরমিজি রাহিমাহুল্লাহ (২০৯-২৭৯ হিঃ) আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ‘শামায়েল’ (شمائل) বর্ণনা করে ‘শামায়েলে তিরমিজি’ (شمائل ترمزى) সংকলন করেছেন, ঠিক তারই নমুনায় এই কাদিয়ানী মুফতী(?) মুহাম্মদ সাদিক মির্যা কাদিয়ানীরও ‘শামায়েল’ রচনা করে সেটির নাম দিয়েছেন ‘যিকরে হাবীব’ (ذكر حبيب) তথা ‘বন্ধুর আলোচনা’। বাংলাদেশের বিবাড়িয়া সদর জেলার কান্দিপাড়া গ্রামের মৌলভিপাড়ায় স্থানীয় পথভ্রষ্ট কথিত পীর আব্দুল ওয়াহিদকে (যিনি বর্তমান কাদিয়ানী আমীর আব্দুল আউয়ালের নানী ‘হোসনে আক্তার ভানু’ সাহেবার পিতা) “প্রধান” (ন্যাশনাল আমীর) করে ১৯১৩ সালে ‘ব্রাহ্মণবাড়ীয়া আঞ্জুমানে আহমদীয়া’ নামে প্রথম যখন কাদিয়ানী জামাতের গোড়াপত্তন হচ্ছিল তখন সেখানে ভারতের কাদিয়ানের ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দলও উপস্থিত ছিল, কথিত মুফতি মুহাম্মদ সাদিক তখন কাদিয়ানের পক্ষ থেকে নতুন প্রতিষ্ঠিত পূর্ব বাংলার কাদিয়ানী জামাতের প্রধান পৃষ্ঠপোষকতার ভুমিকায় ছিলেন।
আসুন সেই মুফতি(?) মুহাম্মদ সাদিক এর বই থেকে একটু অংশ পড়া যাক, কথিত মুফতি মুহাম্মদ সাদিক লিখেন, “মুন্সী জফর আহমদ সাহেব নিজেই আমাকে বলেছেন, আমি হযরত সাহেবের (মির্যা কাদিয়ানীর) নিকট আপনার বিরুদ্ধে (অর্থাৎ বইটির লিখক মুফতি সাদেকের বিরুদ্ধে) অভিযোগ নিয়ে গিয়েছিলাম। আমি মনে করলাম যে, তিনি আপনাকে ডাকবেন এবং (আপনার থিয়েটার দেখা নিয়ে) আপনাকে সতর্ক করবেন। কিন্তু হুযুর (মির্যা সাহেব) শুধু একথাই বললেন যে, একবার আমিও (থিয়েটার দেখতে) গিয়েছিলাম, যাতে অবিজ্ঞতা লাভ হয়।” (যিকরে হাবীব পৃষ্ঠা নং ১৪ অথবা পৃষ্ঠা নং ১৮)।
সে যাইহোক, মির্যা কাদিয়ানী সাহেব থিয়েটার দেখেছিলেন সে কথাই তার একান্ত কাছের মুরিদের নিকট তিনি ব্যক্ত করে গেছেন। আর সেটা তার কথিত শামায়েল (জীবনচরিত) গ্রন্থে তারই আরেক ঘনিষ্ঠ সহচর কাদিয়ানী মুফতি মুহাম্মদ সাদিক উদ্ধৃত করেছেন। একই পুস্তকের উপরোল্লিখিত পুরো লিখাটা পড়ে দেখুন, গ্রন্থকার একটু উপরেই নিজের থিয়েটার দেখা সম্পর্কে পরিষ্কার লিখেছেন। (উর্দূ) ایک شب دس بجے کے قریب میں تھیئٹر میں چلا گیا (উচ্চারণ) এক শব দশ বাজে কে করিব মাই থিয়েটার মে চলা গিয়া… অর্থাৎ এক রাতে দশটার কাছাকাছি সময় আমি থিয়েটারে চলে গিয়েছিলাম।
সারকথা, মির্যা কাদিয়ানীর নিকট যখন মুফতি মুহাম্মদ সাদিক সাহেব সম্পর্কে থিয়েটার দেখার অভিযোগ করা হল তখন তিনি অভিযোগকারীকে বললেন, (উর্দূ) ایک دفعہ ہم بھی گئے تھے اور اس سے معلومات حاصل ہوتے ہیں (উচ্চারণ) এক দফা হাম ভি গিয়ি থি অর উছ ছে মালুমাত হাছিল হোতে হেঁ। অর্থাৎ “একবার তো আমিও গিয়েছিলাম যাতে এর দ্বারা (তথা থিয়েটার দেখা দ্বারা) অবিজ্ঞতা লাভ হয়।” আমি জানি না, বর্তমানে কাদিয়ানীরা জীবনে একবারের জন্য হলেও থিয়েটার দেখাকে “সুন্নাতে কাদিয়ানী” সাব্যস্ত করে কিনা?
মির্যা কাদিয়ানীর থিয়েটারে যাওয়া কিবা নর্তকীদের নাচ-গান উপভোগ করা ইত্যাদি নিয়ে এ মুহূর্তে আমার কোনো প্রশ্ন নয়, সেটা যার যার ব্যাপার। এখানে আমার প্রশ্নটি তার মুরিদদের উদ্দেশ্যে। প্রশ্ন হল, মির্যা কাদিয়ানীর থিয়েটারে যাওয়া সম্পর্কিত বক্তব্যটি একই বইয়ের আলাদা দুই সংস্করণে ভিন্ন ভিন্ন দুটি পৃষ্ঠায় কেন? হার্ডকপিতে ১৮ নং পৃষ্ঠায় আবার পিডিএফ কপিতে ১৪ নং পৃষ্ঠায়, এত এলোমেলো কেন? কান্দিপাড়ার নতুন একজন নও মুসলিমের (কাদিয়ানী থেকে ২০১৬ সালে মুসলিম হওয়া) একটা কথা মনে পড়ে গেল, তার সাথে ২০১৯ সালে আমার বিবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ থানার তারুয়া গ্রামে দেখা হয়। কথাবার্তার এক পর্যায়ে তিনি বললেন, কাদিয়ানীদের বাংলা বইগুলোরও একই অবস্থা! প্রতি এডিশনে তারা পৃষ্ঠা নাম্বার এলোমেলো করে দেয়। আলেমরা যখন তাদের বই থেকে রেফারেন্স দেয় তখন আমরা আমাদের স্থানীয় মু’আল্লিমের নিকট রেফারেন্স মিলানোর জন্য যেতাম মু’আল্লিম সাহেব আমাদেরকে অন্য আরেকটা এডিশন বের করে বলতেন, দেখ! এধরণের কোনো কথাই আমাদের বইতে নেই…! মোল্লারা আমাদের সম্পর্কে মিথ্যা বলেছে!! আমি জানিনা, আসলে কি এ উদ্দেশ্যেই এসব করা হচ্ছে? যিকরে হাবীব পৃষ্ঠাটিতেও পৃষ্ঠা নাম্বার দুই রকম…! এর পাছে রহস্যটা কী? জানার জন্য প্রশ্ন!!
লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক
প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী