কাদিয়ানী কারা? এক নজরে পড়ে নিন

0
কাদিয়ানী কারা? এক নজরে পড়ে নিন
Who are Qadiani?

কাদিয়ানী কারা? ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ হাইকোর্ট থেকে তাদের বইপুস্তক বাজেয়াপ্ত করে কেন?

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

১. কাদিয়ানী কারা?

কাদিয়ানীরা সাধারণ মানুষকে ধোকা দেয়ার উদ্দেশ্যে বলে যে, তারাও নাকি হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে “শেষনবী” বিশ্বাস করে। অথচ তাদের বই-পুস্তকে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে “শেষনবী” বলে লিখা আছে (স্ক্রিনশট : ১ দ্রষ্টব্য)।। তারা মানুষকে দলে টানার সময় যুগ-ইমাম কিংবা ইমাম মাহদী, মসীহ শব্দগুলো খুব বেশি আওড়ায় কিন্তু মির্যা কাদিয়ানীর “শেষনবী” দাবীর বিষয়ে মুখ খুলেনা, কৌশলে এড়িয়ে যায়। ফলে সাধারণ মানুষ প্রতারিত হয়ে নিজেদের অজান্তেই ইসলাম থেকে বেরিয়ে যায়। এই ধরণের কুফুরী আকীদায় বিশ্বাসী তথাকথিত ‘আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত’-এর অনুসারীরাই কাদিয়ানী নামে পরিচিত। বর্তমানে এ কাদিয়ানী-জামাত ১৪ দলে বিভক্ত (এখানে ক্লিক করে দেখুন, www.markajomar.org/?p=1558)।

বিচারপতি সুলতান হোসেন খান এবং বিচারপতি এ.এম মাহমুদুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ১৯৭২ আর্টিকেলের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীনে ও ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৯৯(ক) মতে ১৯৮৫ সালের ৮ই আগস্ট সর্বসম্মত রায়ে কাদিয়ানীদের ‘ইসলামে নবুওয়ত’ প্রকাশনাকে মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত ও বিদ্বেষপূর্ণ আখ্যা দিয়ে বাজেয়াপ্ত করে। তথ্যসূত্র (৪৫ ডি.এল.আর, ১৯৯৩)। পাকিস্তান সহ ২৫টি রাষ্ট্র তাদেরকে আইনী প্রক্রিয়ায় অমুসলিম রায় দেয়। এদের ‘কাদিয়ানী’ বলার কারণ এদের (ভণ্ড) নবী মির্যা গোলাম আহমদ ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের গুরুদাসপুর জেলার ‘কাদিয়ান’ নামক গ্রামে ১৮৩৯ সালে জন্ম নিয়েছিল। তার অনুসারীরা সারা বিশ্বে সেই গ্রামের নামেই ‘কাদিয়ানী’ পরিচিতি লাভ করে। সে ছিল ১৪শ শতকের একজন মোঙ্গল সেনাধ্যক্ষ তৈমুর বরলাসের বংশধর, পিতা গোলাম মর্তুজা আর মাতা চেরাগ বিবি। তার জীবনে কোনোদিন হজ্জ করার সৌভাগ্য হয়নি (সীরাতে মাহদী বর্ণনা ৬৭২) (স্ক্রিনশট : ২ দ্রষ্টব্য)। ১৯০৮ সালের ২৬ শে মে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে পাকিস্তানের লাহোরে টাট্টিতে মৃত্যুবরণ করে। গুগোলে Top 10 people who died in toilet লিখে সার্চ দিয়ে দেখুন। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি

২. তাদের আসল ধর্ম-পরিচয় কী?

কাদিয়ানীরা সাধারণ মানুষকে দলে টানতে অন্যের সমালোচনায় খুব বেশি ব্যস্ত থাকে। শুধু তারাই সভ্য আর বাদ-বাকি সবাই অসভ্য! এ হল তাদের প্রোপাগাণ্ডার সারকথা। কিন্তু এভাবে যতই মুখরোচক বুলি আওড়ায় না কেন, তারা বরাবরই তাদের আসল ধর্ম-পরিচয় গোপন রাখে। অথচ একজন সাধারণ ব্যক্তিও বুঝতে পারে, যাদের ধর্মবিশ্বাস ইসলামের মৌলিক শিক্ষা-বিরোধী তাদের বাহ্যিক আচরণ ও ব্যবস্থাপনা যতই সুন্দর হোক না কেন, তা কখনোই তাদের জন্য সত্যতার দলিল হয় না।

আমরা জানি, ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট ২০১৮-’২০ প্রতিবেদন মতে ফিনল্যান্ডের নাগরিকগণ নাকি বিশ্বের এক নাম্বার সুখী ও সভ্য। আমার প্রশ্ন, তাই বলে কি দেশটির সভ্য অমুসলিমরাও আল্লাহর নিকট ‘মুসলিম’ বলে গণ্য হয়ে যাবে? অবশ্যই না। তাহলে একই কারণে কথিত সভ্য ও ভালো মানুষ দাবীদার কাদিয়ানীরা খতমে নবুওয়ত অস্বীকার করেও আল্লাহর নিকট মুসলমান গণ্য হতে পারে কিভাবে? অথচ আখেরাতে আল্লাহর নিকট ঈমান ব্যতীত মানুষের বাহ্যিকতার কোনো মূল্যই নেই। এবার কথিত সভ্যতার মুখোশধারী আহমদী (কাদিয়ানী) পরিচয়ধারীদের কলেমা সম্পর্কিত কুফুরী আকীদা জানুন,

মির্যাপুত্র মির্যা বশির আহমদ এম.এ লিখেছে, “কলেমার মধ্যে একটি পার্থক্য অবশ্যই রয়েছে, সেটি হচ্ছে মসীহ মওউদ (তথা মির্যা কাদিয়ানী) চলে আসায় ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ অর্থে একজন রাসূল বৃদ্ধি হয়ে গেছে।” (কালিমাতুল ফছল, ষষ্ঠ অধ্যায় পৃ-৬৮, পিডিএফ-৬৯ [উর্দু], সম্পূর্ণ বক্তব্যের সারাংশ)। (স্ক্রিনশট : ৩ দ্রষ্টব্য)

এরপর মির্যা কাদিয়ানীর নবী, রাসূল দাবী এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সম্পর্কে কতেক অবমাননাকর বক্তব্য দেখুন,

১। কাদিয়ানীরা বিশ্বাস করে মির্যা কাদিয়ানী একজন ‘নবী, রাসূল ও শেষনবী’ ছিল। নাউযুবিল্লাহ! এটি উল্লেখ আছে তাদের রচিত, একটি ভুল সংশোধন পৃ-৩ হতে ১০ (অক্টোবর ২০০১), দাফেউল বালা পৃ-১২ (জুন ২০১৮), আল ওসীয়্যাত পৃ-২০ (জুন ২০১৪), হাকীকাতুল ওহী পৃ-৩৩০, তাযকেরাতুশ শাহাদাতাইন পৃ-৮২ (জুন ২০১৮), উম্মতিনবী পৃ-৯ (মার্চ ২০১১) ইত্যাদী বইগুলোতে। স্ক্যানকপি সহ অনলাইন থেকে পড়তে এখানে ক্লিক করুন! www.markajomar.org/?p=1516

২। আল্লাহতালা সম্পর্কে মির্যা কাদিয়ানী লিখেছে, আল্লাহ নাকি তার প্রতি ওহী করে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি রাসূলগণের সাথেই রয়েছি, আমি ভুলও করি এবং ঠিকও করি।’ নাউযুবিল্লাহ। (রূহানী খাযায়েন ২২/১০৬)। (স্ক্রিনশট : ৪ দ্রষ্টব্য)

৩। মির্যা কাদিয়ানী লিখেছে, হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দ্বিতীয় আবশ্যিক দায়িত্ব ছিল হিদায়াতের প্রচারকার্য সম্পূর্ণ করা। কিন্তু ঐ যুগে মিডিয়া না থাকায় তাঁর পক্ষে তা সম্পূর্ণকরা নাকি সম্ভব হয়নি। (ঐ ১৭/২৬৩)। (স্ক্রিনশট : ৫ দ্রষ্টব্য)

৪। মির্যা কাদিয়ানীর মতে, সে মুহাম্মদ (সা.)-এর এমন এক রূহানীসত্তা যা মুহাম্মদ (সা.) চেয়েও অধিক শক্তিশালী, স্বয়ংসম্পন্ন আর সুদৃঢ়। (খোৎবাতুল ইলহামিয়্যাহ, রূহানী খাযায়েন ১৬/২৭১-৭২) (স্ক্রিনশট : ৬ দ্রষ্টব্য)। অন্য জায়গায় লিখা আছে, বর্তমান সময়টি নাকি মুহাম্মদ (সা.)-এর নামের জ্যোতি বিকাশের সময় নয়। নাউযুবিল্লাহ! দেখুন, আরবা’ঈন পৃ-১১১ [বাংলা] (অক্টোবর ২০১৮) (স্ক্রিনশট : ৭ দ্রষ্টব্য)। এ হল তাদের ধর্মপরিচয়ের সংক্ষেপে চারখানা পয়েন্ট!

৩. ইসলামের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে তারা কী কী উপায়ে ধোকা দিয়ে থাকে?

দেশের বিভিন্ন এলাকা সফর করে স্থানীয় মানুষদের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, কাদিয়ানীরা সাধারণ মানুষকে বুঝায়, ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান আর তাদের মধ্যকার পার্থক্য নাকি শুধুই একজন ইমাম মাহদীকে বিশ্বাস করা নিয়ে। তারা স্থানীয় দরিদ্র মানুষদের আর্থিক সহযোগিতা আর ফ্রি চিকিৎসা সেবার আড়ালেও কাদিয়ানী বানায়। স্থানীয়রা জানান, কাদিয়ানীরা প্রতি বৃহঃস্পতিবার কিংবা শুক্রবার গরু যবেহ করে এলাকার মানুষদের খাওয়ানোর মাধ্যমে সুসম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করে, এভাবেই ধীরে ধীরে তারা মানুষকে কাদিয়ানীবাদের দিকে আকৃষ্ট করে থাকে; মুসলিম শিশু কিশোরদের তাদের মিশনারী স্কুলে ভর্তি করিয়ে তাদের নিজেস্ব সিলেবাসের সমন্বয়ে পাঠদানের মাধ্যমেও কাদিয়ানী বানায়। যারা কাদিয়ানী হয় কিছুদিন পরই তাদেরকে প্ররোচিত করা হয় কথিত বেহেশ্ত-টিকেট কিনতে। আর এজন্য প্রত্যেক (মুছি) সদস্যকে তাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির সর্বনিম্ন দশভাগের একভাগ অর্থ (টাকা/সম্পত্তি) কাদিয়ানী ফাণ্ডে জমা দেয়া বাধ্যতামূলক। তেমনি প্রত্যেক সদস্যের জন্য তাদের আয়ের ষোল পার্সেন্ট হারে আমৃত্যু চাঁদা দেয়াও বাধ্যতামূলক। এরা আসলেই আমাদের ধারণার চেয়েও অতি জঘন্য ভণ্ড ও সাধারণদের ঈমান-আকীদার জন্য মারাত্মক হুমকি। এরা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রশাসনকেও ছাড় দেয়না, ভুলভাল বুঝিয়ে তাঁদেরকেও অপব্যবহার করে থাকে।

সহীহ হাদীস সমূহে হযরত ইমাম মাহদী সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী কিভাবে রয়েছে তা এবার জেনে নেয়া যাক,

ইমাম মাহদী সংক্রান্ত সহীহ হাদীসগুলোয় পরিষ্কার উল্লেখ আছে, ইমাম মাহদীর নাম হবে মুহাম্মদ, পিতার নাম হবে আব্দুল্লাহ, জন্মগ্রহণ করবেন নবী-বংশে হযরত ফাতেমা (রা.)-এর ঔরসে (আরবে), মদীনা থেকে মক্কায় হিজরত করবেন, বয়’আত নেবেন মক্কায়; হাজরে আসওয়াদের পাশে, তিনি আরবের শাসক নিযুক্ত হবেন (আবুদাউদ কিতাবুল মাহদী, মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, ইবনে মাজাহ)। অথচ এর কোনোটাই মির্যা কাদিয়ানীর মধ্যে পাওয়া যায়না। সহীহ বুখারীতে এসেছে, ঈসা (আ.) দ্বিতীয় আকাশে অবস্থান করছেন (হাদীস নং ৩৮৮৭, মানাকিবুল আনসার দ্রষ্টব্য)। তিনি (আ.) শাম-দেশে (দামেস্ক) নাযিল হবেন। (তারীখে দামেস্ক ১/১৭০ ইবনু আসাকীর, রূহানী খাযায়েন ৩/১৭২)। বলে রাখা দরকার, ইমাম মাহদী সংক্রান্ত সহীহ হাদীসসমূহে যা যা পরিচিতি রয়েছে তার কোনো একটিও মির্যা কাদিয়ানীর সাথে মিলেনা। তা সত্ত্বেও সে কিভাবে ইমাম মাহদী হল তা আমাদের বোধগম্য নয়।

এবার ইমাম মাহদীসংক্রান্ত হাদীসসমূহ সম্পর্কে মির্যা কাদিয়ানীর মন্তব্য পড়ুন,

ইমাম মাহদীসংক্রান্ত হাদীসসমূহ সম্পর্কে মির্যা কাদিয়ানী লিখেছে: ‘মাহদীর আগমন সংক্রান্ত হাদীসসমূহ বিতর্কিত।’ (হাকীকাতুল মাহদী-২৭, প্রকাশ অক্টোবর ২০০১) (স্ক্রিনশট : ৮ দ্রষ্টব্য)। আরেক জায়গায় লিখেছে, ‘এ ধরণের হাদীসসমূহ কোনো মতেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।’ (হাকীকাতুল মাহদী পৃ-৭) (স্ক্রিনশট : ৯ দ্রষ্টব্য)। আরেক জায়গায় লিখেছে ‘মাহদীর হাদীসসমূহের এই অবস্থা যে, ইহাদের কোনোটিই ক্রটিমুক্ত নহে। কোনোটিকেই সহীহ হাদীস বলা যায় না।’ (হাকীকাতুল ওহী পৃ-১৭৩ [বাংলা], নভেম্বর ১৯৯৯ইং) (স্ক্রিনশট : ১০ দ্রষ্টব্য)। সুতরাং পরিষ্কার প্রমাণিত হয়ে গেল যে, মির্যা কাদিয়ানী নিজেই নিজের মাহদী দাবীতে একজন মিথ্যাবাদী ও প্রতারক। যেহেতু সে একদিকে মাহদী দাবী করেছে, আরেকদিকে বলছে হাদীসগুলো বিশ্বাসযোগ্য নয়! খুবই চিন্তার বিষয়!

৪. তাদের মুকাবিলায় স্থানীয় সাধারণ মুসলমান ও সচেতন নাগরিকদের করণীয় কী?

কাদিয়ানীরা দেশের যেখানেই আস্তানা গড়ে সেখানেই তারা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা আর প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিভ্রান্ত করে পক্ষে নিয়ে থাকে। কখনো মুসলমানদের নতুন আরেক ফেরকা নামে, কখনো পীর-মুরিদী তরিকা নামেও মুসলমানদের ভেতরে ঢুকে পড়ে। তারা সাধারণ মানুষের সমর্থন পেতে গালভরা হুংকার ছেড়ে বলে, এমন কোনো বাপের বেটা নেই যে আমাদের সাথে বিতর্কে এক মিনিটও টিকতে পারবে! মূলত, ইসলামের আকায়েদ নিয়ে কিংবা তাদের বইপুস্তকগুলোও যাদের পড়া আছে তারা এ সমস্ত হুংকারে মোটেও চিন্তিত হন না। কারণ তাদের বইপুস্তকগুলোই তাদের জন্য মহা মসিবত। এবার দেখা যাক তাদের বইপুস্তকে কী লিখা আছে,

মির্যা কাদিয়ানীর পরিষ্কার বক্তব্য, ‘যারা তার আহবানে সাড়া দেবেনা তারা মুসলমান নয়।’ (তাযকিরাহ-৫১৯, ৪র্থ এডিশন) (স্ক্রিনশট : ১১ দ্রষ্টব্য)। আর তার পুত্র মির্যা বশির উদ্দীন লিখেছে ‘যারা মির্যা কাদিয়ানীর নামও শুনেনি এমন ব্যক্তিও কাফের।’ (মির্যাপুত্রের রচনাসমগ্র আনওয়ারুল উলূম-৬/১১০ অনলাইন এডিশন) (স্ক্রিনশট : ১২ দ্রষ্টব্য)। একই পুস্তকের ৩নং খণ্ডের ১৪৮ নং পৃষ্ঠায় লিখা আছে, ‘আমাদের জন্য ফরজ হল, আমরা গয়ের আহমদীদের (অর্থাৎ অ-কাদিয়ানীদের) যেন মুসলমান মনে না করি, তাদের পেছনে নামায না পড়ি; কেননা তারা খোদাতালার একজন নবীকে অস্বীকারকারী।’ নাউযুবিল্লাহ। আরও দেখুন, ‘আনওয়ারে খিলাফত’ পৃষ্ঠা নং ৯৩, অনলাইন এডিশন। (স্ক্রিনশট : ১৩ দ্রষ্টব্য)

একই ব্যক্তির রচনা ‘বারাকাতে খিলাফত’-এর ৮৮ নং পৃষ্ঠায় লিখা আছে ‘কোনো আহমদী যেন গয়ের আহমদীর নিকট কন্যা দান না করে, এটি হযরত মসীহে মওউদের (অর্থাৎ মির্যা কাদিয়ানীর) কড়া নির্দেশ।’ (স্ক্রিনশট : ১৪ দ্রষ্টব্য)। বলে রাখা দরকার, আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আর প্রশাসনিক দায়িত্বশীলবৃন্দ আগে যদিও বা পরিচয় গোপনকারী এ গোষ্ঠী সম্পর্কে ধারণা না থাকায় এদের মুসলিম ভেবেছিলেন! সে হিসেবে উদারমনে সহযোগিতাও করেছিলেন। অথচ এদের বই-পুস্তকের বিবরণ মতে শুধুমাত্র এরা ছাড়া আপনারা-আমরা কেউই কিন্তু মুসলমান নই! অতএব আপনাদের দ্বারা আর যেন ভুল না হয় সে প্রত্যাশাই করছি। নইলে প্রিয়নবী মুহাম্মদে আরাবী (সা.)-এর নবুওয়ত আর রেসালতের সিংহাসন জবরদখলকারী কাদিয়ানী জামাতকে সহযোগিতা করার গুনাহের দরুন আখেরাতে খুবই লজ্জিত হতে হবে, যে লজ্জার কোনো সীমা থাকবেনা। এবার স্থানীয় সাধারণ মুসলমানদের ঈমান-হেফাজতের উদ্দেশ্যে একজন মুসলমান হিসেবে সবার কয়েকটি করণীয় উল্লেখ করছি,

সবার করণীয় :

১. আক্রান্ত এলাকায় মক্তব-মাদরাসা না থাকলে তাহলে দ্রুততার সাথে তা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্থানীয়দের জন্য ইসলামী তা’লীমের ব্যবস্থা করা ও একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দাঈ নিযুক্ত করা।
২. ইতিমধ্যে যারা বিভ্রান্ত হয়ে কাদিয়ানী হয়েছে তাদেরকে উত্তমভাবে দাওয়াত দেয়া এবং ইসলামে ফিরে আনতে চেষ্টা করা।
৩. নিকটতম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)-কে বিষয়টি যুক্তিপ্রমাণসহ বুঝিয়ে দেয়া, প্রয়োজনে প্রশাসনিক সহযোগিতাও নেয়া।
৪. প্রসিদ্ধ ইসলামী গবেষণা সেন্টার ‘মারকাযুদ দাওয়া আলইসলামিয়া’ (হযরতপুর, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা)-এর সাথে যোগাযোগ রাখা।

দীর্ঘ আলোচনার ইতিটানার আগে দুইটি প্রশ্নোত্তর :

১। প্রশ্ন : ‘শেষনবী’ অর্থ কী? ঈসা (আ.) কোথায় ও কী হিসেবে নাযিল হয়ে আসবেন?

উত্তর : ‘শেষনবী’-এর সংজ্ঞায় বরেণ্য ইমাম যামাখশারী (মৃত. ৫৩৮ হিজরী) বলেছেন, فإن قلت: كيف كان آخر الأنبياء وعيسى ينزل في آخر الزمان؟ قلت: معنى كونه آخر الأنبياء أنه لا ينبأ أحد بعده، وعيسى ممن نبئ قبله، وحين ينزل ينزل عاملا على شريعة محمد، مصليا إلى قبلته، كأنه بعض أمّته অর্থাৎ….আমি উত্তরে বলি, ‘শেষনবী বলে যাঁর পরে আর কাউকে নবী বানানো হবেনা আর ঈসা (আ.)-কে তো আগেই নবী বানানো হয়েছে। আর তিনি যখন নাযিল হবেন তখন তিনি মুহাম্মদ (সা.)-এর শরীয়তের অধীনে ও তাঁরই ক্বেবলামুখী হয়ে তাঁরই একজন উম্মত হিসেবে সালাত আদায়কারী হবেন।’ (তাফসীরে কাশশাফ-[تفسير كشاف] খণ্ড নং-২২, সূরা আহযাব-৪০)। সহীহ মুসলিম কিতাবুল ফিতান অধ্যায়ের হাদীস নং ৭০৭৮ অনুসারে “শেষযুগে হযরত ঈসা (আ.) দু’জন ফেরেশতার মাধ্যমে দামেস্কে নাযিল হবেন“, কিন্তু তিনি মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মত হিসেবেই নাযিল হবেন; তাঁর আগমনে নবুওয়তের দরজায় কোনো প্রকারেরই ধাক্কা লাগবেনা। কেননা তিনি নতুন করে নবুওয়তপ্রাপ্তির দাবী করবেন না এমনকি নবুওয়তের দায়িত্বেও থাকবেন না। যে কারণে ‘ঈসা (আ.) আবার আসলে মুহাম্মদ (সা.) কিভাবে শেষনবী থাকেন’—কাদিয়ানীদের এ ধরণের উল্টাপাল্টা প্রশ্নের কোনো মূল্যই নেই।

২। প্রশ্ন : ঈসা (আ.)-কে ‘আকাশে সশরীরে উঠিয়ে নেয়া’ এবং দ্বিতীয়বার ‘আকাশ থেকে’ নাযিল হওয়া সম্পর্কিত সহীহ হাদীসগুলোর কয়েকটির রেফারেন্স দিন!

উত্তর : দেখুন-আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে সা’আদ (মৃত. ২৩০ হিজরী)-এর ১১ খণ্ডে সংকলিত প্রাচীনতম হাদীসগ্রন্থ ‘আত-তবকাতুল কোবরা’ খ-১ পৃ-৩৫-৩৬ (رَفَعَهُ بِبَدَنِهِ); শায়খ আহমদ আব্দুর রহমান আলবান্না (১৮৮২-১৯৫৮)-এর ২৪ খণ্ডে সংকলিত ‘আল ফাতহুর রব্বানী লি তারতীবে মুসনাদে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল আশ-শায়বানী’ খ-২০ পৃ-১৪১ দ্রষ্টব্য (لَمَّا اَرَادَ اللهُ اَنْ يَّرْفَعَ عِيْسَي اِلَى السَّمَاءِ); ইমাম আবুবকর আহমদ আল-বাজ্জারের ১৮ খণ্ডে সংকলিত ‘মুসনাদে বাজ্জার’ হাদীস নং ৯৬৪২ (يَنْزِلُ عِيْسَى بْنُ مَرْيَمَ مِنَ السَّمَاءِ); ইমাম নূরুদ্দীন আল-হাইসামীর ১২ খণ্ডে সংকলিত ‘মাজমাউয যাওয়ায়েদ’ খ-৭ পৃ-৩৪৯ (يَنْزِلُ عِيْسَى بْنُ مَرْيَمَ مِنَ السَّمَاءِ); ইমাম বায়হাক্বীর ২ খণ্ডে সংকলিত ‘আল আসমা ওয়াস সিফাত’ খ-১ পৃ-৩৩১, হাদীস নং ৮৯৫ (مِنَ السَّمَاءِ); সহীহ মুসলিম হাদীস নং ২৮৯৬ ঈসা ইবনে মরিয়ম এসে হজ্জ করবেন (وَالَّذِىْ نَفْسِىْ بِيَدِهِ لَيُهِلَّنَّ اِبْنُ مَرْيَمَ بِفَجِّ الرَّوْحَاءِ حَاجًّا اَوْ مُعْتَمِرًا اَوْ لَيَثْنِيَنَّهُمَا); ইমাম আলী আল মুত্তাকি আলহিন্দী-এর ১৮ খণ্ডে সংকলিত ‘কাঞ্জুল উম্মাল’ খ-১৪ পৃ-৬১৯ (مِنَ السَّمَاءِ); সহীহ মুসলিমের সূত্রে মির্যায়ী রচনাসমগ্র ‘রূহানী খাযায়েন’ খ-৩ পৃ-১৪২ (صحیح مسلم کی حدیث میں جو یہ لفظ موجود ہے کہ حضرت مسیح جب آسمان سے اتریں گے)؛ মালফুযাত খ-৫ পৃ-৩৩ (آپ نے فرمایا تھا کہ مسیح آسمان پر سے جب اترےگا)। সংক্ষেপে। বিস্তারিত অনলাইন থেকে পড়তে এখানে ক্লিক করুন। www.markajomar.org/?p=2102

পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ’র আলোকে আকীদায়ে খতমে নবুওয়ত :

১। আল্লাহতালা বলেন (আরবী) مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ وَلَكِنْ رَسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا অর্থ, “মুহাম্মদ তোমাদের কোনো পুরুষের পিতা নন, তবে আল্লাহর রাসূল ও সর্বশেষ নবী। আর আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞ।” (সূরা আহযাব, আয়াত নং ৪০)। প্রকাশ থাকে যে, মির্যা কাদিয়ানীর ২৩ খণ্ডে প্রকাশিত রচনাসমগ্র ‘রূহানী খাযায়েন’-এর ৩য় খণ্ডের ৪৩১ নং পৃষ্ঠায় লিখা আছে, ‘খাতামান নাবিয়্যীন’ অর্থ নবীগণের সমাপ্তকারী। যদিও সে পরবর্তীতে নবী দাবী করে তার উক্ত বয়ান পাল্টে ফেলে এবং উদ্দেশ্যমূলক মনগড়া ব্যাখ্যার পেছনে দৌঁড়ায়।

২। শেষনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আকীদায়ে খতমে নবুওয়তের সঠিক শিক্ষা প্রদান করে আমাদের জন্য কত চমৎকার উপমা পেশ করে গেছেন দেখুন! তিনি (সা.) ইরশাদ করেন (আরবী), أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ مَثَلِيْ وَمَثَلَ الأَنْبِيَاءِ مِنْ قَبْلِيْ كَمَثَلِ رَجُلٍ بَنَى بَيْتًا فَأَحْسَنَهُ وَأَجْمَلَهُ إِلَّا مَوْضِعَ لَبِنَةٍ مِنْ زَاوِيَةٍ فَجَعَلَ النَّاسُ يَطُوفُوْنَ بِهِ وَيَعْجَبُوْنَ لَهُ وَيَقُوْلُوْنَ هَلَّا وُضِعَتْ هَذِهِ اللَّبِنَةُ قَالَ فَأَنَا اللَّبِنَةُ وَأَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّينَ

(অর্থ) “আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণের অবস্থা এমন যে, এক ব্যক্তি যেন একটি গৃহ নির্মাণ করল। তাকে সুশোভিত ও সুসজ্জিত করল। কিন্তু এক পাশে একটি ইটের জায়গা খালি রয়ে গেল। অতঃপর লোকজন এর চারপাশে ঘুরে আশ্চর্য হয়ে বলতে লাগল ঐ শূন্যস্থানের ইটটি লাগানো হল না কেন! নবী (সা.) বলেন, আমিই সে ইট। আর আমিই সর্বশেষ নবী।” (বুখারী, হাদীস নং ৩৫৩৫)। জ্ঞানীদের বুঝার জন্য এই হাদীসটুকুই যথেষ্ট। (কোনো তথ্য মিথ্যা প্রমাণ করতে পারলে উপযুক্ত পুরষ্কার দেয়া হবে)।

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য :

(স্ক্রিনশট : ১ দ্রষ্টব্য)
(স্ক্রিনশট : ২ দ্রষ্টব্য)
(স্ক্রিনশট : ৩ দ্রষ্টব্য)
(স্ক্রিনশট : ৪ দ্রষ্টব্য)
(স্ক্রিনশট : ৫ দ্রষ্টব্য)
(স্ক্রিনশট : ৬ দ্রষ্টব্য)
(স্ক্রিনশট : ৭ দ্রষ্টব্য)
(স্ক্রিনশট : ৮ দ্রষ্টব্য)
(স্ক্রিনশট : ৯ দ্রষ্টব্য)
(স্ক্রিনশট : ১০ দ্রষ্টব্য)
(স্ক্রিনশট : ১১ দ্রষ্টব্য)
(স্ক্রিনশট : ১২ দ্রষ্টব্য)
(স্ক্রিনশট : ১৩ দ্রষ্টব্য)
(স্ক্রিনশট : ১৪ দ্রষ্টব্য)

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী
শিক্ষাবিদ ও গবেষক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here