হযরত আবূ হোরায়রা (রা.)-এর বিরুদ্ধে হাদীস অস্বীকারকারীদের জঘন্য একটি প্রোপাগাণ্ডার জবাব

0
হযরত আবূ হোরায়রা (রা.)-এর বিরুদ্ধে হাদীস অস্বীকারকারীদের জঘন্য একটি প্রোপাগাণ্ডার জবাব

প্রশ্নকর্তা: হযরত উমর (রা.)-এর শাসনামলে দুর্নীতির অভিযোগে প্রাদেশিক গভর্ণর হযরত আবূ হোরায়রা (রা.)-কে পদচ্যুত করা হয়েছিলেন বলে শীয়াদের অভিযোগ কি সত্য?

উত্তরদাতা: দুর্নীতির অভিযোগে নয়, বরং অন্য অভিযোগের কারণে উমর (রা.) প্রশাসনিক শৃংখলা রক্ষা এবং জনগণকে শান্ত রাখার জন্য তদন্তের পূর্বেই হযরত আবূ হোরায়রা (রা.)-কে বাহরাইনের গভর্ণরের দায়িত্ব হতে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছিলেন, যেমন সা‘দ বিন আবু ওয়াক্কাস (রা.)-কে কূফার গভর্ণরের দায়িত্ব থেকে অনুরূপ অব্যাহতি দিয়েছিলেন (ফাতহুল বারী শরহু সহীহিল বুখারী ২/২৩৮, হা/৭৫৫-এর ব্যাখ্যা)। পরে তদন্তে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন। এজন্য হযরত উমর (রা.) পরে সে দায়িত্ব আবারো হযরত আবূ হোরায়রা (রা.)-কে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি।

অভিযোগ কী ছিল?

তাবেয়ী হযরত ইবনু শিরীন (রহ.) বলেন, উমর (রা.) হযরত আবূ হোরায়রা (রা.)-কে বাহরাইনের গভর্ণর নিযুক্ত করার পর তিনি ১০ হাজার স্বর্ণ মুদ্রা উপার্জন করেন। তিনি একদা ১০ হাজার স্বর্ণ মুদ্রা সঙ্গে নিয়ে হযরত উমর (রা.)-এর নিকট উপস্থিত হলে হযরত উমর (রা.) তাঁকে বলেন, তুমি এত সম্পদ কোত্থেকে অর্জন করলে?

হযরত আবূ হোরায়রা (রা.) বললেন ((خيلٌ لي تناتجت، وغلةٌ رقيقٍ لي، وأُعطيةٌ تتابعت علي)) অর্থ-এসব এসেছে আমার ঘোড়ার বংশ বৃদ্ধি, যুদ্ধলব্ধ সম্পদের অংশ ও আমার কাজের সীমিত প্রতিদান গ্রহণের মাধ্যমে। অত:পর হযরত উমর (রা.) তাঁকে (তদন্তের আগ পর্যন্ত) বাহরাইনের গভর্ণরের দায়িত্ব হতে সাময়িক অব্যাহতি দেন।

তদন্তে নির্দোষ প্রমাণ

❝হযরত আবূ হোরায়রা (রা.)-এর বিরুদ্ধে উক্ত অভিযোগ তদন্তের পরে তিনি হযরত আবূ হোরায়রা (রা.)-এর কথারই সত্যতার প্রমাণ পান এবং তাঁকে ন্যায়পরায়ণ হিসেবেই দেখতে পান (অর্থাৎ সন্দেহ/অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়)। তখন হযরত উমর (রা.) পুনরায় তাঁকে গভর্ণরের দায়িত্ব প্রদানের জন্য ডেকে পাঠালে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। তখন উমর (রা.) বলেন, তোমার থেকে তো উত্তম ব্যক্তি দায়িত্ব পালনে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন!!! জবাবে হযরত আবূ হোরায়রা (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, তিনি কে? উমর (রা.) বললেন, ইউসুফ (আ.)। হযরত আবূ হোরায়রা (রা.) উত্তরে বললেন, ইউসুফ (আ.) নিজে আল্লাহর নবী এবং নবীর পুত্র ছিলেন। আর আমি উমায়মার পুত্র আবূ হোরায়রা।❞

রেফারেন্সঃ মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/২০৬৫৯; সিয়ারু আ‘লামিন-নুবালা ২/৬১২, বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত– তাহকিক শায়খ শু’আইব আরনাউত্ব; আল-ইসাবাহ, ক্রমিক ১০৬৭৪, ৭/৪৪২; আরো দেখুন, আল ‘ইকদুল ফারীদ-العقد الفريد, ইমাম ইবনে আব্দিল বার – পৃষ্ঠা নং ৭৬)।

সনদ সহ সম্পূর্ণ হাদীসটি ((মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/২০৬৫৯)) এই,

أخبرنا عبد الرزاق ، عن معمر ، عن أيوب ، عن ابن سيرين ، أن عمر بن الخطاب استعمل أبا هريرة على البحرين ، فقدم بعشرة آلاف ، فقال له عمر : استأثرت بهذه الأموال يا عدو الله ، وعدو كتابه ، قال أبو هريرة : ” لست عدو الله ، ولا عدو كتابه ، ولكني عدو من عاداهما ” ، قال : فمن أين هي لك ؟ قال : ” خيل لي تناتجت ، وغلة رقيق لي ، وأعطية تتابعت علي ” فنظروه ، فوجدوه كما قال ، قال : فلما كان بعد ذلك ، دعاه عمر ليستعمله ، فأبى أن يعمل له ، فقال : أتكره العمل وقد طلب العمل من كان خيرا منك يوسف ؟ قال : ” إن يوسف نبي ابن نبي ابن نبي ، وأنا أبو هريرة ابن أميمة أخشى ثلاثا واثنين ” ، قال له عمر : أفلا قلت : خمسا ؟ قال : ” لا ، أخشى أن أقول بغير علم ، وأقضي بغير حكم ، ويضرب ظهري ، وينتزع مالي ، ويشتم عرضي

শেষকথা: হাদীসের দীর্ঘ বিবরণ হতে বুঝা যায় যে, খিয়ানতের কারণে তাঁকে অপসারণ করার অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। কারণ, উমর (রা.) তাঁকে আবারো দায়িত্ব দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি। বলে রাখা জরুরি যে, হযরত আবূ হোরায়রা (রা.)-এর বিরুদ্ধে সনদ বিহীন অনেক বর্ণনা রয়েছে সেগুলো দ্বারা প্রতারিত হওয়া থেকে সাবধান থাকতে হবে।

লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক, মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here