Home ঈসা মসীর জীবন ও মৃত্যু ঈসা (আ.) আকাশে সালাত ও যাকাত কিভাবে করছেন?

ঈসা (আ.) আকাশে সালাত ও যাকাত কিভাবে করছেন?

0

প্রশ্ন : ঈসা (আ:) যদি আকাশে জীবিত থাকেন তাহলে সালাত, যাকাত কিভাবে আদায় করছেন…?

জবাব : বলে রাখা জরুরি যে, এ ধরনের প্রশ্ন কাদিয়ানীরাই ছুড়ে দেয়, যাতে তারা মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর কথিত ‘রূপক মসীহ’ দাবীকে বৈধতা দিতে পারে।

জ্ঞানীদের নিকট গোপন থাকেনি যে, ‘সালাত এবং যাকাত’ এগুলো ওয়াক্ত কিবা সময়ের সাথে সম্পর্কিত। আর আমরা জানি যে, সময় নির্ণয় হয় সূর্যের উদয় আর অস্তমিত হবার মাধ্যমে। কাজেই বুঝা গেল, সূর্যের উদয় অস্ত ব্যতীত যেহেতু সময় নির্ণয় হয়না সেহেতু সূর্যকে বাদ দিয়ে সালাত এবং যাকাত আদায়ের প্রশ্নই আসতে পারেনা।

যেজন্য সূরা মরিয়মের ৩১ নং আয়াত দ্বারা হযরত ঈসা (আ:) সম্পর্কে অনুরূপ প্রশ্ন তোলা ভুল। কেননা ঈসা (আ:) এমন এক জগতে রয়েছেন যেখানে সময়ের নির্ণায়ক সূর্য তো নেই, উপরন্তু সেখানকার সকল নিয়ম-কানূন পৃথিবী হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন। ফলে ঈসা (আ:)-এর উপর সালাত এবং যাকাতের হুকুম পৃথিবীতে পুনরায় ফিরে আসার পূর্ব পর্যন্ত স্থগিত।

মনে করুন, আপনি এ মাত্র আসরের সালাত আদায় করলেন। একটু পরেই মাগরিব আদায় করার অপেক্ষায়। আর সবাই জেনে থাকবেন যে, সূর্য অস্তমিত না হলে মাগরিবের ওয়াক্ত হয়না।

তেমনি সূর্য আপনা কক্ষপথ দিয়ে পুরোপুরি একবার পরিভ্রমণ করার মাধ্যমে দিবারাত্রির পালাবদল হয়ে থাকে। এভাবে ৩৬৫ দিন অন্তে বছর পূর্ণ হয়ে থাকে। সুতরাং আকাশে যখন সূর্যের কোনো উপস্থিতি-ই নেই তখন দিবারাত্রির কল্পনা করতে পারি কিভাবে? আর যেখানে দিবারাত্রির কোনো পালাবদল নেই সেখানে বছর কী দিয়ে হবে? তো তাহলে যাকাতের জন্য যে বছরপূর্তি হতে হয় তার কী হবে?? এইবার বুঝে থাকলে বলুন, ঈসা (আ:)-এর জন্য আকাশে যাকাতের হুকুম কিজন্য বিধিবদ্ধ নয়!!

একজন জ্ঞানী মাত্রই জানবেন যে, নেসাব পরিমাণ সম্পদের উপর পূর্ণ একবছর গত না হওয়া পর্যন্ত যাকাত ফরজ হয়না। এ সম্পর্কে রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন – ليس في المالِ زكاةٌ حتَّى يحولَ عليه الحوْلُ অর্থাৎ “যে মাল বা সম্পদ পূর্ণ এক বছর মালিকের মালিকানায় থাকেনি তাতে যাকাত ফরজ নয়।” (তিরমিজি, বায়হাক্বী, মুসনাদে বাজ্জার, ইবনু মাজাহ)। (ক্লিক)

তাই হযরত ঈসা (আ:) যতদিন আকাশে থাকবেন ততদিন তাঁর ব্যাপারে সালাত এবং যাকাতের প্রশ্ন তোলা ঠিক হবেনা।

হয়ত প্রশ্ন করতে পারেন যে, পৃথিবীতে তো এমনও বহু জায়গা রয়েছে যেখানে ৫/৬ মাসও সূর্যের উপস্থিতি সত্ত্বেও দিবারাত্রির পরিবর্তন হয় না। তাহলে কি সেখানকার মুসলিমরা সালাত আদায় করবেনা?

জবাবে বলা হবে যে, সেখানকার মুসলমানগণ কিভাবে সালাত আদায় করবে এ সম্পর্কে ইসলামের শিক্ষা হল, তাদেরকে আনুমানিকভাবে সময়ের তারতম্য করে সালাত আদায় করতে হবে। কেননা, ওই জায়গায় দিবারাত্রির পালাবদল অনিয়মিত হলেও কিন্তু সময়ের চাকা ঘূর্ণায়মান অর্থাৎ সময় অবিরত চলমান। ফলে তাদের জীবনযাত্রা থেমে থাকেনা। শিশুরা কৈশোরকালে আর কৈশোররা তারুণ্যে উপনীত হয়, ইত্যাদি।

পক্ষান্তরে ঈসা (আ:) যেই জগতে সেখানকার সব কিছুই আপনা হালে স্থির ও সময়ের চাকা অঘূর্ণায়মান। মূলত এই কারণেই আকাশে যতদিন ঈসা (আ:) থাকবেন ততদিন তাঁকে এগুলো করতে হবেনা।

এখন আবার প্রশ্ন জাগতে পারে যে, আকাশে সময়ের চাকা অঘূর্ণায়মান হবার দলিল কোথায়?

জবাবে বলব, (১) সহীহ মুসলিম শরীফের “কিতাবুল ফিতান” অধ্যায় হতে একটি হাদীসে রাসূলে করীম (সা:) থেকে বর্ণিত আছে, “দুজন ফেরেশতার পাখায় ঈসা (আ:) আপনা বাহুদ্বয় রেখে পৃথিবীতে অবতরণ করবেন। তখন তিনি মাথা নিচু করলে সদ্য গোসলখানা থেকে বেরিয়ে আসা ব্যক্তির মাথা থেকে যেভাবে পানি ঝরতে থাকে সেভাবে তাঁর মাথা থেকে পানির ফোটা ঝরতে থাকবে।”

এখন কৌতূহল জাগবে যে, উনার মাথায় পানির ফোটা কোত্থেকে এল? তার জবাব পাবেন বিশিষ্ট তাফসীরকারক ইমাম ইবনে আবী হাতিম (রহঃ) এর তাফসীরে। তিনি বিশিষ্ট সাহাবী হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) হতে এই মর্মে একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন।

তিনি বলেন, “আল্লাহতালা যখন ঈসা (আ:)-কে আকাশে উঠিয়ে নিতে ইচ্ছে করলেন তখন ঘটনা ছিল, বায়তুল মুকাদ্দেসের একটি কক্ষে ঈসা (আ:)-এর ১২ জন হাওয়ারী অবস্থান করছিলেন। তিনি মসজিদের একটি ঝরনায় গোসল করে ওই কক্ষে শিষ্যদের নিকট যান। তাঁর মাথার চুল থেকে তখনো পানি ঝরে পড়ছিল।… (সেখানে আপনা হাওয়ারীদের সাথে কথোপকথন শেষে) জিব্রাইল (আ:) মসজিদের একটি বাতায়ন পথে ঈসা (আ:)-কে আকাশে উঠিয়ে নেন।” এটাই সেই পানি যেটি আকাশে সময়ের স্থিরতা হেতু ঈসা (আ:)-এর মাথায় অনবরত অপরিবর্তিত ছিল। ফলে তিনি যখন নাযিল হবেন তখন তাঁর মাথা থেকে গড়িয়ে পড়তে শুরু করবে। (সংক্ষেপে)

(২) আরো একটি দলিল দেব। হযরত আবু হোরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত আছে রাসূলে করীম (সা:) বলেছেন – فإنه شاب و ضيئ أحمر “ফা-ইন্নাহু শা-ব্বুন ওয়া দ্বী’য়ুন আহমারু” অর্থাৎ (ঈসা ইবনে মরিয়ম যখন নাযিল হবেন তখন তাঁকে চেনার আলামত হল) “তিনি নওজোয়ান এবং খুবই পবিত্র পরিচ্ছন্ন আর লাল বর্ণের হবেন।” (মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবাহ ৮/৬৬০)। ক্লিক

খুব খেয়াল করুন, তিনি আকাশে চলে গেলেন যা আজকের দিন পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার বছরের চেয়ে বেশি। তদুপরি তিনি যখন নাযিল হবেন তখনো কিনা “যুবক”-ই থাকবেন। তাঁর বয়স বাড়ল না, শারীরিক কোনো পরিবর্তনও হলনা। তার কারণ তো এটাই যা আমি উপরে বলে এসেছি।

যাইহোক, প্রমাণিত হল যে, আকাশে যেহেতু দিবারাত্রির কোনো পরিবর্তন নেই, সময়ও এক অবস্থায় বিদ্যমান; তাই তাঁর জন্য সালাত এবং সাওম ইত্যাদি কিছুই বিধিবদ্ধ নয়।

অতএব, যারা ঈসা (আ:)-কে মৃত সাব্যস্ত করতে খোঁড়া যুক্তির জোড়াতালি প্রদর্শন করেন এবং তিনি আকাশেও সালাত, যাকাত আদায় করে কিনা, এইরূপ কাণ্ডজ্ঞানহীন প্রশ্ন ছুড়ে দেন; তারা কি আকাশে সূর্য উদয় আর অস্ত যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়ে এসেছেন? সময়ের চাকা ঘূর্ণায়মান রেখে এসেছেন? কবি এখানে নিরব!!!

আয় আল্লাহ এই কোন বোকাজাতি! আপনা জ্ঞান বুদ্ধি অন্যত্রে বন্ধক রেখে তারা এইরূপ সহজ একটা বিষয়ে এই কেমন জগাখিচুড়ী পাকিয়ে বসল!!

আহমদীবন্ধুরা! আপনাদের কথিত ‘তবলিগি পকেট বুক’ থেকে এভাবে চর্বিতচর্বণ বাদ দিয়ে ভয় করুন শেষদিবসের মালিককে। খোদাতায়ালার পবিত্র কালামের বিরুদ্ধে আপনা বিকৃত যুক্তি যে একটা সময় ভেস্তে যাবে তা কি এখনো বুঝে আসেনি? আল্লাহ আপনাদের হিদায়াত দিন! আমীন।

লেখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here