সারা দুনিয়ায় কাদিয়ানীরা সংখ্যায় কত, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চেয়ে আমি মির্যায়ী রচনাবলি থেকে নানা সময়ের নানা রকম যেসমস্ত গোঁজামিল তথ্যের মুখোমুখি হলাম তা নিচে উল্লেখ করছি।
সম্প্রতি একটি হিসেব :
প্রাসঙ্গিক আলোচনায় যাওয়ার আগে কাদিয়ানীদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট www.alislam.org এর একটি পৃষ্ঠার স্ক্রিনশট এখানে তুলে ধরছি। পাতাটি দেখতে ক্লিক করুন। এখানে এই ১০ মিলিয়নের হিসেবটি ২০০৩ সালের পরের। এখানে পরিষ্কার উল্লেখ আছে, সারা বিশ্বে তারা সংখ্যায় মাত্র ১০ মিলিয়ন বা ১ কোটি আর তাদের জামাত ২০০টি দেশে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
মির্যা কাদিয়ানীর সময়কার হিসেব :
১। মির্যা কাদিয়ানী সাহেব তার জীবদ্দশায় ১৯০৮ সালে লিখেছেন, মোট আহমদী (কাদিয়ানী) জনসংখ্যা তিন লাখের কাছাকাছি। (বারাহীনে আহমদীয়া পঞ্চম খন্ড, রূহানী খাযায়েন ২১/১০৮)।
২। মির্যা কাদিয়ানী সাহেব তার জীবদ্দশায় ১৯০৭ সালে লিখেছেন, মোট আহমদী (কাদিয়ানী) জনসংখ্যা কয়েক লাখ। (হাকীকাতুল ওহী, রূহানী খাযায়েন ২২/৫৭০, টিকা)।
৩। মির্যা কাদিয়ানী সাহেব তার জীবদ্দশায় ১৯০৫ সালে লিখেছেন, মোট আহমদী (কাদিয়ানী) জনসংখ্যা চার লাখ। (চশমায়ে মা’আরিফত, রূহানী খাযায়েন ২৩/৪০৬)।
৪। মির্যা কাদিয়ানী সাহেব তার জীবদ্দশায় ১৯০২ সালে লিখেছেন, মোট আহমদী (কাদিয়ানী) জনসংখ্যা এক লাখের চেয়ে বেশি। (তুহফাতুন নাদওয়া, রূহানী খাযায়েন ১৯/১০১)।
এখানে হিসেবের গোজামিলটা হল, ১৯০২ সালে বললেন এক লাখের চেয়ে একটু বেশি। আবার ১৯০৫ সালে যে সংখ্যাটি মির্যার দাবী অনুসারে চার লাখ, সেই সংখ্যা ১৯০৮ সালে মাত্র তিন লাখের কাছাকাছি! গোঁজামিল হয়ে গেল না? আমার জানার বিষয় হল, সামনের দিকে না বেড়ে বরং পেছনে ব্রেক মারল কেন?
৫। মির্যা কাদিয়ানী সাহেব তার জীবদ্দশায় ১৮৯৯ সালে লিখেছেন, মোট আহমদী (কাদিয়ানী) জনসংখ্যা দশ হাজারের চেয়ে একটু বেশি। (রূহানী খাযায়েন ১৩/৪২২)। কিন্তু তিনি দুই বছর পূর্বে অর্থাৎ ১৮৯৭ সালে লিখেছেন, তার প্রতিষ্ঠিত নতুন ফেরকাটির মোট জনসংখ্যা তিন শত আট (৩০৮) জন। (জরুরাতুল ইমাম, রূহানী খাযায়েন ১৩/৫১৪)। তিনি আবার ১৯০০ সালে লিখেন, মোট আহমদী (কাদিয়ানী) জনসংখ্যা ত্রিশ হাজারের কাছাকাছি। (রূহানী খাযায়েন ১৭/২৮)। এখানে প্রশ্ন হল, যেই সংখ্যাটি তিন বছর আগে মাত্র ৩০৮ ছিল সেটি মাত্র ৩ বা ৪ বছরের ব্যবধানে কিভাবে ৩০,০০০ হতে পারে? আচ্ছা তাও না হয় মানলাম, কিন্তু ১৯০২ সালে সেই সংখ্যা এক লাখের-ও অধিক বলে যে দাবীটা করা হল সেটি কিভাবে মানা যায়? যদি ব্যাপারটা এমনই হত তাহলে সেই সময়কার মিডিয়াগুলোয় এই নিয়ে কোনো সংবাদ প্রকাশিত হয়নি কেন?
এবার বর্তমান সময়ের হিসেব :
৬। মোট আহমদী জনসংখ্যা ১১ মিলিয়ন অর্থাৎ ১ কোটি ১০ লক্ষ। (সূত্র, আহমদীয়া গ্রেজেট, তারিখ জুন ১৯৯৫ ইং)। মির্যা তাহের আহমদ এর সময়কার তাদেরই একটি অফিসিয়াল শুমারি। কিন্তু মির্যা তাহের আহমদ এর মৃত্যুর পর ইংল্যান্ড থেকে তাদের নতুন শুমারি অনুসারে আহমদী জনসংখ্যা ২০০ মিলিয়ন অর্থাৎ ২০ কোটি বলে প্রকাশ করা হয়। (সূত্র, প্রেস রিলিজ, তাং ০৯-সেপ্টেম্বর-২০০৩ ইং)। এখন প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক, যে সংখ্যাটি ৯ বছর আগে মাত্র ১ কোটি ১০ লাখ সেটি মাত্র ৯ বছরের ব্যবধানে তবে কি রকেটে চড়েই ২০ কোটিতে পৌঁছলো? মিথ্যাচারের-ও একটা লিমিট থাকা চাই!
৭। মোট আহমদী (কাদিয়ানী) জনসংখ্যা কয়েক মিলিয়ন অর্থাৎ ২০০ মিলিয়ন (২০ কোটি)। এর অধিকাংশই পাকিস্তানে। (সূত্র, কাদিয়ানীদের অফিসিয়াল দৈনিক আল ফজল, ৪ই জুন ২০১২ ইং পাতা ৪, কলাম ১)।
স্ক্রিনশট
- এটি তাদের দৈনিক আল ফজল পত্রিকা। তাং ৪-৬-২০১২ ইং। ৪ নং পাতার ১নং কলাম দ্রষ্টব্য। এখানে পরিষ্কার করে লিখা আছে, ২০১২ সালে তারা নাকি সংখ্যায় ২০০ মিলিয়নে পৌঁছে গেছে। অর্থাৎ ২০ কোটিতে তারা পৌঁছে গেছেন। আর এরই অধিকাংশ নাকি পাকিস্তানে!
- এখানে বলে রাখতে চাই যে, লন্ডন থেকে ডক্টর সাদাত সাহেব থেকে একটি রিপোর্টে উল্লেখ আছে যে, ২০১৮ সালের জুলাইয়ে পাক ইসলামাবাদ হাইকোর্টের চীফ জাস্টিস শওকত আজীজ সিদ্দিকি সাহেবের নেতৃত্বে পাক হুকুমতের পক্ষ হতে কাদিয়ানীদের উপর চালানো আদম শুমারীর রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, পাকিস্তানে আহমদীদের (কাদিয়ানীদের) মোট জনসংখ্যা ১ লক্ষ ৪২ হাজার। উল্লেখ্য, পাক লাহোরের জেহলম জেলার সাবেক কাদিয়ানী নায়েবে সদর আমীর প্রফেসর মালিক মনোয়ার আহমদ সাহেব ২০০১ সালে সপরিবারে ইসলাম কবুল করার পর একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বর্তমানে পাকিস্তানে কাদিয়ানীরা সংখ্যায় কোনোভাবেই আড়াই লাখের বেশি হবেনা। এরা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে অর্থাৎ ব্রিটিশ, কানাডা, জার্মান, সুইডেন, নাইজেরিয়া, তানজানিয়া, নাইজার, ঘানা-সহ আফ্রিকার দেশ সমূহে কাদিয়ানী মতবাদের প্রচারকার্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
আমি তাদের ২০ কোটি সংখ্যা দাবী নিয়ে কোনো মন্তব্য করব না। যেহেতু এসব তাদের ব্যাপার। কিন্তু আমার আপত্তি হল, তাদের একখানা গোঁজামিল হিসেব নিয়ে। তারা বলল, তারা ২০০ মিলিয়ন আর তার অধিকাংশই নাকি পাকিস্তানে। তাহলে এবার হিসেব কষে নিন! যদি তারা ২০০ মিলিয়ন তথা ২০ কোটি হন তাহলে তাদেরই কথা অনুসারে অন্তত অধিকাংশ বাদ দিলাম, শুধু অর্ধেকটাই ধরি; তখন পাকিস্তানে তারা সংখ্যায় দাঁড়াচ্ছে ১০০ মিলিয়ন বা ১০ কোটি। আর যদি তাদের কথা অনুসারে অধিকাংশই ধরি, তাহলে আরো ১ বা ২ কোটি যুক্ত করে মোট ১১ অথবা ১২ কোটি ধরতে হচ্ছে। এখন আমার প্রশ্ন হল, সত্যিই কি কাদিয়ানী সম্প্রদায় সংখ্যায় পাকিস্তানে ঐ ১১ বা ১২ কোটি?? কখনোই নয়। উল্লেখ্য, বর্তমানে পাকিস্তানে জনসংখ্যা মোট ১৮ কোটি! তাহলে এবার জেনে নেয়া যাক, আন্তর্জাতিক বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ায় পাকিস্তানে কাদিয়ানীদের সংখ্যা নিয়ে কাদিয়ানীদেরই প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে কী লিখা আছে! উইকিপিডিয়ায় লিখা আছে, বর্তমানে পাকিস্তানে কাদিয়ানীরা সংখ্যায় ৪ মিলিয়ন অর্থাৎ ৪০ লক্ষ! (যদিও প্রকৃত হিসেবে তারা কোনো ভাবেই দেড় লাখের বেশি হবেনা – লিখক)।
উইকিপিডিয়া এর লিংক
এখন তাহলে হিসেব কিভাবে মিলাবেন? যদি ২০০ মিলিয়নের মধ্যে অধিকাংশই পাকিস্তানে থেকে থাকে তাহলে ঐ ৪০ লক্ষ দ্বারা কিভাবে ১১ বা ১২ কোটির হিসেব চুকাবেন? এসব মিথ্যা আর প্রতারণা নয় কি? সাধারণ কাদিয়ানীদেরকে এসব মিথ্যা আর গোঁজামিল দিয়ে আর কতকাল ধোকা দেবেন আপনারা? আপনাদের পুরো গেইমটাই কি এসব মিথ্যা আর গোঁজামিল দ্বারা বুমেরাং হয়ে গেল না??
৮। মোট আহমদী (কাদিয়ানী) জনসংখ্যা ১৫০ মিলিয়ন (১৫ কোটি)। (সূত্র, কাদিয়ানীদের অফিসিয়াল দৈনিক আল ফজল, ২৪ই অক্টোবর ২০১৩ ইং পাতা ৪, কলাম ৪)।
এখানে প্রশ্ন দাঁড়ায়, যেই সংখ্যাটি ২০১২ সালে ২০ কোটি সেই সংখ্যা পরবর্তী বছরে অর্থাৎ ২০১৩ সালে মাত্র ১৫ কোটি কেন হবে? তাহলে বাকি ৫ কোটি কি কাদিয়ানী ছেড়ে চলে গেল?
৯। মোট আহমদী (কাদিয়ানী) জনসংখ্যা ২০০ মিলিয়ন (২০ কোটি)। জামাত বিস্তৃত হয়েছে এমন রাষ্ট্র সংখ্যা মোট ১৭৩ টি। (সূত্র, ইংলিশ মিডিয়া “প্রেস রিলিজ” লন্ডন, তাং ৭ই জুলাই ২০০৫ ইং। কাদিয়ানীদের লন্ডন ভিত্তিক নিজেস্ব কেন্দ্রীয় তথ্য প্রকাশ।
১০। মোট আহমদী (কাদিয়ানী) জনসংখ্যা ৮০ মিলিয়ন (৮ কোটি)। জামাত বিস্তৃত হয়েছে এমন রাষ্ট্র সংখ্যা মোট ১৯২ টি। (সূত্র, ইংলিশ মিডিয়া “প্রেস রিলিজ” লন্ডন, তাং ১৭ই আগস্ট ২০০৯ ইং)। কাদিয়ানীদের লন্ডন ভিত্তিক নিজেস্ব কেন্দ্রীয় তথ্য প্রকাশ। এখানেও একই প্রশ্ন, ২০০৫ সালে যে সংখ্যাটি ২০০ মিলিয়ন হবে সেই সংখ্যাটি পরবর্তী ৪ বা ৫ বছরের মাথায় সামনের দিকে না বেড়ে বরং মাত্র ৮০ মিলিয়নে এসে কেন দাঁড়াল? তবে কি বাকি ১২০ মিলিয়ন গায়েব হয়ে গেল? সমীকরণ তো মিলেনা! কাদিয়ানী নেতারা অন্তত নিচের এই হিসেবেটিরও কী উত্তর দেবেন? প্রেস রিলিজ এর স্ক্রিনশট :-
লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক
প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী