মির্যার স্ববিরোধীতা-৪

0
মির্যার স্ববিরোধীতা-৪

মির্যার কথিত ইলহামী গ্রন্থে ঈসা (আ.) আকাশ থেকে নাযিল হবার আকীদা প্রকাশ করা সত্ত্বেও পরবর্তীতে সেই আকীদা থেকে নতুন আরেক কথিত ইলহামের নামে সরে আসা!

পড়ুন: মির্যার স্ববিরোধীতা-

এমন ব্যক্তিও কী করে আপনা দাবীতে সত্য হন?

মির্যা কাদিয়ানী লিখেন, “আমি ‘বারাহীনে আহমদীয়া’ নামক বইতে লিখেছিলাম মসীহ ইবনে মরিয়ম আকাশ থেকে নাযিল হবেন। তবে পরবর্তীতে আমি লিখেছি, আগত মসীহ (ঈসা) আমি নিজেই।” (রূহানী খাযায়েন ২২/১৫২-৫৩; হাকীকাতুল ওহী বাংলা অনূদিত কপি পৃষ্ঠা নং ১১৭)।

‘বারাহীনে আহমদীয়া’ নামক কিতাব সম্পর্কে মির্যার বক্তব্য এই যে,

১. “আমি কিতাবটি আল্লাহর পক্ষ হতে একজন মুলহাম (খোদার পক্ষ হতে অদৃশ্যের জ্ঞান লাভকারী) এবং মামূর (আদিষ্ট) হয়েই লিখেছি।” (আয়নায়ে কামালাতে ইসলাম, রূহানী খাযায়েন ৫/৬৫৭)।

২. আরো লিখা আছে, “প্রত্যক্ষ আর পরোক্ষ উভয় দিক থেকে কিতাবটির পরিচালক মহান আল্লাহ।” (মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত ১/৫৬; আমি এবং আমার বই’ শীর্ষক শিরোনাম)।

৩. তিনি নিজের সম্পর্কে দাবী করে এক জায়গায় লিখেছেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহতালা আমাকে এক মুহূর্তের জন্যও ভুলের উপর ছাড়েন না এবং আমাকে রক্ষা করেন প্রত্যেক ভুলভ্রান্তি থেকে এবং শয়তানি পথ থেকে আমাকে হেফাজত করেন।” (রূহানী খাযায়েন ৮/২৭২)।

৪. “আমার কথাবার্তায় কোনো অসঙ্গতি নেই। আমি তো খোদার ওহীরই অনুসরণকারী।” (রূহানী খাযায়েন ২২/১৫৪)।

৫. “মিথ্যাবাদীর কথায় অবশ্যই স্ববিরোধীতা হয়ে থাকে।” (রূহানী খাযায়েন ২১/২৭৫)।

এবার কিছু প্রশ্ন করতে চাই….। যেহেতু আপনাদেরই বিশ্বাস অনুসারে…!

ঈসা (আ.) আকাশ থেকে নাযিল হবেন, এটা কুরআনের ঐ ত্রিশ আয়াত বিরোধী, তাই না?

এই সংক্রান্ত হাদীস যত আছে সবগুলোই বাতিল, যেহেতু কুরআন বিরোধী কথা সহীহ হাদীসে থাকার কথা না, তাই না?

‘আহমদ চরিত’ বইয়ের ৮ নং পৃষ্ঠায় লিখা আছে, ১৮৯১ সালের দিকে একটি ইলহামের মাধ্যমে মির্যা সাহেবকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, ঈসা (আ.) মৃত্যুবরণ করেছেন, তাই না?

এমতাবস্থায় নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিন!

(ক) ঈসা (আ.) আকাশ থেকে নাযিল হবেন, কথাটি মির্যা সাহেব ওহীর মাধ্যমেই লিখে যাওয়ার পরেও সেটি পরবর্তীতে কেন মিথ্যা হল? (দেখুন, উপর থেকে নিচে ৪ নং উক্তি)।

(খ) যে বিষয়টি তার আগের ওহী দ্বারা ‘হ্যাঁ’ সাব্যস্ত হল সেটাই পরে তার আরেক ওহী (ইলহাম) দ্বারা ‘না’ সাব্যস্ত হলে, তবে কি আল্লাহ মির্যাকে আগে মিথ্যা বলে তারপর সত্য বললেন? নাউযুবিল্লাহ।

(গ) যদি ঈসা (আ.) আকাশ থেকে নাযিল হওয়ার বিশ্বাস ভুল বা মিথ্যা হয়, তাহলে বারাহীনে আহমদীয়া বইটি সম্পর্কে মির্যা কাদিয়ানীর উক্ত (নং ১,২) বক্তব্য দুটিও কি মিথ্যা সাব্যস্ত হল না? কারণ আল্লাহর পক্ষ হতে আদিষ্ট বলে দাবী রত অবস্থায় কোনো ব্যক্তি অদৃশ্যের এমন কোনো বিষয়ে ভবিষ্যৎবাণী কিভাবে দিতে পারেন, যদি আল্লাহ সেটি তাকে বলে না দেন? আবার এমন কোনো ভবিষ্যৎবাণী এধরণের বইতে কিভাবে লিখতে পারেন যা সঠিক নয়, (মির্যার আরেক বক্তব্যানুসারে) সেটি শিরিকও? আবার নাকি বইটি তিনি আল্লাহর পক্ষ হতে নির্দেশ পেয়ে লিখেছেন!

(ঘ) আরো প্রশ্ন জাগে যে, যার দাবী হল—’আল্লাহ আমাকে এক মুহূর্তের জন্যও ভুলের উপর ছাড়েন না’। তাহলে তিনি ১৮৮১-‘৮২ সালে ‘বারাহীনে আহমদীয়া’ বইতে যে কথা লিখলেন তারপর ১৮৯১ সালের দিকে তিনি সে কথা থেকে সরে যাওয়ার মানে কি দীর্ঘ ১০টি বছর ভুলের উপর থাকা নয়? তবে কি আল্লাহ তাকে এমন ভুলের উপরও ছেড়ে দিলেন, যা তার মতে শিরিকি বিশ্বাস?

শেষকথা হল, এমতাবস্থায় মির্যা সাহেব কি সীমাহীন মিথ্যা আর অসঙ্গতির জন্ম দিয়ে গেলেন না? এখন তাহলে মির্যা সাহেবকে তারই কথা অনুসারে আমি যদি একজন নাম্বার ওয়ান ‘কাজ্জাব-মিথ্যাবাদী‘ আখ্যা দিই তবে কি অন্যায় হবে? যেহেতু তিনি খোদ লিখেছেন, “মিথ্যাবাদীর কথায় অবশ্যই স্ববিরোধীতা হয়ে থাকে।” (রূহানী খাযায়েন ২১/২৭৫)। আপনার নিরপেক্ষ বিবেকের কাছে প্রশ্নগুলো রেখে দিলাম।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here