Home কাদিয়ানী মতবাদ খণ্ডন কাদিয়ানীবাদের ওফাতে মসীহ’র বড় দলিলের খণ্ডন

কাদিয়ানীবাদের ওফাতে মসীহ’র বড় দলিলের খণ্ডন

0

কাদিয়ানী মতবাদের খণ্ডনে সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং ১৪৪-এর অপব্যাখ্যার জবাব :

ঈসা (আ.)-কে মৃত আখ্যা দিয়ে তদস্থলে মির্যা গোলাম আহমদকে “মসীহ” সাব্যস্ত করতেই কাদিয়ানীরা সূরা আলে ইমরান আয়াত নং ১৪৪ (قَدۡ خَلَتۡ مِنۡ قَبۡلِہِ الرُّسُلُ) এর অপব্যাখ্যা দেয়, এখানে তার সংক্ষিপ্ত খণ্ডন করা হল! প্রিয় পাঠকবৃন্দ! নিচের প্রশ্ন তিনখানা বুঝার জন্য প্রথমে আয়াতটির বঙ্গানুবাদ দেখে নিন!। আয়াতটির সঠিক অনুবাদ,

وَ مَا مُحَمَّدٌ اِلَّا رَسُوۡلٌ ۚ قَدۡ خَلَتۡ مِنۡ قَبۡلِہِ الرُّسُلُ ؕ اَفَا۠ئِنۡ مَّاتَ اَوۡ قُتِلَ انۡقَلَبۡتُمۡ عَلٰۤی اَعۡقَابِکُمۡ ؕ وَ مَنۡ یَّنۡقَلِبۡ عَلٰی عَقِبَیۡہِ فَلَنۡ یَّضُرَّ اللّٰہَ شَیۡئًا ؕ وَ سَیَجۡزِی اللّٰہُ الشّٰکِرِیۡنَ

অর্থাৎ মুহাম্মদ একজন রাসূল মাত্র; তাহার পূর্বে বহু রাসূল গত হইয়াছে। সুতরাং যদি সে মারা যায় অথবা সে নিহত হয় তবে তোমরা কি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করিবে? এবং কেহ পৃষ্ঠপ্রদর্শন করিলে সে কখনও আল্লাহর ক্ষতি করিতে পারিবে না; বরং আল্লাহ শীঘ্রই কৃতজ্ঞদের পুরস্কৃত করিবেন।” (অনুবাদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন/ইফা হতে প্রকাশিত)। 

পাঠকবৃন্দের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী আপনা রচনার এক জায়গায় قَدۡ خَلَتۡ مِنۡ قَبۡلِہِ الرُّسُلُ আয়াতাংশের অর্থ করেছেন,

اور اس سے پہلے بھی رسول ہی آتے رہے ہیں

অর্থাৎ এবং তাঁহার পূর্বেও রাসূলই আগমন করিতেন। (জঙ্গে মুকাদ্দাস পৃষ্ঠা ৭, রূহানী খ্যায়েন ৬/৮৯)।

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য

মুসলিম উম্মাহা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে যে, আয়াতটিতে নানা কারীনা’র (ইংগিত) বিচারে শর্ত প্রযোজ্যের নীতি মানা হবে। ফলে সেখানে الرُّسُلُ-এর সঠিক অর্থ হল ‘বহু রাসূল বা অনেক রাসূল গত হইয়া গিয়াছে’। আয়াতটি যেন বুঝাতে চাচ্ছে, হে নবী! আপনার পূর্বেও আরও যত রাসূল গত হয়ে গেছেন তারা-ও আপনার মত রাসূলই ছিলেন, খোদা ছিলেন না যে তাঁরা অমর হয়ে থাকবে; কাজেই আপনার মৃত্যুতেও মক্কার মুশরিকদের এত আশ্চর্যান্বিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

জ্ঞানীরা আয়াতটির শানে নুযূল বা প্রসঙ্গ নিয়েও চিন্তা করতে পারে। তাছাড়া একই আয়াতে রাসূলগনের দুনিয়া হতে স্থানান্তরিত হওয়ার কথাটি ব্যক্ত হয়েছে قَدۡ خَلَتۡ (গত হইয়া গিয়াছে) ক্রিয়াপদ দ্বারা, অথচ قد ماتت (মারা গিয়াছে) ক্রিয়াপদ দ্বারাও ব্যক্ত হতে পারত। এ সমস্ত সূক্ষ্ম ইংগিত সমূহ আমাদের ডেকে ডেকে বলছে যে, আয়াতটির الرُّسُلُ অর্থে শর্তপ্রযোজ্যের নীতি গৃহীত হয়েছে। অন্যথা কাদিয়ানীদের নিকট নিচের প্রশ্নগুলোর কোনোই জবাব থাকেনা।

১. পবিত্র কুরআনে জিবরাইল (আ.)-কেও ‘রাসূল‘ সম্বোধন করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তালা বলেছেন,

قَالَ اِنَّمَاۤ اَنَا رَسُوۡلُ رَبِّکِ ٭ۖ لِاَہَبَ لَکِ غُلٰمًا زَکِیًّا
অর্থ- সে বলল, ‘আমি তো তোমার প্রতিপালকের রাসূল (প্রেরিত-দূত) মাত্র; তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করবার জন্য (আমি প্রেরিত হয়েছি)।’ (সূরা মরিয়ম ১৯)।

অন্যত্রে ইরশাদ হয়েছে,

اِنَّہٗ لَقَوۡلُ رَسُوۡلٍ کَرِیۡمٍ
অর্থ- নিশ্চয়ই এই কুরআন এক সম্মানিত রসূলের বার্তা। (সূরা আল হাক্কাহ ৪০)।

এমনকি ফেরেশতাদের একটি অংশকেও রাসূল মনোনীত করার কথা আছে। যেমন আল্লাহ তালা বলেছেন,

اَللّٰہُ یَصۡطَفِیۡ مِنَ الۡمَلٰٓئِکَۃِ رُسُلًا وَّ مِنَ النَّاسِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ سَمِیۡعٌۢ بَصِیۡرٌ
অর্থ- আল্লাহ ফিরিশতাদের মধ্য হতে মনোনীত করেন রসুল (বাণীবাহক) এবং মানুষের মধ্য হতেও। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। (সূরা আল-হাজ্জ্ব ৭৫)।

তাহলে কি প্রশ্ন উঠেনা যে, তবে কি মুহাম্মদ (সা.)-এর পূর্বেই জিবরাইলসহ এই ফেরেশতাগণও গত হইয়া গিয়াছে কিংবা মৃত্যুবরণ করিয়াছে?

এই প্রশ্নের সাথে সম্পর্কিত একটি কথা খুব খেয়াল রাখতে হবে যে, এখানে ‘মানব রাসূল’ আর ‘ফেরেশতা রাসূল’-এর ডিফারেন্স করার কোনোই সুযোগ নেই; যদি الرسل এর আলিফ লামকে ‘ইস্তিগরাকি’ (استغراقى) মানা হয়। যেহেতু তখন বিনা ব্যতিক্রমে সব রাসূলকেই অন্তর্ভুক্ত করবে।

২. মির্যা কাদিয়ানীর একটি ইলহাম হচ্ছে, ‘আকাশ থেকে কয়েকটি সিংহাসন নাযিল হয়েছে কিন্তু সবার উপরে তোমার সিংহাসন পাতা হয়েছে।’ (আরবাঈন পৃ-৯৩, মির্যা কাদিয়ানী দ্রষ্টব্য)। এখন শর্ত প্রযোজ্য-এর নীতি না মানলে তবে কি মির্যার ঐ সিংহাসন “সবার উপরে” একথা দ্বারা মুহাম্মদ (সা.)-এর সিংহাসনের উপরেও পাতা হয়েছে মানবেন? (স্ক্রিনশট ১)

৩. কাদিয়ানী প্রথম খলিফা হেকিম নূরউদ্দিন লিখেছেন, আলিফ লামে ইস্তিগরাকি যদিও ব্যাপকার্থবোধক তবে শর্ত প্রযোজ্যের (خصوصيت) অর্থও দিয়ে থাকে। (তাসদীকে বারাহীনে আহমদিয়া ১০৪)। এখন প্রশ্ন হল, الرسل হতে ‘সমস্ত রাসূল’ অর্থ নেয়া সত্ত্বেও হেকিম নূরউদ্দিনের কথা অনুসারে ‘শর্ত প্রযোজ্য’-এর নীতি অনুযায়ী ঈসা (আ.) সহ আরও কিছু সংখ্যক রাসূলকে ‘সমস্ত রাসূল গত হইয়া গিয়াছে’ এর অন্তর্ভুক্তির বাহিরে মানলে ভুল কেন হবে? (স্ক্রিনশট ২)

কাদিয়ানী/আহমদীদের নিকট এই ৩টি প্রশ্নের আদৌ কোনো সদুত্তর নেই। লিখাটি স্যোসাল মিডিয়া ফেইসবুকে পোস্ট করার পর কতিপয় ব্রেইন ওয়াশ কাদিয়ানী কীসব হাস্যকর তাবীল আর কাসুন্দি মূলক মন্তব্য দিয়েছে দেখতে পারেন! তবে আমিও তাদের সব মন্তব্যের উপর প্রতিউত্তর করেছি, যার প্রতিউত্তর করা তাদের পক্ষে এখনো পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। স্যোসাল মিডিয়া থেকে- দেখুন। (মির্যা কাদিয়ানীর নবী দাবী করার ১৫টি প্রমাণ- দেখুন)।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here