Home সংশয় নিরসন ও জবাব জাওনিয়া রাজকুমারীর সাথে বাসর হবার আগেই তালাক্ব দিয়ে দেয়ার কারণ

জাওনিয়া রাজকুমারীর সাথে বাসর হবার আগেই তালাক্ব দিয়ে দেয়ার কারণ

0
জাওনিয়া রাজকুমারীর সাথে বাসর হবার আগেই তালাক্ব দিয়ে দেয়ার কারণ

প্রশ্নঃ নবী করীম (সা.)-এর স্ত্রী ‘জাওনিয়া’কে বাসরের আগেই তালাক প্রদান করার কারণ কী ছিল?

উত্তরঃ আল্লামা খায়রুদ্দীন আয যিরিকলী আদ দামেস্কী (মৃত.১৩৯৬ হি.) এর সংকলন ‘আল আ’লাম’ (الأعلام للزِّرِكْلي) এর মধ্যে লিখা আছে, ((أسماء بنت النعمان بن أبي الجون الكندي: من شهيرات نساء العرب شرفا وجمالا. يرتفع نسبها إلى آكل المرار ملك كندة. كان مقام أهلها بنجد، وقدمت مع أبيها على النبي صلّى الله عليه وسلم وهو في المدينة، فعرضها أبوها على النبي صلّى الله عليه وسلم فارتضاها وأمهرها، ولم يتزوج بها لصلف كانت موصوفة به، فأقامت في المدينة إلى أن توفيت في خلافة عثمان)) অর্থাৎ তিনি আসমা বিনতে নুমান ইবনে আবী জাওন আল কিন্দী (মৃত. ৩০ হি.)। একজন অভিজাত ও সুন্দরী আরব রমনী। তিনি কিন্দী বংশীয় রাজকুমারী ছিলেন। নজদের বাসিন্দা। তিনি নবী করীম (সা.)-এর নিকট স্বীয় পিতার সাথে মদীনায় আসেন। অত:পর তার পিতা তাকে নবী করীম (সা.)-এর নিকট সমর্পণ করলে তিনি তাকে গ্রহণ করেন এবং মোহর প্রদান করেন। কিন্তু তিনি তার অহংকারী স্বভাবের কারণে তার সাথে সহবাস করেননি (পরবর্তীতে তালাক্ব দিয়ে দেন-অনুবাদক)। তিনি মদীনায় বসবাস করেন এবং উসমান (রা.)-এর খিলাফত যুগ পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন।

এবার বিস্তারিতঃ

জাওনিয়া সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। মুহাদ্দিসগণ এ সম্পর্কিত রেওয়ায়েত গুলোর মতন বা মূলপাঠ’কে মুযতারিব তথা উলোটপালোট বর্ণনা বলে অভিহিত করেছেন। ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী (রহ.) নিজেও এ সংক্রান্ত বর্ণনাগুলোর মতনকে ‘মুযতারিব’ আখ্যা দিয়েছেন (ফাতহুল বারী ৯/৩৫৮)। যেমন তিনি লিখেছেন ((وإن كانت القصة متعددة ولا مانع من ذلك فلعل هذه المرأة هي الكلابية التي وقع فيها الاضطراب)) অর্থাৎ গল্পটি যদিও একাধিক এবং তাতে কোনো আপত্তি নেই কিন্তু এই মহিলাটি-ই গল্পের নায়িকা, যার গল্পে ইযতিরাব বা উলোটপালোট রয়েছে।

উসূলে হাদীসের একটি নিয়ম হচ্ছে, সনদ বা সূত্র সহীহ হলেও যখন ‘মতন’ মুযতারিব হিসেবে সাব্যস্ত হবে তখন আর ঐ মতনের উপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যাবেনা। জাওনিয়া সম্পর্কে ঐতিহাসিক বিবরণটিও অনুরূপ। একটু পরেই এ সম্পর্কে লিখব, ইনশাআল্লাহ।

সম্পূর্ণ লিখাটির উপসংহার যদি ছোট্ট পরিসরে বলতে চাই তাহলে বলব, নবী করীম (সা.)-এর সাথে বিয়ে হওয়ার পরে ‘জাওনিয়া’ নামক ঐ রাজকুমারী সংসার করার প্রস্তাবে অমত পোষণ করেন। যার ফলে রাসূল (সা.) তাকে বিদায় করে দেন। এটা বুঝা যায় এক রেওয়ায়েত অনুসারে।

আরেক রেওয়ায়েত অনুসারে বিয়ের প্রস্তাব দিতে আসলে তিনি তা ফিরিয়ে দেন নিজেকে রাজকুমারী ভেবে। সে তখন রাসূল (সা.)-এর প্রতি অপ্রীতিকর উক্তিও করে বসে। কিন্তু তাকে পরবর্তীতে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে সে বলে, সে নাকি তখন রাসূল (সা.)-কে চিনতে পারেনি। আসল কথা হচ্ছে, রেওয়ায়েতগুলোর মতনে অসঙ্গতি খুব বেশি। ফলে মতনগুলোকে “মুযতারিব” (উলোটপালোট) আখ্যা দিয়ে এর উপর স্কলারগণ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া থেকে বিরত থেকেছেন। কিন্তু অল্প বিদ্যা ভয়ংকর টাইপের আনাড়ি কতিপয় এন্টি-ইসলাম নাস্তিকদের এগুলো বুঝানোই অসম্ভব!

জাওনিয়ার পরিচয়ঃ

জাওনিয়া’র পরিচয় হিসেবে উঠে এসেছে যে, তিনি নুমান ইবনে জাওন আশ শারাহীল এর কন্যা। কেউ বলেছেন, নুমান ইবনে আসওয়াদ আল হারিছের কন্যা। কেউ বলেছেন, তিনি বনু হারিস গোত্রের নুমানের কন্যা আসমা, আবার কারো কারো মতে, তিনি বনু সুলাইম গোত্রের মেয়ে। যাইহোক, সহীহ বুখারীর বর্ণনায় তার নাম উমায়মাহ উল্লেখ থাকলেও অন্যান্য বর্ণনায় তাঁর বিভিন্ন নাম উল্লেখ থাকা প্রমাণিত। ইমাম ইবনু আব্দিল বার মালেকী (রহ.) বলেছেন, ((أجمعوا أن رسول الله تزوجها واختلفوا في قصة فراقها)) অর্থাৎ সবাই একমত যে, রাসূল (সা.) তাকে বিয়ে করেছেন। তবে তার বিচ্ছেদ সংক্রান্ত ঘটনায় ঐতিহাসিকগণ মতবিরোধ করেছেন।

হুসাইন ইবনু ওয়ালীদ নিশাপুরী (রহ.) … সাহল ইবনু সা’দ ও আবূ উসায়দ (রা.) থেকে বর্ননা করেন। তারা বলেন যে, ((تَزَوَّجَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أُمَيْمَةَ بِنْتَ شَرَاحِيلَ ، فَلَمَّا أُدْخِلَتْ عَلَيْهِ بَسَطَ يَدَهُ إِلَيْهَا ، فَكَأَنَّهَا كَرِهَتْ ذَلِكَ ، فَأَمَرَ أَبَا أُسَيْدٍ أَنْ يُجَهِّزَهَا وَيَكْسُوَهَا ثَوْبَيْنِ رَازِقِيَّيْنِ)) অর্থাৎ নবী করীম (সা.) উমায়মাহ বিনত শারাহীলকে বিবাহ করেন। পরে তাকে তাঁর কাছে আনা হলে তিনি তার দিকে হাত প্রসারিত করেন। সে এটি অপছন্দ করল। এরপর তিনি আবূ উসায়দকে নির্দেশ দিলেন, তার জিনিস গুটিয়ে এবং দু-খানা কাতান বস্ত্র পরিয়ে তাকে তার পরিবারে পৌঁছে দিতে। (বুখারী-৫২৫৬ আন্তর্জাতিক নম্বর)।

তবক্বাতে ইবনে সা’দ (৮/১৪৫) গ্রন্থে একটি বর্ণনায় এসেছে, জাওনিয়া ছিলেন আরবের এক সুন্দরী ও অভিজাত রমনী। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) তাকে বিয়ে করেন। তিনি আরও বলেছেন ((فلما رآها نساء النبي صلى الله عليه وسلم حسدنها ، فقلن لها : إن أردت أن تحظي عنده فتعوذي بالله منه إذا دخل عليك . فلما دخل وألقى الستر مد يده إليها ، فقالت : أعوذ بالله منك . فقال: أمن عائذ الله ! الحقي بأهلك)) অর্থাৎ যখন নবী করীম (সা.)-এর স্ত্রীরা তাকে দেখলেন তখন তারা তার সৌন্দর্যের কারণে তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হন। স্ত্রীরা জাওনিয়াকে শিখিয়ে দিলেন যে, যদি তুমি তার সাথে মজা করতে চাও, তাহলে তিনি তোমার কাছে প্রবেশ করলে তার কাছ থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করবে অর্থাৎ তাঁকে বলবে ‘আউযুবিল্লাহহি মিনকা’। তারপর তিনি যখন প্রবেশ করে পর্দা সরিয়ে তার দিকে হাত প্রসারিত করলেন তখন তিনি বললেন, আউযুবিল্লাহহি মিনকা। অত:পর তিনি বললেন, তুমি আল্লাহর আশ্রয়ে নিরাপদ থেকো। তুমি তোমার পরিবারের সাথে গিয়ে মিলিত হয়ে যাও (অর্থাৎ নবী করীম সা. তাকে বিয়ে থেকে অব্যাহতি দিয়ে দেন)।

জাওনিয়ার সাথে নবী করীম (সা.)-এর সাক্ষাৎ ও দু পক্ষের আলাপচারিতা,

সহীহ বুখারীর ৫২৫৫ নং হাদীস হতে বুঝা যায় যে, নবী করীম (সা.) হযরত আবূ উসায়েদ (রা.)-এর কাছ থেকে জাওনিয়া সম্পর্কে প্রথম সংবাদ পান। কিন্তু জাওনিয়ার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কারণে তিনি তার সাথে বাসর করা থেকে বিরত থাকেন। হাদীসটির বাংলা অনুবাদ এই,

আবূ উসায়দ (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেনঃ আমরা নবী করীম (সা.) এর সাথে বের হয়ে শাওত নামক বাগানের নিকট দিয়ে চলতে চলতে দু’টি বাগান পর্যন্ত পৌঁছলাম এবং এ দু’টির মাঝে বসলাম। তখন নবী করীম (সা.) বললেনঃ তোমরা এখানে বসে থাক। তিনি (বাগানের ভেতরে) প্রবেশ করলেন। তখন নুমান ইবনে শারাহীলের কন্যা উমায়মাহ’র খেজুর বাগানস্থিত ঘরে তাকে আনা হয়। আর তাঁর খিদমতের জন্য ধাত্রীও ছিল। নবী করীম (সা.) যখন তার কাছে গিয়ে বললেন, তুমি নিজেকে আমার কাছে সমর্পণ কর। তখন সে বললঃ কোনো রাজকুমারী কি কোনো বাজারি (অ-রাজকুমার) মানুষের কাছে নিজেকে সমর্পণ করে?

বর্ণনাকারী বলেনঃ এরপর তিনি তাঁর হাত প্রসারিত করলেন তার শরীরে রাখার জন্য, যাতে সে শান্ত হয়। সে বললঃ আমি আপনার থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাই। তিনি বললেনঃ তুমি উপযুক্ত সত্তারই আশ্রয় নিয়েছ। এরপর তিনি (সা.) আমাদের নিকট বেরিয়ে আসলেন এবং বললেনঃ হে আবূ উসায়দ! তাকে দু’খানা কাতান কাপড় পরিয়ে দাও এবং তাকে তার পরিবারের নিকট পৌঁছিয়ে দাও। (বুখারী-৫২৫৫)।

যারা আরবী ভাষার অলংকার সম্পর্কে ভালো দখল রাখেন এবং বাগধারা বুঝেন তাদের নিকট এটা পরিষ্কার যে, হাদীসটির এই শেষাংশ যেন ডেকে ডেকে বলছে যে, জাওনিয়ার সাথে নবী করীম (সা.)-এর বিবাহ আগ থেকেই সম্পন্ন ছিল, যা অন্যান্য বিশুদ্ধ বর্ণনামতেও প্রমাণিত। অন্যথা তিনি আবূ উসায়দকে কেন নির্দেশ দিলেন যে, যেন তিনি জাওনিয়াকে দু’খানা কাতান কাপড় প্রদান করেন!? ফলে বলা যেতে পারে যে, জাওনিয়াকে উদ্দেশ্য করে ‘তুমি নিজেকে আমার কাছে সমর্পণ কর’-কথাটি নবী করীম (সা.) বাসর অর্থেই বুঝিয়েছেন। ইমাম বুখারী (রহ.) হাদীসটির অধ্যায় দাঁড় করেছেন এইরূপ, ((بَاب مَنْ طَلَّقَ وَهَلْ يُوَاجِهُ الرَّجُلُ امْرَأَتَه“ بِالطَّلاَقِ)) অর্থাৎ তালাক্ব দেয়ার সময় স্বামী কি তার স্ত্রীর সম্মুখে তালাক্ব দেবে? সুতরাং এতেও বুঝা যাচ্ছে যে, বিয়ে পূর্ব থেকেই সম্পন্ন ছিল, কিন্তু জাওনিয়া সংসার করতে অসম্মতি প্রকাশ করায় নবী করীম (সা.) তার সম্মুখেই তাকে বিবাহ-বন্ধন থেকে অব্যহতি (তালাক্ব) দিয়ে দেন।

বলে রাখা দরকার, সহীহ বুখারীর হাদীস নং ৫২৫৪ দ্বারা পরিষ্কার বুঝা যায় যে, জাওনিয়া নবী করীম (সা.)-এর স্ত্রীদের মধ্যে শামিল ছিলেন। কারণ ইমাম বুখারী তাঁর সহীহ গ্রন্থে ইমাম আওযা’ঈ এর সনদে ইমাম যুহরী থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ((سَأَلْتُ الزُّهْرِي أَي أَزْوَاجِ النَّبِي صلى الله عليه وسلم اسْتَعَاذَتْ مِنْهُ ؟)) অর্থাৎ আমি যুহরীকে জিজ্ঞেস করলাম, নবী করীম (সা.)-এর কোন স্ত্রী তাঁর কাছ থেকে ‘ইয়াজ’ (অব্যাহতি) চেয়েছিলেন? এর উত্তরে হযরত উরওয়াহ স্বীয় খালা আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, ((قَالَ : أَخْبَرَنِي عُرْوَةُ ، عَنْ عَائِشَةَ رضي الله عنها : أَنَّ ابْنَةَ الْجَوْنِ لَمَّا أُدْخِلَتْ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَدَنَا مِنْهَا قَالَتْ : أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْكَ . فَقَالَ لَهَا : لَقَدْ عُذْتِ بِعَظِيمٍ ، الْحَقِى بِأَهْلِكِ)) “তিনি বলেছেন, জাওন কন্যাকে নবী করীম (সা.)-এর নিকট যখন আনা হল এবং তিনি যখন তার নিকটবর্তী হলেন তখন সে বলল, আউযুবিল্লাহি মিনকা অর্থাৎ আমি আল্লাহর জন্য আপনার কাছ থেকে অব্যাহতি চাচ্ছি।”

প্রতিউত্তরে নবী করীম (সা.) তাকে সাফ জানিয়ে দিলেন যে, লাক্বাদ উ’যতি বি’আজিম অর্থাৎ তুমি মহান সত্তার নামে অব্যাহতি কামনা করলে। কাজেই তুমি তোমার পরিবারের সাথে (এখুনি) গিয়ে মিলিত হয়ে যাও (অর্থাৎ আমি তোমাকে অব্যাহতি দিয়ে দিলাম)। নাস্তিকরা সম্পূর্ণ বিষয়টিকে এক পাশে রেখে মাঝখান থেকে খণ্ডিত অংশ উঠিয়ে নেয় এবং নবী করীম (সা.)-এর প্রতি মানহানিকর প্রোপাগাণ্ডা ছড়ায়। নাস্তিকদের প্রোপাগাণ্ডার মূল ইস্যুটি হচ্ছে, নবী করীম (সা.) পর নারীর দিকে হাত বাড়িয়েছেন কিজন্য? জাওনিয়া মূলত সেজন্যই উনাকে السوقة তথা বাজারি (অ-রাজকুমার) পুরুষ আখ্যা দিয়েছিলেন! নাউযুবিল্লাহ।

কিন্তু নাস্তিকদের জন্য দুঃসংবাদ হচ্ছে, সহীহ বুখারীতে (হাদীস-৫২৩৫ ইফা) হযরত সাহাল ইবনে সা’আদ এর অন্য আরেকটি বর্ণনায় পরিষ্কার এসেছে যে, ((أَتَدْرِينَ مَنْ هَذَا ؟ قَالَتْ : لاَ . قَالُوا هَذَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم جَاءَ لِيَخْطُبَكِ . قَالَتْ : كُنْتُ أَنَا أَشْقَى مِنْ ذَلِكَ)) অর্থাৎ জাওনিয়াকে যখন জিজ্ঞেস করা হল, তুমি কি জানো যে, তুমি কাকে ‘বাজারি’ বললে? তখন জাওনিয়া উত্তরে বলেন, না আমি জানতাম না। তখন লোকেরা বলল, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন, তোমাকে প্রস্তাব দিতে এসেছিলেন। জাওনিয়া তখন (বিনয়ের সাথে) বলেছিল, আমি তো উনার থেকে বঞ্চিতা। সুতরাং বুঝা গেল, জাওনিয়া তখন নবী করীম (সা.)-কে চিনতেন না। কিন্তু পরে যখন জানতে পারলেন যে, তিনি স্বয়ং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন, তখন খুবই অনুতপ্ত হন। একই হাদীসের শুরুতে সুস্পষ্ট লিখা আছে, আবূ উসায়দ আস সা’দী নবী করীম (সা.)-এর নিকট সর্বপ্রথম আরবের একজন রাজকুমারীর নাম প্রস্তাব করেন। নবী করীম (সা.) আবূ উসায়দকে নির্দেশ দেন, যাতে তিনি ঐ রাজকুমারীর নিকট দূত প্রেরণ করেন।

উল্লেখ্য, ফাতহুল বারী (৯/৩৫৮) গ্রন্থে লিখা আছে, ভাষাবিদ ইবনুল মুনির বলেছেন ((والسوقة عندهم من ليس بملك كائنا من كان)) “আরবের সাহিত্য পরিভাষায় ‘আসসূক্বাতু’ (السوقة) বলতে বুঝায় এমন ব্যক্তিকে যে রাজকুমার নন।” পক্ষান্তরে নুমান ইবনে জাওন আশ শারাহীল এর কন্যা জাওনিয়া ছিলেন নজদ অঞ্চলের বনু হারিস গোত্রীয় একজন অভিজাত রাজকুমারী। ফলে সে রাজকুমারের সাথেই সংসার করার মনোবাসনা লালন করত এবং অহংকারী ছিল। যে কারণে নবী করীম (সা.) তার সাথে বাসর না করেই তাকে তালাক্ব দিয়ে দেন । কিন্তু ঐতিহাসিক বর্ণনাগুলো অনেক বেশি অসঙ্গতিপূর্ণ। যেজন্য নির্দিষ্ট কোনো বর্ণনার উপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া থেকে প্রধান প্রধান স্কলারগণ (ইমামগণ) প্রথম থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করে আসছেন। কিন্তু অল্প বিদ্যা ভয়ংকর টাইপের বঙ্গীয় এন্টি-ইসলাম ছুপা নাস্তিকদের বুঝানোর সাধ্য কার?

যেসব বর্ণনা হতে জাওনিয়াকে রাসূল (সা.)-এর স্ত্রী বলেই বুঝা যাচ্ছে আমি এখন সেসব বর্ণনার আলোকেই জাওনিয়ার ‘আউযুবিল্লাহি মিনকা’ কথাটির উত্তর দেব, ইনশাআল্লাহ। পাঠকবৃন্দ! বর্ণনাগুলোর মতনে যথেষ্ট ইযতিরাব রয়েছে, যা আমি প্রথম থেকেই বলে আসছি।

জ্ঞানীদের নিকট পরিষ্কার আছে যে, বিবাহিত স্ত্রী তার স্বামীকে যখন বলবে যে, আমি আল্লাহর জন্য তোমার কাছ থেকে অব্যাহতি বা ‘ফানাহ’ চাচ্ছি, তখন এ জাতীয় শব্দ রূপকার্থে ‘তালাক্ব’-কেই বুঝায়। অর্থাৎ সে যেন স্বামীর কাছ থেকে তালাক্ব চাচ্ছে! যাইহোক, আগেই বলে আসছি যে, বর্ণনাগুলোর সনদ সহীহ হলেও মতনে ইযতিরাব (উলোটপালোট) রয়েছে। ফলে এ জাতীয় ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া আইনসিদ্ধ হবেনা। যার দরুন ইসলামের ইতিহাসে প্রধান প্রধান স্কলারগণ সর্বসম্মতিক্রমে জাওনিয়াকে নবী করীম (সা.)-এর সহধর্মিণীদের মধ্যে শুমার করেননি।

আমি আমার দীর্ঘ স্টাডি এবং গবেষণা থেকে যতটুকু বুঝেছি এবং প্রমাণ সংগ্রহ করতে পেরেছি, ততটুকুই লিখার চেষ্টা করেছি। এখানে যদি কোনো ভুল ভ্রান্তি হয়ে থাকে তজ্জন্য আমি অধম একাই দায়ী থাকবো। আমি অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাচ্ছি। – লিখক

লিখক, মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ, তাং ১৭-০৬-২০২৪ ইং যোগাযোগ-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here