মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী এবং সিজোফ্রেনিয়া রোগ ও খোদা দাবী প্রসঙ্গে,
খোদা দাবীঃ
একজন মানুষ নিজেকে ‘খোদা‘ দাবী করতে পারে কিভাবে তা বুঝে আসেনা। হ্যাঁ, ইতিহাস সাক্ষী, এইরূপ দাবী ইতিপূর্বে অনেকেই করেছিল। যেমন পবিত্র কুরআনে ফেরাউন সম্পর্কে উল্লেখ আছে فَقَالَ أَنَا رَبُّكُمُ الْأَعْلَىٰ অর্থাৎ সে বলেছিল, আমি তোমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ একজন প্রভু। (সূরা নাযেয়াত ২৪)। তবে সিজোফ্রেনিয়া রোগ বিশেষজ্ঞগণ লিখে গেছেন, যদি কোনো ব্যক্তি সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত হয় তখন সে বেশ কিছু অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। তার কথাবার্তায় অসঙ্গতি দেখা দেবে, নিজকে নিজ সর্বদা নিরাপত্তাহীন অনুভব করবে, অন্যকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখবে। গায়েব থেকে অদৃশ্যের আওয়াজ শুনার দাবী করবে যা অন্যরা শুনতে পায় না। এই ধরনের রোগী যদি খুব বেশি ট্যালেন্টপুল (মেধাবী) হয় তখন সে নিজেকে খোদার প্রেরিত পুরুষ, নবী হবার দাবীও করে; কখনো কখনো খোদার প্রতিচ্ছবি কিংবা হুবহু খোদা দাবীও করে বসে।
সিজোফ্রেনিয়া রোগীঃ
সিজোফ্রেনিয়া শব্দটি ইংরেজি আর উর্দুতে এর প্রতিশব্দ হল মিরাক্ব কিবা মালিখোঁলিয়া। আরবী-বাংলা অভিধানে মিরাক্ব অর্থ ‘মস্তিষ্কবিকৃতি‘ লিখা আছে। এই রোগ বিশেষজ্ঞগণ আজ থেকে প্রায় ৬শত বছর আগেই লিখে গেছেন যে, এই রোগে আক্রান্তদের অধিকাংশই অদ্ভুত ধরণের আচরণ প্রদর্শন করতে থাকে। তন্মধ্যে নিজেকে ‘খোদা’ দাবী অন্যতম। বিশেষজ্ঞদের মধ্যে এশিয়ার উত্তর-পূর্ব উজবেকিস্তানের জারেফশান নদী উপত্যকায় অবস্থিত প্রসিদ্ধ শহর সমরকন্দ নগরে জন্মগ্রহণকারী বিশিষ্ট হেকিম বুরহান উদ্দীন নাফীস [মৃত. ১৪৩৮ খ্রি.] (নাফীস আল কিরমানী নামে প্রসিদ্ধ)ও একই তথ্য দিয়ে গেছেন। হেকিম নাফীস আল কিরমানী কর্তৃক বিরচিত ‘শরহুল আছবাব ওয়াল আ’লামাত‘ (شرح الاسباب و العلامات) খ-১ পৃ-৬৭-৭০ বইটি দ্রষ্টব্য।
ইরানের খোরাসান শহরের অধিবাসী হাকিম মুহাম্মদ আ’যম খান চিশতীও একই কথা লিখে গেছেন। তার রচিত একছীরে আ’যম (اكسير اعظم) বইটির খ-১ পৃ-১৮৮ দ্রষ্টব্য; فصل امراض دماغ طريق تشخيص ماليخوليا বা সিজোফ্রেনিয়া রোগনির্ণয়-এর পদ্ধতি ও মস্তিষ্ক ব্যাধীর পরিচ্ছেদ দেখা যেতে পারে। এখন একছীরে আ’যম নামক সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থকার সম্পর্কে একটু লিখতে চাই!
হাকিম মুহাম্মদ আ’যম খান চিশতী (মৃত্যু ১৩২০ হিজরী মুতাবিক ১৯০২ ইং), যিনি নাজিম জাহান নামে পরিচিত। তিনি চিকিৎসা-সম্রাট হাকিম শাহ আজম খান সিস্তানির পুত্র। তিনি কবি, সুপ্রসিদ্ধ ইউনানী চিকিৎসক, উপমহাদেশীয় ইসলামী জগতের ইউনানী চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে অন্যতম বিরল ব্যক্তিত্ব। তার প্রধান জন্মভূমি ছিল, সিস্তান খোরাসান। তার প্রপিতামহ হাকিম মুহাম্মদ কাজেমখান খোরাসান (ইরান) থেকে কাবুলে হিজরত করেছিলেন। হাকিম মুহাম্মদ আজম খানের বয়স যখন মাত্র ১৬ বছর, তখন তার পিতা মারা যান। তিনি তার পিতা এবং অন্যান্য উস্তাদগণের কাছ থেকে চিকিৎসাবিদ্যা অধ্যয়ন করেন এবং অনেক মূল্যবান অবদান রেখে যান। একছীরে আ’যম (৫ খণ্ডে) কিতাবটি তারই চিকিৎসা শাস্ত্রে অন্যতম। বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন।
অপ্রিয় হলেও সত্য, মির্যা কাদিয়ানীর দ্বিতীয় স্ত্রী নুসরাত জাহানের সংসারে ১৮৮৮ সালে জন্মগ্রহণকারী প্রথম ছেলে বশিরে আওয়াল এর মৃত্যুর পরপরই স্ত্রীর সাক্ষ্যমতে মির্যা গোলাম আহমদ মিরাক্ব তথা সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে যান। আর এই তথ্যটি মির্যার মেঝো ছেলে মির্যা বশির আহমদ এম.এ স্বীয় রচনা ‘সীরাতে মাহদী‘ এর ১ম খন্ডের বর্ণনা নং ১৯ এর মধ্যে উল্লেখ করেছেন।
আধুনিক অনেক কাদিয়ানী এখানে উল্লিখিত বিষয়গুলো এখন আর অস্বীকার করেন না। কেননা গোটা অনলাইনজুড়ে সার্চ দিলেই মির্যা কাদিয়ানীর রচনাবলী (উর্দূ, বাংলায়) সহজে পাওয়া যাচ্ছে। যেখানে সুস্পষ্টভাবে মির্যা গোলাম আহমদ (মৃত. ১৯০৮ইং)-এর সিজোফ্রেনিয়া, হিস্টিরিয়া এবং মৃগী রোগ থাকার বিষয়গুলো তারই লিখনি দ্বারা প্রমাণিত। এইজন্য তার ‘হাকীকাতুল ওহী‘ (পৃষ্ঠা নং ৩০৫, নভেম্বর ১৯৯৯ইং) বইটিও দেখা যেতে পারে। যাইহোক মির্যা গোলাম আহমদ সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার ব্যাপারটি একদমই সত্যি, সেখানে কারো জন্য সন্দেহ করার মোটেও সুযোগ নেই।
আর সেই মিরাক্ব বা সিজোফ্রেনিয়া রোগের অন্যতম উপসর্গ ছিল মির্যা গোলাম আহমদ এর ‘খোদা‘ হবার দাবী। এবার তারই বই থেকে স্ক্রিনশট সহ পুরো বৃত্তান্ত অনুবাদ আর উর্দু ইবারতের উচ্চারণ সহকারে নিচে তুলে ধরছি। দেখুন,
তিনি তার ‘কিতাবুল বারিয়্যাহ’ গ্রন্থে লিখেছেন :
(উর্দূ) ‘میں نے اپنے ایک کشف میں دیکھا کہ میں خود خدا ہوں اور یقین کیا کہ وہی ہوں اور میرا اپنا کوئی ارادہ اور کوئی خیال اور کوئی عمل نہیں رہا اور میں ایک سوراخ دار برتن کی طرح ہو گیا ہوں’
(উচ্চারণ) মে নে আপনে এক কাশফ মে দেখহা কে, মে খোদা হোঁ অওর একীন কিয়া কে ও-হি হোঁ; অওর মেরা কুয়ি ইরাদা অওর কুয়ি খিয়াল অওর কুয়ি আমল নেহি রাহা অওর মে এক ছুরাখ দার বরতন কি তরাহ হো-গিয়া হোঁ…। অর্থাৎ আর আমি নিজেকে কাশফ (অতি-জাগ্রত ধ্যান) অবস্থায় হুবহু খোদা হিসেবে দেখলাম এবং নিশ্চিত হলাম যে, নিশ্চিতই আমি তাই। তখন আমার কোনো ইচ্ছা, আশঙ্কা আর নিজের কোনো কর্মই অবশিষ্ট থাকেনি। আর আমি তখন একখানা নষ্ট পাত্রের ন্যায় হয়ে গেলাম। (কিতাবুল বারিয়্যাহ, রূহানী খাযায়েন ১৩/১০৩)। (প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য)।
পাঠক! একজন খোদা দাবীদার কীভাবে নবীজী (সা.)-এর ভবিষ্যৎবাণীকৃত সেই ইমাম মাহদী হবার দাবী করতে পারে, বিচারের ভার আপনার নিরপেক্ষ বিবেকের উপর ছেড়ে দিলাম।
(প্রামাণ্য স্ক্যানকপি নিম্নরূপ)
লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক
প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী