- পড়ুন : মির্যার স্ববিরোধীতা-২
প্রথমত, নবুওয়ত ও রেসালত দাবী অস্বীকার:
এখন এমন ব্যক্তিও কী করে আপনা দাবীতে সত্য হন?
১. মির্যা কাদিয়ানীর বই থেকে (তিনি লিখেছেন) ‘আমাদের নবী সৈয়্যদেনা হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.)-কে খোদার পক্ষ থেকে খাতামান নাবীঈন নিযুক্ত করার পর নবুওয়তের দাবী করা থেকে আমি খোদার আশ্রয় চাই’। (হামামাতুল বুশরা [বাংলা], পৃষ্ঠা নং ১৪৮; অনুবাদক ফিরোজ আলম, কেন্দ্রীয় বাংলা ডেস্ক, ইউ. কে; প্রকাশকাল নভেম্বর ২০১১ ইং, প্রকাশনায় আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত বাংলাদেশ; মূল লিখক মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী [আরবী])।
২. আরো লিখেছেন : ‘আমাদের রসূল (সা.)-এর পর কীভাবে কোন নবী আসতে পারে? তাঁর মৃত্যুর পর ওহী বন্ধ হয়ে গেছে আর আল্লাহ তাঁর মাধ্যমে নবীদের সমাপ্তি ঘটিয়েছেন।’ (হামামাতুল বুশরা [বাংলা], পৃষ্ঠা নং ৪৮)।
৩. মির্যা সাহেব তার বইটির আরেক স্থানে আরও লিখেছেন : “আর আমার দ্বারা নবুওয়তের দাবী করে ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত হয়ে যাওয়া এবং কাফের জাতির অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাওয়া মোটেও সম্ভবপর নয়।” (দেখুন ‘হামামাতুল বুশরা‘ (বাংলা) অনূদিত পৃষ্ঠা নং ১৪২; স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য)। সুতরাং নির্দ্বিধায় বলতে পারি, তিনি পরবর্তীতে নবুওয়তের দাবী করে নিজেই নিজের ফতুয়ায় কাফের জাতির অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছেন!
৪. মির্যা কাদিয়ানী সাহেব আরো লিখেছেন :
ان سب باتوں کو مانتا ہوں جو قرآن اور حديث کی رو سے مسلم الثبوت ہیں. اور سیدنا مولانا حصرت محمد مصطفیٰ صلى الله عليه وسلم ختم المرسلين کے بعد کسی دوسرے مدعی نبوت اور رسالت کو کازب اور کافر جانتا ہوں. میرا یقین ہے کہ وحی رسالت حضرت آدم صفی اللہ سے شروع ہوئی اور جناب رسول اللہ محمد مصطفیٰ صلی اللہ علیہ و سلم پر ختم ہو گئی
- (উচ্চারণ) “যূ কুরআন আওর হাদীস কি রো ছে মুসাল্লামুছ ছবূত হেঁ আওর সাইয়েদানা ওয়া মওলানা হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খতমুল মুরসালীন কে বা’দ কেসি দোসরে মুদ্দায়ীয়ে নবুওয়ত আওর রেসালত কো কাজিব আওর কাফের জানতা হোঁ। মেয়েরা একীন হে, কে ওহীয়ে রেসালত হযরত আদম ছফিউল্লাহ চে শুরু হুয়ি আওর জনাবে রাসূলুল্লাহ মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফর খতম হো গি।”
অর্থঃ কুরআন হাদীস দ্বারা যেসব বিষয় দৃঢ়ভাবে প্রমাণিত আমি সেসব বিষয় মান্য করি। সায়্যেদিনা মাওলানা হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাতমুল মুরসালিন)’র পরে কেউ নবুওয়ত আর রিসালতের দাবি করলে সে মিথ্যাবাদী ও কাফের। আমার ইয়াক্বিন (বিশ্বাস), ওহী এবং রেসালত ছফি উল্লাহ হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু হয়ে জনাব রাসূলুল্লাহ মুহাম্মদ মুস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র উপর সমাপ্ত হয়ে গেছে। (মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত ১/২৩১; উর্দূ এডিশন ও অনলাইন ভার্সন)।
দ্বিতীয়ত, নবুওয়ত ও রেসালত দাবী :
১. মির্যা কাদিয়ানীর বইতে লিখা আছে : ‘মোটকথা আমি মুহাম্মদ ও আহমদ (সঃ) হওয়ার কারণে আমার নবুওয়ত ও রেসালত লাভ হয়েছে, স্বকীয়তায় নয়, ‘ফানাফির রসূল’ হয়ে অর্থাৎ রসূলের মধ্যে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে বিলীন করে পেয়েছি। সুতরাং এতে ‘খাতামান্নাবীঈনের’ অর্থে কোন ব্যতিক্রম ঘটলো না। পক্ষান্তরে ঈসা আলায়হেস্সালাম আবার (এ পৃথিবীতে) আসলে [খাতামান্নাবীঈনের অর্থে] নিশ্চয়ই ব্যতিক্রম ঘটবে।’ (দেখুন ‘এক গলতি কা ইযালা’ বা একটি ভুল সংশোধন পৃষ্ঠা নং ৫; [বাংলায় অনূদিত], দ্বিতীয় বাংলা সংস্করণ ২০০১ ইং; অনুবাদক মৌলভী মোহাম্মদ; মূল লিখক, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী; রচনাকাল ১৯০১ইং, প্রকাশনায় আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত বাংলাদেশ)।
২. আরো লিখেছেন : “সুতরাং আমি যখন আজ পর্যন্ত খোদার নিকট হতে প্রায় দেড়শত ভবিষ্যতবাণী লাভ করে স্বচক্ষে পূর্ণ হতে দেখেছি। তখন আমার নবী ও রসূল হওয়া আমি কীরূপে অস্বীকার করতে পরি? যখন স্বয়ং খোদাতাআলা আমাকে নবী ও রসূল আখ্যা দিয়েছেন, তখন আমি কীরূপে এটা প্রত্যাখ্যান করতে পারি এবং তাকে ছেড়ে অন্যকে ভয় করি?” (দেখুন ‘এক গলতি কা ইযালা’ বা একটি ভুল সংশোধন পৃষ্ঠা নং ৮; [বাংলায় অনূদিত], দ্বিতীয় বাংলা সংস্করণ ২০০১ ইং; অনুবাদক মৌলভী মোহাম্মদ; মূল লিখক, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী; রচনাকাল ১৯০১ইং, প্রকাশনায় আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত বাংলাদেশ)। সংক্ষেপে এই কয়েকটি প্রমাণ দেয়া হল।
নইলে আরো অসংখ্য প্রমাণ দেয়া যেত। যাদের সত্য গ্রহণকরার মত পিপাসা রয়েছে তাদের জন্য মির্যা কাদিয়ানীর নবী রাসূল দাবীর প্রমাণের জন্য এইটুকুই যথেষ্ট। সুতরাং তার অনুসারীরা মির্যার এই কুফুরীগুলো ঢাকতে যতভাবেই ব্যাখ্যা-অপব্যাখ্যার আশ্রয় নেয় না কেন, কথা একটাই; নবুওয়তের দাবীদার মুসাইলামা কাজ্জাব, আসওয়াদে আনুসী, তুলায়হা ও শাজাহ এরা যেমন কাফের ও মুরতাদ হিসেবে গণ্য হয়েছিল তদ্রুপ মির্যা কাদিয়ানী আর তার অনুসারীরাও কাফের হিসেবে গণ্য হবে। যে পর্যন্ত মির্যার মত এই নিকৃষ্ট কাফের ও মুরতাদকে ত্যাগ না করবে, মুহাম্মদে আরাবী (সা:)-এর খতমে নবুওয়তের উপর পরিপূর্ণরূপে ঈমান না আনবে সে পর্যন্ত তারা নামায রোজা হজ্ব ও যাকাত সহ যাই করুক না কেন তার সবই মূল্যহীন ও অগ্রহণযোগ্য। সহজকথায়, অজু ব্যতীত নামায পড়লে নামাযের যে অবস্থা হবে ঠিক অনুরূপ অবস্থা হবে মুহাম্মদে আরাবী (সা:)-এর খতমে নবুওয়তের উপর পরিপূর্ণ ঈমান না রাখলে।
শেষকথা : মির্যা কাদিয়ানী লিখেছেন: মিথ্যাবাদীর কথায় অবশ্যই স্ববিরোধীতা হয়ে থাকে। (রূহানী খাযায়েন: ২১/২৭৫)। অতএব এবার মির্যা কাদিয়ানী তারই স্ববিরোধী কথার কারণে কী সাব্যস্ত হলেন একটু ভেবে দেখবেন কি? এমন একজন মিথ্যাবাদীকে দুনিয়ার সমস্ত মুসলমান কিজন্য ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন তা এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। আল্লাহ আমাদের ঈমানকে রক্ষা করুন। আমীন।
লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী, শিক্ষাবিদ ও গবেষক