‘তাহার পূর্বে বহু রাসূল গত হইয়াছে’ – কুরআন ৩/১৪৪, (অনুবাদ-ইসলামিক ফাউন্ডেশন) এ আয়াত দ্বারা কাদিয়ানীদের দাবী হচ্ছে,
ঈসা (আ.) সহ ইতিপূর্বেকার সমস্ত রাসূল মৃত্যুবরণ করিয়াছেন। এখানে তাদের উদ্দেশ্য, ঈসা (আ.)-কে মৃত সাব্যস্ত করা এবং ‘শেষ যুগে আগত ঈসা’ হতে একজন রূপক ঈসা স্বরূপ মির্যা কাদিয়ানীকে তাঁরই জায়গায় প্রতিষ্ঠা করা।
সে যাইহোক, মূলত কাদিয়ানীদের কৃত অনুবাদ “সমস্ত রাসূল” এর জায়গায় “অনেক বা বহু রাসূল” অর্থই সঠিক। নইলে নিচের এ সংক্ষিপ্ত তিনখানা প্রশ্নের আদৌ কোনো উত্তর থাকেনা।
১। আয়াতটির কোথাও মৃত্যু অর্থের জন্য موت বা মাউত শব্দ আল্লাহ ব্যবহার করেননি। আল্লাহ “খালাত” বা “গত হইয়া গিয়াছে” ক্রিয়াপদ ব্যবহার করেছেন। এখন এর কারণ কী?
এর কারণ তো “গত হইয়া গিয়াছে” শব্দটিকে ‘মুশতারিক’ বা ব্যাপক রাখার মধ্য দিয়ে একটি ঊহ্য প্রশ্নের সমাধান দেয়া। অর্থাৎ ইহজগৎ থেকে যাকে সশরীরে উঠে নেয়া হয়েছে এবং যাদেরকে জীবনাবসান ঘটিয়ে পুরোপুরি নিয়ে নেয়া হয়েছে, এ দু ভাবে ‘গত হওয়া’ সত্তাকে ঐ ‘ক্বাদ খালাত’ শব্দের অর্থে অন্তর্ভুক্ত করতে চাওয়া! তাই নয় কি? নতুবা ‘মউত’ শব্দ পরিত্যাগ করার মধ্যে আর কী কারণ থাকতে পারে? আল্লাহ কি কোনো কারণ ছাড়াই ‘মউত’ (মৃত্যুবরণ করা) শব্দটি এ ক্ষেত্রে পরিত্যাগ করেছেন?
উল্লেখ্য, মির্যায়ী প্রধান শিষ্য হেকিম নূর উদ্দিন সাহেবের রচনায় তিনিও পরিষ্কার করে লিখে গেছেন,
پہلے اس سے بہت رسول ہو چکے
অর্থাৎ তাঁহার পূর্বে বহু রাসূল হইয়াছিল। দেখুন, ফসলুল খিতাব (উর্দূ) পৃষ্ঠা নং ২৮।

২। তাফসীরকারকদের প্রধান হযরত ইবনু আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে পরিষ্কার বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ ঈসাকে সশরীরে আকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন। দলিল একটু পরে দিচ্ছি। তো ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-ও কি قد خلت من قبله الرسل এর সঠিক অর্থ বুঝতে পারেননি? নাউযুবিল্লাহ।
তাফসীরে ইবনে কাসীর-ইমাম ইমাদুদ্দীন ইবনে কাসীর (ابن كثير), সূরা নিসা আয়াত নং ১৫৮ এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন ((قال ابن أبي حاتم : حدثنا أحمد بن سنان، حدثنا أبو معاوية، عن الأعمش، عن المنهال بن عمرو، عن سعيد بن جبير، عن ابن عباس قال : لما أراد الله أن يرفع عيسى إلى السماء، خرج على أصحابه – وفي البيت اثنا عشر رجلا من الحواريين ……. فألقي عليه شبه عيسى ورفع عيسى من روزنة في البيت إلى السماء. وهذا إسناد صحيح إلى ابن عباس)) অর্থাৎ ইবনে আব্বাস থেকে, তিনি বলেন, আল্লাহ যখন ঈসাকে আকাশে উঠিয়ে নিতে চাইলেন, তখন তিনি আপনা সাথীদের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। তখন তাঁর বাড়ীতে বারোজন হাওয়ারী ছিলেন……..ইত্যবসরে জনৈক ইহুদীকে ঈসার সাদৃশ করে দেয়া হয় এবং ঈসাকে বাড়ীর বাতায়ন পথে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়। ইবনে আব্বাস পর্যন্ত এর সনদ তথা সূত্র সহীহ।
৩। সূরা নিসা আয়াত নং ১৫৯ তে আল্লাহতালা পরিষ্কার বলেছেন, قبل موته অর্থাৎ ঈসার মৃত্যুর আগে আগে সকল আহলে কিতাব তাঁর প্রতি ঈমান আনবে। দলিল একটু পরে দিচ্ছি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে কি কুরআনের ভেতর আল্লাহ ঈসা (আ.) সম্পর্কে স্ববিরোধী কথা বলেছেন? নাউযুবিল্লাহ। আল্লাহ যদি সূরা আলে ইমরানে قد خلت দ্বারা ঈসাকেও মৃত্যুবরণকারী বুঝাতেন তাহলে সেই ঈসার মৃত্যুর আগে আগে আহলে কিতাবীরা ঈমান আনতে বলার কী অর্থ? ভাবিয়ে তুলে কিনা?
তাফসীরে ইবনে কাসীর-ইমাম ইমাদুদ্দীন ইবনে কাসীর (ابن كثير), সূরা নিসা আয়াত নং ১৫৯ এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন ((وأولى هذه الأقوال بالصحة القول الأول، وهو أنه لا يبقى أحد من أهل الكتاب بعد نزول عيسى، عليه السلام، إلا آمن به قبل موته، أي قبل موت عيسى، عليه السلام، ولا شك أن هذا الذي قاله ابن جرير، رحمه [الله] هو الصحيح)) অর্থাৎ এ বক্তব্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সঠিক হল প্রথম উক্তি। সেটি এই যে, ঈসা (আ.)-এর অবতরণের পর আহলে কিতাবীদের মধ্য হতে যারাই অবশিষ্ট থাকবে প্রত্যেকে ঈসা (আ.)-এর মৃত্যুর আগেই তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবেই। আর নিঃসন্দেহে এটাই বিশুদ্ধ মত, ইবনে জারীর আত তাবারীও এমনটাই বলেছেন।
ফেসবুক থেকে ক্লিক
লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক