শীয়া খোমেনীবাদ ২

0
শীয়া খোমেনীবাদ ২
  • খোমেনীবাদ : ২

শীয়া মতবাদ! ইরানের শীয়া বিপ্লবী নেতা ও শীয়া মতবাদের গুরু আয়াতুল্লাহ খোমেনী (১৯০২-১৯৮৯)-এর চিন্তাধারা ও কুফুরী মতবাদের উৎস :

আমি বলছি, আল্লাহর কসম! এগুলো সবই তাঁদের আকিদা বিশ্বাস। তারা তাকীয়া ও কিতমান (সত্য গোপনকরা)-এর নীতি অনুসরণ করে থাকে। তারা ভাবছে, এসব বললে বিপদ, আর মিথ্যা বললে হয় সওয়াব। তাই ঝটপট মিথ্যা বলে সওয়াব কামাই করছে। এঁদের কিতাব থেকে এমন এমন ইবারত দেখাব, ওয়াল্লাহি-আল্লাহ’র কসম! কলিজা ফেটে চৌচির হয়ে যাবে, ফিনকি দিয়ে সজোরে রক্ত বের হওয়া শুরু করবে। আপনার রাতের ঘুম হারিয়ে যাবে। আমি পাগল হয়ে যাবেন। শীয়াদের মতবাদ কতটা নিষ্ঠুর, খতরনাক আর আজেবাজে! মূল আলোচনায় যাওয়া যাক, চলুন!

খোমেনীর যুগে শীয়াবাদ!

ভূপৃষ্ঠের উপর শীয়া মতবাদের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ১১ই ফেব্রুয়ারী ১৯৭৯ সালে ইরানের শীয়াবিপ্লবী নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনী ইরানের রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত শীয়াদের একটি কিতাবও কোনো দিন ছাপানো হয়নি। সবগুলো কিতাবই ছিল কলমী নোসখা অর্থাৎ হাতে লিখা। তাঁদের ছাত্রদের মাঝেও সবচেয়ে যোগ্য সাগরেদকে যে যে গ্রন্থ দেয়া হত তাঁর সবই হাতে লিখা থাকত। কোনো দিন এই কিতাবগুলো ছাপা হত না। কারণ তাঁদের আকিদা ছিল ভারি দুষ্টু ও খতরনাক। আজকের আধুনিক দুনিয়ার ৯০% শীয়া মতবাদের অনুসারীকে আপনি মনের দিক থেকে একদমই দুর্বল আর অসহায় পাবেন। কারণ এটাই।

আবার পূর্বের কথায় ফিরে আসলাম। শায়খ আল কুলাইনী সাহেবের ‘আল কাফী’ (الكافى) কিতাবের ভাষ্য, “তাকীয়া দ্বীনের ১০ ভাগের ৯ ভাগ। যে তাকীয়া করবে আল্লাহ তাকে সম্মানিত করবেন আর যে তাকীয়া করবে না আল্লাহ তাঁর মর্যাদা কমিয়ে দেবেন।” কী সব কথা! সত্য গোপন করতে হবে কেন? এটি ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য? এটি কি কপটতা নয়? আপনার অফিসের একজন সামান্য কর্মচারীও যদি আপনার সাথে এমন কপট আচরণে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, আপনি কী করবেন? পুরষ্কার দেবেন? আপনার কোম্পানির কী হাশর তখন? দুনিয়ার সমস্ত নিয়ম কানুন আস্তে আস্তে ভেঙ্গে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে কিনা? যাইহোক, মুহাম্মদ ইবনে ইয়াকুব ইবনে ইসহাক আল কুলাইনী (আরবী : محمد بن يعقوب بن إسحاق الكليني) (মৃত. ৩২৯ হিজরী, বাগদাদ) ‘উসূলে কাফী’-তে কিতমান (كتمان)-এর আরেকটি অধ্যায় রয়েছে। তাতে একটি রেওয়ায়তে (হাদীস) এসেছে, علي بن إبراهيم، عن أبيه، عن ابن أبي عمير، عن يونس بن عمار، عن سليمان ابن خالد قال: قال أبو عبد الله (عليه السلام): يا سليمان إنكم على دين من كتمه أعزه الله ومن أذاعه أذله الله

অর্থ, ইমাম জাফর আস সাদেক তাঁর ছাত্র সোলাইমানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হে সোলাইমান! তোমরা যে দ্বীন বা ধর্মের উপর রয়েছ, তা সর্বদা গোপন রাখবে। যে এই ধর্মকে গোপন রাখবে, আল্লাহ তাঁকে ইজ্জত দান করবেন। আর যে ফাঁস করে দিবে আল্লাহ তাকে লাঞ্ছিত করে ছাড়বেন।’ (রেফারেন্স, আল কাফী ফীল উসূল ওয়াল ফুরূ)।

  • বস্তুতপক্ষে এই সমস্ত কারণেই বিগত সাড়ে চৌদ্দশত বছরেও তারা কোনো কিতাব ছাপে নাই। সব কিতমান তথা গোপন করে রাখত। যার প্রয়োজন হত সে হাতে লিখা নোসখা তৈরি করে নিত। এই তো মাস তিনেক আগের কথা। আমি দারুলউলুম দেওবন্দের প্রতিষ্ঠাতা মৌলবী কাশেম নানুতবী সাহেবের একটি বই অধ্যায়ন করছিলাম। তিনিও স্বীকার করেছেন যে, তিনি কোনো দিন উসূলে কাফী সচক্ষে দেখেননি। আর শীয়ামতবাদের রদে তিনিও যে কিতাবখানা লিখেছেন, তা তিনি শাহ আব্দুল আজীজ মুহাদ্দিস আদ-দেহলভী (রহ.) এর লিখা ‘তোহফায়ে ইসনা আশারিয়া‘ গ্রন্থের উপর নির্ভর করেই লিখেছিলেন। এবার আপনি নিজেই চিন্তা করুন, ভাবুন তো একবার! কি পরিমান কিতমান করতো এরা! কত জঘন্য সত্য গোপনকারী হলে তারা নিজেদের দ্বীন ধর্ম সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ সমস্ত আর্গুমেন্ট গুলো গোপন করে মানুষকে কাছে টানার চেষ্টায় থাকত! বর্তমানেও আপনি অনলাইনে বহু শীয়া মতবাদিকে সূন্নী মোড়কে খোঁজে পাবেন, পরিচয় গোপন করে লিখা লিখি করে যাচ্ছে। বেশভূষায় শীয়া মনে হবেনা। প্রয়াত মওলানা নূরুল ইসলাম ফারুকি, চাঁদপুরের বাহাদুর শাহ মুজাদ্দেদী, ঢাকা কমলাপুরের শায়খ গোলাম মওলা নকশবন্দী, কথিত ইমাম হায়াত সহ বহু ছদ্মবেশী। কিতমান আর তাকীয়ায় বিশ্বাসী এরা। কিন্তু আপনার সেই সাধ্য নেই যে, আপনি এদের চিহ্নিত করতে পারবেন!

১৯৭৯ সালে যখন খোমেনী ইরানের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে তখন তিনি বিভিন্নস্থানে খুতবাহ প্রদান করেন। তাঁর সমস্ত খুতবাহ বা ভাষণ একত্র করে ‘সহীফায়ে নূর’ নামে ছাপানো হয়। এই সহীফায়ে নূর প্রায় ৩০ খণ্ডেরও বেশি হবে। তাতে খোমেনীর ৭০০ এরও অধিক ভাষণ বা খুতবাহ সংকলিত হয়েছে। এই সহীফায়ে নূরের ৩ নম্বর ভাষণটির অংশবিশেষ আজ এখানে উল্লেখ করে মূল আলোচনায় চলে যাব, ইনশাআল্লাহ।

ইরানের শীয়া মতবাদের পুরোধা আয়াতুল্লাহ খোমেনী সাহেব তার ঐ ৩ নম্বর ভাষণে বলেছেন, امام کا حکم یہ تھا کہ مذہب کو چھپاؤ گے عزت پاو گے مذہب کو ظاہر کرو گے ذلیل ہو جاؤ گے ۔ لیکن جو حکومت اللہ نے مجھے عطا فرمائی ہے یہ چودہ سو سال سے شیعہ کو حکومت کبھی نہیں ملی اس لیے کہ جو شیعہ حکمران بنا یا وہ لا دین تھا یا وہ ملحد تھا یا وہ سنی کی زیر اثر تھا ۔ لیکن میں آج پہلا تن ہے تنہا حکمران ہوں میں شیعہ مجتہد ہوں میں علی کا نائب ہوں میں امام کا نائب ہوں ۔ یہ پہلی حکومت چودہ سو سال میں شیعہ کی قائم ہوئی ہے ۔ اسی لیے میں علی المرتضی امام کے اس حکم کو منسوخ کر کے اعلان کرتا ہوں کہ شیو! اپنی مذہب کو ظاہر کرو پہلے مذہب کو چھپانا عبادت تھا اب ظاہر کرنا عبادت ہے ۔

অর্থ, খোমেনী সাহেব বলেন, ইমামদের হুকুম ছিল, যে ধর্মকে লুকিয়ে রাখবে সে সম্মানিত হবে। ধর্মকে যে প্রকাশ করবে সে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবে। কিন্তু যে রাজত্ব আল্লাহ আমাকে আজ প্রদান করেছেন এরূপ রাজত্ব ১৪শত বছরেও কোনো শীয়া পায় নি। এরূপ রাজত্ব না পাওয়ার কারণ হল, আমার পূর্বে যাঁরাই ক্ষমতা পেয়েছিলাম, হয় তারা লা-দ্বীন অর্থাৎ নাস্তিক ছিলাম, না হয় মুলহিদ ছিলাম আর না হয় সুন্নীদের দ্বারা প্রভাবিত ছিলাম। কিন্তু আজ আমি একা ও একক রাষ্ট্রপ্রধান। সেই সাথে আমি শীয়া মুজতাহিদ, হযরত আলীর নায়েব, ইমামের নায়েব। এই রাজত্ব আমার দ্বারা ১৪শত বছর পর শীয়াদের প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এজন্য আমি আলী আল মর্তুজার নায়েব বা স্থলাভিষিক্ত। তাই আজ আমি আলী আল মর্তুজার সেই হুকুমকে মানসূক (রহিত) করে ঘোষণা দিচ্ছি, হে শীয়াগণ! নিজেদের ধর্মকে প্রকাশ করো। আগে শীয়া মতবাদকে লুকানো ইবাদত ছিল, এখন প্রকাশ করা ইবাদত। (মূল ভাষণের উর্দূ তর্জমার বাংলা)।

এই ঘোষণা করে সে শুধু বসে থাকেনি। তৎকালীন সাড়ে ৭ কোটি টাকা ব্যয় করে শীয়া মতবাদের সমস্ত গ্রন্থ আরবী, ফার্সি, উর্দূ ও ইংরেজিতে ছাপানো শুরু হয়। তাঁর এই অসামান্য খিদমতের কারণে সাড়ে চোদ্দশত বছর পর সমগ্র বিশ্ব তাঁদের আসল চেহারা দেখতে শুরু করে। যাঁরা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খোমেনীকে সাধুবাদ ও শুভেচ্ছা জানিয়েছিল, সেই তারাই তাঁদের ধর্মবিশ্বাস আর মতবাদ দেখে থুতু করতে শুরু করে। ইরানের জন্মসূত্রে বহু শীয়া তাদের আসল চেহারা উন্মোচন হওয়ার পর ইসলামের আহলে সুন্নাহ’র মতাদর্শ গ্রহণ করেন। বর্তমানে ইরানে আহলে সুন্নাহর প্রতিনিধিত্ব যাদের হাতে তাদের সিংহভাগই পূর্বে শীয়া ছিলেন। অনেককে খোমেনীর রাষ্ট্রযন্ত্র নির্যাতন করে হত্যা করেছে, আবার অনেকে জেলে।

যাইহোক, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই শীয়াদের থেকে মুসলিম বিশ্ব নিজেদের গুটিয়ে নেয়। দেওবন্দী আন্দোলনের বিশিষ্ট বুযূর্গ উস্তাদ মানযুর নোমানী সাহেব শীয়াদের তাকফির করেন। একই ভাবে এই তাকফিরি ফতওয়া আসতে থাকে বিশ্বের বড় বড় এদারাগুলো থেকেও। পাকিস্তান, মিশর, লেবাননের বৈরুত এবং সৌদি আরব থেকেও। মুজাদ্দিদে মিল্লাত শাহ আব্দুল আজীজ দেহলভী (রহ.) বহু পূর্বেই তাদেরকে তারদিদ করে জাতিকে পথ দেখিয়ে যান।

সুতরাং এখন আমি যে তথ্যগুলো প্রচার করছি, এজন্য আমি একা দায়ী নই, বরং আপনাদের জনাব খোমেনী সাহেবই এজন্য দায়ী। যদি রাগ ও বিদ্বেষ করতে হয়, তাঁকে করুন। আমি ধন্যবাদ জানাই, খোমেনী সাহেবকে। যিনি সাহস করে শীয়া মতবাদের বীভৎস চেহারার উপর থেকে পর্দাটা সরিয়ে নিয়েছেন। আমার ভাষায় বললে, তিনি শীয়া মতবাদের চেহারা থেকে নেকাব খুলে সেটিকে একদমই বিবস্ত্র করে দিয়ে গিয়েছেন। আমাদেরকে আপনাদের আসল চেহারাটা দেখার মত সুযোগ করে দিয়ে গেছেন। আমার একটি বড় খারাপ অভ্যাস আছে। আমি যাকে খুব পছন্দ করি, তাঁকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানার চেষ্টা করি। আমি যেহেতু মাওলানা আবুল আলা মওদূদী সাহেবের দ্বারা এক সময় বেশ প্রভাবিত ছিলাম, তাই জনাব খোমেনীকে অনেক বড় মুজাদ্দিদ ও ইমাম মানতাম।

আমার পুরনো লিখাগুলো দেখেন। আমি খোমেনীর প্রশংসায় কেমন পঞ্চমুখ ছিলাম। কিন্তু সেই বদ-অভ্যাসের দরুন তাঁকেও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে শুরু করি। ফলে জাহির হয় তাঁর মাকরূহ চেহারা। যাঁর খিদমতে আজ শীয়া মতবাদের হাকীকত জানতে পারি। চলুন, তাঁকে দিয়েই আগে শুরু করি। চলবে…

আগের পর্ব পড়ুন

লিখক, তায়েফ হাসান খান, শীয়া মতবাদের উপর একজন স্পেশালিষ্ট ও গবেষক।

সম্পাদনায়, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here