‘সততা’ ও ‘বিশ্বস্ততা’ নবীর শ্রেষ্ঠ গুণ,
‘আ কুন্তুম মুসাদ্দিকিয়্যা?’ বাক্যের এ খন্ডাংশটি একটি বিখ্যাত হাদীসের অংশ এবং এটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম সহ অন্যান্য প্রামাণিক হাদীস গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। এটি নবুওয়াতের প্রাথমিক যুগে নবী মুহাম্মদ (সা.) কর্তৃক মক্কার সাফা পাহাড়ে দাঁড়িয়ে কুরাইশদের প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার ঘটনার অংশ।
হাদীসের প্রাসঙ্গিক অংশ ও বাংলা অনুবাদ :
হাদীসের মূল বার্তা হলো, শেষনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর নবুওয়াতের সত্যতা ও বিশ্বস্ততা প্রমাণ করার জন্য এই উপমাটি ব্যবহার করেছিলেন। তিনি ইরশাদ করেছিলেন,
أرَأَيْتَكُمْ لو أخْبَرْتُكُمْ أنَّ خَيْلًا بالوَادِي تُرِيدُ أنْ تُغِيرَ علَيْكُم؛ أكُنْتُمْ مُصَدِّقِيَّ؟ قالوا: نَعَمْ، ما جَرَّبْنَا عَلَيْكَ إلَّا صِدْقًا، قالَ: فإنِّي نَذِيرٌ لَكُمْ بيْنَ يَدَيْ عَذَابٍ شَدِيدٍ
অনুবাদ, “তোমরা কি মনে করো, যদি আমি তোমাদের জানাই যে, এই উপত্যকার ওপার থেকে একদল অশ্বারোহী (শত্রু) তোমাদের আক্রমণ করতে উদ্যত হয়েছে, তোমরা কি আমাকে বিশ্বাস করবে? উত্তরে উপস্থিত সবাই বলেছিল, “হ্যাঁ, আমরা আপনাকে বিশ্বাস করব, কারণ আমরা আপনাকে সবসময় সত্যবাদী হিসেবেই পেয়েছি” (অন্য বর্ণনায়, “আমরা আপনার কাছ থেকে কখনও মিথ্যা শুনিনি”)। এরপর তিনি বলেছিলেন, “তবে আমি তোমাদের আসন্ন কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করছি”। (সহীহ বুখারী, ইবনে আব্বাস থেকে)।
এই হাদীসের তাৎপর্য হচ্ছে, এই ঘটনাটি প্রমাণ করে যে, নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্ব থেকেই মক্কার লোকেরা, এমনকি তাঁর কট্টর বিরোধীরাও শেষনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে সর্বোচ্চ বিশ্বস্ত ও সত্যবাদী (আল-আমিন) হিসেবে গণ্য করত।
দাওয়াতের পদ্ধতি : তিনি তাদের বিশ্বাস ও আস্থার মানদণ্ড ব্যবহার করে ইসলামের মৌলিক বার্তা – তাওহীদ (একত্ববাদ) এবং আখিরাতের শাস্তি সম্পর্কে সতর্কবাণী পেশ করেছিলেন। আল্লাহ্র নির্দেশে (সূরা শু’আরা, ২৬:২১৪) গোপনে দাওয়াতের পরিবর্তে প্রকাশ্যে দাওয়াত শুরু করার এটি ছিল প্রথম ধাপ। এই হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের মতো হাদীস গ্রন্থে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে।
হাদীসটি হতে বুঝা গেল, নবীর সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ গুণ সততা ও বিশ্বাসযোগ্যতা। যদি কেউ সততা এবং নির্ভরযোগ্যতার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ না হয় তাহলে তার বিষয়টি সেখানেই সমাপ্ত। সামনে আর বাড়তে দেয়া যাবেনা। কারণ কোনো মিথ্যাবাদী নবুওয়ত ও রেসালত দাবী করার যোগ্যতাই রাখেনা। সুতরাং, আল্লাহর রাসূল (সা.) এর জীবন তথা সীরাত থেকেই আমাদের সবক নিতে হবে।
বলাবাহুল্য যে, ভারতীয় বংশোদ্ভূত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সহ ইতিপূর্বে যতজনই নবী রাসূল দাবী করেছিল তাদের জীবন-দর্শন থেকে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া গেছে যে, তারা প্রত্যেকে ছিল চরম মিথ্যাবাদী ও ধোকাবাজ। সুতরাং তারা প্রত্যেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার জন্য তাদের ঐ নেতিবাচক ক্যারেক্টারই আমাদের শিক্ষা লাভ করার জন্য যথেষ্ট।
লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী এম এ