মুসলমান এবং কাদিয়ানীদের মধ্যে মৌলিক কিছু পার্থক্য থাকার প্রমাণ এখানে
কে এই নিদাহ খাতুন? কেন তিনি আহমদী অর্থাৎ কাদিয়ানী জামাতের অভ্যন্তরীণ সমস্ত নোংরামি ফাঁস করে দিচ্ছেন? কাদিয়ানী জামাতের বর্তমান গদ্দিনিসীন মির্যা মাসরূর আহমদ এর সাথে কোন বিষয়ে তিনি বিতর্ক জড়ান। মাসরূর আহমদ তাকে কী বলেন এবং কী কী ধমক দেন। অত:পর নেট দুনিয়ায় দুইজনের কল রেকর্ড ফাঁস! পরিশেষে নিদাহ খাতুন ব্রিটিশ গভমেন্ট এর পুলিশের শরণাপন্ন হন কিভাবে? মির্যা মাসরূর আহমদ, তার শ্যালক মাহমুদ শাহ এবং মির্যা কাদিয়ানীর প্রপৌত্র নওয়াব আমের নামীয় ব্যক্তিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ করার অভিযোগ এনে মামলা ঠুকে দেয়াসহ বিস্তারিত আলোচনা করছি। এই সম্পর্কে (উর্দু ভাষার) সম্প্রতি একটি ডকুমেন্টারি ভিডিও আপনিও দেখতে পারেন।
নিদা আন নাসেরকে গ্রুপ সেক্সকারীগণ : –
১- মির্যা লোকমান আহমদ। ইনি কাদিয়ানী তৃতীয় খলীফার পুত্র। নিদা নিজেই নিজ পিতার বর্বরোচিত যৌন নির্যাতনের অভিযোগকারী।
২- ড. মির্যা মুবাশ্বির আহমদ। পিতা মির্যা মুনাওয়ার আহমদ বিন মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ।
৩- মাহমুদ শাহ। ইনি হচ্ছেন বর্তমান কাদিয়ানী খলীফা মির্যা মাসরূর আহমদের শ্যালক ও কাদিয়ানী তৃতীয় খলীফা মির্যা নাসের আহমদের নাতি। তিনি কাদিয়ানী জামাতের বড় মুরুব্বিও।
৪- নওয়াব আমের। তিনি মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর প্রপৌত্র। মাতার নাম আমাতুশ শোকর সাহেবা। নানীর নাম নওয়াব আমাতুল হাফিজ সাহেবা। উল্লেখ্য, মির্যা কাদিয়ানীর এক মেয়ে ছিল নওয়াব মোবারাকাহ, আরেক মেয়া ছিল নওয়াব আমাতুল হাফিজ সাহেবা। যাইহোক, খবরটি আন্তর্জাতিক মিডিয়া Daily mail থেকেও দেখতে পাবেন। তারিখ ০৯-জানুয়ারি-২০২২ইং। ‘ডেইলি মেইল’ পত্রিকার নিউজের লিংক পেতে আমার এই লিখাটিতে ক্লিক করুন।
নিদা আন নাসের এর টুইটার একাউন্ট
অপ্রিয় হলেও সত্য যে, কাদিয়ানী জামাতে চেপে থাকা অভ্যন্তরীণ নোংরামি আজকাল ফাঁস হচ্ছেনা বরং সেই ১৯৩৮ সাল থেকেই তাদেরই ভেতরের ঘনিষ্ঠ সূত্রে ও ঘনিষ্ঠ লোকদের মাধ্যমেও দুনিয়ার সামনে আসা শুরু হয়েছে। কাদিয়ানীদের দ্বিতীয় খলিফা মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ সম্পর্কে কি আর বলব! এই লোক তো একজন নিয়মিত মাদক সেবনকারীই ছিল। আপন কন্যা আমাতুর রশীদকে ধর্ষণ করে ধরা পড়েছিল। নিজ স্ত্রী আমাতুল হাই এবং তাদেরই গৃহ শিক্ষক মির্যা মুহাম্মদ হোসাইন বি.কম তারা হাতে নাতে জেনা করা অবস্থায় তাকে পাকড়াও করেছিলেন। এই শুনুন, কয়েকজন সাবেক কাদিয়ানীই এই সম্পর্কে বর্ণনা দিচ্ছেন। ভিডিও।
কে এই নিদাহ খাতুন?
নিদাহ খাতুন হচ্ছেন মির্যায়ী রয়্যাল ফ্যামিলির সদস্য। তার পুরো নাম নিদাহ আন-নাসের। পিতার নাম মিঁয়া লোকমান আহমদ বিন মির্যা নাসের আহমদ। তিনি মির্যায়ী তৃতীয় গদ্দিনিসী (খলীফা) মির্যা নাসির আহমদ এর (ছেলের মেয়ে) নাতনি। তিনি একই সাথে কাদিয়ানী চতুর্থ খলীফা মির্যা তাহের আহমদ এর মেয়ে ফাইজাহ বেগমের মেয়ে-ও। উল্লেখ্য, কাদিয়ানী তৃতীয় খলীফার পুত্র লোকমান আহমদের সাথে মির্যা তাহের আহমদের মেয়ে ফাইজাহ বেগমের বিবাহ হয়েছিল। বর্তমানে তিনি লণ্ডন প্রবাসী। তিনি কিশোরী বয়স থেকেই ধর্ষিতা হয়ে আসছেন। তাকে মাহমুদ শাহ নামের এক ব্যক্তি তার সেই কিশোরী বয়স থেকে ব্ল্যাকমেইল করে আসছে। তার অভিযোগ, প্রায় ৩৬ বছর ধরে তিনি মাহমুদ শাহ নামক ঐ মানবরূপী পশু কর্তৃক সময় সময় ধর্ষণের শিকার হয়ে আসছেন। তিনি এক পর্যায় প্রেগন্যান্টও হয়ে যান। নিদাহ খাতুন একজন কাদিয়ানী মতের অনুসারী হিসেবে তার খলীফা ও ‘প্রিয় হুজুর’-এর নিকট বিচারপ্রার্থী হন। মির্যায়ী খলীফা মির্যা মাসরূরের সাথে নিদাহ খাতুন কথাগুলো ফোনে বলেন এবং ফোন কল রেকর্ডও হয়। এখন জানার বিষয় হল, কে এই মাহমুদ শাহ?
কে এই মাহমুদ শাহ?
এই মাহমুদ শাহ হলেন কাদিয়ানীদের বর্তমান খলীফা মির্যা মাসরূর আহমদ এর আপন শ্যালক। মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর এক মুরিদের নাম ছিল সাইয়েদ সালমান শাহ। তার এক পুত্রের নাম সাইয়েদ দাউদ মুজাফফর শাহ যিনি বর্তমান কাদিয়ানী খলীফার শ্বশুর এবং কাদিয়ানী তৃতীয় খলীফা মির্যা নাসের আহমদের জামাতাও। কারণ তিনি মির্যা নাসির আহমদ এর মেয়ে আমাতুল হাকিম বেগমকে বিয়ে করেছিলেন। আর তার মেয়ে আমাতুল শাবুহ বেগম হলেন মির্যা মাসরূর এর স্ত্রী। যাইহোক, ধর্ষক মাহমুদ শাহ-ই হলেন ঐ দাউদ মুজাফফর শাহের পুত্র। তিনি বর্তমান কাদিয়ানী জামাতের বড়মাপের একজন কেন্দ্রীয় মুরুব্বী এবং জামাতের নাজেরে আ’লা (Chief Executive Director)। মির্যা নাসের আহমদের পুত্র মির্যা লোকমান আহমদের মেয়ে জনাবা নিদাহ খাতুন বলেছেন, তার এই কর্মকাণ্ডের সাথে ‘আমের শাহ’ নামীয় আরও এক ব্যক্তি জড়িত। এখন জানার বিষয় হল, মির্যা মাসরূর আহমদ তাদের জামাতের একজন খলীফা হিসেবে কী ফয়সালা দিলেন?
ধর্ষিতা নিদাহ খাতুনের প্রতিউত্তরে মির্যায়ী খলীফা :
মির্যায়ী খলীফা প্রতিউত্তরে বললেন, যা হবার হয়ে গেছে, তুমি এবার চুপ থাক। তুমি যদি ধর্ষণের শিকার হয়েই থাক তাহলে এতদিন পর্যন্ত কেন অভিযোগ করোনি? আর এখন তুমি যদি ধর্ষণের বিচার পেতে চাও তাহলে তোমাকে চারজন সাক্ষী হাজির করতে হবে। না পারলে চুপ থাক। বেশি বাড়াবাড়ি করতে যেও না আর বকবক করা বন্ধ কর। অন্যথা তোমাকে ‘বাইয়াত’ থেকে বহিষ্কার করা হবে এবং এদেশের (ব্রিটেনের) ন্যাশনালিটিও ছিনিয়ে নেয়া হবে। ইত্যাদী। মির্যা মাসরূর আহমদ আর নিদা নাসের এর অডিও ক্লিপ উর্দু ভাষায় লিখা হয়েছে। পড়তে ক্লিক করুন।
নিদাহ খাতুন প্রতিউত্তরে কী বললেন?
তিনি বলেন, ‘আমি ব্যভিচারিণী নই যে, চারজন সাক্ষী হাজির করতে হবে। আমি তো ধর্ষণের শিকার, একজন ধর্ষিতা। তাহলে আমাকেও কেন বিচার পেতে চারজন সাক্ষী হাজির করার বিধান শুনাচ্ছেন? আর জামাতের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে তো পরিষ্কার করে লিখা রয়েছে যে, পরন্তু র্যাপ (ধর্ষণ) কেস এর বিচারের জন্যও চার জন সাক্ষীর প্রয়োজন নেই। আমি নিজেও ঐ আর্টিকেল পড়েছি। কাজেই আগে তো ওয়েবসাইট ঠিক করবেন! আমি চুপ থাকব কেন? আমি তো একজন মাজলুম এবং ভিকটিম। কুরআন হাদীসের কোথাও কি বলা আছে যে, জালেমের জুলুমের প্রতিবাদ না করে ভিকটিম চুপ থাকবে? আর আমি তো বললামই আমাকে প্রথম থেকেই ব্ল্যাকমেইল করা হয়েছে যাতে আমি এর বিরুদ্ধে আওয়াজ না উঠাই। আমি ৩৬টি বছর এই জুলুম নিরবে সহ্য করে আসছি, আমি বর্তমানে গর্ভবতীও; আমি এই জুলুম সহ্য করতে না পেরে অবশেষে আওয়াজ উঠাতে বাধ্য হই। এখন আমি যদি খলীফার নিকটেও আমার ন্যায় বিচার পেতে ব্যর্থ হই তাহলে ব্রিটিশ গভমেন্টের শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই।’ নিদাহ খাতুন এর বক্তব্যের কথাগুলো শুনুন অডিও ক্লিপ থেকে।
এখানে বলে রাখতে চাই যে, র্যাপ কেস এর সত্যতা প্রমাণের জন্যও যে চারজন সাক্ষীর প্রয়োজন নেই সেটি ভিকটিমের ঐ কথার পরপরই কাদিয়ানীরা আর্টিকেলটি তাদের ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে ফেলে। আমেরিকার একটি ওয়েবসাইট থেকে আমি এই তথ্যটিও উদ্ধার করি। স্ক্রিনশট দেখুন।
উল্লেখ্য, নিদাহ সাহেবা হয়ত বলতে চাচ্ছিলেন যে, আমি তো কারো বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অভিযোগ করছিনা যে, আমাকে আমার অভিযোগের সত্যতা প্রমাণের জন্য ইসলামি শরীয়ার বিধি মুতাবেক চারজন সাক্ষী হাজির করতে হবে। অধিকন্তু আমি তো নিজেই একজন ভিকটিম (ধর্ষিতা), কারো ব্যাপারে ব্যভিচারের অভিযোগ উত্থানকারী নই (প্রসঙ্গত, ধর্ষণ আর ব্যভিচার দুটি ভিন্ন জিনিস – লিখক)। এখানে আরেকটি কথা না বললেই নয়, কাদিয়ানী খলীফা ভিকটিমকে বলছে ধর্ষণকারীর ধর্ষণের সত্যতা প্রমাণে চারজন সাক্ষী হাজির করতে! কেমন পক্ষপাতদুষ্ট আর ইসলামি শিক্ষায় চরম পর্যায়ের মূর্খ হলে একজন ভিকটিমকেই বলতে পারে যে, তোমার ধর্ষণের পক্ষে চারজন সাক্ষী হাজির কর!?
সম্প্রতি ব্রিটিশ স্থানীয় আলেম উলামা ও সর্বস্তরের মুসলমানরা-ও স্রেফ এজ এ হিউম্যানিটি ভিকটিমকে সাপোর্ট দিচ্ছেন এবং নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে ন্যায় বিচারের দাবী জানাচ্ছেন। ইতিমধ্যে ভিকটিম তার ধর্ষণের নিরপেক্ষ তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে ন্যায় বিচারের দাবী জানিয়ে ব্রিটিশ আদালতে কেস ঠুকে দিয়েছেন। কাদিয়ানী জামাতের ‘মেরে পেয়ারে হুজুর’-ও উক্ত মামলার অন্যতম আসামী। ব্রিটিশ মুসলিম কমিউনিটি স্রেফ একজন মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে নির্যাতিতা ও জুলুমের বিচারপার্থী এক বোনের আহাজারি শুনে সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন। তাদের মধ্যে ব্রিটিশ গভমেন্ট এর অন্যতম সদস্য ও বিচারক Toaha Qureshi সাহেবও রয়েছেন। তিনি পাক প্রেসিডেন্ট ইমরানখানের সরকারকেও নিদাহ খাতুনের বিচার দাবীর পক্ষে সরব হওয়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান। বিচারক তোহা কুরাইশি এর গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য শুনতে ভিডিওটিতে (৪১ মিনিটের পর থেকে শুনুন) ক্লিক করুন।
বেচারি নিদাহ খাতুনের পক্ষে বিচার চাওয়ার বিপরীতে নির্বোধ কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের পাক বংশোদ্ভূত কতিপয় ব্যক্তির অপ্রীতিকর রিয়েক্ট দেখুন তাদেরই কমেন্ট থেকে।
আমি ছোট্ট একখান মন্তব্য রেখে লিখাটির ইতি টানছি। নিদাহ খাতুন এর মত একজন কাদিয়ানী রয়্যাল ফ্যামিলির সদস্য হয়েও তিনি যেখানে কাদিয়ানী মুরুব্বীদের লালসার শিকার হয়ে বিচার পাননি, বরং বিচার চেয়ে লাঞ্চিত হলেন ও জামাত থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার হুমকি পেলেন, সেখানে আরও অসংখ্য অজানা অচেনা আহমদী কিশোরীদের কী অবস্থা!? তারাও যে ঐ ভিকটিমের মতই নিরবে সব কিছু সহ্য করছেন তা তো সহজেই অনুমেয়। কারণ কাদিয়ানী জামাত মূলত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীর স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি নানা ধরণের ‘চাঁদাবাজি’-এর মাধ্যমে উদরফূর্তির উদ্দেশ্যেই গঠিত, ইসলামের সাথে এদের আসলেই কোনো সম্পর্ক নেই। দুঃখের বিষয় হল, এই সাধারণ কথাটাই ওরা বুঝতে পারেনা! আল্লাহ এদের সহীহ বুঝ দিন। লিখাটি পড়ার পর যদি ভালো লাগে তাহলে লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ার করতে ভুলবেন না।
- জানতে পড়ুন :
কাদিয়ানীদের জনসংখ্যা সারা দুনিয়ায় কত?
তথ্য সংগ্রহে, লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক