খিজির, ইলিয়াস এবং ইদ্রীস কি এখনো জীবিত?

0
খিজির, ইলিয়াস এবং ইদ্রীস কি এখনো জীবিত?

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।

কাদিয়ানী মু’আল্লিম আব্দুল মাবুদ সাহেবের সংশয় নিরসন

প্রশ্নকর্তা, মুফতি শফী (রহ.) সংকলিত তাফসীরে মা’আরেফুল কোরআনের ভেতর লিখা আছে, চারজন নবী এখনও জীবিত আছেন। এখন এই সম্পর্কে কী বলবেন? উত্তরে বলতে চাই, মা’আরেফুল কোরআন হল একখানা উর্দূ ভাষায় রচিত তাফসীরের কিতাব। আর তাফসীরের কিতাবগুলোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তাতে অনেক ইসরাইলী রেওয়ায়েত কিবা আন-ভেরিফাইড বর্ণনাও শুধুমাত্র সংগ্রহের উদ্দেশ্যে গ্রন্থবদ্ধ হয়ে থাকে। তাই কোথাও কোনো কিছু উল্লেখ থাকলেই সেটিকে অথেনটিক ধরে কুড়িয়ে নেয়া মূর্খতার পরিচায়ক। কারণ বিশুদ্ধ সূত্র ব্যতীত কোনো রেওয়ায়েত অন্তত আকীদার ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়।

কাদিয়ানী মু’আল্লিম (চট্টগ্রাম)।

জ্ঞানীদের নিশ্চয়ই জানা আছে, লোকমুখে প্রচলিত এমন কোনো কথা কোনো তারীখ বা তাফসীরগ্রন্থে শুধুমাত্র সংগ্রহের উদ্দেশ্যে লিপিবদ্ধ করার অর্থ এই নয় যে, সেটি ঐ লিখকদের বা ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য প্রমাণযোগ্য হয়ে যাবে। এর একটা উদাহরণ হল, মির্যা কাদিয়ানীর বইতে লিখা আছে, “কোনো কোনো হাদীসে এসেছে দাজ্জাল মানব শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হবেনা বরং সে এক শয়তান হবে।” (হামামাতুল বুশরা [বাংলা] পৃ-৬৫)। এখন আমার প্রশ্ন, মির্যার ঐ কথা সত্যিই কি প্রমাণযোগ্য? যদি তাই হয় তাহলে সেই কোনো কোনো হাদীসগুলো কোথায়? প্রমাণ দিতে পারবেন? স্ক্রিনশট :-

মূল কথায় ফিরে আসছি :

উম্মাহা’র বহু স্কলার বলেছেন, খিজির (আ.) এবং ইলিয়াস (আ.)-এর মৃত্যু হয়ে গেছে। ইদ্রীস (আ.) এর মৃত্যু আকাশে উঠিয়ে নেয়ার পর সেখানেই হয়ে গেছে। ইমাম সুয়ূতি, ইবনে আসাকীর সহ কতিপয় তাফসীরকারকের বরাতে ইলিয়াস, ইদ্রীস এবং খিজির এঁদের জীবিত থাকার কথা কোনোরূপ বর্ণনামূলক ছিলনা, বড়জোর সংগ্রহমূলক ছিল। এর প্রমাণ হচ্ছে, ইমাম হাকেম নিশাপুরী এবং ইমাম ইবনে কাসীরের মতো অনুসন্ধানবিদ আলেমগণ এসব রেওয়ায়েতকে বিশুদ্ধ মনে করেননি। কেননা এগুলো ইসরাইলি রেওয়ায়েত তথা ঈসায়ী লিটারেচার থেকে গৃহীত।

হযরত ইদ্রীস (আ.) সম্পর্কে জানুন এখানে

তাফসীরে মা’আরেফুল কোরআন গ্রন্থকার নিজেও এই মত ব্যক্ত করেছেন এবং বলেছেন, “সারকথা, হযরত ইলিয়াস (আ.)-এর জীবিত থাকার বিষয়টি কোনো নির্ভরযোগ্য ইসলামী রেওয়ায়েত দ্বারা প্রমাণিত নয়”। (দেখুন, মা’আরেফুল কোরআন পৃ-১১৫৫; বাংলা)। সুতরাং বিষয়টি ভালো ভাবে উপলব্ধি করা ব্যতীত যে বা যারাই বিতর্কে জড়াবেন তারা নিশ্চিত পদস্খলিত হবেন! কাদিয়ানী মু’আল্লিম আব্দুল মাবুদ সাহেব! আপনি আল্লাহকে ভয় করুন। মা’আরেফুল কোরআন এর খন্ডিত লিখা দ্বারা আপনি দুনিয়াকে ধোকা দিতে চাচ্ছেন কেন? এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে এসেও কিভাবে এইরূপ অপরিপক্ক কার্যকলাপে সম্পৃক্ত হওয়ার দুঃসাহস করলেন! আল্লাহ আমাদের সবাইকে সহীহ বুঝ দান করুন। স্ক্রিনশট :-

তাফসীরে মা’আরেফুল কোরআন (বাংলা) দ্রষ্টব্য।

হযরত ঈসা (আ:) সম্পর্কে :

কাদিয়ানী সম্প্রদায় বরাবরই এই একটি জায়গায় খুব বেশি গোঁজামিলের আশ্রয় নিয়ে থাকে। তারা হযরত আবু বকর (রা.)-এর ঐতিহাসিক বক্তব্যের আগের প্রসঙ্গটি রহস্যজনকভাবে এড়িয়ে যায় যেখানে হযরত উমর (রা.) থেকে একথাটিও বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছিলেন যে বলবে মুহাম্মদ (সা.) মৃত্যুবরণ করেছেন আমি তাকে আমার এই তলোবারি দ্বারা হত্যা করব। তিনি আরও বলেছিলেন و انما رفع الى السماء كما رفع عيسى ابن مريم عليه السلام এর মানে হল, “নিশ্চয়ই মুহাম্মদ (সা:)-কে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে যেমনিভাবে ঈসা (আ:)-কে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল।” (আল মিলাল ওয়ান নিহাল ১/২৪; ইমাম শাহরাস্তানী)। মির্যা কাদিয়ানী সাহেব নিজেও কথাটি উদ্ধৃত করেছেন। রূহানী খাযায়েন ১৫/৫৮১ দ্রষ্টব্য। কিন্তু কাদিয়ানী জ্ঞানপাপীরা হযরত উমর (রা.)-এর বক্তব্যের প্রথমাংশ বললেও শেষের অংশটুকু উদ্দেশ্যমূলকভাবে হজম করে ফেলে। আহা! কি সাংঘাতিক!! স্ক্রিনশট :

রূহানী খাযায়েন ১৫/৫৮১

অথচ উমর (রা.)-এর ঐ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই হযরত আবুবকর (রা.) সূরা আলে ইমরান এর ১৪৪ নং আয়াত তুলে ধরে বয়ান দিয়েছিলেন যে, من كان يعبد محمدا فان محمدا قد مات و من كان يعبد اله محمد فانه حى لا يموت و قرأ هذه الاية و ما محمد الا رسول قد خلت من قبله الرسل الخ এর অর্থ হল, “যে মুহাম্মদ (সা.)-এর ইবাদত করে থাকে (সে যেন জেনে নেয়) মুহাম্মদ (সা.) মৃত্যুবরণ করেছেন। আর যে মুহাম্মদ (সা.) এর প্রভুর ইবাদত করে থাকে (তার জেনে রাখা উচিত) নিশ্চয়ই তিনি জীবিত, মৃত্যুবরণ করেননি। (তারপর) আবুবকর এই আয়াত তেলাওয়াত করেন, وما محمد الا رسول قد خلت من قبله الرسل الخ (অর্থ-মুহাম্মদ একজন রাসূল মাত্র তাহার পূর্বে অনেক রাসূল গত হইয়া গিয়াছে)”। স্ক্রিনশট :-

সুতরাং এটি একথারই প্রমাণ যে, ঈসা (আ:) এর আকাশে উঠিয়ে নেয়ার আকিদা স্বয়ং সাহাবীদেরও। নইলে হযরত উমর (রা.) কেন একথা বললেন। আর আবুবকর (রা.)ও বা কেন উমরের ঐ কথার রদ (প্রত্যাখ্যান) করলেন না!? জ্ঞানীদের নিশ্চয়ই ভাবিয়ে তুলবে! মজার ব্যাপার হল, একদম সহীহ সনদ দ্বারা হাদীসে বর্ণিত আছে যে, হযরত ঈসা (আ.)-এর নাযিল হবে আকাশ থেকে। স্ক্রিনশট :-

ইমাম নূরউদ্দীন আল-হাইছামীর ‘কাশফুল আসতার আ’ন যাওয়াইদুল বাজ্জার‘ ৪/১৪২ দ্রষ্টব্য। ইমাম হাইছামী বলেছেন, ‘ঈসা (আ:) আকাশ থেকে নাযিল হবেন’ মর্মে এই হাদীস ইমাম বাজ্জার বর্ণনা করেছেন। এর সকল রাবী সহীহ বুখারী’র, শুধু আলী ইবনে মুনযির ব্যতীত। তবে তিনিও একজন সিকাহ (বিশ্বস্ত)। মসনাদে বাজ্জার ৭/৩৪৯ দ্রষ্টব্য।

হযরত খিজির (আ.) সম্পর্কে

  • কোনো কোনো ইসরাইলী রেওয়ায়েত দ্বারা যারা বলে থাকেন যে, খিজির (আ.) জীবিত, হজ্ব করেন মদীনায় মানুষের সাথে মোলাকাত করেন মুসাফিরদেরকে সাহায্য করেন। মনে রাখা উচিৎ, এমন কোনো কথা সহীহ্ নয়, বরং সহীহ ও বিশুদ্ধ মত হচ্ছে, তিনিও ইন্তেকাল করেছেন। হযরত খিজির (আ.) ইন্তেকাল করেছেন বলে যারা অভিমত পেশ করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম বুখারী (রহ.), ইবরাহীম আল হারবী (রহ.), আবুল হুসাইন ইবনুল মুনাদী (রহ:), ইবনুল জাওযী (রহ.)৷ ইবনুল জাওযী (রহ.) এ ব্যাপারে অধিকতর ভুমিকা রেখে গেছেন। এ সম্পর্কে তিনি পর্যাপ্ত দলিল প্রমাণ সহ একটি কিতাবও লিখে গেছেন। এ সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী এম.এ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here