সূরা নিসা’র ৬৯ নং আয়াতটি নাযিল হওয়ার প্রেক্ষাপট

0
সূরা নিসা’র ৬৯ নং আয়াতটি নাযিল হওয়ার প্রেক্ষাপট
আর্টিকেল

সূরা নিসা আয়াত নং ৬৯ এর নাযিলের প্রেক্ষাপট “তাফসীরে ইবনে কাসীর” থেকে (আরবী ইবারত সহ) :

وقد روي مرفوعا من وجه آخر ، فقال أبو بكر بن مردويه : حدثنا عبد الرحيم بن محمد بن مسلم ، حدثنا إسماعيل بن أحمد بن أسيد ، حدثنا عبد الله بن عمران ، حدثنا فضيل بن عياض ، عن منصور ، عن إبراهيم ، عن الأسود ، عن عائشة قالت : جاء رجل إلى النبي صلى الله عليه وسلم فقال : يا رسول الله : إنك لأحب إلي من نفسي وأحب إلي من أهلي ، وأحب إلي من ولدي ، وإني لأكون في البيت فأذكرك فما أصبر حتى آتيك فأنظر إليك ، وإذا ذكرت موتي وموتك عرفت أنك إذا دخلت الجنة رفعت مع النبيين ، وإن دخلت الجنة خشيت ألا أراك . فلم يرد عليه النبي صلى الله عليه وسلم حتى نزلت عليه : ( ومن يطع الله والرسول فأولئك مع الذين أنعم الله عليهم من النبيين والصديقين والشهداء والصالحين وحسن أولئك رفيقا ). وهكذا رواه الحافظ أبو عبد الله المقدسي في كتابه : ” صفة الجنة ” ، من طريق الطبراني ، عن أحمد بن عمرو بن مسلم الخلال ، عن عبد الله بن عمران العابدي ، به . ثم قال : لا أرى بإسناده بأسا والله أعلم .

অর্থ- মারফূ (যে হাদীসের সূত্রের ক্রমধারা রাসূল পর্যন্ত পৌঁছেছে এমন) সূত্রে বর্ণিত আছে, (সম্পূর্ণ সনদ বা Chain of narration) আবু বকর বিন মারদাওয়াই বলেছেন, আমাদেরকে আব্দুর রহিম বিন মুহাম্মাদ বিন মুসলিম বলেছেন, তিনি বলেন, আমাদেরকে ইসমাইল বিন আহমেদ বিন আসীদ বলেছেন, তিনি বলেন, আমাদেরকে আবদুল্লাহ বিন ইমরান বলেছেন, তিনি বলেন, আমাদেরকে ফুদায়েল বিন ইয়ায বলেছেন, তিনি মনসুর থেকে, তিনি ইবরাহীম থেকে, তিনি হযরত আয়েশা (রা.) থেকে। (হাদীসের মতন বা Text) হযরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, এক সাহাবী নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহ’র রসূল! আপনি আমার কাছে আমার নিজের জীবনের চেয়েও প্রিয়, আমার পরিবার চেয়েও প্রিয়, আমার সন্তানদের চেয়েও প্রিয়, আমি যখন গৃহে অবস্থান করি আপনাকে (মনে মনে) স্মরণ করি। আর আপনার সাহচর্যে না এসে এবং আপনাকে না দেখে নিজেকে কিছুতেই সামলাতে পারি না। আর যখনি আমি আমার মৃত্যুর কথা স্মরণ করি তখন আপনার মৃত্যুর কথাও স্মরণ করি। আমি তো জানি যে, আপনি যখন জান্নাতে প্রবেশ করবেন তখন নবীগণের সাথেই উঠাবসা করবেন। পক্ষান্তরে আমি যদি জান্নাতে প্রবেশ করিও তবু আপনাকে (জান্নাতে) দেখতে পাব কিনা আশংকা করছি।’ এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এই আয়াত ( ومن يطع الله والرسول فأولئك مع الذين أنعم الله عليهم من النبيين والصديقين والشهداء والصالحين وحسن أولئك رفيقا ) নাযিল হয়। তারপরই তিনি তাঁকে (ঐ সাহাবীকে) প্রতিউত্তর দেন। (ইমাম ইবনে কাসীর তারপর লিখেছেন), হাফেযুল হাদীস আবু আব্দিল্লাহ আল মাকদিসি (রহ.) [মৃত. ৬৪৩ হিজরী] বিরচিত ‘সিফাতুল জান্নাহ’ গ্রন্থে তিনি ইমাম তাবারানী (রহ.)-এর সূত্রে [তাবারানী, আহমদ ইবনে আমর ইবনে মুসলিম আল খিলাল, আব্দুল্লাহ ইবনে ইমরান আল আবেদী সূত্রে] এটি বর্ণনা করে বলেছেন, لا أرى بإسناده بأسا অর্থাৎ আমি বর্ণনাটির সনদ বা সূত্রে কোনো সমস্যা দেখিনা। (তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা নিসা আয়াত ৬৯ এর তাফসীর অংশ দ্রষ্টব্য)।

আফসোস হল, সূরা নিয়া আয়াত নং ৬৯ এর শানে নুযূল যেখানে পরিষ্কার বলছে অন্য কথা সেখানে কাদিয়ানী জ্ঞানপাপীরা আয়াতটির উপবাক্য مع النبيين হতে তথাকথিত “উম্মতিনবী”-এর কনসেপশন দাঁড় করানোর চেষ্টায় রত! আহা! এই নির্বোধরা কোথায়কার জল কোথায় ঢালতে শুরু করলো!! দুঃখের বিষয় হল, অধিকাংশ কাদিয়ানীই আয়াতটির শানে নুযূল কী বলল তা খোঁজে দেখেনা। যদি তারা সামান্যই আত্মসচেতন হত আর আয়াত নাযিলের প্রেক্ষাপট খতিয়ে দেখত তাহলেও আয়াতটির অপব্যাখ্যায় এভাবে অন্ধের মত গা ভাসিয়ে দিত না। আল্লাহ তাদের হিফাজত করুন। যাইহোক, এই একই তাফসীর রয়েছে “আত-তাফসীরুল মাছীর, আল-ওয়াছীত, আল-বাগাভী, আল-কুরতুবী, আত-তাবারী এবং তাফসিরে জালালাইন” ইত্যাদি কিতাবে-ও। নিচে উল্লেখ করা হল,

[১] আত-তাফসীরুল মুইয়াসসার থেকে : (আরবী) فكانوا في صحبته من أنعم الله تعالى عليهم بالجنة من الأنبياء والصديقين الخ . التفسير الميسر অর্থাৎ তাঁরা সেসব ব্যক্তিদের সঙ্গী হবেন যাঁদেরকে আল্লাহতালা জান্নাতে নেয়ামত দেবেন। আর তাঁরা হলেন নবীগণ, ছিদ্দীকীন, ইত্যাদি। (দেখুন : আত-তাফসীরুল মুইয়াসসার)।

 [২] আল-ওয়াসীত লি-ত্বনতাভী থেকে : (আরবী) يكونون يوم القيامة في صحبة الأنبياء الذين ارسلهم الله مبشرين و منذرين الخ. الوسيط لطنطاوى অর্থাৎ তারা কিয়ামতের দিন নবীদের সঙ্গী হবেন যাঁদেরকে আল্লাহতালা সুসংবাদ দাতা আর ভয়প্রদর্শনকারী হিসেবে প্রেরণ করিয়াছেন। (দেখুন : আল-ওয়াসীত লি-ত্বনতাভী)।

[৩] তাফসীরে বাগাভী থেকে : (আরবী) أولئك رفيقا يعني رفقاء الجنة. البغوي অর্থাৎ তারা সবাই জান্নাতে সঙ্গী হবেন। (দেখুন : তাফসীরে বাগাভী, প্রাচীন যুগের শ্রেষ্ঠ তাফসীর গ্রন্থ)।

[৪] তাফসীরে কুরতুবী থেকে : (আরবী) أى هم معهم في دار واحد و نعيم واحد يستمتعون برؤيتهم والحضور معهم لا أنهم يساوونهم في الدرجة. القرطبي অর্থাৎ তারা সবাই একই ঘরে ও একই দারুন নাঈমে (জান্নাতের একটি নাম) তাঁদের সঙ্গী হবেন। তারা নিজেদের চোখ দিয়ে নেয়ামত উপভোগ করবে এবং তাঁদের সাথেই উপস্থিত থাকবে। তবে মর্যাদার ক্ষেত্রে তাঁরা এঁদের সমকক্ষ হবেনা। (দেখুন তাফসীরে কুরতুবী)।

[৫] তাফসীরে তাবারী থেকে : (আরবী) এবার তাফসীরে তাবারী থেকে উদ্ধৃতি দিয়েই ইতি টানব, ইনশাল্লাহ। ইমাম মুহাম্মদ ইবনে জারীর আত-তাবারী (রহ.) লিখেছেন, فهو مع الذين أنعم الله عليهم بهدايته والتوفيق لطاعته فى الدنيا من أنبيائه و فى الآخرة إذا دخل الجنة.الخ অর্থাৎ যাকে আল্লাহতালা স্বীয় হিদায়াত দ্বারা নেয়ামত দান করেছেন এবং দুনিয়াতে নবীদের অনুগত হওয়ার জন্য (যাকে) তাওফিক দিয়েছেন, সে পরকালে তাঁদের সঙ্গী হবে যখন সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (প্রাচীন তাফসীর গ্রন্থ ‘তাফসীরে তাবারী, নিসা আয়াত ৬৯ দ্রষ্টব্য )।

শেষকথা, আয়াতটির অবতরণের প্রেক্ষাপট যাচাই করলে সুস্পষ্ট হয়ে যাবে যে, সূরা নিসা’র ৬৯ নং আয়াতে যেসকল নেয়ামতপ্রাপ্তের সঙ্গী হবার সুসংবাদ দান করা হয়েছে সেটি কার্যত পরকালের সাথেই সম্পর্কিত, দুনিয়ার জীবনের সাথে নয়। সুতরাং প্রমাণ পাওয়া গেল যে, কথিত উম্মতিনবী কনসেপ্ট শুধুই মির্যা কাদিয়ানীর নবী দাবী হালাল করার অসৎ উদ্দেশ্যেই! আল্লাহ আমাদেরকে এইধরনের ইসলাম বিরোধী আকীদা থেকে হেফাজত করুন।

আরও পড়ুন : উম্মতিনবী ধারণাটি কেন বেহুদা আর বাতিল?

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here