ইমাম মাহদীকে মানার গুরুত্ব সংক্রান্ত হাদীসের পরিপ্রেক্ষিতে কতেক জিজ্ঞাসা

0
ইমাম মাহদীকে মানার গুরুত্ব সংক্রান্ত হাদীসের পরিপ্রেক্ষিতে কতেক জিজ্ঞাসা
  • ইমাম মাহদীকে মানার গুরুত্ব সম্পর্কে সম্পূর্ণ হাদীসটি উল্লেখপূর্বক কিছু প্রশ্ন :

আমরা প্রায়শই দেখি আহমদী তথা কাদিয়ানী জামাতের আলোচনায় ইবনে মাজাহ’র হাদীসের সে অংশটি আসে যা জনাব ফিরোজ আলম সাহেব [কাদিয়ানী ইনচার্জ কেন্দ্রীয় বাংলা ডেস্ক, লন্ডন] খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা করেন। যেমন فَإِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَبَايِعُوهُ [ফা-ইজা রাআইতুমূহু ফা-বাইয়ূহু] অর্থাৎ যখন তোমরা তাকে দেখবে তখন বাইয়াত (যোগদান) করবে। কিংবা فَإِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَبَايِعُوهُ وَلَوْ حَبْوًا عَلَى الثَّلْجِ فَإِنَّهُ خَلِيفَةُ اللَّهِ الْمَهْدِيُّ [ফা-ইজা রাআইতুমূহু ফা-বাইয়ূহু ওয়া লাও হাবওয়ান আলাছ ছালজি ফা-ইন্নাহু খালীফাতুল্লাহিল মাহ্দী] অর্থাৎ তাঁকে [গোরাসানের দিক থেকে] আত্মপ্রকাশ করতে দেখলে তোমরা বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তার বাইয়াত (যোগদান) করবে। কারণ সে আল্লাহ’র খলীফা আল-মাহদী। কিন্তু কখনো পুরো হাদীসটি বর্ণনা করতে শুনিনি।

এ হাদীসটি ইবনে মাজাহ শরীফে বর্ণিত একটি বড় হাদীসের (হা/৪০৮৪) খন্ডিত অংশ। বলে রাখা প্রয়োজন, একমাত্র ইমাম ইবনে মাজাহ (রহ:) এককভাবে এটি বর্ণনা করেছেন এবং হাদীস বিশারদগণ এর সনদকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। সেযেইহোক, আমার প্রশ্ন সেটি নয়।

  • তবে ইমাম হাকেম (রহ:) যেই সনদে বর্ণনা করেছেন সেখানে ‘ক্বদ জাআত মিন ক্বিবালি খোরাসান’ [কালো পতাকাধারী বাহিনী খোরাসানের দিক থেকে আগমন করবে] শব্দটিও উল্লেখ আছে। এমনকি সেটি সনদের বিচারে সহীহ মুসলিম এর সমমানে উন্নীত। দেখুন মুসতাদরিক আলা আস সহীহাইন, কিতাবুল ফিতান ওয়াল মালাহিম।

আমি প্রথমে সম্পূর্ণ হাদীসটির অনুবাদ নিচে পেশ করছি : হযরত সাওবান (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন:

“তোমাদের একটি সম্পদের [সিংহাসন বা গুপ্তধন] নিকট এক খলিফার তিন পুত্র যুদ্ধ করবে। তাদের কেউ সেই সম্পদ দখল করতে পারবে না। অতঃপর প্রাচ্যদেশ থেকে কালো পতাকা উড্ডীন করা হবে। তারা তোমাদেরকে এত ব্যাপকভাবে হত্যা করবে যে, ইতোপূর্বে কোনো জাতি তদ্রুপ করেনি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা:) আরো কিছু বলেছেন, যা আমার মনে নেই। তিনি আরো বলেন, তাকে [খোরাসানের দিক থেকে] আত্মপ্রকাশ করতে দেখলে তোমরা বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তার বাইয়াত করো [তথা তাঁর সিরিয়াভিমুখী মুজাহিদবাহিনীতে যোগদান করো – ইমাম যুহরী, নুআঈম ইবনে হাম্মাদ কৃত আল ফিতান ১/২০৬]। কারণ তিনি আল্লাহর খলীফা আল-মাহদী।”

এখন জনাব ফিরোজ আলম সহ কাদিয়ানী শীর্ষনেতাদের নিকট প্রশ্ন হল :

[১] আহমদীরা (তথা কাদিয়ানীরা) কেন হাদীসটির সম্পূর্ণ অংশ বর্ণনা করেন না?

[২] যদি করে থাকেন তাহলে মির্যা সাহেবের ইমাম মাহ্দী দাবির সময় খলিফার এই তিনপুত্র কারা ছিলেন যারা সেই সময় গুপ্তধনের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন কিন্তু অর্জন করতে পারেন নি? كُلُّهُمُ ابْنُ يَقْتَتِلُ عِنْدَ كَنْزِكُمْ ثَلاَثَةٌ خَلِيفَة [ইয়াকতাতিলু ইনদা কাঞ্জিকুম ছালাছাতুন কুল্লুহুম ইবনু খালীফাতিন]।

[৩] পূর্ব থেকে কালো পতাকাধারী কারা ছিলেন যারা মির্যা সাহেবের যুগে ব্যাপকভাবে মুসলমানদের হত্যা করেছেন, যা ইতোপূর্বে কোনো জাতি করেনি? فَيَقْتُلُونَكُمْ قَتْلاً لَمْ يُقْتَلْهُ قَوْمٌ [ফা-ইয়াকতুলূনাকুম কাতলান লাম ইয়ুকতালহু কাওমুন]।

[৪] ইমাম মাহদী খোরাসানের দিক থেকে সদলবলে সিরিয়াভিমুখে রাওয়ানা হলে মির্যা সাহেব কবে কখন খোরাসানের দিক থেকে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে জিহাদের জন্য বের হয়েছিলেন? বরং আমরা তো জানি যে, তিনি জিহাদের কবর রচিত করতেই উঠেপড়ে লেগেছিলেন। উল্লেখ্য, উইকিপিড়িয়া’র তথ্যমতে খোরাসান এর ভূগৌলিক অবস্থান হল, উত্তর পশ্চিম আফগানিস্তান, উত্তর ও দক্ষিণ পূর্ব উজবেকিস্তান, উত্তর পূর্ব ইরান, দক্ষিণ তুর্কমেনিস্তান, দক্ষিণ কাজিকিস্তান, উত্তর ও পশ্চিম তাজিকিস্তানসহ সম্পূর্ণ বিস্তৃত এলাকা।

  • লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here