একজন কাদিয়ানী আর একজন মুসলমান তাদের দুইজনের মাঝে ঈসা (আ:) সম্পর্কে কথোপকথন হচ্ছে
- জনৈক কাদিয়ানীর বক্তব্য :
আল্লাহ তায়ালা মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে ১৮৯১ সালে ইলহামের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন যে, ঈসা (আঃ) মৃত্যুবরণ করেছেন, তাই বর্তমানে তাঁর আকাশে থাকা এবং কেয়ামতের আগে সেখান থেকে নাযিল হওয়ার প্রচলিত বিশ্বাস ঠিক না। (মির্যা সাহেবের সংক্ষিপ্ত জীবনীগ্রন্থ ‘আহমদ চরিত‘ বইয়ের পৃষ্ঠা নং ৮ দ্রষ্টব্য)। তাই আমাদের বিশ্বাস মতে, আগত ঈসা বলতে সে ঈসা-ই উদ্দেশ্য যিনি বনী ইসরাইলী ঈসা ইবনে মরিয়ম (আঃ)-এর পরিপূর্ণ গুণাবলির অধিকারী হয়ে এই উম্মতের মধ্যে জন্ম নিবেন। আর তিনি-ই ভারতের কাদিয়ান গ্রামের মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (১৮৩৯-১৯০৮ ইং)।
- কাদিয়ানীর বক্তব্যের প্রতিউত্তর :
প্রিয় আহমদী (কাদিয়ানী)বন্ধু! আমাদের মুসলিম উম্মাহা’র সাথে মির্যা কাদিয়ানী আর তার অনুসারীদের মাঝে অন্যতম সাংঘর্ষিক বিষয়টি হল, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর পরে মির্যা কাদিয়ানীর নবুওত দাবী করা। তাই মির্যা কাদিয়ানীর নবুওত দাবীর সাথে ঈসা (আঃ) জীবিত নাকি মৃত এ সমস্ত বিষয়ের আদৌ কোনো সম্পর্ক আছে বলে আমরা মনে করিনা। আর যেহেতু ঈসা (আ:) জীবিত নেই মর্মে সম্পূর্ণ বিষয়টি শুধুমাত্র মির্যা কাদিয়ানীরই কথিত ইলহাম-নির্ভর; তাই এই মুহূর্তে হযরত ঈসা (আঃ) জীবিত নাকি মৃত সেই প্রসঙ্গে আপাদত ১০টা মিনিট পরে যাই। তার আগে মির্যা কাদিয়ানীর কথিত ইলহাম সম্পর্কে আমার যে প্রশ্নগুলো রয়েছে তার উত্তর দিন! অন্যথা ঈসা (আ:) সম্পর্কে সে যেই ইলহামের (আল্লাহপ্রদত্ত দৈব-বাণী) কথা লিখে গেছে তা জঘন্য মিথ্যা ও বানোয়াট বলেই সাব্যস্ত হবে!
- মির্যা কাদিয়ানীর বই ‘এক গলতি কা ইযালা’ থেকে তার নবী রাসূল দাবী করার প্রমাণ দেখুন! Click
আপনাদের মির্যা গোলাম কাদিয়ানী নিজেকে মাসীহ ঈসা, ইমাম মাহদী এবং নবী রাসূল ইত্যাদি দাবী করার আগে ১৮৭৫ সাল থেকে ১৮৯১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৬ বছরব্যাপী নিজেকে একজন মুজাদ্দিদ এবং মুলহাম হবার দাবী করতেন। তারই দাবী অনুযায়ী আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে ১৮৮০-৮৪ ইং মধ্যকার সময়টিতে তিনি ৪ খন্ডে “বারাহীনে আহমদিয়া” নামক একখানা কিতাব-ও রচনা করেন। মূলকথা শুরু করার আগে আমি মির্যা সাহেবের চারখানা বক্তব্য পেশ করছি।
- বারাহীনে আহমদিয়া কিতাবের বৈশিষ্ট্যঃ
প্রথমত, ‘বারাহীনে আহমদিয়া’ কিতাবের বিশেষত্ব উল্লেখ করে মির্যা সাহেব লিখেছেন :-
“১৮৬৪ কিংবা ১৮৬৫ সালে তথা কাছাকাছি কোনো একটি সময় যখন এই অধম (মির্যা) স্বীয় হায়াতের প্রথমাংশে শিক্ষা-দীক্ষা অর্জনে ব্যস্ত ছিল, তখন (এই অধম) জনাব আঁ-হযরত (সা:)-কে স্বপ্নে দেখতে পেল এবং সেই সময় এই অধম (মির্যা)’র হাতে একটি দ্বীনি কিতাব ছিল যেটি এই অধমের কোনো কিতাব বলেই (তখন) মনে হচ্ছিল। আঁ-হযরত (সা:) তিনি এই কিতাবটি দেখতে পেয়ে আরবি ভাষায় (স্বপ্নে) জিজ্ঞাসা করলেন যে, তুমি (মির্যা) এই কিতাবের নাম কী রেখেছ? (আমি) অধম প্রত্যুত্তরে বললাম, আমি এর নাম “কুতুবী” রেখেছি। এই নামের স্বপ্ন-ব্যাখ্যা এখন এই ইশতিহারী কিতাব রচিত হওয়াতে সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, এই কিতাব (বারাহীনে আহমদী) এমন একটি কিতাব, যেটি কুতুবে ছেতারা (ধ্রুবতারা)’র ন্যায় গয়রে মুতাযালযিল (নিখুঁত) এবং মুসতাহকিম (সুদৃঢ় ও শক্তিশালী)। যার পরিপূর্ণ দৃঢ়তা পেশ করতে দশ হাজার রূপিয়ার ইশতিহার দেয়া হয়। মোদ্দাকথা, আঁ-হযরত (সা:) তিনি কিতাবটি আমার কাছ থেকে নিয়ে নেন। কিতাবটি যখন হযরত (সা:)-এর পবিত্র হাতের সংস্পর্শে আসল এবং তাঁর হাতের ছোঁয়া লাগল তখনি সেটিতে অবর্ণনীয় একটি খোশ রঙ সৃষ্টি হল এবং চমৎকার আমরুত (পেয়ারা) ফল হিসেবে পরিণত হয়ে গেল। আঁ-হযরত (সা:) যখন এই ফলকে বণ্টন করার জন্য টুকরো টুকরো করতে চাচ্ছিলেন তখন তা হতে এই পরিমাণে স্বাদ নির্গত হল যার ফলে আঁ-হযরত (সা:)-এর হাত মুবারক কনি পর্যন্ত মধুতে ভরে গেল।” (রেফারেন্স – বারাহীনে আহমদিয়া খন্ড নং ৩ (বাংলা অনূদিত পৃষ্ঠা নং ১৯২); রূহানী খাযায়েন খন্ড নং ১ পৃষ্ঠা নং ২৭৫; লেখক, মির্যা কাদিয়ানীর ৮৩টি বইয়ের সমষ্টি ২৩ খন্ডে প্রকাশিত; ২০০৮ সালে পুনঃ মুদ্রিত)।
- পুরো বক্তব্যের খোলাসাঃ
(১) খোদার নির্দেশিত কিতাবটির নাম “কুতুবী“। অর্থাৎ ধ্রবতারার ন্যায় নিখুঁত, আর দলিল-প্রমাণের দিক থেকে সুদৃঢ় ও শক্তিশালী।
(২) এটি অপ্রতিরোধ্য কিতাব যার মুকাবিলায় সেই সময়ে দশ হাজার রূপীর ইশতিহার (চ্যালেঞ্জ) ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
(৩) এমন কিতাব যেটি হযরত (সা:)-এর পবিত্র হাতের ছোঁয়া লাগায় তাতে অবর্ণনীয় খোশ রঙ সৃষ্টি হয় এবং চমৎকার আমরুত (পেয়ারা) ফলে পরিণত হয় এবং যার স্বাদ এই পরিমাণে নির্গত হয় যার ফলে হুজুর (সাঃ)-এর হাত কনি পর্যন্ত মধুতে ভরে যায়।
(৪) মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত পুস্তকের ১ম খন্ডের ৫৬ নং পৃষ্ঠায় মির্যা সাহেব “বারাহীনে আহমদিয়া” সম্পর্কে আরো লিখেছেন “প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয় দিক থেকে এই কিতাবের তত্ত্বাবধায়ক এবং কর্তৃপক্ষ হলেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন।
- যুগ ইমাম ও মুজাদ্দিদের বৈশিষ্ট্যঃ
দ্বিতীয়ত, মুজাদ্দিদ ও যুগ ইমামগণ সম্পর্কে মির্যার বক্তব্য :
মির্যা কাদিয়ানী সাহেব ১৮৯৯ সালেও খোদ নিজ হাতে যুগ ইমাম তথা মুজাদ্দিদ আর মুফাসসির সম্পর্কে তার কিতাবে লিখে গেছেন, دوسرے ایسے ائمہ اور اکابر کے ذریعہ سے جن کو ہریک صدی میں فہم قرآن عطا ہوا ہے جنہوں نے قرآن شریف کے اجمالی مقامات کی احادیث نبویہ کی مدد سے تفسیر کرکے خدا کی پاک کلام اور پاک تعلیم کو ہریک زمانہ میں تحریف معنوی سے محفوظ رکھا. ایام الصلح অর্থাৎ [আল্লাহতালা কর্তৃক পবিত্র কুরআনের সঠিক শিক্ষাকে প্রত্যেক যুগে সর্বসাকুল্য অবিকৃত রাখার চারটি পদ্ধতির মধ্য হতে] দ্বিতীয়টি হচ্ছে, এমন ইমাম এবং আকাবের (তথা মুজাদ্দিদ)গণ দ্বারাও যাঁদের প্রত্যেক শতাব্দীর মাথায় কুরআনের বিশুদ্ধ বুঝ প্রদান করা হয়ে থাকে। তারা কুরআন শরীফের অস্পষ্ট বিষয়াদী নবীর হাদীস সমূহের সাহায্যে তাফসীর করে খোদার পবিত্র বাণী ও পবিত্র শিক্ষাকে প্রত্যেক যুগেই অর্থগত বিকৃতি থেকে রক্ষা করেছিলেন।’ (আয়্যামুছ ছুলহি ৫৫, সংকলনের তাং ১৮৯৯ ইং; রূহানী খাযায়েন ১৪/২৮৮)। (স্ক্রিনশটে দেখুন)
মির্যা কাদিয়ানীর ৮৩টি বইয়ের সমষ্টি ২৩ খন্ডে প্রকাশিত রূহানী খাযায়েন ১৪/২৮৮ দ্রষ্টব্য
- তারপর প্রত্যেক যুগ ইমাম ও মুজাদ্দিদের বৈশিষ্ট্য এবং তাদের ব্যাখ্যা মেনে নেয়া কিরূপ জুরুরী সে সম্পর্কে মির্যা সাহেব লিখেছেন :
(১) মুজাদ্দিদ ব্যক্তি খোদাপ্রদত্ত জ্ঞান আর ঐশী আয়াত সহকারে আগমন করা জুরুরী। (রূহানী খাযায়েন ৩/১৭৯)।
(২) মুজাদ্দিদকে কুরআনের বুঝ দান করা হয়। (রূহানী খাযায়েন ১৪/২৮৮)।
(৩) স্মরণ রেখো! মুজাদ্দিদ ব্যক্তি দ্বীনের মধ্যে কোনোরূপ বেশকম করেননা। (রূহানী খাযায়েন ৬/৩৪৪)।
(৪) যে ব্যক্তি ইলহামপ্রাপ্ত সে কি নিজ থেকে কোনো কথা বলতে পারে? (রূহানী খাযায়েন ১৯/২২১)।
(৫) মুজাদ্দিদের কথায় বিশ্বাস রাখা ফরজ নয় বলা খোদার হুকুম থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়ার সমতুল্য। (রূহানী খাযায়েন ৬/৩৪৪)।
- মির্যা সাহেব ভুল-ক্রুটির উর্ধ্বে হওয়াঃ
তৃতীয়ত, মির্যা সাহেব নিজেকে একজন সুরক্ষিত এবং ভুল-ত্রুটির উর্ধ্বে বুঝাতে যা যা লিখে গেছেন তা তারই বই থেকে জেনে নিন!
(১) আল্লাহতালা আমাকে এক মুহূর্তের জন্যও ভুলের উপর স্থির থাকতে দেন না এবং আমাকে প্রত্যেক ধরণের ভুল ভ্রান্তি কথা হতে রক্ষা করেন। (নূরুল হক, রূহানী খাযায়েন ৮/২৭২)।
(২) আমি যাই কিছু বলি সবই খোদার নির্দেশে বলি এবং আমি আমার নিজ থেকে কিছুই করিনা। (মাওয়াহিবুর রহমান, রূহানী খাযায়েন ১৯/২২১)।
(৩) আমি দুনিয়ার কথা বলিনা। কেননা আমি দুনিয়া হতে নই। বরং আমি সেটাই বলি যা খোদাতায়ালা আমার মুখে ঢেলে দেন। (পয়গামে ছুলহি, রূহানী খাযায়েন ২৩/৪৮৫)।
- কুরআনের সমস্ত প্রজ্ঞা অর্জনকরাঃ
চতুর্থত, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়-ও তুলে ধরা হবে। মির্যা সাহেবের কথিত ওহী, ইলহাম আর কাশফ এর সমষ্টিকে গ্রন্থবদ্ধ করা হয় “তাযকিরা” নামে। এই বইয়ের ৩৫ নং পৃষ্ঠায় লিখা আছে,
তিনি লিখেছেন, ১৮৮২ সালে তার প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে ইলহাম হয় ‘আর রাহমান আল্লামাল কুরআন’। মির্যা কাদিয়ানী সাহেব তার উক্ত কথিত ইলহামের ব্যাখ্যা দিয়ে লিখেছেন, اس الہام کے رو سے خدا نے مجھے علوم قرآنی عطا کئے ہیں اور میرا نام اول المومنین رکھا اور مجھے سمندر کی طرح معارف اور حقائق سے بهر دیا ہے অর্থাৎ “আর-রহমান আল্লামাল কুরআন” এই ইলহাম দ্বারা খোদাতায়ালা আমাকে কুরআনের অগণিত প্রজ্ঞা দান করেছেন এবং আমার নাম রেখেছেন ‘আওয়্যালুল মুমিনীন’। আমাকে সমুদ্রের মত কুরআনের প্রজ্ঞা আর নিগূঢ় রহস্যাবলী দ্বারা পূর্ণ করে দিয়েছেন।” (রূহানী খাযায়েন ১৩/৫০২)।
- এক নজরে মির্যা কাদিয়ানী ও কাদিয়ানীয়ত Click
মূল-কথাঃ
এবার মূল কথায় ফিরে আসা যাক ! মির্যা সাহেবের মত এমন একজন মুলহিম এবং মুজাদ্দিদ দাবীদারের বইতে হযরত ঈসা (আঃ) সম্পর্কে পরিস্কার শব্দে লিখা আছে,
(১) ঈসা (আঃ) তো ইঞ্জিল কিতাবকে একদম অসম্পূর্ণ অবস্থায় ছেড়ে আকাশে গিয়ে বসে আছেন। (টীকাঃ বারাহীনে আহমদিয়া ৩৬১; রূহানী খাযায়েন ১/৪৩১)।
(২) “আমার-ও এই বিশ্বাস ছিল যে, ঈসা (আঃ) আকাশ থেকে নাযিল হবে।” (রূহানী খাযায়েন ২২/১৫২)।
(৩) “আমি বারাহীনে আহমদিয়ার মধ্যে লিখেছিলাম, মাসীহ ইবনে মরিয়ম (আঃ) আকাশ থেকে নাযিল হবেন। কিন্তু পরবর্তীতে লিখেছি, আগত সেই মাসীহ আমি নিজেই।” (রূহানী খাযায়েন ২২/১৫২-৫৩)।
(৪) খোদাতালা স্বীয় পবিত্র বাণীতে ঈসার পুনঃআগমন বিষয়ে ইংগিত করেছেন। তাই সেই ইংগিতের বর্ণনা বারাহীনে আহমদিয়া’র তৃতীয় খন্ডে উল্লেখ করা হয়েছে। অত্র আয়াত ‘হুয়াল্লাযী আরসালা রাসূলাহু বিল হুদা… (সূরা তাওবা ৩৩)’র মধ্যে ফোরকানি ইশারা রয়েছে যে, اور جب حضرت مسیح علیہ السلام دوبارہ اس دنیا میں تشریف لائیں گے تو ان کے ہاتھ سے دین اسلام جمیع آفاق اور أقطار میں پہیل جائے گا অর্থাৎ যখন মাসীহ আলাইহিস সালাম ‘দ্বিতীয়বার’ এই পৃথিবীতে আগমন করবেন তখন তাঁর হাতে ইসলাম সমগ্র দুনিয়ার আনাচেকানাচে পৌঁছে যাবে। (দেখুন, রূহানী খাযায়েন ১/৫৯৩; সারমর্ম)।
- আমার প্রশ্নগুলোঃ
যদি মনে করেন যে, মির্যা সাহেবের আগের সে সমস্ত কথা সঠিক ছিলনা অথবা তার পরবর্তী বক্তব্যের মাধ্যমে আগের গুলো রহিত হয়ে গেছে কিংবা আল্লাহতায়ালা তাকে পরবর্তীতে নতুনভাবে ইলহামের মাধ্যমে ঈসা’র মৃত্যুর কথা জানিয়ে দিয়েছেন; তখন নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর কিভাবে দেবেন!
(১) প্রত্যক্ষ আর পরোক্ষভাবে ‘বারাহীনে আহমদিয়া’ কিতাবটির তত্ত্বাবধায়ক ও কর্তৃপক্ষ স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কিভাবে হন যেখানে ঈসা (আঃ) আকাশে থাকা এবং তাঁর দ্বিতীয়বার আগমন সম্পর্কে উল্লিখিত কথাগুলো ভুল ও ভ্রান্ত?
(২) এই ধরণের ভুল ভ্রান্তি কথা যেই কিতাবে থাকে সেটি কিভাবে “কুতুবী” (ধ্রুবতারা)’র ন্যায় নিখুঁত এবং দলিল-প্রমাণের দিক থেকে সুদৃঢ় ও শক্তিশালী হয়? ভাবিয়ে তোলে কিনা?
(৩) স্বপ্নযোগে রাসূল (সাঃ) এমন একখানা কিতাবের প্রসংশা কিভাবে করতে পারেন যেই কিতাবটি চরম পর্যায়ের ভুলভ্রান্তি এমনকি শিরিকি আকীদায় ভরপুর? কারণ মির্যা সাহেব বলেছেন, ঈসা (আঃ)-কে জীবিত থাকার বিশ্বাস শিরিক! (রূহানী খাযায়েন ২২/৬৬০)।
(৪) ‘দোবারা‘ তথা দ্বিতীয়বার তো সে ব্যক্তি-ই আসতে পারেন যিনি প্রথমবার এসেছিলেন, তাই নয় কি? এমতাবস্থায় সে ঈসা-ই যদি আর জীবিত না থাকেন তখন গোলাম আহমদের এই “দো-বারা” ওয়ালা ইলহামের কী হবে? অথচ বারাহিনে আহমদিয়া নামক বইটির বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করতে গিয়ে মির্যা সাহেব লিখেছেন “আমি এই কিতাব খোদাতায়ালার পক্ষ হতে ‘মামূর’ তথা নির্দেশপ্রাপ্ত হয়েই লিখেছি। কেউ তার প্রদত্ত কোনো দলিল ভাঙ্গতে পারলে তাকে দশ হাজার রূপিয়া পুরস্কার দেয়া হবে।” (দেখুন, মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত ১/২৩-২৫; আরো ১/২৭-২৮; নতুন এডিশন)। এই কথাগুলোর কী জবাব? মির্যা সাহেবের আকীদা-বিষয়ক পরের ইলহামী কথা দ্বারা কি তার আগের ইলহামী কথা রহিত হয়ে যাবে?
(৫) মির্যা সাহেব খোদার নির্দেশ ছাড়া কিছুই বলেন না, মুলহাম কখনো নিজ থেকে কিছুই বলেন না, মির্যা সাহেবের মুখে আল্লাহ যা ঢেলে দেন তিনি শুধু তাই বলেন, আল্লাহ তাকে ভুলের উপর এক মুহূর্ত-ও স্থির থাকতে দেন না, কথাগুলো সত্য হলে তখন এই টাইপের একটি লোক কিভাবে খোদার নির্দেশিত পুস্তকে-ও যতসব ভ্রান্তিপূর্ণ(!) আর শিরিকি(!) কথা লিখতে পারেন? তা-ও আবার “কুতুবী” নামক খ্যাতি পাওয়া কোনো বইতে যেটি স্বপ্নে রাসূল (সাঃ) কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বলেই মির্যার দাবী! জবাব কিভাবে দেবেন!
(৬) মির্যা গোলাম আহমদ সাহেব (মৃত ১৯০৮ ইং) পরিস্কারভাবে কিন্তু এ-ও লিখে গেছেন : میرے ہر بات الہامات پر مبنی ہوتی ہے۔ অর্থাৎ আমার প্রত্যেকটা কথা ইলহামের উপর প্রতিষ্ঠিত। (রূহানী খাযায়েন খন্ড ১৯ পৃষ্ঠা ২২১)। কাজেই ঈসা (আঃ) বেঁচে নেই, তার এই বক্তব্য ইলহামী হলে তখন ঈসা (আঃ) আকাশে জীবিত, তিনি সেখান থেকে কেয়ামতের আগে দ্বিতীয়বার আগমন করবেন, মর্মে আগেকার ইলহামী বক্তব্যগুলোর কী হবে?
(৭) এতদ্ব্যতীত মির্যা সাহেবের পরবর্তী দাবী অনুসারে আগত সেই মাসীহ যদি তিনি নিজে-ই হন তখন বনী ইসরায়েলি ঈসা’র দ্বিতীয়বার আগমনের সেই ফোরকানী ইশারা‘র কী হবে?
(৮) মির্যা গোলাম আহমদকে সমুদ্রের মত কুরআনের অগণিত প্রজ্ঞা আর নিগূঢ় রহস্যাদি দ্বারা পরিপূর্ণ করে দেয়ার ইলহামের দুই বছর পর ১৮৮৪ সালে ঈসা (আঃ)-এর দ্বিতীয়বার আগমন করার সেই ‘ফোরকানী ইশারা’ ওয়ালা ইলহামটির-ও বা কী জবাব?
সংক্ষেপে এ কয়েকটি প্রশ্ন করলাম। আল্লাহর ওয়াস্তে নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করুন আর ভেবে দেখুন, ইসলামের গত চৌদ্দশত বছরের উম্মতে মুহাম্মদিয়ার সর্বসম্মত আকীদা, তাফসির, অসংখ্য সহীহ হাদীস আর সকল যুগ ইমাম এবং ইসলামের ইতিহাস সব কিছুকে পাশ কেটে শুধু এমন একজন ব্যক্তির কথায় আপনারা কিভাবে আস্থা আর বিশ্বাস রেখে ঈসা (আঃ) এর দ্বিতীয়বার আগমনকে অস্বীকার করতে পারেন, যেই মানুষটির জীবনে স্ববিরোধী কথাবার্তার অন্ত ছিল না!? নতুবা উল্লিখিত প্রশ্নগুলোর জবাব কিভাবে দেবেন?
- লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক