ইমামগণের রচনায় খতমে নবুওয়ত প্রসঙ্গ ও ভ্রান্তি নিরসন

0
ইমামগণের রচনায় খতমে নবুওয়ত প্রসঙ্গ ও ভ্রান্তি নিরসন

ইমামগণের কিতাব থেকে কাদিয়ানীদের কিছু প্রসঙ্গবহির্ভূত উদ্ধৃতি ও আমাদের পর্যবেক্ষণ

কাদিয়ানীদের রচনা হতে,

[১] হযরত ইমাম আব্দুল ওয়াহাব শি’রানি (রহ.) বলেন, قَوْلُہٗ صَلَّی اللّٰہُ عَلَیْہِ وَ سَلَّمَ فَلَا نَبِیَّ بَعْدِیْ وَلَا رَسُوْلَ الْمُرَادُ بِہٖ مُشْرِعَ بَعْدِیْ অর্থ নবীকরীম (সা.)-এর “আমার পর আর কোনো নবী নেই, রাসূলও নেই” (فَلَا نَبِیَّ بَعْدِیْ وَلَا رَسُوْلَ) একথার অর্থ হল, আমার পর শরীয়তধারী আর কোনো নবী নেই। (আল-ইয়াওয়াকিত ওয়াল জাওয়াহির, খণ্ড ২ পৃষ্ঠা ২৪)।

[২] সাইয়েদ আব্দুল করিম জিলানী (রহ.) বলেন, فَانْقَطَعَ حُکْمُ نُبُوَّۃِ التَّشْرِیْعِ بَعْدَہٗ وَکَانَ مُحَمَّدٌ ﷺ خَاتَمَ النَّبِیّیْنَ لِاَنَّہٗ جَآءَ بِالْکَمَالِ وَلَمْ یَجِیئْ اَحَدٌ بِذٰلِکَ অর্থ নবুওয়তে তাশরিয়ীর বিধান তাঁর (সা.) পরে শেষ হয়ে গেছে। অধিকন্তু মুহাম্মদ (সা.) নবীগণের খাতাম (সমাপ্তি) ছিলেন। কারণ তিনি শরীয়তের পূর্ণতা দিতে এসেছেন। এভাবে আর কেউই (ইতিপূর্বে) আসেনি। (আল ইনসানুল কামেল ১/৭৫, অধ্যায় নং ৩৬)।

[৩] হযরত মোল্লা আলী কারী (রহ.) বলেন, فَلاَ یُنَاقِضُ قَوْلُہٗ خَاتَمَ النَّبِیِّیْنَ اِذِ الْمَعْنَی اَنَّہٗ لاَ یَاتِیْ نَبِیٌّ یَنْسَخُ مِلَّتَہٗ وَ لَمْ یَکُنْ مِنْ اُمَّتِہٖ অর্থ… তাঁর (সা.) ঐ ভবিষ্যৎবাণী খাতামান্নাবীঈনের অর্থে কোনো বিরোধ সৃষ্টি করেনা। কেননা এর অর্থ হল, নবীকরীম (সা.) এর পর এমন কোনো নবী আসবেন না যিনি মহানবী (সা.)-এর দ্বীনকে রহিত করবেন, যেহেতু তিনি (অর্থাৎ ঈসা) তাঁর উম্মতের মধ্য থেকে নন। (মওযুআতে কবীর [তথা জাল হাদীসের বিশাল সংকলন ভাণ্ডার], পৃষ্ঠা: ৫৮-৫৯)।

[৪] হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ্ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহ.) বলেন, خُتِمَ بِہِ النَّبِیُّوْنَ اَیْ لَا یُوْجَدُ بَعْدَہٗ مَنْ یَأمُرُہُ اللّٰہُ سُبْحَانَہٗ بِالتَّشْرِیْعِ عَلَی النَّاسِ অর্থ নবীকরীম (সা.) এর মাধ্যমে সকল নবীর (আগমনী ক্রমধারা) শেষ হয়ে গেছে অর্থাৎ, তাঁর পর কোনো এমন ব্যক্তি আর হবেনা যাকে আল্লাহতালা শরীয়তসহ মানুষের কাছে প্রেরণ করবেন। (তাফহীমাতে ইলাহিয়াহ, তাফহীম নং ৫৪, পৃষ্ঠা ৮৫)।

[৫] হযরত মুহিউদ্দিন ইবনে আরবী (রহ.) বলেন, وَ ھٰذَا مَعْنٰی قَوْلِہٖ ﷺ اِنَّ الرَّسَالَۃَ وَالنُّبُوَّۃَ قَدِ انْقَطَعَتْ فَلَا رَسُوْلَ بَعْدِیْ وَ لَا نَبِیَّ اَیْ لَا نَبِیَّ بَعْدِیْ یَکُوْنُ عَلٰی شَرْعٍ یُخَالِفُ شَرْعِیْ بَلْ اِذْ کَانَ یَکُوْنُ تَحْتَ حُکْمِ شَرِیْعَتِیْ۔ অর্থ নবুওয়ত এবং রিসালাতের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। সুতরাং আমার পর কোনো রসূল নেই, নবীও নেই। এর মর্মার্থ হল, আমার পর এমন কোনো নবী নেই, যে আমার শরীয়তের বিপরীতে (নতুন শরীয়তের অনুসারী) হবেন। বরং যখন হতে যাবে (ঈসার আগমনের দিকে ইংগিত) তাহলে তিনি আমার শরীয়তের অধীনে হবেন। (ফতুহাতে মক্কীয়াহ্, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩)।

[৬] ইমাম তাহের পাটনী (রহ.) বলেছেন, وَھٰذَا اَیْضًا لَا یُنَافِیْ حَدِیْثَ لَانَبِیَّ بَعْدِیْ لِاَ نَّہٗ اَرَادَ لَا نَبِیَّ یَنْسَخُ شَرْعَہٗ অর্থ এই হাদীসও ‘আমার পর আর কোনো নবী নেই’ কথাটির বিরোধী নহে। কেননা একথার উদ্দেশ্য হচ্ছে, তাঁর শরীয়ত রহিত করতে পারে এমন নবী নেই। (মাজমাউল বিহারিল আনওয়ার পৃষ্ঠা ৮৫)।

ইমামগণের খণ্ডিত উক্তি সমূহ হতে কাদিয়ানীদের প্রমাণ করা উদ্দেশ্য হল, মির্যা কাদিয়ানীও একজন নবী, তবে তিনি শরীয়তবাহক নবী নন। যেহেতু হাদীসে শুধুমাত্র শরীয়তবাহক নবী আগমনকেই নিষেধ করে! নাউযুবিল্লাহ।

আমাদের পর্যবেক্ষণ :

এবার আমরা তাদের উল্লিখিত উদ্ধৃতিগুলোর উপর পাঠকদের সাথে পর্যবেক্ষণমূলক প্রাসঙ্গিক আলোচনায় ফিরে যেতে চাই! তার আগে নবুওয়তের ধারাক্রম অব্যাহত থাকার দাবীদার কাদিয়ানীদের উদ্দেশ্যে কয়েকটি সহীহ হাদীস পেশ করব এবং তারই ভিত্তিতে কয়েকটি প্রশ্ন রাখব!

১. হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, وَأُرْسِلْتُ اِلی الْخَلْقِ کَافَّةً، وَخُتِمَ بِیَ النَّبیُّوْنَ অর্থ আমি সমগ্র সৃষ্টির জন্য প্রেরিত হয়েছি এবং আমার মাধ্যমে নবীগণের সমাপ্তি ঘটেছে। (সহীহ মুসলিম, কিতাবুল মাসাজিদ, হাদীস নং ১০৫৪)।

২. হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, كَانَتْ بَنُوْ إِسْرَائِيْلَ تَسُوْسُهُمْ الأَنْبِيَاءُ كُلَّمَا هَلَكَ نَبِيٌّ خَلَفَهُ نَبِيٌّ وَإِنَّهُ لَا نَبِيَّ بَعْدِيْ وَسَيَكُوْنُ خُلَفَاءُ فَيَكْثُرُوْنَ অর্থ বনী ইসরাঈলের নবীগণ তাঁদের উম্মাতকে শাসন করতেন। যখন কোনো একজন নবী মারা যেতেন, তখন অন্য একজন নবী তাঁর স্থলাভিষিক্ত হতেন। আর আমার পরে কোনো নবী নেই। তবে অনেক খলীফাহ্ হবে। (সহীহ বুখারী, কিতাবুল আম্বিয়া হাদীস নং ৩৪৫৫, তাওহিদ প্রকাশনী)।

৩. হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেছেন, سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ لَمْ يَبْقَ مِنْ النُّبُوَّةِ إِلاَّ الْمُبَشِّرَاتُ অর্থ আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, মুবাশশ্বিরাত ব্যতীত নবুওয়তের আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৯৯০)। এই ‘মুবাশ্বশিরাত’ (مُبَشِّرَاتِ) এর মর্মার্থ সুস্পষ্ট করে আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, لَمْ يَبْقَ مِنَ النُّبُوَّةِ إلَّا المُبَشِّراتُ. قالوا: وما المُبَشِّراتُ؟ قالَ: الرُّؤْيا الصَّالِحَةُ অর্থাৎ মুবাশ্বশিরাত ব্যতীত নবুওয়তের আর কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! মুবাশ্বশিরাত কী? তিনি (সা.) বললেন, সত্য স্বপ্ন। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৯৯০)।

৪. হযরত আবু যর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, یٰا أَبَا ذَرٍ أَوَّلُ الْاَنْبِیَاء آدَمُ وَآخِرُہ مُحَمَّدٌ অর্থ ‘হে আবু যর! সর্বপ্রথম নবী ছিলেন আদম আর সর্বশেষ নবী হচ্ছে মুহাম্মদ।’ ইমাম দায়লামী (রহ.) সংকলিত আল-ফেরদাউস বি-মাছূরিল খিতাব (الفردوس بمأثور الخطاب للدیلمی), ১/৩৯, হাদীস নং ৮৫।

[৫] হযরত উকবাহ ইবনে আমের (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, لَوْ كَانَ بَعْدِي نَبِيٌّ لَكَانَ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ অর্থ আমার পরবর্তীতে কেউ নবী হলে অবশ্যই উমর ইবনুল খাত্তাবই নবী হতেন। (তিরমিযি হাদীস নং ৩৬৮৬, সহীহ)।

আকীদায়ে খতমে নবুওয়ত সম্পর্কিত ২০টি সহীহ হাদীস পড়তে এখানে ক্লিক করুন!

প্রাসঙ্গিক প্রশ্নগুলো :

প্রশ্নগুলো এই যে, উপরে উল্লিখিত হাদীসগুলোর উপর আপনাদের যদি বিশ্বাস থাকে তাহলে বলুন তো, রাসূল (সা.) খোদ নিজেই যেখানে মুক্ত অর্থে নিজেকে শেষনবী বলে আমাদের সংবাদ দিয়ে গেলেন, সেখানে নবুওয়তের ক্রমধারা অব্যাহত বলার স্পর্ধা দেখাতে পারে এমন সাধ্য কার? আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শিক্ষার বিরুদ্ধে পৃথিবীর সমস্ত মানুষ কোমর বেঁধে দাঁড়িয়ে গেলেও তাতে কি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শিক্ষা বাতিল হয়ে যাবে? নিশ্চয়ই না। তাহলে আপনারা রাসূল (সা.)-এর শিক্ষার বিপরীতে এমন সব ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের উপর কিভাবে আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে পারলেন যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শিক্ষাকে বাতিল করে দেয়? বলাবাহুল্য, রাসূল (সা.) এর যুগেও কয়েকজন নবুওয়তের দাবী করেছিল। মুসায়লামা তন্মধ্যে একজন। তার সম্পর্কে বর্ণনায় এসেছে যে, তার অনুসারীদের আযান এবং সালাতেও ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ‘ উচ্চারিত হত (প্রমাণ এখানে)। এর মানে এটা পরিষ্কার কথা যে, মুসায়লামা নিজেও শরীয়তবিহীন নবী দাবীদার ছিল। তা সত্ত্বেও সাহাবায়ে কেরাম তাকে ক্ষমা করেননি, তার নবুওয়ত দাবীর ব্যাখ্যা চাননি; তলোয়ারের ভাষায় তাকে সমুচিত জবাব দেয়া হয়। কাজেই, এবার শরীয়তবিহীন নবী আসার এই কাদিয়ানী-কনসেপ্ট উক্ত ঘটনা হতেও বাতিল হয়ে গেল কিনা? (সহজে কাদিয়ানী চেনার উপায় জানুন)।

এবার হয়ত প্রশ্ন করতে পারেন যে, তাহলে কি ইমামগণ ঐ সমস্ত ব্যাখ্যায় ভুল করেছেন? উত্তরে বলব, আপনি কি ঐ সকল ইমামের সম্পূর্ণ বক্তব্য পড়ে দেখেছেন? দেখেননি! এমনকি আপনি ঐ সমস্ত ইমামের কিতাবগুলো থেকে আকীদায়ে খতমে নবুওয়ত সংক্রান্ত আলোচনাও পড়ে দেখেননি যে, তারা খতমে নবুওয়তের উপর উম্মতে মুহাম্মদীয়ার ইজমা কীরূপ শব্দচয়নে লিখে গেছেন! তাহলে জেনে নিন, মুহাম্মদ (সা.)-এর পর নবুওয়ত দাবীদারগণ উম্মতে মুসলিমার ইজমা মতে ‘কাফের’ হওয়া সম্পর্কে,

ইমাম ইবনে হাজার আল হাইছামী (الإمام ابن حجر الهيتمي) (রহ.) উম্মতে মুসলিমার ইজমা উল্লেখপূর্বক লিখেছেন, من اعتقد وحيًا من بعد محمد صلى الله عليه وآله وسلم كان كافرًا بإجماع المسلمين অর্থাৎ মুহাম্মদ (সা.)-এর পর যে ব্যক্তি নবুওয়তে ওহী লাভ করার বিশ্বাস পোষণ করবে সে মুসলিম উম্মাহার সর্বসম্মতভাবে কাফের। (আল ফাতাওয়াল ফিকহিয়্যাতুল কোবরা [الفتاوى الفقهية الكبرى] ৪/১৯৪, আল মাকতাবাতুল ইসলামিয়া হতে প্রকাশিত)।

সব চেয়ে মজার ব্যাপার হল, যাদের খণ্ডিত বক্তব্যে আপনি/আপনারা বিভ্রান্তি ছড়ান তাদের প্রত্যেকের বিশ্বাস ছিল যে, ঈসা (আ.) জীবিত, আল্লাহ তাঁকে আকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন। শেষযুগে তিনিই যথাসময়ে ফিরে আসবেন। মূলত সে কথারই খোলাসা করতে তারা উপরিউক্ত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের অবতারণা করেছেন! আফসোস যে, আপনারা প্রসঙ্গ এড়িয়ে তাদের বক্তব্য উদ্ধৃত করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছেন! আপনারা শায়খ ইবনে আরাবী (রহ.)-এর ‘ফতুহাতে মাক্কিয়াহ’ গ্রন্থের যে পৃষ্ঠার খণ্ডিত বক্তব্যে নবুওয়তের ক্রমধারা অব্যাহত থাকার দলিল দেন সেই একই পৃষ্ঠার সম্পূর্ণ বক্তব্যটি পড়ে দেখলে যে কেউই বুঝতে পারবে যে, আপনারা (অর্থাৎ কাদিয়ানীরা) কিভাবে দরাকে সরা বানিয়ে দুনিয়ার সহজ সরল মানুষদের ঈমান নষ্ট করছে!

শায়খ ইবনে আরাবী (রহ.) লিখেছেন, وهذا معنى قوله صلى الله عليه وسلم إن الرسالة والنبوة قد انقطعت فلا رسول بعدي ولا نبي أي لا نبي بعدي يكون على شرع يخالف شرعي بل إذا كان يكون تحت حكم شريعتي ولا رسول أي لا رسول بعدي إلى أحد من خلق الله بشرع يدعوهم إليه فهذا هو الذي انقطع وسد بابه لا مقام النبوة فإنه لا خلاف إن عيسى عليه السلام نبي ورسول وأنه لا خلاف أنه ينزل في آخر الزمان حكما مقسطا عدلا بشرعنا لا بشرع آخر ولا بشرعه الذي تعبد الله به بني إسرائيل من حيث ما نزل هو به بل ما ظهر من ذلك هو ما قرره شرع محمد صلى الله عليه وسلم ونبوة عيسى عليه السلام ثابتة له محققة فهذا نبي ورسول قد ظهر بعده صلى الله عليه وسلم وهو الصادق في قوله إنه لا نبي بعده

অর্থাৎ রাসূল (সা.)-এর বাণী إن الرسالة والنبوة قد انقطعت فلا رسول بعدي ولا نبي (অর্থাৎ নিশ্চয়ই নবুওয়ত এবং রেসালতেরধারা বন্ধ হয়ে গেছে। সুতরাং আমার পর আর কোনো রাসূল নেই, নবীও নেই)—একথার অর্থ হচ্ছে, আমার পর কোনো প্রকারের শরীয়তবাহক নবী নেই যে আমার শরীয়তের বর-খেলাফ করবেন বরং যখনই হতে যাবে তখন সে আমার শরীয়তের বিধিবিধানের অধীনে হবে এবং ‘ওয়া লা রাসূলা বা’দী’—একথার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ’র সৃষ্টির প্রতি এমন কোনো রাসূলও আর নেই যিনি স্বতন্ত্র শরীয়ত দ্বারা তাদেরকে তাঁর দিকে দাওয়াত দেবেন। যেহেতু এটি (নবুওয়ত এবং রেসালতেরধারা) বন্ধ এবং তার দ্বারও চিরতরে রূদ্ধ, (এখন) নবুওয়তের আর কোনো প্রকারের মাক্বাম (স্তর)-ই অবশিষ্ট নেই। ফলে ঈসা (আ.) একজন নবী ও রাসূল থাকাটা (লা নাবিয়্যা বা’দী’ শীর্ষক হাদীস অংশের) বিরুদ্ধে যায় না। নিশ্চয়ই ঈসা (আ.) একজন ন্যায়পরায়ন শাসক হিসেবে শেষ যামানায় আমাদের শরীয়তের উপরই নাযিল হবেন। তিনি ভিন্ন কোনো শরীয়ত কিবা ওই শরীয়ত নিয়েও আসবেন না, যা তার প্রতি নাযিল হয়েছিল এবং ইসরাইল জাতি যেই শরীয়তের উপর আল্লাহ’র ইবাদত বন্দেগী করেছিল। বরং তাঁর পক্ষ থেকে শরীয়তে মুহাম্মদী-ই প্রকাশ পাবে যেটি তাঁর জন্য (পূর্ব থেকে) স্থির রয়েছে। পক্ষান্তরে নবুওয়তে ঈসা (তাঁর দ্বিতীয়বার আগমনের পর) স্থির ও বহাল থাকবে। কেননা তিনি-ও একজন নবী ও রাসূল ছিলেন। তাঁর পরেই হযরত সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আবির্ভাব ঘটেছিল। যিনি স্বীয় বাণী : إنه لا نبي بعده (অর্থাৎ নিশ্চয়ই তাঁর পরে আর কোনো নবী নেই) বাণীতে একজন সত্যবাদী।” (অনুবাদ শেষ হল)। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি :-

শায়খ মহী উদ্দিন ইবনে আরাবী (রহ.) এর সম্পূর্ণ বক্তব্যের খোলাসা দাঁড়ায় :

(ক) فهذا هو الذي انقطع وسد بابه لا مقام النبوة অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আবির্ভাবের পর নবুওয়তের আর কোনো প্রকারের মাক্বাম (স্তর)-ই অবিশিষ্ট নেই। কেননা তাঁর নবুওয়তপ্রাপ্তির মাধ্যমে বর্তমানে সকল প্রকারের নবুওয়ত ও রেসালতের দ্বার চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে।

(খ) فإنه لا خلاف إن عيسى عليه السلام نبي ورسول وأنه لا خلاف أنه ينزل في آخر الزمان حكما مقسطا عدلا بشرعنا لا بشرع آخر ولا بشرعه الذي تعبد الله به بني إسرائيل من حيث ما نزل هو به অর্থাৎ ফলে ঈসা (আ.) একজন নবী ও রাসূল থাকাটা (লা নাবিয়্যা বা’দী’ শীর্ষক হাদীস অংশের) বিরুদ্ধে যায় না। নিশ্চয়ই ঈসা (আ.) একজন ন্যায়পরায়ন শাসক হিসেবে শেষ যামানায় আমাদের শরীয়তের উপরই নাযিল হবেন। তিনি ভিন্ন কোনো শরীয়ত কিবা ওই শরীয়ত নিয়েও আসবেন না, যা তার প্রতি নাযিল হয়েছিল এবং ইসরাইল জাতি যেই শরীয়তের উপর আল্লাহ’র ইবাদত বন্দেগী করেছিল।

পাঠকবৃন্দ! ইবনে আরাবীর সম্পূর্ণ বক্তব্য কাদিয়ানীরা কিজন্য আপনাদের সামনে পেশ করতে চায় না তা এবার নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন!

পরিশেষে আমি বলতে পারি যে, ইবনে আরাবীর বক্তব্যটিকে প্রসঙ্গ ছাড়াই কাদিয়ানীরা পেশ করে থাকে। যাতে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে দলে টানতে পারে ও মির্যা কাদিয়ানীর নবুওয়ত দাবীকে হালাল করতে পারে! আমি এখানে শুধুমাত্র ইবনে আরাবী (রহ.)-এর নামে তারা যে ভ্রান্তি ছড়ায় সেটিরই জবাব দিয়েছি। সত্য কথা হল, কাদিয়ানীরা এভাবেই অন্য প্রায় সকল উলামায়ে কেরামের বক্তব্যের আগপাছ বাদ দিয়ে কিংবা প্রসঙ্গ এড়িয়ে উদ্ধৃতি পেশ করে থাকে। যাতে অল্প শিক্ষিত ও জেনারেল শ্রেণীর মানুষদের বিশ্বাসে সন্দেহ তৈরি করে কাছে টানতে পারে! আল্লাহ আমাদের সবাইকে এদের যাবতীয় অপপ্রচার থেকে রক্ষা করুন। আমীন।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী
শিক্ষাবিদ ও গবেষক
তাং ১৩/১১/২০২২ইং

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here