Home সাধারণ কুরআনের মাপকাঠিতে হাদীস গ্রহণের নীতি কেন পরিত্যাজ্য

কুরআনের মাপকাঠিতে হাদীস গ্রহণের নীতি কেন পরিত্যাজ্য

0
কুরআনের মাপকাঠিতে হাদীস গ্রহণের নীতি কেন পরিত্যাজ্য

এই বিষয়ে লিখতে হবে আগে কখনো ভাবিনি। সম্প্রতি কথিত আহলে কুরআন তথা হাদীস অস্বীকারকারী এক নব্য ফেতনার উদ্ভব হয়েছে, যদিও এই ফেতনা আগেও ছিল; তবে তারা আগে একদমই বিস্তার লাভ করেনি, বড়জোর ইতিহাসের পাতায় কালো অক্ষরের ফ্রেমে বন্দী ছিল। স্যোসাল মিডিয়ার এই সময়টিতে এই ফেতনা যেন কোমরে গামছা বেঁধে ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছে হাদীসকে বাতিল সাব্যস্ত করতে।

এবার দেখুন, হাদীস বিরোধী অপপ্রচারকারীদের সম্পর্কে যুগশ্রেষ্ঠ আয়েম্মায়ে কেরাম কী বলে গেছেন। ইমাম খাত্তাবী (রহ.) তার শরহে সুন্নাহ কিতাবে বিখ্যাত হাদীস বিশারদ ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (রহ.)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন যে, যারা বলে কুরআনের মাপকাঠিতে হাদীস গ্রহণ করতে হবে, নিশ্চয়ই তাদের এইধরণের কথা যিনদীক তথা ধর্মদ্রোহীরাই গড়েছে (দেখুন, শরহে সুন্নাহ ৪/২৯৯, ইমাম খাত্তাবী)। অর্থাৎ তিনি বুঝাতে চেয়েছেন, এধরণের অপপ্রচার আজ নতুন নয়, প্রত্যেক যুগেই হাদীসের উপর আক্রমণ হয়েছিল, সামনেও হতে থাকবে, শুধু আক্রমণের ধরন পাল্টিবে। কাজেই কোনো মুসলমানের জন্য উচিত হবেনা তাদের অপপ্রচারে কান দেয়া। এ বিষয়ে অনেক পূর্ব থেকে আয়েম্মায়ে কেরাম দুনিয়াকে সাবধান করে গেছেন। ইমাম খাত্তাবী (রহ.)-এর কিতাব থেকে স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য।

(আরবী) وفي الحديث دلالة على أنه لا حاجة بالحديث إلى أن يعرض على الكتاب؛ فإنه مهما ثبت عن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان حجة بنفسه، و اما ما رواه بعضهم انه قال اذا جاءكم الحديث فأعرضوه على كتاب الله فإن وافقه فخذوه و إن خالفه فدعوه فإنه حديث باطل لا اصل له. و قد حكى زكريا ابن يحيى الساجى عن يحيى ابن معين انه قال هذا حديث وضعته الزنادقة.

অর্থাৎ হাদীসের প্রামাণিকতার জন্য তাকে কুরআনের মুকাবিলায় উপস্থাপন করার কোনোই প্রয়োজন নেই। নিশ্চয়ই এটি রাসূল (সা.) হতে যখনি সাব্যস্ত হয়ে যাবে তখনি তা নিজেই প্রমাণযোগ্য হয়ে যাবে। তবে কেউ কেউ বলেছে যে, যখন তোমাদের নিকট হাদীস পেশ হবে তখন তোমরা তা কিতাবুল্লাহ’র মুকাবিলায় উপস্থাপন করবে। তারপর সেটি কিতাবুল্লাহ’র মুতাবেক হলে তোমরা গ্রহণ করবে আর যদি বিরোধী হয় তখন তোমরা তা পরিত্যাগ করবে, কেননা এমতাবস্থায় এই হাদীস বাতিল ও ভিত্তিহীন। অথচ ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (রহ.) হতে যাকারিয়া ইবনে ইয়াহইয়া আস সাজি বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, নিশ্চয়ই এইধরণের কথা যিনদীক তথা ধর্মদ্রোহীরাই গড়েছে

ইমাম ইবনে হাজম (রহ.)ও একই কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, প্রকৃতপক্ষে কোনো সহীহ হাদীসই কুরআনের সাথে সাংঘর্ষিক নয়।

(আরবী) : ليس في الحديث الذي صح شيء يخالف القرآن الكريم ولا سبيل إلى وجود خبر صحيح مخالف لما في القرآن أصلاً، وكل خبر شريعة فهو إما مضاف إلى ما في القرآن ومعطوف عليه ومفسر لجملته، وإما مستثنى منه لجملته، ولا سبيل إلى وجه ثالث

অর্থাৎ সহীহ হাদীসের কোনো কিছুই কুরআনুল কারীমের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। কুরআনের বিপরীতে এমন কোনো সহীহ হাদীসের কখনো অস্তিত্বই থাকার সুযোগ নেই। শরীয়ত সংক্রান্ত যত বর্ণনা রয়েছে তা হয়ত কুরআনের বিষয়বস্তুর সাথে সম্পর্কযুক্ত ও সংযোজিত এবং বিশ্লেষণকারী, অথবা কুরআনের বিষয়বস্তুর সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী। এর বাহিরে তৃতীয় আর কোনো পথ নেই। (দেখুন, আল আহকাম ফী উসূলিল আহকাম ২/২১৫-২১৬)।

সর্বসাধারণ মুসলিম উম্মাহার খেদমতে কিছু কথা বলে রাখা জরুরি। তা হচ্ছে, ইসলাম মানে শুধু কুরআন হলে আল্লাহ বলতেন না ‘তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো এবং রাসূলের আনুগত্য করো।’ (সূরা মায়িদাহ, আয়াত ৯২)। ‘যে রাসূলের আনুগত্য করলো সে আল্লাহর আনুগত্য করলো।’ (সূরা নিসা, আয়াত ৮০)। আমাদের অবশ্যই চিন্তা করা উচিত যে, মহান আল্লাহ শুধু কিতাব পাঠাননি, তিনি কিতাবের সাথে ব্যাখ্যাতাও (রাসূল সা.) পাঠিয়েছেন। সুতরাং একটি মেনে অপরটি অস্বীকার করা মানে ইসলামকে আংশিক মানা আর আংশিক অস্বীকার করা। বরং হাদীস অস্বীকার করলে কুরআন অস্বীকারের রাস্তাই খুলে যায়। হাদীস অস্বীকারকারীরা কুরআনের সাথে যেভাবে হাদীসের সাংঘর্ষিকতা প্রমাণের ব্যর্থ চেষ্টা করেন, ঠিক একইভাবে কুরআনের এক আয়াতের সাথে অন্য আয়াতের সাংঘর্ষিকতা দেখানো যায়। একজন কোনো বই থেকে শিখেছে, দুই যোগ দুই চার হয়। হঠাৎ সে একই বইয়ে তিন যোগ এক চার হওয়ার কথা জেনে আশ্চর্য হওয়া মানুষের মতো অনেকটা হাদীস অস্বীকারকারীদের দশা। হাদীস অস্বীকারকারীদের একটা ধূর্ততা হলো, তারা সরাসরি হাদীস অস্বীকারের কথা বলে না। কুরআনের সাথে হুবহু মিলে এমন হাদীসগুলো মানার কথা বলেন তারা। মূলত শুধু এই শ্রেণীর হাদীস গ্রহণ করা আর না করার মধ্যে পার্থক্য থাকে না। শুধু কুরআন থেকে সালাতের কোনো বিবরণ তো পরের কথা সালাতের আগের কাজ—আযান ও পবিত্রতার পদ্ধতিও প্রমাণ করা যাবে না। প্রয়োজন হবে হাদীসের। যাকাত ও অন্য সব বিষয়েও একই কথা প্রযোজ্য। মূলত, কুরআনকে যদি থিওরি বলা হয় তাহলে হাদীসকে তার প্র্যাক্টিক্যাল বলা যায়। সারা বিশ্বের সব যুগের সব আলিম ও ইমাম হাদীস অস্বীকারকারীদের ভ্রান্তি ও ভ্রষ্টতার ব্যাপারে একমত। হাদীস সংকলন, রিজালশাস্ত্র ও জরাহ-তা’দীল প্রভৃতি সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা রাখা কোনো মানুষ হাদীসের প্রামাণ্যতা অস্বীকার করতে পারে না। ইসলামের প্রথম দুই শতকে কেউ হাদীসকে শরীয়তের দলিল হিসেবে মানতে অস্বীকৃতি জানায়নি। হিজরী দ্বিতীয় শতকের শেষের দিকে এসে সর্বপ্রথম মুতাযিলা সম্প্রদায় হাদিসকে অস্বীকার করার দুঃসাহস দেখায়। পরবর্তী যুগের অস্বীকারকারীরা এক্ষেত্রে মূলত মুতাযিলাদেরকেই অনুসরণ করছে। মহান আল্লাহ আমাদেরকে হাদীস অস্বীকারকারী নামধারী আহলে কুরআনের ফিতনা থেকে হেফাজত করুন। আমীন।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী।

Previous article মুহাম্মদ (সা.) দ্বিতীয়বার জীবিত হয়ে দুনিয়ায় আসা
Next article আব্দুর রহমান লখভী ও মির্যা কাদিয়ানী
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! এটি সম্পূর্ণ দ্বীনি ও অলাভজনক একটি ওয়েবসাইট। প্রতি বছর এটির ডোমেইন ও হোস্টিং ফি হিসেবে আমাকে এর ব্যয় বহন করতে হচ্ছে। যদি উক্ত ব্যয় বহন করতে অপারগ হই তাহলে এই সাইটটি নিশ্চিত বন্ধ হয়ে যাবে। সেহেতু আপনাদের সবার নিকট আবেদন থাকবে যে, আপনারা সাইটটির উক্ত ব্যয় বহনে এতে বিজ্ঞাপন দিতে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করবেন এবং নিজেরাও সহযোগিতায় এগিয়ে আসবেন। বিনীত এডমিন! বিকাশ : ০১৬২৯-৯৪১৭৭৩ (পার্সোনাল)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here