Home Blog

ইমাম মাহদীর পেছনে ঈসা মসীহ সালাত পড়বেন

ইমাম মাহদীর আগমনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বহু হাদীসে ভবিষ্যৎবাণী করেছেন যে, শেষ যুগে হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম এর আগমন ঘটবে। তিনি নবী বংশের হবেন, নবীকন্যা হযরত ফাতেমার পুত্র হাসানের বংশে জন্মগ্রহণ করবেন। মাহদী অর্থ সুপথপ্রাপ্ত। এটি তাঁর উপাধি থাকবে। তিনি মদীনায় জন্মিবেন, যথাসময়ে মক্কায় চলে আসবেন। হজ্জের সময় তাওয়াফরত অবস্থায় তিনি প্রতীক্ষিত মাহদী হিসেবে সে সময়কার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নিকট সনাক্ত হবেন। তিনি হাজরে আসওয়াদ এবং মাকামে ইবরাহীমের মধ্যখানে ‘খিলাফাত’ এবং লি-ই’লায়ে কালিমাতিল্লাহ’র উদ্দেশ্যে জিহাদের উপর বয়াত গ্রহণ করবেন। তাঁর নাম হবে মুহাম্মদ, পিতার নাম হবে আব্দুল্লাহ। তাঁর আত্মপ্রকাশের বছর কতেক পরেই প্রতিশ্রুত ঈসা মসীহ দামেস্কের (উমাইয়া মসজিদের সন্নিকটে-শায়খ ইবনু তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ) শ্বেত মিনারার পাশে ‘আকাশ’ থেকে ফেরেশতার ডানায় ভর করে অবতরণ করবেন। সহীহ মুসলিম শরীফের হাদীসে এসেছে, واضِعًا كَفَّيْهِ على أَجْنِحَةِ مَلَكَيْنِ অর্থাৎ দু’জন ফেরেশতার দুই ডানার উপর তিনি তাঁর দুই বাহু রেখে অবতরণ করবেন (মুসলিম, কিতাবুল ফিতান ওয়া আশরাতুস সা’আহ ৭১০৬)।

  • প্রসঙ্গত, সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে অবস্থিত উমাইয়া মসজিদ বা দামেস্ক গ্র্যান্ড মসজিদ বিশ্বের বৃহত্তম মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম। উমাইয়া খলীফা ওয়ালিদ বিন আবদুল মালিকের শাসনামলে ৭০৫ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। দীর্ঘ নয় বছরের পরিশ্রম শেষে ৭১৪ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটির নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়। ইসলামী বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন যে, সহীহ মুসলিমসহ অন্যান্য হাদিসগ্রন্থের বর্ণনা অনুযায়ী কেয়ামতের আগে এখান থেকেই বনী ইসরাইলি নবী হযরত ঈসা (আ.) পৃথিবীতে ফিরে আসবেন। মসজিদটির দক্ষিন-পূর্ব, দক্ষিন-পশ্চিম কোণ এবং উত্তর দিকে মোট তিনটি মিনার রয়েছে। এরমধ্যে বাম দিকের মিনারটি منارة المسيح বা ‘যিশু মিনার’ (minarat of jesus) নামেও পরিচিত।

ইমাম ইবনু হাজার আল হাইসামী (রহ.)-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, ঈসা মসীহ এর অবতরণের স্থানটি কোথায় হবে?

তিনি এর উত্তরে ‘ফাতাওয়ায়ে হাদীছিয়্যাহ’ কিতাবে লিখেছেন,

أنه سئل أي محل ينزل به عيسى عليه السلام؟ فأجاب بقوله: الأشهر ما صح في مسلم أن ينزل عند المنارة البيضاء شرقي دمشق، وفي رواية بالأردن، وفي أخرى بعسكر المسلمين، ولا تنافي لأن عسكرهم بالأردن ودمشق وبيت المقدس من ذلك

অর্থ- প্রশ্ন করা হয় যে, ঈসা আলাইহিস সালামের অবতরণস্থল কোথায় হবে? এর উত্তর হচ্ছে, অধিক প্রসিদ্ধ আছে যে, মুসলিম শরীফের বিশুদ্ধ বর্ণনামতে তিনি দামেস্কের পূর্বপ্রান্তে শ্বেত মিনারার সন্নিকটে অবতরণ করবেন। অন্য বর্ণনায় আছে তিনি জর্ডান ভূমিতে, অন্য বর্ণনামতে তিনি মুসলমানদের সেনাছাউনিতে অবতরণ করবেন। তবে এ বর্ণনাগুলোয় কোনো অসঙ্গতি নেই। তার কারণ, মুসলমানদের সেনাছাউনি তখন জর্ডান, সিরিয়া এবং জেরুজালেম সহ সবখানেই স্থাপিত হবে।

ফাতাওয়ায়ে হাদীছিয়্যাহ পৃষ্ঠা নং ৩২৭ (ক্লিক)

হাদীস-১ :-

নু’আইম বিন হাম্মাদ আল মারূযী (রহ.) বর্ণনা করেছেন,

حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ، عَنْ هِشَامٍ، عَنْ مُحَمَّدٍ، قَالَ:«الْمَهْدِيُّ مِنْ هَذِهِ الْأُمَّةِ، وَهُوَ الَّذِي يَؤُمُّ عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ عليهما السلام»

অর্থ- গ্রন্থাকার নু’আইম বিন হাম্মাদ আল মারূযী থেকে, তিনি আবূ উসামাহ থেকে, তিনি হিশাম থেকে, তিনি মুহাম্মদ থেকে, তিনি বলেন, মাহদী এ উম্মতের মধ্য থেকে হবেন। তিনি ঈসা ইবনু মরিয়মের ইমামত করবেন। (আল ফিতান হাদীস নং ১১০৭)।

হাদীসের মান, সহীহ

হাদীস ২:-

নু’আইম বিন হাম্মাদ আল মারূযী (রহ.) বর্ণনা করেছেন,

عن عبد الله بن عمرو قال: المهدي ينزل عليه عيسى ابن مريم، ويصلي خلفه عيسى.

অর্থ- সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, ঈসা ইবনু মরিয়ম ইমাম মাহদীর সময় অবতরণ করবেন এবং তিনি তাঁর পেছনে সালাত আদায় করবেন। (আল ফিতান হাদীস নং ১০৪৩)।

হাদীসের মান : সহীহ

ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) লিখেছেন,

وقال أبو الحسن الخسعي الآبري في مناقب الشافعي تواترت الاخبار بأن المهدي من هذه الأمة وأن عيسى يصلي خلفه ذكر ذلك ردا للحديث الذي أخرجه ابن ماجة عن أنس وفيه ولا مهدي الا عيسى

অর্থ- “হাফিয আবুল হাসান আল আবরী (২৮৩-৩৬৩ হি.) ‘মানাকিবু শাফেয়ী’ গ্রন্থে বলেছেন, সংবাদ সমূহ এ মর্মে তাওয়াতূর পর্যায়ে উপনীত হয়ে গেছে যে, নিশ্চয়ই ইমাম মাহদী এ উম্মতের মধ্য থেকেই হবেন এবং ঈসা (আ.) তাঁর পেছনে সালাত আদায় করবেন। এটি আনাস হতে ইবনে মাজাহ এর বর্ণিত হাদীসেরই প্রত্যাখ্যানকারী যেখানে ‘ওয়া লাল মাহদী ইল্লা ঈসা’ লিখা রয়েছে।” (ফাতহুল বারী ৬/৩৫৮)।

  • ইবনে মাজাহ-এর একটি বর্ণনায় এসেছে, কোনো মাহদী নেই ঈসা ব্যতীত, বর্ণনাটির সনদ সর্বসম্মত ইমামগণের মতে খুবই দুর্বল ও মুনকার। এর সূত্র মুনকাতে বা বিচ্ছিন্ন এবং তার একজন রাবী মাজহূল বা অপরিচিত ও অন্য জন মিথ্যাবাদী হিসেবে অভিযুক্ত। এ সম্পর্কে পড়তে ক্লিক করুন।

ইমাম ইবনু বাত্তাহ (রহ.) লিখেছেন,

ثُمَّ الإيمانُ بأنَّ عيسى بنَ مَريَم عليه السَّلامُ يَنزِلُ مِنَ السَّماءِ إلى الأرضِ فيَكسِرُ الصَّليبَ ويَقتُلُ الخِنزيرَ وتَكونُ الدَّعوةُ واحِدةً

অর্থ- “অত:পর বিশ্বাস রাখা (আবশ্যক) এ মর্মে যে, ঈসা ইবনে মরিয়ম আলাইহিসসালাম পৃথিবীতে আকাশ থেকে অবতরণ করবেন, তারপর তিনি ক্রুস ভঙ্গ করবেন এবং শুয়োর হত্যা করবেন আর তখন (শুধুমাত্র) একই (তথা দ্বীনে ইসলামের দিকে) আহবান থাকবে।”

আল ইবানাতুছ ছোগরা-الإبانة الصغرى পৃষ্ঠা নং ২৪১

শারেহে মুসলিম ইমাম নববী (রহ.) লিখেছেন,

ثَبَت في الصَّحيحين أنَّ رَسولَ الله صلَّى اللهُ عليه وسلَّم قال: يَنزِلُ عيسى بنُ مَريَم مِنَ السَّماءِ، ويَقتُلُ الدَّجَّالَ ببابِ لُدٍّ

অর্থ- “সহীহাইন দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে, মরিয়ম পুত্র ঈসা আকাশ থেকে অবতরণ করবেন, তিনি দাজ্জালকে লূদ নামক গেইটে হত্যা করবেন।” (ক্লিক)

শরহে সহীহ মুসলিম পৃষ্ঠা নং ২৯৩৭

ইমাম আবুল হাসান মুহাম্মদ ইবনু হোসাইন আল আবরী (২৮৩-৩৬৩ হি.) বলেছেন,

وَقَدْ تَوَاتَرَتِ الأَخْبَارُ وَاسْتَفَاضَتْ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِذِكْرِ الْمَهْدِيِّ وَأَنَّهُ مِنْ أَهْلِ بَيْتِهِ وَأَنَّهُ يَمْلُكُ سَبْعَ سِنِينَ وأنه يؤم الأَرْضَ عَدْلا وَأَنَّ عِيسَى يَخْرُجُ فَيُسَاعِدُهُ عَلَى قَتْلِ الدَّجَّالِ وَأَنَّهُ يَؤُمُّ هَذِهِ الأُمَّةَ وَيُصَلِّي عِيسَى خَلْفَهُ

অর্থ- তাঁর (ইমাম মাহদী) আবির্ভাব এবং আহলে বাইয়েত (নবী বংশ) থেকে হওয়া এবং সাত বছর পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনা করা এবং ভূপৃষ্ঠ ন্যায়বিচার দ্বারা পরিপূর্ণ করা এবং ঈসা আলাইহিস সালামের সাথে (জিহাদের উদ্দেশ্যে ও রণসাজে) বের হওয়া এবং ফিলিস্তিনের ভূমিতে ‘লুদ‘ নামক ফটকে দাজ্জালকে হত্যার অভিযানে ঈসাকে সহযোগিতা করা এবং এ উম্মতের ইমামতে কোবরা’র দায়িত্ব পালনকরা ও ঈসা তাঁর পেছনে সালাত আদায় করার সমর্থনে হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বহু মুতাওয়াতির (ধারাবাহিক) বর্ণনা এসেছে।

আল মানারুল মুনীফ পৃষ্ঠা নং ১৪২, ইবনু কাইয়ুম

ইমাম জালালুদ্দীন আস সুয়ূতী (রহ.) লিখেছেন,

هذا من أعجب العجب، فإنّ صلاة عيسى خلف المهدي ثابتة في عدّة أحاديث صحيحة بإخبار رسول اللّه، وهو الصادق المصدّق

অর্থ- ব্যাপারটি অত্যন্ত অবাককরা যে, নিশ্চয়ই মাহদীর পেছনে ঈসার সালাত আদায় করাটা সদা সত্যবাদী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বহু সহীহ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত।

ইমাম সুয়ূতী রচিত ‘নুযূলু ঈসা ইবনে মরিয়ম আখিরায জামান‘ পৃষ্ঠা নং ৫৬। ক্লিক

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম এ

কাদিয়ানীদের নবী-প্রেম এর আসল রহস্য

কাদিয়ানীদের সব চেয়ে জঘন্য অন্যায় হলো তারা ‘খতমে নবুওয়তে’ (অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুক্ত ও স্বাধীন সর্বশেষ নবী – এটিকে) বিশ্বাস করে না। আর তাদের একখান মেকি গুণ হলো, তারা আপনার সামনে এমনভাবে নবী-প্রেমে বুঁদ হয়ে থাকবে যে আপনি তাদের কোনো ত্রুটিরই টের পাবেন না। এটাকে বলে ‘তাকিয়া’। আর আমার ভাষায় এ তাকিয়ারই অপর নাম ললিপপ। কাদিয়ানীরা জনরোষ সামাল দিতে ও সাধারণদের ধোকা দিতেই যার-তার সাথে উক্ত ‘ললিপপ’ কান্ডে অবতীর্ণ হয়ে থাকে।

আর আপনি জেনে অবাক হবেন যে, পৃথিবীতে কাদিয়ানীদের চেয়ে মারাত্মক ‘নবী বিদ্বেষী’ ও গোস্তাক দ্বিতীয় কাউকে খুঁজে পাবেন না। যেমন- তাদের চেপে রাখা কুফুরী আকীদাগুলোর একটি হচ্ছে-

“এখন কলেমায় পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, ((مُحَمَّدُ رَّسُوْلُ اللهِ))-এর অর্থে নতুন একজন রাসূল বৃদ্ধি হয়ে গেছে।” (কালিমাতুল ফছল পৃ-৬৯, লিখক মির্যাপুত্র মির্যা বশির আহমদ এম.এ)।

আরেক জায়গায় একদম নিখুঁতভাবে লিখা আছে যে,

মির্যা কাদিয়ানী নাকি স্বয়ং মুহাম্মদ (সা.)। তাদের অফিসিয়াল উর্দূ পত্রিকা দৈনিক আল ফজল (২৮-১০-১৯১৫)-এর মধ্যে পরিষ্কার লিখা আছে ((مسيح موعود محمد است و عين محمد است)) অর্থাৎ মসীহ মওউদ হচ্ছেন মুহাম্মদ এবং তিনি প্রকৃতপক্ষেই মুহাম্মদ। নাউযুবিল্লাহ।

একই পৃষ্ঠায় আরো খোলাসা করে লিখা আছে,

“তিনি প্রকৃত মুহাম্মদ (সা.) হওয়ার ব্যাপারে বিন্দু পরিমাণেও কোনো সন্দেহ নেই।”

আরো লিখা আছে,

“আল্লাহর নিকট মসীহ মওউদের সত্তা হযরত (সা.)-এরই সত্তাতে পরিণত। তাদের মধ্যে কোনো ভিন্নতা থাকেনি, তারা একই সত্তা।”

আরেক জায়গায় লিখা আছে,

“এ জগত ধ্বংস হতে এখনও এক হাজার বছর অবশিষ্ট আছে।” (ইসলাম ও এদেশে অন্যান্য ধর্মমত পৃ-৪২)। একই পুস্তকে আরও লিখা আছে,

“সপ্তম সহস্র যা খোদা এবং তাঁর মসীহ’র জন্য নির্ধারিত।” (সূত্র ঐ ৪৯)। উল্লেখ্য, মির্যা কাদিয়ানী নিজেকে “মসীহ” তথা ঈসা আলাইহিস সালাম হওয়ার দাবীও করত।

এতে স্পষ্টত সাব্যস্ত হল যে, মির্যা কাদিয়ানীর বিশ্বাস ছিল, তার দাবীর সময় থেকে কেয়ামত পূর্ব দীর্ঘ এই সময়টি শুধু তারই, কার্যত নবুওয়তে মুহাম্মদীয়া অচল। নাউযুবিল্লাহ। নতুবা তার ঐ কথার কী অর্থ?

আরেক জায়গায় লিখা আছে,

“হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর যুগে মিডিয়া না থাকার দরুন তাঁর দ্বারা দ্বীন প্রচারের কাজ পরিপূর্ণভাবে হয়নি। তিনি পূর্ণ প্রচার করেননি। আমি তাঁর বুরুজী রঙ্গে (অবতাররূপে) এসে তাঁর অসম্পূর্ণ কাজগুলো পূর্ণ করেছি।” (রূহানী খাযায়েন ১৭/২৬৩, সারমর্ম)। নাউযুবিল্লাহ।

যাইহোক,

কাদিয়ানীদের সবচেয়ে বড় স্লোগান হলো “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ”। দেখবেন, তাদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে, প্রতিটি মাহফিলে-মজমায়, তাদের প্রতিটি পোস্টার-সারকুলারে অনেক বড় অক্ষরে এবং অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন করে এই কালেমা লেখা থাকে। কাদিয়ানীরা কোথাও তাদের “কাদিয়ানী” নাম ব্যবহার করে না। তাদের নাম থাকে আহমদীয়া মুসলিম জামাত। ঢাকার বকশিবাজার আলিয়া মাদরাসার পাশে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়।

আপনি যদি কোনো কাদিয়ানীকে জিজ্ঞেস করেন সে খতমে নবুওয়তে বিশ্বাস করে কিনা, তাহলে সে ইনিয়ে-বিনিয়ে ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে আপনাকে প্রচুর নবীপ্রেম দেখাবে। তারা এতো নিখুঁতভাবে কথা বলতে জানে যে, অধিকাংশ মানুষ তাদের সাথে বিতর্ক করতে এসে তাদের নবী-ভক্তিমূলক বাক্যালাপের কাছে হেরে যাওয়ার উপক্রম হয়।

কিন্তু তাদের ঈমান(!) খুব টনটনে। তারা ভুলেও একথা স্বীকার করবে না যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘শেষ নবী’।

আল্লাহ্ বলেন, ‘মুহাম্মাদ’ তোমাদের মধ্য থেকে কোনো পুরুষের পিতা নয়। তিনি হলেন আল্লাহর রাসূল এবং ‘শেষ নবী’ (কুরআন ৩৩:৪০)। আপনি যদি আল্লাহর এই কথাকে বিশ্বাস করেন তাহলে বলুন “কাদিয়ানীরা জিন্দিক ও কাফের এবং ইসলামের সব চেয়ে নিকৃষ্ট দুশমন!”

আল্লাহ তালা তাদেরকে সহীহ বুঝ দান করুন। আমীন।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

মির্যা কাদিয়ানী মূলত ‘হাকিকি নবী’ দাবীই করেছিল

মির্যাপুত্র মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ এর কথা সঠিক হলে তবে আব্দুল আউয়াল খান সাহেব মিথ্যাবাদী! বিস্তারিত জানতে পড়ুন,

কুরআন থেকে প্রমাণ করুন “ঈসা” আলাইহিস সালাম “জীবিত” – কাদিয়ানী আমীর জনাব আব্দুল আউয়াল খান সাহেবের এমন চ্যালেঞ্জ এর প্রতিউত্তরে

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি-২০২৫ ইং বকশিবাজার কাদিয়ানী আস্তানায় তাদের বার্ষিক সম্মেলন (জলসা) সম্পন্ন হয়। উক্ত জলসায় এদেশীয় কাদিয়ানী প্রধান, আব্দুল আউয়াল খান চৌধুরী সাহেব কাদিয়ানী মতবাদের উপর পর্দা ফেলতে সেই পুরনো ভাঙ্গা ঢোল এবারও বাজিয়েছেন। তিনি মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর সেই পুরনো ডায়লগের পুনঃবৃত্তি করেছেন। এ সম্পর্কে একটু পরেই আসছি।

আব্দুল আউয়াল সাহেব তার বক্তৃতায় অজপাড়াগাঁ থেকে আগত উপস্থিত সহজ-সরল মানুষগুলোকে এবারও বোকা বানাতে চেয়েছেন। গত জলসায় পঞ্চগড়ে একই কায়দায় আগতদের মধ্য থেকে ২৭ জনকে “কাদিয়ানী মতবাদে” প্রবেশ করেছিলেন বলে আমরা জানতে পারি। কিন্তু জলসা শেষে মাত্র এক দিনের ব্যবধানেই ১০ জন “কাদিয়ানী মতবাদ” থেকে ফিরে আসেন এবং তওবাহ করেন। প্রত্যেকেই তওবাহ করার সময় মির্যা কাদিয়ানীর উপর শত সহস্র লানত বর্ষণ করেন। আর বাকি থাকলো ১৭ জন। এদের মধ্য থেকে আর কতজন ফিরে আসছেন তার সুনিশ্চিত কোনো তথ্য এ মুহূর্তে আমার কাছে নেই। আসলে, মিথ্যার পতন অনিবার্য, সেটিকে শঠতাপূর্ণ বাকপটুতা দিয়ে যতই খাওয়ানো হোক না কেন।

যাইহোক, আগত সাধারণ মানুষ গুলোর বিবেকের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতেই আব্দুল আউয়াল সাহেব হরহামেশাই এ ধরনের ভঙ্গি করে থাকেন। সেই ভঙ্গি গুলোর কয়েকটি এ রকম,

(ভঙ্গি নম্বর ১) মির্যা গোলাম আহমদ তিনি কখনোই “নবী” দাবী করেননি। তিনি “উম্মতিনবী” দাবী করেছেন।

উল্লেখ্য, মির্যা কাদিয়ানীকে তার পরবর্তী অনুসারীরা তথাকথিত “উম্মতিনবী” বলে প্রচার করে থাকে মূলত তার “নবী” দাবীর বদনাম ঢাকতে ও মুসলিম উম্মাহার ক্ষোভের আগুন থেকে নিজেদের বাঁচানোর উদ্দেশ্যেই। তারা কখনো বা মির্যার ‘নবী’ দাবীটিকে “মুহাদ্দাস” অর্থেও উদ্দেশ্য নেয়ার কথা বলে। এককথায় মির্যার “নবী” দাবীকে “হালাল” করতে তারা সর্বদা অযথা বিতর্কে জড়িয়ে থাকে। অথচ তারাও জানেনা যে, তারা মির্যাকে কথিত “ছায়ানবী” বা “উম্মতিনবী” বা “বুরুযীনবী” শব্দগুলোর বক্রব্যাখ্যার আড়ালে রক্ষা করতে চাওয়া কতটা আত্মঘাতী! তারা মির্যার “নবী” দাবীকে হালাল করতে এবং সেটিকে “উম্মতি” শব্দে বিশেষিত করতে সূরা নিসার ৬৯ নং আয়াতকে রেফার করার সময় ভুলে যায় যে, তাদের মির্যা কাদিয়ানী নিজেও “উম্মতিনবী” দাবীর সমর্থনে সূরা নিসা থেকে কখনো কোনো আয়াত উদ্ধৃত করেনি।

আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, মির্যাপুত্র মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ তো পরিষ্কার বলে দিয়েছেন যে,

جب حضرت مسیح موعود نبی ثابت ہوگئے، ایسے ہی نبی جیسے دوسرے انبیاء علیہم السلام تو پھر ان کے بھی وہی حقوق ہیں جو دوسرے انبیاء کے ہیں

“হযরত মসীহ মওউদ (মির্যা সাহেব) যখন একজন নবী বলে সাব্যস্ত হয়ে গেল, ঠিক তেমনি একজন নবী; যেমন অন্যান্য নবীগণ, তখন তো উনার-ও অনুরূপ অধিকার থাকবে যেভাবে অন্যান্য নবীগণের রয়েছে।”

(কাদিয়ানীদের অফিসিয়াল উর্দূ পত্রিকা দৈনিক আল ফজল পৃ-১০ কলাম ৩, তারিখ ৩০-১২-১৯১৬ ইং দ্রষ্টব্য)।

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি

মির্যাপুত্রের ভাষ্যমতে বুঝা গেল যে, গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সাহেব পূর্ববর্তী নবী রাসূলগণের মতই একজন নবী। তাহলে কি কাদিয়ানী নেতা আব্দুল আউয়াল মির্যাকে শুধুমাত্র কথিত “উম্মতিনবী” আখ্যা দিয়ে মিথ্যাচার করল না? জ্বী, অবশ্যই সে মিথ্যাচার করেছে। কিন্তু তার নির্বোধ কাল্টদের বুঝানোর সাধ্য কার!

প্রমাণসহ দেখুন, Click

(ভঙ্গি নম্বর ২) মির্যা কাদিয়ানী নিজ দাবীতে সত্য ছিল না মিথ্যা ছিল, ইস্তিখারাহ করুন।

উল্লেখ্য, ইসলামের কোনো মীমাংসিত বিষয়ে ইস্তিখারাহ করা নাজায়েজ। যেমন, আপন ভাই বোনে বিবাহ হারাম, এটি ইসলামে একটি মীমাংসিত ও চূড়ান্ত বিধান। এখন কেউ যদি এখানে হারাম বা হালাল নিয়ে কনফিউজড হয় তদ্দ্বারা সে কুফুরীতে চলে যাবে। মির্যা কাদিয়ানী “নবী” দাবী করায় তার ব্যাপারেও সত্য বা মিথ্যা হওয়া নিয়ে ইস্তিখারাহ করাও একই কথা। যেহেতু ঐ অবস্থায় এমন ব্যক্তির অন্তরে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের “খাতামুন নাবিয়্যীন” এর প্রতি যে ঈমান থাকাটা ফরজ ছিল, সেই ঈমান আর বহাল থাকেনা।

(ভঙ্গি নম্বর ৩) ঈসা নবীউল্লাহ (আল্লাহর নবী ঈসা) আবার আসবেন, মুসলিম শরীফের হাদীসে আগত ঈসাকে আল্লাহর নবী তিন তিন বার “নবী” শব্দে উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ আগত ঈসা “নবী” হিসেবেই আসবেন। (নাউযুবিল্লাহ)।

উল্লেখ্য, মুসলিম শরীফের উক্ত হাদীসে আগত সেই ঈসা হতে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে বুঝায়নি। বরং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনী ইসরাইলের জন্য পূর্বে প্রেরিত হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম আলাইহিস সালামের আবার আগমন করার ভবিষ্যৎবাণী দিয়েছেন। সে একই হাদীসে আগত ঈসা কোথায় এবং কিভাবে নাযিল হবেন, তিনি এসে কী কী কাজ গুলো করবেন, তিনি ইয়াজুজ-মাজুজ এর আক্রমণের সময় কোথায় এবং কিভাবে আত্মরক্ষা করবেন, ইয়াজুজ-মাজুজ এর ধ্বংস কিভাবে হবে ইত্যাদি পুরো ঘটনাটি প্রায় আড়াইশ শব্দের অধিক দীর্ঘ হাদীসটিতে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু তারা হাদীসটির পুরো বিষয়গুলো চোখবুঁজে এড়িয়ে যায় এবং সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে “ঈসা নাবিউল্লাহ” অতি ক্ষুদ্র একটুকরো আরবী উঠে নিয়ে মনগড়া ব্যাখ্যায় চলে যায়।

আবার আগের কথায় ফিরছি, গত ১৬ ই ফেব্রুয়ারিতে বকশিবাজারে কাদিয়ানী প্রধান আব্দুল আউয়াল সাহেব বললেন,

কোনো মিছিল মিটিংয়ের দরকার নেই, কাফের ঘোষণা দেয়ারও দরকার নেই। সংসদে আইন পাস করে কাদিয়ানীদের “অমুসলিম” রায় দেয়ার-ও দরকার নেই। শুধু পবিত্র কুরআন থেকে ঈসা আলাইহিস সালামকে “জীবিত” প্রমাণ করে দিন। (বক্তব্যের মুটামুটি সারাংশ)।

কাদিয়ানীদের নিকট এ লিখাটির কোনো উত্তর কেয়ামত পর্যন্ত দেয়া সম্ভব নয়, পড়ুন- Click

এখন তার উক্ত চ্যালেঞ্জের জবাব,

আমি তার উক্ত চ্যালেঞ্জের সরল উত্তর ইতিপূর্বেও বহুবার বিভিন্ন ভাবে দিয়ে আসছি। আজকে আবারও দিতে চাই।

তবে তার আগে আমি তার উক্ত চ্যালেঞ্জ গ্রহণপূর্বক তাকে পালটা কয়েকটি প্রশ্ন করব, যেগুলোর উত্তর তাকে এবং তার সম্প্রদায়কে পবিত্র কুরআন থেকেই দিতে হবে। (যেহেতু সে নিজেও তার উল্লিখিত চ্যালেঞ্জ এর উত্তর পবিত্র “কুরআন” থেকেই দিতে বলেছেন, দ্বিতীয় কোনো ফান্ডামেন্টাল সোর্সের কথা তিনি উল্লেখ করেননি-লিখক)।

আসুন! আপনারাও এগুলো কুরআন থেকে প্রমাণ করুন,

(নম্বর ১) শেষ যামানায় একজন রূপক ঈসা আসবেন, যিনি মুসলমানদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে আলাদা দল তৈরি করবেন, একথা কুরআন থেকে প্রমাণ করতে হবে।

উল্লেখ্য, কাদিয়ানী সম্প্রদায় মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে “রূপক ঈসা” মানেন বলেও প্রচার করে থাকেন।

(নম্বর ২) আগত তথাকথিত “রূপক ঈসা” আর “ইমাম মাহদী” দু’জনই একই ব্যক্তি হবেন, এ কথাটিও কুরআন থেকেই প্রমাণ করতে হবে।

উল্লেখ্য, কাদিয়ানীরা আগত ঈসা আর হযরত ইমাম মাহদী – দু’জনকে আলাদা ব্যক্তি মনে করেনা, তারা একই ব্যক্তির দু’টি আলাদা উপাধি বলে থাকেন। আর সে হিসেবে মির্যা কাদিয়ানীকে তারা রূপক ঈসা এবং ইমাম মাহদী দুটি এক সঙ্গে মানেন।

(নম্বর ৩) কথিত রূপক ঈসার উপর ঈমান না আনার কারণে সমস্ত উম্মতে মুহাম্মদীয়া অমুসলিম, জাহান্নামী; এ কথাটিও কুরআন থেকে প্রমাণ করতে হবে।

উল্লেখ্য, মির্যা কাদিয়ানীর মতে যারা তার দাওয়াত (দর্শন ও দাবী দাওয়া) কবুল করেনি তারা মুসলমান নয়। (তাযকিরাহ পৃ-৫১৯)। কাদিয়ানী জামাতের দ্বিতীয় খলীফা মির্যাপুত্র মির্যা বশির উদ্দীন লিখেছেন, যে সকল মুসলমান মির্যা কাদিয়ানীর নিকট প্রতিজ্ঞাবদ্ধ (বয়াত) না হবে তারা যদি তার নামও না শুনে থাকে তবুও তারা কাফের এবং ইসলামের গণ্ডি থেকে বাহিরে। (আয়নায়ে সাদাকাত, আনওয়ারুল উলূম ৬/১১০, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)। নাউযুবিল্লাহ।

(নম্বর ৪) কথিত রূপক ঈসাটাই যে ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের কাদিয়ান গ্রামের চেরাগ বিবির সর্বকনিষ্ঠ পুত্র মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (১৮৩৯-১৯০৮), এ কথাটিও কুরআন থেকে প্রমাণ করতে হবে।

উল্লেখ্য, বাহায়ী জামাতের অনুসারীরা-ও বিশ্বাস করে যে, তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা মির্যা হুসাইন আলী নূরী (বাহাউল্লাহ নামে পরিচিত) একজন “রূপক ঈসা” ছিলেন। ঐতিহাসিকভাবে সত্য যে, বাহাউল্লাহ ইরানী “মসীহ মওউদ” দাবী করেই বসে থাকেনি, বরং সে নবুওয়ত এবং রেসালতের দাবীও করেছিল। তার সুস্পষ্ট ঘোষণা ছিল যে, আল্লাহ তার প্রতি ওহী নাযিল করেছেন। বাহাউল্লাহ ইরানী মসীহ মওউদ দাবী করার পর আরও প্রায় চল্লিশ বছর বেঁচেছিল।

(নম্বর ৫) হযরত ঈসা (আ.) এর কবর ভারতের কাশ্মীরে খান ইয়ার মহল্লাতে, এ কথাটিও কুরআন থেকে প্রমাণ করতে হবে।

উল্লেখ্য, কাদিয়ানীদের আরও একটি অকাট্য বিশ্বাস হচ্ছে, ঈসা (আ.) শামের গ্যালীল জনপদ হয়ে সেই সুদূর জেরুজালেম থেকে কাশ্মীর পালিয়ে আসেন। সেখানেই জীবনযাপন করেন এবং ১২০ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর তিনি সেখানেই দাফন হন। (নাউযুবিল্লাহ)।

(উক্ত ৫টি প্রশ্নের উত্তর কুরআন থেকে দিতে হবে)।

যদি কুরআন থেকে এগুলোর সঠিক উত্তর দিতে পারেন এবং সাক্ষ্য হিসেবে মাননীয় দুই একজন পূর্ববর্তী যুগ ইমামের উক্তিও পেশ করতে পারে (তাদের মূল কিতাবের স্ক্রিনশট সহকারে) তাহলে আমিই সবার আগে মির্যা কাদিয়ানীকে সাপোর্ট করব। ওয়াল্লাহি।

আর যদি সঠিকভাবে উত্তর দিতে ব্যর্থ হন তাহলে আমার সুস্পষ্ট বক্তব্য, আপনি এবং আপনারা ভন্ড, প্রতারক ও নিঃসন্দেহে যিন্দিক। তাই আহবান থাকবে, আল্লাহকে ভয় করুন। দুনিয়ার সামান্য লোভ লালসায় পড়ে আখেরাতকে বরবাদ করবেন না। অন্ততপক্ষে সাধারণ মানুষের ঈমান নিয়ে আর তামাশা করবেন না। আমার কাজ, সাহস করে সত্যটা তুলে ধরা। আল্লাহর নিকট আপনাদের সোপর্দ করছি। ওয়াল্লাহুল মুস্তা’আন ওয়াল মুহতাদী।

উল্লেখ্য, ‘যিন্দিক‘ এমন ব্যক্তিকে বলা হয় যে মনেপ্রাণে কুফুরী লালন করে-ও নিজেকে বাহ্যিকভাবে মুসলমান পরিচয় দেয়—বলে থাকে যে, আমি মুসলমান। অথচ এমন ব্যক্তি জঘন্য কাফের এবং যিন্দিক। আর ইসলামে যিন্দিকের শাস্তি আর মুরতাদের শাস্তি একই।

এবার পবিত্র কুরআন থেকে প্রমাণ করা হবে যে, হযরত ঈসা ইবনু মরিয়ম (আ.) এর পুনঃ আগমন সত্য। এর পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ ইংগিত রয়েছে। রাসূল (সা.) এর ভবিষ্যৎবাণীতে পরিষ্কার করে এসেছে যে, তিনি যথাসময় আসবেন, তিনি মরিয়মের পুত্র ঈসা, তিনি একজন ন্যায়বিচারক ও সুশাসক হবেন। তিনি শামে অবতরণ করবেন। তিনি দু’জন ফেরেশতার দুই ডানায় দুই হাত রেখেই নাযিল হবেন। তার অবতরণ স্থল হবে সিরিয়ারই ভূখণ্ডে ও পূর্বপ্রাণে (উমাইয়াহ মসজিদের শ্বেত মিনারার পাশে)। মুসনাদে বাজ্জার গ্রন্থের একটি সহীহ হাদীসে এসেছে তিনি আকাশ থেকে নাযিল হবেন।

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি সহ দেখতে ক্লিক করুন- Click

সহীহ মুসলিম শরীফে আরও এসেছে, ঈসা (আ.) যখন আসবেন তখন মুসলমানদের আমীর (অন্য হাদীসে এ আমীরকে ‘ইমাম মাহদী‘ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, দেখুন المنار المنيف لابن القيم পৃষ্ঠা নং ৯৪, সনদের মান- জায়্যিদ তথা ভালো) তাঁকে সালাতের ইমামতি করতে বলবেন কিন্তু তিনি ‘ইমাম মাহদী’কেই সালাত পড়াতে সম্মুখে দাঁড় করিয়ে দেবেন। ইত্যাদি। এ থেকেও প্রমাণিত হল যে, তারা ভিন্ন ভিন্ন দুই ব্যক্তিই হবেন। (প্রামাণ্য স্ক্রিনশট এই যে)

কুরআন থেকে (প্রাসঙ্গিক কিছু প্রমাণ) –

১। সূরা যুখরুফঃ ৬১

আল্লাহতালা বলেন

وَإِنَّهُ لَعِلْمٌ لِّلسَّاعَةِ فَلَا تَمْتَرُنَّ بِهَا وَاتَّبِعُونِ ۚ هَٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيمٌ

অর্থ- নিশ্চয়ই সে (মরিয়ম পুত্র ঈসা) হবে (মূলত) কেয়ামতের একটি নিদর্শন (হে নবী, তুমি বলো), তোমরা সে (কেয়ামতের) ব্যাপারে কখনো সন্দেহ পোষণ করো না। তোমরা আমারই আনুগত্য করো, এটাই সরল পথ। আয়াতটিতে সে হবে ভবিষ্যতের দিকে ইংগিত। বাকিটা বুঝে নিন! (অনুবাদ-হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ, আল কোরআন একাডেমী পাবলিকেশন্স)।

আয়াতটির নিশ্চয়ই সে (إِنَّهُ) এ কথাটির ইংগিত কী? এমন প্রশ্নের উত্তরে কতিপয় ব্যাখ্যাকরক বলেছেন পবিত্র কুরআন। কিন্তু ইমাম ইবনে কাসীর (রহ.) সহ অধিকাংশ তাফসীরকারকের সর্বসম্মত মত হচ্ছে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম। তার কারণ আয়াতটির উপরে উল্লিখিত একটানা ৩টি আয়াত ঈসা (আ.) সম্পর্কে আলোচিত হয়েছে। কাজেই এ আয়াত তারই প্রসঙ্গক্রমে। তিনি আরো লিখেছেন

بَلْ اَلصَّحِيْحُ أَنَّهُ عَائِدٌ عَلَى عِيْسَى (عَلَيْهِ السَّلَامُ) فَإِنَّ السِّيَاقَ فِيْ ذِكْرِهِ ثُمَّ الْمُرَادُ بِذَلِكَ نُزُوْلُهُ قَبْلَ يَوْمِ الْقِيَامَةِ ، كَمَا قَالَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: (وَإِنْ مِّنْ أَهِلِ الْكِتَابِ إِلَّا لَيُؤْمِنَنَّ بِهِ قَبْلَ مَوْتِهِ) أَيْ: قَبْلَ مَوْتِ عِيْسَى عَلَيْهِ الصَّلاَةُ وَالسَّلَامُ ثُمَّ (وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكُوْنُ عَلَيْهِمْ شَهِيْدًا

অর্থ- বরং বিশুদ্ধ মত হচ্ছে নিশ্চয়ই সে (إِنَّهُ) এ কথাটির ইংগিত হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের প্রতি। এর দ্বারা উদ্দেশ্য, তিনি কেয়ামত দিবসের পূর্বে অবতরণ করবেন। আহলে কিতাবীগণ তাঁর মৃত্যুর পূর্বে তাঁর প্রতি বিশ্বাস আনয়ন করবেন। পবিত্র কুরআন (০৩:৫৯) দ্রষ্টব্য। – ইবনে কাসীর।

২। সূরা নিসাঃ ১৫৯

আল্লাহতালা বলেন,

وَإِن مِّنْ أَهْلِ الْكِتَابِ إِلَّا لَيُؤْمِنَنَّ بِهِ قَبْلَ مَوْتِهِ ۖ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكُونُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا

অর্থ- আহলে কিতাবদের (ইহুদী-খ্রিস্টানদের) মাঝে এমন একজনও থাকবে না, যে ব্যক্তি তাঁর মৃত্যুর আগে তাঁর (তিরোধান সম্পর্কে আল্লাহতালার এই কথার) উপর ঈমান আনবে না, কেয়ামতের দিন সে তো নিজেই এদের উপর সাক্ষী হবে।

আয়াতটিতেও ঈমান আনবে কথাটি ভবিষ্যতের দিকে ইংগিত। এখন ঈসা (আ.) কুরআন নাযিলের আগেই মারা গেলে আহলে কিতাবীরা তাঁর মৃত্যুর আগে আগে তাঁর প্রতি ঈমান আনবে-কথাটির মানে কী?

৩। সূরা আলে ইমরানঃ ৮১

আল্লাহতালা বলেন,

وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ النَّبِيِّينَ لَمَا آتَيْتُكُم مِّن كِتَابٍ وَحِكْمَةٍ ثُمَّ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مُّصَدِّقٌ لِّمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنصُرُنَّهُ ۚ قَالَ أَأَقْرَرْتُمْ وَأَخَذْتُمْ عَلَىٰ ذَٰلِكُمْ إِصْرِي قَالُوا أَقْرَرْنَا ۚ قَالَ فَاشْهَدُوا وَأَنَا مَعَكُم مِّنَ الشَّاهِدِينَ

অর্থ- আল্লাহ যখন তাঁর নবীদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন (তখন তিনি বলেছিলেন, এ হচ্ছে) কিতাব ও (তার ব্যবহারিক) জ্ঞান কৌশল, যা আমি তোমাদের দান করলাম, অতপর তোমাদের কাছে যখন (একজন) রাসূল আসবে, যে তোমাদের কাছে রক্ষিত (আগের) কিতাবের সত্যায়ন করবে, তখন তোমরা অবশ্যই তার (আনীত বিধানের) উপর ঈমান আনবে এবং সাহায্য করবে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি অঙ্গীকার গ্রহণ করছো এবং আমার এ প্রতিশ্রুতির দায়িত্ব পালন করছো? তারা বললো, হ্যাঁ আমরা অঙ্গীকার করছি; তিনি বললেন, তাহলে তোমরা সাক্ষী থেকো এবং আমিও তোমাদের সাথে (এ অঙ্গীকারে) সাক্ষী হয়ে রইলাম। এখানে মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমনী প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।

(ইবনে আব্বাস, আলী প্রমুখও একই কথা বলেছেন, তাফসীরে তাবারী দ্রষ্টব্য)।

একই কথা মির্যা কাদিয়ানীও স্বীকার করে লিখে গেছেন (দেখুন রূহানী খাযায়েন খণ্ড নং ১৮, পৃষ্ঠা নং ৬৭৫)।

রূহের জগতে সমস্ত নবী রাসূল থেকে গৃহিত অঙ্গীকার, তাঁকে পাওয়া মাত্রই সবাই তাঁকে সাহায্য করতে হবে। আর এই অঙ্গীকার সকল নবী রাসূলের পক্ষ হতে পূর্ণ হওয়া তখনি সম্ভব, যখন শেষযুগে ঈসা (আ.) আসবেন এবং তিনি সকলের পক্ষ হতে তাঁর রেসালতের সত্যায়ন করবেন এবং তাঁর রেখে যাওয়া দ্বীনের সাহায্য করবেন।

কাদিয়ানীদের নিকট প্রশ্ন হল, মির্যা কাদিয়ানীর কাছ থেকেও কি ঐ অঙ্গীকার নেয়া হয়েছিল? অন্যথা প্রকৃত ঈসা আসার পরিবর্তে তথাকথিত “রূপক ঈসা” আসার যুক্তিকতা কী?

৪। আলে ইমরানঃ ৪৬

আল্লাহতালা বলেন,

وَيُكَلِّمُ النَّاسَ فِي الْمَهْدِ وَكَهْلًا وَمِنَ الصَّالِحِينَ

অর্থ- সে দোলনায় থাকা অবস্থায় (যেমন) মানুষের সাথে কথা বলবে, পরিণত বয়সেও (তেমনিভাবে) কথা বলবে এবং সে হবে নেককারদের একজন।

আয়াতটিতে পরিণত বয়স বুঝাতে আরবী শব্দ কাহাল এসেছে। আরবী অভিধানগ্রন্থ ‘লিসানুল আরব’ (لسان العرب) এর মধ্যে লিখা আছে, “কাহাল” (كَهْلًا) বা পরিণত বয়স বলতে ৩৪ বছর থেকে ৫১ বছরের মাঝামাঝি বয়সীদের বুঝানো হয়।

আমরা জানি, ঈসা (আ.)-কে যখন সশরীরে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল, তখন তিনি মাত্র ৩৩ বছরের যুবক

(তবকাতে ইবনে সা’আদ ১/৩৬, ইবনে আব্বাস রা. থেকে)।

সুতরাং এই আয়াত পরিষ্কার ইংগিত করছে যে, তাঁর (আ.) ফিরে আসার বিশ্বাস অকাট্য সত্য। অন্যথা কাহাল (প্রৌঢ়) বা পরিণত বয়সে মানুষের সাথে তাঁর কথা বলা কখনো সম্ভব হবেনা। অথচ কুরআন বলছে ইয়ুকাল্লিমুন নাস (وَيُكَلِّمُ النَّاسَ) অর্থাৎ তিনি মানুষের সাথে কথা বলবেন । ভবিষ্যৎকালের দিকে ইংগিত। এ জন্যই এইধরণের নসকে ইশারাতুন নস বলে।

আপাতত কয়েকটা দিলাম।

ওয়াসসালাম।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক
প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

নবুওয়ত ও খিলাফত

মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী এর “নবী” দাবী করার বিষয়টি শেষ পর্যন্ত আর আড়াল করা সম্ভব হল না! ধন্যবাদ কাদিয়ানী নেতাদের, তারা বেলা শেষে আসল চেহারা নিয়েই আত্মপ্রকাশ করেছে। তাদের সর্বসাধারণ কাদিয়ানী মানুষ গুলোও এবার ভ্রান্তির অন্ধকার থেকে মুক্তি লাভ করতে পারবে, ইনশাআল্লাহ। কেননা, এতদিন তাদেরকে বলে বুঝাত যে, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ‘নবী’ দাবী করেনি। তাদেরই অন্য আরেকটি পুস্তক ‘হামামাতুল বুশরা’ বইয়ের ৪৮ নং পৃষ্ঠাটি সহ আরও নানা জায়গা থেকে বুঝানোর চেষ্টা করা হত যে, দেখ দেখ মির্যা কাদিয়ানী সাহেব কত সুস্পষ্টভাবে নিজের নবুওয়ত দাবী করাকে অস্বীকার করেছেন!

ঘটনাটি হচ্ছে, মির্যা গোলাম আহমদের আগের বইগুলোতে তার নবী দাবীকে অস্বীকার করার কথা সত্য, কিন্তু ১৯০১ সালের পরে রচিত বইগুলো হতে পরিষ্কার করে জানা যায় যে, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী পরবর্তীতে “নবুওয়ত” এর দাবী করেন এবং দ্ব্যর্থ কন্ঠেই তিনি তা স্বীকার করে যান। তিনি তার একটি ঘোষণাপত্রে কোনো লুকোচুরি ছাড়াই পরিষ্কার ভাষায় বলে দিয়েছেন যে,

আমি আল্লাহর আদেশ মুতাবেক একজন নবী”। দেখুন- (নবুওয়ত ও খিলাফত পৃষ্ঠা নং ৭৬)।

কাদিয়ানীদের মোটাদাগে কিছু কুফুরি মতবাদের এক পৃষ্ঠার এ পিডিএফ ফাইলটি ডাউনলোড করুন।

কিন্তু আফসোস! এরা এরপরেও নিজেদের আত্মপক্ষ সমর্থনে চাপাবাজী করতেই থাকবে। তারা প্রথমে ‘নবী’ দাবী করার বিষয়টিকে নিজেদেরই মনগড়া কনসেপ্ট কথিত জিল্লি বুরুজি নানা কুটতর্কের মধ্যদিয়ে অস্বীকার করার চেষ্টা করে থাকে। যখনি ধরা পড়ে যায় তখনি প্রসঙ্গ পালটে ফেলে অথবা ‘নবী’ শব্দের আভিধানিক এবং পারিভাষিক নানা বিশ্লেষণের দিকে মুভ করে, যাতে শ্রোতাদের দৃষ্টিকে ভিন্নদিকে ডাইভেট করে দিতে পারে এবং আলোচনার পরিবেশ নষ্ট করতে পারে। আল্লাহ এদেরকে সহীহ সমঝ দিন, আমীন।

বিজ্ঞ পাঠকবৃন্দ, এবার আমি এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নেয়ার জন্য ঐ বইটির ধারাবাহিক কিছু পৃষ্ঠা এখানে তুলে দিচ্ছি। যাতে পাঠকবৃন্দ ব্যাপারটিকে আরও ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারেন এবং যথাসময়ে ওদেরকেও চ্যালেঞ্জ করতে পারেন।

প্রদত্ত স্ক্যানকপি

আকাশ হতে কেউ অবতীর্ণ হবেনা?

মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর বইতে থাকা বিপরীতমুখী কন্টেন্ট আপনাদের সামনে তুলে ধরছি,

ঈসা (আ.) আকাশ হতে অবতীর্ণ হবে না –

মির্যা কাদিয়ানী সাহেব নিজ সত্তাকে ‘ঈসা মসীহ’ এর জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করতে একদিকে পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াতকে অপব্যাখ্যা দিয়েছিল, অপরদিকে ইসলামের অথেনটিক শিক্ষার বিরুদ্ধে গিয়েও ঈসা (আ.) সম্পর্কে বাগাড়ম্বর করে লিখেছে, “প্রতিশ্রুত মসীহের আকাশ হতে অবতরণ একটি মিথ্যা ধারণা মাত্র। স্মরণ রেখো! কেউ আকাশ হতে অবতীর্ণ হবে না।” (তাযকিরাতুশ শাহাদাতাঈন-৭৯ বাংলা অনূদিত)।

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য

মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর বইয়ের আরেক জায়গায় কী লিখা আছে এবার সেটিও দেখুন!

আকাশ হতে মির্যায়ী জনৈক বংশীয় পুরুষ অবতীর্ণ হবে –

মির্যা কাদিয়ানী সাহেব লিখেছেন,

خدا تعالیٰ نے ایک قطعی اور یقینی پیشگوئی میں میرے پر ظاہر کر رکھا ہے میرے ہی ذریت سے ایک شخص پیدا ہوگا جسکو کئی باتوں میں مسیح سے مشابہت ہوگی وہ آسمان سے اترے گا اور زمین والوں کی راہ سیدہی کر دے گا.

অর্থাৎ খোদাতায়ালা একটি অকাট্য এবং বিশ্বাসযোগ্য ভবিষৎবাণীর মধ্যে আমার উপর প্রকাশ করে রেখেছেন যে, আমার বংশধর থেকে এক ব্যক্তি জন্ম নেবে। মাসীহ’র সাথে তার কিছু সামঞ্জস্যতা থাকবে। সে আকাশ থেকে অবতরণ করবে এবং দুনিয়াবাসীর পথ সোজা করে দেবে।” (রূহানী খাযায়েন খন্ড নং ৩ পৃষ্ঠা নং ১৮০)।

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য

শেষকথা– মির্যা কাদিয়ানী সাহেব এক মুখে দুইরকম কথা বললেন। আকাশ থেকে কেউ অবতীর্ণ হবেনা! আবার লিখলেন, তার জনৈক বংশীয় পুরুষ মসীহ’র মাসীল হিসেবে অবতীর্ণ হবে। আমার বুঝে আসেনা, এধরণের মানুষের কথায় ওরা কিভাবে আস্থা রাখতে পারে? অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, মির্যা সাহেবের এধরণের স্ববিরোধ কথাবার্তার ফিরিস্তি তুলে ধরলে তা সহজে শেষ হবেনা। অপ্রিয় হলেও সত্য, মির্যা কাদিয়ানীর স্ত্রী এবং তার পুত্র মির্যা বশির আহমদ এম.এ এর সাক্ষ্যমতে তিনি হিস্টিরিয়া এবং সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত ছিলেন। যার ফলে তিনি কখন কী বলতেন, কী দাবী করতেন তার কোনো ঠিক-ঠিকানা ছিলনা। কিন্তু তার বর্তমান অনুসারীদের এগুলো বুঝানোর সাধ্য কারো নেই। কারণ তাদের অধিকাংশই নির্বোধ, ব্রেইনওয়াশ। আল্লাহ তাদের সঠিক বুঝ দান করুন।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী এম.এ

ঈসা মসীহ ‘আকাশ’ থেকে নাযিল হবেন

আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় হাবীব মুহাম্মদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষার বিপরীতে কাজ্জাব মির্যা গোলাম কাদিয়ানীর মতবাদ!

মির্যা কাদিয়ানী ঈসা (আ.)-কে মৃত আখ্যা দিয়ে এবং তাঁর পুনঃ আগমন অস্বীকার করে অর্থাৎ আকাশ থেকে ঈসা (আ.) এর নাযিল হবার ইসলামী অথেনটিক শিক্ষার বিরোধিতা করে লিখে গেছেন যে,

“কেউ আকাশ হতে অবতীর্ণ হবেনা।” (তাযকিরাতুশ শাহাদাতাঈন-৭৯, রূহানী খাযায়েন ২০/৬৭)।

ইসলামী অথেনটিক শিক্ষা :

খাতামুন নাবিয়্যীন তথা শেষনবী মুহাম্মদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

(ক) “শপথ সেই সত্তার যার হাতের মুঠোয় আমার প্রাণ, নিশ্চয়ই ইবনু মরিয়ম (ঈসা) অচিরেই নাযিল হবেন।” (সহীহ বুখারী হা/৩২০৫, কিতাবুল আম্বিয়া)।

(খ) “মরিয়ম পুত্র (ঈসা) এসে হজ্জ করবেন।” (সহীহ মুসলিম হা/২৮৯৬)।

(গ) তখন ঈসা ইবনু মরিয়ম দু’জন ফেরেশতার দু’ বাহুর উপর আপনা দু’হাত রেখে দামেস্কের পূর্বপ্রান্তে শুভ্র মিনারার নিকটে অবতরণ করবেন।” (সহীহ মুসলিম হা/৭০৭৬, অধ্যায় কিতাবুল ফিতান ওয়া আশরাতুস সা’আহ)।

(ঘ) “অত:পর ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.) আকাশ থেকে নাযিল হবেন।” (মুসনাদে বাজ্জার, হা/ ৯৬৪২)।

বিজ্ঞ পাঠক ও সত্যান্বেষী ভাই ও বোনেরা!

তাহলে এখানে কার কথা সত্য? এখানে মুসলিম উম্মাহার বিশ্বাস ও ঈমান হচ্ছে, আল্লাহর প্রিয় হাবীব মুহাম্মদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই সত্য। বিপরীতে মির্যা কাদিয়ানী আপনা উক্ত মতবাদ ও শিক্ষায় অবশ্যই একজন নিকৃষ্ট মিথ্যাবাদী ও কাজ্জাব! তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

সম্পর্কিত আলোচনা :

সর্বাধিক হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী হযরত আবূ হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) বলেছেন

ثُمَ يَنْزِلُ عِيْسَى بْنُ مَرْيَمَ مِنَ السَّمَاءِ

অর্থাৎ ‘অতপর মরিয়ম পুত্র ঈসা আকাশ থেকে নাযিল হবেন।’ দেখুন মুসনাদে বাজ্জার, হাদীস নং ৯৬৪২; বিশিষ্ট হাদীসবিশারদ ইমাম নূরউদ্দীন আল হাইছামী (রহ.) উক্ত হাদীসের সনদ সম্পর্কে লিখেছেন

وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيْحِ غَيْرُ بْنُ الْمُنْذِرِ وَ هُوَ ثِقَةُ

অর্থাৎ হাদীসটির সূত্রে উল্লিখিত সকল বর্ণনাকারী সহীহ (বুখারী)’র, শুধু ‘আলী ইবনে আল মুনযির’ ছাড়া, তবে তিনিও একজন বিশ্বস্থ বর্ণনাকারী। (দেখুন, মাজমাউয যাওয়ায়েদ খ-৭ পৃ-৩৪৯)।

এভাবে একাধিক সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণ করা যাবে যে, আগমনকারী ঈসা ‘রূপক’ কেউ নন, বরং তিনি মরিয়ম (আ.)-এর সন্তান হযরত ঈসা, যার সম্পর্কে স্বয়ং হযরত মুহাম্মদ (সা.) দুইজন ফেরেশতার মাধ্যমে শামের (সিরিয়া, জর্ডান, ফিলিস্তিন সহ বৃহত্তর প্রাচীন এরিয়া) পূর্বপ্রান্তে অবতরণ করবেন বলেই ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন।

অন্য আরেকটি হাদীসে বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবূ যর গিফারী (রা.) হতে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) বলেছেন

اَلشَّامُ أَرْضُ الْمَحْشَرِ وَ اْلمُنْشَرِ وَ بِهَا يَجْتَمِعُ النَّاسُ رَأسًا وَاحِدًا وَ بِهَا يَنْزِلُ عِيْسَى بْنُ مَرْيَمَ الخ

অর্থাৎ ‘শাম পুনরুত্থিত ও একত্রিত হওয়ার ভূমি। মানুষ সেখানে সারিবদ্ধ হয়ে একত্রিত হবে এবং সেখানে মরিয়মপুত্র ঈসা নাযিল হবেন এবং সেখানেই আল্লাহতালা মসীহে দাজ্জালকে হত্যা করবেন।’ (ইবনু আসাকীর সংকলিত ‘তারীখে দামেস্ক’ ১/১৭০ দ্রষ্টব্য, শায়খ আলবানীর তাহকীক, হাদীসের সনদ সহীহ)।

স্ক্রিনশট

কাদিয়ানী সহ আরও যারা হযরত ঈসা (আ.) এর পুনঃ আগমন সম্পর্কে সংশয়ে লিপ্ত তাদের জন্য পবিত্র কুরআন থেকে স্রেফ একখানা আয়াত বিশুদ্ধ সনদে তাফসীর সহ নিচে তুলে ধরছি,

ইমাম ইবনু কাসীর (রহ.) ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ কিতাবে সূরা নিসা আয়াত নম্বর ১৫৮ উল্লেখ পূর্বক একখানা বিশুদ্ধ বর্ণনা উঠিয়ে ধরেছেন এভাবে,

قال ابن جرير في تفسيره: حدثنا ابن بشار، حدثنا عبد الرحمن، حدثنا سفيان، عن أبي حصين، عن سعيد بن جبير، عن ابن عباس: وإن من أهل الكتاب إلا ليؤمنن به قبل موته. قال: قبل موت عيسى ابن مريم. وهذا إسناد صحيح، وكذا روى العوفي، عن ابن عباس.

তাফসীরে তাবারীতে এসেছে, হযরত আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবনু জারীর আত তাবারী (রহ.) বিশুদ্ধ সনদে সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন,

“ইবনু বাশশার, আব্দুর রহমান, সুফিয়ান, আবূ হোছাইন, সাঈদ বিন যোবায়ের, ইবনু আব্বাস থেকে, (আল্লাহতালা বলেন) “আহলে কিতাবীদের প্রত্যেকেই তাঁর মৃত্যুর পূর্বেই তাঁর প্রতি ঈমান আনবে” (সূরা নিসা) এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, ঈসা ইবনু মরিয়ম আলাইহিস সালামের মৃত্যুর পূর্বে। (তাবারী ৯:৩৮০, সূরা নিসা)। ইমাম ইবনু কাসীর (রহ.) উল্লিখিত হাদীসটির সনদ সম্পর্কে বলেছেন,

وهذا إسناد صحيح

অর্থাৎ এটি সহীহ সনদ। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, কিতাবুল ফিতান ওয়াল মালাহিম)।

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য

সংক্ষেপে।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

ঈসা মসীহ’র চাইতেও নিজেকে ‘শ্রেষ্ঠ’ দাবী করা

মির্যা কাদিয়ানী নিজেকে হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.) চেয়েও অধিক শ্রেষ্ঠ বলে দাবী করা,

মির্যা গোলাম আহমদের বই ‘দাফেউল বালা‘ মূলত উর্দূতে রচিত, প্রথম প্রকাশ ১৯০২ ইং কাদিয়ান থেকে। ২০১০ সালের জুলাই’তে এদেশীয় কাদিয়ানী জামেয়ার প্রিন্সিপাল ইমদাদুর রহমান সিদ্দিকি কর্তৃক বইটির শেষ ৬ পৃষ্ঠা বাদ দিয়েই বাংলায় অনুবাদ সম্পন্ন করা হয়। কাদিয়ানী জামাতের প্রকাশনী কিজন্য শেষের ৬ পৃষ্ঠার অনুবাদ করার প্রয়োজন মনে করেনি তা আমাদের জানা নেই। বিজ্ঞ পাঠকবৃন্দ! মূল বইটি সংগ্রহ করে শেষের পাতাগুলো মিলিয়ে দেখবেন। তবেই আমার কথার সত্যতা পেয়ে যাবেন।

সে যাইহোক, এ পর্যায় মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী, যিনি লাহোরে তার এক ভক্তের বাড়ীতে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে ১৯০৮ সালের ২৬ শে মে রাতে টাট্টিখানায় মারা যান, এখানে তার একখানা উদ্ভট দাবী প্রমাণসহ তুলে ধরছি। তিনি আল্লাহর বিশিষ্ট ও শরীয়তবাহক নবী ও রাসূল হযরত ঈসা (আ.) চাইতেও নিজেকে সকল মান মর্যাদায় ‘শ্রেষ্ঠ’ বলে দাবী করেন। নাউযুবিল্লাহ। তিনি দাবীটিকে প্রতিষ্ঠিত করার অসৎ উদ্দেশ্যে আরও কী ধরণের হঠকারীতামূলক পন্থা অবলম্বন করলেন সেটি জানলে যে কারোরই মাথা ঘুরে যাবে। তিনি নিজেকে মুহাম্মদ (সা.) এর একজন ‘গোলাম‘ (দাস) আখ্যা দিয়ে প্রথমে মুসলিম উম্মাহার পবিত্র আবেগের জায়গাটিতে সুড়সুড়ি দেন। যাতে ঈসা (আ.) এর চেয়েও নিজ সত্তাকে ‘শ্রেষ্ঠ’ বলে বৈধতা দেয়ার আনুকূল্য পান এবং সম্ভাব্য বাধাগুলো দূর করতে পারেন। যদিও তার এ ভেল্কিবাজি অনেক দুর্বলমনা মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে কিন্তু ইসলাম ও ইসলামী আকীদাশাস্ত্রে যাদের একটুও পড়াশোনা রয়েছে তাদের নিকট তিনি মুহূর্তের মধ্যেই ধরা পড়ে গেছেন এবং একজন মস্ত বড় মিথ্যাবাদী এবং ধোকাবাজ হিসেবে কুখ্যাত হয়ে আছেন। কারণ, আল্লাহ তায়ালার যে কোনো মনোনীত নবী ও রাসূলের শান-মানে আঘাত করে এধরণের হঠকারীমূলক কথাবার্তার দরুন যে কেউই ‘কাফের’ হওয়ার জন্য যথেষ্ট।

বলে রাখা জরুরি যে, মির্যা কাদিয়ানীর উক্ত কুফুরীকে যে ব্যক্তিই ‘সঠিক’ মানবে অথবা মনগড়া ব্যাখ্যার মাধ্যমে হালাল করার চেষ্টা করবে, তার পরিণতিও একই হবে। কোনো সন্দেহ নেই।

In Bengali :

ঈসা (আ.) এর মানহানী করে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর উদ্ভট দাবীটি নিম্নরূপ-

“সুতরাং আজ খোদাতালা পাদ্রী সাহেবদের থেকে পাপের প্রতিশোধ একটি শব্দ দিয়ে নিয়ে নিচ্ছেন। কারণ খ্রিস্টান পাদ্রী বা প্রচারকেরা ঈসা ইবনে মরিয়মকে খোদা বানিয়েছে এবং আমাদের নেতা, আমাদের অভিভাবক, যিনি প্রকৃত শাফী বা ত্রানকর্তা, তাঁকে তারা গালাগালী করেছে অশ্রাব্য গালী গালাজ ভর্তি বই-পুস্তক দিয়ে এই ভূপৃষ্ঠকে অপবিত্র করে দিয়েছে। ফলত সেই মসীহ যার নাম খোদা রাখা হয়েছে, তার বিপরীতে খোদাতায়ালা এই উম্মতের মাঝে মসীহ মাওউদকে পাঠিয়েছেন, যিনি পূর্বের মসীহ’র তুলনায় সকল প্রকার মর্যাদায় শ্রেয় এবং তিনি এই দ্বিতীয় মুসীহ’র নাম গোলাম আহমদ রেখেছেন যেন এদিকে ইশারা করা যায় যে, খৃষ্টানদের মসীহ কেমন খোদা যে হযরত আহমদ (সা.) এর এক সাধারণ গোলামের সাথে মোকাবেলা করতে পারে না? সেই মসীহ কেমন মসীহ যে নৈকট্য ও শাফায়াতের মর্যাদায় হযরত আহমদ (সা.) এর গোলামের তুলনায় স্বল্প মানসম্পন্ন।”

(দাফেউল বালা, ১৪-১৫, বাংলা অনূদিত, মূললিখক মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী)।

In English :

Mirza Ghulam Ahmad Qadiani’s bizarre claim of defaming Jesus (AS) is as follows-

“So today God is taking revenge from the priests with a word. Because the Christian pastors or preachers have deified Jesus Ibn Maryam and abused our leader, our guardian, the true Shafi or Savior, and defiled this earth with books full of inaudible abuse. As a result, in contrast to the messiah named by God, God sent among this Ummah the messiah Mawud, who is superior in all respects to the previous messiah, and he named this second messiah Ghulam Ahmad. As if to point out that what kind of God is the Messiah of the Christians who cannot deal with a common slave of Hazrat Ahmad (PBUH)? What kind of messiah is he who is inferior to the slave of Hazrat Ahmad (PBUH) in terms of proximity and intercession.”

(Dafeul Bala, 14-15, Bengali, original writer Mirza Golam Ahmad Qadiyani).

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি-Certified Scancopy

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

হযরত ঈসা মসীহ (আ.) এর কবর কোথায়?

ঈসা মসীহ (আ.) এর কবর প্রসঙ্গে

প্রশ্ন : হযরত ঈসা মসীহ (আ.) এর কবর কোথায়? তিনি কি মৃত্যুবরণ করেছেন নাকি এখনো করেননি? ইসলামের অথেনটিক সোর্স এর আলোকে জানতে চাই।

উত্তর : পবিত্র কুরআন আমাদের বলছে, كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ অর্থাৎ প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে (কুরআন ৩:১৮৫)। কিন্তু মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা যতক্ষণ না কাউকে মৃত্যু দিচ্ছেন, ততক্ষণ কারো মৃত্যু হবেনা। দুনিয়ার তাবৎ শক্তিগুলো একত্রিত হয়ে চেষ্টা করলেও আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কখনোই জয়লাভ করতে পারবেনা। এটাই আমাদের ঈমান। আদি পিতা ও প্রথম নবী হযরত আদম (আ.) থেকে নবুওয়তের ক্রমধারা আরম্ভ হয়ে আখেরি যামানার নবী ও শেষনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত এসে সমাপ্ত হয়। মুসলিম উম্মাহার সর্বসম্মত আকীদা ও বিশ্বাস হচ্ছে, আল্লাহতালা সমস্ত নবী ও রাসূলকে যথাসময়ে মৃত্যু দান করেছেন, শুধুমাত্র হযরত ঈসা মসীহ (আ.) ছাড়া। তিনি তাঁর (ঈসা) আয়ুষ্কাল শেষ যামানা পর্যন্ত প্রলম্বিত করে দিয়েছেন।

পবিত্র কুরআনের সূক্ষ্মতর ইংগিতে ঈসা মসীহ (আ.) এর পুনঃ আগমনী ভবিষ্যৎবাণী-

পবিত্র কুরআনের সূরা আলে ইমরানে আল্লাহতালা ইরশাদ করেছেন,

وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ النَّبِيِّينَ لَمَا آتَيْتُكُم مِّن كِتَابٍ وَحِكْمَةٍ ثُمَّ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مُّصَدِّقٌ لِّمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنصُرُنَّهُ ۚ قَالَ أَأَقْرَرْتُمْ وَأَخَذْتُمْ عَلَىٰ ذَٰلِكُمْ إِصْرِي قَالُوا أَقْرَرْنَا ۚ قَالَ فَاشْهَدُوا وَأَنَا مَعَكُم مِّنَ الشَّاهِدِينَ

অর্থাৎ “আল্লাহ যখন তাঁর নবীদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন (তখন তিনি বলেছিলেন, এ হচ্ছে) কিতাব ও (তার ব্যবহারিক) জ্ঞান কৌশল, যা আমি তোমাদের দান করলাম, অতপর তোমাদের কাছে যখন (একজন) রাসূল আসবে, যে তোমাদের কাছে রক্ষিত (আগের) কিতাবের সত্যায়ন করবে, তখন তোমরা অবশ্যই তার (আনীত বিধানের) উপর ঈমান আনবে এবং সাহায্য করবে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি অঙ্গীকার গ্রহণ করছো এবং আমার এ প্রতিশ্রুতির দায়িত্ব পালন করছো? তারা বললো, হ্যাঁ আমরা অঙ্গীকার করছি; তিনি বললেন, তাহলে তোমরা সাক্ষী থেকো এবং আমিও তোমাদের সাথে (এ অঙ্গীকারে) সাক্ষী হয়ে রইলাম।”

উক্ত আয়াতে মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমনী প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে (ইবনে আব্বাস, আলী প্রমুখও একই কথা বলেছেন, তাফসীরে তাবারী দ্রষ্টব্য)।

এ ব্যাপারটি নবুওয়তের মিথ্যা দাবীদার কাজ্জাব মির্যা কাদিয়ানীও স্বীকার করে লিখে গেছে। দেখুন রূহানী খাযায়েন খণ্ড নং ১৮, পৃষ্ঠা নং ৬৭৫। আয়াতটির আবেদন হচ্ছে, রূহের জগতে সমস্ত নবী রাসূল থেকে গৃহিত অঙ্গীকার, শেষনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে পাওয়া মাত্রই সবাই তাঁকে সাহায্য করতে হবে। আর এই অঙ্গীকার সকল নবী রাসূলের পক্ষ হতে পূর্ণ হওয়া তখনি সম্ভব, যখন শেষযুগে ঈসা (আ.) আসবেন এবং তিনি সকলের পক্ষ হতে তাঁর রেসালতের সত্যায়ন করবেন এবং তাঁর রেখে যাওয়া দ্বীনের সাহায্য করবেন। সুতরাং ঈসা মসীহ (আ.) এর আয়ুষ্কাল শেষ যামানা পর্যন্ত আল্লাহ বিলম্বিত করে দিয়েছেন তাঁর উক্ত অঙ্গীকার যথাসময়ে পূর্ণ করার জন্য। এখন যারা ঈসা মসীহকে আগেই মেরে ফেলতে উঠেপড়ে লেগেছেন তারা কি মনে করেন যে, আল্লাহ তাঁর নেয়া উক্ত অঙ্গীকার অপূর্ণ রাখবেন এবং পূর্বের কোনো নবীকে তিনি উক্ত অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য বাঁচিয়ে রাখবেন না?

কাদিয়ানীদের নিকট আরেকটি প্রশ্ন হল, মির্যা কাদিয়ানীর কাছ থেকেও কি ঐ অঙ্গীকার নেয়া হয়েছিল? অন্যথা প্রকৃত ঈসা আসার পরিবর্তে তথাকথিত “রূপক ঈসা” আসার যুক্তিকতা কী?

ঈসা মসীহ (আ.) সম্পর্কে যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস এবং তাফসীরবিদগণের সামান্য কিছু বক্তব্য-

সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাকারক বিখ্যাত হাদীস বিশারদ ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী (রহ.) ঈসা মসীহ (আ.) এর কবর সম্পর্কে ‘ফাতহুল বারী’ কিতাবে পরিষ্কার লিখেছেন,

“ওয়া লাইসা লাহু ক্ববরুন” ((وَلَيْسَ لَهُ قَبْرُ)) অর্থাৎ তাঁর (ঈসা) কোনো কবর-ই নেই। (ফাতহুল বারী, কিতাবুস সালাত, ১/৬৩৪ দ্রষ্টব্য)। তিনি তাঁর অন্য আরেকটি কিতাবে আরো লিখেছেন “সকল হাদীস বিশারদ এবং তাফসীরকারক একমত এই কথার উপর যে, ((اَنَّهُ رَفَعَهُ بِبَدَنِهِ حَيًّا)) অর্থাৎ নিশ্চয় তিনি তাঁকে (ঈসা) সশরীরে জীবিত উঠিয়ে নিয়েছেন। তবে মতভেদ শুধু এতটুকুতে যে, (আকাশে) উঠিয়ে নেয়ার আগে তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন নাকি [মৃত্যুর সদৃশ] ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।” (দেখুন- ‘আত তালখীছুল হাবীর’ কিতাবুত তালাক ৩/৪৬২)।

ইমাম শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেস আদ-দেহলভী (রহ.) লিখেছেন ((فَظَنُّوْا رَفْعَهُ إِلَي السَّمَاءِ قَتْلًا)) “ফলে তারা (ইহুদীরা) তাঁকে (ঈসাকে) আকাশে উঠিয়ে নেয়াকে হত্যা করার ধারণা করেছিল”। (আল-ফাওযুল কাবীর [আরবী] ৩৮; দারুল গাওছানী লিদ-দিরাসাতিল কুরআনিয়্যা, দামেস্ক হতে প্রকাশিত)।

ইমাম জালালুদ্দীন আস-সুয়ূতী (রহ.) লিখেছেন ((وَاَنَّهُ يَحْكُمُ بِشَرْعِ نَبِيِّنَا وَ وَرَدَتْ بِهِ الأَحَادِيْثُ وَ انْعَقَدَ عَلَيْهِ الْإِجْمَاعُ)) অর্থাৎ নিশ্চয়ই তিনি (ঈসা) আমাদের নবী (মুহাম্মদ সাঃ)’র শরীয়ত দ্বারা বিচার-ব্যবস্থা (কায়েম) করবেন এবং এর প্রমাণে বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে ও এর উপর ইজমা [উম্মতের ঐক্যমত্য] প্রতিষ্ঠিত। (ইমাম সুয়ূতী রচিত ‘আল-হাভী লিল ফাতাওয়া’ ২/১৫৫)।

তিনি আরো লিখেছেন ((ومَكَرَ اللهُ بِهِمْ بِألْقَى شِبْهِ عِيسَى عَلَى مَنْ قَصَدَ قتْلَهُ فَقَتَلُوْهُ وَ رُفِعَ عِيْسَى إِلَى السَّمَاءِ)) “আল্লাহতালা তাদের ষড়যন্ত্রের মুকাবিলায় কৌশল অবলম্বন করেছিলেন। যার ফলে আল্লাহতালা তাদের একজনকে ঈসার সাদৃশ করে দেন, যে তাঁকে হত্যা করার ইচ্ছে করেছিল। তারপর তারা (ইহুদীরা) ঈসার সদৃশ-লোকটিকে (ঈসা ভেবে) হত্যা করে ফেলে। আর (ওদিকে) ঈসাকে [তাদের পাকড়াও হতে নিবৃত রেখে] আকাশে উঠিয়ে নেন।” (তাফসীরে জালালাইন)।

তিনি আরো লিখেছেন ((عن ابن عباس رضى الله عنه : مَدَّ فِىْ عُمْرِهِ حَتَّى اَهْبَطَ مِنَ السَّمَاءِ اِلَى الْاَرْضِ وَ يَقْتُلُ الدَّجَالَ)) “হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত আছে, আল্লাহতালা তাঁর (ঈসা) আয়ুষ্কাল বিলম্বিত করে দিয়েছেন। তিনি আকাশ থেকে পৃথিবীতে অবতরণ করবেন এবং দাজ্জালকে হত্যা করবেন।” (দুররে মানসুর ২/৩৫০, ইমাম সুয়ূতী)।

ঈসা মসীহ (আ.) এর কবর প্রসঙ্গে-

হিজরী দশম শতকের মুজাদ্দিদ মোল্লা আলী ক্বারী (রহ.) ‘তারীখে কাবীর’ এর ১ম খণ্ডের ১৬৩ নং পৃষ্ঠায় একটি হাদীসে উল্লিখিত “ফী কবরি” (فِيْ قَبْرِيْ) এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন ‘আমি এবং ঈসা একই কবরে দাফন হব’ একথার অর্থ হচ্ছে একই গোরস্তানে (পাশাপাশি দুইজন) দাফন হব। কারণ, কামূছ [অভিধান]’র ভেতর আছে, কোনো কোনো সময় ‘ফী’ বা فى (মধ্যে) বর্ণটি ‘মিন’ বা من (সন্নিকটে) অর্থেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।” (মেরকাত শরহে মেশকাত: ১০/১৬৬; কিতাবুল ফিতান)। প্রকাশ থাকে যে, মেশকাত শরীফের ‘ফাজায়েলে সাইয়েদিল মুরসালীন’ অধ্যায় (দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি তার পিতা এবং দাদার সূত্রে বলেন, তাওরাত কিতাবে নবী করীম (সা.)-এর গুণাবলীতে এটিও লিপিবদ্ধ আছে যে ((قَالَ اَبُوْ مَوْدُوْدٍ قَدْ بَقِىَ فِى الْبَيْتِ مَوْضِعُ قَبْرِعِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ يَدْفِنُ مَعَهُ)) “ঈসা ইবনে মরিয়ম নবী করীম (সা.)-এর সাথে দাফন হবেন। বর্ণনাকারী আবু মাওদূদ বলেন, রাওজা শরীফের অভ্যন্তরে একটি কবরের জায়গা (এখনো) খালি রয়েছে।”

হাদীসটির সনদ সম্পর্কে ইমাম তিরমিজি (রহ.) বলেছেন, هذا حديث حسن غريب অর্থাৎ এ হাদীসটি ‘হাসান‘ এবং রাবীর একক সনদে বর্ণিত। (দেখুন, তারীখে দামেস্ক ৪৭/৫২২-২৩)। বলে রাখা জরুরি যে, ‘গরীব’ শব্দটি উসূলে হাদীসের একটি পরিভাষা। যেসব হাদীসের সনদের ভেতর কোনো কোনো স্তরে রাবী শুধুই একজন থাকে, সেই সনদকে ‘গরীব’ (একক সূত্র পরম্পরায়) বলা হয়। আর দুইজন রাবীর পরম্পরায় বর্ণিত সনদকে ‘আযীয’ বলা হয়।

তারীখে দামেস্ক কিতাবে সনদ সহ বর্ণিত আছে-

عن عائشة، قالت: قلت: يا رسول الله، إني أرى أن أعيش من بعدك، فتأذن لي أن أدفن إلى جنبك؟ فقال: “وأنَّى لي بذلك الموضع؟ ما فيه إلا موضع قبري وقبر أبي بكر وقبر عمر، وقبر عيسى بن مريم

অর্থাৎ উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) আমার মনে হচ্ছে যে, আমি আপনার ইন্তেকালের পরেও বেঁচে থাকব। অতএব আমাকে অনুমতি দেবেন কি যাতে আপনার পাশেই (মৃত্যুর পর) দাফন হতে পারি? তখন প্রতিউত্তরে তিনি বললেন, এমন স্থানটিতে (দাফন হবার জন্য) আমার নিকট কিভাবে প্রস্তাব রাখতে পার? যে স্থানটিতে আমার কবর থাকবে, আবুবকর এবং উমরের কবর থাকবে এবং ঈসা ইবনু মরিয়মের কবর থাকবে। (দেখুন, তারীখে দামেস্ক ৪৭/৫২২-২৩)।

উল্লেখ্য, অমুসলিম কাদিয়ানী সম্প্রদায় দাবী করে যে, ঈসা (আ.) বর্তমানে জীবিত নেই, বরং তাঁর মৃত্যু হয়ে গেছে। ফলে তারা আলোচ্য হাদীসগুলো অস্বীকার করে, কখনো বা উদ্ভট ব্যাখ্যা দেয়। এ সময় তারা একই বিষয়ে বর্ণিত অপরাপর সবগুলো হাদীসকে পাশ কাটিয়ে একটি হাদীসে উল্লিখিত “ফী কবরি” (فِيْ قَبْرِيْ) এর ‘ইন জেনারেল’ অর্থে বিভ্রান্তি ছড়ায়। তাদের বিভ্রান্তিটা নিম্নরূপ-

হাদীসে এসেছে – রাসূল (সা.) বলেছেন, “আমি এবং ঈসা একই কবরে দাফন হব”। এতে বুঝা গেল, দু’জনের কবর এক-ই হবে। ফলে ঈসা মাসীহ মারা গেলে নবীজীর কবর খুঁড়ে তাঁকে সেটির অভ্যন্তরেই দাফন করার কথাই যেন বলা হয়েছে, যা অসম্ভব। কাজেই হাদীসের বক্তব্যটি রূপক অর্থকেই নির্দেশ করবে। যার ব্যাখ্যা এই যে, আগত ঈসা মসীহ হতে বনী ইসরাইলের সেই মরিয়ম পুত্র ‘ঈসা আলাইহিস সালাম’ উদ্দেশ্য নন, বরং রূপক অর্থে মির্যা গোলাম কাদিয়ানীই উদ্দেশ্য। যিনি ঈসার গুণাবলীর পূর্ণ বিকাশস্থল এবং মুহাম্মদ (সা.) এর সমস্ত মান-মর্যাদা ও যোগ্যতার বুরুযী সত্তা। যাকে সহজ অর্থে বুরুজি মুহাম্মদ বলা হবে। (এ হচ্ছে আগত ঈসা মসীহ এর জায়গায় মির্যা গোলাম কাদিয়ানীর ব্যক্তি সত্তাকে সাব্যস্ত করতে তাদের যতসব উদ্ভট ব্যাখ্যা)।

সর্বশেষ কথা হচ্ছে, পবিত্র কুরআনের প্রায় ২৭টি জায়গায় পরিষ্কার ইঙ্গিত রয়েছে যে, কেয়ামতের পূর্বে যথাসময় দ্বিতীয়বার আগমনকারী ঈসা (আ.)-কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা আকাশে সশরীরে উঠিয়ে নিয়েছেন, তাঁর পুনঃ আগমন অকাট্য সত্য; তিনি শেষনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মতের মাক্বাম বা আশীষ লাভ করবেন। তিনি পুনঃ আগমন করে নবুওয়তের দায়িত্বে থাকবেন না, নিজ নবুওয়তি মাক্বামে বহাল থাকবেন এবং শরীয়তে মুহাম্মদীয়ার আলোকে ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র ও বিচার-কার্য পরিচালনা করবেন। কেননা এ উম্মতে মুহাম্মদীয়া-ই শেষ উম্মত এবং মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রাপ্ত নবুওয়তই মুক্ত ও স্বাধীন সর্বশেষ নবুওয়ত। আল্লাহ সবাইকে ইসলামের সঠিক বুঝ ধারণ করার তাওফিক দান করুন।

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

মুসান্নাফ গ্রন্থে নবী’র ছায়া ছিলনা মর্মে বর্ণনাটির তাহকিক

প্রশ্ন : ‘মুসান্নাফ আব্দির রাজ্জাক’ গ্রন্থে ইবনু আব্বাস (রা.) এর সনদে এমন কোনো বর্ণনা সত্যিই কি রয়েছে যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ‘ছায়া মোবারক’ না থাকার কথা বলা হয়েছে?

উত্তর : রাসূল (সা.)-এর ছায়া ছিলনা-মর্মে ‘মুসান্নাফ’ গ্রন্থের নামে প্রচারিত বর্ণনাটি মূলত ‘মুসান্নাফ’ গ্রন্থের কোথাও নেই। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা একটু পরেই আসছে। প্রথমে বর্ণনাটি অপ্রমাণিত একটি সনদ সহ নিম্নরূপ,

عن عبد الرزاق عن إبن جريج قال اخبرني نافع ان ابن عباس قال: لم يکن لرسول الله صلی الله عليه وسلم ظلّ، ولم يقم مع شمس قط إلا غلب ضوءه ضوء الشمس ، ولم يقم مع سراج قط إلا غلب ضوءه ضوء السراج.

অর্থাৎ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহু বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কোনো ছায়া ছিল না। সূর্যের আলোতে তাঁর ছায়া পড়তো না বরং তাঁর নূরের ঝলক সূর্যের আলোর উপর প্রভাব বিস্তার করতো। কোনো বাতির আলোর সামনে দাঁড়ালেও বাতির আলোর উপর তাঁর নূরের আলো বিস্তার করতো।

এর রেফারেন্স হিসেবে ইমাম আব্দুর রাজ্জাক ইবনু হুমাম আস সান’আনী (মৃত. ২১১ হি.) সংকলিত ‘মুসান্নাফ আব্দির রাজ্জাক’ এর হাদীস নং ২৫ উল্লেখ করা হলেও মূলত ঐ গ্রন্থে উক্ত সনদে এধরণের কোনো “মতন” (Taxt-মূলপাঠ) খোঁজে পাওয়া যায়না। বরং এটি বানোয়াট ও ফেইক একটি ‘মতন’ যেটি দুবাইয়ের ডক্টর ঈসা মানে আল হিমইয়ারী কর্তৃক প্রকাশিত “আল জুযউল মাফক্বূদ” এরই সৃষ্টি, যেটি অপ্রমাণিত ও অনির্ভরযোগ্য একটি গ্রন্থ। দুনিয়ার সকল মুহাক্কিক গ্রন্থটিকে মওযূ ও জাল আখ্যা দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, শায়খ হিমইয়ারী সাহেবকে ইলমি খিয়ানতের অভিযোগে দেশটির কেন্দ্রীয় উলামা পরিষদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

বিতর্কিত জাল গ্রন্থ ‘আল জুযউল মাফক্বূদ” এর খণ্ডন করে ১৪২৮ হিজরীতে সৌদি আরবের রাজধানী ‘রিয়াদ দারুল মুহাদ্দিস’ প্রকাশনী থেকে প্রকাশ করা হয়েছে, مجموع فى كشف حقيقة الجزء المفقود গ্রন্থটি। এর গ্রন্থকার উক্ত বর্ণনাটির “মতন” সম্পর্কে নিম্নোক্ত মন্তব্য করেন,

قلت: هذا المتن ليس له أصل مرفوعاً، وإنما يذكره المتوسعون في كتب السيرة والخصائص المتأخرة التي يجمع مؤلفوها بين الثابت وما لا يثبت والموضوع وما لا أصل له!

অর্থ -আমি বলি, এ মতনটির এই ধরনের মারফূ কোনো ভিত্তি নেই, বরং প্রচারকারীগণ এ ধরনের মতন পরবর্তীতে রচিত ‘খাসায়েস’ এবং ‘সীরাত’ বইগুলিতে উল্লেখ করেছেন, যাদের লেখকরা ভিত্তিহীন, বানোয়াট এবং প্রমাণিত ও অপ্রমাণিত বর্ণনাই একত্রিত করে গেছেন।

আমার প্রিয় আশেক বন্ধুদের উদ্দেশ্যে কয়েকটা প্রশ্ন,

১. ইমাম জালালুদ্দীন আস সুয়ূতী (মৃত. ৯১১ হি.) তাঁর ‘খাসায়িসুল কোবরা’ গ্রন্থে ইবনু আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে মুসান্নাফ ইবনু আব্দির রাজ্জাক এর সনদে উল্লিখিত রেওয়ায়েতটি আনেননি। কিন্তু কেন? তিনি বরং নাওয়াদিরুল উসূল গ্রন্থের উদ্ধৃতিতে হাকিম তিরমিজি থেকে তাবেয়ী যাকওয়ান (রহ.)-এর রেওয়ায়েতটিই এনেছেন। এতে কী পরিষ্কার বুঝা যায় না যে, মুসান্নাফ ইবনু আব্দির রাজ্জাক এর সনদে ঐ মতনটি মূলত বানোয়াট ও দুবাইয়ের ঈসা মানে’ আল হিমইয়ারীর-ই জালিয়াতি?

২. মুসান্নাফ ইবনু আব্দির রাজ্জাক গ্রন্থে যদি থেকেই থাকে তাহলে আর দেরি কেন, আপনারা সেটির পুরনো কোনো নুসখা থেকে দ্রুত উদ্ধার করে আমাকে দেখিয়ে দিন। আল্লাহর শপথ! আমি নিঃশর্ত মেনে নেব, ইনশাআল্লাহ।

আশাকরি, জ্ঞানীদের জন্য এটুকুই যথেষ্ট।

ধন্যবাদ।

সংশ্লিষ্ট লেখাগুলোও দেখা যেতে পারে –

রাসূল (সা.) এর ছায়া থাকা সংক্রান্ত মারফূ ও মুত্তাসিলুস সানাদ এবং টনটনে সহীহ হাদীস – ক্লিক

রাসূল (সা.)-এর ছায়া মুবারক ছিলনা- সংক্রান্ত দ্বিতীয়তম রেওয়ায়েত এর তাহকিক – ক্লিক

তাবেয়ী যাকওয়ান (রহ.)-এর রেওয়ায়েত ও তার তাহকিক – ক্লিক

সর্ব প্রথম সৃষ্টি কোনটি? আরশ নাকি পানি? ক্লিক

জাবের (রা.)-এর নামে “নূর” এর রেওয়ায়েতটির তাহকিক – ক্লিক

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ

রাসূল (সা.) ‘নূর’ ছিলেন, এর কী অর্থ?

প্রশ্ন : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘নূর’ ছিলেন, এ কথা থেকে উদ্দেশ্য কী?

উত্তর : রাসূল (সা.) নিঃসন্দেহে নূর, তাঁর ছায়ার অস্তিত্ব নিঃসন্দেহে অনস্বীকার্য, তবে মাঝেমধ্যে ‘ছায়া মুবারক’ মুজিজা স্বরূপ জমিনে পতিত হত না, সে কথাও সঠিক! বিস্তারিত….

রাসূল (সা.) নিঃসন্দেহে ‘সিফাতি নূর’ ছিলেন (সূরা মায়েদা ১৫), মাঝেমধ্যে তাঁর ‘ছায়া মুবারক’ জমিনে পড়ত না (সাধারণ ছায়ার মত দৃষ্টিগোচর হত না-লিখক), আর সেটির উল্লেখযোগ্য কারণ ছিল এ যে, উনার ছায়া মুবারক যাতে কেউ পদদলিত করতে না পারে। আর এটিকে উনার (সা.) বিশেষ মুজিজা-ও বলা যায়।

উল্লেখ্য, অস্বাভাবিক ঘটনা-ই মুজিজা হয়ে থাকে, স্বাভাবিক বা সাধারণ কোনো জিনিসকে মুজিজা বা অলৌকিকতা বলেনা। কাজেই, যদি বলা হয় যে, রাসূল (সা.)-এর ছায়া (প্রতিবিম্ব) ছিল-ই না অর্থাৎ ছায়ার অস্তিত্ব অস্বীকার করা হয় তখন “মাঝেমধ্যে ছায়া জমিনে না পড়া কিংবা আলোতে দৃশ্যমান না হওয়া” সাধারণ ঘটনা বলে গণ্য হবে। অথচ একজন প্রকৃত আশেক বা নবী-প্রেমিক তার মা’শুক (নবীজী)-এর মুজিজাকে কখনো অস্বীকার করতে পারেনা। তাফসীরে মাদারিক প্রণেতা খুব চমৎকার বলেছেন,

لئلا يقع انسان قدمه على ذالك الظل

অর্থাৎ আল্লাহতালা নবীজীর ছায়া মুবারক মাটিতে পতিত করেন না, যাতে কেউ উনার ছায়াকে মাড়াতে না পারে। (পারা নং ১৮ দ্রষ্টব্য)। খেয়াল করুন, আমাদের সালফে সালেহীন-ও ছায়ার অস্তিত্ব অস্বীকার করতেন না।

জ্ঞানীদের নিশ্চয়ই ভাবিয়ে তুলবে।

ইমাম সুয়ূতী (রহ.)-এর ছাত্র আল্লামা মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ শামী (মৃত. ৯৪২ হিজরী)। তিনি তাঁর রচিত প্রসিদ্ধ সীরাতগ্রন্থ ‘সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ফী সীরাতি খাইরিল ইবাদ’ এর মধ্যে হাকিম তিরমিজি থেকে তাবেয়ী যাকওয়ান (রহ.) এর কথাটির ব্যাখ্যাও এনেছেন। যা সাধারণত আমাদের সরলমনা আশেক বন্ধুরা উল্লেখ করতে ভুলে যান। সেটি এইরূপ,

قال ذكوان لم ير لرسول الله ظل في شمس ولا قمر. رواه الحكيم الترمذي. وقال: معناه لئلا يطأ عليه كافر فيكون مذلة له
অর্থাৎ ‘যাকওয়ান (রহ.) বলেন, সূর্যের বা চাঁদের আলোয় রাসূল (সা.)-এর ছায়া দেখা যেত না। হাকীম তিরমিজি কথাটি সংকলন করেছেন। তিনি বলেছেন, এর অর্থ হল, যেন কোনো কাফের তাঁর ছায়া পদদলিত করতে না পারে; কারণ এতে তাঁর অবমাননা হয়।’’ খুব খেয়াল করুন, পূর্ববর্তী ইমামগণের কেউই ছায়ার অস্তিত্ব অস্বীকার করেননি। সুতরাং বিভ্রান্ত হবার কোনো কারণ নেই।

আর হ্যাঁ, অন্যান্য হাদীসে রাসূল (সা.) এর ছায়া মুবারক এর উল্লেখ রয়েছে। ফলে “ছায়া” এর অস্বীকার এক প্রকারের ভ্রান্তি ও হাদীস বিরোধিতা। যা কখনো সঠিক মানহাজ হতে পারেনা।

দলিল –

(ক) উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, হযরত যয়নব (রা.) তিনি নবীজীর ছায়া দেখা সম্পর্কে পরিস্কার বলেছেন : ‘ফা রাআইতু জিল্লাহু।’ আরবী ইবারত –
فرأيت ظله

অর্থাৎ আমি তাঁর ছায়া দেখেছি। (মুসনাদে আহমদ ৭/৪৭৪; হাদীস নং ২৬৩২৫, সহীহ)।

(খ) উম্মুল মুমিনীন হযরত সাফিয়্যাহ বিনতে হুয়াইহি (রা.) হতেও বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, ‘ইয্ আনা বি-জিল্লি রাসূলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুক্ববিলুন।’ আরবী ইবারত –

إذ أنا بظل رسول الله صلى الله عليه وسلم مقبل

অর্থাৎ ইত্যবসরে আমি আল্লাহ’র রাসুলের ছায়ার নাগাল পেয়ে যাই। সংক্ষেপে।

সনদ সহ সম্পূর্ণ রেওয়ায়েত –

قال:حَدَّثَنَا عَفَّانُ حَدَّثَنَا حَمَّادٌ قَالَ ثَابِتٌ عَنْ شُمَيْسَةَ عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: فَبَيْنَمَا انَا يَوْما بِنِصْفِ النَّهَارِ اذَا انَا بِظِلِّ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مُقْبِلٌ. وإسناده حسن عند الحافظ، فكل رجاله ثقات إلا شميسة قال الحافظ عنها: مقبولة.

রেফারেন্সঃ মুসনাদে আহমদ ৬/১৩২; হাদীস নং ২৫০০২; হাদীসের সব রাবী ছিক্বাহ।

(গ) নবীজী (সা.)-এর দীর্ঘ দশ বছরের খাদেম হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) হতে মারফূ সনদে ও একদম সহীহসূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি (সা.) কোনো এক ঘটনা প্রেক্ষিতে বলেছেন, ‘রাআইতু জিল্লি ওয়া জিল্লাকুম ফীহা’। আরবী ইবারত –

رأيت ظلى و ظلكم فيها

অর্থাৎ তথায় (জাহান্নামের অগ্নির আলোতে) আমি আমার এবং তোমাদের ‘ছায়া’ দেখেছি। সংক্ষেপে।

সনদ সহ সম্পূর্ণ রেওয়ায়েত-

عبد الله بن وهب حدثني معاوية بن صالح عن عيسى بن عاصم عن زر بن حبيش عن أنس بن مالك قال :صَلَّيْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم صَلاَةَ الصُّبْحِ ، قَالَ : .. ثُمَّ عُرِضَتْ عَلَيَّ النَّارُ بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ ، حَتَى رَأَيْتُ ظِلِّي وَظِلَّكُمْ. وهذا إسناد صحيح لا غبار عليه.

রেফারেন্সঃ সহীহ ইবনে খোজায়মা ২/৫০, হাদীস নং ৮৯; মুসতাদরাক লিল হাকিম ৫/৬৪৮; হাদীস নং ৮৪৫৬; হাদীসের মান, সহীহ।

(ঘ) মাজমাউয যাওয়ায়িদ থেকে, এর সনদ সহীহ এবং সকল রাবী সহীহ বুখারী ও মুসলিমের, হাদীসের খণ্ডাংশ,

أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يمشي في أناس من أصحابه فتستر بثوب، فلما رأى ظله رفع رأسه فإذا هو بملاءة قد ستر بها

অর্থাৎ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর কিছু সঙ্গীদের মধ্যে হেঁটে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি কাপড় দ্বারা ঢেকে থাকলেন। অত:পর তিনি যখন নিজের ছায়া দেখলেন, মাথা উঠালেন; তৎক্ষনাৎ একটি চাদর দ্বারা নিজেকে ঢেকে ফেললেন।

সনদ সহ সম্পূর্ণ রেওয়ায়েত-

وعن عبد الله بن جبير الخزاعي: أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يمشي في أناس من أصحابه فتستر بثوب، فلما رأى ظله رفع رأسه فإذا هو بملاءة قد ستر بها ، فقال له : مه. وأخذ الثوب فوضعه ، فقال : إنما أنا بشر مثلكم .رواه الطبراني ، ورجاله رجال الصحيح ..

রেফারেন্সঃ মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯/২১, হাদীস নং ১৪২২৫, ইমাম নূরউদ্দীন আল হাইসামী (রহ.) বলেন, এর সকল বর্ণনাকারী সহীহ’র বর্ণনাকারী। ইমাম তাবারানী (রহ.)ও এটি তার ‘সুনানু তাবারানী’ গ্রন্থে নিজ সনদে উল্লেখ করেছেন।

যাকওয়ান এর রেওয়ায়েত-এর তাহকিক,

তাবেয়ী হযরত যাকওয়ান (রহ.)-এর বর্ণনাটির সনদ খুবই জইফ। তাহকীক করলে দেখা যাবে, দুইজন রাবীই তাতে যথাক্রমে অভিযুক্ত এবং অজ্ঞাত। আর আকীদার ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো বর্ণনার রেফারেন্স টানাও অন্যায়। কিন্তু আমি যাকওয়ান (রহ.)-এর বর্ণনাটি আমলে নিয়েই কথা বলছি, তার ঐ বর্ণনায় ‘রাসূল (সা.)-এর ছায়া এর অস্তিত্ব ইংগিতেও অস্বীকার করার কোনো রসদ নেই।

জ্ঞানীদের উদ্দেশ্যে সনদের দুজন রাবী সম্পর্কে ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (রহ.)-এর কিতাব থেকে নিচে তুলে ধরছি, তিনি লিখেছেন,

عبد الرحمن بن قيس، وهو مطعون، عن عبد الملك بن عبد الله بن الوليد، وهو مجهول، عن ذكوان

অর্থাৎ যাকওয়ান থেকে আব্দুল মালেক বিন আব্দুল্লাহ বিন ওয়ালিদ একজন মাজহূল (অপরিচিত), আর আব্দুর রহমান বিন কায়েস একজন মাত্ব’ঊন তথা অভিযুক্ত।

– শারহুশ শিফা ১/৭৫৩, মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী মাতুরিদি।

শেষকথা হচ্ছে, রাসূল (সা.) সহ সকল নবী রাসূল এমনকি সুপথপ্রাপ্ত সমস্ত মুমিন মুসলমান আল্লাহর “সিফাতি নূর”। যদিও নবীগণ আর সাধারণ মুমিনগণের মধ্যকার ঐ “নূর” এর কোয়ান্টিটি সম্পূর্ণ ভিন্ন, বরং তুলনাহীন। সহীহ মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাকারক কাজী ইয়াজ (রহ) তার ‘ইকমালুল মুসলিম’ কিতাবের ৩য় খন্ডের ১২৫-২৬ নং পৃষ্ঠায় খুব চমৎকার করে বিষয়টি বুঝিয়ে দিয়েছেন। যেমন তিনি  اللهم اجعلنى نورا-এর তাৎপর্য বুঝিয়ে দিতে লিখেছেন, معنى النور هنا بيان الحق والهداية اليه অর্থাৎ এখানে (নবীজীর শানে ব্যবহৃত) ‘নূর’ এর তাৎপর্য হল, তিনি সত্য ও হিদায়াতের দিকে পথপ্রদর্শনকারী। উদাহরণস্বরূপ, আমরা দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে বলি- সোনার বাংলাদেশ। এখানে আর যাইহোক অন্তত বাংলাদেশকে “সোনা” -এর তৈরী বুঝায়নি! অনুরূপ মক্কা হতে ৬ কিঃ মিঃ দূরে অবস্থিত “গারে হেরা”-কে বলা হয় ‘জাবালে নূর’ বা নূরের পাহাড়! তার মানে এই নয় যে, ওই পাহাড়টি “নূরের তৈরী”! এগুলো জাস্ট ভাষার অলংকার কিবা বাগধারা-ই বলা যায়। যাদের একাডেমিক নলেজ ভালো তাদের এগুলো বুঝতে সমস্যা হবার কথা নয়। অল্প শিক্ষিত বা ‘আনাড়ি’ পরিবেশ থেকে উঠে আসা সাধারণদের বুঝানোর সাধ্য কারো নেই, স্বয়ং ফেরেশতা নেমে আসলেও….! সংক্ষেপে।

লিখক, মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ
শিক্ষাবিদ ও গবেষক