মির্যা কাদিয়ানীর মিথ্যাচার
মির্যা কাদিয়ানী অতি চালাকি করে নিজেই নিজের কথায় কিভাবে ধরা খেল দেখেন….
মরহুম মওলানা আব্দুর রহমান লখভীর সাথে মির্যা কাদিয়ানীর ঐতিহাসিক একটি চমৎকার বিতর্ক নিয়ে একটু লিখব। আব্দুর রহমান লখভী (রহ.) মির্যার সমসাময়িক একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বসম্পন্ন আলেম ছিলেন। ১৮৯১ সাল। মির্যা কাদিয়ানী যখন মানুষকে বিভ্রান্ত করতে শুরু করলো, কখনো মাহদী কখনো বা মসীহ মওউদ আবার কখনো নবী দাবী, কখনো বা নবী দাবী অস্বীকার করে নবী শব্দকে ‘মুহাদ্দাস’ অর্থে উদ্দেশ্য ইত্যাদি বলে একেক সময় একেক রকম বয়ান দিতে লাগলো এবং মানুষের বিশ্বাস নিয়ে খেলতে শুরু করলো তখন মওলানা আব্দুর রহমান লখভী (রহ.) মির্যার নিকট পত্র প্রেরণ করে জানালেন, আমার নিকট ইলহাম হয়েছে যে, ان فرعون و هامان و جنودهما كانوا خاطئين (অর্থাৎ নিশ্চয়ই ফেরাউন আর হামান আর তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা মিথ্যা) এই ইলহামে ইলাহিতে ফেরাউন দ্বারা মির্যাকে এবং হামান দ্বারা (মির্যার উপদেষ্টা) নুরউদ্দীনকে বুঝানো উদ্দেশ্য । পত্রের কথাগুলো মির্যা কাদিয়ানী সাহেবের লিখনীতেও স্থান পেয়েছে। দেখুন, রূহানী খাযায়েন ২২/৩৬৭-৬৮ (নিচে স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য)। মির্যা কাদিয়ানী পত্রটি হাতে নিয়ে পড়লেন এবং মন্তব্য করে বললেন যে, এই ইলহামের ভেতর তো আমার নাম নেই! তারপর মওলানা আব্দুর রহমান লখভী সাহেব কিছুদিন পর মির্যাকে নতুন আরেকটা ইলহামের সংবাদ দিলেন। তিনি মির্যাকে পরিষ্কার করে জানিয়ে দিলেন, আমার নিকট ইলহাম আসছে যেখানে একদম পরিষ্কার করে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, “মির্যা কাদিয়ানী ফেরাউন আর মিয়া নূরউদ্দিন হামান”। আর একথাগুলো মুসলিম উম্মাহার কল্যাণকামীতার উদ্দেশ্যে জানিয়ে দেয়া আমার জন্য জরুরী ছিল। একথার পর মির্যা কাদিয়ানী চুপ হয়ে যান। তারপরের ইতিহাস আরও দারুন। ১৩১৪ হিজরী। মওলানা আব্দুর রহমান লখভী সাহেবের ইন্তেকাল হয়ে গেল। মির্যা কাদিয়ানী খুশিতে বগলদাবা করতে লাগলেন। তিনি সাথে সাথে আব্দুর রহমান লখভী সাহেবের উপর একটা টাটকা মিথ্যাচার শুরু করে দিলেন। তিনি বললেন, লখভী সাহেব আমাকে ফেরাউন আখ্যা দিয়েছেন আর নিজেকে মূসা সাব্যস্ত করেছেন। মির্যা সাহেব এবার উপরের মিথ্যাচারের উপর যুক্তি পেশ করে বলতে লাগলেন, আশ্চর্যের ব্যাপার হল, ফেরাউন এখনো বেঁচে আছে অথচ মূসা মরে কবরে চলে গেছে, দুনিয়ায় তার নাম নিশানাও বাকি নেই! মির্যা কাদিয়ানী কত ধূর্ত প্রকৃতির মিথ্যাবাদী হলে এধরণের মিথ্যাও প্রচার করতে পারে, তা চিন্তা করতেও মাথা নিচু হয়ে যায়! আহা! একজন ইমাম মাহদী দাবীদার কিভাবে এত জঘন্য মিথ্যাবাদী হয়!! অথচ মওলানা আব্দুর রহমান লখভী সাহেবের পত্রের কোথাও নিজেকে “মূসা” শব্দ ইংগিতেও উল্লেখ নেই। যাইহোক মির্যা সাহেব বোধহয় ধরেই নিয়েছিলেন যে, কেউ কাউকে ফেরাউন আখ্যা দিলে বা ইলহামের মাধ্যমে কারো পক্ষ হতে কেউ ফেরাউন আখ্যা ফেলে তখন প্রতিপক্ষ আপনাপনি মূসা সাব্যস্ত হয়ে যাবেন, যদিও তিনি মূসা দাবী করেন বা না করেন ! কিন্তু বিপত্তি বাধে অন্যখানে। মির্যা কাদিয়ানী সাহেব থেকেও অন্যকে ফেরাউন আখ্যা দেয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। দুঃসংবাদ হল, মির্যা সাহেবের মৃত্যুটা আগে হয়ে যায় আর তার ফেরাউন আখ্যা পাওয়া ব্যক্তি তার মৃত্যুর পর আরও প্রায় ১০ বছরেরও অধিক সময় বেঁচে ছিলেন। মির্যা কাদিয়ানী সাহেব অতি পাণ্ডিত্ব দেখাতে গিয়ে এভাবেই নিজের কথায় নিজে পাকড়াও হন। তিনি অতি চালাকি দেখাতে গিয়ে বহু স্থানে আরও বহু ধরা খেয়েছেন। ইউজে আসেফ সম্পর্কে তিনি সারা দুনিয়ার চোখে ধূলো দিয়ে পরে এমনভাবে ধরা খেয়েছেন যা বর্ণনাতীত। এ সম্পর্কে বিস্তারিত এখান থেকে পড়ুন (ক্লিক)। তিনি ভুলেও চিন্তা করেননি যে, স্যোসাল মিডিয়ার যুগ আসন্ন। তখন তথ্য-উপাত্তের সয়লাব হবে। মিথ্যাবাদীরা সহজেই ধরা পড়তে থাকবে।
আগের কথায় আবার ফিরে আসলাম, মওলানা আব্দুর রহমান লখভী সাহেবের ইলহামকে ভুল সাব্যস্ত করতে মির্যা সাহেব মিথ্যার আশ্রয় তো নিলেন, মনগড়া যুক্তিও পেশ করে নিজেকে রক্ষায় চেষ্টা করলেন। কিন্তু আল্লার মাইর দুনিয়ার বাহির—বাংলায় এই প্রবাদটি তার সাথে এভাবে একাকার হয়ে যাবে তা স্বপ্নেও ভাবেনি কেউ! মির্যা সাহেব তার লিখনীর এক জায়গায় মওলানা হোসাইন বাটালভি (রহ.)-কে “ফেরাউন” আখ্যা দিয়েছেন এবং সেই যুগের অন্য আরেক বিজ্ঞ আলেম মওলানা নজির হোসাইন (রহ.)-কে “হামান” আখ্যা দিয়েছিলেন। (রূহানী খাযায়েন ১২/১৩০, মালফুযাত ৪/২৪৪)। মজার ব্যাপার হল, মির্যা সাহেব তার লিখনীর এক স্থানে নিজেকে সুস্পষ্টভাবে মূসা বলেও দাবী করে লিখে গেছেন। (রূহানী খাযায়েন ১৮/৫৩০)। এখন প্রশ্ন হল, এমতাবস্থায় মির্যা কাদিয়ানী সাহেব নিজেই নিজের মিথ্যাচার আর মনগড়া যুক্তির কারণে নিজেই ধরা খেলেন কিনা? মওলানা আব্দুর রহমান লখভী সাহেব নিজে মূসা দাবী না করেও তিনি যদি মির্যার মৃত্যুর আগে ইন্তেকাল করাটা আপত্তিকর হয় তাহলে মির্যা কাদিয়ানী সাহেব নিজেকে “মূসা” দাবী করা সত্ত্বেও তারই ফেরাউন আখ্যা পাওয়া মওলানা হোসাইন বাটালবী (রহ.)-এর অনেক আগেই তিনি মারা গেলেন কেন? মিথ্যাবাদীর উপর আল্লাহর অভিশাপ। আল্লাহ আমাদের ঈমান ও দ্বীনকে এইরকম জঘন্য মিথ্যাবাদী থেকে রক্ষা করুন। আমীন।
লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী