উম্মতিনবী’র ধারণাটি বানোয়াট কেন?

0
উম্মতিনবী’র ধারণাটি বানোয়াট কেন?

উম্মতিনবী : মির্যা কাদিয়ানীর নবুওয়ত দাবী বৈধ করার সূক্ষ্ম চক্রান্ত

আর্টিকেল

প্রশ্নকর্তা (কাদিয়ানী) : নবী (সা.)-এর আনুগত্য দ্বারাও নবীর মোকাম লাভ করা যায়। কুরআনেই তার দলিল আছে। দেখুন, আল্লাহতালা’র বাণী (নিসা ৬৯), وَمَن يُطِعِ اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَأُولَٰئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِم مِّنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ ۚ وَحَسُنَ أُولَٰئِكَ رَفِيقًا অর্থাৎ এবং যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, তারা সঙ্গী হবে তাদের, আল্লাহ যাদের উপর নেয়ামত দান করেছেন। তারা (ছিলেন) নবীগণ, সিদ্দিকগণ, শহীদগণ এবং সালেহগণ। আর এঁরা (নেয়ামতপ্রাপ্তগণ) সঙ্গী হিসেবে কতইনা উত্তম সঙ্গী।’

উত্তরদাতা (মুসলিম) : আয়াতটির শানে নুযূল কী, তা একটু বলবেন?

প্রশ্নকর্তা : শানে নুযূল যাইহোক, আমি যেটা বললাম তাতে ভুল কী পাইলেন?

উত্তরদাতা : শানে নুযূল বলছে, রাসূল (সা.)-এর জনৈক সাহাবীর হৃদয় নিংড়ানো একখানা আকূতির পরিপ্রেক্ষিতেই আল্লাহতালা উক্ত আয়াতটি নাযিল করেছেন। সাহাবী নবীজীর নিকট জানতে চেয়েছিলেন যে, পরপারে (জান্নাতে) নবীজীর সঙ্গ লাভ করতে তিনি পারবেন কিনা? (তাফসীরে ইবনে কাসীর-এর ভেতর বিস্তারিত আছে)। অতএব পরিষ্কার বুঝা গেল যে, আয়াতের প্রেক্ষাপট হতে উক্ত চার শ্রেণীর মর্যাদাপ্রাপ্ত (নবী, সিদ্দিক, শহীদ ও সালেহ)-দের সঙ্গ লাভ করার শর্ত আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্যের বিষয়টি যেমন বুঝা যাচ্ছে, তেমনি একই আয়াতের শেষাংশ হতেও একদম পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, সঙ্গ লাভ করার ঘটনাটি পরপারেই (জান্নাতে) ঘটবে, ইনশাআল্লাহ। অন্যথা আয়াতটির শেষাংশে উল্লিখিত ‘ওয়া হাছুনা উলা-ইকা রফীকা’ (و حسن اولئك رفيقا) অর্থাৎ এবং এরাই সঙ্গী হিসেবে উত্তম—আল্লাহর একথার কোনো অর্থই থাকেনা।

প্রশ্নকর্তা : হুম….। কিন্তু এভাবে তো আগে কখনো ভেবে দেখেনি!

উত্তরদাতা : তর্কের খাতিরে যদি কাদিয়ানীদের উপরিউক্ত কনসেপশন ৫ সেকেন্ডের জন্য মেনেও নিই, তখন তাদের নিকট নিচের প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর থাকবেনা! প্রশ্নগুলো হচ্ছে,

১. و من يطع الله… আয়াতে তো من (মান/who) শব্দটি নারী-পুরুষ, এক/একাধিক সংখ্যার ধারণারই নির্দেশকারী (অর্থ, যে/যারা)। তাহলে আপনারা কথিত ‘উম্মতীনবী’-এর সংখ্যাটা শুধুই একজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করেন কেন? এই যে দেখুন, মির্যা কাদিয়ানী সাহেব নিজেই তার একখানা রচনায় (হাকীকাতুল ওহী [বাংলা] পৃষ্ঠা নং ৩৩০) লিখেছেন, ‘এই উম্মতে আমিই একমাত্র নির্দিষ্ট ব্যক্তি’। তাহলে কেমনে কী? স্ক্রিনশট এই,

২. আপনাদেরই কৃত অর্থ মতে, আনুগত্যকারী ব্যক্তি যেসব নবী রাসূলের মধ্যে শামিল হচ্ছে সেসব নবী রাসূলকেও তথাকথিত ‘উম্মতীনবী’ মানা হচ্ছে কিনা? অন্যথা এরা তাদের (অ-উম্মতিনবীদের) মধ্যে শামিল হবে কেমনে?

৩. আর কথিত ‘উম্মতিনবী’ শুধুই মির্যা কাদিয়ানী হলে তবে কি আয়াতটির কার্যকারিতা কেয়ামত পর্যন্ত চিরতরে বন্ধ? অথচ আপনারাই তো বলেন যে, কুরআনের কোনো আয়াতই মানসুখ হয়নি!

প্রশ্নকর্তা : আচ্ছা ঠিক আছে, আপনার কথা মানলাম! এখন তাহলে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিন। প্রশ্নটি হচ্ছে, আল্লাহ এবং রাসূল (সা.)-এর অনুগত্য করে আমরা কি ইহজগতেও কোনো পুরষ্কার পেতে পারিনা? যদি পেতে পারি তাহলে এটি কুরআন শরীফের কোন আয়াতে আছে?

উত্তরদাতা : জ্বী হ্যাঁ; পবিত্র কুরআনের সূরা নূর আয়াত নং ৫২-তে আপনার প্রশ্নটির জবাব فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْفَآئِزُونَ (অর্থাৎ তারা প্রত্যেকে সফলকাম) দ্বারা দেয়া হয়েছে। তাফসীরে কুরতুবীতে হযরত উমর (রা.) হতে একখানা বর্ণনায় ‘তারা প্রত্যেকে সফলকাম’ এর তাফসীরে উল্লেখ আছে যে, والفائز من نجا من النار وأدخل الجنة অর্থাৎ ‘এই সফলকাম ব্যক্তি তারাই যারা জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ আশাকরি আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছেন।

প্রশ্নকর্তা : শেষ আরেকটা প্রশ্ন করতে চাই। উক্ত আয়াতে উল্লিখিত مع (মা’আ) শব্দটির কী অর্থ?

উত্তরদাতা : আরবী অভিধানে শব্দটির অনেকগুলো আভিধানিক অর্থ রয়েছে। যেমন, সাথে সহিত, সঙ্গে, সঙ্গ, শামিল ইত্যাদি। আমি কিন্তু আপনার প্রশ্নটির পেছনে লুকিয়ে থাকা একটি কারণ সম্পর্কেও অবগত আছি। আর তাই আপনার প্রতি আমার জিজ্ঞাসা হল, অভিধানে কোনো শব্দের যতগুলো অর্থ রয়েছে সবগুলো অর্থ কি একই সাথে প্রয়োগ হবে নাকি যথোপযুক্ত অর্থটাই প্রয়োগ হবে? জ্ঞানীমাত্রই জানেন যে, কখনোই একই সাথে সবগুলো অর্থ প্রয়োগ হবেনা। কাজেই এখন জানার বিষয় হল, তাহলে উক্ত আয়াতে উল্লিখিত ‘মা’আ’ (مع) শব্দের যথোপযুক্ত সেই অর্থটা কী? উত্তরে বলব, শব্দটির ঐ অর্থই গ্রহণযোগ্য যে অর্থের সাথে আয়াতটির প্রেক্ষাপটের সামঞ্জস্যতা রয়েছে ও একই আয়াতের শেষাংশের “এবং এরাই সঙ্গী হিসেবে উত্তম”—কথাটির সাথেও পুরোপুরি সংগতিপূর্ণ।

বলাবাহুল্য, এধরণের একখানা হাদীসেও ‘মা’আ’ (مع) শব্দটি প্রয়োগ হয়েছে। যেমন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, التاجر الصدوق الأمين مع النبيين والصديقين والشهداء অর্থাৎ সত্যবাদী ও আমানতদার ব্যবসায়ী ব্যক্তি নবীগণ, সিদ্দিকগণ, শহীদগণের সঙ্গী হবে। (জামে তিরমিজি, হাদীসের মান : হাসান, রাবী আবু সাঈদ আল খুদরী রা.)। এখন আয়াতটির مع النبيين (মা’আন নাবিয়্যীন) দ্বারা আনুগত্যরূপে নবী’র মোকাম লাভ করার ব্যাখ্যাটি সঠিক হলে, তখন এই হাদীসের مع النبيين (মা’আন নাবিয়্যীন) হতে কী অর্থ? অথচ কোনো নির্বোধও হাদীসের এই পদ কিবা উপবাক্য হতে নবীর মোকাম লাভ করার ব্যাখ্যা নেন না! যদিও একই ভাবে এখানেও এমন ব্যাখ্যা নেয়ার সুযোগ আছে যে, ন্যায়পরায়ণ ও সত্যবাদী ব্যবসায়ীগণও নবীর মোকাম লাভ করবে! নাউযুবিল্লাহ।

শেষকথা : প্রিয় আহমদী অর্থাৎ কাদিয়ানীবন্ধু, আপনি কিন্তু সারা জীবন শুনে আসছিলেন যে, আনুগত্যরূপে নবী হওয়ার সম্ভাবনা শুধু মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মতের মাঝেই সীমাবদ্ধ, আগের কোনো নবীর আনুগত্য দ্বারা নবী হওয়া সম্ভব ছিলনা! এবার দেখুন, মির্যা সাহেব তার অন্য একটি রচনায় কী লিখলেন! তিনি লিখেছেন, মূসা (আ.)-এর অনুসরণ করে শত শত লোক পয়গম্বর হয়েছেন! (চশমায়ে মসীহি, বাংলা ৫২)। স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য। এবার নিশ্চয়ই আপনার মাথার উপর আকাশটা ভেঙ্গে পড়ার মত হল, তাই নয় কি? আমি কিন্তু অনেক আগ থেকেই মির্যা কাদিয়ানীর স্ববিরোধী কথাবার্তা সম্পর্কে সতর্ক করে আসছি! আফসোস! কে শুনে কার কথা!

সূরা নিসা আয়াত নং ৬৯ এর শানে নুযূল বা প্রেক্ষাপট

লিখক, প্রিন্সিপাল মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here