মির্যা গোলাম আহমদের নবুওয়ত দাবী প্রকৃত অর্থেই, রূপক বা ভিন্ন অর্থে ছিলনা

0
মির্যা গোলাম আহমদের নবুওয়ত দাবী প্রকৃত অর্থেই, রূপক বা ভিন্ন অর্থে ছিলনা

মির্যায়ী রচনাবলী থেকে তথ্যপ্রমাণ সহ নিম্নরূপ,

নবী ও রাসূল দাবী

আমার দাবী, আমি নবী এবং রাসূল। (দৈনিক আল হাকাম ৫ই মার্চ ১৯০৭ইং, মালফুযাত ১০/১২৭ পুরাতন এডিশন, ৫/৪৪৭ নতুন এডিশন)।

শোনো! প্রত্যেক আহমদী এ বিশ্বাসে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত যে, সেই পবিত্র, মহৎ ও ধর্মভীরু ব্যক্তিত্ব যাকে অনেকে মির্যা কাদিয়ানী বলে থাকে, তিনি আল্লাহর মনোনীত একজন নবী। (নবুওয়ত ও খেলাফত ১৭, আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত, বকশিবাজার ঢাকা)।

আল্লাহর আদেশ মোতাবেক আমি একজন নবী। আমি এই দাবী অস্বীকার করলে আমার পাপ হবে। (আখবারে আ’ম ২৬ মে ১৯০৮ ইং, নবুওয়ত ও খেলাফত ৭৬)।

তিনিই সত্য খোদা যিনি কাদিয়ানে তার রাসূল প্রেরণ করেছেন। (দাফেউল বালা ১২, রূহানী খাযায়েন ১৮/২৩১ মির্যায়ী রচনাসমগ্র যা ২৩ খণ্ডে প্রকাশিত)।

আমি একজন রাসূলও এবং নবীও অর্থাৎ আমি প্রেরিত হয়েছি এবং খোদার পক্ষ থেকে আমি গায়েবের সংবাদ প্রাপ্তও। (একটি ভুল সংশোধন, রূহানী খাযায়েন ১৮/২১১)।

যারা একজন সম্মানিত রাসূলকে গ্রহণ করল না, তারা ধ্বংস হয়ে গেছে। ভাগ্যবান সে যে আমাকে চিনতে পেরেছে। আমি খোদার সকল পথের শেষ পথ। আমি তার সকল নূরের শেষ নূর। দুর্ভাগা সে যে আমাকে প্রত্যাখ্যান করল। কারণ, আমি ছাড়া সব অন্ধকার। (কিশতিয়ে নূহ, রূহানী খাযায়েন ১৯/৬১)।

আমি সে খোদার নামে কসম করে বলছি যার হাতে আমার প্রাণ, তিনিই আমাকে পাঠিয়েছেন এবং তিনিই আমার নাম নবী রেখেছেন। (হাকীকাতুল ওহী, রূহানী খাযায়েন ২২/৫০৩)।

এতে কি সন্দেহ যে, আমার ভবিষ্যৎবাণীগুলোর পর দুনিয়াতে ভূমিকম্প ও অন্যান্য আপদ-বিপদ একের পর এক শুরু হওয়া আমার সত্যতার একটি নিদর্শন। মনে করা উচিত, পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে আল্লাহর রাসূলকে অস্বীকার করলে তখন অন্য অপরাধীদেরও পাকড়াও করা হয়। (হাকীকাতুল ওহী উর্দূ ১৬১)।

খোদাতালা কাদিয়ানে এই ধ্বংসাত্মক মহামারী থেকে রক্ষা করবেন। কেননা এটা তাঁর রাসূলের রাজধানী। (দাফেউল বালা ১০)।

তিনি (অর্থাৎ গোলাম আহমদ) নবী। আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সেই সকল শব্দে নবী বলেছেন, যে সকল শব্দ দ্বারা কুরআন ও হাদীসে পূর্ববর্তী নবীদের আখ্যায়িত করা হয়েছে। (হাকীকাতুন নবুওয়ত ৭০, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

মির্যা কাদিয়ানীর পুত্র এবং কাদিয়ানীদের দ্বিতীয় খলীফা মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ (মৃত. ৭ই নভেম্বর ১৯৬৫ ইং) লিখেছেন,

  • اگر میرے گردن کے دونوں طرف تلوار بھی رکھ دی جائے اور مجھے کہا جائے کہ تو یہ کہو کہ آنحضرت صلی اللہ علیہ وسلم کی بعد کوئی نبی نہیں آئےگا تو میں اس سے کہوں گا کہ تو جھوٹا ہے اور کذاب ہے آپ کے بعد نبی آسکتے ہیں اور ضرور آسکتے ہیں

অর্থ-“যদি আমার গর্দানের দুই পাশে তলোয়ারও ধরে রাখা হয় আর আমাকে বলতে বলা হয় যে, তুমি বল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর আর কোনো নবী আসতে পারেনা! তাহলে আমি অবশ্যই বলব যে, তুমি মিথ্যাবাদী ও মহা মিথ্যুক। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর নবী আসতে পারে, অবশ্যই আসতে পারে।” (আনওয়ারে খিলাফাত পৃষ্ঠা ৬৭, উর্দূ অনলাইন এডিশন, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

মির্যা বশির উদ্দীন একই গ্রন্থের আরেক জায়গায় পরিষ্কার লিখেছেন,

  • اور (انہیں) یہ سمجھ لیا جائے کہ خدا کے خزانے ختم ہوگی اس لئے کسی کو کچھ نہیں دے سکتا اسی طرح یہ کہتے ہیں کہ خواہ کتنا ہی زہد اور اتقاء میں بڑھ جائے پرہیزگاری اور تقوی میں کئی نبیوں سے اگے گزر جائے معرفت الہی کتنی ہی حاصل کر لے لیکن خدا اس کو کبھی نبی نہیں بنائے گا اور کبھی نہیں بنائے گا ان کا یہ سمجھنا خدا تعالی کی قدر کو ہی نہ سمجھنے کی وجہ سے ہیں ورنہ ایک نبی کیا میں تو کہتا ہوں ہزاروں نبی ہوں گے

অর্থ-“তারা মনে করছে যে, আল্লাহতালার ভাণ্ডার শেষ হয়ে গেছে, তাই তিনি (এখন) কাউকে কিছুই দেন না। তেমনিভাবে এও বলে যে, কোনো কেউ দুনিয়াবিরাগী এবং খোদাভীরুতায় ও তাকওয়া আর পরহেজগারীতে কতেক নবী অপেক্ষায় যতই অগ্রে পৌঁছে যায় না কেন, সে যত বেশিই খোদার মা’রেফত (দর্শন) লাভ করেনা কেন; কিন্তু খোদা তাকে কখনোই নবী বানাবেন না। তাদের এইরূপ মনে করার কারণ হচ্ছে খোদাতালার মর্যাদা বুঝতে না পারা। অন্যথা নবী শুধুই একজন কেন! আমি তো বলি, হাজার হাজার নবী হবেন।” (আনওয়ারে খিলাফাত পৃষ্ঠা ৬৪, উর্দূ অনলাইন এডিশন, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

কাদিয়ানীদের তথাকথিত দ্বিতীয় খলীফা মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ তাঁর পিতার “নবী” দাবীর বিষয়টিকে মূল্যায়ন করে লিখেছেন,

جب حضرت مسیح موعود نبی ثابت ہوگئے، ایسے ہی نبی جیسے دوسرے انبیاء علیہم السلام تو پھر ان کے بھی وہی حقوق ہیں جو دوسرے انبیاء کے ہیں-

অর্থাৎ হযরত মসীহ মওউদ (মির্যা সাহেব) যখন একজন নবী বলে সাব্যস্ত হয়ে গেল, ঠিক তেমনি একজন নবী; যেমন অন্যান্য নবীগণ, তখন তো উনার-ও অনুরূপ অধিকার থাকবে যেভাবে অন্যান্য নবীগণের রয়েছে। (কাদিয়ানীদের অফিসিয়াল উর্দূ পত্রিকা দৈনিক আল ফজল পৃ-১০ কলাম ৩, তারিখ ৩০-১২-১৯১৬ ইং)।

  • মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদের এ কথা থেকে প্রমাণিত হয়ে গেল যে, মির্যা কাদিয়ানী প্রকৃতপক্ষেই একজন “নবী” দাবীদার ছিল। অতএব, তার অনুসারীদের বিভিন্ন রচনা কিবা বক্তৃতায় সেটিকে “উম্মতি-বুরুজী-জিল্লি” শব্দে ব্যাখ্যা দিতে চাওয়া সুস্পষ্ট একটা ধোকা ও প্রতারণা। সাধারণ মানুষের ক্ষোভ এবং প্রশ্নবাণে আত্মরক্ষার হীন-কৌশল ছাড়া আর কিছুই না।

সুতরাং এতে কী সন্দেহ যে, প্রতিশ্রুত মসীহ কুরআন কারীমের অর্থ বিচারেও নবী এবং অভিধানের অর্থ বিচারেও নবী। (হাকীকাতুন নবুওয়ত ১১৬, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

অতএব ইসলামি শরীয়ত নবী শব্দের যে ব্যাখ্যা দেয় সে ব্যাখ্যা হিসেবে হযরত মির্যা সাহেব কিছুতেই রূপক নবী নন, বরং প্রকৃত অর্থেই নবী। (হাকীকাতুন নবুওয়াত ১৭৪, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

নবী হওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে আমরাও মির্যা গোলাম আহমদকে পূর্ববর্তী নবীগণের মতোই নবী মনে করি। (হাকীকাতুন নবুওয়াত ২৯২, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

১৯০১ সাল পর্যন্ত মির্যা সাহেবের ধারণা ছিল যে, আমার নবুওয়ত অপূর্ণাঙ্গ ও খণ্ডিত, যেন তিনি ছায়ানবী। কিন্তু ১৯০১ সালে আল্লাহর ওহী তাকে মনোযোগী করে যে, তার নবুওয়ত অপূর্ণাঙ্গ কিংবা খণ্ডিত নয়, বরং তার নবুওয়ত ঠিক সেই রকম যেমন ছিল পূর্ববর্তী সকল নবীর। এই ওহীর পর তার আকীদা পরিবর্তন হয়ে যায়। পরে তিনি আর নিজের নবুওয়তকে অপূর্ণাঙ্গ ও খণ্ডিত বলেননি। (হাকীকাতুন নবুওয়াত ১২০, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

১৯০১ সালের পূর্বের যেসব উদ্ধৃতিতে তিনি নবী হওয়াকে অস্বীকার করেছেন, এখন তা রহিত হয়ে গেছে এবং সেগুলো থেকে প্রমাণ উপস্থাপন করা এখন ভুল। (হাকীকাতুন নবুওয়াত ১২১, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

পূর্বেও তাকে নবী নামে ডাকা হতো। কিন্তু তিনি তার ব্যাখ্যা করতেন। এরপর আল্লাহ তায়ালা যখন বারবার ইলহামের মাধ্যমে তাকে নবী বলে ডাকছিলেন, তখন তিনি উপলব্ধি করলেন যে, আসলে তিনি নবীই, অন্য কিছু নন। যেমনটি পূর্বে মনে করতেন। নবী শব্দটি যা তার ইলহামে ব্যবহৃত হত তা একেবারেই দ্ব্যর্থহীন ও স্পষ্ট, ব্যাখ্যার সুযোগ নেই। (হাকীকাতুন নবুওয়ত ১২৪, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

  • লিখক, মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ
  • কাদিয়ানী মতবাদ বিশেষজ্ঞ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here