Home নূর আগুন ও মাটি রাসূল (সা:) কিসের সৃষ্টি? নূরের না মাটির?

রাসূল (সা:) কিসের সৃষ্টি? নূরের না মাটির?

রাসূল (সা:) কিসের সৃষ্টি? নূরের না মাটির?

রাসূল (সা:)-এর সৃষ্টিমূল উপাদান!

(যাদের সময় কম তারা এই লিখাটি পড়তে পারেন)

প্রশ্নকর্তা : রাসূল (সা:) কিসের সৃষ্টি? নূরের না মাটির?

উত্তরদাতা : পবিত্র কুরআনের সূরা ত্বহা এর ৫৫ নং আয়াত দেখুন। সেখানে সুস্পষ্টভাবে ‘মিনহা খালাক্বনাকুম’ (منها خلقناكم) অর্থাৎ তোমাদেরকে এই মাটি থেকেই সৃষ্টি করেছি, উল্লেখ আছে; অনুবাদ, ফতুয়ায়ে আফ্রিকা পৃ ৮২; ঊর্দূ ভার্সন। আয়াতটির ‘কুম’ (كم/You) বহুবচনাত্মক শব্দটি আম বা ব্যাপকার্থক। এর তাৎপর্যে বিনা ব্যতিক্রমে নবী, গয়রে নবী সকল কবর পথযাত্রী অন্তর্ভুক্ত। অতএব রাসূল (সা:) তিনিও যেহেতু একজন কবর পথযাত্রী ছিলেন সেহেতু তাঁর (সা:) শরীর মুবারকের সৃষ্টিমূল উপাদানও মাটি ছিল প্রমাণিত।

প্রশ্নকর্তা : কিন্তু বহু মওলানা সাহেব তো বলে থাকেন, আল্লাহতালা সর্বপ্রথম রাসূল (সা:)-এর নূর মুবারক সৃষ্টি করেছেন!

উত্তরদাতা : এর উত্তর আমি আমার পক্ষ থেকে না দিয়ে বরং সর্বজন শ্রদ্ধেয় ও মেশকাতুল মাসাবীহ্ কিতাবের ব্যাখ্যাকারক হযরত মোল্লা আলী ক্বারী (রহ:) এর উদ্ধৃতিতে দিতে চাই। তিনি লিখেছেন: সর্বপ্রথম রাসূল (সা:) এর নূর মুবারক সৃষ্টি করা হয়েছে বলে যে কথা বর্ণিত আছে তদ্দ্বারা উদ্দেশ্য হল আল্লাহতালা সর্বপ্রথম তাঁর রূহ মুবারক সৃষ্টি করেছেন। (মেরকাত শরহে মেশকাত, কিতাবুল ঈমান, ঈমান বিল কদর অধ্যায়, হা/৯৪; স্ক্রীনশট দ্রষ্টব্য)।

তবে ইমাম সুয়ূতী (রহ:) বলেছেন, সর্বপ্রথম রাসূলের নূর সৃষ্টি করা সম্পর্কিত বর্ণনাটির নির্ভরযোগ্য কোনো সনদ (ধারাবাহিক বর্ণনাসূত্র) নেই। (আল-হাভী লিল ফাতাওয়া ১/৩২৫, ফাতাওয়াল কুরআনিয়্যা, সূরা মুদ্দাসসির অধ্যায় দ্রষ্টব্য)। স্ক্রিনশট দেখুন।

তাই শুধুমাত্র নূর এর রেওয়ায়েতগুলোর সনদের খোঁজ পাওয়া ও তা সহীহ প্রমাণিত হওয়া শর্তেই নিশ্চিত হওয়া যেতে পারে যে, রাসূল (সা:)-এর রূহ মুবারক-ই সর্বপ্রথম সৃষ্ট! তবে সহীহ এবং দ্বয়িফ মিলে বহু বর্ণনা দ্বারা প্রথম সৃষ্টির বহু কিছুই উল্লেখ রয়েছে। সেক্ষেত্রে জবাব হল, সেই প্রথম সৃষ্ট বস্তুগুলো তাদেরই সমজাতীয় বস্তুর মধ্য থেকেই উদ্দেশ্য। যেমন রূহ সমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম সৃষ্ট মুহাম্মদ (সা:)-এর রূহ মুবারক, যাকে সম্মানসূচক ‘নূর’ বলা হয়। মোল্লা আলী ক্বারী লিখেছেন : ‘আন্না কুল্লা ওয়াহিদিন মিম্মা যুকিরা খুলিক্বা ক্বাবলু মা হুয়া মিন জিনসিহি।’ সংক্ষেপে। (মেরকাত, কিতাবুল ঈমান)।

প্রশ্নকর্তা : কিন্তু আলা হযরত আহমদ রেজাখাঁ বেরলভী (আলাইহির রাহমাহ্) কর্তৃক লেখিত কিতাব ‘আসসানিয়াতুল আনীফা ফী ফতুয়ায়ে আফ্রীকা’ নামক কিতাবের একস্থানে লিখা আছে “হুজুরপাক (সা:) আল্লাহর নূর হতে সৃষ্ট।” যেমন ‘মুঝে আপনে নূর চে পয়দা কিয়া’। অর্থাৎ আমাকে তিনি স্বীয় নূর হতে সৃষ্টি করেছেন। একই পৃষ্ঠার আরেকটু নিচে হাদীসের উদ্ধৃতিতে লিখা আছে, হুজুর আকদাস নে ফরমাইয়া… মে আওর আবুবকর ওয়া উমর এক মেট্টি চে বনে উসি মে দফন হোঁ গি। অর্থাৎ হযরত আক্বদাস (সা:) ইরশাদ করেছেন… আমি এবং আবুবকর আর উমর তিনোজন একই (গোরস্তানের) মাটি হতে সৃষ্ট এবং তাতেই দাফন হবো।’ (রেফারেন্স ‘ফতুয়ায়ে আফ্রিকা’ পৃষ্ঠা নং ৮২, মাসয়ালা নং যথাক্রমে ৬২-৬৩, ঊর্দূ ভার্সন, মাকতাবায়ে নূরিয়া রেজভিয়া, ফয়সালাবাদ; স্ক্রীনশট দ্রষ্টব্য)।


উত্তরদাতা : হ্যাঁ, আমি নিজেও কিতাবটি পড়েছি। উনার বক্তব্য দুটি বাহ্যত স্ববিরোধী। তাই উচিত, মতভেদপূর্ণ বিষয়গুলো সমাধানের উদ্দেশ্যে আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় হাবীব মুহাম্মদে আরাবী (সা:)-এর নিকটই সমর্পণ করা। পবিত্র কুরআন (৪:৫৯) আমাদের এটাই শিক্ষা দেয়। তাই আলা হযরত (আলাইহির রহমাহ্) কোথায় কী লিখলেন আর না লিখলেন সেটি প্রকৃত বিচারে মোটেও গুরুত্ব রাখেনা। কেননা তিনি না আল্লাহ আর না তাঁর প্রেরিত কেউ! আল্লাহ উনাকে ক্ষমা করুন।

প্রশ্নকর্তা : প্রত্যেক নবজাতক শিশু মৃত্যুর পর যেই স্থানে দাফন হবে ফেরেশতা সেই স্থানের মাটির কিছু অংশ নিয়ে এসে মাতৃগর্ভস্থিত নোতফার উপর ছিটিয়ে দেন। তারপর সেই মৃত্তিকা থেকেই তাকে সৃষ্টি করা হয়-এমন কথাও তো আলা হযরতের কিতাবে লিখা আছে! (দেখুন, পৃষ্ঠা নং ৮৩, মাসয়ালা নং ৬৩)।

উত্তরদাতা : জ্বী হ্যাঁ। তিনি একখানা হাদীসের উদ্ধৃতিতে এবং বে-গয়রে ইসতিছনা তথা বিনা ব্যতিক্রমেই এইরূপ বয়ান দিয়েছেন। তবে হাদিসটির সূত্র (Chain) কতটা সহীহ তা আল্লাহপাকই সব চে ভাল জানেন। এ থেকেও প্রমাণ মিলে যে, রাসূল (সা:)-এর সৃষ্টিমূল উপাদানে আপনা কবরের মাটি মিশ্রিত ছিল। পার্থক্য শুধু এইটুকু, উনার কবরের মাটি নিঃসন্দেহে ‘রাওজাতুম মিন রিয়াজিল জান্নাহ’ হিসেবে জান্নাতি মহামূল্যবান মাটি আর আমাদেরটা সাধারণ মাটি।

প্রশ্নকর্তা : হযরত উসমান (রা:)-এর উপাধী ছিল ‘যুন্নূরাঈন’ অর্থাৎ দুই নূরের (রুকাইয়্যাহ্, কুলছুমাহ্) অধিপতি। তাই প্রশ্ন আসে, নবীজি (সা:) নূরের তৈরী না হলে তাঁর মেয়েদের ‘নূর’ বলার কী মানে?

উত্তরদাতা : এখানে নবীজির কন্যাদ্বয়কে শুধুমাত্র সম্মানসূচক কারণেই ‘নূর’ বলা হয়েছে। যেমন কা’বা শরীফকে সম্মানসূচক কারণে আল্লাহ’র দিকে সম্বন্ধযুুুক্ত করে ‘বায়তুল্লাহ’ তথা আল্লাহ’র ঘর বলা হয়। যাদের পেটে কথা থাকেনা বাংলাভাষার বাগধারায় তাদের বলা হয় ‘পেটপাতলা’। আরবীভাষার তেমনি কোনো বাগধারার নিয়মেই হযরত উসমানও ‘যুন্নূরাঈন’ শব্দে ভূষিত হয়েছেন বলা যায়। আশাকরি বুঝতে পেরেছেন।

প্রশ্নকর্তা : রাসূল (সা:)-কে সাধারণ মানব বলা কুফুরী হবে কিনা?

উত্তরদাতা : এমন কোনো কথা বেয়াদবির নিয়তে বলা নিঃসন্দেহ কুফুরী এবং নবী অবমাননার শামিল।

প্রশ্নকর্তা : সূরা কাহাফ এর ১১০ নং আয়াত তো পরিষ্কার বলছে, কুল ইন্নামা আনা বাশারুম মিছলুকুম। অর্থাৎ বলুন! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ।

উত্তরদাতা : উক্ত আয়াতের Context বা পটভুমি দেখে নিন। তবেই পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, আল্লাহর এই কথার পেছনে উদ্দেশ্য কী? সূরা মুমিনূন এর ৩৩-৩৪ আয়াত দুটোও দেখুন। মুহাম্মদ (সা:) রাসূল হয়ে থাকলে তিনি খাওয়া দাওয়া, হাটবাজার ইত্যাদি কেন করবেন! এই ছিল মুশরিকদের আপত্তি! মূলত, তাদের অজ্ঞতাপূর্ণ আপত্তিকে খন্ডন করতেই ‘ইন্নামা আনা বাশারুম মিছলুকুম’ নাযিল হয়েছিল। অথবা সহীহ বুখারীর ৪০১ নং হাদীসটাও দেখতে পারেন। রাসূল (সা:) ‘আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ’ একথা বলার পরে তিনি নিজেই এর তাৎপর্য বুঝিয়ে দিতে বলেছেন ‘আন্সা কামা তানসাওনা’ (أنسى كما تنسون) অর্থাৎ তোমরা যেমন ভুলে যাও তেমনি (মানবীয় কারণে) আমিও ভুলে যাই। বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করে আরো বলা যায় যে, মানবীয় কারণে যেহেতু মানুষের অভ্যাস ভুলে যাওয়া, অপারগ ও অসুস্থ হওয়া, ক্ষুধা-তৃষ্ণা লাগা, বিবাহ করা, সন্তান-সন্ততি হওয়া ইত্যাদি। মুহাম্মদে আরাবী (সা:) তিনিও একজন মানব ছিলেন বিধায় মুশরিকদের অজ্ঞতাপূর্ণ আপত্তির খন্ডনপূর্বক আল্লাহতালা বলেছেন, বলুন! আমিও তোমাদের মতই মানুষ।… এই ছিল পটভুমি। কে জানি বলেছিল, আয়াতে ‘আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ’ একথা শুধু নবীজীকেই বলতে বলা হয়েছে! যুক্তি হচ্ছে, ‘কুল’ (قل) অর্থাৎ আপনি বলুন (একবচনে)। কিন্তু এই যুক্তি ভুল। কেননা সূরা ইখলাসের মধ্যে হুবহু ‘কুল’ শব্দ দ্বারাই নবীজীকে বলতে আদেশ করা হয়েছে যে, বলুন! হুয়াল্লাহু আহাদ। অর্থাৎ আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তো এর মানে কি আল্লাহ একজন তা আমরা বলতে পারব না?

প্রশ্নকর্তা : রাসূল (সা:)-কে ‘নূর’ বলা যাবে কি?

উত্তরদাতা : জ্বী হ্যাঁ, অবশ্যই। সূরা মায়েদা আয়াত নং ১৫ দেখুন। আল্লাহ বলেছেন, মিনাল্লাহি নূর। অর্থাৎ আল্লাহর পক্ষ হতে একখানা নূর তথা জ্যোতি। আল্লাহতালা নবীজিকে নূর আখ্যা দিয়েই থেমে যাননি, বরং পরের আয়াতে ‘ইয়াহ্দি বিহিল্লাহু’ (يهدى به الله) অর্থাৎ যার মাধ্যমে তিনি হিদায়াত দিয়ে থাকেন, এভাবে উল্লেখ আছে। বুঝা গেল, উনাকে জাতি নূর বলে বুঝাননি, বরং বাংলা ব্যাকরণের বাগ্ধারার নিয়মে সত্যের দিকে পথপ্রদর্শনকারী হিসেবে একখানা হিদায়াতী নূর বুঝানো হয়েছে। যাকে আরবী ভাষায় ‘সিফাতি নূর’ বলে। একথা সহীহ মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাকারক কাজী ইয়াজ (রহ:) তার ‘ইকমালুল মুসলিম’ কিতাবের ৩য় খন্ডের ১২৫-২৬ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন : ‘মা’নান্নূরি হুনা বয়ানুল হাক্কি ওয়াল হিদায়াতু ইলাইহি’ (معنى النور هنا بيان الحق والهداية اليه)। অর্থাৎ এখানে নূর এর তাৎপর্য হল সত্য ও হিদায়াতের দিকে পথপ্রদর্শনকারী। উদাহরণস্বরূপ, আমরা দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে বলি, সোনার বাংলাদেশ। এখানে আর যাইহোক অন্তত বাংলাদেশকে সোনার তৈরী বুঝায়নি! অনুরূপ মক্কা হতে ৬ কিঃ মিঃ দূরে অবস্থিত গারে হেরা-কে বলা হয় ‘জাবালে নূর’ বা নূরের পাহাড়! তার মানে এই নয় যে, ওই পাহাড়টি নূরের তৈরী! সংক্ষেপে।

প্রশ্নকর্তা : বহু আলেম তো বলে থাকেন, এর মানে তিনি (সা:) নূরের তৈরী!

জবাবদাতা : তা আমিও জানি। কিন্তু গ্রহণযোগ্য দলিল প্রমাণ তো থাকতে হবে! আচ্ছা বহু আলেম তো এটাও বলেন যে, নবী সৃষ্টি না হলে কিছুই সৃষ্টি হত না! তাই সে সমস্ত আলেমকে আজই প্রশ্ন করবেন, নবী নূরের তৈরী হলে তখন সৃষ্টির ক্ষেত্রে ‘নবী’ আগে না ‘নূর’ আগে? কেননা, যে জিনিস দ্বারা তৈরী করা হবে সেটি অবশ্যই আগে হতে হয়? সহীহ মুসলিম শরীফের ২৭৮৯ নাম্বার হাদীসে উল্লেখ আছে : ‘ওয়া খালাক্বান নূরা ইয়াওমাল আরবা’আয়ি’ (ﺧﻠﻖ ﺍﻟﻨﻮﺭ ﻳﻮﻡ ﺍﻷﺭﺑﻌﺎﺀ )। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা বুধবারে নূর সৃষ্টি করেছেন। ভাবিয়ে তুলে কিনা? তাই আবেগপ্রবণ হয়ে যাইচ্ছেতাই বলা থেকে বিরত থাকা উচিৎ। কেননা আমরা যাই বলিনা কেন, একদিন সব কিছুরই হিসেব দিতে হবে।

প্রশ্নকর্তা : যদি বলেন ‘মাটির তৈরী’ তখনও তো একই প্রশ্ন দাঁড়াবে?

উত্তরদাতা : জ্বী হ্যাঁ, এই জন্যই বলতে হবে যে, নবী কীসের সৃষ্টি-প্রাইকারী হারে প্রশ্নটাই ভুল। এতদ্ব্যতীত আহলে সুন্নাহ’র সব মানহাজের কলেমা গো মুসলমানগণ সর্বান্তকরণে বিশ্বাস করেন যে, অপরাপর নূর সমুহের ন্যায় প্রিয় নবীর রূহ মুবারকও মহান আল্লাহর নিকট একখানা নূর তুল্য। মূলত এই জন্যই লোকমুখে প্রসিদ্ধ আছে : ‘লাও লা-কা লামা খালাক্বতুল আফলাক্ব।’ তাই সঠিক প্রশ্নটি হল ‘নবীজির শরীর মুবারক সৃষ্টির মূল উপাদান মাটিও ছিল কিনা?’ উল্লেখ্য, মানব সৃষ্টির মূল উপাদানে শুধুই মাটি ছিলনা, বরং অগ্নি, অক্সিজেন এবং পানিও ছিল। তাই সারসংক্ষেপ উত্তর হল, একজন মানুষ হিসেবে আমাদের প্রিয় নবীজির শরীর মুবারক মাটিরই নির্যাস থেকে সৃষ্ট। কারণ মানুষের সৃষ্টিমূল উপাদান সম্পর্কে পবিত্র কুরআন বলছে, সুলালাতিম্ মিন ত্বীন।’ অর্থাৎ মানুষ মাটির নির্যাস থেকে সৃষ্ট (সূরা মুমিনূন ১২)।

প্রাসঙ্গিক বিষয়ে ইতিটানার আগে একখানা অপ্রিয় তথ্য জানান দেব। অনুরোধ থাকবে পাঠকবৃন্দ ধৈর্য্য হারা হবেননা! ইমাম হাকিম (রহ:) সংকলিত ‘মুসতাদরিক আলা আস-সহীহাঈন’ এর ২য় খন্ডের ৭২২ নং পৃষ্ঠার দীর্ঘ একটি হাদীসে কুদসীতে আছে, আল্লাহতালা হযরত আদমকে কোনো এক ঘটনাপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞেস করেন, তুমি মুহাম্মদকে কিভাবে চিনলে? ‘ওয়া লাম আখলুক্বহু’ অথচ আমি তাঁকে [এখনো] সৃষ্টিই করেনি (আরবী: و لم اخلقه)। হাদীসের মান, সহীহ। হাদীসটি বায়হাক্বী এবং তাবারানী প্রভৃতি হাদীসগ্রন্থেও উল্লেখ আছে। এই হাদীস আমাদের পরিষ্কার ঈংগিত দিচ্ছে, রাসূল (সা:)-এর শরীর মুবারক আপনা মাতৃগর্ভে সকল নবী রাসূলের পরে ‘সুলালাতিম মিন ত্বীন’ হিসেবে মাটির নির্যাস হতেই সৃষ্টি হয়েছিল। অন্যথা, হাদীসে কুদসী: ‘অথচ আমি তাঁকে (এখনো) সৃষ্টিই করেনি’-এর কী মানে? জ্ঞানীদের ভাবিয়ে তুলে কিনা? সারকথা, নবীজির রূহ মুবারক সম্মানসূচক কারণে “নূর” শব্দে ভূষিত (الاضافة إضافة تشريف)। (শরহে মাওয়াহিব আয্-যুরকানী ৯০)।

প্রশ্নকর্তা : জনৈক বক্তা বলেছেন, হাদীসে নাকি আছে : আউয়ালু মা খালাক্বাল্লাহু নূরী মিন নূরিহি! মানে, সর্বপ্রথম আল্লাহর নূর হতে নবীর নূর সৃষ্টি করা হয়েছে।

উত্তরদাতা : এর জবাব উপরে দেয়া হয়েছে যে, ইমাম সুয়ূতী (রহ:) সহ বহু হাদীস বিশেষজ্ঞ বলেছেন, এটি ভিত্তিহীন কথা। কিন্তু তার আরেকটি জবাব হচ্ছে, উল্লিখিত বর্ণনাটি প্রায় দেড় পৃষ্ঠাব্যাপী দীর্ঘ একটি বর্ণনা। যেখানে এও লিখা আছে, ওয়া খালাক্বা কুল্লা শাইয়িম মিন নূরী। অর্থাৎ আল্লাহতালা সব কিছু আমার নূর হতে সৃষ্টি করেছেন (ফতুয়ায়ে আফ্রিকা, মাসআলা নং ৬২ দ্রষ্টব্য)। তো এবার সব কিছুই যদি নূরের সৃষ্টি হয় তাহলে মাটি আর আগুনের সৃষ্টি কারা? ভাবিয়ে তুলে কিনা? কাজেই বক্তা সাহেবদের আরো ভেবেচিন্তে কথা বলা দরকার।

লিখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক

Previous article মিলাদ কিয়াম
Next article নবীজী (সা:) কি গায়েব জানতেন?
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! এটি সম্পূর্ণ দ্বীনি ও অলাভজনক একটি ওয়েবসাইট। প্রতি বছর এটির ডোমেইন ও হোস্টিং ফি হিসেবে আমাকে এর ব্যয় বহন করতে হচ্ছে। যদি উক্ত ব্যয় বহন করতে অপারগ হই তাহলে এই সাইটটি নিশ্চিত বন্ধ হয়ে যাবে। সেহেতু আপনাদের সবার নিকট আবেদন থাকবে যে, আপনারা সাইটটির উক্ত ব্যয় বহনে এতে বিজ্ঞাপন দিতে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করবেন এবং নিজেরাও সহযোগিতায় এগিয়ে আসবেন। বিনীত এডমিন! বিকাশ : ০১৬২৯-৯৪১৭৭৩ (পার্সোনাল)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here