Home ইমাম মাহদী ইমাম মাহদীর পেছনে ঈসা মসীহ সালাত পড়বেন

ইমাম মাহদীর পেছনে ঈসা মসীহ সালাত পড়বেন

0

ইমাম মাহদীর আগমনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বহু হাদীসে ভবিষ্যৎবাণী করেছেন যে, শেষ যুগে হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম এর আগমন ঘটবে। তিনি নবী বংশের হবেন, নবীকন্যা হযরত ফাতেমার পুত্র হাসানের বংশে জন্মগ্রহণ করবেন। মাহদী অর্থ সুপথপ্রাপ্ত। এটি তাঁর উপাধি থাকবে। তিনি মদীনায় জন্মিবেন, যথাসময়ে মক্কায় চলে আসবেন। হজ্জের সময় তাওয়াফরত অবস্থায় তিনি প্রতীক্ষিত মাহদী হিসেবে সে সময়কার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নিকট সনাক্ত হবেন। তিনি হাজরে আসওয়াদ এবং মাকামে ইবরাহীমের মধ্যখানে ‘খিলাফাত’ এবং লি-ই’লায়ে কালিমাতিল্লাহ’র উদ্দেশ্যে জিহাদের উপর বয়াত গ্রহণ করবেন। তাঁর নাম হবে মুহাম্মদ, পিতার নাম হবে আব্দুল্লাহ। তাঁর আত্মপ্রকাশের বছর কতেক পরেই প্রতিশ্রুত ঈসা মসীহ দামেস্কের (উমাইয়া মসজিদের সন্নিকটে-শায়খ ইবনু তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ) শ্বেত মিনারার পাশে ‘আকাশ’ থেকে ফেরেশতার ডানায় ভর করে অবতরণ করবেন। সহীহ মুসলিম শরীফের হাদীসে এসেছে, واضِعًا كَفَّيْهِ على أَجْنِحَةِ مَلَكَيْنِ অর্থাৎ দু’জন ফেরেশতার দুই ডানার উপর তিনি তাঁর দুই বাহু রেখে অবতরণ করবেন (মুসলিম, কিতাবুল ফিতান ওয়া আশরাতুস সা’আহ ৭১০৬)।

  • প্রসঙ্গত, সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে অবস্থিত উমাইয়া মসজিদ বা দামেস্ক গ্র্যান্ড মসজিদ বিশ্বের বৃহত্তম মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম। উমাইয়া খলীফা ওয়ালিদ বিন আবদুল মালিকের শাসনামলে ৭০৫ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। দীর্ঘ নয় বছরের পরিশ্রম শেষে ৭১৪ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটির নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়। ইসলামী বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন যে, সহীহ মুসলিমসহ অন্যান্য হাদিসগ্রন্থের বর্ণনা অনুযায়ী কেয়ামতের আগে এখান থেকেই বনী ইসরাইলি নবী হযরত ঈসা (আ.) পৃথিবীতে ফিরে আসবেন। মসজিদটির দক্ষিন-পূর্ব, দক্ষিন-পশ্চিম কোণ এবং উত্তর দিকে মোট তিনটি মিনার রয়েছে। এরমধ্যে বাম দিকের মিনারটি منارة المسيح বা ‘যিশু মিনার’ (minarat of jesus) নামেও পরিচিত।

ইমাম ইবনু হাজার আল হাইসামী (রহ.)-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, ঈসা মসীহ এর অবতরণের স্থানটি কোথায় হবে?

তিনি এর উত্তরে ‘ফাতাওয়ায়ে হাদীছিয়্যাহ’ কিতাবে লিখেছেন,

أنه سئل أي محل ينزل به عيسى عليه السلام؟ فأجاب بقوله: الأشهر ما صح في مسلم أن ينزل عند المنارة البيضاء شرقي دمشق، وفي رواية بالأردن، وفي أخرى بعسكر المسلمين، ولا تنافي لأن عسكرهم بالأردن ودمشق وبيت المقدس من ذلك

অর্থ- প্রশ্ন করা হয় যে, ঈসা আলাইহিস সালামের অবতরণস্থল কোথায় হবে? এর উত্তর হচ্ছে, অধিক প্রসিদ্ধ আছে যে, মুসলিম শরীফের বিশুদ্ধ বর্ণনামতে তিনি দামেস্কের পূর্বপ্রান্তে শ্বেত মিনারার সন্নিকটে অবতরণ করবেন। অন্য বর্ণনায় আছে তিনি জর্ডান ভূমিতে, অন্য বর্ণনামতে তিনি মুসলমানদের সেনাছাউনিতে অবতরণ করবেন। তবে এ বর্ণনাগুলোয় কোনো অসঙ্গতি নেই। তার কারণ, মুসলমানদের সেনাছাউনি তখন জর্ডান, সিরিয়া এবং জেরুজালেম সহ সবখানেই স্থাপিত হবে।

ফাতাওয়ায়ে হাদীছিয়্যাহ পৃষ্ঠা নং ৩২৭ (ক্লিক)

হাদীস-১ :-

নু’আইম বিন হাম্মাদ আল মারূযী (রহ.) বর্ণনা করেছেন,

حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ، عَنْ هِشَامٍ، عَنْ مُحَمَّدٍ، قَالَ:«الْمَهْدِيُّ مِنْ هَذِهِ الْأُمَّةِ، وَهُوَ الَّذِي يَؤُمُّ عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ عليهما السلام»

অর্থ- গ্রন্থাকার নু’আইম বিন হাম্মাদ আল মারূযী থেকে, তিনি আবূ উসামাহ থেকে, তিনি হিশাম থেকে, তিনি মুহাম্মদ থেকে, তিনি বলেন, মাহদী এ উম্মতের মধ্য থেকে হবেন। তিনি ঈসা ইবনু মরিয়মের ইমামত করবেন। (আল ফিতান হাদীস নং ১১০৭)।

হাদীসের মান, সহীহ

হাদীস ২:-

নু’আইম বিন হাম্মাদ আল মারূযী (রহ.) বর্ণনা করেছেন,

عن عبد الله بن عمرو قال: المهدي ينزل عليه عيسى ابن مريم، ويصلي خلفه عيسى.

অর্থ- সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, ঈসা ইবনু মরিয়ম ইমাম মাহদীর সময় অবতরণ করবেন এবং তিনি তাঁর পেছনে সালাত আদায় করবেন। (আল ফিতান হাদীস নং ১০৪৩)।

হাদীসের মান : সহীহ

ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) লিখেছেন,

وقال أبو الحسن الخسعي الآبري في مناقب الشافعي تواترت الاخبار بأن المهدي من هذه الأمة وأن عيسى يصلي خلفه ذكر ذلك ردا للحديث الذي أخرجه ابن ماجة عن أنس وفيه ولا مهدي الا عيسى

অর্থ- “হাফিয আবুল হাসান আল আবরী (২৮৩-৩৬৩ হি.) ‘মানাকিবু শাফেয়ী’ গ্রন্থে বলেছেন, সংবাদ সমূহ এ মর্মে তাওয়াতূর পর্যায়ে উপনীত হয়ে গেছে যে, নিশ্চয়ই ইমাম মাহদী এ উম্মতের মধ্য থেকেই হবেন এবং ঈসা (আ.) তাঁর পেছনে সালাত আদায় করবেন। এটি আনাস হতে ইবনে মাজাহ এর বর্ণিত হাদীসেরই প্রত্যাখ্যানকারী যেখানে ‘ওয়া লাল মাহদী ইল্লা ঈসা’ লিখা রয়েছে।” (ফাতহুল বারী ৬/৩৫৮)।

  • ইবনে মাজাহ-এর একটি বর্ণনায় এসেছে, কোনো মাহদী নেই ঈসা ব্যতীত, বর্ণনাটির সনদ সর্বসম্মত ইমামগণের মতে খুবই দুর্বল ও মুনকার। এর সূত্র মুনকাতে বা বিচ্ছিন্ন এবং তার একজন রাবী মাজহূল বা অপরিচিত ও অন্য জন মিথ্যাবাদী হিসেবে অভিযুক্ত। এ সম্পর্কে পড়তে ক্লিক করুন

ইমাম আবুল হাসান মুহাম্মদ ইবনু হোসাইন আল আবরী (২৮৩-৩৬৩ হি.) বলেছেন,

وَقَدْ تَوَاتَرَتِ الأَخْبَارُ وَاسْتَفَاضَتْ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِذِكْرِ الْمَهْدِيِّ وَأَنَّهُ مِنْ أَهْلِ بَيْتِهِ وَأَنَّهُ يَمْلُكُ سَبْعَ سِنِينَ وأنه يؤم الأَرْضَ عَدْلا وَأَنَّ عِيسَى يَخْرُجُ فَيُسَاعِدُهُ عَلَى قَتْلِ الدَّجَّالِ وَأَنَّهُ يَؤُمُّ هَذِهِ الأُمَّةَ وَيُصَلِّي عِيسَى خَلْفَهُ

অর্থ- তাঁর (ইমাম মাহদী) আবির্ভাব এবং আহলে বাইয়েত (নবী বংশ) থেকে হওয়া এবং সাত বছর পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনা করা এবং ভূপৃষ্ঠ ন্যায়বিচার দ্বারা পরিপূর্ণ করা এবং ঈসা আলাইহিস সালামের সাথে (জিহাদের উদ্দেশ্যে ও রণসাজে) বের হওয়া এবং ফিলিস্তিনের ভূমিতে ‘লুদ‘ নামক ফটকে দাজ্জালকে হত্যার অভিযানে ঈসাকে সহযোগিতা করা এবং এ উম্মতের ইমামতে কোবরা’র দায়িত্ব পালনকরা ও ঈসা তাঁর পেছনে সালাত আদায় করার সমর্থনে হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বহু মুতাওয়াতির (ধারাবাহিক) বর্ণনা এসেছে।

আল মানারুল মুনীফ পৃষ্ঠা নং ১৪২, ইবনু কাইয়ুম

ইমাম জালালুদ্দীন আস সুয়ূতী (রহ.) লিখেছেন,

هذا من أعجب العجب، فإنّ صلاة عيسى خلف المهدي ثابتة في عدّة أحاديث صحيحة بإخبار رسول اللّه، وهو الصادق المصدّق

অর্থ- ব্যাপারটি অত্যন্ত অবাককরা যে, নিশ্চয়ই মাহদীর পেছনে ঈসার সালাত আদায় করাটা সদা সত্যবাদী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বহু সহীহ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত।

ইমাম সুয়ূতী রচিত ‘নুযূলু ঈসা ইবনে মরিয়ম আখিরায জামান‘ পৃষ্ঠা নং ৫৬। ক্লিক

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম এ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here