Home Blog

দেশের যেসব জেলায় কাদিয়ানী আস্তানার খোঁজ পাওয়া গেছে

কাদিয়ানী আস্তানাগুলোর বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে এখুনি তাদের মাঝে গঠনমূলক দাওয়াতি কাজ আরম্ভ করা জরুরি, নইলে বিভ্রান্ত অনেক ভাই-বোন ‘ঈমানহারা’ হয়ে চিরতরে জাহান্নামি হয়ে যেতে পারে। আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীনের জন্য মেহনত করার তাওফিক দিন, আমীন। উল্লেখ্য, তাদের আস্তানা গুলোর তথ্যটি মূলত ২০১৩ সালের জরিপ অনুসারে। এর বাহিরেও আমরা তাদের আরও কিছু নতুন আস্তানা অন্তর্ভুক্ত করেছি। আমরা আপনাদের মাধ্যমে তাদের বাদ পড়া অবশিষ্ট আস্তানাগুলোর খোঁজ পাওয়া মাত্রই এখানে সেগুলোও অন্তর্ভুক্ত করে দেব, ইনশাআল্লাহ। আমাদের সাথে তথ্য শেয়ার করুন এখানে WhatsApp বা nabifeni44@gmail.com।

চট্টগ্রাম বিভাগ :

চট্টগ্রাম-৫টি। ১. মসজিদ বায়তুল বাসেত, চকবাজার, চট্টগ্রাম শহর। ২. ষোলশহর। ৩. পতেঙ্গা হালকা, বিজয়নগর। ৪. মুরাদপুর ইউনিয়ন, সীতাকুন্ড উপজেলা। ৫. নামায কেন্দ্র, মেয়র গলি, চশমা হিল আবাসিক এলাকা, চট্টগ্রাম।

বিবাড়িয়া-১৫টি। ১. মসজিদুল মাহদী, গ্রাম ঘাটুরা, সুহিলপুর ইউ. বিবাড়িয়া সদর উপজেলা। ২. মসজিদে বায়তুল ওয়াহেদ, গ্রাম কান্দিপাড়া, সদর জেলা। ৩. মসজিদে বাইতুল মাহদী, আশুগঞ্জ উপজেলা, দুর্গাপুর ইউ.। ৪. আহমদীয়া মসজিদ, তালশহর ইউ. আশুগঞ্জ উপজেলা। ৫. আহমদীয়া মসজিদ, সরাইল উপজেলা। ৬. বাশারুক গ্রাম নামায কেন্দ্র, নবিনগর উপজেলা। ৭. মসজিদে আলফজল, বিজয়নগর থানার বিষ্ণপুর ইউ.। ৮. ক্ষুদ্র আহমদীয়া মসজিদ, সদর উপজেলার পশ্চিম দিকে সর্বশেষ একটি গ্রাম ক্ষুদ্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া -তে এটি অবস্থিত। ৯. মসজিদে বাশারাত, আশুগঞ্জ থানার তারুয়া ইউ.। ১০. আহমদীয়া মসজিদ, গ্রাম শালগাঁও, নটাই (দক্ষিণ) ইউ. বিবাড়িয়া সদর। ১১. আহমদীয়া নামায কেন্দ্র, দেবগ্রাম, আখাউড়া উপজেলা। ১২. শাহবাজপুর ইউ. সরাইল থানা। ১৩. শতবার্ষিকী স্মারক মসজিদ, গ্রাম কোড্ডা, বাসুদেব ইউ. বিবাড়িয়া সদর। ১৪. নামায কেন্দ্র, বাসুদেব, বিবাড়িয়া সদর। ১৫. গ্রাম নাসিরপুর, নাসিরনগর।

চাঁদপুর-১টি। চরদুঃখিয়া (পূর্ব ইউ.) ফরিদগঞ্জ উপজেলা, চাঁদপুর।

কুমিল্লা-১টি। কোটবাড়ি বিশ্বরোড নন্দনপুর গ্রাম, কুমিল্লা।

ফেনী-২টি। ১. গ্রাম ফাজিলপুর, ডব্লিউ. বি ফাজিলপুর কাদরী হাইস্কুল সংলগ্ন, ইউনিয়ন ফাজিলপুর। ২. গ্রাম বাদুরিয়া, মসজিদে নূর সৈয়দ (কুঠিরহাট বাজারের দক্ষিণ পার্শ্বে), বাদুরিয়া ভুঁইয়া বাড়ীর দরজায়, ২নং বগাদানা ইউ. সোনাগাজী, ফেনী।

নোয়াখালী-১টি। আহমদীয়া নামায কেন্দ্র, চৌমুহনী মন্ডল পাড়া, নোয়াখালী।

রাঙ্গামাটি-১টি। মাহিল্লা, কবিরপুর গ্রাম, আমতলী ইউ., বাঘাইছড়ি উপজেলা, রাঙ্গামাটি।

ময়মনসিংহ বিভাগ :

ময়মনসিংহ-৪টি। ১. আহমদীয়া মসজিদ, আমজাদ বেপারী রোড, আকুয়া দক্ষিণপাড়া। ২. আ. মস. ধানীখোলা ইউ. ত্রিশাল উপজেলা। ৩. ফুলবাড়িয়া আ. মস. ফুলবাড়িয়া উপজেলা। ৪. সোহাগি আহমদীয়া মসজিদ, সোহাগি ইউ. ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা।

জামালপুর-৬টি। ১. মসজিদে মোবারাকা, গ্রাম হোসনাবাদ, মহাদান ইউ. সরিষাবাড়ি উপজেলা। ২. ছোনটিয়া আ. মস., ১৪ নং দিগপাইত ইউ. সদর জেলা। ৩. নয়াপাড়া আ. মস. নয়াপাড়া ইউ. সদর জেলা। ৪. বলারদিয়ার আ. মস. ডোয়াইল ইউ. সরিষাবাড়ী। ৫. গ্রাম সেংগুয়া, ডাকঘর তুলসীপুর, সরিষাবাড়ী উপজেলা। ৬. কয়রা নামাযঘর, গ্রাম কয়রা, ডাকঘর পাটাদহ, সাতপোয়া ইউ, মাদারগঞ্জ উপজেলা।

শেরপুর-১টি। মসজিদে নাসের, রাংটিয়া (ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা), ঝিনাইগাতী উপজেলা, শেরপুর।

সিলেট বিভাগ :

হবিগঞ্জ-১টি। ১. আহমদীয়া মসজিদ, গ্রাম জামালপুর, চুনারুঘাট, হবিগঞ্জ।

মৌলভীবাজার-১টি। আহমদীয়া মসজিদ, গ্রাম পাগুলিয়া, মুস্তফাপুর ইউ, সদর উপজেলা।

সুনামগঞ্জ-৪টি। ১. আহমদীয়া মসজিদ, ইসলামগঞ্জ, গৌরারং ইউ, সদর উপজেলা। ২. উমেদপুর গ্রাম নামায কেন্দ্র, বেহেলী ইউ. জামালগঞ্জ উপজেলা। ৩. সেলবরষ নামায কেন্দ্র, সেলবরষ ইউ, ধর্মপাশা উপজেলা। ৪. মসজিদে মাসরূর, ইসলামগঞ্জ, সুনামগঞ্জ (সিলেট হাওর অঞ্চল)।

ঢাকা বিভাগ :

ঢাকা-৭। ১. দারুত তবলীগ মসজিদ ও মিশনারী কমপ্লেক্স, বকশিবাজার। ২. আহমদীয়া মসজিদ, গ্রাম উত্তর বাহেরচর, তারানগর ইউ. কেরানীগঞ্জ উপজেলা, ঢাকা। ৩. আহমদীয়া মসজিদ মিরপুর-২ নাসিমবাগ, ঢাকা-১২১৬। ৪. আল বাইতুল ইসলাম মসজিদ, তেজগাওঁ, ঢাকা। ৫. বায়তুল হাদী, ২৮৯ পূর্ব নাখালপাড়া, তেজগাঁও ঢাকা-১২১৫। ৬. মসজিদুল হুদা, পশ্চিম নন্দীপাড়া, ঢাকা-১২১৯। ৭. আহমদীয়া মসজিদ, আশুলিয়া, সাভার।

কিশোরগঞ্জ-৮। ১. আহমদীয়া মসজিদ, কটিয়াদী উপজেলা। ২. মসজিদে হাদী, বীরপাইকশা, শাহেদল ইউ. হোসেনপুর উপজেলা। ৩. বেতাল আ. মস. বেতাল গ্রাম, মসূয়া ইউনিয়ন। ৪. তেরগাতী গ্রাম, মুমুরদিয়া ইউ. কটিয়াদী। ৫. গালিমগাজী, মহিনন্দ ইউ. সদর উপজেলা। ৬. হোসেনপুর আ. মস. হোসেনপুর উপজেলা। ৭. হোসেনপুর উপজেলার চরহাজীপুর গ্রামে আহমদীয়া নামাজ কেন্দ্র। ৮. বৈরাগীরচর হালকা আ. মস., মসূয়া ইউ. কটিয়াদী।

মুন্সিগঞ্জ-১টি। সদর উপজেলার রমজান বেগ আহমদীয়া মসজিদ, মুন্সিগঞ্জ।

নরসিংদী-১টি। মসজিদুল মাহদী, চরসিন্দুর ইউ. পলাশ, নরসিংদী।

নারায়নগঞ্জ-২টি। ১. মসজিদ নূর, ফতুল্লা নারায়নগঞ্জ। ২. মিশনপাড়া আহমদীয়া মসজিদ, নবাব সলিমুল্লাহ রোড।

টাঙ্গাইল-২টি। ১. চাঁনতারা আহমদীয়া মসজিদ, ঘাটাইল উপজেলা, টাঙ্গাইল। ২. বানিয়াজান আহমদীয়া মসজিদ, ধনবাড়ী উপজেলা।

গাজীপুর ১টি। জোরপুকুর পাড়, জয়দেবপুর, গাজীপুর মহানগর। এটি তাদের অস্থায়ী কার্যালয়।লোকেশনঃ জোরপুকুর পাড় মোড়ের ৫০ গজ উত্তরে, তালেব হাজী সাবের বাসার দক্ষিণ পাশে ‘খুকু’ নামের জনৈকার বাসা। তাদের স্থায়ী কার্যালয় হচ্ছে, রাজবাড়ী, জয়দেবপুর, গাজীপুর মহানগর। আর তাদের অস্থায়ী এবং স্থায়ী কার্যালয়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব মাত্র অর্ধ কিলোমিটার।লোকেশনঃ রাজবাড়ী মাঠ সংলগ্ন গাজীপুর মহিলা কলেজের পূর্বপাশ হয়ে ‘সাফা টাউয়ার’ এর দক্ষিণে ও ‘সিনা মসজিদ’ সংলগ্ন। জেনে রাখা দরকার যে, কাদিয়ানীরা একই এলাকার বাসিন্দা আল-মাহমুদ হুরফে বাবু, পিতা-শামসুল হক নামের জনৈক ব্যক্তির কাছ থেকে আড়াই কাঠা জমি ‘ওয়াকফ’ বাবদ গ্রহণ করে। সে সাথে আরও আড়াই কাঠা জমি সহ মোট ৫ কাঠা জমির উপর উপাসনালয় নির্মাণের পরিকল্পনা করে। ধারণা করা যাচ্ছে যে, যদি তাদের উক্ত পরিকল্পনা সফল হয় তাহলে বাংলাদেশে তাদের নির্মিত উপাসনালয় গুলোর মধ্যে সব চেয়ে ব্যয়বহুল “উপাসনালয়” হবে গাজীপুরের উক্ত “কাদিয়ানী উপাসনালয়”। এর ফলে ঐ এলাকায় তাদের দাপট আরও বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে এবং সাধারণ মানুষকে তারা আরও অনেক বেশি বিভ্রান্ত করে “কাদিয়ানী” বানাতে সামর্থ্য হবে। উল্লেখ্য, গাজীপুরের ঐ এলাকায় কাদিয়ানীরা আনুমানিক নব্বই দশক থেকেই তৎপরতা চালিয়ে আসছে। বর্তমানে ঐ মহল্লায় সর্বমোট ৪০টির-ও বেশি কাদিয়ানী পরিবার বসবাস করছে।

খুলনা বিভাগ :

খুলনা-৩। ১. বায়তুর রহমান আহমদীয়া মসজিদ, খুলনা সদর। ২. দারুল ফযল আহমদীয়া মস. ১৫/১ নিরালা আবাসিক এলাকা, ক্রস-২, রঘুনাথপুর ইউ, ডুমুরিয়া উপজেলা, খুলনা-৯১০০। ৩. ঘড়িলাল গ্রাম, কয়রা ইউ. কয়রা উপজেলা।

চুয়াডাঙ্গা-৪। ১. ভাটিয়াপাড়া ইউ. চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা। ২. মসজিদে মোবারক, সন্তোষপুর, জীবননগর। ৩. শৈলমারী গ্রাম, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা। ৪. বায়তুস সোবহান আহমদীয়া মসজিদ, উথলী ইউ. জীবননগর উপজেলা।

যশোর-২। মসজিদে মাহমুদ, রঘুনাথপুর গ্রাম, ঝিকরগাছা ইউ. যশোর। ২. সর্পরাজপুর আহমদীয়া মসজিদ, সর্পরাজপুর গ্রাম, জগদীশপুর ইউ. চৌগাছা উপজেলা, যশোর।

কুষ্টিয়া-৪। ১. নাসেরাবাদ, গ্রাম মহিষাখালী, চিথলিয়া ইউ, মিরপুর উপজেলা, কুষ্টিয়া। ২. নাসেরাবাদ, গ্রাম কোলদিয়াড়, থানা দৌলতপুর, কুষ্টিয়া। ৩. কোর্টপাড়া, কুষ্টিয়া সদর। ৪. উত্তর ভবানীপুর, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা।

সাতক্ষীরা-৬। ১. মসজিদ বায়তুস সালাম, সুন্দরবন (সাতক্ষীরা থেকে প্রায় ৭০ কি.মি. দূরে শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন), সাতক্ষীরা। ২. বড়ভেট খালি হালকা আহমদীয়া মসজিদ, যতীন্দ্রনগর গ্রাম, মুন্সীগঞ্জ, শ্যামনগর। ৩. মীরগাং আ. মস. মুন্সীগঞ্জ ইউ. শ্যামনগর উপজেলা। ৪. বলিয়ানপুর, কেরালকাতা ইউ. কলারোয়া উপজেলা, সাতক্ষীরা। ৫. ঝাউডাঙ্গা ইউ. সাতক্ষীরা সদর জেলা। ৬. গ্রাম খেলার ডাঙ্গা, লাবসা ইউ. সদর জেলা।

বরিশাল বিভাগ :

বরগুনা-৩টি। ১. মসজিদুল মাহদী, খাকদান গ্রাম, কুকুয়া ইউ, আমতলী উপজেলা। ২. মসজিদুল হাদী, গ্রাম কৃষ্ণনগর, কুকুয়া ইউ, আমতলী উপজেলা, বরগুনা সদর। ৩. আহমদীয়া মুসলিম জামাত, গ্রাম পূর্ব কাউনিয়া, পোস্ট কাউনিয়া হাট, উপজেলা বেতাগী, জেলা বরগুনা। স্থানীয় কাদিয়ানী মোয়াল্লেম মৌ. ফরহাদ হোসেন (সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং)।

পটুয়াখালী-২টি। ১. আহমদীয়া মসজিদ, মিঠাপুকুর পাড়, পুরান বাজার, সদর উপজেলা, পটুয়াখালী। ২. বড় বাইশদীয়া আহমদীয়া মসজিদ ও মিশনারী কমপ্লেক্স, রাঙ্গাবালী উপজেলা, পটুয়াখালী।

রাজশাহী বিভাগ :

রাজশাহী-৩টি। ১. বাইতুল আওয়াল, রাজশাহী শহর। ২. তাহেরাবাদ (খাঁয়েরহাট) আহমদীয়া মসজিদ, ২ নং গড়গড়ি ইউ. বাঘা উপজেলা। ৩. বাগমারা আহমদীয়া মসজিদ, শুভডাঙ্গা ই্উ. সৈয়দপুর চকপাড়া গ্রাম, রাজশাহী।

বগুড়া-৩টি। ১. আহমদীয়া মসজিদ ও মিশন কমপ্লেক্স, সেউজগাড়ী লেন, গ্রাম সুত্রাপুর, বগুড়া সদর। ২. নিউসোনাতলা আহমদীয়া মসজিদ, সারিয়াকান্দি উপজেলা, বগুড়া। ৩. কড়িতলা আহমদীয়া মসজিদ, চন্দনবাইশা ইউ., সারিয়াকান্দি, বগুড়া।

নাটোর-৪। ১. পুরুলিয়া গ্রাম, গুরুদাসপুর থানা। ২. মহারাজপুর, চাপিলা ইউ. গুরুদাসপুর থানা। ৩. মসজিদে হাশেম তেবাড়িয়া ইউ. নাটোর সদর উপজেলা। ৪. কাফুরিয়া আহমদীয়া মসজিদ, কাফুরিয়া ইউ. নাটোর সদর উপজেলা।

পাবনা-১টি। নূরনগর আহমদীয়া মসজিদ, ৪ নং নূরনগর ইউ., ঈশ্বরদী উপজেলা, পাবনা।

সিরাজগঞ্জ-১টি। সিরাজগঞ্জ আহমদীয়া নামাজ কেন্দ্র।

রংপুর বিভাগ :

রংপুর-৮। ১. মুন্সিপাড়া, সদর জেলা। ২. মাহিগঞ্জ থানা, রংপুর। ৩. শ্যামপুর, বদরগঞ্জ উপজেলা, রংপুর সদর। ৪. দিলালপুর গ্রাম, রাধানগর ইউ, বদরগঞ্জ উপজেলা। ৫. বড় দরগাহ ইউ, পীরগঞ্জ উপজেলা। ৬. দিলালপুর হালকা, রাধানগর ইউ। ৭ শিবপুর, শ্যামপুর আহমদীয়া জামাত, বদরগঞ্জ উপজেলা। ৮. কাউনিয়া আহমদীয়া মসজিদ, টেপামধুপুর ইউ. (তিস্তা নদীর তীরে অবস্থিত) কাউনিয়া উপজেলা, রংপুর।

দিনাজপুর-৯। ১. আউলিয়াপুর, দিনাজপুর সদর। ২. বীরগঞ্জ বড় হাট আহমদীয়া নামায কেন্দ্র। ৩. বীরগঞ্জ উপজেলা। ৪. গ্রাম জগদল, বীরগঞ্জ উপজেলা । ৫. গ্রাম ভাতগাঁও, ৫নং সুন্দরপুর ইউ, কাহারোল উপজেলা। ৬. ডোহাণ্ডা আহমদীয়া মসজিদ, মুকন্দপুর ইউ, কাহারোল। ৭. গ্রাম হেলেঞ্চাকুড়ি (পূর্ব সাদিপুর), ৫নং সাদিপুর ইউ, কাহারোল উপজেলা। ৮. মসজিদে মাহমুদ, রামপুর ইউ, পার্বতীপুর উপজেলা, দিনাজপুর। ৯. বড় গুড়গোলা আহমদীয়া মসজিদ, দিনাজপুর সদর উপজেলা।

গাইবান্ধা-১টি। মসজিদে সালাম, পূর্ব মদনপাড়া গ্রাম, কঞ্চিপাড়া ইউ, ফুলছড়ি উপজেলা।

নীলফামারী-২টি। ১. মসজিদে তাহের, চড়াইখোলা ইউ, সদর উপজেলা। ২. সৈয়দপুর আহমদীয়া নামায কেন্দ্র, সৈয়দপুর উপজেলা।

পঞ্চগড়-৬টি। ১. আহমদনগর আহমদীয়া মসজিদ ও মিশন কমপ্লেক্স, সদর জেলা। ২. দারুল মোবারক আহমদীয়া মসজিদ, গ্রাম আহমদনগর। ৩. সোনাচান্দি, বনগ্রাম ইউ, বোদা উপজেলা। ৪. শালসিঁড়ি মসজিদ ও মিশনারী কমপ্লেক্স। ৫. ডাঙ্গাপাড়া, সাকোয়া ইউ, বোদা। ৬. গ্রাম কমলাপুকুরী, মাড়েয়া বামনহাট ইউ, বোদা।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক মুহাম্মদ নূরুন্নবী।

আল্লাহ’র জাতের জন্য ‘শরীর’ সাব্যস্ত করা যাবে কি?

প্রশ্ন : আল্লাহ’র জাতের জন্য ‘শরীর’ সাব্যস্ত করা যাবে কি?

উত্তর : বিশিষ্ট হাদীসবিশারদ ও দার্শনিক ইমাম, শায়খ ইবনু তাইমিয়্যাহ রাহি. (৭২৮ হি.) এ সম্পর্কে লিখেছেন,

فهذا الجسم في لغة العرب، وعلى هذا فلا يقال للهواء : جسم، ولا للنَّفَسِ الخارج من الإنسان : جسم، ولا لروحه المنفوخة فيه : جسم. ومعلوم أن اللّه ـ سبحانه ـ لا يماثل شيئًا من ذلك، لا بدن الإنسان ولا غيره، فلا يوصف اللّه ـ تعالى ـ بشيء من خصائص المخلوقين، ولا يطلق عليه من الأسماء ما يختص بصفات المخلوقين، فلا يجوز أن يقال : هو جسم، ولا جسد.

অর্থাৎ “আরবী ভাষায় এটিই দেহ। সেই অনুসারে বায়ুকে ‘দেহ’ বলা যায় না। কোনো ব্যক্তির নিঃশ্বাসকেও ‘দেহ’ বলা যাবেনা। মানুষের মধ্যে প্রস্ফুটিত আত্মাকেও ‘দেহ’ বলা যাবেনা। জানা আছে যে, আল্লাহ তালাকে মাখলুকের (সৃষ্টির) কোনো সিফাত বা গুণ দ্বারা গুণান্বিত করা যাবেনা এবং তাঁর জন্য এমন কোনো নাম ব্যবহার করা যাবেনা, যা সৃষ্টির বৈশিষ্ট্যের সাথে খাস। সেহেতু একথা বলা জায়েজ নয় যে, তাঁর (আল্লাহর) শরীর কিংবা দেহ রয়েছে।”

(মাজমু ফাতাওয়া, ইবনু তাইমিয়্যাহ ১৭/৩১৫)।

এ থেকে বুঝা গেল,

১. দেহ শব্দটি সৃষ্টির একটি গুণ, স্রষ্টার সাথে এটি বেমানান।

২. ‘দেহ’ আল্লাহর অন্যতম একটি সৃষ্টি। আর স্রষ্টাকে তাঁর কোনো সৃষ্টি দ্বারা গুণান্বিত করা যাবে না।

৩. আল্লাহর দেহ বা শরীর রয়েছে, এধরণের চিন্তাভাবনা সম্পূর্ণ অনর্থক ও পরিত্যাজ্য।

৪. স্রষ্টার জাত বা সত্তাকে যেখানে দেহ বা শরীর বলে কল্পনা করাই নিষেধ, সেখানে আল্লাহর জন্য ‘ইস্তিওয়া’ বা ‘নুযূল’ শব্দগুলোকে আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করাও অসম্ভব বৈ নয়। তাই ‘সমাসীন’, ‘উপবিষ্ট’, ‘বসা’ বা ‘অবতরণ’ ইত্যাদি শব্দগুলো যথোপযুক্ত রূপকার্থেই উদ্দেশ্য, আক্ষরিক অর্থে উদ্দেশ্য নয়।

লিখক, মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ
শিক্ষাবিদ ও গবেষক

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি –

দানিয়াল নবীর দাফন কবে ও কোথায় হয়?

হযরত দানিয়াল (আ.) সম্পর্কিত এ ঘটনাটির সত্যতা আছে কি?

উত্তর :

দানিয়াল (আ.) সম্পর্কিত নিম্নোক্ত ঘটনাটির সনদ প্রমাণিত নয়, বরং ভিত্তিহীন। রাসূল (সা.) থেকে এধরণের কোনো কথার সনদ বা বিশুদ্ধ সূত্র খোঁজে পাওয়া যায়নি।

ঘটনাটি ঐতিহাসিক ইবনু কাসীর (রহ.) “আল বিদায়া” গ্রন্থে এনেছেন, তিনি নিজেও স্বীয় তাফসীর কিতাবের ভূমিকায় ঘটনাটি সম্পর্কে মন্তব্য করে লিখেছেন যে, এটি একটি ইসরাঈলী ঘটনা। আর ইসলামী শরীয়াহ এর বিরোধী না হলে তখন ইসরাঈলী ঘটনা বর্ণনায় কোনো অসুবিধা নেই। হাদীসে এসেছে, ইসরাইলী বর্ণনার ব্যাপারে চুপ থাকাই উত্তম, সত্য বা মিথ্যা কোনোটাই মন্তব্য করা যাবেনা।

ঘটনা :

قال أبو بكر ابن أبي الدنيا في كتاب ” أحكام القبور ” : حدثنا أبو بلال محمد بن الحارث بن عبد الله بن أبي بردة بن أبي موسى الأشعري حدثنا أبو محمد القاسم بن عبد الله عن أبي الأشعث الأحمري قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إن دانيال دعا ربه عز وجل أن تدفنه أمة محمد فلما افتتح أبو موسى الأشعري تستر ، وجده في تابوت ، تضرب عروقه ووريده ، وقد كان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : من دل على دانيال فبشروه بالجنة . فكان الذي دل عليه رجل يقال له : حرقوص فكتب أبو موسى إلى عمر بخبره ، فكتب إليه عمر أن ادفنه ، وابعث إلى حرقوص ; فإن النبي صلى الله عليه وسلم بشره بالجنة . وهذا مرسل من هذا الوجه ، وفي كونه محفوظا نظر . والله أعلم

আবু বকর ইব্‌ন আবী আদ-দুনিয়া (রহ.)… তাঁর রচিত “কিতাবু আহকামিল কুবুর” গ্রন্থে আবুল আশআছের বরাতে লিখেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : নবী দানিয়াল আল্লাহর নিকট দোয়া করেছিলেন যে, তার দাফনকার্য যেন উম্মতে মুহাম্মাদীর হাতে সুসম্পন্ন হয়।

পরবর্তীকালে আবূ মূসা আশআরী (রা.)-এর হাতে ইরাকের তুস্তর নগরী বিজিত হলে সেখানে হুরমুজান শাসকের বায়তুলমালের অভ্যন্তরে একটি চৌকির উপর এক ব্যক্তির লাশ দেখতে পান। এ সময় তাঁর দেহের শিরা ও কাঁধের মোটা রগ দুটি নড়াচড়া করছিল। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন, যে ব্যক্তি দানিয়ালের লাশ সনাক্ত করতে পারবে, তাকে জান্নাতের সু-সংবাদ দিবে। হারকুস নামক এক ব্যক্তি দানিয়ালের লাশ সনাক্ত করেছিলেন। আবু মূসা (রা.) হযরত উমর (রা)-কে এ বিষয়ে অবহিত করেন। তখন হযরত উমর (রা) পত্র মারফত তাকে জানান যে, দানিয়ালকে ওখানে (ইরাকে) দাফন কর এবং হারকুস (حرقوص)কে আমার নিকট পাঠিয়ে দাও….!

(আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২/৩৭৮)।

মান – উল্লিখিত ঘটনাটির সূত্র বা সনদ অপ্রমাণিত, অগ্রহণযোগ্য।

জ্ঞাতব্যঃ বর্ণনাটি বিশ্বাসযোগ্য না হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে, ঘটনাটির বর্ণনাকারী আবুল আলীয়া’র ধারণামতে, লাশটি ৩০০ বছর পূর্বেকার। যদি তাই হয় তাহলে এ লাশ কিছুতেই দানিয়াল নবীর হতে পারেনা। কেননা সহীহ বুখারী শরীফের বর্ণনা এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ও ঈসা ইব্‌নু মরিয়ামের মাঝখানে অন্য কোনো নবীর আগমন ঘটেনি। আর এ দুই নবীর মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধান কমপক্ষে ৫০০ থেকে ৬০০ বছর।

উল্লেখ্য, দানিয়াল নবী ছিলেন নাকি একজন ওলী ছিলেন, এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। পবিত্র কুরআন এবং বিশুদ্ধ হাদীস সমূহে তাঁর সম্পর্কে তেমন কিছু উল্লেখ নেই। তবে ঐতিহাসিক বিবরণ মতে, তিনি দাউদ (আ.) এর পরের এবং জাকারিয়া (আ.)- এর পূর্বের একজন তাওরাহ অনুসারী ইসরাইলী নবী ছিলেন। তাঁকে তৎকালীন প্রবল প্রতাপশালী বাদশাহ বুখতনসরের নির্দেশে জেরুজালেম থেকে ইরাকে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে তিনি সেখানেই ইন্তেকাল করেন।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

সোলাইমান নবী (আ.) এর স্ত্রীদের প্রকৃত সংখ্যাটি কেমন?

প্রশ্ন : হযরত সোলাইমান (আ.)-এর স্ত্রীদের প্রকৃত সংখ্যাটি নিয়ে আমি দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছি। আপনি কি আমাকে এর বিহিত একটা সমাধান দিতে পারবেন?

উত্তর : হযরত সোলাইমান (আ.)-এর স্ত্রীদের সংখ্যার ব্যাপারে সহীহ গ্রন্থের হাদীস সমূহে নানা অংক উল্লেখ রয়েছে। যেমন এক জায়গায় উল্লেখ আছে,

لأَطُوفَنَّ اللَّيلَةَ بِمِائَةِ امرَأَةٍ

অর্থাৎ “আজ রাতে আমি নিশ্চয়ই একশত স্ত্রীর নিকট পরিভ্রমণ (সহবাস) করব।” আপনি যদি সহীহ গ্রন্থগুলো সহ হাদীসের অপরাপর সোর্সগুলোও দেখেন তবে দেখবেন যে, সেখানে হযরত সোলাইমান (আ.) কোনো এক রাত্রিতে নিজ স্ত্রীদের মধ্য থেকে ৬০, ৭০, ৯০, ৯৯ বা ১০০ জন স্ত্রীর নিকট গমনের ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ আছে। (বুখারী হা/২৮১৯, ৩৪২৪, ৫২৪২, ৬৬৩৯, ৭৪৬৯; মুসলিম হা/১৬৫৪; মিশকাত হা/৫৭২০)।

ইমাম বুখারী ঐতিহাসিক অসঙ্গতিপূর্ণ বিবরণগুলো তাহলে কিজন্য গ্রন্থবদ্ধ করলেন?

উত্তরে বলা হবে যে, ইমাম বুখারী (রহ.) বিভিন্ন সনদে ঐতিহাসিক বিবরণটি নিজ সহীহ গ্রন্থে শুধুমাত্র সংগ্রহের উদ্দেশ্যেই এনেছেন, স্ত্রীদের সংখ্যা জানান দেয়ার জন্য আনেননি। কারণ এধরণের ঐতিহাসিক ঘটনা উল্লেখের মধ্যে মানুষের তেমন কোনো ফায়দা নেই।

ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) ফাতহুল বারী গ্রন্থে এ সম্পর্কে লিখেছেন যে, বর্ণনাগুলোতে সোলাইমান (আ.)-এর স্ত্রীদের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা বর্ণনা মূখ্য নয়, বরং ইন-জেনারেল ঘটনার অবতারণা করাই উদ্দেশ্য।

শারেহে মুসলিম ইমাম নববী (রহ.) আরও সুন্দর কথা বলেছেন, তিনি বলেছেন,

ولا نرى داعياً إلى استقصاء نسائه وحصرها إذ لا يَنْبَنِي على ذلك أمر ديني أو دنيوي

অর্থাৎ আমরা তার স্ত্রীদের (প্রকৃত সংখ্যার) তদন্ত এবং (নির্দিষ্ট সংখ্যায়) সীমাবদ্ধ করার কোনো কারণ দেখি না, কারণ এটি কোনো ধর্মীয় বা পার্থিব বিষয়ের উপর ভিত্তি রাখে না।

যারা ইতিহাসের ছাত্র তাদের জানা থাকার কথা যে, সাধারণত ঐতিহাসিক যে কোনো ঘটনার বর্ণনাকারীদের জন্য সেটিকে স্পেসিফিকভাবে (প্রকৃত সংখ্যা) তুলে ধরা সম্ভব হয়না, মতভেদ থাকে। কারণ হচ্ছে, ঘটনাগুলো একাধিক চেইনে বর্ণিত থাকে, ফলে চেইনগুলোর প্রথমদিকের কোনো রাবী যদি ভুল করেন তাহলে পুরো ব্যাপারটাই উলোটপালোট হয়ে যেতে বাধ্য।

উল্লেখ্য, হযরত সোলাইমান (আ.) এর মৃত্যু আনুমানিক ৯৩১ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে। এতে সাহাবায়ে কেরাম এবং তাঁর (আ.) যুগের মাঝখানে প্রায় দেড় হাজার বছরের ব্যবধান। যার ফলে সাহাবায়ে কেরামগণ উক্ত ঘটনার প্রকৃত সনদ বা চেইনের শেষাংশের রাবী হওয়ায় তাঁদের কাউকে উক্ত ঘটনার জন্য অভিযুক্ত করা ঠিক হবেনা। কাজেই ইমাম বুখারী (রহ.) কর্তৃক সহীহ গ্রন্থে এ সকল মতভেদপূর্ণ সংখ্যা উল্লেখ করা নিয়ে চিন্তিত হবার কারণ নেই। বলাবাহুল্য, ইমাম বুখারী (রহ.) নিজ গবেষণার বিচারে ৯০ জনের হাদীসটিকে অধিক বিশুদ্ধ বলেছেন। সে যাইহোক, ফিলিস্তিন বংশোদ্ভূত হযরত সোলাইমান (আ.)-এর স্ত্রীর সংখ্যার ব্যাপারে ইস্রাঈলী সোর্স কিতাবুল মুকাদ্দাসের ভাষ্য হচ্ছে,

أن سليمان “كَانَتْ لَهُ سَبْعُ مِئَةٍ مِنَ ٱلنِّسَاءِ ٱلسَّيِّدَاتِ، وَثَلَاثُ مِئَةٍ مِنَ ٱلسَّرَارِيّ

“সোলাইমান (আ.) এর সাতশত স্ত্রী ও তিনশত উপপত্নী ছিল।” এরই উদ্ধৃতি টেনেছেন প্রখ্যাত মুফাসসির ইমাম ইবনু কাসীর (রহ.) তাঁর ঐতিহাসিক রচনা ‘আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ এর মধ্যেও। বিখ্যাত ইসলামী ডিবেটার ও দাঈ ডক্টর আহমেদ দীদাত (রহ.) তার একটি লেকচারেও সোলাইমান (আ.) এর স্ত্রীর সংখ্যা কত, এমন একটি প্রশ্নের জবাবে ইস্রাঈলীদের সোর্স থেকে অনুরূপ তথ্য দিয়েছেন।

বলে রাখতে চাই যে, আসলে যারা ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যক রেওয়ায়েতগুলোর উপর আঙ্গুল উঁচিয়ে সাহাবীদের দিকে অভিযোগের তীর নিক্ষেপ করতে চাচ্ছেন তাদের বুঝা উচিত যে, ধরুন আজকের এ দিনে কোনো ডাকাতদলের হাতে আপনার গ্রামে এক সাথে ১৫/২০ জন মানুষ খুন হল। এমতাবস্থায় আগামী একশত বছর পরেও কি এ হিসেব একই থাকবে নাকি বদলেও যেতে পারে? অবশ্যই বদলে যেতে পারে। কেননা ঘটনার বর্ণনাকারীদের দুর্বলতা হেতু সময়ের ব্যবধানে হিসেব বদলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। তার অর্থ এই নয় যে, এ জন্য মূল ঘটনাটিই ভিত্তিহীন হয়ে যাবে। হযরত সোলাইমান (আ.) এর স্ত্রীগণের প্রকৃত হিসেবটিকেও একই দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে হবে। যেহেতু এখানে স্ত্রীদের প্রকৃত সংখ্যা কত, তা জানান দেয়া মূখ্য নয়, বরং ঘটনাটির মাধ্যমে নবীদের শক্তি ও ক্ষমতার বিশেষত্ব বর্ণনা দেয়াই মূখ্য। একই রাতে এত জন স্ত্রীর সাথে সহবাস করার শক্তি ও সামর্থ্য কেবল নবীরই বৈশিষ্ট্য হতে পারে। তাছাড়া স্ত্রীদের সংখ্যা বর্ণনার বাহ্যিক এই ভিন্নতা জামহূর উসূলবিদগণের দৃষ্টিতে পরস্পর সাংঘর্ষিক নয়। কারণ ছোট সংখ্যা উল্লেখের দ্বারা বড় সংখ্যা নাকচ হয়ে যাবেনা।

ঐতিহাসিক ঘটনার বৃত্তান্তে ইন-জেনারেল উপস্থাপনা এবং স্পেসিফিক সংখ্যা বর্ণনায় বিভিন্নরকম হওয়ার দৃষ্টান্ত স্বয়ং পবিত্র কুরআনেও বিদ্যমান। যেমন, সূরা কাহাফ এর ২২ নং আয়াতের মধ্যে আসহাবে কাহাফের (গুহাবাসীদের) ঐতিহাসিক ঘটনার অবতারণা করতে গিয়ে আল্লাহ তালা বলছেন, “অচিরেই তারা বলবে, ‘তারা ছিল তিনজন; তাদের চতুর্থটি ছিল তাদের কুকুর।’ কেউ কেউ বলবে, ‘তারা ছিল পাঁচজন; তাদের ষষ্ঠটি ছিল তাদের কুকুর।’ ওরা অজানা বিষয়ে অনুমান (তীর) চালায়। আর কেউ কেউ বলবে, ‘তারা ছিল সাতজন; তাদের অষ্টমটি ছিল তাদের কুকুর।’ বল, ‘তাদের সংখ্যা আমার প্রতিপালকই ভাল জানেন; তাদের সংখ্যা অল্প কয়েকজনই জানে।’ সুতরাং সাধারণ আলোচনা ব্যতীত তুমি তাদের বিষয়ে বিতর্ক করো না এবং তাদের কাউকেও তাদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করো না।” (কাহাফ)।

খেয়াল করুন, আল্লাহ চাইলে সঠিক সংখ্যাটি বলে দিতে পারতেন, কিন্তু বলেননি। কেননা এটি নিছক একটি ঐতিহাসিক ব্যাপার। এখানে ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণই মূখ্য, স্পেসিফিক সংখ্যা বলে দেয়াতে উম্মাহ’র কোনো উপকারিতা নেই।

দীর্ঘ আলোচনার সামারী হচ্ছে, এ সকল ক্ষেত্রে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মূলনীতি হ’ল,

إذَا حَدَّثَكُمْ أَهْلُ الْكِتَابِ فلَا تُصَدِّقُوهُمْ وَلَا تُكَذِّبُوهُمْ ، وَقُولُوا: آمَنَّا بِاللهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ ، فَإِنْ كَانَ حَقًّا لَمْ تُكَذِّبُوهُمْ ، وَإِنْ كَانَ بَاطِلًا لَمْ تُصَدِّقُوهُمْ

অর্থাৎ আহলে কিতাবী তথা ইসরাঈলীরা তোমাদেরকে যখন কোনো কথা বর্ণনা করবে তখন তাদের কথাকে সত্যায়ন করবেনা এবং মিথ্যাও বলবেনা। তোমরা বরং বলবে, আমরা আল্লাহ এবং তাঁর কিতাব সমূহ এবং সকল রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছি। কেননা যদি তা সত্য হয়ে থাকে তাহলে তোমরা তাকে মিথ্যা বলতে পারো না, আর যদি বাতিল (মিথ্যা) হয়ে থাকে তাহলে তোমরা তা সত্যায়ন করতে পারো না। (মুসনাদে আহমদ)।

এতে বুঝা গেল, ইস্রাঈলী বর্ণনা সমূহ ইসলামের আকায়েদ ও মৌলনীতির বিরোধী না হলে তার ব্যাপারে সত্য বা মিথ্যা কোনো মন্তব্য করা যাবেনা। (আবুদাউদ হা/৩৬৪৪; আহমাদ হা/১৭২৬৪; সহীহাহ হা/২৮০০)। যেজন্য, ইমাম বুখারী (রহ.) এর উল্লিখিত ঐতিহাসিক ঘটনাটিই যেহেতু ওহী নয়, বড়জোর ইসরাঈলীদের বিভিন্ন চেইন থেকে প্রাপ্ত সংবাদ, সাহাবায়ে কেরামগণও কোনোদিন প্রশ্ন তুলেননি; রাসূল (সা.) থেকেও এগুলোর সত্য বা মিথ্যা হওয়ার স্পেসিফিক কোনো দৃঢ় ফরমান নেই, সেহেতু উম্মাহ’র দায়িত্ব হচ্ছে, এ ব্যাপার গুলোকে ঐতিহাসিক জায়গা থেকে মূল্যায়ন করা, সত্য বা মিথ্যা কোনটাই মন্তব্য না করা। পবিত্র কুরআনের শিক্ষামতে, এ ধরনের প্রেক্ষিতে (Situation) নিশ্চিত জ্ঞান ব্যতীত যারা বিতর্ক করতে চায় তাদের কারও সাথে তর্কে না জড়ানো (কাহাফ ২২)। আল্লাহ আমাদেরকে হাদীস অস্বীকারকারী নির্বোধবন্ধুদের বাড়াবাড়ি থেকে হেফাজত করুন। আমীন।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী – শিক্ষাবিদ ও গবেষক

পশ্চিমাদের নিকট কাদিয়ানীরা এত জামাই আদুরে কেন?

পশ্চিমাদের নিকট কাদিয়ানীরা এত জামাই আদুরে কেন? রহস্য কী??

উল্লিখিত প্রশ্নের উত্তরে বিশেষজ্ঞগণ বলে গেছেন যে,

এর সব চেয়ে প্রধান কারণ হচ্ছে, পশ্চিমাদের স্বার্থে সব সময় নিঃশর্তভাবে গুপ্তচরবৃত্তির কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে এ গোষ্ঠীটি। সম্প্রতি পাক সরকারের কারাগারে বন্দী থাকা অসংখ্য কাদিয়ানীর বিরুদ্ধেও গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ রয়েছে, যা প্রমাণিত। দেশটির অন্যতম শক্তিশালী দৈনিক জঙ্গ পত্রিকায় এ সংক্রান্ত নিউজ প্রায় প্রতিবারই করা হয়ে থাকে।

উল্লেখ্য, কাদিয়ানীরা মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সরকারি জরুরি নথিপত্র শত্রুদেশে পাচারে সক্রিয়। তারা যে সমস্ত অমুসলিম শত্রু দেশগুলোর পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির কাজে লিপ্ত তন্মধ্যে ভারত, ইংল্যান্ড এবং ইঙ্গ-মার্কিন ও ইজরায়েল অন্যতম।

দ্বিতীয় যে কারণটি সেটি পশ্চিমাদের নিকট খুব বেশি একটা গুরুত্বপূর্ণ না হলেও মুসলমানদের জন্য খুবই ভাবনার বিষয়। সেটি হচ্ছে,

কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে পশ্চিমা মিডিয়া দুনিয়ার সামনে “মুসলমান” হিসেবে হাইলাইট করে দেয়ার মধ্য দিয়ে প্রকৃত মুসলমানদের মুকাবিলায় একটি নকল বা ফেইক মুসলমান হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেয়া। যাতে অজ্ঞাতসারে অমুসলিম সম্প্রদায় তাদেরকে মুসলিম ভেবে প্রতারিত হয় এবং ইসলামে প্রবেশ করতে গিয়ে কাদিয়ানী হয়ে যায়। ফলে যে লাউ সেই কদুই যেন রয়ে যায়। বর্তমানে পশ্চিমা বিশ্বে বিশেষ করে আমেরিকা, কানাডা, জার্মান, মেক্সিকো এবং আফ্রিকার কোনো কোনো দেশে বেদনাদায়ক সেই দুর্ঘটনাই ঘটছে। ইন্না-লিল্লাহ। বিবিসি তেমনি একটা নিউজ করেছে যেখানে মেক্সিকোর এক খ্রিস্টান পরিবার সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তারা ইসলাম ভেবে কাদিয়ানী ধর্মমত গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে প্রতারিত হয়েছে। নিচের লিংক থেকে ভিডিওটি দেখুন!

Click

এবার হয়ত কেউ কেউ প্রশ্ন করতে পারেন যে, কাদিয়ানীরা যে পশ্চিমাদের দ্বারা পরিচালিত তার কী এভিডেন্স আছে? এর উত্তরে আমি কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের প্রভাবশালী সেকেন্ড খলিফা মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ এর একটি বক্তব্য তাদেরই উর্দূ ভাষার একটি দৈনিক পত্রিকা থেকে এখানে তুলে ধরছি। মির্যা বশির উদ্দীন বলেন, “শত্রু আমাদের উপর যখন আক্রমণ করে তখন স্বর্গীয় সমর্থন ছাড়াও মহান আল্লাহ আমাদের সুরক্ষার জন্য মানুষের মধ্য থেকে একজন রক্ষাকারী দাঁড় করে দিয়ে থাকেন। সেটি সবসময় একই হয়ে থাকে অর্থাৎ ব্রিটিশ সরকার। এমতাবস্থায় আমরা এই সরকারের কৃতজ্ঞতা (শোকরগুজার) স্বীকার না করে কিভাবে থাকতে পারি!! এই সরকারের সাথেই আমাদের সমস্ত উপকারিতা একাকার হয়ে গেছে। এই সরকারের পতন আমাদেরই পতন, এই সরকারের উন্নতি আমাদেরই উন্নতি। এ সরকারের হুকুমত (আধিপত্য) যেখানে যেখানেই সম্প্রসারিত হতে যাচ্ছে আমাদের জন্য (সে সবখানে) তাবলীগের (সদস্য সংগ্রহের) একেকটি ময়দান সুগম (উন্মুক্ত) হচ্ছে। সুতরাং কোনো বিরুদ্ধবাদীর আপত্তি আমাদেরকে এ সরকারের অনুগত হওয়া থেকে বিচ্যুত করতে পারবেনা।” (দৈনিক আল ফজল, তারিখ-১৯/১০/১৯১৫ ইং, মির্যা কাদিয়ানীর পুত্র ও জামাতের দ্বিতীয় খলীফা মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ-এর বক্তব্যের উদ্ধৃতাংশ)।

শেষকথা হচ্ছে, মুসলিম উম্মাহ যতক্ষণ পর্যন্ত পশ্চিমাদের এ ভন্ডামির স্বরূপ উন্মোচন করতে না পারবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের ঈমান আমল তো বটে, নিজ দেশের ভিটেমাটি কিংবা আত্মপরিচয়টুকুও নিরাপদ থাকবে না। সংক্ষেপে।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে কাদিয়ানীরা লজ্জিত কেন?

0

কাদিয়ানী সম্প্রদায় দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এতটা লজ্জিত কেন?

কাদিয়ানীদের অন্যতম শুভাকাঙ্ক্ষী শেখ হাসিনা সরকারের পতন হল। তিনি দেশ ছেড়েও পালিয়েছেন। তার পালিয়ে যাওয়ার পরপরই, একে একে তাদের অন্যান্য প্রায় সকলেই এখন নিয়মিত কট খাচ্ছেন। কাদিয়ানীদের অন্যতম সহযোগী জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু, রাশেদখান মেনন আর এখন সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিক-ও। ডক্টর কামাল হোসেন এবং তার কন্যা বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের ব্যারিষ্টার সারা হোসেন-ও কাদিয়ানীদের অন্যতম সহযোগী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রুবাইয়াত ফেরদৌস সহ কাদিয়ানীদের পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নেয়া অসংখ্য কথিত সুশীল বুদ্ধিজীবীর চেহারাগুলোও কারো অচেনা নয়। গাদানিক প্রধান শাহরিয়ার কবির, সুলতানা কামাল, খুশি কবিরদের কথা আর না হয় না-ই বললাম। খুবই আশ্চর্য ব্যাপার, আল্লাহর রাসূলের খতমে নবুওয়তের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহকারী কাদিয়ানীদের সহযোগীরা হঠাৎ যেন বাতাসে মিশে গেছে!

কাদিয়ানীরা স্বৈরাচারী আ’লীগ সরকারের প্রভাব এবং ক্ষমতা খাটিয়ে বহু ফায়দা নেয়। সেই ইতিহাস আজ আর কারো অজানা নয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে গত ১৫ বছর ধরে “মসজিদ” নাম দিয়ে যে পরিমাণে “কাদিয়ানী উপাসনালয়” তারা নির্মাণ করেছে, কল্পনারই বাহিরে। গাজীপুরে (রাজবাড়ী মাঠ সংলগ্ন গাজীপুর মহিলা কলেজের পূর্ব পাশ হয়ে সাফা টাওয়ারের দক্ষিণে) ইতিমধ্যে তারা ৫ কাঠা জমির উপর মসজিদ নামে তাদের বিশালাকৃতির ৫ তলা কমপ্লেক্স ও মিশনারী হেড কোয়ার্টার করার উদ্যোগও নিয়েছে। কিন্তু এ খবর কয়জনই বা রাখে! তাদের প্রতি আ’লীগ সরকার নাগরিক অধিকারের নামে এত অন্ধ ছিল, স্থানীয় মুসলমানদের কোনো যৌক্তিক দাবী কিংবা প্রতিবাদের সামান্যতমই তোয়াক্কা করেনি। বরং স্থানীয় মুসলমানদের নির্বিচারে গুলিতে আহত এবং নিহত করা হয়। গত ২০২৩ সালের ৫ ই মার্চ এবং ২৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারিতে পঞ্চগড়ের (সদর) আহমদনগরের স্থানীয় মুসলমানদের বিরুদ্ধে ও কাদিয়ানীদের পক্ষে সেই সময়কার স্বৈরাচারী প্রশাসনিক মনোভাব আর রক্তক্ষয়ী সংঘাতের চিত্রগুলো ইন্টারনেটে আজো ভাসছে।

এদেশের কথিত সুশীল বুদ্ধিজীবীরা কি জানে যে, কাদিয়ানী সম্প্রদায় নিজেদের বাহিরে কোনো মুসলমানকেই “মুসলমান” মানেনা! বরং পরিষ্কার করে কাদিয়ানী লিটারেচার গুলোতে অ-কাদিয়ানী মুসলমানদের “অমুসলিম” এবং “কাট্টা কাফের” বলে লিখে রাখা হয়েছে, এমনকি মুসলমানদের নাবালক শিশুদের জানাযাতেও অংশগ্রহণ করতে কড়া নিষেধ করা হয়েছে। আর কারণ হিসেবে তাদেরই দ্বিতীয় খলীফা মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ (মৃত. ১৯৬৪ ইং) লিখেছে,

“আমাদের জন্য ফরজ হচ্ছে, আমরা যেন গয়ের আহমদীদেরকে (অ-কাদিয়ানীদেরকে) মুসলমান মনে না করি এবং তাদের পেছনে সালাত না পড়ি। কেননা আমাদের দৃষ্টিতে তারা খোদাতালার একজন নবীকে অস্বীকারকারী। এটি ধর্মীয় মু’আমালা, এতে কিছু করার মত কারো কোনো এখতিয়ার বা সুযোগ নেই।” (আনওয়ারে খিলাফাত ৯৩ নতুন এডিশন, আনওয়ারুল উলূম ৩/১৪৮, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

উক্ত উদ্ধৃতিটির প্রামাণ্য স্ক্যানকপি নিচে দেখুন

উল্লেখ্য, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ ছিল ভন্ডনবী গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর পুত্র ও তার জামাতের দ্বিতীয় খলীফা এবং কথিত ‘মুসলেহ মওউদ’ উপাধিপ্রাপ্ত। নিচে তার একটি ছবিও প্রদর্শন করা হল।

স্বৈরাচারী আ’লীগ দুঃশাসনের পতন হবার আগে কাদিয়ানী ন্যাশনাল আমীর আব্দুল আউয়াল খান সাহেব নিজেকে শেখ পরিবারের অন্যতম হিতাকাঙ্ক্ষী ও আত্মীয় বলেও পরিচয় দিতেন এবং জায়গামত মুসলমানদের বিরুদ্ধে তৎকালীন সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহার করতেন। এর ভুরি ভুরি প্রমাণ আমাদের নিকট রেকর্ড রয়েছে। আজ আর সেই আত্মীয়ের আত্মীয়রা দেশ-ছাড়া। আখের আস্তে আস্তে ঝুঁকতে শুরু করেছেন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ডক্টর আসিফ নজরুল স্যার সহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়জন উর্ধতন ব্যক্তিবর্গের দিকে। আফসোস! ক্ষমতা পালাবদলের সাথে সাথেই এদের ডিগবাজীও শুরু। কিন্তু নতুন জেনারেশনের কি এদের নিয়ে কোনো খোঁজখবর আছে??

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের কাদিয়ানীদের বর্তমান ন্যাশনাল আমীর আব্দুল আউয়াল খান সাহেবও ইতিপূর্বে “জাসদ” এর রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। আ’লীগ দুঃশাসনকে আজীবনের জন্য বাংলাদেশের মাটিতে প্রতিষ্ঠা করার মনোবাসনা থেকেই তাদের পেয়ারে হুজুর (কাদিয়ানী পঞ্চম খলীফা) মির্যা মাসরূর আহমেদকে দিয়েও ইংল্যান্ডের টিলফোর্ড শহরে অনেক দোয়া করিয়েছেন, যার তথ্য প্রমাণ আমাদের নিকট রয়েছে।

এ পর্যায় জনৈক কাদিয়ানী মিশনারীকে উদ্দেশ্য করে মুসলমান যুবকের প্রশ্নোত্তর নিচে তুলে ধরছি,

আপনাদের শিক্ষার আলোকে নবুওয়তের ধারণাটা কেমন?
যিল্লি নবী হতে পারে, এ ছাড়া আর কোনো ধরনের নবী হবেনা।
যিল্লি নবী হতে পারে কি পারেনা, এ টপিকে পরে আসছি। আগে “যিল্লি নবী” বলতে কী বুঝায় আর “যিল্লি” শব্দটা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের কোন কথায় উল্লেখ আছে দেখান!

…..কোনো উত্তর নেই।

যেহেতু “যিল্লি নবী” এর কোনো কনসেপশনই আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের কোনো কথায় উল্লেখ নেই, সেহেতু এর ধারণাটাই বাতিল। সুতরাং কাদিয়ানীদের “যিল্লি নবী” এর তাবৎ শিক্ষাটাই ভ্রান্ত ও প্রত্যাখ্যাত। ফলে এ শিক্ষাকে ব্যাজ করে যে বা যারা নিজেদের মুসলমান দাবী করবে তারা ভন্ড এবং ইসলামের অবমাননাকারী বলেই সাব্যস্ত হবে।
সূরা নিসার ৭০ নং (মুসলমানদের হিসেবে ৬৯ নং) আয়াত অনুযায়ী আনুগত্যরূপে নবী হতে পারে বলে উল্লেখ আছে!
যদি তাই হবে তাহলে তো মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীই উক্ত আয়াত নিজ দাবীর পক্ষে সবার আগে উল্লেখ করে যেতেন! অথচ আমরা তার রচনায় এমন কোনো আয়াতই উল্লেখ করেছেন, এমনটা দেখিনা!

….. কোনো উত্তর নেই।

মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুক্ত অর্থে শেষনবী নন, তার পরেও নবী আছে। নইলে ঈসা আলাইহিস সালাম পুনরায় আসতে পারেন না।
ঈসা আলাইহিস সালামের পুনরায় আসার কারণে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম “শেষনবী” হবার বিশ্বাসে কোনো ধাক্কা লাগবে না। কারণ, ঈসা আলাইহিস সালামের প্রতি পুনরায় আসার পর নবুওয়ত দ্বিতীয়বার অর্পিত হবেনা। তিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের পূর্বেই জেরুজালেমে অবস্থানকালে যেই নবুওয়ত প্রাপ্ত হয়েছিলেন সেই নবুওয়তের ক্রমধারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে চিরতরে খতম বা শেষ হয়ে গেছে। এ জন্যই পবিত্র কুরআনের সূরা আহযাব, আয়াত নম্বর ৪০ বলছে, ((و لكن رسول الله و خاتم النبيين)) অর্থাৎ কিন্তু তিনি (মুহাম্মদ) আল্লাহর একজন রাসূল এবং নবীগণের ক্রমধারা সমাপ্তকারী।

পবিত্র কুরআনের সূরা বাক্বারা, আয়াত নম্বর ৪ উক্ত বিষয়টি আরও সুস্পষ্ট করে দিয়েছে। যেমন আল্লাহ তালা বলছেন, ((وَ الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡکَ وَ مَاۤ اُنۡزِلَ مِنۡ قَبۡلِکَ ۚ وَ بِالۡاٰخِرَۃِ ہُمۡ یُوۡقِنُوۡنَ)) অর্থাৎ “আর (প্রকৃত মুমিন তো তারাই) যারা ঈমান আনে সেসব বিষয়ে, যা তোমার প্রতি নাযিল করা হয়েছে এবং যা তোমার পূর্বে নাযিল করা হয়েছে। আর আখিরাতের প্রতি তারা বিশ্বাস রাখে।” খুব খেয়াল করুন, উল্লিখিত আয়াতে শুধুমাত্র মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি আর তাঁর পূর্বে গত হয়ে যাওয়া নবী রাসূলগণের প্রতিই নাযিলকৃত বিষয়ের উপর ঈমান আনার কথা রয়েছে। এতে পরিষ্কার হয়ে গেল যে, নতুন করে আর কারো প্রতি আল্লাহর পক্ষ হতে কিছুই নাযিল হবেনা। যেজন্য নতুন করে কেউ এখন নবুওয়তের দাবী করা কুফুরী এবং এমন ব্যক্তি ও তার মান্যকারী সবাই ভন্ড এবং অমুসলিম হিসেবেই সাব্যস্ত। মূলত একই কারণে নবুওয়তের দাবীকারী ভারতের পাঞ্জাবের অধিবাসী মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী আর তার অনুসারী সমস্ত আহমদীয়া তথা কাদিয়ানী সম্প্রদায় অমুসলিম। যারা তাদের অমুসলিম মানতে নারাজ, বা তাদের পক্ষে বুঝেশুনেই সাফাই গেয়ে যাচ্ছে তাদের প্রত্যেকের উপর তাকফীরী ফাতাওয়া আরোপিত হবে।

…. কোনো উত্তর নেই।

চলবে

লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক
প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

ঈমান কি বাড়ে কমে? আমল কি ঈমানের অন্তর্ভুক্ত?

0

ঈমান কি বাড়ে কমে?

ইমাম আবু হানিফা (রহিমাহুল্লাহ)-এর সময় খারিজিদের খুব উৎপাত ছিল। তারা কবিরা গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তিদের কাফের মনে করতো এবং তাদের সাথে যুদ্ধ করা এবং তাদের জান মালকে হালাল মনে করত। কারণ, তাদের মতে ঈমান আমলের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং আমল পরিত্যাগ করা মানে ঈমান পরিত্যাগ করা। এজন্য আমল যে ঈমানের মূল বিষয়বস্তুর অন্তর্ভুক্ত নয় এবং আমল ত্যাগের কারণে যে কেউ কাফের হয় না, তাকে হত্যা করা তার মাল ছিনিয়ে নেয়া যে বৈধ নয়, তা স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়া ওলামায়ে কেরামের উপর আবশ্যক হয়ে পড়ে। সে দায়িত্ব‌ই পালন করেছিলেন ইমাম আবু হানিফা (রাহিমাহুল্লাহ)। তিনি ফাতাওয়া দিলেন, ঈমান আর আ’মল সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। আ’মল দ্বারা ঈমানে শক্তি বৃদ্ধি হয়, তবে সেটি ঈমানের অংশবিশেষ নয়। তিনি এ ফাতাওয়ার সমর্থনে দলিল এবং যুক্তি দুটোই পেশ করেন।

ঈমান শব্দের মূল অর্থ হলো বিশ্বাস করা, সত্যায়ন করা। খারেজিদের নিকট ঈমানের মূল রুকন বা ভিত্তি তিনটি। যথা-

১. ঈমানের বিষয়গুলোকে অন্তরে বিশ্বাস করা,
২. মুখে স্বীকার করা,
৩. শরীয়ত মোতাবেক আমল করা।

তাদের নিকট এগুলোর একটি বাদ গেলেও ঈমান থাকবে না, তাই কবীরা গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তি কাফের, যেহেতু সে আমল পরিত্যাগ করেছে আর আমল ঈমানের তিন রুকনের এক রুকন। উল্লেখ্য, প্রসিদ্ধ মাযহাব চতুষ্টয়ের তিনটি-ই আ’মলকে ঈমানের বাহিরের জিনিস বলে মত দিয়েছে।

বলাবাহুল্য, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের কতিপয় বিশেষজ্ঞ ঐ তিনটির সমষ্টিকে ঈমানের মূল রুকন বা ভিত্তি বললেও তাঁরা আমল পরিত্যাগকারীকে খারেজীদের মত ‘কাফের’ বলেন না। কিন্তু এটা তাঁদের এক ধরনের স্ববিরোধিতা বৈ নয়।

কারণ, বাকি দুই রুকনের মধ্যে সামান্য পরিমাণ ঘাটতি হলেও ঈমান বাতিল হয়, যেমন- কেউ বলল, আমি ফেরেশতায় বিশ্বাস করি না, তবে ঈমানের বাকি সব বিশ্বাস করি। এখানে ফেরেশতার প্রতি বিশ্বাসের কমতি হওয়ায় তার পুরো ঈমানই বাতিল হয়ে যাবে। তদ্রূপ কেউ বলল, আমি যাবুরকে আসমানী কিতাব হিসেবে স্বীকার করি না, কিন্তু ইসলামের বাকি সব মান্য করি। এ ব্যক্তি বাকি সব মানা সত্তেও কাফের বলে গণ্য হবে। তদ্রুপ কেউ যদি বলে, আমি পুরো কোরআন মানি তবে অমুক আয়াত মানি না। এই ব্যক্তি ও কাফের বলে গণ্য হবে। তদ্রূপ বাড়তি করলেও কাফের হবে। যেমন কেউ নিশ্চিতভাবে বলল শ্রীকৃষ্ণ নবী ছিল। অথচ এর স্বপক্ষে কোরআন হাদিসের কোন দলিল নেই। অথবা বলল বর্তমানে ও নবী আসা সম্ভব, তাহলে সে কাফের হবে। সুতরাং বুঝা গেল ঈমানের এই মৌলিক দুটি রুকনে বাড়তি কমতির কোনো সুযোগ নেই।

যেহেতু ঈমানের বিষয়বস্তুগুলোতে বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বাড়তি কিংবা কমতির সুযোগ নেই এ দৃষ্টিকোণ থেকেই ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, ঈমান বাড়েও না কমেও না। এ মাসআলাটিকে ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ “আল আলিমু ওয়াল মুতাআল্লিম”-এ অত্যন্ত সুন্দর ও চমকপ্রদভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আগ্রহীরা সেখানে দেখে নিতে পারেন।

যাইহোক, তাহলে মুহাদ্দিসদের কথা অনুযায়ী তৃতীয় রুকনে তথা আমলের ক্ষেত্রেও সামান্য পরিমাণ ছুটে গেলে পুরো ঈমান বাতিল হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু খারেজীদের মতো সেটা তারা বলছেন না, সুতরাং এটা প্রকৃতপক্ষে ঈমানের রুকন নয়। হ্যাঁ, যদি এটাকে ঈমানের পূর্ণতাদানকারী রুকন বলি, ঈমানের অস্তিত্ব আনয়নকারী রুকন না বলে তাহলে অসুবিধা নেই।যেমন- হাসান নামক ব্যক্তির মাথার সুন্দর চুল না থাকলেও ব্যক্তি হাসান অস্তিত্বে থাকে। তদ্রুপ তার নাক, কান, চোখ, হাত ও পা না থাকলেও ব্যক্তি হাসান আছে বলে গণ্য হবে। কিন্তু এগুলো থাকলে ব্যক্তির দৈহিক সৌন্দর্যও গঠন পূর্ণতা লাভ করে।

তদ্রুপ ঈমানের বিষয়বস্তুগুলোর প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস এবং মৌখিক স্বীকৃতি থাকা অবস্থায় ব্যক্তি আমল পরিত্যাগ করলেও তার ঈমান বিদ্যমান থাকে কিন্তু ঈমানের সৌন্দর্যবর্ধক জিনিস বিদ্যমান থাকে না। আর যখনি ঈমানের বিষয়বস্তুগুলোর কোন একটিতে অবিশ্বাস করার মাধ্যমে কমতি সাব্যস্ত হবে, তখনি কুফর আবশ্যক হবে।

সুতরাং আমরা বুঝলাম ইমাম আবু হানিফা রহ. ঈমান বাড়েও না কমেও না বলে বুঝিয়ে থাকেন ঈমানের বিষয়বস্তুতে কমতি বাড়তি হয় না। আর কোরআন হাদিসের যত জায়গায় ঈমান বাড়া এবং কমার কথা বলা হয়েছে সেগুলো দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, ঈমানের সৌন্দর্য বাড়া, নূর বৃদ্ধি পাওয়া, ঈমানের বিষয়বস্তুতে বাড়তি কমতি উদ্দেশ্য নয়।

কারণ শত শত আমল থাকা সত্ত্বেও ঈমানের বিষয়বস্তুগুলোর কোন একটিতে সামান্য পরিমাণ অবিশ্বাস করলে সে কাফের বলে গণ্য হবে। পক্ষান্তরে ঈমানের বিষয়বস্তুগুলোর প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস ও মৌখিক স্বীকৃতি থাকাবস্থায় সকল আমল বর্জন করলেও সে কাফের বলে গণ্য হবে না।

আবার কোন হালালকে হারাম মনে করলে কিংবা হারামকে হালাল মনে করলে সাথে সাথে কাফের হয়ে যাবে। অকাট্য দলিলে প্রমাণিত কোন গুনাহে লিপ্ত হ‌ওয়াকে হালাল মনে করলেও কাফের হয়ে যায়।‌ এসকল বিষয়ে মুহাদ্দিসদের সাথে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মুতাকাল্লিমদের কোন বিরোধ নেই।

সুতরাং বোঝা গেল ঈমান হলো অন্তরের বিষয় আমল ঈমানের অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে ঈমান আনার কারণে আমল আবশ্যক হয়, আমলের কারণে ইমান আবশ্যক হয় না।

আমল যে মূল ঈমানের অন্তর্ভুক্ত নয় এ ব্যাপারে ইমাম আবু হানিফার বহু দলিল রয়েছে। ইনশাআল্লাহ ধীরে ধীরে আমরা সেগুলো আলোচনা করব।

লিখক, অ্যাডমিন ফিকহ মিডিয়া

ফতুল্লায় বিগত ১০ বছরেও কেউ কাদিয়ানী হয়েছে বলে আমি শুনিনি

প্রশ্ন : বাংলাদেশে কাদিয়ানী মতবাদ সাধারণদের কী পরিমাণে কাছে টানতে পারছে?

উত্তর : এ সম্পর্কে বলতে গেলে, অতিব সামান্য। তাও সকালে কাদিয়ানী তো বিকেলে যে লাউ সেই কদু। অর্থাৎ যখনি কেউ বুঝতে পারে যে, কাদিয়ানীদের ফাঁদে পড়েছে, তখনি আর দেরি না করে তওবাহ করে এবং ইসলামে ফিরে আসে। আমৃত্যু কাদিয়ানীদের ধোকা আর প্রতারণার ব্যাপারে খুব বেশি সতর্ক হন।

এখানে একজন কাদিয়ানী অনুসারী জনৈক মিশনারী (মুবাল্লিগ) এর একটি মন্তব্য তুলে ধরছি। নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা স্থানীয় জনাব মজিবুর রহমান শেখ। যিনি একজন কাদিয়ানী-আহমদীয়া ধর্মের অনুসারী। জনাব মজিবুর রহমান শেখ গত ২৮ বছর ধরে একজন কনভার্টেট কাদিয়ানী মুবাল্লিগ (ফতুল্লা, নারায়নগঞ্জ ঢাকা)। সম্প্রতি তিনি স্যোসাল মিডিয়ায় মন্তব্য করেছেনঃ “আমার জানামতে আহমদীয়া মুসলিম জামাত ফতুল্লাহ গত ১০ বছরে একজনও বয়াত করেনি।” তিনি তার ঐ মন্তব্যে কাদিয়ানীদের চাপাবাজীর মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছেন। স্যোসাল মিডিয়ায় শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিকট নিজের অবিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করতে শুরু করেছেন। তিনি কোনো এক কারণে কাদিয়ানী জামাতের প্রতি ভীষণ বিরক্ত। সম্ভবতঃ কাদিয়ানী জামাতের অনুসারী ও নিজেদের মধ্যকার যে কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। যার ফলে তিনি জুলুম বা নিপীড়নের শিকার হন। যার জন্য বকশিবাজারস্থ তাদের কেন্দ্রে তিনি বিচার চেয়েও বিচার পাননি। অথচ বিচারের আশায় তিনি প্রায় ছয় মাস পর্যন্ত ঢাকার বকশিবাজারে তাদের হেড কোয়ার্টার বা কেন্দ্রের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। নিচে তারই মন্তব্য গুলোর স্ক্রিনশট তুলে ধরছি, যাতে কাদিয়ানী জামাতের লোকদের মুখে মধু এবং অন্তরে বিষ থাকার বিষয়টি আরও খুব চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে।

জনাব মজিবুর রহমান শেখ সাহেবের এফ.বি একাউন্ট এর লিংক – মজিবুর রহমান শেখ

লিখক, মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ

তোমরা তা কামড়ে ধরো, হাদীসের এ খণ্ডিতাংশের কী তাৎপর্য ও একটি আপত্তির উত্তর,

ইমাম বুখারীর ‘আল আদাবুল মুফরাদ’ হাদীস নং ৯৬৩ হতে, (সনদ সহ) নিম্নরূপ,

حَدَّثَنَا عُثْمَانُ الْمُؤَذِّنُ، قَالَ‏:‏ حَدَّثَنَا عَوْفٌ، عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ عُتَيِّ بْنِ ضَمْرَةَ قَالَ‏:‏ رَأَيْتُ عِنْدَ أُبَيٍّ رَجُلاً تَعَزَّى بِعَزَاءِ الْجَاهِلِيَّةِ، فَأَعَضَّهُ أُبَيٌّ وَلَمْ يُكْنِهِ، فَنَظَرَ إِلَيْهِ أَصْحَابُهُ، قَالَ‏:‏ كَأَنَّكُمْ أَنْكَرْتُمُوهُ‏؟‏ فَقَالَ‏:‏ إِنِّي لاَ أَهَابُ فِي هَذَا أَحَدًا أَبَدًا، إِنِّي سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ‏:‏ مَنْ تَعَزَّى بِعَزَاءِ الْجَاهِلِيَّةِ فَأَعِضُّوهُ وَلا تَكْنُوهُ‏.‏

وفي رواية: إذا الرجل تعزى بعزاء الجاهلية، فأعضوه بهن أبيه، ولا تكنوا .

অর্থ- আমি উবাই ইবনে কা’ব (রা.)-এর নিকট এক ব্যক্তিকে দেখেছি, যে নিজেকে (বংশের গৌরবগাঁথা বর্ণনায়) জাহিলিয়াতের গুণে গুণান্বিত করলে, উবাই তাকে মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরতে বলেন। তিনি তা ইংগিতে বলেননি (অর্থাৎ তিনি স্পষ্ট করেই বলেছিলেন)। তাই তার সঙ্গীরা তার দিকে তাকাল। তিনি বললেন, ‘মনে হচ্ছে তোমরা এ কথা অপছন্দ করলে!’ তারপর তিনি বললেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কখনোই কাউকে শঙ্কা প্রকাশ করব না। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যে নিজেকে (বংশের গৌরবগাঁথা বর্ণনায়) জাহিলিয়াতের গুণে গুণান্বিত করে, সে যেন তা শক্তভাবে কামড় দেয় এবং তোমরা (এ কথা) অস্পষ্ট করে বলবেনা। (আল আদাবুল মুফরাত)।

মুসনাদে আহমদ এবং নাসাঈ এর আস-সুনানুল কোবরা গ্রন্থে অন্য বর্ণনায় আ’উফ ইবনে আবী জামীলাহ আল আ’রাবীর সূত্রে হাসান বছরী থেকে একটু পরিবর্তিত মতনে বর্ণিত আছে, “যে নিজেকে (বংশের গৌরবগাঁথা বর্ণনায়) জাহিলিয়াতের গুণে গুণান্বিত করে, সে যেন তার পিতার প্রজননতন্ত্র কামড় দেয় (অর্থাৎ নিজেকে পুর্বপুরুষের বংশীয় গরিমা থেকে সমূলে উপড়ে ফেলে) এবং তোমরা (এ কথা) অস্পষ্ট করে বলবেনা।”

সনদের তাহকিকঃ হাদীসটির সনদে উ’তাই ইবনু দ্বমরাহ (মৃত. ১৪৭ হি.) সম্পর্কে ইমাম আলী ইবনুল মদনী (রহ.) বলেছেন, ((مجهول، سمع من أبى كعب، لا نحفظها إلا من طريق الحسن، و حديثه يشبه حديث أهل الصدق وإن كان لا يعرف)) অর্থাৎ “সে অপরিচিত। সে উবাই ইবনু কা’ব থেকে শ্রবণ করেছে। তবে আমরা সেগুলো হাসান বছরীর সূত্রে ছাড়া সুরক্ষিত পাই না। আর তার বর্ণিত হাদীসগুলো সত্যবাদীদের হাদীসের ন্যায়, যদিও সে অপরিচিত।” (শরহে মেশকাত, ইমাম ত্বীবী ৯/১৬৭ দ্রষ্টব্য)। হ্যাঁ, ইমামগণের বেশিরভাগই তাকে তাওসীক্ব করেছেন। শায়খ আলবানী বলেছেন, এর সনদ সহীহ। যাইহোক, হাসান বছরীর সূত্রে আরেক সনদে হাদীসটির “মতন” এইরূপ, ((من سمعتموه يدعو بدعوى الجاهلية فأعضوه بهن أبيه ولا تكنوا)) অর্থাৎ, তোমাদের যে ব্যক্তি জাহিলিয়াত যুগের কৃষ্টি-কালচারের দিকে আহবান করবে সে যেন তার পিতার প্রজননতন্ত্র কামড় দেয় (অর্থাৎ নিজেকে পুর্বপুরুষের বংশীয় গরিমা থেকে সমূলে উপড়ে ফেলে) এবং তোমরা (এ কথা) অস্পষ্ট করে বলবেনা।”

বিশ্লেষণঃ মোল্লা আলী ক্বারী (রহ.) হাদীসটির মর্মবাণী বুঝিয়ে দিয়েছেন এভাবে যে,

مَعْناهُ مَنِ انتَسَبَ وانْتَمَى إلى الجاهِليَّةِ بإحْياءِ سُنَّةِ أهْلِها، وابْتِداعِ سُنَّتِهِم في الشَّتْمِ واللَّعْنِ والتَّعْييرِ، ومُواجَهَتِكُم بالفَحْشاءِ والتَّكبُّرِ، فاذْكُروا له قَبائِحَهُ أو قَبائِحَ أبيهِ من عِبادةِ الأصْنامِ، والزِّنا، وشُربِ الخَمْرِ، ونَحوِ ذلك ممَّا كان يُعيَّرُ به مِن لُؤمٍ ورَذالةٍ صَريحًا لا كِنايةً؛ كي يَرتَدِعَ عن التَّعرُّضِ لأعْراضِ النَّاسِ. اهـ. من مرقاة المفاتيح.

এর অর্থ হল, এমন কেউ যিনি (বংশের গৌরবগাঁথা বর্ণনায়) জাহিলিয়াতের যুগের লোকদের কৃষ্টি-কালচারকে পুনরুজ্জীবিত করে এবং অভিশাপ করা, গালমন্দ, অন্যকে তিরস্কার, অশ্লীলতা ও অহংকার প্রদর্শনের নিয়ম পদ্ধতি উদ্ভাবন করে…. তাহলে তোমরা সেই ব্যক্তিকে মদ্যপান, জেনা-ব্যভিচার এবং মূর্তিপূজা ইত্যাদি বিষয়ে পূর্বপুরুষের কুৎসিত কার্যকলাপগুলো স্মরণ করিয়ে দাও। (মেরকাত শরহে মেশকাত, মোল্লা ক্বারী)।

উল্লেখ্য, আরবী ভাষায় أَعِضُّو (তোমরা কামড়ে ধরো), এক ধরনের ভাষা অলংকার; যেটি বাগধারারই অংশ। এর তাৎপর্য হচ্ছে, তোমরা বংশীয় গৌরব সমূলে উপড়ে ফেলো। ইসলামে বংশীয় গৌরব নিন্দনীয়, পূর্বপুরুষদের নিয়ে অহংকার করা আরও জঘন্য। পূর্বপুরুষদের নিয়ে অহংকারীদের সতর্ক করতেই এভাবে বলা হয়ে থাকে।

সহীহ মুসলিম গ্রন্থে এ ধরনের আরও একটি আরবীয় বাগধারা رغم انف (রাগিমা আনফু অর্থাৎ নাক ধূলোয় ধূসরিত হয়ে যাক) উল্লেখ রয়েছে, যার রূপক অর্থ- ‘সে ক্ষতিগ্রস্ত’। হাদীসটি এই যে,

رغم أنف، ثم رغم أنف، ثم رغم أنف من أدرك أبويه عند الكبر أحدُهما أو كلاهما فلم يدخل الجنة

অর্থাৎ সে ক্ষতিগ্রস্ত অত:পর সে ক্ষতিগ্রস্ত অত:পর সে ক্ষতিগ্রস্ত যে তার পিতামাতা দুজনকেই বা কোনো একজনকে বৃদ্ধ বয়সে জীবিত পেল তবু সে (তাদের সেবা করে) জান্নাতে প্রবেশ করতে পারেনি। – মুসলিম।

অবশ্যই এন্টি ইসলাম নাস্তিক(!)দের নিকট আরবী শব্দগুচ্ছ গুলোয় আপত্তি থাকা অস্বাভাবিক নয়। যেহেতু তারা জাহিলিয়াত যুগ সম্পর্কে যেমন অজ্ঞ, ঠিক তেমনি আরবী ভাষার অলংকার বা বাগধারায়ও গণ্ডমূর্খ।

যাইহোক, এ জাতীয় শব্দগুচ্ছ যে আরবী ভাষায় প্রচলিত বাগধারারই অংশ তা অনুধাবন করতে হলে হুদায়বিয়ার সন্ধি মুহূর্তে কোরাইশের পক্ষ হতে আগত বার্তাবাহককে উদ্দেশ্য করে হযরত আবূবকর (রা.)-এর ঐতিহাসিক উক্তিটি মনে রাখতে হবে। তিনি কোরাইশের পক্ষ থেকে আসা বার্তাবাহককে বলেছিলেন أمضض بظر اللات (আমদ্বিদ বাঝারাল লাত) অর্থাৎ তুমি লাত এর প্রজননতন্ত্র কামড় দাও অর্থাৎ গায়রুল্লার প্রভাব প্রতিপত্তিকে এবার বিদায় জানাও।

রাসূল (সা.) অত্যাধিক লাজুক বলেই শুধুমাত্র أَعِضُّو (তোমরা কামড়ে ধরো) এটুকু বলে বিষয়টা বুঝিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু সাধারণ শিক্ষিতদের জন্য বিষয়টি আরও পরিষ্কার করে দিতে বর্ণনাকারীদের কোনো একজন এটিকে পূর্ণবাক্যে فَأَعِضُّوهُ بِهنِ أبِيهِ রেওয়ায়েত করে দিয়েছেন, উসূলে হাদীসের পরিভাষায় এধরণের অতিরঞ্জনকে ذيادة بالراوى (যিয়াদাত বির-রাবী) বলা হয়। সুতরাং যারা ভাষাবিদ ও পড়াশোনা জানা ব্যক্তি, তাদের নিকট এখন পুরো বিষয়টি পরিষ্কার, আলহামদুলিল্লাহ।

শেষকথা– রাসূল (সা.)-এর أَعِضُّو সংক্ষিপ্ত উক্তির দীর্ঘ বাক্যে প্রকাশ হচ্ছে فأعضوه بهن أبيه (ফা-আ’ইদ্দূহু বিহানি আবীহি)। আর সেটি আরবীয় ভাষা অলংকার। তাই একে গালি বা অশ্লীলতা বলা মূর্খতা। যদি এটি গালি বা অশ্লীলতা হত, তাহলে আরবীয় নাস্তিক বা ইসলাম বিদ্বেষীরাই সবার আগে আপত্তি তুলতো। আল্লাহ আমাদেরকে সহীহ বুঝ দান করুন।

লিখক, মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ

হযরত ফাতিমা (রা.)-এর প্রতি প্রথম দুই খলীফা কি অন্যায় করেছিলেন?

প্রশ্ন : ইসলামের প্রথম দুই খলীফা হযরত ফাতেমার সাথে কি অবিচার করেছিলেন?

উত্তর : শীয়া রাফেজি সম্প্রদায়ের সোর্সগুলোয় এ ধরনের কিছু গল্প অবশ্যই বর্ণিত আছে। আহলুস সুন্নাহ’র বিশুদ্ধ কোনো হাদীস গ্রন্থে এ ধরনের কোনো গল্পের উল্লেখ নেই। তবে বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থের বাহিরে কিছু কিছু পুস্তকে এ সম্পর্কে উল্লেখ থাকলেও তার সনদ প্রমাণিত নয়। আবার কোনো কোনোটির বিবরণও একেক রকম।

দুই খলীফার প্রতি জঘন্য অপবাদ :

সব চেয়ে জঘন্য অপবাদটি হচ্ছে, ‘হযরত উমর (রা.) হযরত ফাতিমার পেটে আঘাত করেন, ফলে ফাতিমার গর্ভপাত ঘটে। পেট থেকে মুহসিনের প্রসব হয়ে যায়।’ নাউযুবিল্লাহ। এ জাতীয় বিভিন্ন গল্প কাহিনী শীয়াদের বইপুস্তক গুলোয় ভুরি ভুরি পাওয়া যায়। সত্যি বলতে, এধরণের ইতিহাস সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং অবাস্তব। সত্যের সাথে যার লেশমাত্র সম্পর্কও নেই।

তার কারণ, বর্ণনাগুলোর সিংহভাগই ভিত্তিহীন ও সনদ বিহীন। কিছু কিছু বর্ণনার সনদে ইনক্বিতাহ বা বিচ্ছিন্নতা বিদ্যমান, আবার কিছু কিছু সনদের রাবী বা বর্ণনাকারী জিন্দিক ও অবিশ্বস্ত হিসেবে অভিযুক্ত। আবার কোনো কোনো বর্ণনার মান শাজ পর্যায়ের।

আমি বর্ণনাগুলোর অনুবাদ সহ একটু পরেই উল্লেখ করব, ইনশাআল্লাহ। তার আগে উক্ত দুই খলীফা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) এর সাথে প্রাসঙ্গিক ঘটনাটির পটভূমি উল্লেখ করছি।

১১ হিজরীর ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার রাসূল (সা.) এর ইন্তেকাল হয়ে গেলে সাহাবীরা সকলে তাদের পরবর্তী অভিভাবক বা প্রতিনিধি কে হবেন তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান। রাসূল (সা.)-এর দাফন কার্য সম্পন্ন হওয়ার পরপরই সাহাবীগণ সাকিফা বনু সাইদাহ (سقيفة بنى ساعدة) এর মহল্লায় একত্রিত হন এবং আবূবকর (রা.)-এর নিকট দলে দলে খিলাফতের বয়’আত নিতে শুরু করেন। কিন্তু কয়েকজন সাহাবী তখনো বয়’আত নেননি, তারা বয়’আত নিতে দেরি করেন। তাদের মধ্যে হযরত আব্বাস, হযরত ফজল ইবনে আব্বাস, হযরত আলী, হযরত যোবায়ের ইবনুল আ’ওয়াম, হযরত মিক্বদাদ প্রমুখ অন্যতম। হতে পারে তারা রাসূল (সা.)-এর দাফন কার্য থেকে তখনও পুরোপুরি অবসর হতে পারেননি। তাই বয়’আত নিতে দেরি হচ্ছিল। হযরত আবুবকর (রা.) তাদেরকে অনুপস্থিত দেখে খবর নেয়ার প্রয়োজন বোধ করেন এবং বেশকয়জন সাহাবীকে সহ হযরত উমর (রা.)-কে তাদের নিকট প্রেরণ করেন।

হযরত উমর (রা.) খবর নিয়ে জানতে পারলেন যে, তারা হযরত ফাতিমা (রা.)-এর বাড়ীতে অবস্থান করছেন। হযরত উমর (রা.) সহ সাহাবীগণ ফাতিমার বাড়ী গিয়ে পৌঁছেন। তাদেরকে খলীফা নির্বাচন সম্পর্কে অবিহিত করলেন। অত:পর বাড়ীর ভেতরে যারা অবস্থান করছিলেন তারা সবাই বের হয়ে আসেন এবং আবূবকর (রা.)-এর হাতে বয়’আতে প্রবেশ করেন। এ ছিল আসল ঘটনা। ঘটনাটি এভাবেই বিশুদ্ধ সূত্রে মুসনাদে আহমদ, মুস্তাদরাক লিল হাকিম গ্রন্থদ্বয়ে বর্ণিত হয়েছে।

হযরত উমর (রা.) কি ফাতিমা (রা.) এর পেটে আঘাত করেছিলেন?

উত্তরে বলা হয় যে, এ ধরনের কোনো ইতিহাস প্রমাণিত নয়, বরং এ কথাটি প্রথম যে ব্যক্তিটি বলেছিল তার নাম ইবরাহীম আন নাজ্জাম আল মু’তাজিলি। তার দাবী হচ্ছে, ((إن عمر ضرب بطن فاطمة يوم البيعة، حتى ألقت المحسن من بطنها)) “নিশ্চয়ই উমর বয়’আতের দিন ফাতিমার পেটে আঘাত করেন, ফলে তাঁর পেট থেকে মুহসিনের গর্ভপাত হয়ে যায়।” – টাটকা জাল ও ভিত্তিহীন।

রেফারেন্স- আল ওয়াফী বিল ওয়াফিয়াত ৬/১৭, সালাহ উদ্দীন আছ-ছফদী আদ দিমাস্কী আশ-শাফেয়ী (মৃত. ৬৯৬ হি.)।

সম্পর্কিত তথ্যঃ উপরের বক্তব্যটি সম্পূর্ণ সনদ বিহীন। বিভিন্ন ঐতিহাসিক গ্রন্থে এটি শীয়া দর্শনে প্রভাবিত ইবরাহীম আন নাজ্জামের নিজেস্ব উক্তি হিসেবে উল্লেখ পাওয়া যায়। নিচে ইবরাহীম আন নাজ্জাম এর বৃত্তান্ত উল্লেখ করছি,

ইমাম যাহাবী তাঁর ‘সিয়ার’ গ্রন্থে তার সম্পর্কে লিখেছেন ((كَانَ النَّظَّامُ عَلَى دِيْنِ البَرَاهِمَةِ المُنْكِرِيْنَ لِلنُبُوَّةِ وَالبَعْثِ وَيُخْفِي ذَلِكَ)) অর্থাৎ ইবরাহীম আন নাজ্জাম এমন একজন, যে পুনরুত্থান এবং নবুওয়তের অস্বীকারকারী ব্রাহ্মণ্য মতবাদের অনুসারী ছিল, অথচ সে তা গোপন রাখত। – (সিয়ারু আলামিন নুবালা, যাহাবী ১০/৫৪২)।

ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী (রহ.) ‘লিসানুল মীযান’ গ্রন্থে তার পুরো নাম এভাবে উল্লেখ করেছেন, ((إبراهيم بن سيار بن هانئ النظام أبو إسحاق البصري)) অর্থাৎ ‘ইবরাহীম ইবনে সাইয়ার ইবনে হানী আন নাজ্জাম আবূ ইসহাক্ব আল বছরী।’ ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী (রহ.) তার সম্পর্কে আরও লিখেছেন, ((من رؤوس المعتزلة متهم بالزندقة وكان شاعرا أديبا بليغا وله كتب كثيرة في الاعتزال والفلسفة ذكرها النديم. قال ابن قتيبة في “اختلاف الحديث” له: كان شاطرا من الشطار مشهورا بالفسق. ثم ذكر من مفرداته: أنه كان يزعم أن الله يحدث الدنيا وما فيها في كل حين من غير أن يفنيها , وجوز أن يجتمع المسلمون على الخطأ)) অর্থাৎ ‘সে ছিল মু’তাজিলি সম্প্রদায়ের অন্যতম নেতা। জিন্দিক বা ধর্মত্যাগী হিসেবেও অভিযুক্ত। তবে সে একজন কবি এবং সাহিত্যিক। তার বহু রচনা ছিল মু’তাজিলি মতবাদ এবং ফিলোসোফি দর্শনের উপর, শায়খ নাদীম তার লিখায় এ সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। ইমাম ইবনু ক্বদামাহ তার ‘ইখতিলাফুল হাদীস’ গ্রন্থে তার সম্পর্কে লিখেছেন, সে একজন ধূর্ত এবং অন্যায় ও অনৈতিকতার জন্য ছিল বিখ্যাত। ইবনু কুদামা ‘মুফরাদাত’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘সে দাবী করত যে, সমগ্র পৃথিবী এবং এর মধ্যে আল্লাহ যা সৃষ্টি করেছেন, এর কিছুই বিনাশ হবেনা। সে আরও বলত, মুসলিমদের জন্য ভুলের উপর ঐক্যমত হওয়া বৈধ।’

ইবনু হাজার আসকালানী (রহ.) তার মৃত্যু সন লিখেছেন ((مات في خلافة المعتصم سنة بضع وعشرين ومئتين وهو سكران)) অর্থাৎ সে খলীফা মু’তাসিম এর শাসনামলে বছরা শহরে ২২০ হিজরীতে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মারা যায়। (লিসানুল মীযান ১/২৯৫)।

বিশুদ্ধ সনদে এতদ সংক্রান্ত ঐতিহাসিক বর্ণনাটি ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) সহ আহলুস সুন্নাহ’র ইমামগণের কিতাবে যেভাবে উল্লেখ আছে,

হাদীসের আরবী ইবারত ও অনুবাদঃ

أسلم القرشي مولى عمر بن الخطاب رضي الله عنه، قال: حين بُويع لأبي بكر بعد رسول الله صلى الله عليه وسلم، كان علي والزبير يدخلان على فاطمة بنت رسول الله صلى الله عليه وسلم فيشاورونها ويرتجعون في أمرهم ، فلما بلغ ذلك عمر بن الخطاب خرج حتى دخل على فاطمة فقال: يا بنت رسول الله صلى الله عليه وسلم ! والله ما من أحد أحب إلينا من أبيك، وما من أحد أحب إلينا بعد أبيك منك، وايم الله ما ذاك بمانعي إن اجتمع هؤلاء النفر عندك إن أمرتهم أن يحرق عليهم البيت. قال: فلما خرج عمر جاؤوها فقالت: تعلمون أن عمر قد جاءني، وقد حلف بالله لئن عدتم ليحرقن عليكم البيت، وايم الله ليمضين لما حلف عليه، فانصرِفوا راشدين، فَرُوا رأيَكم ولا ترجعوا إلّيَّ ، فانصرفوا عنها ، فلم يرجعوا إليها حتى بايعوا لأبي بكر.

অর্থাৎ হযরত উমর ইবনু খাত্তাব (রা.) এর একজন কৃতদাস আসলাম আল কারশী, তিনি বলেন, যখন আল্লাহ’র রসূলের ইন্তেকালের পর আবু বকর (রা.)-এর নিকট বয়’আত নেয়া হচ্ছিল, তখন যোবায়ের এবং আলী দু’জনই আল্লাহ’র রসূলের কন্যা ফাতিমার বাড়ী যান এবং নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করতে থাকেন এবং কাজে বেপরোয়া ছিলেন। যখন এ সংবাদটি উমর ইবনু খাত্তাব (রা.)-এর নিকট পৌঁছল, তখন তিনি ফাতিমা (রা.)-এর নিকট যাওয়ার জন্য বের হন। তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ’র রসূলের কন্যা! খোদার কসম, আমাদের কাছে আপনার পিতার চেয়ে প্রিয় আর কেউ নেই এবং আপনার পিতার পর আমাদের কাছে আপনার চেয়ে প্রিয় আর কেউ নেই। খোদার কসম, যদি এ দলটি আপনার নিকট সংঘবদ্ধ থাকে তাহলে তা আমাকে তাদের ঘর পুড়িয়ে দিতে রুখবেনা, যদি আপনি নির্দেশ দিন।

বর্ণনাকারী বলেন, যখন উমর চলে গেলেন, তখন তারা ফাতিমার নিকট আসলেন। ফাতিমা বললেন, তোমরা জানো যে, উমর আমার নিকট এসেছিলেন এবং তিনি আল্লাহর শপথ করেছিলেন যে, আপনারা যদি বয়’আত থেকে বিরত থাকেন তাহলে তিনি আপনাদের ঘর জ্বালিয়ে দেবেন। আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি যে, তারা যা করার শপথ করেছেন তা তারা পূরণ করবে। সুতরাং আপনারা মনস্থির করুন আর আমার কাছে ফিরে আসবেন না। তারপর তারা তাঁর নিকট চলে গেলেন এবং আবু বকরের নিকট বয়’আত না করা পর্যন্ত ফিরে যাননি।

রেফারেন্সঃ মুসনাদে আহমদ, ফাজায়েলুস সাহাবা অধ্যায় ১/৩৬৪, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ৭/৪৩২, আল মুযাক্কার ওয়াত তাযকীর ১/৯১ ইবনু আবী আছিম, ইমাম বাজ্জারের সূত্রে আল ইস্তঈ’আব ৩/৯৭৫ ইবনু আব্দিল বার, তারীখে বাগদাদ ৬/৭৫ খতীবে বাগদাদ। প্রত্যেকের অভিন্ন সনদটি এইরূপ- محمد بن بشر ثنا عبيد الله بن عمر عن زيد بن أسلم عن أبيه به. শায়খ মুহাম্মদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ (হাফি.) বলেছেন, وهذا إسناد صحيح এ সনদটি সহীহ

এবার ব্যতিক্রমী ও দুর্বল বর্ণনাগুলো নিম্নরূপ যেগুলোর মতন বা মূলপাঠ সূত্রের বিচারে অপ্রমাণিত,

. يقول البَلَاذُري (أحمد بن يحيى بن جابر البَلَاذُري البغدادي)ـ بعد لحادثة السقيفة المريرة ـ : إنّ أبا بكر أرسل إلى علي يريد البيعة، فلم يبايع، فجاء عمر و معه فتيلة، فتلقته فاطمة على الباب، فقالت فاطمة : يا ابن الخطاب أتراك محرقاً عليَّ بابي؟ قال : نعم، و ذلك أقوى فيما جاء به أبوك وجاء علي فبايع وقال : كنت عزمت أن لا أخرج من منزلي حتى أجمع يعني أحفظ القرآن

অর্থ- আহমদ ইবনে ইয়াহইয়া ইবনে জাবের আল বালাজুরী আল-বাগদাদী বলেন, সাক্বীফায় সংঘটিত ঘটনার পর :- নিশ্চয়ই আবূবকর (রা.) বয়’আত গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে আলীর নিকট দূত প্রেরণ করেন। যেহেতু সে বয়’আত নেয়নি। ফলে উমর (রা.) একটি প্রদীপ সাথে নিয়ে (ফাতিমার বাড়ীর উদ্দেশ্যে) যাত্রা করেন। ফাতিমা তার সাথে বাড়ীর দরজায় দেখা করেন। তখন ফাতিমা জিজ্ঞেস করলেন, হে উমর! আপনি কি আমার দরজায় আগুল দিতে চাচ্ছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, এটি আপনার পিতা যা নিয়ে এসেছেন তার চেয়েও ভারি। অত:পর হযরত আলী (রা.) বেরিয়ে আসেন এবং বয়’আত গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, আমি (মূলত) গৃহ থেকে বের না হবারই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যতক্ষণ না আমি কুরআন হিফয সম্পন্ন করছি। – আনসাবুল আশরাফ ২/১২, আল বালাজুরী। – দুর্বল

সম্পর্কিত তথ্যঃ ইমাম বালাজুরী (২৭০ হি.) এটি ‘আনসাবুল আশরাফ’ ২/১২-তে বর্ণনা করেছেন। বর্ণনার সনদের অভ্যন্তরীণ ক্রুটি হচ্ছে, সূত্র বিচ্ছিন্নতা। বর্ণনাকারীদের মধ্যে দেখা সাক্ষাৎ হওয়া প্রমাণিত নয়। কেননা, এর সনদ হচ্ছে المدائني عن مسلمة بن محارب عن سليمان التيمي وعن ابن عون প্রথমতঃ এখানে মাসলামাহ বিন মাহারিব আয যিয়াদী আল কুফী সম্পর্কে রিজালশাস্ত্রের কিতাবগুলোয় জরাহ বা তা’দীল কোনো কথারই উল্লেখ নেই। তবে ইবনু হিব্বান তাকে সিকাহ’র অন্তর্ভুক্ত করেছেন। দ্বিতীয়তঃ সুলাইমান ইবনু তুরখান আত তাঈমী (سليمان ابن طرخان التيمي) এর মৃত্যু সন ১৪৩ হিজরী। কিন্তু সনদে উপরের দু’জনের মধ্যখানে ইনক্বিতা বা বিচ্ছিন্নতা রয়েছে। অধিকন্তু মাসলামাহ বিন মাহারিব শুধুই হিজাজের রাবীগণ থেকে এবং উমর বিন আব্দুল আযীয থেকেই বর্ণনা করতেন (-আস সিক্বাত, ইবনু হিব্বান)। আর আব্দুল্লাহ ইবনু আ’ওন আল বছরী (وعبد الله بن عون أبو عون البصري) এর মৃত্যু সন বিশুদ্ধ মতে ১৫০ হিজরী। সুলাইমান এবং আব্দুল্লাহ কেউই ঘটনাটি সুনিশ্চিতভাবে উপলব্ধি করতে পারেননি, যদিও দু’জনই বিশ্বস্ত ছিলেন। ইমাম ইয়াহইয়া বিন সা’ঈদ আল কাত্তান বলেন, সুলাইমান ইবনু তুরখানের মুরসাল সন্দেহযুক্ত ও গুরুত্বহীন। আর তার শায়খ আল মাদাইনী যার পূর্ণ নাম-أبو الحسن علي بن محمد بن عبد الله الإخباري ; মৃত্যু সন ২২৪ হিজরী, তিনি হাদীস বর্ণনায় শক্তিশালী নন (ইবনু আদীর আল কামিল ৫/২১৩ দেখুন)। তবে লিসানুল মীযান গ্রন্থে ইবনু মা’ঈন থেকে তার তাওসীক্ব উল্লেখ আছে। ইমাম যাহাবীও তার বৃত্তান্ত তুলে ধরেছেন। যাইহোক, সর্বসাকুল্যে কথা হচ্ছে, বিশুদ্ধ বর্ণনার বিপরীতে ইমাম বালাজুরীর মুনকাতি সনদের এ বর্ণনার অতিরিক্ত অন্যান্য ঘটনা নির্ভরযোগ্য সনদে উত্তীর্ণ নয় বলে গ্রহণযোগ্য নয়।

এ ধরনের আরও কিছু দুর্বল বর্ণনা শব্দের কিছু পরিবর্তন সহ উল্লেখ রয়েছে, যেমন-

তারীখে তাবারী ৩/২০২।

‘আল ই’কদুল ফারীদ, ইবনু আব্দি রাব্বিহি আল উন্দুলুসী ৫/৩১। সংক্ষেপে।

সম্পূর্ণ লিখাটির সোর্স শায়খ মুহাম্মদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ (হাফি.) এর Islamqa.info এ সাইট থেকে সংগৃহীত

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী, শিক্ষাবিদ ও গবেষক