![ইমামান মাহদিয়্যান [إماما مهديا] শীর্ষক হাদীসের সঠিক অর্থ ও তাৎপর্য ইমামান মাহদিয়্যান [إماما مهديا] শীর্ষক হাদীসের সঠিক অর্থ ও তাৎপর্য](https://markajomar.org/wp-content/uploads/2020/05/PicsArt_05-14-01.14.07-768x506.jpg)
- ইমাম মাহদীকে মানার গুরুত্ব সংক্রান্ত হাদীসের পরিপ্রেক্ষিতে কতেক জিজ্ঞাসা
- একই রমযানে চন্দ্র সূর্যগ্রহণ এর ঘটনা নিয়ে কাদিয়ানীদের বাড়াবাড়ি
- ইমামান মাহদিয়্যান [إماما مهديا] শীর্ষক হাদীস :
সহজ সরল জবাব : চরম অর্থ-বিকৃতিকারী কাদিয়ানী সম্প্রদায় নিচে উল্লিখিত হাদীসটির ‘ইমামান মাহদিয়্যান’ খন্ডাংশ হতে যেই অর্থটি নিয়ে থাকে তা সম্পূর্ণরূপে ভুল ও ব্যাকরণ বিরুদ্ধ! প্রাসঙ্গিক আলোচনায় আরেকটু পরে আসছি। প্রথমে পুরো হাদীসটির ব্যাকরণসিদ্ধ বাংলা অর্থ জেনে নিন। রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন :
- يوشك من عاش منكم ان يلقى عيسى بن مريم إماما مهديا وحكما عدلا فيكسر الصليب ويقتل الخنزير ويضع الجزية وتضع الحرب أوزارها
- উচ্চারণ : ইউশিকু মান আ’-শা মিনকুম আঁই ইয়ালক্বা ঈসা ইবনা মারইয়ামা ইমামান মাহদিয়্যান ওয়া হাকামান আ’দালান ফা ইয়ুকছিরাছ ছালীবা ওয়া ইয়াক্বতুলাল খিনজীরা ওয়া তাদ্বা’আল হারবু আওঝা-রাহা।
অর্থাৎ তোমাদের মধ্য হতে যারা বেঁচে থাকবে তারা অচিরেই ঈসা (আ:)-কে একজন সুপথপ্রাপ্ত ইমাম ও ন্যায়পরায়ণ প্রশাসকরূপে দেখতে পাবে। তিনি ক্রুশ ভাঙবেন এবং শূকর হত্যা করবেন। জিজিয়া (রাষ্ট্রীয় কর) তুলে দেবেন। তখন (আর কোনো প্রতিপক্ষ না থাকায়) যুদ্ধ আপনা সরাঞ্জামাদী গুটিয়ে নেবে (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ৯১১৭)।
বিশ্লেষণমূলক আলোচনা : উক্ত হাদীসে “ইমামান” শব্দটি মওসূফ [বিশেষিতপদ] আর “মাহদিয়্যান” শব্দটি ছিফাত [বিশেষণপদ]। যেজন্য অনুবাদের ক্ষেত্রে প্রথমে “মাহদিয়্যান” এর অর্থ করতে হবে তারপর “ইমামান” এর অর্থ করতে হবে। ফলে “ইমামান মাহদিয়্যান” এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে : ‘একজন সুপথপ্রাপ্ত ইমাম’। একজন ব্যাকরণের ছাত্র হিসেবে অবশ্যই জানার কথা যে, আরবী থেকে বাংলায় অনুবাদের ক্ষেত্রে ছিফাত [বিশেষণপদ]’র অর্থ আগে হয় আর মওসূফ [বিশেষিতপদ]’র অর্থ পরে হয়। যেমন :
[১] আজরান আযীমা [اجرا كريماً] অর্থাৎ উত্তম প্রতিদান। এখানে প্রথমে ‘কারীমা’ এর অর্থ নিতে হবে। কেননা এটি ছিফাত [বিশেষণপদ]। তারপর ‘আজরা’ এর অর্থ নিতে হবে। একই নিয়মে নিম্নরূপ। [২] ফাদ্বলান কাবীরা [فضلاً كبيراً] অর্থাৎ মহা অনুগ্রহ।
[৩] আযাবান মুহীনা [عذابا مهينا] অর্থাৎ লাঞ্চনাদায়ক শাস্তি। (সূরা আহযাব : ৪৪, ৪৭, ৫৭)। সংক্ষেপে। লক্ষনীয় বিষয় যে, হাদীসটিতে “ইমামান মাহদিয়্যান” এর পূর্বেই ‘ঈসা ইবনে মরিয়ম’ শব্দ উল্লেখ আছে। যেটি বাক্যে “যুলহাল” [যার অবস্থা বুঝানো হয় এমন]। অনুরূপ “মাহদিয়্যান” শীর্ষক একটি রেওয়ায়েত সহীহ বুখারীতেও আছে। নিচে দেখুন :
(ক) হযরত জারির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা:) সম্পর্কে রাসূল (সা:) বলেছেন, ﻭﺍﺟﻌﻠﻪ ﮬﺎﺩﯾﺎ ﻣﮭﺪﯾﺎ [ওয়াজ’আলহু হাদিয়ান মাহ্দিয়্যান] অর্থাৎ হে আল্লাহ আপনি তাকে একজন সুপথপ্রাপ্ত হিদায়াতকারী বানিয়ে দিন (বুখারী কিতাবুল জিহাদ ওয়াস সিয়ার)।
(খ) রাসূল (সা:) হযরত মু’আবিয়া (রা:) সম্পর্কেও বলেছেন : ﺍﻟﻠﮭﻢ ﺍﺟﻌﻠﻪ ﮬﺎﺩﯾﺎ ﻣﮭﺪﯾﺎ ﻭﺍﮬﺪ ﺑﻪ [আল্লাহুম্মাজ আলহু হাদিয়ান মাহ্দিয়্যান ওয়াহ্দি বিহি] অর্থাৎ হে আল্লাহ আপনি তাঁকে একজন সুপথপ্রাপ্ত হিদায়াতকারী বানিয়ে দিন আর তার মাধ্যমে [মানুষকে] হিদায়াত দান করুন। (তিরমিযী কিতাবুল মানাকিব, সনদ হাসান ও গরিব)।
সর্বশেষ কথা হল, যারা মওসূফ ছিফাত এর স্বতসিদ্ধ ব্যকরণিক নিয়মের কোনো তোয়াক্কা না করেই ‘ইমামান মাহদিয়্যান’ এর অর্থ করে ‘ইমাম মাহদীরূপে’ (মহা সুসংবাদ পৃ-১০)। তাদের নিকট আমার প্রশ্ন হল, ‘মুসনাদে আহমদ’ নামক কিতাবসহ হাদীসের অন্যান্য যেসব কিতাবে হযরত ঈসা (আ:)-এর দ্বিতীয় আগমন সম্পর্কে শব্দের সামান্য পরিবর্তনসহ আরো যেসব বাক্যাংশ রয়েছে সেখানেও কি অনুরূপ অর্থ নিবেন? যেমন :
১. ইমামান মাহদিয়্যান ওয়া হাকামান আদালা [إماماً مهديا و حكماً عدلاً]। মুসনাদে আহমদ : হা/৯১১৭। ২. ইমামান মুকছিতান [إماماً مقسطا]। মুসনাদে আহমদ : হা/৭৬২২, ৭৬৯০; তারিখে দামেস্ক : হা/৫১৩৫৫। ৩. ইমামান আদিলান [إماماً عادلاً]। ইমাম ইবনে আবী শাইবাহ (মৃত ২৩৫ হিজরী) সংকলিত মুছান্নাফ ইবনে আবী শাইবাহ : হা/৩৮৪৯১, ৩৬৮০৪। ৪. ইমামান আদিলান ওয়া ক্বাজিয়ান [اماما عادلاً و قاضياً]। ইমাম আবু বকর আশ-শাফেয়ী (মৃত ৩৫৪ হিজরী) সংকলিত, আল ফাওয়ায়িদুশ শাহীর বিল গাইলানিয়াত : হা/৭৯৩, ৮২৪। আপাদত এই কয়েকটা দিলাম। এখন বলুন, প্রথমোক্ত বর্ণনায় “ইমামান মাহদিয়্যান” এর অর্থ ‘ইমাম মাহদীরূপে’ হলে তবে অন্যান্যগুলোর অর্থ কীরূপে হবে? আশাকরি বুঝতেই পেরেছেন যে, কাদিয়ানীরা ব্যাকরণবিরুদ্ধ ও মতলবসিদ্ধ অনুবাদ করতে গিয়ে কত মারাত্মক ভুলভাল অনুবাদ করে থাকে। ফলে একে তো নিজেরা পথভ্রষ্ট হল সে সাথে অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করে চলল!
- লিখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক