Home মসীহ ঈসা কুরআন ও হাদীসের আলোকে হযরত ইদ্রিস (আ:) এর মৃত্যু কোথায় হয়েছিল?

কুরআন ও হাদীসের আলোকে হযরত ইদ্রিস (আ:) এর মৃত্যু কোথায় হয়েছিল?

0
কুরআন ও হাদীসের আলোকে হযরত ইদ্রিস (আ:) এর মৃত্যু কোথায় হয়েছিল?

কুরআন ও হাদীসের আলোকে হযরত ইদ্রিস (আ:) এর মৃত্যু কোথায় হয়েছিল?

এই যে দেখতে পাচ্ছেন এটা কি জানেন? এটি বিখ্যাত যুগ ইমাম ও মুফাসসির বরেণ্য মুহাদ্দিস আল্লামা ইমাম জালালুদ্দিন আস-সুয়ূতী (রহ:)-এর সংকলিত ‘তাফসীর’ তাফসীরে জালালাইন এর একটি পৃষ্ঠা (অনলাইন ভার্সন)।

তাফসীরে জালালাইন (আল কুরআন /১৯:৫৭)।

যাইহোক, আজ হযরত ইদ্রিস (আ:) সম্পর্কে কিছু লিখব। কেননা সূরা মরিয়ম আয়াত নং ৫৭ এর ‘রাফা‘ শব্দ নিয়েও কাদিয়ানীরা দুরভিসন্ধিমূলক কতেক ব্যাখ্যা নিয়ে হাজির হয়ে যায়। আজ অতিব সংক্ষেপে সেটির খন্ডন করা হবে, ইনশাআল্লাহ।

প্রথমেই ইদ্রিস (আ:)-এর অন্যতম কতেক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানুন। জ্যোতির্বিজ্ঞান ও গণিত হলো আল্লাহর তরফ থেকে আসা ঐশী বাণী যা হযরত ইদ্রিস (আ:)-এর মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রথম বিকাশ ঘটে। শুধু তাই নয়, তিনিই প্রথম ব্যক্তি আল্লাহ যাঁকে ‘ওয়া রাফা’নাহু মাকা-নান আলিয়্যা’ বলে আকাশে স্বশরীরে জীবিত উঠিয়ে নেয়ার কথা পবিত্র কুরআনে আমাদের জানিয়েছেন। তিনি ছাড়াও পরবর্তীতে আল্লাহতালা যথাক্রমে হযরত ঈসা (আ:)-কে ক্রুশীয় ঘটনাকালে এবং শেষনবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মেরাজের ঘটনাকালে স্বশরীরে আকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন।

হযরত ইদ্রিস (আ:)-এর আলোচনা আসলেই গণিতবিদ্যা আর জ্যোতির্বিদ্যার প্রসঙ্গ অটোমেটিকেলি সামনে চলে আসে। যদিও বা উক্ত শিক্ষাদুটিকে আজকাল কেউ কেউ অবজ্ঞা করেন। এসব আসলে তাদের অজ্ঞতারই বহিঃপ্রকাশ। আপনারা হয়তো অনেকেই হযরত ইদ্রিস (আ:) এর নাম পর্যন্ত শোনেননি বা চিনেন না জানেন না। তাই গণিতের জন্মকথা বলার আগে পবিত্র কোরআন ও হাদীসের আলোকে হযরত ইদ্রিস (আ:)-এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়ের কিছুটা তুলে ধরছি।

সূরা মরিয়মে উল্লেখ করা হয়েছে : “এই গ্রন্থে উল্লেখিত ইদ্রিসের কথা বর্ণনা করা হয়েছে, সে ছিল সত্যবাদী নবী। আমি তাঁকে সুউচ্চে তুলে নিয়েছি।” এই আয়াতের তাফসীর থেকে জানা যায়, এখানে ইদ্রিস (আ:)-এর কথা বর্ণনা করা হয়েছে; তিনি ছিলেন একজন সত্যনবী এবং আল্লাহ তাআলার একজন বিশিষ্ট বান্দা। আল্লাহ তাআলা তাঁকে সুউচ্চে তুলে নিয়েছেন।

হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণিত আছে, মেরাজ গমনকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লামের সাথে হযরত ইদ্রিস (আ:)-এর সাক্ষাত ঘটেছিল। এ নিয়ে ইমাম ইবনে জারীর (রহ:) একটি অতি বিস্ময়কর হাদীস তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ইবনে আব্বাস (রা:) কা’আব ( রা:)-কে “ওয়া রাফা’নাহু মাকা-নান আলিয়্যা” (وَّ رَفَعۡنٰہُ مَکَانًا عَلِیًّا)- আয়াতের ভাবার্থ জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে বলেন: “আল্লাহ তা’আলা হযরত ইদ্রিস (আ:)-কে ওহী করেন – ‘আদম সন্তানের আমলের সমান তোমার একার আমল আমি প্রতিদিন উঠিয়ে থাকি। কাজেই আমি পছন্দ করি যে, তোমার আমল বৃদ্ধি পাক।’ অতঃপর তাঁর নিকট একজন বন্ধু ফেরেশতা আগমন করলে তিনি তাঁর কাছে বলেন – ‘আমার নিকট ওহী এসেছে; অতএব আপনি মৃত্যুর ফেরেশতাকে বলে দিন তিনি যেন একটু দেরি করে আমার জান কবজ করেন, যাতে আমার আমল বৃদ্ধি পায়।” তারপর ওই বন্ধু ফেরেশতা তখন তাঁকে নিজের পালকের উপর বসিয়ে নিয়ে আকাশে উঠে যান এবং চতুর্থ আসমানে গিয়ে মালাকুল মাউত অর্থাৎ হযরত আজরাইল ফেরেশতার সাক্ষাত পান। ওই ফেরেশতা মালাকুল মাউত ফেরেশতাকে হযরত ইদ্রিস (আ:)-এর ব্যাপারে সুপারিশ করলে মৃত্যুর ফেরেশতা বন্ধু ফেরেশতাকে জিজ্ঞেস করেন, “তিনি কোথায় আছেন?” উত্তরে বন্ধু ফেরেশতা বলেন, “এই তো তিনি আমার পালকের উপর বসে আছেন।”

মৃত্যুর ফেরেশতা তখন বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “সুবহানাল্লাহ! আমাকে এখনই নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আমি যেন ইদ্রিস (আ:)-এর রূহ চতুর্থ আসমান থেকে কবজ করি। কিন্তু আমি চিন্তা করছিলাম – ইদ্রিস (আ:) তো আছেন জমিনে, চতুর্থ আসমান থেকে তাঁর রূহ কবজ করবো কিভাবে?” অতঃপর তৎক্ষণাৎ মৃত্যুর ফেরেশতা হযরত ইদ্রিস (আ:)-এর রূহ কবজ করে নেন।

উক্ত রেওয়ায়েতটিই অন্য এক সনদে এভাবে এসেছে – হযরত ইদ্রিস (আ:) বন্ধু ফেরেশতার মাধ্যমে মালাকুল মাউত ফেরেশতাকে জিজ্ঞাস করেছিলেন, “আমার হায়াত আর কত দিন বাকী আছে?” অন্য আরেক হাদীসে আছে তাঁর এই প্রশ্নের উত্তরে মালাকুল মাউত বলেছিলেন, “আমি লক্ষ্য করছি, চক্ষুর একটা পলক ফেলার সময় মাত্র বাকী আছে।” বন্ধু ফেরেশতা তাঁর পলকের নিচে তৎক্ষণাৎ তাকিয়ে দেখেন, হযরত ইদ্রিস (আ:)-এর জান এরই মধ্যে কবজ করা হয়ে গেছে।

হযরত মুজাহিদ (রহ:) বলেন – হযরত ইদ্রিস (আ:)-কে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে, তিনি [জমিনে] মৃত্যুবরণ করেননি, বরং তাঁকে হযরত ঈসা (আ:)-এর মতো জীবিত উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। আউফী (রহ:)-এর রেওয়ায়েতের মাধ্যমে ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত আছে – হযরত ইদ্রিস (আ:)-কে ষষ্ঠ আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল, আর সেখানেই তিনি ইন্তেকাল করেন।

ইমাম জালালুদ্দিন আস-সুয়ূতী এবং ইবনে কাসীর এই দু’জনের মতামত কী?

ইমাম সুয়ুতি (রহ:) এর মতও পবিত্র কুরআনের (১৯:৫৭) অনুসারে হযরত ইদ্রিস (আ:)-কে চতুর্থ আকাশে স্বশরীরে উঠিয়ে নেয়ার কথাই বুঝানো উদ্দেশ্য। তবে কারো কারো মতে, ষষ্ঠ বা সপ্তম আকাশে উঠিয়ে নেয়ার কথাও এসেছে। আল্লাহতায়ালা তাকে সেখানেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করিয়েছেন অতপর তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছেন। ইমাম ইবনে কাসীর (রহ:) হতেও অনুরূপ মত রয়েছে। ইমাম ইবনে কাসীর (রহ:) লিখেছেন : (আল কুরআন /১৯:৫৭) ‘আমরা তাঁকে উন্নীত করেছিলাম সুউচ্চ স্থানে অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা ইদ্রিস আলাইহিস সালামকে সুউচ্চ স্থানে উঠিয়ে নিয়েছেন এর উদ্দেশ্য এই যে, তাঁকে উচ্চ স্থান তথা আকাশে অবস্থান করার ব্যবস্থা করেছেন (তাফসীরে ইবন কাসীর)। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যখন আমাকে আকাশে উঠানো হয়েছিল মেরাজের রাত্ৰিতে আমি ইদ্রিসকে চতুর্থ আসমানে দেখেছি।” (তিরমিয়ী : ৩১৫৭)। তবে ইবনে কাসীর (রহ:) এই সম্পর্কে বলেছেন : এটা কা’আব আল-আহবারের ইসরাঈলী বৰ্ণনাগুলোর অন্যতম। সম্ভবত এইজন্যই কেউ কেউ আয়াতটির ‘স্বশরীরে উঠিয়ে নেয়া’র ভিন্ন অর্থ—তাঁকে উঁচু স্থান জান্নাতে দেয়া হয়েছে অথবা তাঁকে নবুওয়ত ও রিসালাত দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে, উদ্দেশ্য নিয়েছেন। যাইহোক, উদ্দেশ্য যে কোনোটাই হতে পারে। তবে আকাশে স্বশরীরে উঠিয়ে নেয়ার পক্ষেই ক্বারীনা বা ইংগিত শক্তিশালী। কেননা আয়াতের ‘রাফা’ এমন একটি সকর্মক ক্রিয়াপদ যার ‘কর্ম‘ বা Object (ه/ادريس) সত্তাবাচক। যেজন্য তাফসীরকারকদের বেশিরভাগই মনে করেন যে, এখানে রাফা শব্দটি রূপক কোনো অর্থকে (মর্যাদা উন্নীত করা বা নবুওয়ত ও রিসালত দ্বারা সম্মান বৃদ্ধি করা) বুঝাবেনা।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

Previous article মির্যা কাদিয়ানীর গালিগালাজ
Next article যেকোনো একটা মাযহাবের পরিপূর্ণ অনুসরণ করার যৌক্তিকতা
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! এটি সম্পূর্ণ দ্বীনি ও অলাভজনক একটি ওয়েবসাইট। প্রতি বছর এটির ডোমেইন ও হোস্টিং ফি হিসেবে আমাকে এর ব্যয় বহন করতে হচ্ছে। যদি উক্ত ব্যয় বহন করতে অপারগ হই তাহলে এই সাইটটি নিশ্চিত বন্ধ হয়ে যাবে। সেহেতু আপনাদের সবার নিকট আবেদন থাকবে যে, আপনারা সাইটটির উক্ত ব্যয় বহনে এতে বিজ্ঞাপন দিতে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করবেন এবং নিজেরাও সহযোগিতায় এগিয়ে আসবেন। বিনীত এডমিন! বিকাশ : ০১৬২৯-৯৪১৭৭৩ (পার্সোনাল)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here