Home Careers কাদিয়ানীদের মিথ্যাচার মাহদী কাদ’আ গ্রাম থেকে বের হওয়া

মাহদী কাদ’আ গ্রাম থেকে বের হওয়া

0
মাহদী কাদ’আ গ্রাম থেকে বের হওয়া

একটি ভ্রান্তি নিরসন ও তাথ্যিক আলোচনা

আমার আহমদী তথা কাদিয়ানীবন্ধুরা এতই সরল যে, মির্যা গোলাম আহমদ সাহেবকে ইমাম মাহদী সাব্যস্ত করতে উদারতার কোনো ক্রুটি করেন না। মিস্টার নরেদ্র মোদিও যদি ভুলক্রমে মির্যা কাদিয়ানীর নামের সাথে ‘ইমাম মাহদী’ বলে ফেলে তাদের জন্য প্রমাণ হিসেবে সেটিও মজবুত দলিল হয়ে যায়। আসলে একটা গোষ্ঠী অথেনটিক দলিল-প্রমাণের দিক থেকে কতটা দেউলিয়া হলে তাদের মানসিক অবস্থা এমন হতে পারে তা ভাবতেও অবাক হই! অথচ বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত ইমাম মাহদী সংক্রান্ত হাদীসগুলো আমাদের জন্য যথেষ্ট। (১২টি সহীহ হাদীসের আলোকে ইমাম মাহদীর পরিচয়)। চলুন, প্রসঙ্গে যাই…! কয়েকদিন আগের কথা। এক কাদিয়ানী কাল্ট একটা আরবী টেক্সট (يخرج المهدي من قرية يقال لها كدعه) পাঠিয়ে বললেন, এ দেখেন! হাদীস বলছে, মাহদী এমন একটি গ্রাম থেকে বেরুবে যেটির নাম হবে কাদ’আ। এর মানে কাদিয়ান নামক গ্রাম থেকে ইমাম মাহদী আবির্ভূত হবেন।

কাদিয়ানীদের পাঠানো ইমেজ

আমি কিছুক্ষণ মনে মনে হাসলাম। চিন্তা করলাম, কিভাবে বুঝাই যে এটা জাল হাদীস। শীয়া পণ্ডিত শেখ আলী হামযা আত-তূসি (১৩৮২-১৪৬২ খ্রিস্টাব্দ) (علي حمزة بن علي بن ملک بن الحسن الزمجي الهاشمي الطوسي المروزي) এর রচনা ‘জাওয়াহেরুল আসরার‘ (جواهر الأسرار) ছাড়া এইরূপ শব্দচয়নে কোথাও পাওয়া যায় না। তিনি কিতাবটির ৫৮ নং পৃষ্ঠায় উক্ত কথাটি উল্লেখ করে একই পৃষ্ঠার শেষ লাইনের আগের লাইনে ফার্সী ভাষায় সে মাহদীর পরিচয় হিসেবে লিখেছেন, (ফার্সী) نام او محمد بن حسن عسکری باشد তার অর্থ হল, “সেই মাহদীর নাম হবে মুহাম্মদ ইবনে হাসান আসকারী।” স্ক্রিনশট দেখুন,

‘জাওয়াহেরুল আসরার ৫৮

আমার আফসোস লাগে এই সরলমনা মানুষগুলোর জন্য। আহা! কত নিকৃষ্ট প্রতারণার জালে এরা বাক্সবন্দি। এই বেচারাগুলোর এ করুণ অবস্থা শুধুই ধর্মীয় শিক্ষা-দীক্ষার অভাবেই নয়, গোঁড়ামির কারণেও বলতে হয়। এরা একদিকে ঈমানের সদাই করে নিঃস্ব, আরেকদিকে কথিত ওসীয়্যতের ধাঁধায় পড়ে বেহেশতি টিকেট ইত্যাদির জাঁতাকলে নিষ্পেষিত। এখানে সাধারণ কাদিয়ানী মানুষগুলাকে আমি কয়েকটি প্রশ্ন শিখিয়ে দিতে চাই, আপনারা দয়া করে আপনাদের নেতাদের প্রশ্ন করুন যে, শীয়া পণ্ডিত আত-তূসীর রচনায় উল্লিখিত কথাটি গ্রহণযোগ্য হলে একই ব্যক্তির একই কিতাবের একই পৃষ্ঠার অপরাপর কথাগুলো কিজন্য আমরা এড়িয়ে যাচ্ছি? আত-তূসীর ‘জাওয়াহেরুল আসরার’-এর কথামতে কিছুক্ষণের জন্য মানলাম যে, ইমাম মাহদীর গ্রামের নাম ‘কাদ’আ‘ (কাদিয়ান), কিন্তু একই পৃষ্ঠায় তো মাহদীর নাম মুহাম্মদ ইবনে হাসান আসকারী-ও লিখা আছে! এখন আমরা একই ব্যক্তির বক্তব্যের কিছু অংশ গ্রহণ করলে আর কিছু অংশ বর্জন কেন করি? এটি কি সুবিধাবাদ জিন্দাবাদ হয়ে গেল না?

দ্বিতীয় প্রশ্নটি করবেন, হাদীস হিসেবে প্রমাণের জন্য মতনের আগে তার সনদ (ধারাবাহিক সূত্র) থাকতে হয়। হাদীসের সবগুলো সংকলনেই সনদ উল্লেখ রয়েছে, যাতে মতনে উল্লিখিত কথাটি ভেরিফাই করে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, এটি প্রকৃতপক্ষে রাসূল (সা.)-এর বাণী হবার গ্যারান্টি কতখানি? নতুবা যার তার কথাকে হাদীস বলে চালিয়ে দেয়া এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ থেকেই যাবে। কিন্তু শীয়া পণ্ডিত আত-তূসী রচিত কিতাবের উক্ত কথাটির কোনো সনদ নেই। তার মানে ভিত্তিহীন কথা। এখন এধরণের কোনো সনদ বিহীন আন-ভেরিফাইড কথা প্রতিপক্ষের কেউ হাদীস হিসেবে পেশ করলে তখন কি কাদিয়ানী নেতারা সেটি মেনে নেবে?

তৃতীয় প্রশ্ন হল, ইমাম জালালুদ্দিন আস-সুয়ূতী (রহ.)-এর একটি রচনাতেও (العرف الوردي في أخبار المهدي) এধরণের কাছাকাছি একটি বর্ণনা এসেছে। ইমাম আবু যুর’আ (রহ.) সহ বহু মুহাদ্দিস বলেছেন, বর্ণনাটির অন্যতম রাবী আব্দুল ওহাব বিন আল-জাহহাক একজন মিথ্যাবাদী, সে হাদীস জাল করত। দেখুন, মীযানুল ই’তিদাল ২/৬৭৯; রাবী নং ৫৩১৬; ইমাম যাহাবী (রহ.)। এবার বর্ণনার কথাটি খেয়াল করুন, (يخرج المهدي من قرية باليمن يقال لها كرعة) এখানে পরিষ্কার করে গ্রামের নাম ‘কার’আ‘ (كَرِعَةٌ) বলা হয়েছে এবং দেশের নাম ইয়েমেন (اليمن) বলেও উল্লেখ রয়েছে। বর্ণনার অনুবাদ, “মাহদী ইয়েমেন এর কার’আ নামক গ্রাম থেকে বেরুবেন” (পৃষ্ঠা নং ৫৬ দ্রষ্টব্য)। এখন এই ‘ইয়েমেন’ শব্দের বর্ণনার কী হবে?

আল-আরফুল ওয়ারদি-৫৬

চতুর্থ প্রশ্ন হল, ইমাম তাবারানী’র রচনাতেও (معجم ابن المقري) শব্দটি কার’আ (كَرِعَةٌ)। মানে শব্দটি ‘কাদ’আ’ হওয়াটা সুনিশ্চিত নয়। তারপর আরেকটি শব্দ এসেছে, ইয়েমেন। তার মানে বুঝানো হয়েছে যে, (يَخْرُجُ الْمَهْدِيُّ مِنْ قَرْيَةٍ بِالْيَمِينِ يُقَالُ لَهَا: كَرِعَةٌ، وَعَلَى رَأْسِهِ عِمَامَةٌ فِيهَا مُنَادٍ يُنَادِي: أَلا إِنَّ هَذَا الْمَهْدِيُّ فَاتَّبِعُوهُ”) মাহদী ইয়েমেনের কার’আ নামক গ্রাম/পল্লী থেকে আবির্ভূত হবেন। সকল মুহাদ্দিস বলেছেন, সনদের বিচারে এটিও অগ্রহণযোগ্য। (পৃষ্ঠা ৮৫)। এই বর্ণনায় সনদ উল্লেখ আছে বটে, কিন্তু সনদের বিচারে বর্ণনাটি সহীহ নয়। এখন এই ইয়েমেন বা কার’আ যুক্ত বর্ণনার কী হবে?

পঞ্চম প্রশ্ন হল, মির্যা কাদিয়ানী সাহেবের রচিত ‘হাকীকাতুল মাহদী’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে, “মাহদী ও প্রতিশ্রুত মসীহ সম্বন্ধে আমার ও আমার জামাতের বিশ্বাস এই যে, মাহদীর আগমন সংক্রান্ত এ ধরণের হাদীসসমূহ কোনো মতেই আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্য নয়। আমার মতে এই গুলোর উপর তিন ধরণের আপত্তি আছে।” দেখুন, হাকীকাতুল মাহদী (বাংলা) পৃষ্ঠা নং ০৭; অনুবাদক সালেহ আহমদ, মুরব্বী সিলসিলাহ্ আলীয়া আহমদীয়া। প্রকাশকাল, অক্টোবর ২০০১ ইং। এখন প্রশ্ন হল, মির্যা কাদিয়ানীর কথা অনুসারে মাহদীর আগমন সংক্রান্ত হাদীসসমূহ কোনো মতেই আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্য না হলে তখন ‘কার’আ’ বা ‘কাদ’আ’ শব্দযুক্ত বর্ণনা যার কোনো সনদও নেই, কিভাবে দলিল হতে পারে? (স্যোসাল মিডিয়া – ফেইসবুক থেকে)।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here