শীয়া, খ্রিস্টান মিশনারী আর নাস্তিকদের ভিত্তিহীন আপত্তির জবাব
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
- আলোচ্য বিষয় : (১) রজমের আয়াত (২) বয়স্কদের দশ ঢোক দুধ পান করা (৩) পাঁচ ঢোক দুধ পান করা, ইত্যাদি মর্মে আয়াতগুলো কোথায়? (৪) ছাগলে হযরত আয়েশা (রা.)-এর ছহিফা খেয়ে ফেলা শীর্ষক বর্ণনার জবাব (৫) আবু হুযায়ফা’র পালকপুত্র প্রাপ্ত বয়স্ক সালিমকে দুধ পান করানোর উপর উত্থাপিত আপত্তির জবাব। এখানে এই ৫ নং আপত্তির জবাব অন্য পাতায় দেয়া হয়েছে। পড়তে ক্লিক করুন।
- পাঠকবৃন্দ, অত্র লিখাটির একদম শেষে অভিযোগকারীদের উদ্দেশ্যে মাত্র দুইখানা প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া হয়েছে। তা অবশ্যই পড়বেন।
প্রথমে সংক্ষিপ্ত জবাব : বৃদ্ধ-বৃদ্ধার ব্যাপারে রজম, বয়স্ক লোককে (দুধ সম্পর্কের হুরমত সাব্যস্ত করতে) দশ ঢোক অতপর পাঁচ ঢোক দুধ পান সংক্রান্ত আয়াতগুলো মানসুখ বা রহিত হয়ে যায়। যার কারণে এগুলো পরবর্তীতে কুরআন যখন গ্রন্থবদ্ধ করা হয় তখন কুরআনে অন্তর্ভুক্ত করা থেকে বাহিরে রাখা হয়।
- প্রমাণ স্বরূপ দেখুন, জনৈক সাহাবী রাসূল (সা.)-কে যখন বললেন, يا رسول الله أكتبني آية الرجم قال لا أستطيع অর্থাৎ হে আল্লাহর রাসূল আমাকে রজমের আয়াতটি লিখতে অনুমতি দিন। তখন তিনি (সা.) উত্তর দিলেন, আমার পক্ষে তা সম্ভব নয়। অর্থাৎ এটি তেলাওয়াত হিসেবে গণ্য নয়। (সুনানু বায়হাক্বী আল কোবরা ৮/২১১)।
প্রশ্ন আসতে পারে যে, কুরআনে বিদ্যমান এমনও তো বহু আয়াত রয়েছে যাদের সম্পর্কে ‘রহিত’-এর হুকুম রয়েছে। অথচ সেগুলো কুরআন থেকে বাদ পড়েনি! এর উত্তর দিয়েছেন শারেহে সহীহ মুসলিম ইমাম নববী (রহ.)। তিনি বলেন, মানসূখ বা রহিত তিন (৩) প্রকারের হয়ে থাকে। তন্মধ্যে এক প্রকারের মানসূখ বা রহিত হচ্ছে, তেলাওয়াত এবং হুকুম (বিধান) উভয়টাই রহিত বা বাদ পড়ে যাওয়া। এর উদাহরণ হচ্ছে, ‘দশ ঢোক দুধ পান করা সংক্রান্ত আয়াত‘। আরেক প্রকারের মানসূখ বা রহিত হচ্ছে, তেলাওয়াত রহিত হয়ে যাওয়া তবে কিন্তু হুকুম (বিধান) কার্যকরী অবস্থায় থাকা। এর উদাহরণ হচ্ছে, ‘বৃদ্ধ ও বৃদ্ধাদের জন্য অবতীর্ণ রজম সংক্রান্ত আয়াত‘। যেমন, (وَالشّيْخُ وَالشَّيخَةُ إِذَ زَنَيَا فَارْجُمُوْهُمَا الْبَتَّةَ) অর্থাৎ বৃদ্ধ (বিবাহিত) পুরুষ ও বৃদ্ধা (বিবাহিতা) নারী যদি ব্যভিচার করে, তাদেরকে অবশ্যই পাথর মেরে হত্যা করো।” (মুয়াত্তা ইমাম মালিক)। আর ‘পাঁচ ঢোক দুধ পান করার মাধ্যমে মাহরাম সাব্যস্ত হয়ে যাওয়ার আয়াত।‘ যেমন, সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৩৪৬৬। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) হতে বর্ণিত আছে, (আরবী পাঠ) حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، قَالَ قَرَأْتُ عَلَى مَالِكٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بَكْرٍ، عَنْ عَمْرَةَ، عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّهَا قَالَتْ كَانَ فِيمَا أُنْزِلَ مِنَ الْقُرْآنِ عَشْرُ رَضَعَاتٍ مَعْلُومَاتٍ يُحَرِّمْنَ . ثُمَّ نُسِخْنَ بِخَمْسٍ مَعْلُومَاتٍ فَتُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَهُنَّ فِيمَا يُقْرَأُ مِنَ الْقُرْآنِ . অর্থাৎ তিনি বলেন, কুরআনে এই আয়াতটি নাযিল হয়েছিল, عَشْرُ رَضَعَاتٍ مَعْلُومَاتٍ ‘দশবার দুধপানে হারাম সাব্যস্ত হয়।’ তারপর তা রহিত হয়ে যায় خَمْسٍ مَعْلُومَاتٍ (তথা পাঁচবার পান দ্বারা হারাম সাব্যস্ত হয়)-এর দ্বারা। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেন অথচ ঐ আয়াতটি কুরআনের আয়াত হিসাবে তিলাওয়াত করা হত। (সহীহ মুসলিম, كتاب الرضاع)। উল্লেখ্য, ইমাম শাফেয়ী (রহ.) সহ কেউ কেউ বলেছেন, দুগ্ধপোষ্য শিশুর সাথে মাহরামের বিধান সাব্যস্ত হতে হলে কমপক্ষে পাঁচ ঢোক দুধ পান করানো জরুরী। অপরদিকে জামহূর উলামায়ে কেরাম বলেছেন, পাঁচ ঢোক সংক্রান্ত আয়াতের তেলাওয়াতের ন্যায় তার হুকুমও এখন মানসূখ বা রহিত। বরং একজন দুগ্ধপোষ্য শিশু তিন ঢোক দুধ পান করাই হুরমত সাব্যস্ত হওয়ার জন্য যথেষ্ট। জামহূরের মতের পক্ষে দলিল আর যুক্তি খুবই শক্তিশালী। কারণ, ইবনে মাজাহ-তে দশ-পাঁচ ঢোক দুধ পান করার বিধানটি (لَقَدْ نَزَلَتْ آيَةُ الرَّجْمِ وَرَضَاعَةُ الْكَبِيرِ عَشْرًا) বয়স্ক লোকের সাথে সম্পর্কিত ছিল বলেই বর্ণনায় এসেছে। আর বর্তমানে সেটি মানসূখ হওয়াটা হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত রেওয়ায়েত দ্বারাও সুস্পষ্ট প্রমাণিত। কেননা রাসূল (সা.) বলেছেন, انْظُرْنَ إِخْوَتَكُنَّ مِنَ الرَّضَاعَةِ فَإِنَّمَا الرَّضَاعَةُ مِنَ الْمَجَاعَةِ অর্থাৎ “তোমরা ভাল করে দেখে নিও। কেননা রাযআত (দুধ মা সম্পর্ক) সাব্যস্ত হয় যখন দুধপানের দ্বারা সন্তানের ক্ষুধা নিবারণের বয়স থাকে (সহীহ মুসলিম, অধ্যায় ১৮, হাদীস নং ৩৪৭৫)।” আশাকরি এবার নিশ্চিত হতে পেরেছেন যে, পাঁচ ঢোক দুধ পান সংক্রান্ত হুকুমের উপরও আমল নেই কিভাবে! এটিও পুরোপুরি রহিত ও বাতিল, এজন্যই এর উপরেও আমল নেই। এবার এই হাদীস খানার মর্মার্থও সুস্পষ্ট করে দেব। রাসূল (সা.) থেকে পরিষ্কার উল্লেখ আছে, لاَ تُحَرِّمُ الْمَصَّةُ وَالْمَصَّتَا অর্থাৎ দু’এক চুমুক হারাম করে না (সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৩৪৫৯)। ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) এটির ব্যাখ্যায় লিখেছেন, فان مفهومه ان الثلاث تحرم অর্থাৎ হাদীসের ঐ কথা দ্বারা উদ্দেশ্য হল, নিশ্চয়ই তিন চুমুক দ্বারা হুরমত সাব্যস্ত হয়ে যাবে। (ফাতহুল বারী ফী শরহে সহীহ বুখারী)। এবার মুয়াত্তা ইমাম মালেক গ্রন্থ থেকে সহীহ সনদে দুধপানের আদর্শ বয়স সম্পর্কে এমন একটি ‘আছার’ (آثار) উল্লেখ করব যেখানে একাধিক যুগশ্রেষ্ঠ ফকিহ ও ইমামগণের ফতুয়া বিদ্যমান। তা এইরূপ, بَاب رَضَاعَةِ الصَّغِيرِ وَحَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ أَنَّهُ قَالَ سَمِعْتُ سَعِيدَ بْنَ الْمُسَيَّبِ يَقُولُ لَا رَضَاعَةَ إِلَّا مَا كَانَ فِي الْمَهْدِ وَإِلَّا مَا أَنْبَتَ اللَّحْمَ وَالدَّمَ وَحَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ ابْنِ شِهَابٍ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ الرَّضَاعَةُ قَلِيلُهَا وَكَثِيرُهَا تُحَرِّمُ وَالرَّضَاعَةُ مِنْ قِبَلِ الرِّجَالِ تُحَرِّمُ قَالَ يَحْيَى وَسَمِعْت مَالِك يَقُولُ الرَّضَاعَةُ قَلِيلُهَا وَكَثِيرُهَا إِذَا كَانَ فِي الْحَوْلَيْنِ تُحَرِّمُ فَأَمَّا مَا كَانَ بَعْدَ الْحَوْلَيْنِ فَإِنَّ قَلِيلَهُ وَكَثِيرَهُ لَا يُحَرِّمُ شَيْئًا وَإِنَّمَا هُوَ بِمَنْزِلَةِ الطَّعَامِ অর্থাৎ, ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ (রহ.) বলেন, আমি সাঈদ ইবন মুসাইয়েব (রহ.)-কে বলতে শুনেছি, স্ত্রীলোকদের সন্তানদের দুধ পান করানো তখন গ্রহণযোগ্য হবে যখন তারা দোলনাতে থাকে এবং যা গোশত ও রক্ত সৃষ্টি করে। ইবন শিহাব (রহ.) বলতেন, রাযা’আত (দুধ পান করান) অল্প হোক আর বেশি হোক তা দ্বারা মাহরাম সাব্যস্ত করবে। আর রাযা’আত পুরুষের পক্ষের আত্মীয়তাও হারাম করবে। ইয়াহইয়া (রহ.) বলেন, আমি মালেক ইবনে আনাস (রহ.)-কে বলতে শুনেছি, সন্তানদের দুধ পান অল্প হোক, বেশি হোক, যদি তা দুই বৎসরের মধ্যে হয় তবে হারাম করিবে। তিনি বলেন, দুই বৎসরের পরে হইলে অল্প হোক আর বেশি হোক তা কিছুই হারাম করবে না। তা হচ্ছে খাদ্যদ্রব্যের মত। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, অধ্যায় ৩০; হাদীস নং ১২৭৮)। সে যাইহোক, দশ-পাঁচ ঢোক দুধ পান সংক্রান্ত আয়াতগুলোর তেলাওয়াত মানসূখ তথা রহিত হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে উম্মাহ সর্বান্তকরণে একমত।
মূলত এজন্যই রজম আর দশ-পাঁচ এর আয়াতগুলো পবিত্র কুরআনে স্থান পায়নি। আর এইধরণের মানসূখ বা রহিতকরণের বিধিমালা স্বয়ং আল্লাহতালাই আয়াত নাযিল করে রাসূল (সা.)-এর যুগ থেকে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছেন, যাতে পরবর্তীতে এ নিয়ে আর কোনো সংশয় তৈরি না হয়। যেমন সূরা বাকারা, আয়াত নং ১০৬। বলা হয়েছে যে, ‘আমি কোনো আয়াত (বাক্য) রহিত করলে অথবা ভুলিয়ে দিলে তা থেকে উত্তম কিংবা তার সমতুল্য কোনো আয়াত আনয়ন করি। তুমি কি জান না যে, আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান?’ এই সম্পর্কে জানতে হলে রাসূল (সা.) থেকে রহিত সংক্রান্ত হাদীসগুলো, উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা.) হতে সহীহ সূত্রে প্রাপ্ত বর্ণনা এবং অন্যান্য সাহাবী আর তাবেয়ী এবং যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও মুফাসসীরদের তাহকিক ও তাখরিজ সম্পর্কে ভালোভাবে জ্ঞান লাভ করতে হবে। ভাসাভাসা জ্ঞান নিয়ে কখনো কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া বা কারো সাথে তর্কে লিপ্ত হওয়া খুবই অন্যায় এবং ঈমানের জন্য বড্ড খতরনাক হবে! সংক্ষেপে উত্তর দিলাম। প্রিয় পাঠকপাঠিকা! আমি কিন্তু এখনো ‘ছাগলে বুঝি কুরআন খাইয়া ফেলে?’ শিরোনামে আলোচনায় আসিনি। মাত্র ইসলাম বিরোধীদের তিনটি আপত্তির জবাব দিলাম। চলুন, এবার এই বিষয়ে আপত্তির জবাব দেয়া যাক!
প্রধান আপত্তির জবাব :
এই পর্যায় দলিল প্রমাণ সহ জবাবটি সাধারণদের বুঝানোর জন্য আমি প্রথমে ছোট্ট একটা ঘটনা বলতে চাই। গত ৩১ ই মার্চ ২০২২ ইং এর একটি নিউজ পড়েছিলাম। নিউজটি আমেরিকার একটি দুর্ঘটনা সম্পর্কে। নিউজটির শিরোনাম ছিল ‘আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত ৮০ গাড়ি’। ভেতরে লিখা ছিল এইরকম, যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া রাজ্যে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। রাজ্যের একটি মহাসড়কে ওই দুর্ঘটনায় একসঙ্গে ৮০টি গাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় অন্তত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও ২৪ জন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস এ খবর দিয়েছে। এবার প্রভাবশালী আরেকটি মিডিয়া সংবাদটি কিভাবে কভারেজ দিচ্ছে দেখুন, সিএনএন জানিয়েছে, হঠাৎ ভারী তুষারপাতে দৃষ্টিসীমা কমে আসায় যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার একটি মহাসড়কে একসঙ্গে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে অন্তত ৮০টি গাড়ি, তাতে মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। খুবই প্রভাবশালী দুইটি মিডিয়ায় গাড়ী বিধ্বস্ত হওয়া আর মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে নিউজ এক ও অভিন্ন। এখন মনে করুন, উল্লিখিত দুটি প্রভাবশালী ও নির্ভরযোগ্য মিডিয়ার বিপরীতে অপরিচিত কোনো মিডিয়া যেমন, News BNN কিংবা Energy Bangla এমন কিছু তথ্য দিল যা নিউইয়র্ক টাইমস আর সিএনএন দেয়নি। অথবা এই দুটির সমপর্যায়ের আর কোনো মিডিয়াও দেয়নি। এমতবস্থায় আমরা কি নির্ভরযোগ্য ও প্রভাবশালী মিডিয়ার বিপরীতে প্রচারিত এমন কোনো সংবাদ বিশ্বাসযোগ্য মনে করতে পারি যা যুক্তি আর সুস্থ্যবিবেকও গ্রহণ করেনা? আমি কী বুঝাতে চেয়েছি তা আশাকরি বুঝতে পেরেছেন! এবার আসুন, যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে অপেক্ষা করছি সেদিকে!
নাস্তিক, শীয়া (ইসরা আশারিয়া সম্প্রদায়) আর খ্রিস্টান মিশনারীদের আপত্তিগুলো একদমই ভিত্তিহীন! এতটাই ঠুনকো আর দুর্বল যে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতও নয়। ইসলামের ইতিহাস আর সহীহ হাদীস সম্পর্কে এবং বিশিষ্ট যুগ ইমামগণের তাহকিক তাখরিজ সম্পর্কে যাদের একটু পড়াশোনা আছে তারা বরং আপত্তিকারীদের বালখিল্যধরণের আপত্তি শুনে শুধুই হাসবে!
মোটা দাগে উত্তরটি এরকম। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত যে হাদীসটি নিয়ে ওরা উল্লিখিত আপত্তিটি করে থাকে সেটি তিনটি সূত্রে বর্ণিত। তন্মধ্যে (ক) হযরত ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আল আনসারীর সূত্রে (সহীহ মুসলিম হা/৩৪৬৭), (খ) বিখ্যাত ফকিহ হযরত মালেক ইবনে আনাসের সূত্র (মুয়াত্তা মালেক, كتاب الرضاع হাদীস নং ১২৮৪), (গ) মুহাম্মদ ইবনে ইসহাকের সূত্রে (মুসনাদে আহমদ ৪৩/৩৪৩)। এবার বর্ণনাটি আরবী সহ উল্লেখ করব তারপর বুঝিয়ে দেব যে, উপরে ঐ তিন ব্যক্তির নাম আমি কিজন্য ব্যতিক্রম করে উল্লেখ করলাম! নিচের ৩ টি হাদীস সনদ সহ পড়ুন!
(ক) সহীহ মুসলিম থেকে : (আরবীপাঠ) حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ الْقَعْنَبِيُّ، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ بِلاَلٍ، عَنْ يَحْيَى، – وَهُوَ ابْنُ سَعِيدٍ – عَنْ عَمْرَةَ، أَنَّهَا سَمِعَتْ عَائِشَةَ، تَقُولُ – وَهْىَ تَذْكُرُ الَّذِي يُحَرِّمُ مِنَ الرَّضَاعَةِ – قَالَتْ عَمْرَةُ فَقَالَتْ عَائِشَةُ نَزَلَ فِي الْقُرْآنِ عَشْرُ رَضَعَاتٍ مَعْلُومَاتٍ ثُمَّ نَزَلَ أَيْضًا خَمْسٌ مَعْلُومَاتٌ . অর্থাৎ, আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা কা’নবী (রহ.) … আমরাহ (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি আয়েশা (রা.) কে বলতে শুনেছেন, যখন তিনি দুধপানের ঐ পরিমাণ সম্পর্কে আলোচনা করলেন যাদ্বারা হুরমত সাব্যস্ত হয়। আমরাহ বললেন যে, আয়েশা (রা.) বলেছিলেন, আল কুরআনে নাযিল হয় عَشْرُ رَضَعَاتٍ مَعْلُومَاتٍ “নির্ধারিত দশবার দুধপানে” তারপর নাযিল হয خَمْسٌ مَعْلُومَاتٌ “নির্ধারিত পাঁচবার দুধপানে।” (সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ ১৮/ দুধপান (كتاب الرضاع), হাদীস নাম্বার ৩৪৬৭)।
(খ) মুয়াত্তা ইমাম মালেক থেকে : (আরবীপাঠ) بَاب جَامِعِ مَا جَاءَ فِي الرَّضَاعَةِ وَحَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بَكْرِ بْنِ حَزْمٍ عَنْ عَمْرَةَ بِنْتِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَنْ عَائِشَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهَا قَالَتْ كَانَ فِيمَا أُنْزِلَ مِنْ الْقُرْآنِ عَشْرُ رَضَعَاتٍ مَعْلُومَاتٍ يُحَرِّمْنَ ثُمَّ نُسِخْنَ بِخَمْسٍ مَعْلُومَاتٍ فَتُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ فِيمَا يُقْرَأُ مِنْ الْقُرْآنِ قَالَ يَحْيَى قَالَ مَالِك وَلَيْسَ عَلَى هَذَا الْعَمَلُ অর্থাৎ, আ’মরা বিনত আবদির রহমান (রহ.) হইতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পত্নী আয়েশা (রা.) বলেছেন, কুরআনে যা অবতীর্ণ হয়েছিল তাতে দশ ঢোক দুধ পান করার কথা নির্ধারিত ছিল, যা হারাম করবে, তারপর তা রহিত হয়ে যায় নির্ধারিত পাঁচ ঢোক দুধ পান করার (অবতীর্ণ হুকুমের) দ্বারা। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের ওফাত হয় তখনও সেই পাঁচ ঢোক দুধ পানের (হুকুমের অংশ) সম্মিলিত আয়াত তিলাওয়াত করা হত। ইমাম মালিক (রহ.) বলেন, এর উপর আমল নেই। অর্থাৎ পাঁচ ঢোক দুধ পানের উপর আমল নেই। দুধ পান অল্প হোক বা বেশি হোক বিবাহ সম্পর্ক হারাম করবে। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, অধ্যায় ৩০; كتاب الرضاع হাদীস নং ১২৮৪)।
(গ) ইবনে মাজাহ ও মুসনাদে আহমদ থেকে : (আরবীপাঠ), بَاب رِضَاعِ الْكَبِيرِ حَدَّثَنَا أَبُو سَلَمَةَ يَحْيَى بْنُ خَلَفٍ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْأَعْلَى عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِسْحَقَ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي بَكْرٍ عَنْ عَمْرَةَ عَنْ عَائِشَةَ و عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الْقَاسِمِ عَنْ أَبِيهِ عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ لَقَدْ نَزَلَتْ آيَةُ الرَّجْمِ وَرَضَاعَةُ الْكَبِيرِ عَشْرًا وَلَقَدْ كَانَ فِي صَحِيفَةٍ تَحْتَ سَرِيرِي فَلَمَّا مَاتَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَتَشَاغَلْنَا بِمَوْتِهِ دَخَلَ دَاجِنٌ فَأَكَلَهَا. অর্থাৎ, আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রজম সম্পর্কিত আয়াত এবং বয়স্ক লোকেরও দশ ঢোক দুধপান সম্পর্কিত আয়াত নাযিল হয়েছিল, যা একটি সহীফায় (লিখিত) আমার খাটের নিচে সংরক্ষিত ছিল। যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেন এবং আমরা তাঁর ইন্তিকালে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লাম, তখন একটি ছাগল এসে তা খেয়ে ফেলে। (সুনানে ইবনে মাজাহ অধ্যায় ৯, كتاب النكاح হাদীস নং ১৯৪৪)। এই হাদীসটি মুসনাদে আহমদ খণ্ড নং ৪৩ পৃষ্ঠা নং ৩৪৩ এর মধ্যেও মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক এর সূত্রেই বর্ণিত হয়েছে।
এবার আসল কথায় চলুন, আপনি উপরে যথাক্রমে ক, খ এবং গ অংশে মোট তিনখানা হাদীস দেখতে পাচ্ছেন। খুব খেয়াল করে দেখুন, রজম আর বয়স্ক লোকদের দশ-পাঁচ ঢোক দুধ পান করানো সংক্রান্ত সম্পূর্ণ বিবরণ ক, খ অংশে যেমন রয়েছে তেমনি গ অংশেও রয়েছে। তবে কিন্তু অতিরিক্ত একটি কথা শুধুই ‘গ’ অংশেই রয়েছে। সেটি হচ্ছে, وَلَقَدْ كَانَ فِي صَحِيفَةٍ تَحْتَ سَرِيرِي فَلَمَّا مَاتَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَتَشَاغَلْنَا بِمَوْتِهِ دَخَلَ دَاجِنٌ فَأَكَلَهَا অর্থাৎ ‘যা একটি সহীফায় (লিখিত) আমার খাটের নিচে সংরক্ষিত ছিল। যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেন এবং আমরা তাঁর ইন্তিকালে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লাম, তখন একটি ছাগল এসে তা খেয়ে ফেলে।’ এই খণ্ডিত অংশটিকেই কেন্দ্র করে সমালোচকরা পবিত্র কুরআনের উপর ‘বিকৃতি’ সংঘটিত হবার আপত্তি তুলার দুঃসাহস করে। অথচ নির্বোধরা জানেই না যে, এই খণ্ডিত অংশটি সম্পূর্ণ অনির্ভরযোগ্য ও প্রত্যাখ্যাত। কেননা এই কথাটি সত্যিই যদি আয়েশা (রা.) বলতেন তাহলে অবশ্যই সহীহ মুসলিম, মুয়াত্তা ইমাম মালেক সহ আরও যতগুলো হাদীসের কিতাব রয়েছে সব জায়গায় সহীহ বর্ণনাসূত্রে উল্লেখ থাকত। অথচ সেভাবে কোথাও এর উল্লেখ পাওয়া যায়না। এই খণ্ডিত অংশটি শুধুই ‘মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক’ নামীয় একজন অনির্ভরযোগ্য রাবী থেকে পাওয়া যায়। যার নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে মুহাদ্দিসগণ রিজালশাস্ত্রের কিতাবগুলোতে হাজার বছর আগেই সতর্ক করে গেছেন। এ সম্পর্কে একটু পরেই আসছি। এখন আপনাকে আমি আবারও আগের কথায় ফিরিয়ে নিচ্ছি। আপনার মনে আছে তো, যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া রাজ্যে ভয়াবহ সেই সড়ক দুর্ঘটনার নিউজের কথা। সেখানে কিন্তু নিউইয়র্ক টাইমস আর সিএনএনের তথ্যে পুরো খবরটি এক ও অভিন্ন দেখেছি। কিন্তু বিপরীতে দুইটি দুর্বল মিডিয়ার সূত্রে আমরা অতিরিক্ত আরও যে কোনো তথ্যকে যা প্রথম দুই প্রভাবশালী মিডিয়ার সূত্রে উঠে আসেনি, অগ্রহণযোগ্য ও গুরুত্বহীন বলে আখ্যা দিয়েছিলাম। অনুরূপ এই ক্ষেত্রেও উম্মাহার বক্তব্য হচ্ছে, অতিব প্রভাবশালী দুইজন নির্ভরযোগ্য রাবী অর্থাৎ ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আল আনসারী (রহ.) এবং ইমাম মালেক ইবনে আনাস (রহ.) এঁদের বর্ণিত বর্ণনার বিপরীতে দুর্বল ও অনির্ভরযোগ্য রাবী মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক কর্তৃক এই বর্ণনা সম্পূর্ণ গুরুত্বহীন ও প্রত্যাখ্যাত। ফলে এর উপর ভিত্তি করে পবিত্র কুরআনের বিশুদ্ধতাকে চ্যালেঞ্জ করা নেহাত পাগলের প্রলাপ ছাড়া কিছুইনা।
মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক সম্পর্কে :
রিজালশাস্ত্রের কিতাব ইমাম যাহাবী সংকলিত ‘তাহযীবুত তাহযীব‘ এর খণ্ড নং ৯ পৃষ্ঠা নং ৪৫ থেকে – (১) ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) এর পুত্র শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ (রহ.) বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন, ابن اسحاق ليس بحجة অর্থাৎ ইবনে ইসহাক প্রমাণযোগ্য নয়। (২) শায়খ আইয়ুব ইবনে ইসহাক বলেন, আমি আহমদ ইবনে হাম্বলকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, হে আব্দুল্লাহর পিতা! ইবনে ইসহাক যদি একাকী কোনো হাদীস বর্ণনা করে তবে কি সেটি গ্রহণযোগ্য হবে? তিনি উত্তরে বললেন, না। (৩) তার সম্পর্কে আরও লিখা আছে, وضعفه يحيى بن معين في إحدى الروايات عنه ، وقال النسائي : ليس بالقوي ، وقال الدارقطني : اختلف الأئمة فيه ، وليس بحجة إنما يعتبر به অর্থাৎ ইমাম ইয়াহিয়া ইবনে মাঈন (রহ.) তার থেকে বর্ণিত একটি বর্ণনায় তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন, (৪) ইমাম নাসাঈ (রহ.) বলেছেন, সে দলিল প্রমাণের ক্ষেত্রে শক্তিশালী নয়। (৫) ইমাম দারে কুতনি (রহ.) বলেছেন, ইমামগণ তার ব্যাপারে মতানৈক্য করেছেন। তবে তার ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য মত হল, সে প্রমাণযোগ্য নয়। উল্লেখ্য, শায়খ আলবানী (রহ.) তার বর্ণিত রেওয়ায়েতটিকে ‘হাসান’ বলেছেন অথচ তার এই সিদ্ধান্ত পূর্ববর্তী মুহাক্কিক ইমামগণের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের পরিপন্থী। বরং মুহাম্মদ ইবনে ইসহাকের বর্ণনাটি আওসাক (اوثاق) রাবীর মুখালাফাত (বিরুদ্ধ) হওয়ায় শাজ (شاذ) এবং অগ্রহণযোগ্য (غير مقبول)। কেননা (৬) ‘তাহযীবুত তাহযীব’ গ্রন্থে লিখা আছে, قال حنبل بن إسحاق : سمعت أبا عبد الله يقول : ابن إسحاق ليس بحجة অর্থাৎ হাম্বল ইবনে ইসহাক ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.)-কে বলতে শুনেছেন, ইবনে ইসহাক প্রমাণযোগ্য নয়। (৭) আর ইবনে কুতায়বাহ (রহ.) বলেছেন, ألفاظ حديث مالك خلاف ألفاظ حديث محمد بن إسحاق ، ومالك أثبت عند أصحاب الحديث من محمد بن إسحاق অর্থাৎ ইমাম মালেক (রহ.) এর বর্ণিত হাদীসের পরিপন্থী শব্দে এসেছে মুহাম্মদ ইবনে ইসহাকের বর্ণিত হাদীস। আর হাদীসশাস্ত্রের সমস্ত মুহাদ্দিসের নিকট মুহাম্মদ ইবনে ইসহাকের চেয়ে ইমাম মালেক অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য। (তাবীলু মুখতালিফিল হাদীস পৃষ্ঠা নং ৪৪৫)। (৮) মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক কর্তৃক বর্ণিত ইবনে মাজাহ এবং মুসনাদে আহমদ গ্রন্থের হাদীসটির সনদে তিনি একাই। যেজন্য এর সনদ জঈফ বা দুর্বল। একথা বলেছেন, মুসনাদে আহমদ গ্রন্থের মুহাক্কিকগণ। যেমন মুসনাদে আহমদ (৪৩/৩৪৩) এর ব্যাখ্যা অংশে লিখা আছে, إسناده ضعيف لتفرد ابن إسحاق – وهو محمد – وفي متنه نكارة অর্থাৎ মুহাম্মদ ইবনে ইসহাকের স্বতন্ত্রতার কারণে এর বর্ণনাসূত্র দুর্বল আর তার মতনে (পাঠ্যটিতে) আপত্তি রয়েছে। (৯) ইমাম মাহমুদ আলূসী (রহ.) লিখেছেন, وأما كون الزيادة كانت في صحيفة عند عائشة فأكلها الداجن ، فمن وضع الملاحدة وكذبهم في أن ذلك ضاع بأكل الداجن من غير نسخ ، كذا في الكشاف অর্থাৎ আয়েশা (রা.) নিকট থাকা ছহিফাটি ছাগলে খেয়ে ফেলেছে, মর্মে অতিরিক্ত কথাটি মুলহিদদের বানানো আর তাদের মিথ্যাকথা। তারা (রজম আর বয়ষ্কদের দশ-পাঁচ ঢোক দুধ পান সংক্রান্ত) আয়াতগুলোকে মানসূখ তথা রহিত হওয়ার বিরোধিতা থেকেই ছাগলে খেয়ে ফেলেছে কথাটি তৈরি করেছে। (রূহুল মা’আনী ১১/১৪০)। (১০) ইমাম ইবনে হাযম (রহ.) বলেন, এই শব্দমালাগুলো মানসূখ হয়ে গেছে, এটাই বিশুদ্ধ কথা। আর আয়েশা (রা.) এর নামে চালিয়ে দেওয়া ছহিফায় লিপিবদ্ধ থাকা বিদ্যমান আয়াতগুলোর যা ছাগলে খেয়ে ফেলেছে বলে কথিত আছে সে প্রসঙ্গে কারোরই আগ্রহী হবার প্রয়োজন নেই। (আল মুহাল্লা ১২/১৭৭)।
শেষ কথা, পবিত্র কুরআনের বিশুদ্ধতা ও অক্ষুণ্ণতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে সমালোচকরা যেসব বর্ণনা আর যুক্তির আশ্রয় নেয় সবই দুর্বল আর অগ্রহণযোগ্য। যা উপরে দীর্ঘ আলোচনা হতে সহজেই বুঝতে পেরেছেন। আর মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক নামীয় রাবী (বর্ণনাকারী) সম্পর্কে তো জানলেনই। তো এমন একজন বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তির বর্ণনা; তাও আবার এই ব্যক্তি ছাড়া এধরণের কথা আর কেউই বলেছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না, এমন একটি কথায় আমরা কিভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতিশ্রুতিকে ভুলে যেতে পারি? অথচ সর্বাধিক বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য আমাদের প্রভূ আমাদেরকে পবিত্র কুরআনের সূরা আল হিজর আয়াত নং ৯-এর মধ্যে বলেছেন, إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ অর্থাৎ ‘নিশ্চয়ই আমরা এই যিকির (কুরআন) নাযিল করেছি এবং আমরাই এর সংরক্ষণকারী।’
ইসলাম বিরোধীদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন :
- (এক) কুরআনের উপর বর্তমান যুগের যারা এ সমস্ত অভিযোগের পেছনে দৌড়াচ্ছেন, তারা কি গত চৌদ্দশত বছরের ইতিহাসেও সাহাবী এবং তাবেয়ীর যুগেকার আরব ভুখণ্ডের কোনো ইসলাম বিরোধী থেকেও এই ধরনের অভিযোগ তুলার প্রমাণ দিতে পারবেন? (খ) কুরআন সংকলনের ইতিহাস থেকে আমরা পরিষ্কার শিক্ষা লাভ করেছি যে, বিশেষ বিশেষ সাহাবীদের অধিকাংশই কুরআন মুখস্ত করে রাখতেন। কুরআন সংকলন বোর্ডের ৪০ জন ক্যাবিনেট সদস্যগণের প্রধান হযরত যায়েদ ইবনে সাবেত (রা.)ও একজন কুরআনের হাফেজ ছিলেন। আবুবকর (রা.)-এর খেলাফত আমলে ভণ্ডনবী মুসায়লামা কাজ্জাবের বিরুদ্ধে ‘ইয়ামামা’-র যুদ্ধে প্রায় ৭০০ জন হাফেজে কুরআন শহীদ হয়েছিলেন। তাই প্রশ্ন আসে, তর্কের খাতিরে যদি মেনেও নিই যে, আয়েশা (রা.) হতে মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক এর বর্ণনায় ‘ছাগলে কুরআনের কিছু সংখ্যক আয়াত খেয়ে ফেলেছে’ কথাটি সত্য! এখন এই ছাগলে হযরত আয়েশা (রা.)-এর ছহিফার আয়াতগুলো খেয়ে ফেলার কারণে কি অসংখ্য অগণিত হাফেজে কুরআন সাহাবীর অন্তরে মুখস্থ থাকা আয়াতগুলোও খেয়ে ফেলেছিল? সুতরাং প্রমাণ আর যুক্তি কোনোটার মানদণ্ডেই নাস্তিক আর অন্যান্য সমালোচকদের উক্ত দাবী উত্তীর্ণ হতে পারেনা।
লিখক, মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম. এ এডমিন : মারকায উমর ডটঅর্গ। যোগাযোগ : ০১৬২৯-৯৪১৭৭৩