প্রকৃত ইমাম মাহদী ও কাদিয়ানের মির্যা গোলাম আহমদের মধ্যকার পার্থক্যগুলো

0
প্রকৃত ইমাম মাহদী ও কাদিয়ানের মির্যা গোলাম আহমদের মধ্যকার পার্থক্যগুলো

পার্থক্যগুলো নিচে উল্লেখ করা হল :

নাম : হযরত ইমাম মাহদীর নাম হবে মুহাম্মদ (দেখুন, আবুদাউদ, অধ্যায় কিতাবুল মাহদী হা/৪২৮২)। ওদিকে কাদিয়ানের মাহদী দাবীদারের নাম ছিল, মির্যা গোলাম আহমদ । (দেখুন, আহমদ চরিত [বাংলা]: ১, মূল লিখক মির্যাপুত্র বশির উদ্দিন মাহমূদ)।

পিতার নাম : হযরত ইমাম মাহদীর নাম হবে আব্দুল্লাহ। ওদিকে কাদিয়ানের মাহদী দাবীদের পিতার নাম ছিল, মির্যা গোলাম মর্তূজা (মাতার নাম, চেরাগ বিবি)। (দেখুন, আহমদ চরিত [বাংলা]: ১, মূল লিখক মির্যাপুত্র বশির উদ্দিন মাহমূদ)।

বংশ পরিচয় : হযরত ইমাম মাহদীর বংশ হবে কুরাইশ (নবীর বংশধর)। (দেখুন, আবুদাউদ কিতাবুল মাহদী)। ওদিকে কাদিয়ানের মাহদী দাবীদারের বংশ ছিল, মোঘল বরলাস (সম্রাট তৈমুর লং এর বংশধর)। দেখুন, আহমদ চরিত [বাংলা]: ১, মূল লিখক মির্যাপুত্র বশির উদ্দিন মাহমূদ।

জন্মস্থান : হযরত ইমাম মাহদীর জন্ম হবে আরবে (মদীনায়)। (দেখুন, আবুদাউদ, কিতাবুল মাহদী; আল-ফিতান, নুআঈম বিন হাম্মাদ, কাঞ্জুল উম্মাল হা/৩৯৬৭১)। ওদিকে কাদিয়ানের মাহদী দাবীদারের জন্ম হয়েছিল, ভারতের কাদিয়ান গ্রামে [গুরুদাসপুর জেলা, পাঞ্জাব]। (দেখুন, আহমদ চরিত [বাংলা]: ১, মূল লিখক মির্যাপুত্র বশির উদ্দিন মাহমূদ)।

শিক্ষাদীক্ষা : হযরত ইমাম মাহদীর শিক্ষাদীক্ষা আল্লাহর পক্ষ হতে ইলহাম (দৈব-বাণী)’র মাধ্যমে হবে। (দেখুন, ইবনে মাজাহ কিতাবুল ফিতান হা/৪০৮৫; মিযা কাদিয়ানী নিজেও একথার স্বীকারোক্তি দিয়েছে। দেখুন, রূহানী খাযায়েন ১৪/৩৯৪)। ওদিকে কাদিয়ানের মাহদী দাবীদারের শিক্ষকবৃন্দের নাম ছিল, ফযল ইলাহী, ফযল আহমদ, মৌলভী গোলাম আলী (দেখুন, আহমদ চরিত [বাংলা]: ৩, মূল লিখক মির্যাপুত্র বশির উদ্দিন মাহমূদ)।

আত্মপ্রকাশের স্থান : হযরত ইমাম মাহদীর আত্মপ্রকাশ শেষযুগে মক্কায় (হজ্বের সময়) হবে এবং বাইয়াত রুকন আর হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থানে। (দেখুন, আবুদাউদ, কিতাবুল মাহদী)। ওদিকে কাদিয়ানের মাহদী দাবীদার নিজেকে সর্বপ্রথমে মুজাদ্দিদ দাবী করে ১৮৮১ সালে। তারপর ১৮৮৯ সালে মুজাদ্দিয়তের উপর প্রথম বাইয়াত নিয়েছিল লুধিয়ানায় (পাকিস্তান) নয়ীমহল্লায় মিঞা আহমদজান নামক তার এক মুরিদের বাড়িতে। (দেখুন, আহমদ চরিত পৃষ্ঠা ৮; প্রকাশকাল মে ২০০৯)। তারপর ১৮৯১ সালে লুধিয়ানায় (পাকিস্তান) নিজেকে রূপক ঈসা হওয়ার দাবী করেছিল। (দেখুন, আহমদ চরিত পৃষ্ঠা ৯; প্রকাশকাল মে ২০০৯)। সর্বপ্রথম ১৮৮৯ সালে মুজাদ্দিয়তের উপর বাইয়াত নেয়ার প্রমাণ এখানে :

অন্যমত বৈশিষ্ট্য : হযরত ইমাম মাহদীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, তিনি নিজ থেকে আগ বাড়িয়ে ইমাম মাহদী দাবী করবেন না। হাদীসের و هو كاره শব্দ দ্বারা একথাই বুঝানো হয়েছে বরং যথাসময় আল্লাহতায়ালাই তাঁর আত্মপ্রকাশের উপায় বের করে দেবেন। (দেখুন, আবুদাউদ, কিতাবুল মাহদী অধ্যায়)। ওদিকে কাদিয়ানের মাহদী দাবীদার নিজেকে মসীহ এবং ইমাম মাহদী দাবী করে নিজেকে ঘটা করে প্রকাশ করেছিলেন আর সেজন্য পত্র পত্রিকা বিতরণ ও বই পুস্তক প্রকাশ করে বিলিও করেছেন। (মির্যা কাদিয়ানীর ইশতিহারগুলোর সমষ্টি ‘মাজমুআয়ে ইশতিহারাত’ খন্ড নং ১ হতে ৩ দ্রষ্টব্য)।

যুদ্ধাভিযান : হযরত ইমাম মাহদী বাইয়াত শেষে খোরাসানের দিকে অতপর সিরিয়ার দিকে রণযাত্রা করবেন। (দেখুন, আল কওলুল মুখতাসার, ইমাম ইবনে হাজার আল-হাইতামী রহ:)। ওদিকে কাদিয়ানের মাহদী দাবীদার তিনি কখনো ইসলামের জন্য জিহাদ করেননি, হজ্জ, উমরাহ, যাকাত এবং ইতিকাফ কিছুই করেননি। (দেখুন, সীরাতে মাহদী, রেওয়ায়েত নং ৬৭২, খন্ড নং ৩; মির্যাপুত্র মির্যা বশির আহমদ)।

সালাতের ইমামতি : হযরত ঈসা (আ:) নাযিল হয়ে ইমাম মাহদীর পেছনে সালাত আদায় করবেন। যাতে তাঁর পুণ: আগমন শুধুমাত্র একজন উম্মতি হিসেবে হওয়ার বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা লাভ করে। (সহীহ মুসলিম কিতাবুল ঈমান হা/১৫৬; আল-মানারুল মুনীফ পৃষ্ঠা ১৪৭; ইমাম ইবনে কাইয়ুম রহ:)। ওদিকে কাদিয়ানের মাহদী দাবীদার তিনি নিজেকে একই সাথে মাহদী এবং ঈসা দুটো একত্রে হওয়ার দাবী করেছিলেন। (দেখুন, তাযকিরাহ পৃষ্ঠা নং ২০৯; ৪র্থ এডিশন)।

দেশ শাসন : হযরত ইমাম মাহদী তিনি শাসন সাত বছর আরব শাসন করবেন। (আবুদাউদ, কিতাবুল মাহদী হা/৪২৮২)। ওদিকে কাদিয়ানের মাহদী দাবীদার মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী জীবনে কখনো গ্রামের মেম্বারও ছিলনা। বরং ব্রিটিশ সরকারের হুকুমত রক্ষায় নিজেকে আমৃত্যু উৎসর্গই করে গেছেন। (দেখুন, তার ৮৩টি বইয়ের সমষ্টি ২৩ খন্ডে প্রকাশিত রূহানী খাযায়েন ৬/৩৮০)।

ইনসাফ ভিত্তিক শাসন-প্রতিষ্ঠা : হযরত ইমাম মাহদী তিনি সমগ্র পৃথিবীকে ন্যায় ও ইনসাফ দ্বারা পূর্ণ করে দেবেন। (দেখুন, ইবনে মাজাহ, কিতাবুল ফিতান হা/৪০৭৭)। ওদিকে কাদিয়ানের মাহদী দাবীদার মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর সময় থেকে আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে অন্যায় অবিচার প্রতিনিয়ত বাড়তেই আছে। বর্তমান আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো তার অন্যতম সাক্ষী।

খেলাফত হস্তান্তর : হযরত ঈসা (আ:)-এর নিকট ইমাম মাহদী তিনি খেলাফত হস্তান্তর করবেন। সংশ্লিষ্ট হাদীসগুলো এরপক্ষে সুস্পষ্ট ইংগিত বহন করে। ওদিকে কাদিয়ানের মাহদী দাবীদার মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর সারা জীবনটাই কেটেছে ব্রিটিশের চাটুকারিতা আর পদলেহনের মধ্য দিয়ে। (মাজমুআয়ে ইশতিহারাত ৩/১৯; আশ-শিরকাতুল ইসলামিয়া রাবওয়া)।

ইন্তেকাল : হাদীসের আলোকে বুঝা যায়, হযরত ইমাম মাহদী তিনি ঈসা (আ:)-এর নুযূলের কয়েক বছর পরেই মারা যাবেন। (আবুদাউদ কিতাবুল মাহদী হা/৪২৮৬ হযরত উম্মে সালমাহ রা: হতে)। ওদিকে কাদিয়ানের মাহদী দাবীদার মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী শায়খ আব্দুল হক গজনভী রহ: এর সাথে ১৮৯৩ সালে অনুষ্ঠিত মুবাহালার প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে কলেরায় মৃত্যুবরণ করেন)। (দেখুন, মালফূজাত ৫/৩২৭ নতুন এডিশন, হায়াতে নাসের পৃষ্ঠা ১৪, পুরাতন এডিশন, লিখক এডিটর ‘আল হিকাম’ পত্রিকা)। উপরের দীর্ঘ আলোচনা দ্বারা বুঝা গেল, হাদীসে বর্ণিত সেই ইমাম মাহদী কোনোভাবেই মির্যা কাদিয়ানী হতে পারেনা।

  • লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

আরও পড়ুন : একই রমযানে চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ এর ঘটনা নিয়ে কাদিয়ানীদের বাড়াবাড়ি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here