Home তারাবীহ তারাবীহ সংক্রান্ত ৬টি চেইনে ১১ রাকা’আতের বিশ্লেষণ

তারাবীহ সংক্রান্ত ৬টি চেইনে ১১ রাকা’আতের বিশ্লেষণ

0

প্রশ্ন : তারাবীহ চার মাযহাবের ইমামগণের মতে কত রাকাত পালনীয়?

উত্তর : হাম্বলী মাযহাবের অন্যতম স্কলার ও বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ইমাম ইবনু ক্বুদামাহ (রহ.) বলেন,

وقال الإمام ابن قدامة المقدسي الحنبلي في المغني: فصل: والمختار عند أبي عبد الله أحمد بن حنبل – رحمه الله، فيها عشرون ركعة. وبهذا قال الثوري، وأبو حنيفة، والشافعي. وقال مالك: ستة وثلاثون. وزعم أنه الأمر القديم، وتعلق بفعل أهل المدينة، فإن صالحا مولى التوأمة، قال: أدركت الناس يقومون بإحدى وأربعين ركعة، يوترون منها بخمس

অর্থাৎ ইমাম ইবনু ক্বুদামাহ (রহ.) তার ‘আলমুগনী’ কিতাবে লিখেছেন, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.)-এর চূড়ান্ত মতানুযায়ী তারাবীহ-তে বিশ রাকাত। আর এ মতটি ইমাম সুফিয়ান আস-সওরী, ইমাম আবু হানীফা এবং ইমাম শাফেয়ী (রাহিমাহুমুল্লাহ) সকলের-ও। ইমাম মালেক (রহ.) বলেন, ছত্রিশ (৩৬) রাকাত। ধারণা করা হয় যে, এটি উনার পুরনো মত এবং মদীনাবাসীর প্রচলিত আমল। আত-তাওয়ামাহ এর ভৃত্য ছালেহ বলেছেন, আমি (মদীনাবাসীর) সাধারণদের একচল্লিশ (৪১) রাকাত পড়তে দেখেছি। তারা বিতির পড়তেন পাঁচ (৫) রাকাত।

(আল মুগনী ১:৪৫৭, ইমাম ইবনু ক্বুদামাহ আল হাম্বলী রহঃ)।

সোর্স– ملتقى اهل التفسير অফিসিয়াল ওয়েবসাইট

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি-

ইমাম মালেক (রহ.) ব্যতীত অবশিষ্ট সকল ইমাম এবং পূর্ববর্তী বড় বড় সালাফদের কেউই তারাবীহ বিশ রাকাতের কম পড়ার প্রমাণ পাওয়া যায় না।

এবার শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.)-এর গুরুত্বপূর্ণ ফাতাওয়াটি উল্লেখ করছি। তিনি তারাবীহ’র রাকাত সংক্রান্ত নানা মতানৈক্যপূর্ণ রেওয়ায়েতকে সামনে রেখে লিখেছেন,

أَنَّ ذَلِكَ هُوَ السُّنَّةُ؛ لِأَنَّهُ أَقَامَهُ بَيْن الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ وَلَمْ يُنْكِرْهُ مُنْكِرٌ

অর্থাৎ “তারাবীহ’র রাকাত সংখ্যা যদিও নির্দিষ্ট ছিলনা, পরবর্তীতে হযরত উমর (রা.)-ই ‘বিশ রাকাত’ তারাবীহ’র নিয়মটি চালু করেছিলেন। কাজেই সুন্নাহ এটাই।”

রেফারেন্স: মাজমূ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়াহ ২৩:১১২।

তারাবীহ সংক্রান্ত ৬টি চেইনে ১১ রাকা’আতের বিশ্লেষণ

হযরত সায়েব বিন ইয়াজিদ (রা.)-এর ৩ ছাত্রের মধ্য হতে ২ জনের বিপরীতে একমাত্র ছাত্র মুহাম্মদ ইবনে ইউসূফ (রহ.)-এর একক চেইনে নিচের ১১ রাকা’আতের “মতন”-এর ক্ষেত্রে কী কী ইজতিরাব (বিশৃঙ্খলা) সৃষ্টি হয়েছে তার সামান্য নিম্নরূপ,

৬টি চেইন :

১. ইমাম মালেক বিন আনাস হতে, প্রতি রাকা’আতে শত শত আয়াত পড়া (يَقْرَأُ بِالْمِئِينَ)। (মুয়াত্তা মালিক, ১/১১৫)।

২. ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আল আল আনসারী হতে, প্রতি রাকা’আতে শত শত আয়াত পড়া (يَقْرَآنِ بِالْمِئِينَ)। (মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবাহ, হা/৭৬৭১)।

৩. ইসমাঈল ইবনে জা’ফর হতে, প্রতি রাকা’আতে ২০০ আয়াত পড়া (يَقْرَءُونَ فِي الرَّكْعَةِ بِالْمِائَتَيْنِ)। (আহাদীসু ইসমাঈল ইবনে জা’ফর, হা/৪৪০)

৪. ইসমাঈল ইবনে উমাইয়্যাহ হতে, প্রতি রাকা’আতে ১০০ আয়াত পড়া (فكانا يقومان بمائة في ركعة)। (ফাওয়াইদু আবী বাকার লিন-নিশাপুরী, হা/১৬)।

৫. উসামা বিন যায়েদ হতে, প্রতি রাকা’আতে কত আয়াত পড়েছিল তার পরিমাণ উল্লেখ নেই। (ফাওয়াইদু আবী বাকার লিন-নিশাপুরী, হা/১৩৫)।

৬. আব্দুল আযীয বিন মুহাম্মদ হতে, প্রতি রাকা’আতে শত শত আয়াত পড়া (نَقْرَأُ فِيهَا بِالْمِئِينَ)। (আল হাভি লিল ফাতাওয়া ১/৪১৬, সুয়ূতি)।

এবার শাস্ত্রীয় নীতিমালার ভিত্তিতে মুহাম্মদ ইবনে ইউসূফের সব গুলো চেইন-এর উপর কী হুকুম আসতেছে লক্ষ্য করুন,

হযরত সায়েব বিন ইয়াজিদ (রা.)-এর ৩ ছাত্রের মধ্য হতে ২ জনেরই ৩টি চেইনে ২০ রাকা’আতের উল্লেখ রয়েছে, অপরদিকে একমাত্র ছাত্র মুহাম্মদ বিন ইউসূফের ৮টি চেইনের মধ্য হতে ১টিতে (বিতির সহ) ২১ রাকা’আত, আরেকটিতে (বিতির সহ) ১৩ রাকা’আত আর অন্য ৬টিতে ১১ রাকা’আতের উল্লেখ রয়েছে, সে সাথে ১১ রাকা’আতের ভিন্ন ভিন্ন ৪টির মতনেই ‘প্রতি রাকা’আতে কত আয়াত করে পড়া হত’ সে হিসেবেও ইজতিরাব বা গণ্ডগোল রয়েছে, তাছাড়া ৮টি চেইনের মধ্যে ৩টি চেইনেই রাকা’আত সংখ্যায় রয়েছে যথাক্রমে ২১, ১৩, ১১ পরস্পর বিরোধী কথা। যার জন্য চারো মাযহাবের সকল ইমামই ‘মুহাম্মদ ইবনে ইউসূফ’ এর সনদে বা সূত্রের সবগুলো চেইনকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। মুহাদ্দিসগণের নীতিমালায় এধরণের হাদীসের সনদে রাবীগণ ‘সিকাহ’ (বিশ্বস্ত) হলেও কিন্তু মতনের ক্ষেত্রে ‘ইজতিরাব’ থাকায় এর হুকুম শাজ ও প্রত্যাখ্যাত। উল্লেখ্য, হাদীস সহীহ হতে হলে মতন ‘শাজ’ মুক্ত থাকা আবশ্যক। আর এ ধরনের বর্ণনার মতনের উপর ফকীহগণ নির্ভর করেন না।

সায়েব বিন ইয়াজিদ-এর ৩ ছাত্রের মধ্য হতে ২ জনেরই ৩টি চেইনে ২০ রাকা’আতের উল্লেখ রয়েছে, অপরদিকে একমাত্র ছাত্র মুহাম্মদ বিন ইউসূফের ৮টি চেইনের মধ্য হতে ১টিতে (বিতির সহ) ২১ রাকা’আত, আরেকটিতে (বিতির সহ) ১৩ রাকা’আত আর অন্য ৬টিতে ১১ রাকা’আতের উল্লেখ রয়েছে। মজার ব্যাপার হল, উক্ত ৬টি চেইনের সবগুলোর মূল-ই হচ্ছে মুহাম্মদ ইবনে ইউসূফ, ইমাম ইবনে আব্দিল বার আল-মালেকী (রহ.) বলেছেন, উক্ত রাবী থেকে ‘এগার’ (احدى عشرة) শব্দটি সঠিক নয়, বরং অপরাপর অসংখ্য শাওয়াহেদ দ্বারা সাব্যস্ত হয় যে, ‘একুশ’ শব্দটাই সহীহ (আল ইসতিযকার ৫:১৫৪-৪৬)। যাইহোক, দ্বিতীয় কোনো শাহেদ (প্রমাণ) মুহাম্মদ ইবনে ইউসূফের ১১ রাকা’আতকে কোনোভাবেই সমর্থন করেনা। আল্লাহু আ’লাম। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি নিচে উল্লেখ করা হল।

লিখক, মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here