Home সাধারণ রাফউল ইয়াদাইনের শর’ঈ হুকুম সংক্রান্ত বারোটি বিশুদ্ধ প্রমাণ

রাফউল ইয়াদাইনের শর’ঈ হুকুম সংক্রান্ত বারোটি বিশুদ্ধ প্রমাণ

0
রাফউল ইয়াদাইনের শর’ঈ হুকুম সংক্রান্ত বারোটি বিশুদ্ধ প্রমাণ

সালাতে রাফউল ইয়াদাইন-এর শরঈ হুকুম

1 ইমাম আলাউদ্দীন আল-কাসানী আল হানাফী (মৃত. ৫৮৭ হিজরী) সংকলিত ❝আল বাদাউ আস সানাউ (البدائع الصنائع)❞ কিতাবুস সালাত অধ্যায় (খণ্ড ২ পৃষ্ঠা ৪৮) হতে ((وروي عن ابن عباس رضي الله عنهما أنه قال إن العشرة الذين شهد لهم رسول الله صلى الله عليه وسلم بالجنة ما كانوا يرفعون أيديهم إلا لافتتاح الصلاة وخلاف هؤلاء الصحابة قبيح. وفي المشاهير أن النبي صلى الله عليه وسلم قال : لا ترفع الأيدي إلا في سبع مواطن عند افتتاح الصلاة، وفي العيدين ، والقنوت في الوتر ، وعند استلام الحجر، وعلى الصفا والمروة ، وبعرفات وبجمع وعند المقامين عند الجمرتين))

❝ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন রাসূল (সা.) যে দশ জন সম্পর্কে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন তাদের কেউই সালাতের শুরুতে ব্যতীত (সালাতের আর কোথাও) হাত উঠাতেন না। কাজেই এ সকল সাহাবীর বিপরীত আমল নিন্দনীয়। ‘আল মাশাহীর’ কিতাবে এসেছে, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, সাতটি জায়গায় রাফউল ইয়াদাইন অর্থাৎ হাত তুলতে হয়, যথা নামাযের শুরুতে ও দুই ঈদের সালাতে, বিতিরের দোয়ায়ে কুনূতে, হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করা ও চুম্বনকালে, ছাফা মারওয়া পাহাড়ে উঠলে, আরাফার ময়দানে, মুযদালিফায় জমায়েত হলে এবং হাজরে আসওয়াদের সামনে।❞

রেফারেন্সঃ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং ২৪৬৫, আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং ১২০৭২, সুনানে বায়হাকী-৫/৭২-৭৩।

প্রামাণ্য স্ক্যানকপিঃ আল বাদাউ আস সানাউ (البدائع الصنائع) এর “কিতাবুস সালাত” অধ্যায়, খণ্ড নং ২ পৃষ্ঠা নং ৪৮, মুহাক্কিকঃ শায়খ আলী মুহাম্মদ মু’আওউয।

হাদীসের মানঃহাসান❞। বলেছেন, ইমাম নূরউদ্দীন আল হাইছামী (রহ.)। দেখুন, মাযমাউয যাওয়ায়েদ ৩:৩৮।

রাবী বৃত্তান্তঃ

বর্ণনাটির একজন রাবী মুহাম্মদ ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে আবী লায়লা (৭০-১৪৮ হিজরী)। তিনি একজন তাবেয়ী। তাঁর সম্পর্কে “জরাহ” (আপত্তি) যেমন রয়েছে, তেমনি তা’দীল-ও রয়েছে।

তাঁকে ইমামগণ “দুর্বল” বলেছেন শুধুমাত্র তাঁর বয়সঘটিত স্মৃতিভ্রমের কারণে । কেউ কেউ তাঁকে একই কারণে مضطرب الحديث বলেও উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ইমামগণের বড় একটি অংশ তার প্রশংসাও করেছেন। যেমন ইমাম যাহাবী (রহ.) বলেছেন ((حديثه فى وزن الحسن)) অর্থাৎ তাঁর হাদীস ❝হাসান হাদীসের পর্যায়ভুক্ত❞। (তাযকিরাতুল হুফফায ১:১৭১)। ইমাম ইবনু কাইয়ুম (রহ.) এবং ইমাম নুরউদ্দীন আল হাইছামী (রহ.) উভয়ই বলেছেন ((حديثه حسن ان شاء الله)) অর্থাৎ তাঁর হাদীস হাসান, ইনশাআল্লাহ (মাযমাউয যাওয়ায়েদ ৩:৩৮)। ইমাম যাহাবী (রহ.) তাঁর সম্পর্কে ‘সিয়ার’ গ্রন্থে লিখেছেন ((محمد بن عبد الرحمن بن أبي ليلى . العلامة ، الإمام ، مفتي الكوفة وقاضيها أبو عبد الرحمن الأنصاري ، الكوفي)) ❝মুহাম্মদ ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে আবী লায়লা একজন আল্লামা, ইমাম, কূফার একজন মুফতী এবং বিচারপতি❞ (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ৬:৩১১)। ইমাম যাহাবী লিখেছেন, তাঁর কাছ থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন ((شعبة ، وسفيان بن عيينة ، وزائدة ، والثوري ، وقيس بن الربيع)) ইমাম শো’বাহ, সুফিয়ান ইবনে উয়ায়নাহ, যায়েদাহ, সুফিয়ান আস-সওরী এবং কায়েস ইবনুর রবী’ঈ প্রমুখ। ইমাম যাহাবী আরও লিখেছেন ((وكان نظيرا للإمام أبي حنيفة في الفقه)) ❝তিনি ফিকহের ক্ষেত্রে ইমাম আবূ হানীফা (রহ.)-এর দৃষ্টান্ত ছিলেন।❞ ইমাম যাহাবী আরও লিখেছেন ((كان يحيى بن سعيد يضعف ابن أبي ليلى . قال أحمد : كان سيئ الحفظ ، مضطرب الحديث ، وكان فقهه أحب إلينا من حديثه)) ❝ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ (আল ক্বাত্তান) ইবনু আবী লায়লাকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। ইমাম আহমদ বলেছেন, তিনি স্মৃতিশক্তিতে দুর্বল আর মুদতারিবুল হাদীস ছিলেন, তবে আমাদের নিকট তাঁর ফিকহ অত্যাধিক প্রিয়।❞

ইমাম যাহাবী লিখেছেন ((وروى أبو حاتم عن أحمد بن يونس قال : ذكر زائدة ابن أبي ليلى فقال : كان أفقه أهل الدنيا)) ইমাম আবূ হাতিম আহমদ ইবনে ইউনুস থেকে বর্ণনা করে বলেন, (ইবনু আবী লায়লার শিষ্য) যায়েদাহ বলেছেন, তিনি দুনিয়াবাসীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ ফকীহ ছিলেন।

ইমাম যাহাবী আরও লিখেছেন ((قال العجلي : كان فقيها صاحب سنة ، صدوقا ، جائز الحديث . وكان قارئا للقرآن ، عالما به)) অর্থাৎ ইমাম আ’জলী বলেন, তিনি ছিলেন একজন ফকীহ এবং সুন্নাহর অনুসারী ও সত্যবাদী আর হাদীসের বাহক এবং কুরআনের ক্বারী ও তৎ সম্পর্কে একজন অবিজ্ঞ।

ইমাম যাহাবী আরও লিখেছেন ((قال أبو زرعة : هو صالح ، ليس بأقوى ما يكون . وقال أبو حاتم : محله الصدق ، وكان سيئ الحفظ ، شغل بالقضاء ، فساء حفظه ، لا يتهم)) অর্থাৎ ইমাম আবূ যুর’আ বলেন, তিনি একজন সৎ, তবে তার কর্ম অত্যাধিক শক্তিশালী নয়। আবূ হাতিম বলেছেন, তাঁর অবস্থান সত্যনিষ্ঠ। তবে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেয়েছিল, তিনি বিচারকার্যে ব্যস্ত থাকতেন, তিনি মিথ্যার ক্ষেত্রে অভিযুক্ত নন।

ইমাম যাহাবী আরও লিখেছেন ((قلت : لم نرهما تركاه ، بل لينا حديثه . وقد قال حفص بن غياث : من جلالة ابن أبي ليلى أنه قرأ القرآن على عشرة شيوخ)) অর্থাৎ ❝আমি মনে করি, আমরা তাঁদের দু’জনকে (ইমাম আহমদ এবং ইবনে মা’ঈনকে) তাঁকে ত্যাগ করতে দেখিনি, বরং তাঁর হাদীসের ক্ষেত্রে তারা উভয়ই নমনীয়তা অবলম্বন করেছেন। হাফস ইবনে গিয়াস বলেছেন, ইবনে আবী লায়লার অন্যতম বিশেষত্ব এই যে, তিনি দশজন শায়খের কাছ থেকে কুরআন পাঠ করেছিলেন।❞ (সিয়ার ৬:৩১৫ যাহাবী)।

ইমাম ইয়াকুব ইবনে সুফিয়ানও বলেছেন ((ثقة عدل)) তিনি একজন সিকাহ ও ন্যায়পরায়ণ। ইমাম তিরমিজিও বলেছেন, তার হাদীস সহীহ। সে যাইহোক, অপরাপর শাওয়াহেদ থাকার কারণে ইবনু আবী লায়লা’র বর্ণনাটি ❝হাসান❞ হাদীসের পর্যায়ভুক্ত বলা যেতে পারে। ((ফিকহ মিডিয়া গ্রুপ থেকে – Click))

.

2 হযরত বারা ইবনে আযিব (রা.) হতে তিনি বলেন ((عَنِ الْبَرَاءِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- كَانَ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلاَةَ رَفَعَ يَدَيْهِ إِلَى قَرِيبٍ مِنْ أُذُنَيْهِ ثُمَّ لاَ يَعُودُ))

❝রাসূল (সা.) যখন নামায আরম্ভ করতেন তখন তাঁর হস্তদ্বয় কর্ণদ্বয় পর্যন্ত উত্তোলন করতেন। অতঃপর আর তা করতেন না।❞ (সুনানু আবী দাউদ, হাদীস নং ৭৫০, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং ১৬৮৯, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, হাদীস নং ২৪৫৫)।

3 ইমামে আযম হযরত ইমাম আবূ হানীফা (৮০-১৫০ হিজরী) বলেন ((قال ابو حنيفة : حدثنا حماد عن ابراهيم عم علقمة والاسود عن عبدالله ابن مسعود أن رسول الله عليه وسلم كان لا يرفع يديه الا عند افتتاح الصلاة ولا يعود لشيئ من ذلك))

❝আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন “নিশ্চিয়ই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শুধু মাত্র সালাতের শুরুতে রাফউল ইয়াদাইন (উভয় হাত উত্তোলন) করতেন। এরপর আর কখনো পুনরাবৃত্তি করতেন না।❞ – সহীহ

(মুসনাদু আবী হানীফা বি-রেওয়ায়েতে আবূ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ ইবনে হারিছ আল হারিছি, হাদীস নং ৩৭৪)।

4 হযরত জাবের ইবনে সামুরাহ (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন ((عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ « مَا لِى أَرَاكُمْ رَافِعِى أَيْدِيكُمْ كَأَنَّهَا أَذْنَابُ خَيْلٍ شُمْسٍ اسْكُنُوا فِى الصَّلاَةِ))

❝রাসূল (সা.) নামাযের সময় আমাদের নিকট আসলেন এবং বললেন তোমাদের কী হল যে, আমি তোমাদেরকে দেখতে পাচ্ছি দুষ্ট ঘোড়ার লেজের ন্যায় তোমাদের হাতগুলো উঠানামা করছে! তোমরা নামাযে শান্ত ও ধীর হও।❞ (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৯৬, সুনানু আবী দাউদ, হাদীস নং ১০০২, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং ১৮৭৮, মুসনাদে আবী আ’ওয়ানা, হাদীস নং ১৫৫২, মুসনাদে আবী ই’য়ালা, হাদীস নং ৭৪৮০, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২০৯৯৮, মুসনাদুর রাবী, হাদীস নং ৯১২, মুসনাদে ত্বয়ালিসী, হাদীস নং ৭৮৬, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং ২৪২৮)।

5 হযরত সালেম বিন আব্দুল্লাহ (রহ.) তাঁর পিতা (আব্দুল্লাহ ইবনে উমর) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন ((قال أخبرني سالم بن عبد الله عن أبيه قال : رأيت رسول الله صلى الله عليه و سلم إذا أفتتح الصلاة رفع يديه حذو منكبيه وإذا أراد أن يركع وبعد ما يرفع رأسه من الركوع فلا يرفع ولا بين السجدتين)) ❝আমি রাসূল (সা.)-কে দেখেছি, তিনি যখন নামায শুরু করতেন তখন কাঁধ বরাবর হাত উঠাতেন। আর যখন রুকু করতে চাইতেন এবং রুকু থেকে উঠতেন, তখন হাত উঠাতেন না। দুই সেজদার মাঝেও না।❞ (মুসনাদুল হুমায়দী, হাদীস নং ৬১৪)।

6 হযরত আসওয়াদ (রহ.) থেকে বর্ণিত, ((رأيت عمر بن الخطاب يرفع يديه أول تكبيرة ثم لا يعود)) তিনি বলেন
❝আমি হযরত উমর (রা.)-কে দেখেছি, তিনি শুধু প্রথম তাকবীরের সময় রাফউল ইয়াদাইন করতেন, পরে আর কোথাও করতেন না।❞ (তাহাবী শরীফ ১:১৬৪)

বিশ্ববিখ্যাত ইমাম, ইমাম আবূ জা’ফর আত-ত্বহাবী রাহিমাহুল্লাহ (২৩৮-৩২১ হিঃ) চতুর্থ খলীফা হযরত আলী ইবনে আবী তালিব (রা.)-এর ‘তরকে রাফউল ইয়াদাইন’ (রাফউল ইয়াদাইনের আমল পরিত্যাগ করা) সংক্রান্ত বর্ণনাটি উল্লেখ করে লিখেছেন ((فإن عليا لم يكن ليرى النبي صلى الله عليه و سلم يرفع ثم يترك هو الرفع بعده إلا وقد ثبت عنده نسخ الرفع))

❝রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাফউল ইয়াদাইন করতে দেখার পরেও তাঁর ইন্তেকালের পর আলী (রা.) রাফউল ইয়াদাইন এর আমল পরিত্যাগ করাই প্রমাণ করে যে, তাঁর নিকট এটি মানসূখ তথা রহিত হবার প্রমাণ ছিল।❞ (তহাবী শরীফ ১:১১০, বাজলুল মাজহুদ শরহে আবী দাউদ ৪:৪০৭ আরবী নোসখা))

আল্লামা যায়লা’ঈ (৭৬২-৮৫৫ হিজরী) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। সহীহ বুখারী’র বিখ্যাত ভাষ্যকার আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.)ও বর্ণনাটির সকল রাবীকে সিকাহ (নির্ভরযোগ্য) বলেছেন। ‘আল-জাওহারুন নাকী আ’লা সুনানিল বায়হাকী‘ গ্রন্থে উল্লেখ আছে, হাদীসটির সনদ সহীহ মুসলিমের সনদের মতো শক্তিশালী।

7 আছেম ইবনে কুলাইব নিজ পিতার কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন, ((أنّ عليا رضي الله عنه كان يرفع يديه في أول تكبيرة من الصلاة، ثم لا يعود يرفعه)) ❝নিশ্চয়ই হযরত আলী (রা) নামাযে প্রথম তাকবীরে হাত উঠাতেন এরপর আর কোথাও হাত উঠাতেন না।❞ (সুনানে বায়হাকী ২:৮০)। ইমাম তহাবী (রহ.) বলেন, ((هو أثر صحيح)) ❝এটি সহীহ আছার।❞

বিখ্যাত মুহাক্কিক আল্লামা যায়লা’ঈ (রহ.)ও হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। সহীহ বুখারীর ভাষ্যকার আল্লামা আঈনী আদ-দামেস্কী (৭৬২-৮৫৫ হিজরী) বলেছেন, “এর সনদ সহীহ মুসলিমের সনদের সম পর্যায়ের। সহীহ বুখারীর অপর ভাষ্যকার আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (মৃত. ৮৫২)ও বলেছেন, ((رجاله ثقات)) হাদীসটির সকল রাবী সিকাহ (নির্ভরযোগ্য)। (নাসবুর রায়াহ লিয-যায়লা’ঈ ১:৪০৬, উমদাতুল কারী শরহে বুখারী লিল-আ’ঈনী ৫:২৭৪, আদ-দিরায়াহ ফী তাখরীজিল আহাদীসিল হিদায়া লি-ইবনে হাজার আসকালানী ১:১১৩)।

8 তাবেয়ী হযরত মুজাহিদ (রহ.) বলেন, ((صليت خلف ابن عمر فلم يكن يرفع يديه إلا في التكبيرة الأولى من الصلاة)) ❝আমি আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.)-এর পেছনে নামায পড়েছি। তিনি প্রথম তাকবীর ছাড়া অন্য কোথাও রাফউল ইয়াদাইন করতেন না।❞ – হাসান

(তাহাবী শরীফ ১:১৬৩, ইবনে আবী শাইবাহ ২/৪১৮ হাদীস নং ২৪৬৭ (শায়খ আ’ওয়ামা-العوامة এর তাহকীক কৃত নুসখা)। ইমাম আবুল হাসান ইবনুত তুরকুমানী (৬৮৩-৭৫০ হিজরী) বলেছেন, এর সনদ সহীহ (আল-জাওহারুন নাকী-الجوهر النقي على سنن البيهقي; ইমাম ইবনুত তুরকুমানী)।

রাবীগণ: গ্রন্থকার আব্দুল্লাহ ইবনে আবী শাইবাহ (১৫৯-২৩৫ হি.), সিকাহ; একজন বুখারীর রাবী (বুখারী হা/১৯১৩ ইফা)।

আবূবকর ইবনে আয়্যাশ (৯৫-১৯৪ হি.) সিকাহ ও হাসানুল হাদীস; একজন বুখারীর রাবী (বুখারী হা/৬০৬১ ইফা, ফাতহুল বারী হা/৬১৪০)।

হুছাইন ইবনে আব্দির রহমান (৪৩-১৩৬ হি.) সিকাহ; একজন বুখারীর রাবী (বুখারী হা/৩৬৯৪ ইফা, কিতাবুল মাগাযী)।

ইবনে আব্বাসের খাস শিষ্য মুজাহিদ বিন জাবর (১৯-১০২ হি.) ইমামুত তাফসীর ওয়াল ইলম; একজন বুখারীর রাবী (বুখারী হা/২৬৩১ ইফা)।

9 ইমাম মালেক (রহ.)-এর ইজতিহাদ মতেও “রাফউল ইয়াদাইন” এর আমল রহিত প্রমাণিত, তিনি বলেন ((قَالَ مَالِكٌ : لَا أَعْرِفُ رَفْعَ الْيَدَيْنِ فِي شَيْءٍ مِنْ تَكْبِيرِ الصَّلَاةِ لَا فِي خَفْضٍ وَلَا فِي رَفْعٍ إلَّا فِي افْتِتَاحِ الصَّلَاةِ))

❝ইমাম মালেক (রহ.) বলেন, সালাতের শুরুতে ছাড়া তার অন্য কোনো তাকবীরে কিংবা ওঠা-নামা মুহূর্তে রাফউল ইয়াদাঈন সংক্রান্ত কোনো বিধি-বিধান (আছে বলে) আমার জানা নেই।❞- সনদ সহীহ ও মুত্তাসিল।

(আল-মুদাওয়ানাতুল কুবরা, ১/১৬৫, মূল ইমাম আব্দুস সালাম বিন সাঈদ আল-তানুখী, ডাকনাম সুহনুন; মৃত. ২৪০ হিঃ/৮৫৪ খ্রিস্টাব্দ)।

ফিকহে মালেকীর শক্তিশালী অভিমত কী, এ সম্পর্কে ইমাম আব্দুস সালাম বিন সাঈদ আল-তানুখী (২৪০ হিঃ/৮৫৪ খ্রিস্টাব্দ) লিখেছেন (( قَالَ ابْنُ الْقَاسِمِ : وَكَانَ رَفْعُ الْيَدَيْنِ عِنْدَ مَالِكٍ ضَعِيفًا إلَّا فِي تَكْبِيرَةِ الْإِحْرَامِ)) অর্থাৎ ❝[ইমাম মালেকের খাস ছাত্র] ইবনুল কাসিম বলেন, সালাতের প্রথম তাকবীর ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে রাফউল ইয়াদাঈন করার বিধান ইমাম মালিক (রহ.)-এর নিকট দুর্বল।❞ (প্রাগুক্ত)।

সম্পর্কিত সনদ ও গ্রন্থ পরিচিতিঃ

আল-মুদাওয়ানাতুল কুবরা (المدونة الكبرى) হল ফিকহে মালেকির উপর আইনশাস্ত্র বিষয়ক প্রশ্ন-উত্তর মূলক একটি সংকলন, যা ইমাম মালেক (৯৩-১৭৯ হিঃ)-এর পক্ষ হতে বর্ণিত ফিকহগুলোর সংকলন ও আব্দুস সালাম বিন সাঈদ আল-তানুখী, ডাকনাম সুহনুন [عبد السلام بن سعيد التنوخي الملقب بسحنون] (২৪০ হিঃ/৮৫৪ খ্রিস্টাব্দ) কর্তৃক বর্ণনাকৃত। তিনি এটি সংগ্রহ ও সংকলন করেছেন আব্দুর রহমান বিন আল-কাসিম আল-আতকি [عبد الرحمن بن القاسم العتقي] (১৯১ হিজরি / ৮০৬ খ্রিস্টাব্দ)-এর কাছ থেকে, আর তিনি ইমাম মালিক বিন আনাস (রহ.) থেকে বর্ণনা করেছেন। এজন্য বইটি برواية سحنون বা ইমাম সুহনুন এর রেওয়ায়েতে ইমাম মালেক (রহ.)-এর সাথে সম্পর্কিত। (সূত্রঃ আল্লামা ইবনু নাজী [ابن ناجي] রচিত معالم الإيمان في تاريخ قيروان في ترجمة سحنون والتعلايف بالمدونة পৃষ্ঠা নং ১০১)।

বিশিষ্ট ফকীহ আবূ আব্দিল্লাহ আল মুশদালি আল মালেকি-محمد بن أحمد بن عمر الوانوغي أبو عبد الله محمد بن أبي القاسم بن محمد المشدالي أبو عبد الله (৮০৪-৮৬৬ হিঃ) কিতাবটির একটি ব্যাখ্যাগ্রন্থও রচনা করেছেন। তিনি তার নাম দিয়েছেন شرح عن مدونة سحنون (শরহু আ’ন মুদাওয়ানাতি সুহনুন), পূর্ণ নাম تكملة المشدالي على تعليقة أبي مهدي الوانوغي على المدونة-তাকমিলাতুল মুশদালি আ’লা তা’লীকাতি আবী মাহদীল ওয়ানুগী আ’লাল মুদাওয়ানাহ।

10 প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আল্লামা নিমাভী (মৃত. ১৩২২ হিজরী) খোলাফায়ে রাশেদীনের কর্মধারা বিষয়ক বর্ণনাগুলো পর্যালোচনা করে এ সিদ্ধান্তে পৌছেছেন যে তাঁরা শুধু প্রথম তাকবীরের সময় রাফউল ইয়াদাইন করতেন, অন্য আর কোথাও রাফউল ইয়াদাইন করতেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। (আসার আস সুনান-آثار السنن ১:১৫৮)।

11 ইমাম তিরমিযী (রহ.) বলেন, ((فكان يرفع يديه أول مرة ثم لا يعود)) ❝হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর রাফউল ইয়াদাইন না করা সংক্রান্ত হাদীস ‘হাসান’ পর্যায়ে উত্তীর্ণ এবং অনেক আহলে ইলম : সাহাবা এবং তাবেয়ীন এ মতই পোষণ করতেন। ইমাম সুফিয়ান আস-সওরী (রহ.) এবং কুফাবাসী ফকীহগণের ফাতাওয়াও এটা।❞ (জামে তিরমিযী : ১:৩৫)।

12 মালেকী মাযহাবের বিখ্যাত ফকীহ ও হাদীস বিশারদ আল্লামা ইবনু আব্দিল বার আন্দালুসি আল-কুরতুবি আল-মালেকী (৩৬৮-৪৬৩ হিজরী) রাফউল ইয়াদাইন সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরামের অবস্থান তুলে ধরে লিখেছেন ❝হযরত হাসান (রহ.) সাহাবায়ে কেরামের কর্মনীতি সম্পর্কে বলেছেন, তাদের মধ্যে যারা রাফউল ইয়াদাইন করতেন তারা রাফউল ইয়াদাইন পরিত্যাগকারীদের উপর আপত্তি করতেন না। এ থেকে বোঝা যায়, রাফউল ইয়াদাইন জরুরি কিছু নয়।❞ (আত-তামহীদ ৯:২২৬)।

খোলাসাঃ হানাফী এবং মালেকী মাযহাবের ফিকহের অনুসারীরা রাফউল ইয়াদাইনের আমলটি পরিত্যাগ করার কারণ, তাঁদের ইজতিহাদ তথা গবেষণামতে সালাতে শুধুমাত্র তাকবীরে তাহরিমার সময় ব্যতীত অন্যান্যস্থানে রাফউল ইয়াদাইনের আমলটি মানসুখ বা “রহিত”। আর মানসুখ আমলের হাদীস যতই সহীহ হোক, তা আমলযোগ্য নয়। যেমন, নিকাহে মুত’আ, বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে মুখ করে সালাত আদায় ইত্যাদী। ওয়াল্লাহু আ’লাম।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here