ইস্তিসকার সালাত কিংবা দোয়া, কোনটি হানাফী মাযহাবের মুফতাবিহি মত? ইস্তিসকা অর্থ বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা। হানাফী মাযহাবের চূড়ান্ত ফাতাওয়া সাহেবাইন এবং জামহূরের মতের উপর, তথা ইস্তিসতার সময় দুই রাকাত সালাতের শরয়ী হুকুম হচ্ছে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ।
ফিকহে হানাফীর নির্ভরযোগ্য ৬টি গ্রন্থের অন্যতম ‘আল মাবসূত’ থেকে,
“সালাতুল ইস্তিসকার অধ্যায়। ইমাম মুহাম্মদ ইবনে হাসান আশ শায়বানী রহ. বলেন, আমি (ইমামে আ’যমকে) জিজ্ঞেস করলাম : ইস্তিসকার সালাত বলতে কিছু কি আছে? তিনি উত্তরে বললেন, ইস্তিসকার মধ্যে কোনো সালাত (প্রমাণিত) নয়। বড়জোর তাতে ‘দোয়া’ রয়েছে। আমি (তারপর) জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি (ইস্তিসকার) সালাতের জন্য (মানুষকে) একত্রিত হবার এবং ইমাম স্বশব্দে ক্বিরাত পড়ার মত (রায়) দেননা? তিনি প্রতিউত্তরে বলেন, না; আমি এ ব্যাপারে এ রূপ মত দিইনা। তার কারণ, আমাদের নিকট রাসূল সা. এর পক্ষ হতে এ সংবাদ পৌঁছেছে যে, তিনি (ইস্তিসকার) জন্য বের হন এবং দোয়া করেন। (আরও কারণ এ যে) হযরত উমর রা. (একদা ইস্তিসকার জন্য) মিম্বারে আরোহন করেন এবং দোয়া করেন এবং বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেন। অধিকন্তু আমাদের নিকট ‘ইস্তিসকার সালাত’ সংক্রান্ত একটি ‘শায’[1] হাদীস ব্যতীত এমন কোনো হাদীস পৌঁছেনি যেটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে। (ইমাম মুহাম্মদ আরও লিখেন) তারপর আমি জিজ্ঞেস করলাম, (ইস্তিসকার সময়) ইমাম বা গোত্রের যে কেউই নিজ (শরীরের) চাদর উল্টিয়ে (আকাশের দিকে মেলে ধরে) ‘দোয়া’ করা কি মুস্তাহাব হবে? তিনি উত্তরে বললেন, (সহীহ হাদীস পাওয়া না যাওয়ায়) এ ধরণের কাজ মুস্তাহাব হবেনা। (ইমাম মুহাম্মদ বলেন, উপরের দীর্ঘ) মতটি ইমাম আবূ হানীফা রহ. এর।
ইমাম শাফেয়ীর বিশিষ্ট উস্তাদ ইমাম মুহাম্মদ ইবনে হাসান বলেন, আমার মতে ইমাম ইস্তিসকার সালাত পড়বে, এবং ঈদের সালাতের মতই পড়বে। খোতবার পূর্বেই সালাত আরম্ভ করবে। তবে তাতে ঈদের সালাতের মত কোনো তাকবীর বলবেনা। কারণ, আমাদের নিকট রাসূল সা. এর পক্ষ হতে ইস্তিসকা সংক্রান্ত সংবাদ এসে পৌঁছেছে, এমন সংবাদও এসে পৌঁছেছে যে, হযরত ইবনে আব্বাস রা. ইস্তিসকার সালাত পড়তে নির্দেশও দিয়েছেন।”
– আল মাবসূত খ-১ পৃ-২৩৬, ইমাম মুহাম্মদ ইবনে হাসান আশ শায়বানী রহ.
শেষকথা, উক্ত মাসয়ালার ক্ষেত্রে মুফতাবিহি কওল বা চূড়ান্ত ফাতাওয়া হিসেবে হানাফী মাযহাবের বিশিষ্ট ইমামদ্বয় ‘সাহেবাঈন’ এর মতটি-ই ধর্তব্য। আরও সহজ করে বললে, ফিকহে হানাফীর চূড়ান্ত মত হিসেবে এখানে ইমাম মুহাম্মদ এবং ইমাম আবূ ইউসুফ (عليهما الرحمة) এর মতের উপরই ফাতাওয়া। সুতরাং আর কোনো বিতর্ক রইল না। আল্লাহু আ’লাম।
টিকা : [1] শায : হাফিয ইবন হাজার আসকালানী রহ. শায হাদীসের সংজ্ঞায় বলেন ((مخالفة المقبول لمن هو أولى منه)) অর্থ-মাকবুল রাবীর তার চেয়ে উত্তম রাবীর বিরোধিতা করা শায”। (আন নুযহা-النزهة পৃ-৯৮)। এখানে মাকবুল দ্বারা উদ্দেশ্য সহীহ ও হাসান হাদীসের রাবী। আর উত্তম দ্বারা উদ্দেশ্য এক বা একাধিক সিকাহ রাবী। অর্থাৎ মাকবুল রাবী একাধিক মাকবুল কিংবা অধিক সিকাহ রাবীর বিরোধিতা করলে তার হাদীসকে শাস্ত্রীয় ভাষায় শায বলে। আর শায হাদীস দলীলযোগ্য নয়। ইমামে আ’যম রহ. এর বিচার বিশ্লেষণে ইস্তিসকার মধ্যে ‘সালাত’ সংক্রান্ত কোনো হাদীস বিশুদ্ধতার মানদণ্ডে পৌঁছেনি, আর যে-ও একটা হাদীস পৌঁছেছিল সেটি তাঁর বিবেচনায় ‘শায’ পর্যায়ের ছিল। তাই তিনি ঐ বর্ণনার উপর নির্ভর করেননি।
লিখক ও অনুবাদক – মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ