Home আকীদা কেয়ামতে শিঙ্গা ফুঁকা : দু’বার না তিনবার?

কেয়ামতে শিঙ্গা ফুঁকা : দু’বার না তিনবার?

0
কেয়ামতে শিঙ্গা ফুঁকা : দু’বার না তিনবার?

কেয়ামতে শিঙ্গা ফুঁকা : একটা পর্যালোচনা

বিশুদ্ধ মতানুসারে ২টা শিঙ্গা ফুঁকা হবে। প্রথম শিঙ্গা ফুঁকার সাথে সাথে সমগ্র বিশ্বে মহাপ্রলয় ঘটে যাবে, সব কিছু ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়ে যাবে শুধু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যা অক্ষত রাখতে চান তা ব্যতীত। সূরা আত তাকভীর (৮১:১-২৯) পড়লে এ সম্পর্কে আরও পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি এটা পছন্দ করে যে, কেয়ামতের দৃশ্যকে স্বচক্ষে দেখবে সে যেন সূরা তাকভীর, সূরা ইনফিতার ও সূরা ইনশিকাক পাঠ করে। (তিরমিযী হাদীস নং ৩৩৩৩ সহীহ, السلسلة الصحيحة لالبانى হাদীস নং ১০৮১ তাহকীক, শায়খ আলবানী রহ.)। কারণ সূরা তাকভীরে এসেছে- (পড়তে ক্লিক করুন)।

(আয়াতের অনুবাদ) ‘যখন সূর্যকে গুটিয়ে নেয়া হবে {আবু হোরাইরাহ রা. হতে বর্ণিত নবী করিম (সা.) বলেছেন, الشَّمْسُ وَالقَمَرُ مُكَوَّرَانِ يَوْمَ القِيَامَةِ অর্থাৎ কেয়ামতের দিন সূর্য ও চন্দ্রকে গুটিয়ে নেয়া হবে। সহীহ বুখারী হাদীস নং ৩২০০}, আর নক্ষত্ররাজি যখন পতিত হবে, আর পর্বতগুলোকে যখন সঞ্চালিত করা হবে (এর উদ্দেশ্য, তখন পাহাড় সমূহ মাটির উপর ভেঙ্গে পড়বে ও সারা পৃথিবী প্রকম্পিত হবে), আর যখন দশমাসের গর্ভবতী উটনীগুলো উপেক্ষিত হবে (এখানে দশমাসের গর্ভবতী উটনীকে বিশেষভাবে উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হল, যদি কেয়ামতের দিন কোনো মানুষের এরূপ মূল্যবান সম্পদ থাকত তাহলে এরূপ মূল্যবান সম্পদও ছেড়ে দিত, কেয়ামতের ভয়াবহতা দেখে তার প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ করত না।), যখন বন্য পশুগুলিকে একত্রিত করা হবে (এখানে এর উদ্দেশ্য হল, পশুগুলোকে কিসাস আদায় করার জন্য পুনর্জীবিত করে একত্রিত করা হবে । ফলে দুনিয়াতে যে পশুর শিং ছিল না আর তাকে শিংওয়ালা পশু শিং দ্বারা আঘাত করেছিল সে পশু কেয়ামতের দিন শিংওয়ালা পশুকে অনুরূপ আঘাত করে কিসাস আদায় করে নেবে। পরে তারা আবার মাটিতে পরিণত হয়ে যাবে), যখন সমুদ্রগুলোকে অগ্নিউত্তাল করা হবে, আর যখন আত্মাগুলোকে (সমগোত্রীয়দের সাথে) মিলিয়ে দেয়া হবে, আর যখন জীবন্ত কবরস্থ কন্যাকে (জাহেলিয়াতের যুগে কন্যাশিশুকে মাটিতে জীবন্ত পুঁতিয়া ফেলা হত) জিজ্ঞাসা করা হবে, কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে? আর যখন আমলনামাগুলো প্রকাশ করে দেয়া হবে (মৃত্যুর সময় মানুষের আমলনামা গুটিয়ে দেওয়া হয়। পুনরায় কেয়ামতের দিন হিসাবের জন্য তা খোলা হবে। যা প্রতিটি ব্যক্তি তা প্রত্যক্ষ করবে। বরং প্রত্যেকের হাতে তা ধরিয়ে দেওয়া হবে, সূরা ইসরা আয়াত নং ১৪-তেও একই কথা বলা হয়েছে), আর যখন আসমানকে আবরণমুক্ত করা হবে (অর্থাৎ আকাশ ভেঙ্গে ফেলা হবে যেমন ছাদ ভেঙ্গে ফেলা হয়)… ইত্যাদি’ (আয়াত নং ১-১১ অনুবাদ সমাপ্ত হল)।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহতালা দুটি শিঙ্গা ফুঁকা সম্পর্কে বলেন, وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَصَعِقَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الأَرْضِ إِلا مَنْ شَاءَ اللَّه ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخْرَى فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ يَنْظُرُونَ অর্থ- আর শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। ফলে আল্লাহ যাদেরকে ইচ্ছা করেন তারা ছাড়া আসমানসমূহে যারা আছে এবং পৃথিবীতে যারা আছে সকলেই বেহুঁশ হয়ে পড়বে। তারপর আবার শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে, তখন তারা দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে। (সূরা যুমার, আয়াত ৬৮)। অধিকন্তু সহীহ বুখারী মুসলিম সহ বিশুদ্ধ সনদে প্রাপ্ত অন্যান্য হাদীস সমূহ দ্বারাও মাত্র ২টা শিঙ্গা ফুঁকা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত আছে, ما بين النفختين أربعون অর্থাৎ (কেয়ামতে শিঙ্গা দুইবার ফুঁকা হবে) দুই শিঙ্গার মধ্যবর্তী সময়ের বিশালতা চল্লিশ। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৪৬৫১, সহীহ মুসলিম হাদীস নং ২৯৫৫)। হাদীসটির ‘চল্লিশ’ সংখ্যাটির প্রকৃত তাৎপর্য অস্পষ্ট। তাই বিশেষজ্ঞ মুহাদ্দিসগণের মাঝে এর মর্মার্থ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। চল্লিশ দিন, মাস কিবা বছর ইত্যাদি যে কোনোটা হতে পারে। এ সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান মহান আল্লাহই রাখেন।

তবে কুরআন এবং গুটিকয়েক হাদীসের ইংগিতসমূহ একত্রিত করে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ বলেছেন, কেয়ামতে ৩টা শিঙ্গা ফুঁকা হবে। প্রথমটির মাধ্যমে পৃথিবীব্যাপী এক মহা ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি হবে। কিন্তু সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাকারক ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) ৩টা শিঙ্গা ফুঁকা সংক্রান্ত রেওয়ায়েত সম্পর্কে লিখেছেন وهو حديث ضعيف مضطرب অর্থাৎ এই বর্ণনা দুর্বল এবং মুদতরিব [বিশৃঙখল জনিত] (ফাতহুল বারী ১১/৩৬৯, ইমাম কুরতুবী সংকলিত তাযকিরাহ পৃ-১৮৪)। সুতরাং কেয়ামতে শিঙ্গা দুইবার ফুঁকা সংক্রান্ত শিক্ষাই বিশুদ্ধ ও অথেনটিক। আল্লাহু আ’লাম।

  • টিকা– হাদীসে মুদতরিব বলে, যে হাদীসের মাঝে সাধারণত রাবীর পরিবর্তন নিয়ে অর্থাৎ সনদের এ স্তরে প্রকৃত রাবী কে—এ নিয়ে অথবা মতন নিয়ে অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে প্রকৃত মতন কোনটি অথবা উভয়ের পরিবর্তন নিয়ে বিরোধ ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় আর এ ব্যাপারে দৃঢ়তার দিক থেকে সবগুলো রেওয়ায়েতই সমান মর্যাদার; কোনো একটিকে অপরটির উপর অগ্রাধিকার দেয়া যায় না, এমন হাদীসকে مضطرب বা মুদতরিব বলা হয়। দেখুন, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) রচিত شرح نخبة الفكر বা শরহে নুখবাতুল ফিকার। সকল মুহাদ্দিসীন একমত যে, মুদতরিব হাদীস অথেনটিক নয়।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী।

Previous article আব্দুর রহমান লখভী ও মির্যা কাদিয়ানী
Next article জানাযার সালাতে সূরা ফাতেহা
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! এটি সম্পূর্ণ দ্বীনি ও অলাভজনক একটি ওয়েবসাইট। প্রতি বছর এটির ডোমেইন ও হোস্টিং ফি হিসেবে আমাকে এর ব্যয় বহন করতে হচ্ছে। যদি উক্ত ব্যয় বহন করতে অপারগ হই তাহলে এই সাইটটি নিশ্চিত বন্ধ হয়ে যাবে। সেহেতু আপনাদের সবার নিকট আবেদন থাকবে যে, আপনারা সাইটটির উক্ত ব্যয় বহনে এতে বিজ্ঞাপন দিতে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করবেন এবং নিজেরাও সহযোগিতায় এগিয়ে আসবেন। বিনীত এডমিন! বিকাশ : ০১৬২৯-৯৪১৭৭৩ (পার্সোনাল)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here