আমরা যখনি কাদিয়ানীদের কলেমার গোপন রহস্য আছে বলি, তখনি তারা চোখ কপালে তুলে চেঁচিয়ে বলতে শুরু করে, মোল্লা মিথ্যুক; মিথ্যা বলছে মোল্লা! আরে জনাব! থামুন না এবার, মিথ্যা কী আর সত্য কী—তা তো আগে শুনবেন, দেখবেন, যাচাই-বাছাই করার মত ধৈর্য্য রাখবেন, তাই নয় কি? আপনি শুনেননি, দেখেনওনি; তাহলে কিভাবে বুঝলেন যে, মোল্লা মিথ্যা বলছে?
আরে জনাব, আপনার কথা অনুসারে দুনিয়ার দু-একজন বড়জোর দুই চার’শ জন মোল্লা মৌলভি যদি মিথ্যা বলেও দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম ইসলামি বিদ্যাপীঠগুলোও কি সত্য-মিথ্যা খতিয়ে না দেখেই আপনাদের নিয়ে মিথ্যা বলছে মনে করেন? দুনিয়ার সর্বস্তরের মুসলিম উম্মাহা যার যার অবস্থান থেকে অভিন্ন স্বরেই আপনাদের কি “কাফের” ঘোষণা করেনি? আপনাদের নিয়ে মুসলিম উম্মাহার আপত্তি যদি মিথ্যাই হত তাহলে আপনাদেরই মুরুব্বি গোচের বহু আহমদী কিজন্য ‘আহমদীয়ত’ তথা কাদিয়ানীয়তকে বিদায় জানালেন? ডক্টর হানি তাহের, ডক্টর ইকরামা নজমি প্রমুখের কথা কি ভুলে গেলেন? এটি তো মাত্র এই তিন-চার বছর আগের ঘটনা! আপনারা কি ডক্টর হানি তাহেরকে আরব-দুনিয়ার আহমদী খলীফা উপাধি দেননি? তো একদম সবাই আপনাদের কি অকারণেই কাফের আখ্যা দিলেন? মুসলিম উম্মাহার বুঝি খেয়েদেয়ে আর কোনো কাম-কাজ নেই? উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালের এপ্রিলে মক্কায় আন্তর্জাতিক ইসলামীক সংস্থা ‘রাবেতা আলমে ইসলামী’র অধীনে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশ্বের সকল মুসলিম নেতৃবৃন্দের সামনে দীর্ঘ আলোচনার পর কাদিয়ানীদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে অমুসলিম ঘোষণা করা হয়েছিল।
মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী মুহাম্মদী বেগমকে নিয়ে মৃত্যুর আগ দিন পর্যন্ত কি অবলীলায় ইলহামের নাম ভেঙ্গে শতাব্দীর নিকৃষ্ট থেকে নিকৃষ্ট যে কাণ্ডকীর্তি করে গেছে তা কি দুনিয়া এত দ্রুতই ভুলে গেছে? সে কি মুহাম্মদী বেগমের সাথে তার বিয়ের ভবিষ্যৎবাণীকে তাকদিরে মুবরাম বলে আখ্যা দেয়নি? সে কি লিখে যায়নি যে, এই ভবিষ্যৎবাণী অপরিবর্তনীয় তথা তাকদিরে মুবরাম? পরে কী হল? ভবিষ্যৎবাণী কি আলোর মুখ দেখতে পেরেছিল? মির্যা কাদিয়ানী মিথ্যুক হওয়ার জন্য আর কী চাই!!
যাইহোক, আপনাদের মুটামুটি সবখানেই মিথ্যা আর প্রতারণা নিহিত। আপনারা গাল ফুলিয়ে যেমন বলেন যে, মুসলমানদের কলেমা আর আপনাদের কলেমা আলাদা নয়, একই; তেমনি বড় বড় হরফে লিখেও সেকথার প্রমাণ করার চেষ্টা করে থাকেন অথচ ফুটোটা কোথায় সেটির কোনোই খবর রাখেন না! তো এইজন্য কি আমরা দোষী? আরে আমরা তো আপনাদের এই সমস্ত মহা দাজ্জালিয়ত আর প্রতারণা থেকে আমাদের মুসলমান ভাই বোনদের সতর্ক করবই, করে যাবই। এতে আপনারা অখুশি হলেও আমাদের কিছুই করার নাই।
আপনাদের কলেমা আর আমাদের কলেমা দৃশ্যত একই হলেও কিন্তু মর্মার্থে কি দুই নাম্বারি করে রেখেছেন তার কী হাশর হবে? কলেমার “মুহাম্মদ” হতে মির্যা কাদিয়ানীকে উদ্দেশ্য নিলে তখন কি আর এই কলেমা ইসলামী কলেমা থাকল নাকি কাদিয়ানী কলেমা হয়ে গেল? অবশ্যই তখন সেটি বেশভূষায় মুসলমানদের কলেমার মত মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে সেটি কাদিয়ানী কলেমা বলেই গণ্য হবে, তাতে কোনো সন্দেহ থাকেনা।
সংশ্লিষ্ট কিছু স্ক্রিনশট মির্যা কাদিয়ানীর পুত্র মির্যা বশির আহমদ এম.এর রচিত কালিমাতুল ফসল থেকে নিচে তুলে ধরছি।
অর্থ- “বর্তমানেও ইসলামে প্রবেশ করার কালিমা এটাই। পার্থক্য শুধু এটুকু যে, মসীহ মওউদ (অর্থাৎ মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী)’র আগমন দ্বারা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র অর্থে একজন রাসূল বৃদ্ধি করে দেয়া হয়েছে।” (রেফারেন্স:- কালিমাতুল ফছল ষষ্ঠ অধ্যায়, অনলাইন এডিশন পৃষ্ঠা নং ৬৯; মির্যাপুত্র বশির আহমদ এম.এ। প্রকাশকাল ১লা মে ১৯১৫ ইং কাদিয়ান থেকে)।
অর্থ- “এই অবস্থায় আর কি কোনো সন্দেহ থাকতে পারে যে, কাদিয়ানে আল্লাহতালা মুহাম্মদ (সা:)-কে পুনরায় অবতরণ করে স্বীয় প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন যা তিনি ‘ওয়া আখারীনা মিনহুম’-এর মধ্যে করেছিলেন!” (রেফারেন্স:- ‘কালিমাতুল ফছল’ ষষ্ঠ অধ্যায় পৃষ্ঠা নং ১৬; অনলাইন এডিশন)।
অর্থ- “আমরা বলে থাকি যে, কুরআন কোথায় বিদ্যমান! কুরআন যদি বিদ্যমান থাকতই তাহলে কারো আগমন করার প্রয়োজন কী ছিল? সমস্যা তো এটাই যে, কুরআন দুনিয়া থেকে উঠে গেছে! সেজন্যই তো মুহাম্মদ (সা:)-কে দুনিয়াতে দ্বিতীয়বার বুরুজীভাবে প্রেরণ করে তাঁর উপর কুরআন শরীফ নাযিল করার প্রয়োজন দেখা দেয়।” (রেফারেন্স:- ‘কালিমাতুল ফছল’ ষষ্ঠ অধ্যায় পৃষ্ঠা নং ৮৪; অনলাইন এডিশন)।
উল্লেখ্য, এতেই বুঝা যাচ্ছে যে, কাদিয়ানীরা জন্মান্তরবাদেই বিশ্বাসী। অথচ যুক্তিও বলছে যে, এই মতবাদ ঠিক নয়। কেননা আমরা যখন প্রতিদিন কারও মা, কারও বোন মারা যেতে দেখতে পাচ্ছি তাহলে এই প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসীরা এমন কোনো স্থানে ভুলবশত বিয়ে করে বসবেনা তার গ্যারান্টি কী?
শেষকথা হল, এরপরেও একজন জ্ঞানী ব্যক্তি কখনো কি একথা বলতে পারে যে, দেখতে একই হলেও ভেতরে দুই নাম্বারি নেই!? কখনো না। বরং ভেতরে দুই নাম্বারি আছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আল্লাহ আমাদের সত্যিটা বুঝার তাওফিক দিন।
লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক