- হাজির নাজির :
প্রশ্নকর্তা : নবীজীকে হাজির নাজির বিশ্বাস করা যাবে কিনা?
উত্তরদাতা : আগে বলুন হাজির নাজির কাকে বলে?
প্রশ্নকর্তা : আমার জানা মতে, যিনি কোথাও উপস্থিত হন এবং সব কিছু দেখেন তাকে হাজির নাজির বলে।
উত্তরদাতা : কিন্তু পবিত্র কুরআন তো বলছে, মৃত্যুর পর কেয়ামতের পূর্বে আর কারো জন্য পৃথিবীতে ফিরে আসার অনুমতি নেই! (সূরা মুমিনূন ৯৯-১০৩)। এখন আপনি কি মনে করেন যে, নবীজী পবিত্র কুরআনের এই বিধান লঙ্গন করবেন? নাউযুবিল্লাহ।
প্রশ্নকর্তা : না, কিন্তু আহলে সুন্নাহ’র পবিত্র বিশ্বাস তো এই যে, নবীজী (সা:) বরযখী তথা দুনিয়া আর কেয়ামতের মধ্যবর্তী জগতে জীবিত এবং রিযিকপ্রাপ্ত। তাহলে তো তিনি বরযখী জগতের বাহিরেও আল্লাহ্ চাহিলে বিশেষ কোনো পন্থায় নিশ্চয়ই যাওয়া আসা করার অনুমতি পাবেন, তাই নয় কি?
উত্তরদাতা : আপনার কথার সাথে আমিও একমত। কিন্তু আল্লাহ্ যে চাহিবেন না, সে কথা তো আগেই ‘কাল্লা ইন্নাহা কালিমাতুন হুয়া ক্বায়েলুহা’ (২৩:১০০) আয়াতে বলে দিয়েছেন। সেযাইহোক, তিনি (সা:) যে বরযখী জগতের বাহিরে আসতে অনুমতি পেয়েছেন তার কী দলিল আছে? তর্কের খাতিরে কিছুক্ষণের জন্য যদি মেনে নিই, নবীজী (সা:) বরযখী জগতের বাহিরেও যাওয়া আসা করেন; তখন তো প্রশ্ন আসবে, তিনি রাওজা শরীফ ত্যাগ করে বাহিরে কোথাও চলে গেলে সেই মুহুর্তে যেসব হাজী সাহেব মদীনায় নবীজীর রাওজা শরীফে উপস্থিত হয়ে ‘ওয়াস সালাতু ওয়াস্সালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ’ পাঠ করবেন তখন কি তারা জনমানবহীন একটি খালি কবরকে সালাম করছেন না? উম্মতে মুহাম্মদিয়ার জন্য এর চেয়ে বড় কষ্টদায়ক আর কী হতে পারে? এই অবস্থায় কোটি কোটি উম্মতে মুহাম্মদিয়া অস্বস্তিকর অবস্থায়ও পড়বে কিনা?
প্রশ্নকর্তা : কোনো কোনো বক্তা তো বলে থাকেন, নবীজী মিলাদুন্নবী অনুষ্ঠানগুলোতে আসা যাওয়া করেন!
উত্তরদাতা : না এটি তাদের মনগড়া কথাবার্তা, যা সঠিক দলিল প্রমাণ আর যুক্তির কষ্টিপাথরে একদমই টিকেনা। সেযাইহোক, আচ্ছা যেসব বক্তা এমন কথা বলেন তাদেরকে আজই জিজ্ঞেস করবেন তারা নিজেদেরকে নবীজীর ‘সাহাবী’ মনে করেন কিনা? কেননা নবীজী যখন মিলাদুন্নবী অনুষ্ঠানে আসবেন তখন তো তিনি তাদেরকেও দেখবেন, তাই নয় কি? কারণ, সাহাবীর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যারা ঈমানের সহিত নবীজীর সোহবত (সাহচর্য) লাভ করবে এবং ঈমানের উপর মৃত্যুবরণ করবে তারা সাহাবী। ফলে বুঝা গেল, সাহাবী হতে হলে নবীকে চর্মচোখে দেখা জুরুরি নয়, বরং নবীজীর সাহচর্য পাওয়াই জুরুরি। কেননা বহু সাহাবী এমনও ছিলেন যারা জন্মান্ধ। যেমন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রা:) প্রমুখ। এখন এর কী জবাব?
প্রশ্নকর্তা : পবিত্র কুরআনে উল্লেখ আছে ‘ইয়াকূনুর রাসূলু আলাইকুম শাহীদা’ (০২:১৪৩) তাহলে বলুন, তিনি হাজির নাজির না হয়ে কেয়ামতের দিন স্বীয় উম্মতের পক্ষে সাক্ষ্যদানকারী কিভাবে হবেন?
উত্তরদাতা : এখানে ‘শাহীদান’ বলতে সাক্ষ্যদানকারী বুঝায়নি, বরং ‘সত্যায়নকারী’ বুঝানো হয়েছে। কারণ কেয়ামতের দিন নবীগণের পক্ষে ও তাঁদের উম্মতদের দায়েরকৃত অভিযোগ খন্ডনে উম্মতে মুহাম্মদিয়ার ঐতিহাসিক সাক্ষ্যদানের পর্বটি নবীজী কর্তৃক সত্যায়িত হবে। তাই এই আয়াতে ‘শাহীদান’ অর্থ ‘সাক্ষ্যদানকারী’ নেয়া আয়াতের পটভুমি (Context)’র বিচারে সঠিক নয়। (দেখুন সহীহ বুখারী ২/৬৪৫, আবু সাঈদ খুদরী হতে বর্ণিত হাদীস)। আচ্ছা, আল্লাহতালা তো কোনো এক ঘটনা-প্রেক্ষিতে নবীজী সম্পর্কে এও বলেছেন ‘ওয়া মা কুনতা মিনাশ শাহিদীন’ (ক্বাছাছ ৪৪)। অর্থাৎ আর আপনি (তখন) শাহিদ ছিলেন না। এবার এই ‘শাহিদ’ এর কী হবে?
প্রশ্নকর্তা : কবরের ভেতর নবীজির দিকে সম্বোধন করে মাইয়্যেতকে ফেরেশতা প্রশ্ন করবেন ‘ওয়া মান হাযার রাজুল’ ( و من هذا الرجل)? এখানে ‘হাযা’ (This/هذا) শব্দটি তো নিকটবর্তী কোনো বস্তু বা ব্যক্তিকে বুঝাতে আসে!
উত্তরদাতা : কোনো ব্যক্তি বা বস্তু সর্বাধিক প্রসিদ্ধি লাভ করার কারণে অনেক সময় প্রচলিত ব্যাকরণের বিরুদ্ধেও চলে যায়। তার অন্যতম উদাহরণ, হযরত ইবরাহিম (আ:) কর্তৃক ‘হাযা’ শব্দ দ্বারা চন্দ্র-সূর্যের দিকে ইংগিত করা। যেমন, তিনি বলেছিলেন ‘হাযা রাব্বী’ (কুরআন ৬:৭৮)। অর্থাৎ ইহা আমার প্রভু। এখানেও কিন্তু ‘মুশারুন ইলাইহি’ (সম্বোধিত বস্তু) চন্দ্র। যা নিকটে নয়, বরং দূরে। উল্লেখ্য, এটি নবুওতপ্রাপ্ত হওয়ার পূর্বেকার ঘটনা, তাই এই জন্য তিনি অভিযুক্ত হবেন না।
- লিখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক