নবীজী (সা:) কি গায়েব জানতেন?

0
নবীজী (সা:) কি গায়েব জানতেন?

নবীজী (সা:)-এর গায়েব জানা প্রসঙ্গ :

প্রশ্নকর্তা : নবীজী (সা:) কি গায়েব জানতেন?

উত্তরদাতা : আগে বলুন, গায়েব কাকে বলে?

প্রশ্নকর্তা : তাফসীরে কাবীর গ্রন্থের ২য় খন্ডের ১৭৪ নং পৃষ্ঠায় ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (রহ:) লিখেছেন : গায়েব হচ্ছে পঞ্চ ইন্দ্রিয়শক্তির বহির্ভূত অদৃশ্যবস্তু।

উত্তরদাতা : তাহলে এবার আপনিই বলুন, উক্ত সংজ্ঞামতে রাসূল (সা:) এর গায়েব জানা বস্তুগুলো কী কী?

প্রশ্নকর্তা : কেন! জান্নাত জাহান্নাম সহ আরো তো কত কিছু!! আপনি কি মনে করেন এগুলো গায়েবী বিষয় নয়?

উত্তরদাতা : তা অবশ্যই। কিন্তু রাসূল (সা:) তো এগুলো আল্লাহ’র পক্ষ থেকে ওহীর মাধ্যমেই জেনেছেন! (পবিত্র কুরআনের সূরা আন নাজম আয়াত নং ৩-৪ দ্রষ্টব্য)। অর্থাৎ এগুলো তো তিনি ওহীর মাধ্যমেই জেনেছিলেন!

প্রশ্নকর্তা : তাতে কী! ওহীর মাধ্যমে জানলে কি সেটি ‘গায়েব’ হবেনা?

উত্তরদাতা : না, গায়েব হবেনা। তখন নাম পবিরর্তন হয়ে ‘ইলমে ওহী’ হয়ে যাবে। আপনি তাফসীরে রূহুল বয়ান এর ২১ নং পারা থেকে দেখুন। সেখানে সুস্পষ্টভাবে লিখা আছে, নবীগণ হতে যে সব অদৃশ্যের সংবাদ বর্ণিত আছে তা শুধুমাত্র بطريق الوحى অর্থাৎ ওহীর প্রক্রিয়ায় ছিল। অর্থাৎ ওহীর মাধ্যমে প্রাপ্ত অদৃশ্যবস্তুকে ইলমে ওহী তথা ঐশীলব্ধ জ্ঞান-ই বলা হবে! যেমন হাদীসের ইলমকে ‘ইলমে হাদীস’ এবং ফিকহের ইলমকে ‘ইলমে ফিকহ’ বলা হয়। আরো সহজ করে বলতে গেলে, যে জ্ঞান শুধুমাত্র আল্লাহর নিকটেই সংরক্ষিত তা গায়েব বা অদৃশ্য জ্ঞান; কিন্তু যখন তা কোনো গায়রুল্লাহ’র নিকট প্রকাশিত হবে তখন তা ‘গায়েব’ ছাড়া ভিন্নভিন্ন নামে নামকরণ হবে।

প্রশ্নকর্তা : আচ্ছা নবীজী (সা:) গায়েব জানেন, এইরকম বিশ্বাস রাখা কেমন?

উত্তরদাতা : নবীজী (সা:) গায়েব জানেন, এইরকম বিশ্বাস রাখা অন্যায়। আপনি পবিত্র কুরআনের সূরা নামাল এর ৬৫ নং আয়াতটির অনুবাদ দেখুন। আল্লাহ নিজেই বলছেন, ‘লা ইয়া’লামু মান ফিছ ছামাওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্বিল গাইবা ইল্লাল্লাহু।’ অর্থাৎ আসমান আর জমিনে যা কিছু রয়েছে তারা কেউই গায়েব জানেনা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া। তো এবার কী বুঝলেন? তাছাড়া হানাফী মাযহাবের শ্রেষ্ঠ ফকিহ্ ও মুহাদ্দিস মোল্লা আলী ক্বারী (রহ:) তিনি ইমাম আবু হানিফা (রহ:)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন যে, ইমাম সাহেব এমন ব্যক্তির ব্যাপারে কুফুরীর ফতুয়া দিয়েছেন যে নবীজী (সা:)-কে গায়েব জান্তা মনে করে। দেখুন ফিকহে আকবর এর ব্যাখ্যামূলক কিতাব ‘শরহে ফিকহে আকবর’ (পৃষ্ঠা নং ৮৫; মোল্লা আলী ক্বারী)। সংক্ষেপে। তবে হ্যাঁ, নবীজী (সা:) সম্পর্কে আমাদের আকীদা বড়জোর এমন হতে পারে যে, তিনিই (সা:) একমাত্র খুব জান্তা, তবে সব জান্তা নন। কারণ সব জান্তা একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’লা।

লিখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here