Home কাদিয়ানী মতবাদ খণ্ডন কাদিয়ানী নেতা আব্দুল আউয়াল এর ১০টি প্রশ্নের উত্তর

কাদিয়ানী নেতা আব্দুল আউয়াল এর ১০টি প্রশ্নের উত্তর

0

আলেম উলামাদের প্রতি কাদিয়ানীদের ন্যাশনাল আমীর আব্দুল আউয়াল সাহেবের ১০টি প্রশ্ন ও আমার পক্ষ হতে সেগুলোর সহজ উত্তর

[অতিব সংক্ষেপে কাদিয়ানীদের বিভ্রান্তিমূলক প্রশ্নগুলোর একদম সহজ ভাষায় উত্তর দেয়া হল। আমি ইচ্ছে করলে প্রতিটি প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে অন্তত একটি করে হলেও দাঁতভাঙ্গা প্রশ্ন করতে পারতাম। কিন্তু সংক্ষেপ রাখতে করলাম না]।

প্রশ্ন ১ : যেহেতু ৭২ দলের আলেম উলামারা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পর নবীর আগমনে বিশ্বাসীদেরকে ইসলাম বহির্ভূত মনে করে। অতএব, জবাব দিন আল্লাহর নবী ঈসা (আ.)-এর আগমনের অপেক্ষাকারী মুসলমানদেরকে আলেমরা কি হিসেবে গণ্য করে?

উত্তর : প্রশ্নকর্তার প্রশ্নেই ভুল। কেননা মুহাম্মদ (সা.)-এর পর নবীর আগমনের বিশ্বাসীদেরকে ইসলামের সমস্ত ফেরকার লোকেরাই ইসলাম বহির্ভূত মনে করেন। কাজেই প্রশ্নে উল্লিখিত সংখ্যাটি ৭২ নয়, বরং ৭৩ হবে। যেহেতু হাদীস শরীফে ‘উম্মতে মুহাম্মদীয়া ৭৩ ফেরকায় বিভক্ত হবে’ বলেই উল্লেখ রয়েছে (তিরমিজী, কিতাবুল ফিতান দ্রষ্টব্য)। যাইহোক, সঠিক উত্তর পাওয়ার জন্য প্রশ্নও সঠিক হওয়া আবশ্যক। উল্লেখ্য, কাদিয়ানীদের জন্য নিজেদেরকে ইসলামের ফেরকাভুক্ত মনে করার কোনো কারণ নেই। কেননা মির্যা কাদিয়ানীর বইতে লিখা আছে “তৃতীয় শতাব্দীর পর বিগত উম্মত তেয়াত্তর ফেরকায় বিভক্ত হইয়া গিয়াছে।” (হাকীকাতুল ওহী [বাংলা] ৩৬)। তাই এখন প্রশ্ন হল, মির্যা কাদিয়ানীর জন্মের হাজার বছর আগেই যে উম্মত তার কথানুসারে তেয়াত্তর ফেরকায় ভাগ হয়ে গেল বর্তমান যুগের কাদিয়ানীরা সেই তেয়াত্তরের মধ্যে গণ্য হয় কিভাবে?

প্রশ্ন ২ : আগমনকারী ঈসা (আ.) নবী হবেন কিনা? যারা বলে, নবী হবেন তারা জবাব দিন ঈসা (আ.)-এর নবী হিসেবে আগমনের পরও হযরত মুহাম্মদ (সা.) কিভাবে খাতামান্নাবীঈন (শেষ নবী) থাকবেন?

উত্তর : হযরত ঈসা (আ.)-এর পুনরায় আগমন দ্বারা হযরত মুহাম্মদ (সা.) কিভাবে খাতামান্নাবীঈন বা ‘শেষনবী’ থাকবেন, প্রশ্নটির উত্তর নেয়ার আগে “শেষনবী” এর সংজ্ঞা কী তা জেনে নিন! বরেণ্য ইমাম আল্লামা যামাখশারী (রহ.) লিখেছেন,

معنى كونه آخر الانبياء انه لا ينبأ أحد بعده و عيسى ممن نبى قبله و حين ينزل عاملا على شريعة محمد مصليا الى قبلته كانه بعض أمته

অর্থ: তিনি (মুহাম্মদ সা.) “শেষনবী”, একথার অর্থ তাঁর পরে অন্য আর কাউকে নবী বানানো হবেনা। অধিকন্তু ঈসা (আ.)-কে উনার আগেই নবী বানানো হয়েছে। আর তিনি (ঈসা আ.) যখন পুনরায় আগমন করবেন তখন তিনি মুহাম্মদ (সা.)-এর শরীয়তের উপর একজন আমলকারী হবেন এবং তাঁর কেবলার দিকেই সালাত আদায়কারী হবেন। যেন তিনিও অপরাপর উম্মতগণের মত একজন উম্মতই। (তাফসীরে কাশশাফ, সূরা আহযাব আয়াত নং ৪০ দ্রষ্টব্য)।

সুতরাং এর অর্থ দাঁড়ায়, আগমনকারী ঈসা কথিত রূপক কেউ নন, বরং তিনি বনী ইসরাইলী ঈসাই; তিনি পুনরায় এসে একজন “উম্মতী”ই হবেন, তিনি নবুওয়তের দায়িত্বে থাকবেন না। যেহেতু তাঁর নবুওয়ত শুধুমাত্র বনী ইসরাইলী সম্প্রদায়ের জন্যই খাস তথা নির্দিষ্ট ছিল। পবিত্র কুরআন ০৩:৪৯ দ্রষ্টব্য। আর সেজন্যই শায়খ ইবনে আরাবীও (রহ.) লিখেছেন, তাঁর পুনঃআগমন রাসূল (সা.)-এর বাণী “লা নাবিয়্যা বা’দী” (আমার পরে কোনো নবী নেই), এ কথার পরিপন্থী নয়। অতএব বুঝা গেল, প্রশ্নকারীর প্রশ্নই সঠিক হয়নি।

প্রশ্ন ৩ : যারা বলেন, ঈসা (আ.) নবী হিসেবে আগমন করবেন না। তারা জবাব দিন, আপনারা এ কথা কোথায় পেলেন? কুরআন হাদীস থেকে এর যথাযথ দলিল প্রমাণ দিতে পারবেন কি?

উত্তর : ঈসা (আ.) “নবী হিসেবে” অর্থাৎ নবুওয়তের দায়িত্ব নিয়ে আগমন করবেন, এটি তো বরং মির্যা কাদিয়ানীরও বিশ্বাস ছিল না! দেখুন ‘রূহানী খাযায়েন’ খ-৩ পৃষ্ঠা নং ৫৯। যাইহোক, প্রশ্নকর্তার এই প্রশ্নের উত্তর প্রশ্ন নং ২ থেকে আবার দেখে নিন।

প্রশ্ন ৪ : ঈসা (আ.) নবী হিসেবে আগমন করবেন কিনা? দয়া করে আপনারা ৭২ দলের সকলে মিলে একটি অভিন্ন মতামত প্রদান করবেন কি? তা না হলে প্রমাণিত হয়ে গেল, আপনারাই এ বিষয়ে ঐক্যমত ও সন্দেহমুক্ত নন।

উত্তর : ৪ নং প্রশ্নের উত্তরটিও প্রশ্ন নং ২ থেকে দেখে নিন!

প্রশ্ন ৫ : ওহাবীরা দেওবন্দীকে কাফের মনে করে। দেওবন্দীরা ওহাবীকে কাফের মনে করে। তাহলে কেন আপনারা কাফেরের সাথে মিলিত হয়ে কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধেই লেগেছেন? আর যদি তাদের কাফের মনে না করেন তাহলে আপনারা কি আপনাদের বুযুর্গ ও পথিকৃৎদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন?

উত্তর : কথিত ওহাবী কিংবা দেওবন্দী সম্পর্কে প্রশ্নকর্তার উক্ত দাবী সম্পূর্ণ বানোয়াট। প্রশ্নকর্তাকে আমার চ্যালেঞ্জ, তিনি কথিত ওহাবী কিংবা দেওবন্দীদের অথেনটিক কোনো গ্রন্থ থেকে “ওহাবীরা দেওবন্দীকে কাফের মনে করে অথবা দেওবন্দীরা ওহাবীকে কাফের মনে করে” এইরূপ হুবহু কিংবা কাছাকাছি শব্দচয়নেও প্রমাণ করতে পারবেনা। যেজন্য তাদের প্রশ্নে উল্লিখিত মন্তব্যও অমূলক বৈ কিছুই না।

প্রশ্ন ৬ : ৭২ ফিরকা কাদিয়ানীদেরকে কাফের ঘোষণা দেয়ার দাবী করে। অথচ আজ পর্যন্ত ‘মুসলমান কে’—এই সংজ্ঞা কেউ দিতে পারল না। দয়া করে বলবেন কি মুসলমান কাকে বলে? অবশ্যই আপনাদের প্রত্যেকের সংজ্ঞা এক রকম ও পরস্পর অভিন্ন হতে হবে।

উত্তর : কাদিয়ানীদের কাফের ঘোষণার দাবী উম্মতে মুহাম্মদীয়ার সকলের। ফলে শব্দটি বায়াত্তর হবেনা, হবে তেয়াত্তর। অপ্রিয় হলেও সত্য, মির্যা কাদিয়ানী নিজেই তার জামাতকে তেয়াত্তর ফেরকার বাহিরে মনে করত। প্রমাণের জন্য ‘রূহানী খাযায়েন’ খ-১৭, পৃষ্ঠা নং ২২৬ দেখে নিন। আপনি উম্মতে মুহাম্মদীয়ার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মুসলমান-এর সংজ্ঞা চাচ্ছেন, তাই তো! কিন্তু কেন? মানার জন্য?

আরে জনাব! আমি যদি বিশিষ্ট যুগ-ইমামগণের রচনাবলী হতে ‘মুসলমান’-এর সংজ্ঞা দিইও তবুও তো আপনার লাভ হবেনা। যেহেতু আপনি যে লোকটিকে উম্মতিনবী, মসীহ, ইমাম মাহদী মেনে নিয়েছেন সে নিজেই তো উম্মতে মুহাম্মদীয়ার পূর্ব ও পরবর্তী মনীষীদের কথা পূর্ণাঙ্গ কোনো দলিলই নয় বলে অগ্রাহ্য করে লিখে গেছে। (রূহানী খাযায়েন খ-৩, পৃ-৩৮৯ দ্রষ্টব্য)। তো যেখানে সাল্ফে সালেহীনের কোনো কথারই আপনাদের নিকট অথেনটিক নয় সেখানে এধরণের কোনো প্রত্যাশার কী অর্থ?

প্রশ্ন ৭ : আপনারা কাদিয়ানীদের কাফের মনে করছেন বিধায় তাদেরকে সরকারীভাবে কাফের ঘোষণা করতে হবে? আপনারাও তো প্রত্যেকে এক দল আরেক দলকে কাফের মনে করেন। অতএব জবাব দিবেন কি তাদেরকেও সরকারীভাবে কেন কাফের ঘোষণা করা হবে না?

জবাব : কোনো ব্যক্তি বিশেষের অতি উৎসাহীমূলক তাক্ফীর যা কখনো কখনো প্রতিহিংসামূলকও হয়ে থাকে সেটি আর বিশ্বব্যাপী উম্মতে মুহাম্মদীয়ার সর্বসম্মত প্রাতিষ্ঠানিক তাকফীর কখনো এক নয়। কাদিয়ানীরা উম্মতে মুহাম্মদীয়ার সর্বসম্মত ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এবং বাস্তবতার নিরিখেই কাফের হিসেবে স্বীকৃত।

উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালের এপ্রিলে মক্কায় আন্তর্জাতিক ইসলামীক সংস্থা ‘রাবেতা আলমে ইসলামী’র অধীনে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশ্বের সকল মুসলিম নেতৃবৃন্দ কাদিয়ানীদের আনুষ্ঠানিকভাবে অমুসলিম ঘোষণা দেয়। পক্ষান্তরে ব্যক্তি বিশেষের অতি উৎসাহীমূলক তাকফীরের জন্য সে নিজেই অভিযুক্ত, যদি না তার উক্ত তাক্ফীর বাস্তবতার নিরিখে হয়। তো যেখানে আপনাদের আর অন্যদের মধ্যে তাকফীরের ব্যাপারটি আকাশ-পাতাল ব্যবধান সেখানে কিভাবে এই প্রশ্ন আসতে পারে যে, কাদিয়ানীদের মত অন্যদেরকে সরকারীভাবে কাফের ঘোষণার দাবী করা হবেনা কেন?

প্রশ্ন ৮ : যদি মির্যা সাহেবের ইংরেজ সরকারকে জনগণের জন্য রহমতস্বরূপ বলার কারণে মুসলমানদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা হয় তাহলে আহলে হাদীস, দেওবন্দ ও বেরেলভী আলেমদের ইংরেজ সরকার সম্বন্ধে একই ধরণের মন্তব্য তাদেরকে কি হিসেবে গণ্য করে?

উত্তর : তর্কের খাতিরে মানলাম যে, অন্যরাও ইংরেজ সরকার সম্বন্ধে ঐ একই ধরণের মন্তব্য করেছিলেন কিন্তু মির্যা কাদিয়ানীর সাথে ঐ আহলে হাদীস, দেওবন্দী কিংবা বেরেলভী আলেমদের তুলনা কিভাবে করতে পারেন যেখানে আপনাদের বিশ্বাসমতে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী একজন নবী ও রাসূল! কারণ সে পরিষ্কার লিখে গেছে “আমার দাবী, আমি একজন নবী ও রাসূল”। দেখুন মালফুযাত খ-৫ পৃষ্ঠা নং ৪৪৭ নতুন এডিশন, লিখক মির্যা কাদিয়ানী।

তাই প্রশ্ন হল, অন্যরা ভুল করলেও একজন নবী ও রাসূল দাবীদার মির্যা কাদিয়ানী ইংরেজ সরকার সম্পর্কে ঐ একই ধরণের মন্তব্য করে কিভাবে ভুল করতে পারে?

এবার দেখুন ইংরেজ সরকারের আনুগত্য করার জন্য মির্যা কাদিয়ানী তার বইতে আরো কী কী লিখে গেছে! সে একস্থানে লিখেছে, “খোদাতালা আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, যে সরকারের নিরাপত্তায় জীবনযাপন করবে তার প্রতি কৃতজ্ঞ এবং অনুগত থাকবে। তাই যদি আমরা ব্রিটিশ সরকারের (রাজত্বের বিরুদ্ধে) বিদ্রোহ করি তবে (জেনে রেখো আমরা) যেন ইসলাম, খোদাতালা এবং রাসূলের সাথেই বিদ্রোহ করছি। এই অবস্থায় আমাদের চেয়ে বড় অসৎ আর কে হতে পারে! কেননা খোদাতালার কানূন এবং শরীয়ত আমরা ছেড়ে দিয়েছি।” রূহানী খাযায়েন খ-৬, পৃ-৩৮১ দ্রষ্টব্য।

এখন প্রশ্ন হল, যে ইংরেজ ঔপনিবেশিক দানবদের হাতে শুধু দিল্লীরই ১৮ হাজার মাদরাসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের পর শুধু একদিনেই তেরো হাজার আলেমকে যারা ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিল, ১৮৩১ সালের বালাকোটের ট্র্যাজেডির আগেই যারা সাড়ে ৫৭ হাজার স্বাধীনতাকামী আলেম শহিদ করেছিল (দেখুন, ইতিহাসের ইতিহাস, মুন্সী গোলাম মর্তুজা); হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বাধিয়ে যারা ভারতবর্ষের মানুষের জন-জীবন অতিষ্ট করে তুলেছিল; ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য যারা মুসলমানদের মধ্যে নানাভাবে ধর্মীয় বিভাজন তৈরী করেছিল, সেই দানব সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ আর অনুগত হওয়ার ঐ শিক্ষা অন্তত খোদাতালার কিভাবে হতে পারে? খোদাতালা কি কোনো সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তির অনুগত হওয়ার সবক দেবেন? কখনো না। সুতরাং মির্যা কাদিয়ানীর মত একজন নবী রাসূল দাবীদার কর্তৃক ইংরেজ সরকারের নিকৃষ্ট গোলামীর ইতিহাস ঢাকতে অন্যদের প্রসঙ্গ টেনে আনা পুরোই অবান্তর!

প্রশ্ন ৯ : ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় মির্যা সাহেবকে ইংরেজদের দালাল বলেন! ভারতবর্ষের আহলে হাদীস, দেওবন্দ, বেরেলভী মৌলভীরাও ইংরেজদের বিরুদ্ধে জিহাদকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। তাহলে তারাও কি ইংরেজদের দালাল?

উত্তর : এর উত্তর ৮ নং প্রশ্নের উত্তরাংশে দেয়া হয়েছে।

প্রশ্ন ১০ : যারা সরকারের কাছে কাদিয়ানীদের অমুসলমান ঘোষণা করার দাবী করে তারা জবাব দিবেন কি? সরকার যদি কাউকে অমুসলমান স্বীকৃতি দেয়ার অধিকার রাখে তাহলে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানদের মুসলমান বানানোর ক্ষমতা রাখে না কেন?

উত্তর : এখানে দুইটি বিষয় লক্ষ্যনীয়। অমুসলিম ঘোষণা করা আর অমুসলিম বানিয়ে দেয়া। মনে রাখতে হবে যে, সরকার কর্তৃক অমুসলিম ঘোষণা করার আগ থেকেই কাদিয়ানীরা নিজেদের কুফুরী আকীদার কারণে ইসলামের গন্ডি হতে খারিজ। ফলে সরকার কর্তৃক তাদের অমুসলিম ঘোষণা করার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র জনগণকে সচেতনকরা আর তাদের ব্যাপারে সরকারের নিজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার করা।

সুতরাং বিষয়টি যাদের বুঝে আসছে তাদের নিকট একদম পরিষ্কার হয়ে গেল যে, মুসলমানরা কখনোই বলতে চায় না যে, কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করার মানে অন্যান্য অমুসলিমদের সরকার মুসলমান বানানোরও ক্ষমতা রাখে! আসলে কাদিয়ানী জ্ঞানপাপীরা ব্যাপারটি বুঝেনা যে তা নয়, মূলত তাদের উদ্দেশ্য হল সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাওয়া। নতুবা একজন সাধারণ মানুষও তাদের প্রশ্নগুলোর অসারতা ধরতে পারেন। আল্লাহ তাদের বিভ্রান্তি থেকে সবাইকে রক্ষা করুন।

পরিশেষ, আমরা কেন কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার দাবী করি—প্রশ্নটির উত্তর দিতে গেলে অনেক লম্বা সময় প্রয়োজন। তথাপি শুধু বুঝার জন্য এখানে একটি উপমা দিতে চাই। আমরা জানি বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামীলীগের গঠনতন্ত্র না মেনে যেভাবে কেউ ‘আওয়ামীলীগ’ নামধারণ ও তাদের একান্ত পরিভাষাসমূহ ব্যবহার করতে পারেনা, তদ্রুপ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং ইসলামের মৌলিক আকীদা না মেনে কেউ ‘মুসলিম’ বা ‘মুসলমান’ নামধারণ এবং একান্ত ইসলামী পরিভাষাসমূহও ব্যবহার করতে পারে না।

এখন হয়ত কারো মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে, কাদিয়ানীদের অথেনটিক কোনো রচনায় কি এমন কোনো কথা আছে যার ফলে তারাও মনে করে যে, তাদের সবকিছু মূলধারার মুসলমানদের থেকে সম্পূর্ণরূপে আলাদা?

উত্তরে বলব, জ্বী হ্যাঁ আছে। মির্যা কাদিয়ানীর বড় ছেলে এবং তাদের দ্বিতীয় খলীফা(?) বশির উদ্দিন মাহমুদ তিনি কাদিয়ানে তাদের জুমার খুতবায় ভাষণ দিতে গিয়ে স্বীয় পিতার উদ্ধৃতিতে বলেছিলেন, “তিনি (অর্থাৎ মির্যা কাদিয়ানী) বলেছেন, এটা ভুল কথা যে, অন্যদের (মুসলমানদের) সাথে আমাদের বিরোধ শুধু ঈসা (আ:)-এর মৃত্যু বা আরো কিছু শাখাগত মাসয়ালা নিয়ে। হযরত (মির্যা) সাহেব বলেছেন, আল্লাহতালার সত্তা, রাসূল, পবিত্র কুরআন, নামায, রোজা, হজ্ব ও যাকাত মোটকথা তিনি (মির্যা) বিস্তারিত বলে গেছেন যে, প্রত্যেকটি বিষয়ে তাদের (মুসলমানদের) সাথে আমাদের বিরোধ আছে।”

(কাদিয়ানীদের ১৯১৩ সাল থেকে নিয়মিত প্রকাশিত উর্দূ দৈনিক ‘আল ফজল’ তাং ৩০ জুলাই, ১৯৩১ ইং পৃষ্ঠা নং ৭, কলাম ১)

অতএব, জ্ঞানীদের বুঝার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট।

  • আর এর পিডিএফ-এর জন্য এখানে ক্লিক করুন
  • পুরো লিখাটি শেয়ার করুন এবং লিখকের পেইজ থেকে কপি করে প্রচার করুন! Click

লিখক ও শিক্ষাবিদ
প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী
nabifeni44@gmail.com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here