মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর কতিপয় ভবিষ্যৎবাণী সম্পর্কে :
প্রশ্নকর্তা – মুহাম্মদ মুহসিন আলী, শিক্ষার্থী : দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রিয় উস্তাদ প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী সাহেব! কয়েক দিন পূর্বের কথা। ইন্টারনেট ঘাটতে ঘাটতে ঢুকে পড়ি কাদিয়ানীদের একটি ব্লগে। ব্লগে মির্যা কাদিয়ানীকে ইমাম মাহদী সাব্যস্ত করতে তার সম্পর্কে বহু ভবিষ্যৎবাণী এবং নিদর্শন উল্লেখ করা হল। আদ্যোপান্ত পড়েছি। যেহেতু আমি এই বিষয়ে একদম নতুন একজন পাঠক তাই এসবে কোনোরূপ মন্তব্য করার মত আমার জ্ঞান বা যোগ্যতা কোনোটাই ছিলনা। সেখানে দেখলাম, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর সত্যতা প্রমাণের জন্য নাকি একই রমাযানে চন্দ্র ও সূর্য্যগ্রহণও ঘটেছিল। যা কিনা হাদীসমতে ইমাম মাহদীর সত্যতার নিদর্শন! ভারতের আরিয়া সমাজের পণ্ডিত লেখরামের মৃত্যুর ভবিষ্যতবাণী, মুহাম্মদী বেগমের বাবার মৃত্যুর ভবিষ্যৎবাণীসহ অনেক কিছু। এখন প্রশ্ন হল, মির্যা কাদিয়ানী যদি ভন্ড এবং মিথ্যাবাদী হন তাহলে তার জন্য উল্লিখিত নিদর্শন আর ভবিষ্যৎবাণীগুলো কিজন্য বাস্তবায়িত হল? আমি এই বিষয়ে একদম নতুন পাঠক। তাই আমার ভেতর এইধরনের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আমি গঠনমূলক উত্তর চাচ্ছি যাতে আমার সংশয় দূর হয়ে যায়।
উত্তর :
(১) ইমাম মাহদীর জন্য সত্যতার নিদর্শন স্বরূপ একই রমাযানে চন্দ্র ও সূর্য্যগ্রহণ লাগবে—এইধরণের কোনো কথাই রাসূল (সা:) থেকে প্রমাণিত নয়। বরং হাদীস বিশারদগণের সবাই বলেছেন, এটি জাল ও বানোয়াট হাদীস। এখান থেকে জানুন।
(২) আর্য সমাজের জনপ্রিয় পণ্ডিত লেখরাম সম্পর্কে মির্যার কৃত ভবিষ্যৎবাণী সম্পর্কে জানতে পড়ুন।
(৩) মুহাম্মদী বেগমের বাবার মৃত্যুর ভবিষ্যৎবাণীসহ আরো যে সমস্ত বিষয়ে মির্যা কাদিয়ানীর লিটারেচার সমূহে উল্লেখ রয়েছে তা পুরোপুরি না জেনে শুধুই আংশিক কথাবার্তায় এটি মনে করা ঠিক হবেনা যে, সেসমস্ত ঘটনা মির্যারই পক্ষে গিয়েছিল। বরং মির্যা কাদিয়ানীর জীবনের প্রায় সমস্ত ভবিষ্যৎবাণীই তার বিরুদ্ধে গিয়েছে এবং তাকে চরমভাবে লাঞ্চিত ও অপমানিত করেছে। যাইহোক, এখানে মির্যা কাদিয়ানীর মাত্র ৫টি ভবিষ্যৎবাণী উল্লেখ করছি যার বিচারে আপনি নিজেও বুঝতে পারবেন যে, মির্যা কাদিয়ানী কত জঘন্য একজন মিথ্যাবাদী আর প্রতারক ছিল। আর তাই আমরা মুসলমানরা তার বর্তমান অনুসারীদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রাখতে চাই যে,
মির্যা কাদিয়ানী নিজ ভবিষ্যৎবাণীর মানদণ্ডে একজন মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও তিনি কিভাবে ‘ইমাম মাহদী’ বা ‘নবী’ হন? প্রথমে তার ভবিষ্যৎবাণী সম্পর্কে আসি। মির্যা সাহেব ভবিষ্যৎবাণী সম্পর্কে লিখেছেন “আমাদের সত্য আর মিথ্যা নিরীক্ষণ করতে আমাদের ভবিষ্যৎবাণী অপেক্ষা আর কোনো নিখুঁত কষ্টিপাথর থাকতে পারেনা।” (রূহানী খাযায়েন ৫/২৮৮)। এবার দেখা যাক, তিনি অন্তত নিজের ভবিষ্যৎবাণীর মানদন্ডেও সত্যবাদী সাব্যস্ত হন কিনা?
ভবিষ্যৎবাণী : ১
মির্যা সাহেবের ঝিয়ারি মুহাম্মদী বেগম নামের একটি মেয়ের অন্যত্রে বিয়ে হয়ে গেলে তারই পরিপ্রেক্ষিতে জনৈক ব্যক্তির একখানা আপত্তির জবাবে তিনি বলেছিলেন, “ওহীয়ে ইলাহীতে একথা নেই যে, তার বিয়ে দ্বিতীয় কোথাও হবে না! বরং একথা অবশ্যই রয়েছে যে, তার বিয়ে অন্য কোথাও হয়ে যাবে। অতএব এটি ভবিষ্যৎবাণীর একখানা অংশ ছিল যা দ্বিতীয় কোথাও বিয়ে হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে পূর্ণতা পেয়েছে। ইলহামে ইলাহীর শব্দটি হল, ছা-ইয়াকফীকা হুমুল্লাহু ওয়া ইউরাদ্দূ-হা ইলাইকা (سيكفيكهم الله و يردوها اليك)। অর্থাৎ খোদা তোমার ঐসমস্ত বিরুদ্ধবাদীদের মুকাবিলা করবেন এবং যার দ্বিতীয় কোথাও বিয়ে হয়ে গেছে খোদা তাঁকে তোমার নিকট ফিরিয়ে দেবেন।” (দৈনিক উর্দূ পত্রিকা ‘আল-হিকাম’ ৩০-০৬-১৯০৫ ইং দ্রষ্টব্য)।
এখানে মুহাম্মদী বেগমকে মির্যা কাদিয়ানীর নিকট ফিরে দেয়া মর্মে যে কথা রয়েছে তা কিন্তু তার দাবীমতে ইলহামে ইলাহীর পক্ষ থেকেই। কিন্তু পরের ইতিহাস সবার জানা। মির্যা সাহেব ২৬-০৫-১৯০৮ ইং কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ওদিকে মুহাম্মদী বেগম তখনো স্বামীর সংসারেই ছিলেন, এমনকি মির্যার মৃত্যুর পরে আরো প্রায় ৪০ বছর স্বামীর সংসার করেন। তাদের আমৃত্যু সংসার-জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত মির্যা কাদিয়ানীকে মিথ্যাবাদী প্রমাণে যথেষ্ট নয় কি? এমতাবস্থায় খোদাতালার নামে তার অন্যান্য কথিত ওহী ইলহামও যে মিথ্যা আর বানোয়াট নয় তা কিভাবে বুঝবো?
ভবিষ্যৎবাণী : ২
মির্যা কাদিয়ানীর ১৪ই জানুয়ারী ১৯০৬ ইং এর একটি ইলহাম হল “হাম মক্কা মে মরেগে ইয়া মদীনা মে” অর্থাৎ আমি মক্কায় অথবা মদীনায় মৃত্যুবরণ করব। (তাযকিরাহ ৪র্থ এডিশন, পৃষ্ঠা নং ৫০৩)। এখন প্রশ্ন হল, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মির্যা সাহেবকে সত্যিই কি তার মৃত্যু মক্কায় অথবা মদীনায় হবে বলে আগাম কোনো সংবাদ দিয়েছিলেন? যদি অনুরূপ কোনো সংবাদ তাকে দিয়েই থাকেন তাহলে তার মৃত্যুটা কিজন্য পাকিস্তানের লাহোরে হয়েছিল? এটি কি মহান আল্লাহর নামে জঘন্যতম মিথ্যাচার নয়? কিন্তু কোনো কাদিয়ানীকে আজ পর্যন্ত এর সদুত্তর দিতে পেলাম না। তবে জনৈক কাদিয়ানী পণ্ডিত মির্যার কথার বিকৃতি করে কোনোরকম জবাব দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে বলেছিল, এর ব্যাখ্যা নাকি মির্যা সাহেব নিজেই ঐ একই পৃষ্ঠায় দিয়ে গেছেন। জিজ্ঞাসা করলাম, কী সে ব্যাখ্যা? তিনি বললেন, এর ব্যাখ্যা হল মির্যা সাহেব মৃত্যুর আগে আগে মক্কা মদীনার মত বিজয় লাভ করবেন। তখন আমি বললাম, জনাব! মিথ্যা বলতেও তো একটু বিদ্যা-বুদ্ধি লাগে। আপনার তো দেখছি তাও নেই। আপনি এখানে “মত” কিসের অর্থ করলেন? ছিঃ এত নিকৃষ্ট মিথ্যা কিভাবে বলতে পারলেন! অথচ মির্যা কাদিয়ানী লিখেছেন : ‘উসকি ইয়ে মা’নি হে কে কবল আয মউত মক্কী ফতেহ নসিব হোগি’ অর্থাৎ তার মানে হল, মৃত্যুর আগে আগে ফতেহ মক্কী (মক্কা বিজয়) নসিব হবে। যাইহোক, তো এই ব্যাখ্যাটিও তো হালে পানি পেল না! কেননা আল্লাহতালা মির্যা সাহেবকে তারই মৃত্যুর আগে আগে মক্কা বিজয়ের কোনো সংবাদ সত্যিই যদি দিয়ে থাকেন তাহলে সেটি আজো পর্যন্ত কিজন্য আলোর মুখ দেখতে পেল না? অন্তত তার মৃত্যুর পরবর্তী শত বছরেও কিজন্য কাদিয়ানীরা মক্কা মদীনার উপর বিজয় লাভ করলো না? সুতরাং মির্যা কাদিয়ানী একজন নিকৃষ্ট মিথ্যাবাদী ছিল বলেই পরিষ্কার হয়ে গেল। স্ক্রিনশট :-
ভবিষ্যৎবাণী : ৩
একবার যে কোনোভাবে তার নিকট তার এক ভক্তের সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর সংবাদ এলে তিনি তৎক্ষণাৎ দেরি না করে ঐ স্ত্রীলোকটির পুত্র সন্তান হওয়ার ভবিষ্যৎবাণী দিয়ে দিলেন। সময়টি ১৯০৬ সালের ১৯ শে ফেব্রুয়ারী। আমি আপনাদের ‘সাপ্তাহিক আল বদর’ (উর্দূ) পত্রিকার সেই কলামটি এখানে তুলে ধরছি। মির্যা সাহেব বলেছেন
“আমি স্বপ্নে দেখলাম, (আমার ভক্ত) মিঁয়া মঞ্জুর মুহাম্মদের একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়েছে। জিজ্ঞাসা করা হয়, এ ছেলের নাম কী রাখবে? স্বপ্ন এ পর্যন্তই। সাথে এই ইলহামও হল যে, ছেলেটির নাম ‘বশীরুদ্দৌলাহ্’ রাখবে। এর দ্বারা বুঝা যায় যে, ছেলেটি সৌভাগ্যবান হবে। তবে আমি বলতে পারবনা যে, এই ছেলে কবে এবং কখন জন্মিবে।”
উপরের বক্তব্যটি মির্যা কাদিয়ানীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত সংবাদপত্র ‘সাপ্তাহিক বদর’ এর জিলদ ২, নাম্বার ৮; ১৯০৬ সালের ২৩ ই ফেব্রুয়ারী সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। মির্যা সাহেবের কথিত ইলহামের সমষ্টি ‘তাযকিরাহ’ নামক বইয়ের ৫১০-১১ নং পৃষ্ঠাতেও দেখা যেতে পারে।
এবার তার কথিত ইলহামী ভবিষ্যৎবাণীর কথাগুলোর দিকে খেয়াল করুন। তিনি প্রথমে পুত্র সন্তানের ভবিষ্যৎবাণী করলেন তারপর ‘বশীরুদ্দৌলাহ্’ নামও রাখলেন। তখন ১৯ শে ফেব্রুয়ারী। এরপর ৭ ই জুন তথা স্বপ্নদেখার ৩ মাস ১৬ দিন পর মির্যা সাহেবের নাকি আবার ইলহাম হল এ মর্মে যে, ছেলেটির নাম হবে দুটি। (১) বশীরুদ্দৌলাহ্ এবং (২) আলম কাবাব। এ তথ্যটি ‘তাযকিরাহ’ পুস্তকের ৫৩৩ নং পৃষ্ঠায়ও রয়েছে। তারপর মির্যা সাহেব থেকে ‘তাযকিরাহ’ পুস্তকের ৫৩৪ নং পৃষ্ঠায় এও লিখা আছে “অতপর আমার আরো ইলহাম হয়েছে যে, এ ছেলেটির নাম দুটো নয়, চারটি। একটি হচ্ছে ‘শাদীখান’ আর অপরটি ‘কলেমাতুল্লাহখান’।” তারপর ‘তাযকিরাহ’ (চতুর্থ এডিশন, ২০০৪ইং) পুস্তকের ৫৩৭ নং পৃষ্ঠায় আরো লিখা আছে, ‘অতপর ১১ দিন অন্তে (উল্লিখিত স্বপ্নদেখার প্রায় ৩ মাস ২৭ দিন পর) উনি নাকি ইলহাম দ্বারা জানতে পেরেছেন যে, ছেলেটির নাম ৪টি নয়, বরং ৯টি।’ নামগুলো যথাক্রমে, কলেমাতুল আযীয, কালেমাতুল্লাহখান, ওয়ার্ড, বশীরুদ্দৌলাহ্, শাদীখান, আলম কাবাব, নাছিরুদ্দিন, ফাতেহুদ্দিন এবং মুবারকদিন। (বদর, জিলদ-২, নং ২৫, পৃ-৩ তারিখ, ২১ জুন ১৯০৬; আল হিকাম, জিলদ ১০, নং ২২, পৃ-১ তারিখ, ২৪ জুন ১৯০৬ ইং)।
এখন যে কথাটি বলতে চাই তা হল, মির্যা সাহেবের এতগুলো ইলহামী সংবাদ অবশেষে ভুয়া আর মিথ্যা-ই সাব্যস্ত হল কেন? অথচ আল্লাহ’র চেয়ে অধিক সত্যবাদী এবং অঙ্গীকার পূর্ণকারী আর কে হতে পারে? এবার জানা জরুরী যে, মিঁয়া মঞ্জুর মুহাম্মদ সাহেবের সন্তানসম্ভবা স্ত্রী মুহাম্মদী বেগমের গর্ভ থেকে কখনো কোনো পুত্র সন্তান হয়েছিল কি?
ইতিহাস প্রমাণ করে যে, ১৭ ই জুলাই মিঁয়া মঞ্জুর মুহাম্মদ লুধিয়ানভী সাহেব সংবাদ দিলেন যে, তার একটি কন্যা সন্তান হয়েছে। এটি মির্যা সাহেবের চতুর্থবার ইলহামী ভবিষ্যৎবাণীর ২৯ দিন পরের কথা। তিনি তার কথিত ইলহামী ভবিষ্যৎবাণী দ্বারা ছেলেটির ১/২টি নয়, মোট ৯টি নামই রেখে দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে ভুমিষ্ট হয় একটি কন্যা সন্তান। যে সন্তানটি উপরের ৯টি নামকেই মিথ্যা প্রমাণ করে দেয়! এখন এর কোনো জবাব কি আপনাদের কাছে আছে কেবলই এটা বলা ছাড়া যে, এই ভবিষ্যৎবাণীর সব কয়টি ইলহাম মিথ্যা ও বানোয়াট। যদি সত্যিই তা আল্লাহ’র পক্ষ থেকে হত তাহলে অবশ্যই সত্য প্রমাণিত হত। পরের ইতিহাস আরো লজ্জাজনক। শেষমেশ মির্যা সাহেব স্বীয় ভবিষ্যৎবাণীর সুষ্ঠু কোনো ব্যাখ্যা দিতে না পেরে পঞ্চমবারের মত আবার ভবিষ্যৎবাণী দিলেন যে “সদ্যভূমিষ্ট মেয়েটির পরেই ঐ ছেলে জন্ম নেবে।” আপনি মির্যার ‘হাকীকাতুল ওহী’ (বাংলা অনূদিত; প্রথম সংস্করণ নভেম্বর ১৯৯৯ইং) বইটির পৃষ্ঠা নং ৮০ খুলে দেখুন। সেখানেও ঘটনাটির কিয়দাংশ টিকায় উল্লেখ আছে। যেমন “ঐ ছেলে এবার জন্ম হয় নাই। কেননা খোদাতালা বলেন ‘আখখারাহুল্লাহু ইলা ওয়াকতিম মুছাম্মা’ অর্থাৎ ঐ কেয়ামত সদৃশ ভূমিকম্প, যাহার জন্য ঐ ছেলে নিদর্শন হইবে, উহাকে আমরা অন্য একটি সময়ে নির্ধারিত করিয়াছি।” কিন্তু আফসোস! ঐ ছেলে আর কখনো জন্ম নেবেনা। কেননা, কিছু দিন পরে দেখা গেল, মিঁয়া মঞ্জুর মুহাম্মদের স্ত্রীই আর বেঁচে নেই। তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। এ হচ্ছে মির্যা সাহেবের বানোয়াট ভবিষ্যৎবাণীর আরেকটি সংক্ষিপ্ত ঘটনা। নতুবা এর তালিকা অনেক দীর্ঘ।
ভবিষ্যৎবাণী : ৪
মির্যা সাহেব লিখেছেন, ‘খোদা আমাকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, আমি তোমার বয়স ২ বা ৩ বছর কম-বেশি ৮০ বছর করে দেব।’ (তোহফায়ে গোলড়বিয়া, রূহানী খাযায়েন ১৭/৪৪)। কিন্তু তিনি মারা যান মাত্র ৬৮ বা ৬৯ বছর বয়সে। কেননা তার জন্ম সন তারই ভাষ্য অনুসারে ১৮৩৯ বা ১৮৪০ ইং হলে (রূহানী খাযায়েন ১৩/১৭৭) এবং মৃত্যু সন ১৯০৮ইং হলে তখন তার বয়স কোনোভাবেই ৬৮ বা ৬৯ বছরের বেশি হয় না। এখন সত্যিই যদি ঐ রকম কোনো ওয়াদা আল্লাহর পক্ষ হতে হত তাহলে তো মির্যা সাহেবের মৃত্যু (৮০-৩) ৭৭ বা (৮০+৩) ৮৩ বছর বয়সেই হওয়ার ছিল। অথচ তিনি আরো ৮ বা ৯ বছর পূর্বে মারা যান। তাহলে কি আল্লাহতালা মির্যাকে মিথ্যা ওয়াদা দিয়েছিলেন মনে করেন? নাউযুবিল্লাহ। এখন প্রশ্ন হল, আল্লাহ’র নামে যে লোকটি এত জঘন্য মিথ্যাচার করল সে লোকটির ইমাম মাহদী কিংবা নবী হওয়ার দাবী কিভাবে সত্য হতে পারে? আর এরকম একজন ব্যক্তি যখন দাবী করে বলে যে, ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে আল্লাহতালা আমাকে ইলহামযোগে জানান যে, বনী ইসরাইলী নবী হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ:) স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন, তার ঐ ইলহামও যে মিথ্যা নয় তা কিভাবে বুঝলাম? (আহমদ চরিত পৃ-৮; মূল মির্যা বশির উদ্দীন মাহমূদ)। কী জবাব?
এবার শুনুন মির্যা সাহেব মিথ্যাবাদী সম্পর্কে কী লিখে গেছেন, তিনি লিখেছেন, “প্রকাশ থাকে যে, যখন কেউ একটি কথায় মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হবে তখন তার অন্য আর কোনো কথায়ও গ্রহণযোগ্যতা থাকেনা।” (চশমায়ে মা’আরিফত, রূহানী খাযায়েন ২৩/২৩১; লিখক মির্যা কাদিয়ানী)। “মিথ্যা বলা মুরতাদ হওয়ার চেয়ে কম নয়।” (রূহানী খাযায়েন ১৭/৫৬)। “মিথ্যা বলা আর গু খাওয়া এক সমান।” (রূহানী খাযায়েন ২২/২১৫)। বিচারের ভার আপনার নিরপেক্ষ বিবেকের উপর ছেড়ে দিলাম।
ভবিষ্যৎবাণী : ৫
মির্যা কাদিয়ানী ভবিষ্যৎবাণী করে লিখেছেন, “মক্কা মদীনায় রেলের রাস্তা তৈরি হচ্ছে।” (রূহানী খাযায়েন ১৯/১০৮)। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী যে, মক্কা মদীনা আজ পর্যন্ত রেলের মুখও দেখতে পায়নি। হয়ত কোনো কেউ বলতে পারেন, মির্যা সাহেবের এ ভবিষ্যৎবাণী তো অনির্দিষ্টকালীন! এর প্রতিউত্তরে বলতে চাই, মির্যা সাহেব তার লেখনীতে এও লিখে গেছেন যে, “আশা করছি যে, খুব দ্রুত এবং কয়েক বছরে এই কাজটি (রেলপথ নির্মাণ) সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। আশ্চার্যের বিষয় নয় যে, তিন বছরের মধ্যেই মক্কা মদীনায় রেলপথ তৈরি হয়ে যাবে। সত্য তো এটাই যে, মক্কা মদীনায় রেলপথ তৈরী হওয়া যেন সমগ্র ইসলামী দুনিয়ায় রেল ব্যবস্থা প্রত্যাবর্তন করা।” (রূহানী খাযায়েন ১৭/১৯৫; সারাংশ)। অথচ মির্যা সাহেবের ইন্তেকালের পর শতাব্দীর অধিক সময় গত হয়ে গেছে। কিন্তু যে রেলপথ খুব দ্রুত কিংবা তিন বছরের মধ্যেই তৈরি হয়ে যাওয়ার কথা, দুনিয়া আজ অব্ধি তা বাস্তবায়নের মুখ দেখতে পায়নি! মির্যা কাদিয়ানীর নির্বোধ অনুসারীদের নিকট তার এই ভবিষ্যৎবাণীরও সঠিক কোনো উত্তর নেই, শুধু এইকথা বলা ছাড়া যে, প্রকৃতপক্ষে তার এই ভবিষ্যৎবাণীটিও আল্লাহ’র নামে মিথ্যাই ছিল।
উত্তরদানে, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী