আদম (আ.) এর ইহলৌকিক বয়স ছিল একহাজার বছর কিন্তু সেখান থেকে ষাট অথবা চল্লিশ বছর তিনি হযরত দাউদ (আ.)-কে দিয়ে দেন!
- আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে, কাদিয়ানীদের একটি বিভ্রান্তিকর তথ্য-বিকৃত দাবী ও তার দালিলিক ও যুক্তিক খণ্ডন – হযরত আদম (আ.) আর নূহ (আ.) এর ইহলৌকিক দীর্ঘ আয়ুকাল (যথাক্রমে ৯৪০, ৯৫০ বছর) হতে ভিন্ন কোনো অর্থ উদ্দেশ্য কি? এই সম্পর্কে অত্র আর্টিকেল এর শেষে দেখুন!
হযরত আদম (আ.) এর ইহলোকিক আয়ুকাল :
ইবনে আক্বীলাহ আল মক্কী (রহ.) (মৃত. ১১৫০ হিজরী) বিরচিত (الزيادة والإحسان في علوم القرآن – محمد بن أحمد بن سعيد الحنفي المكيّ، شمس الدين، المعروف بابن عقيلة) ‘আয-যিয়াদাহ ওয়াল ইহসান ফী উলূমিল কুরআন‘ (খ-৭) এর মধ্যে লিখা আছে, ইমাম ইবনে কাসীর সংকলিত বিখ্যাত গ্রন্থ ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ এর মধ্যে মারফূ সনদে হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) এবং আবূ হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত আদম (আ.)-এর ইহলৌকিক বয়স এক হাজার বছরের তথ্যটি লাওহে মাহফূজে লিপিবদ্ধ ছিল। কিতাবটির ডাউনলোড স্ক্যান কপি। উপরের স্ক্রিনশটটি দ্রষ্টব্য। এই সম্পর্কে সহীহ ও হাসান পর্যায়ের আরেকটি হাদীস এই রকম,
গ্রন্থ : মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত); অধ্যায় : পর্ব-২৫, শিষ্টাচার (كتاب الآداب)। হাদীস নম্বর : ৪৬৬২।
তৃতীয় অনুচ্ছেদ – সালাম :
আবূ হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন আল্লাহতালা আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করলেন এবং তাঁর মধ্যে প্রাণ দান করলেন, তখন আদম (আ.) হাঁচি দিলেন এবং আল্লাহতালার অনুমতিক্রমে তাঁর প্রশংসা করে ‘‘আলহামদুলিল্লাহ’’ বললেন। আল্লাহতালা তাঁকে বললেন, হে আদম! আল্লাহ তোমাকে রহম করুন। এখন তুমি ঐ উপবেশনকারী মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাদের) কাছে যাও, যাঁরা বসে আছে। আর তাঁদেরকে বলো ‘‘আসসালামু ‘আলাইকুম’’ (তোমাদের প্রতি আল্লাহ শান্তি বর্ষণ করুন)। তিনি গিয়ে বললেন, ‘‘আসসালামু ‘আলাইকুম’’। মালায়িকাহ্ জবাবে বললেন, ‘‘আলাইকাস সালামু ওয়া রহমাতুল্লহ’’ (তোমার প্রতি আল্লাহর শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক)। অতঃপর তিনি তাঁর প্রতিপালকের নিকট ফিরে আসলেন। আল্লাহতালা বললেন, এটাই তোমার এবং তোমার সন্তানদের পারস্পরিক অভিবাদন। তখন আল্লাহতালা তাঁকে নিজের দু’হাত দেখিয়ে বললেন, তুমি এ দু’টির যে কোনো একটি পছন্দ কর। তখন তাঁর উভয় হাত মুষ্টিবদ্ধ ছিল। আদম (আ.) বললেন, হে প্রভু! আমি তোমার ডান হাতকে পছন্দ করলাম। আল্লাহতালার উভয় হাতই ডান হাত এবং কল্যাণকর। অতঃপর আল্লাহতালা তাঁর হাত খুলতেই দেখা গেল, তাতে আদম (আ.)-এর সন্তানগণ রয়েছে।
তখন আদম (আ.) বললেন, হে আমার প্রতিপালক! এরা কারা? আল্লাহতালা বললেন, এরা তোমার সন্তান। তখন দেখা গেল, প্রত্যেক ব্যক্তির আয়ুষ্কাল তাঁর দু’চোখের মাঝে অর্থাৎ- কপালে লিপিবদ্ধ আছে। তন্মধ্যে উজ্জ্বলতর এক ব্যক্তি রয়েছে। আদম (আ.) জিজ্ঞেস করলেন, হে প্রভু! এ ব্যক্তি কে? আল্লাহতালা বললেন, এ ব্যক্তি তোমার অন্যতম সন্তান ‘‘দাউদ’’। তাঁর আয়ু আমি চল্লিশ বছর লিখেছি। আদম (আ.) বললেন, ‘‘হে প্রভু! তাঁর আয়ু বাড়িয়ে দিন’’। আল্লাহতালা বললেন, আমি তো তাঁর এতটুকু আয়ুষ্কাল লিখে রেখেছি। আদম (আ.) জিজ্ঞেস করলেন, হে রব! আমি আমার আয়ু হতে ষাট বছর দান করলাম। আল্লাহতালা বললেন, ‘‘ঠিক আছে, তুমি আর তোমার সন্তান দাউদ জানে’’ অর্থাৎ এটা তোমার ব্যাপার। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অতঃপর আল্লাহতালার ইচ্ছানুযায়ী আদম (আ.) জান্নাতে বসবাস করেন। অতঃপর তাঁকে জান্নাত হতে বের করে দেয়া হল। আদম (আ.) নিজের বয়সের বছরগুলো গণনা করতে লাগলেন, (যখন তাঁর আয়ুষ্কাল নয়শ’ চল্লিশ বছর শেষ হয়ে গেল) তখন তাঁর কাছে মৃত্যুর মালাক (ফেরেশতা) আসলেন। আদম (আ.) তাঁকে বললেন, তুমি তো আগে এসেছ, আমার জন্য এক হাজার বছর আয়ুষ্কাল লেখা রয়েছে। মৃত্যুর মালাক বললেন, জ্বি-হ্যাঁ, কিন্তু আপনি আপনার সন্তান দাঊদ (আ.)-কে ষাট বছর আয়ু দান করেছেন। তখন আদম (আ.) অস্বীকার করলেন। এ কারণে তাঁর সন্তানগণও অস্বীকার করে থাকেন এবং আদম (আ.) ভুলে গেছেন, তাই তাঁর সন্তানগণও ভুলে যায়। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সেদিন হতে লিখে রাখতে এবং সাক্ষী রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (সুনানু তিরমিযী)[1]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَمَّا خَلَقَ اللَّهُ آدَمَ وَنَفَخَ فِيهِ الرُّوحَ عَطَسَ فَقَالَ: الْحَمْدُ لِلَّهِ فَحَمِدَ اللَّهَ بِإِذْنِهِ فَقَالَ لَهُ رَبُّهُ: يَرْحَمُكَ اللَّهُ يَا آدَمَ اذْهَبْ إِلَى أُولَئِكَ الْمَلَائِكَةِ إِلَى مَلَأٍ مِنْهُمْ جُلُوسٍ فَقُلِ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ. فَقَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ. قَالُوا: عَلَيْكَ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللَّهِ. ثُمَّ رَجَعَ إِلَى رَبِّهِ فَقَالَ: إِنَّ هَذِهِ تَحِيَّتُكَ وَتَحِيَّةُ بَنِيكَ بَيْنَهُمْ. فَقَالَ لَهُ اللَّهُ وَيَدَاهُ مَقْبُوضَتَانِ: اخْتَرْ أَيَّتَهُمَا شِئْتَ؟ فَقَالَ: اخْتَرْتُ يَمِينَ رَبِّي وَكِلْتَا يَدَيْ رَبِّي يَمِينٌ مُبَارَكَةٌ ثُمَّ بَسَطَهَا فَإِذَا فِيهَا آدَمُ وَذُرِّيَّتُهُ فَقَالَ: أَيْ رَبِّ مَا هَؤُلَاءِ؟ قَالَ: هَؤُلَاءِ ذُرِّيَّتُكَ فَإِذَا كُلُّ إِنْسَانٍ مَكْتُوبٌ عُمْرُهُ بَين عَيْنَيْهِ فَإِذا فيهم رجلٌ أضوؤهُم – أَوْ مِنْ أَضْوَئِهِمْ – قَالَ: يَا رَبِّ مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا ابْنُكَ دَاوُدُ وَقَدْ كَتَبْتُ لَهُ عُمْرَهُ أَرْبَعِينَ سَنَةً. قَالَ: يَا رَبِّ زِدْ فِي عُمْرِهِ. قَالَ: ذَلِكَ الَّذِي كَتَبْتُ لَهُ. قَالَ: أَيْ رَبِّ فَإِنِّي قَدْ جَعَلْتُ لَهُ مِنْ عُمْرِي سِتِّينَ سَنَةً. قَالَ: أَنْتَ وَذَاكَ. قَالَ: ثُمَّ سَكَنَ الْجَنَّةَ مَا شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ أُهْبِطَ مِنْهَا وَكَانَ آدَمُ يَعُدُّ لِنَفْسِهِ فَأَتَاهُ مَلَكُ الْمَوْتِ فَقَالَ لَهُ آدَمُ: قَدْ عَجَّلْتَ قَدْ كَتَبَ لِي أَلْفَ سَنَةٍ. قَالَ: بَلَى وَلَكِنَّكَ جَعَلْتَ لِابْنِكَ دَاوُدَ سِتِّينَ سَنَةً فَجَحَدَ فَجَحَدَتْ ذُرِّيَّتُهُ وَنَسِيَ فَنَسِيَتْ ذُرِّيَّتُهُ قَالَ: «فَمن يؤمئذ أَمر بِالْكتاب وَالشُّهُود» رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
[1] হাদীসের মান, হাসান ও সহীহ : তিরমিযী হাদীস নং ৩৩৬৮, আবূ ইয়া‘লা হাদীস নং ৬৬৫৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬১৬৭, ‘বায়হাক্বী’র আস-সুনানুল কুবরা হাদীস নং ২১০২৫।
প্রাসঙ্গিক বিশ্লেষণ : এ হাদীস থেকে প্রমাণ হয় যে, হযরত আদম (আ.)-এর ইহলৌকিক বয়স ৪০ বা ৬০ বছর কম এক হাজার বছর। হাদীসের ভাষ্যমতে (وَقَدْ كَتَبْتُ لَهٗ عُمْرَهٗ) অর্থাৎ আমি তাকে আমার বয়স থেকে দিলাম। এর আসল অর্থ হল, বয়স বৃদ্ধির জন্য আল্লাহর নিকটে আবেদন করা। কারণ আল্লাহতালা ব্যতীত এটা কেউ করতে পারে না। এ হাদীসে ষাট বছর প্রদানের কথা উল্লেখ থাকলেও অন্য বর্ণনায় চল্লিশ বছর দেয়ার কথা উল্লেখ হয়েছে। ভিন্ন এ হাদীসের সমাধানে কোনো হাদীস বিশারদ বলেন যে, প্রথমে তিনি চল্লিশ বছর দিতে চেয়েছিলেন। পরে আরো বিশ বছর দিয়ে ষাট বছর হয়েছে। যেমন আল্লাহতালা মূসা (আ.)-কে প্রথমে ত্রিশ দিনের ওয়া‘দা দিয়ে আবার চল্লিশ দিন পর্যন্ত বৃদ্ধি করেন। (সূরাহ্ আল আ‘রাফ ৭ : ১৪২)।
অথবা এটা বর্ণনাকারীর পক্ষ থেকে সন্দেহ হয়ে গেছে। তাই তিনি একবার চল্লিশ বছর বলেছেন এবং অন্যবার ষাট বছর বলেছেন। অথবা কখনো চল্লিশ বছরকে আসল বয়স এবং ষাট বছরকে দান বলেছেন। অথবা কখনো ষাট বছরকে আসল বয়স এবং চল্লিশ বছরকে দান বলেছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ, যুগ ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী রহ.)।
হযরত নূহ (আ.)-এর ইহলৌকিক আয়ু নিয়ে কাদিয়ানীদের বিভ্রান্তিকর দাবীর খণ্ডনমূলক জবাব :
হযরত আদম (আ.)-এর ইহলৌকিক জীবন সম্পর্কে তো বললাম, এবার হযরত নূহ (আ.)-এর ইহলৌকিক জীবন সম্পর্কে আসি। ছানী আদম খ্যাত হযরত নূহ (আ.) ছিলেন আদমপুত্র হযরত শীষ (আ.)-এর বংশধর। যিনি সাড়ে নয়শত বছর জীবিত ছিলেন। পবিত্র কুরআন নিজেই এই সম্পর্কে বলছে যে,
وَ لَقَدۡ اَرۡسَلۡنَا نُوۡحًا اِلٰی قَوۡمِہٖ فَلَبِثَ فِیۡہِمۡ اَلۡفَ سَنَۃٍ اِلَّا خَمۡسِیۡنَ عَامًا ؕ فَاَخَذَہُمُ الطُّوۡفَانُ وَ ہُمۡ ظٰلِمُوۡنَ অর্থাৎ – “আর আমি (আল্লাহ) অবশ্যই নূহকে তাঁর কওমের নিকট প্রেরণ করেছিলাম। সে তাদের মধ্যে পঞ্চাশ কম একহাজার বছর অবস্থান করেছিল। অতঃপর মহা-প্লাবন তাদের গ্রাস করল, এমতাবস্থায় যে, তারা ছিল জালিম।” (সূরা আনকাবূত ২৯:১৪)।
কাদিয়ানীদের বর্তমান (বাংলাদেশী) ন্যাশনাল আমীর জনাব আব্দুল আউয়ালকে এই অকাট্য ও সার্বজনীন স্বীকৃত বিষয়গুলো সরাসরি অস্বীকার করতে দেখা গেছে। সে বলেছে, এ থেকে আক্ষরিক অর্থে দীর্ঘ কোনো আয়ুষ্কাল বুঝানো হয়নি, বরং এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, উনাদের (আদম, নূহ) শিক্ষা ও দাওয়াত পৃথিবীতে যথাক্রমে চল্লিশ বা ষাট বছর কম প্রায় এক হাজার বছরব্যাপী আর সাড়ে নয়শত বছরব্যাপী টিকে থাকা। এই ক্ষেত্রে কুরআন হাদীসের অকাট্য দলিল-প্রমাণের মুকাবিলায় কাদিয়ানী আমীরকে মস্তিষ্কপ্রসূত বেশ কিছু দুর্বল যুক্তির অবতারণা করতেও দেখা গেছে, যা মূলত তাদের মির্যা তাহের আহমদের নানা তাবিল-কাসুন্দিরই চর্বিতচর্বন বৈ নয়।
আর এতে তাদের উদ্দেশ্য একটাই, ঈসা (আ.)-এর দ্বিতীয় আগমনী বিশ্বাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। কাদিয়ানীদের জন্য দুঃসংবাদ হচ্ছে, তাদের ঐ সমস্ত রূপকের কাসুন্দি বিশেষকরে হযরত নূহ (আ.)-এর ক্ষেত্রে কিছুতেই হালে পানি পায় না। কেননা পবিত্র কুরআনের আয়াতটিতে স্পষ্টতই বলা হচ্ছে যে হযরত নূহ (আ.) নিজ গোত্রের মাঝে অবস্থান করেছিলেন পঞ্চাশ কম এক হাজার বছর, মানে সাড়ে নয়শত বছর। পক্ষান্তরে নির্বোধ এই কাদিয়ানী আমীর এখানে ধরে নিলেন যে, নিজ গোত্রের মাঝে নূহ (আ.) অবস্থান করার অর্থ তাঁর দাওয়াত ও শিক্ষার প্রভাব সাড়ে নয়শত বছরব্যাপী পৃথিবীতে টিকে থাকা! হায় কত যে নিকৃষ্ট তাবিল!
আর যদি কাদিয়ানী নেতার ঐ যুক্তির সাথে তর্কের খাতিরে আমি একমত হই তাহলেও প্রশ্ন আসবে যে, তবে কি পৃথিবীতে ইবরাহীম (আ.)-কে নতুন শরীয়ত সহকারে হযরত নূহ (আ.)-এর দাওয়াতের প্রভাব বর্তমান থাকাকালেই পাঠানো হল? অবশ্যই না। কারণ হযরত নূহ (আ.)-এর জন্ম হয়েছিল হযরত আদম (আ.)-এর ইন্তেকালের ১২৬ অথবা ১৪৬ বছর পরে। ইমাম আবু হাতিম ইবনে হাব্বান স্বীয় ‘সহীহ ইবনে হাব্বান’ গ্রন্থে একথা লিখেছেন। আর সহীহ বুখারীতে ইবনে আব্বাস (রা.)-এর সূত্রে একটি বর্ণনায় রয়েছে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন كان بين آدم ونوح، عشرة قرون অর্থাৎ আদমের ইহকালে পদার্পণ আর নূহ-এর জন্মগ্রহণ এই দুইয়ের মধ্যভাগে এক হাজার বছরের দীর্ঘবিরতি ছিল। এখন কাদিয়ানী আমীরের অহেতুক প্রশ্ন ‘আদম (আ.)-এর ইহলৌকিক জীবন ৯৬০ বছরকে আক্ষরিক অর্থে নেয়া হলে তারই জীবদ্দশায় নূহ (আ.)-কেও তাঁর নিকট বাইয়েত নিতে হয়েছে মানতে হয়’– পুরাই হটকারিতা বৈ নয়!
আরো প্রশ্ন আসে, হযরত আদম (আ.)-এর উক্ত ৯৬০ বছরের দীর্ঘ আয়ুকাল হতে তাঁর শিক্ষা বা দাওয়াতের প্রভাবকাল সময় উদ্দেশ্য হলে তখন তিনি যে হযরত দাউদ (আ.)-কে নিজের আয়ু থেকেই চল্লিশ কিংবা ষাট বছর প্রদান করলেন বলে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হল সেটিরও বা কী ব্যাখ্যা?
অধিকন্তু হযরত নূহ (আ.) সংক্রান্ত আয়াতটির প্রতি গভীরভাবে লক্ষ্য করলে একজন সাধারণ মানুষও সহজে বুঝতে পারবে যে, সেখানে নূহ (আ.)-এর ইহলৌকিক আয়ুকাল নিয়ে কথা শেষ করেই বলা হচ্ছে যে, তারপর প্লাবন তাদের গ্রাস করলো। এখন যদি কাদিয়ানী আমীরের সস্তা যুক্তিগুলো কয়েক সেকেণ্ডের জন্য মেনে নিই তাহলেও ঐ হিসেব অনুযায়ী হযরত নূহ (আ.)-এর ইন্তেকালের ৭০০ বা ৮০০ বছর পরেই মহা প্লাবন সংঘটিত হয়েছিল বলে মানতে হয়! কিন্তু কোনো কাদিয়ানী কি মানবে এটা? কস্মিনকালেও নয়। মজার ব্যাপার হল, ইবলিশ শয়তানের ইহলৌকিক জীবনকে আল্লাহতালা কেয়ামত দিবস পর্যন্ত দীর্ঘ করে দিয়েছেন। পবিত্র কুরআন দ্বারা এটিও সুস্পষ্ট প্রমাণিত। দেখুন, সূরা আ’রাফ আয়াত ১৫, সূরা হিজর আয়াত ৩৮। তাই কাদিয়ানী আমীর কি এখানেও উক্ত কাসুন্দি নিয়ে হাজির হয়ে বলবেন যে, এর দ্বারাও আক্ষরিক অর্থ উদ্দেশ্য নয়, বরং ইবলিশ শয়তানের শিক্ষা এবং দাওয়াতের প্রভাবই বুঝানো উদ্দেশ্য! জ্ঞানীদের নিশ্চয়ই ভাবিয়ে তুলবে!!
লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক