Home সংশয় নিরসন ও জবাব বয়স্কদের দুধ পান করানোর শরয়ী হুকুম

বয়স্কদের দুধ পান করানোর শরয়ী হুকুম

0
বয়স্কদের দুধ পান করানোর শরয়ী হুকুম

নাস্তিক মুরতাদদের একটি আপত্তি ও তার জবাব

বয়স্কদের দুধ পান করানো সম্পর্কে নাস্তিকদের আপত্তি খণ্ডন

নাস্তিকরা নিন্মোক্ত হাদীস দেখিয়ে বলতে চায় যে, তাহলে এখন কেন বয়স্কদের দুধ পান করানোর মাধ্যমে হুরমত সাব্যস্ত করা হয় না? হাদীসটি পড়ুন, আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহলা বিনতে সুহাইল (রা.) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমার নিকট সালেম-এর যাতায়াতের কারণে আমি (আমার স্বামী) আবূ হুযাইফাহ’র চেহারায় অসন্তুষ্টির ভাব লক্ষ্য করি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তুমি তাকে দুধ পান করিয়ে দাও। সে বলল, আমি তাকে কিভাবে দুধপান করাবো, সে যে বয়স্ক পুরুষ? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হেসে বলেন, আমিও অবশ্য জানি যে, সে বয়স্ক পুরুষ। সে তাই করলো, দুধ পান করানোর পর আবূ হুযাইফাহ’র চেহারায় আমি কোনো অপছন্দের ভাব লক্ষ্য করিনি। (রাবী বলেন), তিনি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। (ইবনে মাজাহ, কিতাবুন নিকাহ হাদীস নং ১৯৪৩)।

উত্তর, হাদীসটি সহীহ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে হাদীসে রাসূল (সা.)-এর নির্দেশটি মুক্ত কোনো নির্দেশ ছিল না, বরং এটি সালিমের জন্য ‘খাস’ ছিল। যেজন্য নাস্তিক সহ অন্যান্য সমালোচকদের দাবীটি সম্পূর্ণ বাতিল ও প্রত্যাখ্যাত। এবার প্রাসঙ্গিক কয়েকটি হাদীস নিচে দেয়া হল। ফলে বিষয়টি বুঝতে আরও সহজ হবে।

(১) বয়স্কদের দুধ পান করানো সম্পর্কে সুনান নাসাঈ থেকে সনদ সহ হাদীস :- بَاب رَضَاعِ الْكَبِيرِ أَخْبَرَنَا أَحْمَدُ بْنُ يَحْيَى أَبُو الْوَزِيرِ قَالَ سَمِعْتُ ابْنَ وَهْبٍ قَالَ أَخْبَرَنِي سُلَيْمَانُ عَنْ يَحْيَى وَرَبِيعَةُ عَنْ الْقَاسِمِ عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ أَمَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ امْرَأَةَ أَبِي حُذَيْفَةَ أَنْ تُرْضِعَ سَالِمًا مَوْلَى أَبِي حُذَيْفَةَ حَتَّى تَذْهَبَ غَيْرَةُ أَبِي حُذَيْفَةَ فَأَرْضَعَتْهُ وَهُوَ رَجُلٌ قَالَ رَبِيعَةُ فَكَانَتْ رُخْصَةً لِسَالِمٍ অর্থাৎ, আহমদ ইবন ইয়াহইয়া আবুল ওয়াযির (রহ.) … আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু হুযায়ফা-এর স্ত্রীকে আদেশ করেছেন, আবু হুযায়ফা-এর মাওলা সালিমকে দুধ পান করাবার জন্য। তাতে আবু হুযায়ফা-এর ক্ৰোধ প্রশমিত হবে, অতএব তিনি তাকে দুধ পান করালেন, আর তখন সে একজন বয়স্ক পুরুষ। রবী’আ বলেন, আর এটা ছিল সালিম-এর জন্য বিশেষ অনুমতি। (সুনানু নাসাঈ, কিতাবুন নিকাহ, হাদীস নং ৩৩২৪)।

(২) এবার একই বিষয়ে আরো কিছু বর্ণনা দেখুন, বয়স্কদের দুধ সম্পর্ক নবীপত্নীগণ আয়েশা (রা.)-কে বলতেন, وَاللَّهِ مَا نُرَى الَّذِي أَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَهْلَةَ بِنْتَ سُهَيْلٍ إِلَّا رُخْصَةً فِي رَضَاعَةِ سَالِمٍ وَحْدَهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاللَّهِ لَا يَدْخُلُ عَلَيْنَا أَحَدٌ بِهَذِهِ الرَّضْعَةِ وَلَا يَرَانَا অর্থাৎ, আল্লাহর কসম! আমরা মনে করি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহলা বিনত সুহায়াল-কে যে আদেশ করেন, তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ হতে শুধু সালিম-এর দুধ পানের ব্যাপারেই অনুমতি ছিল। আল্লাহর কসম! যেন কেউ আমাদের নিকট আগমন না করে এ দুধ সম্পর্ক নিয়ে এবং আমাদেরকে না দেখে। (সুনানু নাসাঈ, কিতাবুন নিকাহ, হাদীস নং ৩৩২৭)।

(৩) তারপর আরেকটি বর্ণনা দেখুন, নবী করীম (সা.)-এর সহধর্মিণীগণ হযরত আয়েশা (রা.)-কে উদ্দেশ্য করে বলতেন, وَاللَّهِ مَا نَرَى هَذَا إِلاَّ رُخْصَةً أَرْخَصَهَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لِسَالِمٍ خَاصَّةً فَمَا هُوَ بِدَاخِلٍ عَلَيْنَا أَحَدٌ بِهَذِهِ الرَّضَاعَةِ وَلاَ رَائِينَا অর্থাৎ আল্লাহর কসম! আমরা এটাকে (প্রাপ্ত বয়সে দুধপান দ্বারা হুরমত সাব্যস্ত হওয়াকে) একটি বিশেষ অনুমতি মনে করি যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবল সালিমের জন্য দিয়েছিলেন। অতএব এ ধরনের দুধপানের মাধ্যমে কেউ আমাদের নিকট প্রবেশ করতে পারবে না এবং আমাদের প্রতি দৃষ্টিপাতও করতে পারবে না। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৪৭৪)।

কে এই সালিম?

  • অত্র হাদীসটির প্রধানতম চরিত্রের নাম সালিম। তিনি ছিলেন আবু হুযায়ফা (রা.)-এর পালকপুত্র। আবু হুযায়ফা ইবন উতবা ইবন রবি’আ (রা.) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের সাহাবীদের মধ্যে একজন সাহাবী ছিলেন। তিনি বদরের যুদ্ধে শহীদ হন, তিনি সালিম (রা.)-কে পালক পুত্র করেছিলেন যাকে বলা হত সালিম মাওলা আবু হুযায়ফা। (সায়িবা নামক জনৈকা মহিলা তাকে আযাদ করেন, পরে আবু হুযায়ফা তাকে লালন-পালন করেন এবং পুত্ররূপে গ্রহণ করেন। এইজন্য সালিমকে আবু হুযায়ফার মাওলা বলা হয়) যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়দ ইবন হারিস (রা.)-কে পুত্র সন্তান বানিয়েছিলেন এবং আবু হুযায়ফা সালিমের নিকট তার ভাতিজী ফাতেমা বিনত ওয়ালিদ ইবন উতবা ইবন রবি’আকে বিবাহ দিলেন, তিনি সালিমকে নিজের পুত্র বলে মনে করতেন। (মুয়াত্তা মালেক, كتاب الرضاع; হাদীস নং ১২৭৯)।
  • কে জানি মন্তব্য করেছিল যে, আবু হুযায়ফা (রা.)-এর স্ত্রী দুধ পান করিয়েছিলেন কি স্তন মুখে লাগিয়ে? উত্তরে বলব, একজন লজ্জাবতী নারী যেখানে সালিমের সাথে দেখা দিতে ইতস্ততবোধ করতেন, উপায় খোঁজতে স্বামীর শরণাপন্ন হলেন সেখানে তিনি সালিমকে দুধ পান করাবেন স্তন মুখে লাগিয়ে, তা শুধু বদমাইশ আর চরিত্রহীন প্রকৃতির মনই চিন্তা করতে পারে। অধিকন্তু এই সংক্রান্ত সব হাদীসেই দুধ পানের শব্দ رضاعة (রিদ্বা’আ) এসেছে, مس বা ‘মুখ লাগিয়ে চুষে খাওয়া’ আসেনি। নোংরা হৃদয়ের মন্তব্যকারীরা কি খেয়াল করেনা যে, হাদীসগুলো কেমন শব্দচয়নে এসেছে? বিশেষজ্ঞগণও একই আইডিয়া দিয়ে গেছেন আজ থেকে শত সহস্র বছর আগেই। সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাকারক ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) তার ‘ফাতহুল বারী’ (খ-৯/পৃ-১২৭) গ্রন্থে এধরণের একটি প্রশ্নের উত্তরে সম্ভাব্য উপায় থাকার প্রতি ইংগিত দিয়ে গেছেন। যেমন তিনি ইমাম আলী ইবনুল হাজম (রহ.)-এর একটি প্রশ্ন ও তার জবাবে ইমাম আ’ইয়াজ (রহ.)-এর উক্তি তুলে ধরেছেন এভাবে, أَنَّهُ يَلْزَمُ عَلَى قَوْلِهِمْ إِشْكَالٌ فِي الْتِقَامِ سَالِمٍ ثَدْيَ سَهْلَةَ وَهِيَ أَجْنَبِيَّةٌ مِنْهُ فَإِنَّ عِيَاضًا أَجَابَ عَنِ الْإِشْكَالِ بِاحْتِمَالِ أَنَّهَا حَلَبَتْهُ ثُمَّ شَرِبَهُ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَمَسَّ ثَدْيَهَا قَالَ النَّوَوِيُّ وَهُوَ احْتِمَالٌ حسن অর্থ, কৃতদাস সালেমের দিক থেকে একজন বেগানা রমনী সাহলা’র স্তন চুষা নিয়ে তাদের (আহলে জাওয়াহের ও ইমাম লাঈস প্রমুখ) মন্তব্যের উপর প্রশ্ন জাগে (অর্থাৎ এভাবে স্তন চুষা যেহেতু সম্ভবপর নয়, সেহেতু ভিন্ন উপায়ে তার দুধ পান দ্বারাও রিদ্বা’আত সাব্যস্ত হওয়ার নয়!)। (ইবনুল হজমের উক্ত প্রশ্নের জবাবে) ইমাম আ’ইয়াজ (রহ.) বলেছেন, স্তনে মুখ লাগিয়ে চুষা বিহীন শুধুই দুধ দোহন করে তাকে (সালিম) পান করানোর সম্ভাবনা থাকাও বিচিত্র নয়। ইমাম নববী (রহ.) তার এই মতটি সমর্থন করে বলেছেন, এমন সম্ভাবনা থাকার মতটি খুবই উত্তম।….(ইমাম নববী রহ. ইবনে হাজমের প্রশ্নের উত্তরে আরও বলেছেন) আর ঐ ব্যতিক্রমী পন্থায় দুধ পান করার দ্বারা রিদ্বা’আত সাব্যস্ত হওয়ার বিষয়টি শুধুই সালেমের ক্ষেত্রে প্রয়োজনের তাগিদে অনুমোদিত ও খাস (بانه عفى عن ذالك للحاجة)। (অনুবাদ শেষ হল)। সুতরাং মন্তব্যকারীর জন্য আরেকটু উন্নত রুচিবোধ আর লজ্জাশরম নিয়ে মন্তব্য করা উচিত। (প্রামাণ্য স্ক্যানকপি)

শেষকথা হল, যেসব হাদীসে সালিমকে দুধ পান করিয়ে দেয়ার নির্দেশ রয়েছে সেই একই হাদীসে এটি যে সালিমের ক্ষেত্রেই খাস বা বিশেষভাবে নির্দিষ্ট সেসব কথাও উল্লেখ রয়েছে। যেমন, لِسَالِمٍ خَاصَّةً অর্থাৎ, সালিমের জন্য খাস, رُخْصَةً فِي رَضَاعَةِ سَالِمٍ وَحْدَهُ অর্থাৎ শুধুই সালিমের দুধ পানের ব্যাপারেই অনুমতি ছিল, فَكَانَتْ رُخْصَةً لِسَالِمٍ অর্থাৎ এটি সালিমের জন্য অনুমতি ছিল, ইত্যাদি ইত্যাদি। তাছাড়া আবদুল্লাহ্ ইবন মাসউদ (রা.) পরিষ্কার বলেছেন, لَا رَضَاعَةَ إِلَّا مَا كَانَ فِي الْحَوْلَيْنِ অর্থাৎ দুধ খাওয়া দুই বৎসরের ভিতরেই হয় (মুয়াত্তা মালেক, অধ্যায় ৩০, হাদীস নং ১২৮১)। সুতরাং এরপরেও যারাই ইসলামের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে অপপ্রচার চালাতে চায় তাদেরকে আল্লাহর নিকট সোপর্দ করছি। আল্লাহর সাথে তাদের বুঝাপড়া হোক।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

Previous article ছাগলে বুঝি কুরআনের কিছু আয়াত খেয়ে ফেলেছিল?
Next article মির্যার স্ববিরোধীতা-৩৫
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! এটি সম্পূর্ণ দ্বীনি ও অলাভজনক একটি ওয়েবসাইট। প্রতি বছর এটির ডোমেইন ও হোস্টিং ফি হিসেবে আমাকে এর ব্যয় বহন করতে হচ্ছে। যদি উক্ত ব্যয় বহন করতে অপারগ হই তাহলে এই সাইটটি নিশ্চিত বন্ধ হয়ে যাবে। সেহেতু আপনাদের সবার নিকট আবেদন থাকবে যে, আপনারা সাইটটির উক্ত ব্যয় বহনে এতে বিজ্ঞাপন দিতে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করবেন এবং নিজেরাও সহযোগিতায় এগিয়ে আসবেন। বিনীত এডমিন! বিকাশ : ০১৬২৯-৯৪১৭৭৩ (পার্সোনাল)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here