Home সাধারণ আবূ হানীফা (রহ.) একজন সিকাহ ছিলেন

আবূ হানীফা (রহ.) একজন সিকাহ ছিলেন

0
আবূ হানীফা (রহ.) একজন সিকাহ ছিলেন

সনদের তাহকিক সহ ইমামে আ’যম আবূ হানীফা (রহ.) সম্পর্কে ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মা’ঈন (১৫৮-২৩৩ হিজরী)-এর অভিমত,

ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মা’ঈন (রহ.)-এর শিষ্য আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ ইবনে ইবরাহীম আদ-দাওরাক্বি বলেন ((قَالَ (أَبُو يَعْقُوب) وَنا أَحْمَدُ بْنُ الْحَسَنِ الْحَافِظُ قَالَ نَا عبد الله بْنُ أَحْمَدَ بْنِ إِبْرَاهِيمَ الدَّوْرَقِيُّ قَالَ سُئِلَ يَحْيَى بْنُ مَعِينٍ وَأَنَا أَسْمَعُ عَنْ أَبِي حَنِيفَةَ فَقَالَ ثِقَةٌ مَا سَمِعْتُ أَحَدًا ضَعَّفَهُ هَذَا شُعْبَةُ بْنُ الْحَجَّاجِ يَكْتُبُ إِلَيْهِ أَنْ يحدث ويأمره وَشعْبَة شُعْبَة)) অর্থ ❝ইয়াহইয়া ইবন মা’ঈনকে আবূ হানীফা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে আমি শুনতে পেলাম, তিনি বলেছেন, তিনি একজন সিকাহ (অর্থাৎ তিনি একজন নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত)। কেউ তাঁকে দুর্বল বলেছেন বলে আমি শুনিনি। এ তো শু’বাহ ইবনুল হাজ্জাজ, তিনি আবূ হানীফাকে হাদীস বর্ণনা করতে লিখে পাঠান এবং অনুরোধ করেন। আর শু’বাহ তো শু’বাহ-ই।❞ (ইমাম ইবনু আব্দিল বার, আল-ইনতিকা পৃ. ১২৭)। – সহীহ। রাবীগণ সকলে বিশ্বস্ত।

তাহকিক ও রাবীর সংক্ষিপ্ত বৃত্তান্ত

1 ইমাম ইবনু আব্দিল বার মালেকি (গ্রন্থকার) জন্ম: ৩৬৮-মৃত্যু: ৪৬৩ হিজরী। ইমাম যাহাবী লিখেছেন ((كان إماما دينا ، ثقة ، متقنا ، علامة ، متبحرا ، صاحب سنة واتباع)) অর্থাৎ একজন একনিষ্ঠ ইমাম, সিকাহ, সুপুরুষ, আল্লামা, বিশাল পণ্ডিত ও সুন্নাহর অনুসারী। (সিয়ারু আলামিন নুবালা ১৮:১৫৮ ইমাম যাহাবী)।

2 ইবনু আব্দিল বার (রহ.)-এর শায়খ ইমাম আবূ ইয়াকুব। ইমাম যাহাবী তার মৃত্যুসন ৩৮৮ হিজরী বলে উল্লেখ করেছেন (দেখুন তারীখুল ইসলাম ৮:৬৪৩)। পূর্ণ নাম, ইউসুফ ইবনে আহমদ আস-সয়দালানী আল মাক্কী, উপনাম আবূ ইয়াকুব। তিনি বলেছেন ((نا أَحْمَدُ بْنُ الْحَسَنِ الْحَافِظُ)) এ কথা আমাকে আহমদ ইবনুল হাসান আল হাফিয বর্ণনা করেছেন। ইমাম ইবনু আব্দিল বার (রহ.) সহ অনেক ইমাম তাঁকে তাওসীক্ব করেছেন (দেখুন আল ইস্তিযকার ১:২১)। তাছাড়া শায়খ আবুল ফাওযান কিফায়াতুল্লাহ আস-সানাবিলী তাঁর সম্পর্কে লিখেছেন ((ابو یعقوب یوسف بن احمد بن يوسف الصيدلانی … … ثقہ ہیں)) ❝আবু ইয়াকুব আস-সয়দালানী একজন সিকাহ।❞ (দেখুন, আনওয়ারুল বদর, পৃ-৩৩৩)।

3 আহমদ ইবনুল হাসান হাফিয (পূর্ণ নাম আহমদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনুল হাসান আদ-দিনাওয়ারী), উপনাম আবূবকর, পেশা আদ্দাররাব (الضَرّابَ), নিসবত আদ-দিনাওয়ারী। একজন সিকাহ রাবী। ইমাম খতীব বাগদাদী লিখেছেন ((قدم بَغْدَاد وحدث بها، وكان ثقة. مات يوم الأربعاء لأربع عشرة خلت من جمادى الأولى سَنَة ثمان وعشرين وثلاثمائة ببَغْدَاد)) অর্থাৎ তিনি বাগদাদ গমন করেন এবং তাঁর কাছ থেকে হাদীস বর্ণনা করা হয়। তিনি একজন সিকাহ ছিলেন। তিনি জুমাদাল উলা মাসের ১৪ তারিখে বুধবার ৩২৮ হিজরীতে বাগদানে ইন্তেকাল করেন। (তারীখে বাগদাদ ৪:৪২৭ খতীব বাগদাদী, তারীখুল ইসলাম ২৪:২২৪ ইমাম যাহাবী, মু’জামু ইবনিল মুক্বরি ৫০৩)।

  • উল্লেখ্য, এ আহমদ ইবনুল হাসান আল হাফিয নামে দু’ ব্যক্তি রয়েছে। একজনের নামের শেষে السُّكّريّ রয়েছে, তার মৃত্যু-সন ২৬১ হতে ২৭০ হিজরীর মধ্যে (তারীখুল ইসলাম ৬:২৬২ ইমাম যাহাবী), আরেকজনের নামের শেষে الدينورى রয়েছে; কিন্তু উক্ত সনদে الدينورى নামীয় ব্যক্তিই উদ্দেশ্য যিনি ৩২৭ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। আর একথার প্রমাণ আছে ইবনুল বার (রহ.)-এর কিতাব ‘আল ইন্তিক্বা’ এর ১৪৫ নং পৃষ্ঠায় উল্লিখিত অপর একটি বর্ণনার সনদে।

4 আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ ইবনে ইবরাহীম আদ-দাওরাক্বি। উপনাম আবূ আব্দিল্লাহ। কেউ কেউ তাঁর মৃত্যু সন ২৪৬ হতে ২৭৬ হিজরীর মধ্যে বলে লিখেছেন। ইমাম যাহাবী (রহ.) তার মৃত্যু সন ২৭৬ হিজরী বলেই উল্লেখ করেছেন (দেখুন, সিয়ারু আলামিন নুবালা ১৩:১৫৪)। ইমাম যাহাবী (রহ.) লিখেছেন ((وكان صدوقا. وثقه الدارقطني)) ইমাম আবূ হাতিম তাঁকে সত্যবাদী (صدوق) বলেছেন এবং দারা কুতনী তাকে সিকাহ বলেছেন। তাঁর কাছ থেকে ইমাম মুসলিম সহ অনেক মুহাদ্দিস হাদীস বর্ণনা করেছেন।

উল্লেখ্য, গয়ের মুকাল্লিদরা উক্ত বর্ণনার সনদের উপর انقطاع এর যে অভিযোগ উত্থাপন করে সেটি তাদের ক্রুটিপূর্ণ তাহকিক আর অজ্ঞতা থেকেই করে থাকে। তারা রাবীগণের সঠিক পরিচয় নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয়েছে।

বেশকিছু শাওয়াহিদ-شواهد ও মুতাবি’ ইমাম ইবনে মা’ঈন (রহ.) থেকে তাঁরই একাধিক শিষ্যের যৌথ বর্ণনা হতে নিম্নরূপ,

❝ইমাম মিয্যি (রহ.) এর তাহযীবুল কামাল ৭০৩২, ইমাম যাহাবীর তারীখুল ইসলাম ৬:৯৯১ এর তথ্য অবলম্বনে… ❞

((محمد بن سعد العوفى سمعت ابن معين يقول: كان ابو حنيفة ثقة الخ))

1 মুহাম্মদ ইবনে সা’আদ আল আ’ওফী (২৭২ হিজরী) থেকে…। তাঁর ব্যাপারে ইমাম আবূ আব্দিল্লাহ হাকিম উল্লেখ করেছেন যে, তিনি ইমাম দারা কুতনী (রহ.)-কে বলতে শুনেছেন ((لا بأس به)) অর্থাৎ তার মধ্যে কোনো সমস্যা নেই। (তারীখে বাগদাদ ২:৩৬৮)।

ইমাম ইবনু হাব্বান বলেছেন ((لا يجوز به اذا انفرد)) অর্থাৎ তার একক বর্ণনা দ্বারা দলিল দেয়া বৈধ হবেনা। (আল মাজরূহীন)।

ইবনে মা’ঈন (রহ.) বলেছেন ((ليس بمتين)) অর্থাৎ সে সুদৃঢ় নন। ইমাম আবূ যুর’আ (রহ.) বলেছেন ((لين الحديث)) সে হাদীসের ক্ষেত্রে কোমল। (তাহযীবুল কামাল রাবী ক্রমিক নং ৫১৫০)।

((و قال صالح بن محمد الأسدى الحافظ سمعت يحيى ابن
معين يقول: كان ابو حنيفة ثقة فى الحديث الخ)) ((قال صالح بن جزرة وغيره سمعنا ابن معين يقول : أبو حنيفة ثقة الخ))

2 সালেহ ইবনে মুহাম্মদ আল আসদী আল হাফিয (২০৫-২৯৩ হিজরী) থেকেও…। তাঁর সম্পর্কে ইমাম যাহাবী (রহ.) বলেন ((الامام الحافظ الكبير الحجة)) তিনি একজন ইমাম, হাফিযুল কাবীর ও হুজ্জত। ইমাম দারা কুতনী (রহ.) বলেছেন ((و كان ثقة حافظا غازيا)) অর্থাৎ তিনি একজন সিকাহ, হাফিয এবং গাযী। (সিয়ারু আলামিন নুবালা ১৪:২৪ ইমাম যাহাবী)।

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি – আল মওসুআতুল হাদীসিয়্যাহ ২:১১৭

ইবনে মা’ঈন (রহ.) থেকে আবূ হানীফা (রহ.) সম্পর্কে নিচের বর্ণনাগুলো জাল ও বানোয়াট যে কারণে,

1 ইবনে আবী মরিয়াম বলেন ((سألت يحيى بن معين عن أبي حنيفة، فقال: «لا يكتب حديثه)) অর্থ- আমি ইয়াহইয়া ইবনে মা’ঈনকে আবূ হানীফা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তাঁর হাদীস লিখাযোগ্য নয়। (ইমাম ইবনু আদী সংকলিত আল কামিল ৮:২৩৬)।

  • দুর্বল।

কারণ এর সনদে ابن أبي مريم নামীয় রাবী অনির্ভরযোগ্য। ইমাম যাহাবী লিখেছেন ((ضَعَّفَهُ: أَحْمَدُ بنُ حَنْبَلٍ، وَغَيْرُهُ، مِنْ قِبَلِ حِفْظِه.)) অর্থাৎ ইমাম আহমদ সহ অন্যান্যরা তাকে তার স্মরণশক্তির ক্রুটির কারণে দুর্বল বলেছেন। তিনি আরও লিখেছেন ((وَقَالَ ابْنُ عَدِيٍّ: أَحَادِيْثُه صَالِحَةٌ، وَلاَ يُحْتَجُّ بِهِ)) অর্থাৎ ইমাম ইবনু আদী বলেন, তার হাদীসসমূহ সঠিক, তবে তা দ্বারা দলিল দেয়া যাবেনা। ইমাম ইবনে হিব্বান বলেন ((هُوَ رَدِيْءُ الحِفْظِ)) অর্থ- সে স্মরণ শক্তির দিক থেকে প্রত্যাখ্যাত। ইয়াযিদ ইবনে আব্দ রাব্বিহ বলেন, সে ১৫৬ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করে। (ইমাম যাহাবীর সিয়ারু আলামিন নুবালা দ্রষ্টব্য)।

2 মুহাম্মদ ইবনে উসমান ইবনে আবী শায়বাহ বলেন ((سمعت يحيى بن معين وسئل عن أبي حنيفة، قال: «كان يضعف في الحديث)) অর্থ- আমি ইয়াহইয়া ইবনে মা’ঈন থেকে শুনেছি তাঁকে আবূ হানীফা (রহ.) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে বলেন, তিনি হাদীসের ক্ষেত্রে দুর্বল ছিলেন (উ’ক্বাইলীর সংকলন আদ্ব-উ’আফা ৪:২৮৪)।

  • জাল।

কারণ এর সনদে محمد بن عثمان بن أبي شيبة (মৃত. ২৯৭ হিজরী) নামীয় রাবী সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, সে ছিল ((كذاب يضع الحديث)) একজন মহা মিথ্যাবাদী এবং হাদীস জালকারী। ইমাম যাহাবী লিখেছেন ((وأما عبد الله بن أحمد بن حنبل فقال : كذاب. وقال عبد الرحمن بن خراش : كان يضع الحديث)) অর্থ- আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ ইবনে হাম্বল বলেন, সে ছিল একজন মহা মিথ্যাবাদী। ইমাম আব্দুর রহমান ইবনে খারাস বলেন, সে হাদীস জালকারী ছিল (সিয়ারু আলামিন নুবালা ১৪:২২, ইমাম যাহাবী)।

আলোচনা শেষ করব ইমাম ইবনু আব্দিল বার মালেকী (রহ.)-এর একটি চমৎকার উক্তি দিয়ে। তিনি লিখেছেন ((الذين رووا عن أبي حنيفة ووثقوه وأثنوا عليه أكثر من الذين تكلموا فيه)) অর্থাৎ ❝যারা ইমামে আ’যম থেকে বর্ণনা করেছেন সকলে তাঁকে সিকাহ বলেছেন এবং প্রশংসা করেছেন। আর তাদের সংখ্যা ঐ সকল লোকের চেয়ে বেশি যারা তাঁর সমালোচনা করেছে।❞ (জামে বায়ানিল ইলম ২/১৪৯)।

তথ্যসংগ্রাহক মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ

এডমিন ফিকহ মিডিয়া

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here