Home কাজিবাতে মির্যা কাদিয়ানী কারা? কী তাদের আসল পরিচয়?

কাদিয়ানী কারা? কী তাদের আসল পরিচয়?

কাদিয়ানী কারা? কী তাদের আসল পরিচয়?

বিসমিল্লহির রাহমানির রাহিম
কাদিয়ানী কারা? কী তাদের আসল পরিচয়? তারা কেন মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত নয়? সংক্ষেপে জেনে নিন!

মির্যা কাদিয়ানীর রচনা

বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়ার পূর্বে মির্যা কাদিয়ানীর বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন দাবী-দাওয়ার সামান্য তালিকা তুলে ধরছি। যেমন, ১ . মুলহাম (তাযকিরাহ পৃ-০৬; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৬৮ ইং)। ২. বায়তুল্লাহ (তাযকিরাহ পৃ-২৮; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৮১ ইং)। ৩. মুজাদ্দিদ (তাযকিরাহ পৃ-৩৫; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৮২ ইং)। ৪. মামুর মিনাল্লাহ (তাযকিরাহ পৃ-৩৫; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৮২ ইং)। ৫. নাযীর (তাযকিরাহ পৃ-৩৫; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৮২ ইং)। ৬. আদম, বিবি মরিয়ম, আহমদ (তাযকিরাহ পৃ-৫৫; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৮৩ ইং)। ৭. মুরসাল (তাযকিরাহ পৃ-৯৯; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৮৪ ইং)। ৮. মাসীলে মসীহ (তাযকিরাহ পৃ-১৪৮; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৯১ ইং)। ৯. তাওহীদ এবং তাফরিদ (তাযকিরাহ পৃ-১৬৪; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৯২ ইং)। ১০. কুন ফা-ইয়াকুন (তাযকিরাহ পৃ-১৬৪; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৯২ ইং)। ১১. মসীহ ইবনে মরিয়ম (তাযকিরাহ পৃ-১৭৮; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৯৩ ইং)। ১২. ইমাম মাহদী এবং মসীহ ঈসা (তাযকিরাহ পৃ-২০৯; ৪র্থ এডিশন, দাবীর সময় ১৮৯৪ ইং)। ১৩. ইমামুয যামান (রূহানী খাযায়েন খ-১৩ পৃ-৪৯৫; রিপ্রিন্ট ২০০৮ইং দাবীর সময় ১৮৯৮ ইং)। ১৪. খোদা দাবী (রূহানী খাযায়েন খ-১৩ পৃ-১০৩; রিপ্রিন্ট ২০০৮ইং দাবীর সময় ১৮৯৮ ইং)। ১৫. নবুওয়তী প্রাসাদের সর্বশেষ ইট বা শেষনবী (রূহানী খাযায়েন খ-১৬ পৃ-১৭৭-৭৮; রিপ্রিন্ট ২০০৮ইং দাবীর সময় ১৯০০ ইং)। ১৬. কাশফ অবস্থায় নিজেকে একজন নারীরূপে খোদার সাথে সহবাস করার দাবী (ইসলামী কুরবানী ট্রাক্ট, নং ৩৪, পৃ-১৩; রচনাকারী কাদিয়ানীর ঘনিষ্ট সহচর কাজী ইয়ার মুহাম্মদখান)। ১৭. বুরুজি খাতামুল আম্বিয়া বা শেষনবী হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর অবতার। (রূহানী খাযায়েন খ-১৮ পৃ-২১২; রিপ্রিন্ট ২০০৮ইং দাবীর সময় ১৯০১ ইং)। ১৮. জিল্লি মুহাম্মদ (রূহানী খাযায়েন খ-১৮ পৃ-২১২; রিপ্রিন্ট ২০০৮ইং দাবীর সময় ১৯০১ ইং)। ১৯. জিল্লি, বুরুজি, উম্মতি নবী (রূহানী খাযায়েন খ-১৮ পৃ-২১২; রিপ্রিন্ট ২০০৮ইং দাবীর সময় ১৯০১ ইং)। ২০. শরীয়তবাহক নবী (রূহানী খাযায়েন খ-১৫ পৃ-৪৩২ এবং খ-১৭ পৃ-৪৩৫-৩৬; রিপ্রিন্ট ২০০৮ইং দাবীর সময় ১৯০২ ইং)। ২১. শ্রীকৃষ্ণের অবতার (রূহানী খাযায়েন খ-২২ পৃ-৫২২; রিপ্রিন্ট ২০০৮ইং দাবীর সময় ১৯০৭ ইং)।

বিস্তারিত আলোচনা :

কাদিয়ানীদের প্রচারপত্রে (আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত-এর পরিচিতি-তে) ‘আমাদের ধর্ম বিশ্বাস’ শিরোনামে ‘নূরুলহক’ (রচনাকাল ১৮৯৪ইং) বইয়ের উদ্ধৃতিতে তারা তাদের যে ‘ধর্মবিশ্বাস’ উল্লেখ করেছে তা তাদেরই দ্বিতীয় খলীফা মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদের মত অনুসারে বর্তমানে সম্পূর্ণরূপে বাতিল। কেননা মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ তিনি কাদিয়ানে তাদের জুমার খুতবায় ভাষণকালে মির্যা কাদিয়ানীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “তিনি (অর্থাৎ মির্যা কাদিয়ানী) বলেছেন, এটা ভুল কথা যে, অন্যদের [মুসলমানদের] সাথে আমাদের বিরোধ শুধু ঈসা (আ:) এর মৃত্যু বা আরো কিছু শাখাগত মাসয়ালা নিয়ে। হযরত (মির্যা) সাহেব বলেছেন, আল্লাহতালার সত্তা, রাসূল, পবিত্র কুরআন, নামায, রোজা, হজ্ব ও যাকাত মোটকথা তিনি (মির্যা) বিস্তারিত বলে গেছেন যে, প্রত্যেকটি বিষয়ে তাদের [মুসলমানদের] সাথে আমাদের বিরোধ আছে।” (দৈনিক ‘আল ফজল’ তাং ৩০ জুলাই, ১৯৩১ ইং পৃষ্ঠা নং ৭, কলাম ১)। এখানে একদম পরিষ্কার করে বলে দেয়া হয়েছে যে, মুসলমান আর কাদিয়ানীদের মাঝে প্রত্যেকটি বিষয়ে বিরোধ রয়েছে। অর্থাৎ তাদের সাথে যে আমাদের বিরোধ আছে একথা নতুন নয়, অনেক আগেই তারা তাদের রচনাবলীতে স্বীকার করে লিখে গেছে। ধূর্ত কাদিয়ানী নেতারা সাধারণ মানুষকে তাদের দলে ভিড়ানোর উদ্দেশ্যে এগুলো ভুলেও প্রকাশ করেনা। অধিকন্তু মির্যা কাদিয়ানীর বইগুলো স্ববিরোধ কথাবার্তায় ভরপুর। ফলে মির্যার বইগুলো নিরপেক্ষভাবে পড়লে যে কারো পক্ষে ‘কাদিয়ানী জামাত’ ত্যাগ করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকেনা। এবার তাদেরই বিভিন্ন বই থেকে সংক্ষেপে তাদের মারাত্মক কিছু ঈমান-বিধ্বংসী আকীদা-বিশ্বাস এখানে তুলে ধরছি। যেমন-

১। মির্যা কাদিয়ানীর দাবী হল, “অতএব, যেমনটি বারাহীনে আহমদীয়াতে খোদাতালা বলেছেন, আমি আদম, আমি নূহ, আমি ইবরাহিম, আমি ইসহাক, আমি ইয়াকুব, আমি ইসমাইল, আমি মূসা, আমি দাউদ, আমি ঈসা ইবনে মরিয়ম, আমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অর্থাৎ বুরুজীভাবে।” (হাকীকাতুল ওহী, রূহানী খাযায়েন ২২/৫২১)।

এখন আমি নতুন কনভার্টেট কাদিয়ানীবন্ধুদের জিজ্ঞাস করতে চাই, কাদিয়ানী নেতারা যখন আপনাদেরকে কাদিয়ানীধর্মের দিকে দাওয়াত দিয়েছিল তখন কি মির্যা কাদিয়ানীর উক্ত দাবীগুলোর সামান্য কিছুও আপনাদেরকে বলেছিল? ৯৯% শিউর যে, ওরা আপনাদেরকে এগুলো বলেনি। আচ্ছা, আপনারা শুধু একবার ভাবুন! মির্যা কাদিয়ানীর দাবী অনুসারে সে যদি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হয়, তখন কলেমার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এর কী তাৎপর্য দাঁড়াবে? অতএব খুবই ভাবিয়ে দেখা দরকার।

এখন হয়ত জানতে চাইবেন যে, মুসলমানদের কলেমা’র “মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” অর্থে কাদিয়ানীরা কী এমন বিকৃতি ঘটিয়েছে? উত্তরে বলব, জ্বী, অবশ্যই তারা বিকৃতি ঘটানোর চেষ্টা করেছে। যেমন তাদেরই বইতে পরিষ্কার লিখা আছে, “আমাদের নতুন কোনো কলেমার প্রয়োজন নেই। কেননা মসীহে মওঊদ [মির্যা কাদিয়ানী] নবী করীম (সা:) থেকে ভিন্ন কেউ নন। তিনি নিজেও বলতেন, আমার সত্তা তাঁর সত্তাতে পরিণত। এমনকি [তিনি এও বলতেন] যে ব্যক্তি আমার আর মুহাম্মদ মুস্তফার মাঝে পার্থক্য করে সে না আমাকে চিনল, না আমাকে দেখল। এটি এইজন্য যে, আল্লাহতালার ওয়াদা ছিল, তিনি খাতামুন নাবিয়্যীন [মুহাম্মদ মুস্তফা]’কে দুনিয়াতে আরেকবার পাঠাবেন। যেমন ‘ওয়া আখারীনা মিনহুম’ আয়াত দ্বারা সুস্পষ্ট। সুতরাং মসীহে মওঊদ-ই স্বয়ং মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ। যিনি ইসলাম প্রচার করতে দুনিয়াতে দ্বিতীয়বার আগমন করেছেন। তাই আমাদের [কাদিয়ানিদের] জন্য নতুন কোনো কলেমার প্রয়োজন নেই। হ্যাঁ যদি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র স্থলে অন্য আর কেউ আসত তখনই কেবল [নতুন কলেমার] প্রয়োজন পড়ত।” (কালিমাতুল ফছল ৬৮, ষষ্ঠ অধ্যায়)। সবাই পড়ুন, নাউযুবিল্লাহ।

কেননা তারা মির্যা কাদিয়ানীকে মুহাম্মদ (সা:) মেনে নিয়ে বলছে যে, এইজন্যই তাদের নতুন কোনো কলেমার প্রয়োজন নেই। তার মানে দাঁড়াল, তারা ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ হতে উদ্দেশ্য নিয়ে থাকে মির্যা গোলাম আহমদকে। এমতাবস্থায় তারা কিভাবে মুসলমান হিসেবে গণ্য হতে পারে? তারপর চলুন, আমাদের প্রিয় নবী ও শেষনবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) সম্পর্কে মির্যা কাদিয়ানীর একটি রচনায় কী লিখা আছে জেনে নিই।

২। মির্যা কাদিয়ানী লিখেছে, “রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দ্বারা দ্বীন প্রচারের কাজ পরিপূর্ণভাবে হয়নি। তিনি পূর্ণ প্রচার করেননি। আমি পূর্ণ করেছি।” (রূহানী খাযায়েন খন্ড নং ১৭ পৃষ্ঠা নং ২৬৩; সারমর্ম)। মির্যার সম্পূর্ণ-বক্তব্যটি এরকম, ‘আর যেহেতু রাসূল (সা:)-এর দ্বিতীয় আবশ্যিক দায়িত্ব হল, হিদায়াতের প্রচারকার্য সম্পূর্ণ করা। রাসূল (সা:)-এর যুগে প্রচারকার্য চালানোর কোনো মিডিয়া না থাকায় তা (সম্পূর্ণ করা) সম্ভব ছিলনা। তাই কুরআন শরীফের আয়াত “ওয়া আ-খারীনা মিনহুম লাম্মা ইয়ালহাকূ-বিহিম” (সূরা জুম’আ ০৩)’র মধ্যে রাসূল (সা:)-এর দ্বিতীয় আগমনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। এই প্রতিশ্রুতির প্রয়োজন এই জন্যই সৃষ্টি হয়েছে যে, যাতে রাসূল (সা:)-এর দ্বিতীয় আবশ্যিক দায়িত্বটা অর্থাৎ দ্বীন ও হিদায়াতের প্রচারকার্যের পরিপূর্ণতা যা উনার (সা:) হাতেই সম্পূর্ণ হওয়ার ছিল, সেই সময় (রাসূলের যুগে) কোনো প্রচার মিডিয়া না থাকায় তা সম্পূর্ণ হয়নি। অতএব রাসূল (সা:) আপনা বুরুজি রঙ্গে (অর্থাৎ মির্যা কাদিয়ানীর স্বরূপে) দ্বিতীয় আগমনের মাধ্যমে সেই আবশ্যিক দায়িত্বটা এমন যুগে সম্পূর্ণ করলেন যখন পৃথিবীর সমস্ত কওম পর্যন্ত ইসলাম পৌঁছানোর জন্য মিডিয়াগুলোর উদ্ভব হয়েছে।’ নাউযুবিল্লাহ।

এখানে আমি আপনাদের জিজ্ঞাস করতে চাই, যে ব্যক্তি বলতে পারে যে “রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দ্বারা দ্বীন প্রচারের কাজ পরিপূর্ণভাবে হয়নি বা তিনি পূর্ণ প্রচার করেননি; আমি পূর্ণ করেছি”। নাউযুবিল্লাহ। এমন ব্যক্তি তো প্রকাশ্য নবীর দুশমন এবং নিকৃষ্ট কাফের! এখন তাহলে এই ব্যক্তি কিভাবে ইমাম মাহদী হতে পারে? আপনাদের মনে কি এধরণের প্রশ্ন জাগে না? এরপর দেখুন, এই মির্যা কাদিয়ানী আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর শানে আরো কী কী বেয়াদবী করল?

৩। মির্যা কাদিয়ানী তার বইতে লিখেছে “আমার আলামত (মুজিজা) দশ লক্ষ” (রূহানী খাযায়েন ২১/৭২)। ”রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মুজিজা (মাত্র) তিন হাজার” (রূহানী খাযায়েন ১৭/ ১৫৩)। নাউযুবিল্লাহ। এখানে বলে রাখতে চাই, মির্যা কাদিয়ানীর রচনাসমগ্র ‘রূহানী খাযায়েন’ এর ২১ খন্ডের ৬৩ নং পৃষ্ঠায় লিখা আছে, আলামত আর মুজিজা একই।

এখন তাহলে মির্যা কাদিয়ানী নিজেকে আমাদের প্রিয় নবী (সা:)-এর চেয়েও মর্যাদায় বড় হওয়ার দাবী করল না কিভাবে? এমন বেয়াদব কখনো কি আশেকে রাসূল বা নবীজীর পূর্ণ আনুগত্যকারী হওয়ার দাবী করতে পারে? কখনো নয়। এবার চলুন, মির্যা কাদিয়ানীর মুখ থেকেই শুনে আসি। সে যে নিজেকে আমাদের প্রিয় নবী (সা:) থেকেও শ্রেষ্ঠ হওয়ার দাবী করে লিখে গেছে এখানে তারই বই থেকে উল্লেখ করছি।

৪। মির্যা কাদিয়ানী লিখেছে, “বরং সত্য এটাই যে, হযরত (সা:)-এর রূহানীয়ত ছয় হাজার বছরের শেষাংশে তথা ঐ বছরগুলোর তুলনায় এই দিনগুলোতে সব চেয়ে শক্তিশালী, স্বয়ংসম্পন্ন এবং সুদৃঢ়, বরং চৌদ্দ তারিখের চাঁদের ন্যায়। যেজন্য আমরা তলোয়ার আর যুদ্ধদলের মুখাপেক্ষী নই।” (খোতবাতুল ইলহামিয়্যাহ [আরবী], রূহানী খাযায়েন ১৬/২৭১-৭২)।

  • এখানে মির্যার কথাটির সারমর্ম হল, তার দাবীমতে সে দ্বিতীয় মুহাম্মদ (সা:)। নাউযুবিল্লাহ। যেমন সে লিখছে, “আবার এ পুস্তকেই উক্ত ওহীর সাথে আল্লাহ’র এ ওহী আছে ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ওয়াল্লাযীনা মা’আহু আশিদ্দাউ আলাল কুফফারি রুহামাউ বাইনাহুম’। এ ঐশী বাণীতে আমার নাম মুহাম্মদ রাখা হয়েছে এবং রাসূলও।” (সূত্র, একটি ভুল সংশোধন পৃষ্ঠা নং ৪, দ্বিতীয় বাংলা সংস্করণ, অক্টোবর ২০০১ইং)। এভাবেই সে নিজ দাবীমতে, কথিত ছয় হাজার বছরের শেষাংশে এসেছে। উল্লেখ্য, মির্যার দাবী হল, বনী আদমের সময়সীমা পৃথিবী ধ্বংসের আগ পর্যন্ত মাত্র সাত হাজার বছর। আর মাত্র এক হাজার বছর পরেই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। ঐ হিসেবে সে দাবী করছে, তার আগমন ছয় হাজার বছরের শেষাংশে (অর্থাৎ এই সময়) আগের মুহাম্মদে আরাবী (সা:)-এর চাইতেও শক্তিশালী এবং স্বয়ংসম্পন্ন অবস্থায় হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ। যাইহোক, কুরআন হাদীসের বর্ণনা অনুসারে কেয়ামতের সঠিক খবর মহান আল্লাহ ছাড়া আর কারো জানা নেই। মির্যা কাদিয়ানী তার এ সমস্ত কথাবার্তায় প্রকারান্তরে নিজেকে যেন খোদা হওয়ারই দাবী করল! অপ্রিয় হলেও সত্য যে, তার রচনার অন্য এক জায়গায় তার ‘খোদা হওয়ার দাবী’ও রয়েছে। যেমন,

মির্যা কাদিয়ানীর বই ‘আয়নায়ে কামালাতে ইসলাম’ (উর্দূ) এর মধ্যে সে নিজের খোদায়িত্বের দাবী করে লিখেছে, ‘ওয়া রাআইতুনী ফিল মানামি আইনাল্লাহি ওয়া তাইয়াক্কানতু আন্নানি হুয়া’ অর্থাৎ আমি নিজেকে স্বয়ং খোদা হিসেবে স্বপ্নে দেখি এবং নিশ্চিত হলাম যে, নিশ্চয়ই আমি তাই। (আরো দেখুন, মির্যা কাদিয়ানীর ৮৩টি বইয়ের সমষ্টি ২৩ খন্ডে প্রকাশিত ‘রূহানী খাযায়েন’ খন্ড নং ৫ পৃষ্ঠা নং ৫৬৪)। এখানে সে স্বপ্নের মধ্যে নিজেকে খোদাররূপে দেখতে পায়। সে এটুকুর মধ্যে কথা শেষ না করে তারপরেই বলেছে, ‘এবং নিশ্চিত হলাম যে, নিশ্চয়ই আমি তাই’। নাউযুবিল্লাহ। সুতরাং তার এই স্বপ্নকে এইজন্যই আর কোনো ব্যাখ্যা দেয়ার সুযোগ নেই। সে তার ‘চশমায়ে মসীহি’ (চতুর্থ বাংলা সংস্করণ ২০১৮) বইয়ের ৪৩ নং পৃষ্ঠায় লিখেছে, আল্লাহতালা তাকে সম্বোধন করে বলেছেন, আন্তা মিন্নী বি-মান-যিলাতী আওলাদী অর্থাৎ ‘তুমি আমার পুত্র স্থানীয়’। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, মির্যা কাদিয়ানী নিজেকে ‘খোদার স্ত্রী’ হওয়ার দাবীও করেছে। (দেখুন, তারই কথিত এক সাহাবী কাজী ইয়ার মুহাম্মদ খান বিরচিত ‘ইসলামী কুরবানী ট্রাক্ট’ পৃষ্ঠা নং ১৩)। এখানে শুধুমাত্র বইটির উক্ত উর্দূ অংশের বঙ্গানুবাদ করে দেব। লিখা আছে : ‘মসীহ মওউদ (অর্থাৎ মির্যা কাদিয়ানী) একদা নিজের একটি অবস্থা এভাবে প্রকাশ করেছেন যে, একবার কাশফের অবস্থা উনার উপর এমনভাবে চেপে বসল যে, তিনি যেন একজন স্ত্রীলোক। আর আল্লাহতালা আপনা পুরুষত্বের শক্তি তার উপর প্রয়োগ করলেন, বুঝদারদের বুঝার জন্য ইশারাই যথেষ্ট।’ সুতরাং তার খোদা, খোদার পুত্র এবং খোদার স্ত্রী দাবী করার প্রমাণও পাওয়া গেল।

এখন আমি আপনাদের জিজ্ঞাস করতে চাই, কাদিয়ানী নেতারা যখন আপনাদেরকে তাদের জামাতে ভিড়াতে দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছিল তখন যদি আপনারা তাদের আভ্যন্তরীণ এসমস্ত নিকৃষ্ট বিষয়গুলো জানতেন কখনো কি খোদা, খোদারপুত্র এবং খোদার স্ত্রী দাবীদার এমন একজন মস্তিষ্ক-বিকৃত ব্যক্তিকে ইমাম মাহদী মেনে নিতেন? নিশ্চয়ই না। এবার বুঝলেন তো ওরা কিজন্য বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের চোখকে ফাঁকি দিয়ে মানুষকে গোপনে দাওয়াত দেয়! কেন কথায় কথায় আলেম-সমাজকে নিন্দা করে! এরা ধর্মের নামে সারাবছর সদস্যদের আয়ের ১৬% মাসিক চাঁদা তুলে খায়, কথিত বেহেশতি মাক্ববারা’র ওসীয়তের নামে মৃতব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পত্তির ১০% হিসেবে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলে খায়; এরপরেও এরা ধর্ম-ব্যবসায়ী হয়না, আলেমরাই নাকি ধর্ম-ব্যবসায়ী! যাইহোক, এরা ভালো করেই জানে যে, বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের সাথে আপনারা তাদের বিষয়ে জানতে চাওয়ামাত্রই তাদের আভ্যন্তরীণ কুফুরীগুলো ফাঁস হয়ে যাবে। তখন আর আপনাদেরকে কাদিয়ানী বানানো সম্ভব হবেনা। এখন বলতে পারেন যে, মির্যা কাদিয়ানীর যে মস্তিষ্ক-বিকৃতি রোগও ছিল তার প্রমাণ কী? হ্যাঁ, তার প্রমাণ হল,

৫। মির্যা কাদিয়ানী ‘ঈসা (আ:) আকাশ থেকে দু’টি হলুদ বর্ণের চাদর পরিহিত অবস্থায় পৃথিবীতে নাযিল হবেন’ মর্মে মুসলিম শরীফের (সহীহ মুসলিম, অধ্যায় : কিতাবুল ফিতান ওয়া আশরাতিস সা’আহ, হাদীস নং ৭০৭৮) একটি হাদীসকে নিজের সাথে একজাস্ট করতে ব্যাখ্যা দিয়ে লিখেছে, “ঐ দু’টি চাদর হতে আমার দু’টি রোগের প্রতি ইংগিত। একটি উপরাংশে আরেকটি নিম্নাংশে। অর্থাৎ مِراق اور کثرت بول তথা সিজোফ্রেনিয়া (মস্তিষ্ক-বিকৃতি) এবং বহুমুত্র রোগ।” (দেখুন, মালফুযাত ৫/৩৩; নতুন এডিশন, তাযকিরাতুশ শাহাদাতাইন [বাংলা] পৃ-৪৯; লিখক মির্যা কাদিয়ানী)।

মির্যা কাদিয়ানীর জীবনীগ্রন্থ সীরাতে মাহদী, লিখক মির্যাপুত্র মির্যা বশির আহমদ এম.এ

আপনারা প্রসিদ্ধ ‘উর্দূ টু উর্দূ অভিধান’ ফিরোজুল লুগাত দেখুন, সেখানে ‘মিরাক’ অর্থ ‘এক কিসিম কা মালিখোলিয়া জুনূন’ (অর্থাৎ এক ধরণের মস্তিষ্ক-বিকৃত পাগল) বলেই লিখা আছে। আপনি আন্তর্জাতিক বিশ্বকোষ ‘উইকিপিডিয়া’ থেকেও ঐ রোগের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারেন। সেখানে সিজোফ্রেনিয়া রোগের বৈশিষ্ট্য হিসেবে পরিষ্কার উল্লেখ আছে যে, ‘এ রোগের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে চিন্তাধারা এবং অনুভূতির প্রকাশের মধ্যে সঙ্গতি থাকে না। এর লক্ষণগুলো হলো উদ্ভট চিন্তা, বিভ্রান্তিকর বা অলীক কিছু দেখা, অসঙ্গতিপূর্ণ কথাবার্তা এবং অন্যরা যা শুনতে পায় না এমন কিছু শোনা।’

এবার আমি জিজ্ঞাস করতে চাই, আপনারা কি কখনো আত্মস্বীকৃত এমন একজন মস্তিষ্ক-বিকৃতির কাউকে ইমাম মাহদী মানতে পারেন? আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যাকে ইমাম মাহদী করে পাঠাবেন তাকে কি একজন সুস্থ্য-সবল করে পাঠাতে অক্ষম? অবশ্যই না। এবার হয়ত আপনাদের বুঝে এসে গেছে যে, মির্যা কাদিয়ানী কিজন্য নিজেকে এত কিছু দাবী করেছিল? যার ফলে সে একজন পাগল আর উম্মাদ বলেই সাব্যস্ত হচ্ছে। এই যে দেখুন, সে নিজের ব্যাপারে আরো কী দাবী করল? সে লিখেছে,

৬। “আদমের বাগান অদ্য পর্যন্ত ছিল অসম্পূর্ণ; আমার আগমনে তা ফল ও পাতায় হয়ে যায় পরিপূর্ণ।” (দেখুন, বারাহীনে আহমদীয়া ৫ম খন্ড, রূহানী খাযায়েন ২১/১৪৪)। অন্যত্রে লিখেছে, ‘ইন্নী মা’আল আকরাম, লাও লা-কা লামা খালাকতুল আফলাক’ অর্থাৎ আমি বুযূর্গদের সাথেই রয়েছি। যদি তুমি না হতে তাহলে আমি আসমান সমূহকে সৃষ্টি করতাম না। (সূত্র, তাযকিরাহ, চতুর্থ এডিশন পৃষ্ঠা নং ৫২৫; ইলহাম ০৪-০৫-১৯০৬ ইং)।

এখানে আমার প্রশ্ন হল, যদি কেউ মির্যার উক্ত কথাগুলো বিশ্বাস করে তাহলে কি সে মুহাম্মদ (সা:)-এর চেয়েও মির্যা কাদিয়ানীকে শ্রেষ্ঠ মানলো না? কোনো মুসলমান কি কখনো এটি মানতে প্রস্তুত হবে? অতএব, মির্যা কাদিয়ানী যে একজন মস্তিষ্ক-বিকৃত মানুষ ছিল তাতে কোনোই সন্দেহ নেই।

এবার ভেবে দেখুন, এই ব্যক্তিকে অন্তত মুসলমান মানতেও আপনি প্রস্তুত আছেন কিনা? যেহেতু আপনাদেরকে একদিন অবশ্যই মরতে হবে। কাজেই কাকে মানবেন আর কাকে ছাড়বেন তা খুব ভেবেচিন্তে হয় যেন। দুনিয়ার তুচ্ছ লোভ-লালসা আর নিজেদের অজ্ঞতার কারণে কোনোভাবেই মহামূল্যবান ঈমানটা বরবাদ করা যাবে না! সর্বদা বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের সাথে পরামর্শ করে ও যোগাযোগ বজায় রেখে চলবেন। তাহলে আশা করা যায়, পৃথিবীর কোনো ভন্ড প্রতারক সহজে ধোকা দিয়ে আপনাদের ঈমান লুটতে পারবেনা, ইনশাআল্লাহ।

আপনারা জেনে আরো অবাক হবেন, এই নিকৃষ্ট ভন্ড প্রতারক তার বইয়ের কোনো কোনো জায়গায় নিজেকে মুহাম্মদ (সা:)-এর দাস বলেও লিখেছে। এটি কেবল সাধারণ মানুষকে বুঝানোর জন্যই যে, সে কতবড় আশেকে রাসূল! অথচ একটু আগেই দেখেছেন যে, সে নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার জন্য কী সমস্ত কথাবার্তা লিখে গেছে। এবার দেখুন, এই পাগল-উম্মাদ আর মিথ্যাবাদী লোকটি আমাদের প্রিয় নবী (সা:) সম্পর্কে আরো কী লিখে গেছে?

৭। সে লিখেছে, “কিন্তু তোমরা খুব মনযোগ সহকারে শুনে নাও যে, এখন মুহাম্মদ (সা:)-এর নামের তাজাল্লি (মর্যাদা বা বড়ত্ব) প্রকাশ করার সময় নয়। অর্থাৎ জালালি রঙ্গের কোনো খেদমত অবশিষ্ট নেই। কেননা সেই জালাল (মর্যাদা বা বড়ত্ব) যথাযথ পরিমাণে প্রকাশিত হয়ে গেছে। সূর্যের কিরণ এখন আর বরদাশত হওয়ার নয়। এখন চাঁদের শীতল আলোর প্রয়োজন। আর সেটি আহমদের রঙ্গে আমিই।” (আরবাঈন নং ৩, রূহানী খাযায়েন ১৭/৪৪৫-৪৬)।

এখন আমি প্রশ্ন করতে চাই সেসব নব দীক্ষিত কনভার্টেট কাদিয়ানীবন্ধুদের, যারা মনে করেন ইসলামের মূলধারা তথা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত থেকে বের হয়ে কাদিয়ানী জামাতে যোগ দিয়ে সঠিক কাজ করেছেন তারা কি কখনো মেনে নিবেন যে, এখন মুহাম্মদ (সা:) এর মর্যাদা বা বড়ত্ব প্রকাশ করার সময় নয়! নাউযুবিল্লাহ। এরপরেও আপনারা কিভাবে ভাবছেন যে, মির্যা কাদিয়ানীকে মেনে নিয়ে সঠিক পথে আছেন? আপনারা কি মনে করেন যে, মির্যা কাদিয়ানীর মত একজন আত্মস্বীকৃত পাগলকে ‘শেষনবী’ বিশ্বাস করে পরকালে নাজাত পাবেন? এখন হয়ত জানতে চাচ্ছেন যে, মির্যা কাদিয়ানী সত্যিই কি নিজেকে শেষনবী হওয়ারও দাবী করেছিল? জ্বী হ্যাঁ, করেছিল। এই যে প্রমাণ দেখুন।

৮। মির্যা কাদিয়ানী তার বই ‘তাযকেরাতুশ শাহাদাতাইন’ এর মধ্যে লিখেছে : ‘দো কিসিম কে মুরসাল মিনাল্লাহ কতল নিহি হুয়া করতে (১) এক উয়ো নবী জু সিলসিলাহ কে আউয়াল ফর আতে হেঁ জেইছা কে সিলসিলায়ে মূসোবিয়া মে হযরত মূসা আওর সিলসিলায়ে মুহাম্মদিয়া মে হামারে সাইয়েদ ও মওলা আঁ হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (২) দোসরে উয়ো নবী আওর মামূর মিনাল্লাহ জু সিলসিলাহ কে আখের মে আতে হেঁ জেইসা কে সিলসিলায়ে মূসোবিয়া মে হযরত ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম আওর সিলসিলায়ে মুহাম্মদিয়া মে ইয়ে আ’জেজ।’ অর্থাৎ “আল্লাহর বিধান, তাঁর দুই ধরনের প্রেরিত পুরুষ নিহত হন না। (১) প্রথমত: ঐ নবী যিনি সিলসিলার সূচনাতে আগমন করেন, যেমন মুসায়ী সিলসিলায় হযরত মুসা আলায়হিস সালাম এবং মুহাম্মদীয়া সিলসিলায় আমাদের প্রভু ও মওলা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম। (২) দ্বিতীয়ত: ঐ সকল নবী ও আল্লাহর প্রেরিতগণ যারা সিলসিলার শেষে আগমন করেন- যেমন, মুসায়ী সিলসিলায় হযরত ঈসা আলায়হিস সালাম এবং মুহাম্মদী সিলসিলায় এই অধম।” (দেখুন, রূহানী খাযায়েন [উর্দূ] খন্ড ২০ পৃষ্ঠা নং ৬৯-৭০; রচনাকাল ১৯০৩ইং, তাযকেরাতুশ শাহাদাতাইন [বাংলা] পৃষ্ঠা নং ৮২; মূল লিখক মির্যা কাদিয়ানী)। এখানে সে পরিষ্কার শব্দে লিখেছে, সে নাকি মুহাম্মদী ধারাবাহিকতায় একজন শেষনবী। কী বুঝলেন? যে লোক নিজেকে ইমাম মাহদী দাবী করলো সে লোকই কিন্তু নিজেকে দাবী করছে একজন ‘শেষনবী’! যে কথা সূরা আহযাবের ৪০ নং আয়াত ‘ওয়া খাতামান নাবিয়্যীন’ (এবং তিনি শেষনবী) এর পুরো বিরোধী। নবীজীর হাদীস ‘লা নাবিয়্যা বা’দী’ (আমার পর আর কোনো নবী নেই) এরও বিরোধী।

অথচ এই লোক নিজেকে নবী দাবী করার আগে প্রায় ১৮৯১ সালের দিকে রচিত তার ‘হামামাতুল বুশরা’ বইতে নিজের নবুওয়ত দাবী অস্বীকার করেছে এবং মুহাম্মদ (সা:)-কে একজন ‘শেষনবী’ আখ্যা দিয়ে লিখে গেছে। যেমন তার হামামাতুল বুশরা (বাংলা অনূদিত) বইয়ের ৪৮ নং পৃষ্ঠায় লিখা আছে : ‘আমাদের রাসূল (সা:)-এর পর কীভাবে কোন নবী আসতে পারে? তাঁর মৃত্যুর পর ওহী বন্ধ হয়ে গেছে আর আল্লাহ তাঁর মাধ্যমে নবীদের সমাপ্তি ঘটিয়েছেন।’ বইটির ১৪২ নং পৃষ্ঠায়সে এও লিখেছেন : ‘আর আমার দ্বারা নবুওয়তের দাবী করে ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত হওয়া এবং কাফের জাতির অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাওয়া মোটেও সম্ভবপর নয়।’

এখন তাহলে মির্যা কাদিয়ানী নিজেই নিজের কথা অনুসারে নবুওয়তের দাবী করে ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত এবং কাফের জাতির অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল কিনা? এবার হয়ত বুঝতে পেরেছেন যে, মূলত এই ছিদ্রগুলোর উপর পর্দা ফেলতেই কাদিয়ানী নেতারা মুসলমানদের সাথে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিত বিষয় নিয়ে তর্ক শুরু করে। যাতে সাধারণ মানুষদের দৃষ্টিকে ভিন্নদিকে ঘুরিয়ে দিয়ে উপস্থিত শ্রোতাদের আগ্রহ নষ্ট করতে পারে। এই হল তাদের কুটকৌশল। জনৈক কাদিয়ানী একবার আমাকে প্রশ্ন করেছিল যে, আপনাদের যখন ঈসা (আ:)-এর জীবন-মৃত্যু নিয়ে বাহাস করার আহবান জানানো হয় তখন আপনারা সেটিকে এড়িয়ে যান কেন?

তখন আমি উত্তরে বললাম, ঈসা (আ:) জীবিত থাকা কিংবা মৃত্যুবরণ করার বিশ্বাস বিশেষ কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই নয়। আর একথা খোদ্ মির্যা সাহেবই লিখে গেছে। (দেখুন ‘আহমদী ও গয়ের-আহমদীদের মধ্যে পার্থক্য’ পৃ-১; বাংলা দ্বিতীয় পূনর্মুদ্রণ, মে ২০১৮ইং)। যেজন্য আমরা তুলনামূলকভাবে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মির্যার আত্ম-জীবনী নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী। যেহেতু তার দাবী হল, তাঁর প্রতি যে ঈমান আনবেনা তার পূর্বের ঈমানও গ্রহণযোগ্য নয়। (কালিমাতুল ফছল, ৩য় অধ্যায়; পৃ-৫২)। তারপর সে জনমের মত চুপ হয়ে যায়। এবার মুসলমানদের ব্যাপারে মির্যা কাদিয়ানীর ফতুয়াবাজী কীরকম ছিল দেখুন।

৯। মির্যা কাদিয়ানী লিখেছে (ক) “খোদাতালা আমার উপর প্রকাশ করেছেন যে, যাদের নিকট আমার দাওয়াত পৌঁছেছে আর তারা তা কবুল করেনি এমন ব্যক্তি মুসলমান নয় এবং এরা (পরকালে) পাকড়াও হবে। (সূত্র, তাযকিরাহ পৃষ্ঠা নং ৫১৯; ইলহাম, মার্চ ১৯০৬ ইং, চতুর্থ এডিশন, লিখক মির্যা কাদিয়ানী)।

(খ) এবার কাদিয়ানীদের দ্বিতীয় খলীফার বইতে কী লিখা আছে শুনুন, “প্রত্যেক মুসলমান যিনি হযরত মসীহে মওঊদ (মির্যা কাদিয়ানী)’র বাইয়েতে শামিল হয়নি, সে যদিও হযরত মসীহ মওঊদের নামও শুনেনি, এমন ব্যক্তিও কাফের এবং ইসলাম থেকে বাহিরে।” (সূত্র, আয়নায়ে সাদাক্বাত, আনওয়ারুল উলূম ৬/১১০; মির্যাপুত্র মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ; অনলাইন এডিশন)। সুতরাং এ সমস্ত বক্তব্য হতে পরিষ্কার বুঝা যায় যে, মির্যা কাদিয়ানীকে স্বীকার না করা পর্যন্ত একজন মুসলমান কোনোভাবেই মুসলমান থাকতে পারবেনা, যদিও ঐ মুসলমান ব্যক্তিটি আল্লাহ এবং তার প্রিয় হাবীব মুহাম্মদ (সা:)-এর উপর পরিপূর্ণ ঈমান রাখেনা কেন! তো একথাগুলো কি আপনারা মানেন? আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও আপনারা কি আপনাদের মৃত পূর্ব-পুরুষদের এমনকি এলাকার চেয়ারম্যান মেম্বারকেও শুধু কাদিয়ানী না হওয়ার কারণে কাফের আর জাহান্নামী মনে করবেন? নাউযুবিল্লাহ।

শুধু একটি প্রশ্ন : এই পর্যায় কাদিয়ানীদেরকে শুধু একটি প্রশ্ন করতে চাই, মির্যা কাদিয়ানীর দাবী হল, হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পূর্ণ আনুগত্যের মাধ্যমেই সে নবীর মোকাম (মর্যাদা) লাভ করেছে! এতে বাহ্যিকভাবে মনে হচ্ছে, তার নবুওয়ত দাবীর ভিত্তিটা মূলত আনুগত্য-ই।

বিপরীতে মির্যা কাদিয়ানীর রচনার আরেক জায়গায় পরিষ্কার লিখা আছে, “তাদের পরিষ্কার জানা আছে যে, আমরাও নবুওয়তের দাবীদারের প্রতি অভিশাপ দিই এবং লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রবক্তা এবং হযরত হযরত (সা:)-এর খতমে নবুওয়তের উপর ঈমান রাখি এবং ওহীয়ে নবুওয়ত বন্ধ তবে (আমরা) ওহীয়ে বেলায়তেরই প্রবক্তা যেটি মুহাম্মদ (সা:)-এর নবুওয়তকে আশ্রিত করে ও তারই আনুগত্য দ্বারা আউলিয়ায়ে কেরামের অর্জিত হয়ে থাকে। যে আমাদের প্রতি এর চেয়ে বেশি কোনো কথার অভিযোগ করবে সে যেন তাকওয়া আর সততাই পরিত্যাগ করল।” (মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত ২/২৯৭; নতুন এডিশন)। সারকথা, প্রথমোক্ত বক্তব্য হল, সে আনুগত্য দ্বারা ‘নবীর মোকাম’ লাভ করেছে। আর শেষোক্ত বক্তব্য হল, আনুগত্য দ্বারা আউলিয়ায়ে কেরামের ন্যায় শুধুই ‘বেলায়ত’ লাভ হয় (অর্থাৎ নবী’র মোকাম লাভ হয় না)।

তাহলে আপনারা কিভাবে বিশ্বাস করতে পরেন যে, মির্যা কাদিয়ানী নবীজীর আনুগত্য দ্বারা নবীর মোকাম লাভ করার দাবীতে একজন সত্যবাদী? এটি কি তার অসঙ্গতিপূর্ণ দাবী আর ভন্ডামী নয়?

শেষকথা : এখানে শুধু তাদের লিফলেটের ‘আমাদের ধর্ম বিশ্বাস’ শিরোনামে তারা যে সূক্ষ্ম মিথ্যা আর প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সাধারণ মানুষদের ধোকা দিতে চেয়েছে সেটুকুরই সংক্ষিপ্ত জবাব দেয়ার চেষ্টা করা হল। নতুবা এভাবে তাদের মিথ্যা আর প্রতারণার মুখোশ উন্মোচন করতে শুরু করলে অনেক বড় পুস্তক হয়ে যাবে। পরিশেষে আমার কলিজার টুকরো স্থানীয় জনপ্রতিনিধিবন্ধুরা! আপনারা দয়া করে এলাকার মুসলমানদের ঈমানের পাহাদারী করতে এগিয়ে আসুন। বিজ্ঞ আলেম উলামাদের সাথে নিয়ে নিজ এলাকার মুসলমানদেরকে ‘কাদিয়ানীরা কেন অমুসলিম’ তা জনগণকে বুঝানোর চেষ্টা করুন আর কাদিয়ানীদেরকে বলুন, তারা তাদের আসল ধর্মবিশ্বাস আর যেন গোপন না করে। আর যেন মুসলমানদের তাদের দলে ভিড়ানোর চেষ্টা না করে। তারাও এদেশে থাকবে। এটি তাদের নাগরিক অধিকার। তবে যে যার আসল পরিচয় নিয়ে থাকবে। যেভাবে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টানরা নিজেদের আসল পরিচয় নিয়ে আছে। ভেজাল পণ্য তৈরী করা যেমন অপরাধ তেমনি সেটি প্রচার করাও অপরাধ। তাই যেহেতু কাদিয়ানী মতবাদ ইসলামের বাহিরে সম্পূর্ণ একটি নতুন ধর্মমত সেহেতু ইসলামের নামে সেটি মানুষের মাঝে প্রচার করাও অপরাধ। কারণ মির্যা কাদিয়ানী একজন নবী ও রাসূল দাবীদার। আর একথা সবারই জানা যে, নবী ও রাসূলের ভিন্নতার কারণে ধর্মও ভিন্ন পরিচিতি লাভ করে। যেমন মূসা (আ:)-এর অনুসারীরা ইহুদী হিসেবে পরিচিত, ঈসা (আ:)-এর অনুসারীরা ঈসায়ী বা খ্রিস্টান হিসেবে পরিচিত। আর শেষনবী মুহাম্মদ (সা:)-এর অনুসারীরা মুসলমান বা মুসলিম হিসেবে পরিচিত। অনুরূপ মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর (জন্মমৃত্যু : ১৮৩৯-১৯০৮ইং) অনুসারীরা কিজন্য মুসলমান পরিচয় ধারণ করবে? তারা বরং কাদিয়ানী বা মির্যায়ী নামে পরিচয় ধারণ করবে। ফলে তাদের বিবাহ-শাদী, সমাজ-ব্যবস্থা এবং জানাজা ও দাফন-কাফন ইত্যাদী কোনো কিছুর সাথে মুসলমানদের সম্পর্ক নেই। আজকের মত এখানে শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ।

বলে রাখা জরুরি, এখানে উল্লিখিত কোনো তথ্য কোনো কাদিয়ানী মিথ্যা প্রমাণ করতে পারলে তাকে নগদে দশ লক্ষ টাকা পুরষ্কৃত করা হবে। পারলে এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন। আর যদি মিথ্যা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে তাকে অবশ্যই ঐ মজলিসে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সামনে মির্যা কাদিয়ানীর প্রতি লানত দিয়ে তওবাহ করে ইসলামের মূলধারায় ফিরে আসতে হবে। যদি সাহস থাকে তাহলে আসুন, আমার চ্যালেঞ্জ কবুল করুন।

লিখক, মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ শিক্ষাবিদ ও গবেষক ; যোগাযোগ – ০১৬২৯-৯৪১৭৭৩

Previous article মেরাজ সশরীরে হয়েছিল মর্মে সমস্ত সাহাবীর বিশ্বাস
Next article কাদিয়ানীদের একটি সুস্পষ্ট ধর্মমত
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! এটি সম্পূর্ণ দ্বীনি ও অলাভজনক একটি ওয়েবসাইট। প্রতি বছর এটির ডোমেইন ও হোস্টিং ফি হিসেবে আমাকে এর ব্যয় বহন করতে হচ্ছে। যদি উক্ত ব্যয় বহন করতে অপারগ হই তাহলে এই সাইটটি নিশ্চিত বন্ধ হয়ে যাবে। সেহেতু আপনাদের সবার নিকট আবেদন থাকবে যে, আপনারা সাইটটির উক্ত ব্যয় বহনে এতে বিজ্ঞাপন দিতে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করবেন এবং নিজেরাও সহযোগিতায় এগিয়ে আসবেন। বিনীত এডমিন! বিকাশ : ০১৬২৯-৯৪১৭৭৩ (পার্সোনাল)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here