শীয়া খোমেনীবাদ ১

0
শীয়া খোমেনীবাদ ১
  • খোমেনীবাদ : ১

শীয়া মতবাদ! ইরানের শীয়া বিপ্লবী নেতা ও শীয়া মতবাদের গুরু আয়াতুল্লাহ খোমেনী (১৯০২-১৯৮৯)-এর চিন্তাধারা ও কুফুরী মতবাদের উৎস :

প্রথমে জেনে রাখুন, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত-এর প্রধান হাদীসের কিতাব হল, সহীহ আল বুখারী। ঠিক অনুরূপভাবে শীয়াদের প্রধানগ্রন্থ হল, আল কাফী (আরবী : الكافي في الأصول والفروع)। ‘কাফী’ (الكافى) শব্দের অর্থ হল, যথেষ্ট। এই কাফী-তে ১৬ হাজার ১ শত ৯৯খানা রেওয়ায়েত (তাদের ভাষায় হাদীস) উল্লেখ রয়েছে। প্রায় ২০ বছর ধরে সাধনা করে নাকি শায়খ মুহাম্মদ ইবনে ইয়াকূব আল কুলাইনী সাহেব এই ‘কাফী’ কিতাবটি সংকলন করেছেন। তাদের ভাষ্যমতে, এই কিতাব লিখার পর তাদের তথাকথিত আত্মগোপনে থাকা ইমাম মাহদী (মুহাম্মদ ইবনে হাসান আল আসগরী)-এর নিকট এটি পেশ করা হয়। শায়খ কুলাইনী সাহেব অবশ্য কোন গুহায় ইমাম মাহদীর খোঁজ পেয়েছিলেন বা কিভাবে পেয়েছিলেন এ সবের কোনো তথ্যই তিনি উল্লেখ করে যাননি। যাইহোক, ইমাম মাহদী নাকি কিতাবটি দেখে বলেছেন, الکافی كافى অর্থাৎ আল কাফী (শীয়াদের জন্য) যথেষ্ট। আমার নিকট লাখনৌর ছাপা ‘আল কাফী’র যে কপিটা রয়েছে, তার ১ম খণ্ডের মুকাদ্দমাতে (ভুমিকাতে)-ই উপরের কথাগুলো লিখা আছে। তাঁদের আরও দাবী হল, এই সাড়ে ১৬ হাজার হাদীসের(?) মধ্যে নাকি একটি জাল (বানোয়াট/মিথ্যা) হাদীসও নেই।

এবার তাদের একখানা স্ববিরোধী আচরণ দেখুন, তারা “বুখারী” এর নাম ‘সহীহ’ কেন রাখা হল, এই ধরনের প্রশ্ন করতে করতে পুরাই পাগল করে দেয়। অথচ তাদেরই শায়খ কুলাইনীর কিতাব “আল কাফী” কিভাবে ‘যথেষ্ট’ (كافى) হল, তার কোনো কোনো জবাব নেই! যাইহোক, এই ‘কাফী’ কিতাবকে তিন (৩) ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা, ১. উসূলে কাফী (اصول الكافى)। ২. ফুরূয়ে কাফী (فروع الكافى)। ৩. রওজাতুল কাফী (روضة الكافى)।

শীয়া মতবাদ সত্যিই এক অদ্ভুত মতবাদ। এদের মতাদর্শ খুব কম মানুষই জানতে পারে। কারণ এরা এগুলো কখনো প্রকাশ করেনা। যাইহোক, উসূল বা নীতিমালা (الاصول) বর্ণিত আছে ‘আল উসূলু মিনাল কাফী’-তে (الاصول من الكافى)। আর তাঁদের ফুরূয়ী মাসআলা যেমন, নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত, বিবাহ-তালাক সহ ইত্যাদি বর্ণিত হয়েছে আল ফুরূ’ মিনাল কাফী-তে (الفروع من الكافى)। আর ইমামগণের (১২ ইমাম সহ) জীবনী রয়েছে রওজাতুল কাফী-তে (الروضة الكافى)। আহলে সুন্নাহ তথা সুন্নী মুসলিমগণ যেরূপ বুখারী ও মুসলিমের উপর খুব আস্থা ও বিশ্বাস রাখেন, শীয়াগণ তার চেয়েও বেশি বিশ্বাস রাখেন ‘আল কাফী’ কিতাবের উপর। এই ‘আল কাফী’ কিতাবটির প্রথম অংশে অর্থাৎ উসূলে কাফী’র চতুর্থ খণ্ডের ১৪০ নং পৃষ্ঠায় ‘বাবুত তাকীয়া’ (باب التقية) নামক একটি অধ্যায় রয়েছে, অধ্যায় নং ২২৫, আর এই অধ্যায়ে ২৩ খানা রেওয়ায়েত (হাদীস) এনেছেন শায়খ কুলাইনী সাহেব। আমি এখানে মাত্র দুটি হাদীস (মূলত এগুলো শীয়া পণ্ডিতদের বানোয়াট বর্ণনা – লিখক) পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরব। তাঁর পূর্বে চলুন জেনে নেয়া যাক, তাদেরই অন্যতম একটি মতবাদ “তাকীয়া” সম্পর্কে জেনে নিই। তাকীয়া (التقية) কী ও কেন?

তাকীয়া বা তাকিয়্যাহ :

  • তাকীয়া (التقية) হল, শীয়াদের গুরুত্বপূর্ণ রুকন ও শিক্ষা। এর ব্যবহারিক অর্থ হল, মানুষ তাঁর মান ও মর্যাদা এবং জান-মাল শত্রুর কাছ থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে যা কিছু অন্তরে রয়েছে তাঁর বিপরীতে মত প্রকাশ করা। এরই নাম ‘তাকীয়া’। খুব খেয়াল করুন, যদি আপনি কোনো মিথ্যাকথা বলেন অথবা অন্তরে এক কথা আর মুখে আরেক কথা রাখেন, তাহলে কিন্তু তা অপরাধ নয়। নাউযুবিল্লাহ। কিয়েক্টাবস্থা! শীয়াগণ (পূর্ব নাম রাফেজী) সামান্য বিষয়েও এই রূপ তাকীয়া করেন। প্রয়োজনে করেন, আবার অপ্রয়োজনেও করেন। এর অহরহ দলিল দেয়া যাবে। বলাবাহুল্য যে, তাদের মতাদর্শটি বিগত ১৪ শত বছর ধরেই এইরকম তাকীয়া আর কিতমান (সত্য গোপন)-এর উপর টিকে আছে। এই তাকীয়া অধ্যায়ের ২য় রেওয়ায়েতটি নিচে দেখুন, ابن أبي عمير، عن هشام بن سالم، عن أبي عمر الأعجمي قال: قال لي أبو عبد الله (عليه السلام): يا أبا عمر إن تسعة أعشار الدين في التقية ولا دين لمن لا تقية له والتقية في كل شئ إلا في النبيذ والمسح على الخفين অর্থ, ইমাম জাফর আস সাদেক বলেছেন, (নিশ্চিত কথাগুলো জাফর সাদেকের নামে জঘন্য মিথ্যাচার। তিনি এমন কথা থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র – অনুবাদক) হে উমরের পিতা, তাকীয়াতে দ্বীন ইসলামের ১০ ভাগের ৯ ভাগ রয়েছে। কোনো প্রকারের দ্বীন অবশিষ্ট নেই তাকীয়াহ ছাড়া। আর ‘ওয়াত তাকিয়্যাতু ফী কুল্লি শাইয়িন’ তথা দ্বীনের সকল কিছুতেই তাকীয়া রয়েছে, শুধুই মোজার উপর মাসেহ করা আর মদ পান করা এই দুই কর্মে তাকীয়া নেই।’

পাঠকবর্গ! চিন্তা করুন, যাঁদের দ্বীন ধর্মটাই এমন মিথ্যা আর কপটতার উপর প্রতিষ্ঠিত, তাঁদের থেকে আপনি কখনো কোনো বিষয়ে সঠিক তথ্য কিভাবে আশা করতে পারেন? মনে করুন, আপনি একজন কনভার্টেট শীয়া। আপনাকে নানা ধরনের ইতিহাস বা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দিয়ে বুঝালো! এখন যাদের রক্তমাংসে তাকীয়া মিশে আছে তারা যে আপনাকে ধোকায় ফেলেনি, সত্যটা কৌশলে গোপন রেখে দেয়নি; আপনি কিভাবে নিশ্চিত হলেন? কারণ যার একটি কথায় মিথ্যা প্রমাণিত হবে তার তো বাকি সমস্ত কথায় মিথ্যা হওয়া স্বাভাবিক, তাই নয় কি? আহা! তাকীয়া!! ইসলামের ৯ ভাগ তাকীয়াতেই!! মা’আজাল্লাহ! তাহলে ফলাফল কী দাঁড়াচ্ছে!! এই কুরআন, এই হাদীস; সব মিলেও ১০ ভাগের ১ ভাগ না, তাই না? আস্তাগফিরুল্লাহ। তাহলে দ্বীনের বাকিগুলো কোথায় বলবেন কি?

এবার তাকীয়া সম্পর্কিত পরবর্তী রেওয়ায়েতে যাওয়া যাক, শায়খ কুলাইনী (মৃত. ৩২৯ হিজরী, বাগদাদ) সাহেব রচিত ‘আল কাফী’ কিতাবে এসেছে, محمد بن يحيى، عن أحمد بن محمد بن عيسى، عن محمد بن خالد، والحسين بن سعيد جميعا، عن النضر بن سويد، عن يحيى بن عمران الحلبي، عن حسين بن أبي العلاء عن حبيب بن بشر قال: قال أبو عبد الله (عليه السلام): سمعت أبي يقول: لا والله ما على وجه الأرض شئ أحب إلي من التقية، يا حبيب إنه من كانت له تقية رفعه الله، يا حبيب من لم تكن له تقية وضعه الله، يا حبيب إن الناس إنما هم في هدنة. فلو قد كان ذلك كان هذا

অর্থ, ইমাম জাফর আস সাদেক তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (নাকি) তাঁকে বলতে শুনেছেন, এই জমিনের উপর আমার নিকট তাকীয়া অপেক্ষা অধিক প্রিয় বস্তু আর নেই। যে তাকীয়া করবে আল্লাহ তাঁর মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন। আর যে তাকীয়া করবে না আল্লাহ তার মর্যাদা কমিয়ে দেবেন। হে হাবীব! নিশ্চয়ই সমস্ত মানুষ যুদ্ধবিগ্রহ অবস্থায় আছে। অতএব যদি তেমনি হয় তাহলে তাকীয়া করবে, না হয় করবেনা।

মানে বুঝা গেল, যে কপটতা করবে আল্লাহ তাঁর মর্যাদা বাড়িয়ে দেন, আর যে তা করবে না আল্লাহ তাঁদের লাঞ্ছিত করে পেছনে ফেলে দেন। তাকীয়াহ ব্যতীত দ্বিতীয় কোনো প্রিয়তম বস্তু এই জগতে আর কিছুই নেই। কত ফজিলত! কল্পনা করেছেন!! এজন্যই তাঁদেরকে যখন প্রশ্ন করা হয় যে,

১. তোমরা কি খলীফাতুল মুসলিমীন আবু বকর ও উমর (রাযি.)-কে কাফের মানো? যা উসূলে কাফী কিতাবেও লিখা আছে! তারা উত্তরে বলবে, না মানি না।

২. তোমরা খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উসমান (রাযি.)-কে বেশ্যার ছেলে, মদখোর ইত্যাদি মানো কি? যা তোমাদের ‘হায়াতুল কুলুব’ কিতাবেও লিখা আছে। তারা উত্তরে বলবে, না মানি না।

৩. তোমরা কি আল্লাহর কালাম পবিত্র কুরআনকে বিকৃত হয়ে গিয়েছে এমন বিশ্বাস রাখো? যা উসূলে কাফী কিতাবেও লিখা আছে। তারা উত্তরে বলবে, না মানি না।

৪. তোমরা কি বিশ্বাস করো যে, তোমাদের বারো (১২) ইমামগণ মতান্তর ১ লক্ষ কিবা ২ লক্ষ ২৪ হাজার নবী রাসূল থেকেও উত্তম? যা উসূলে কাফী কিতাবেও লিখা আছে। তারা উত্তরে বলবে, না মানি না।

৫. তোমরা কি বিশ্বাস করো যে, ইমাম মাহদীর আগমন হলে মুসলিম উম্মাহার কলিজার টুকরো সাইয়্যিদা উম্মুল মুমিনীন আয়েশা সিদ্দিকা (রাযি.), যিনি দুনিয়া ও আখিরাতে নবীজির পত্নী, যার বিশুদ্ধ চরিত্রের সাফাই দিয়ে কুরআনের আয়াত (সূরা নূরের প্রায় ১০ আয়াত) নাযিল হয়েছে, সেই আম্মাজান আয়েশার বিরুদ্ধে জিনা-ব্যভিচারের অভিযোগ দাঁড় করিয়ে হদ কায়েম করবেন? নাউযুবিল্লাহ। তারা উত্তরে বলবে, না এমনটা আমরা বিশ্বাস করি না, এটা আমাদের আকিদাও নয়।

৬. তোমরা কি বিশ্বাস করো যে, ইমাম মাহদীর আগমনের পর সর্বপ্রথম কাজ হবে খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত আবু বকর এবং হযরত উমর (রাযি.) – উভয়কে নবীজির রওজা থেকে তুলে কাপড়চোপড় খুলে বিবস্ত্র করবেন আর উল্টা ঝুলিয়ে পেটাবেন? তারা উত্তরে বলবে, না মানি না।

এরূপ অসংখ্য প্রশ্ন ও ইবারত খুলে খুলে তাদের কিতাব থেকে দেখালেও তারা বলবে, না মানি না। এগুলো আমার/আমাদের আকিদা বিশ্বাস নয়। এরই নাম শীয়াবাদ, এরই নাম ইসলামের মূলে কুঠারাঘাতকারী জামাত। এরা বিধর্মীদের চেয়েও ইসলামের ঠান্ডা মাথার জঘন্য দুশমন। কিন্তু অধিকাংশ আহলে সুন্নাহ অনুসারী আমাদের মুসলিম ভাই বোন তাদের সম্পর্কে ভালোভাবে না জানার কারণে তাদের শুধুই বাহ্যিকরূপ আর জৌলুশ দেখেই ধোকায় পড়ে এবং পুরোপুরি অন্ধকারে নিপতিত হয়ে যায়। অথচ তাদের এই সমস্ত আকীদা বিশ্বাসের দরুন কোনো ঈমানদার মুসলমান তাদেরকে মুমিন মুসলিম মনে করলে নিজের ঈমান আর ইসলামটাই বরবাদ হয়ে যাবে, এতে কোনোই সন্দেহ নেই। (চলমান)।

দ্বিতীয় পর্ব পড়ুন

লিখক, তায়েফ হাসান খান, শীয়া মতবাদের উপর একজন স্পেশালিষ্ট ও গবেষক।

সম্পাদনায়, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here