ঐতিহাসিক দু’টি বিরল ছবি!
১৯৮৯ সাল। বাগদাদ ওআইসি সম্মেলনে ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন ও বাংলাদেশের তৎকালীন ধর্মমন্ত্রী এম নাজিম উদ্দিন আল আজাদ। করমর্দন করছেন একে অন্যের সাথে। নীচের ছবিতে পাশেই ওআইসিভুক্ত মিশর, মরোক্কোসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশের ধর্মমন্ত্রীগণ। এম নাজিম উদ্দীন আল আজাদের রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে জানা যায় যে, তিনি একজন সাংবাদিক, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক ধর্মমন্ত্রী ও পানি সম্পদ মন্ত্রী ছিলেন। তিনি ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন যশোর-১০ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে যশোর-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ছিলেন। তিনি ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে, জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী হয়ে পরাজিত হয়েছিলেন। যাইহোক, ওআইসির ওই ঐতিহাসিক সভায় আহমদীয়া তথা কাদিয়ানীদের সর্বসম্মতিক্রমে অমুসলিম ঘোষণা করে। ঘোষণাপত্রে তখন বাংলাদেশের পক্ষে দস্তখত করেন ধর্মমন্ত্রী ও সভায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী জনাব এম নাজিম উদ্দিন আল আজাদ। (কয়েকটি ছবি) :
উল্লেখ্য, তার-ও পূর্বে ১৯৮৫ সালে ডিসেম্বর মাসের ২২ হতে ২৮ তারিখ মোট ছয় দিনব্যাপী সৌদিআরবের জেদ্দায় ওআইসির অঙ্গসংগঠন ‘ইসলামী ফেকাহ একাডেমী’র সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রায় ৫০টি রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সর্বসম্মতিক্রমে-ও বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আহমদীয়া তথা কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা দেয়া হয়। (সূত্র: ইসলামী ফেকাহ একাডেমীর ২য় সম্মেলনের উপর প্রকাশিত পত্রিকা: সংখ্যা ২, প্রথম খণ্ড ১৪০৭ হিজরী মুতাবেক ১৯৮৬ ইং)।
তার-ও পূর্বে ১৯৭৪ সালের ১০ই এপ্রিল মুতাবেক ১৩৯৪ হিজরীর রবিউল আওয়াল মাসে রাবেতার সদর দফতর মক্কা মুকাররমায় ১৪৪টি ইসলামী সংগঠনের এক আন্তর্জাতিক মহা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই অনুষ্ঠানেও সভার সর্বসম্মতিক্রমে আহমদীয়া তথা কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করা হয়। (সূত্র: আন-নদওয়া সৌদি আরবের প্রসিদ্ধ জাতীয় দৈনিক, তারিখ ১৪ই এপ্রিল ১৯৭৪ইং)।
এছাড়া তার-ও পূর্বে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে আফগান সরকার, ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে আফ্রিকার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের সন্নিকটে ভারত মহাসাগরে অবস্থিত একটি ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র মরিসাশ এর প্রধান বিচারপতি, ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে তুরস্ক সরকার, ১৯৩৫ সালের ৭ই ফেব্রুয়ারী ব্রিটিশ শাসনামলে ভাওয়ালপুরের জেলা জজ মুহাম্মদ আকবর সাহেব একটি মামলার রায়ে (মামলাটি ‘মুকাদ্দামায়ে ভাওয়ালপুর’ নামে পরিচিত। এটি দায়ের করা হয় ১৯২৬ সালে আর রায় প্রকাশিত হয় ১৯৩৫ সালে), ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিরিয়া সরকার, ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে মিশর সরকার, ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে সৌদী সরকার, ১৯৭৪ইং সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার, ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে বাহরাইন সরকার, ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে কাতার সরকার, ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তানের জাতীয় এসেম্বলি সর্বসম্মতিক্রমে ৭ই সেপ্টেম্বর, ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী জনাব মুসা তিহাম, ১৯৯০-এর দশকে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া সরকারের প্রধান ইয়াহইয়া আবু বকর প্রত্যেকে আহমদীয়া তথা কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করে। আমাদের বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একটি রায়ে ১৯৮৫ সালের ৮ই আগস্ট হাইকোর্টের মাননীয় বিজ্ঞ দুই বিচারপতি কাদিয়ানীদের একটি প্রকাশনা ‘ইসলামে নবুওয়ত’ বাজেয়াপ্ত করে (৪৫ ডি.এল.আর, ১৯৯৩)। তারই চার বছর ব্যবধানে ১৯৮৯ সালে অনুষ্ঠিত বাগদাদ ওআইসি সম্মেলনে আহমদীয়া তথা কাদিয়ানীদের সভার সর্বসম্মতিক্রমে অমুসলিম ঘোষণা করা হলে বাংলাদেশের তৎকালীন ধর্মীমন্ত্রী এম নাজিম উদ্দিন আল আজাদ প্রতিনিধিদলের প্রধান হিসেবে ও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে উক্ত ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন। অতি সম্প্রতি সিঙ্গাপুর সরকার দেশটির একজন মুসলিম নারী পার্লামেন্ট সদস্যের আবেদনের প্রেক্ষিতে সংসদে কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার পক্ষে বিল পাস করেন। যদিও ইতিপূর্বেই ‘ইসলামিক রিলিজিয়াস কাউন্সিল অফ সিঙ্গাপুর‘ (MUIS) ১৯৭৯ সালে একটি ফাতাওয়া (ডিগ্রি) জারি করে আহমদী তথা কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা দেয়। সেই ঘোষণার পর থেকে আজ পর্যন্ত দেশটিতে কাদিয়ানীদের সাথে মূলধারার মুসলমানদের বিবাহ-শাদী ও কাবিন রেজিঃ হাজ্জ-ভিসা, মুসলমানদের গোরস্থানে দাফন ইত্যাদি নিষিদ্ধ।
আফ্রিকার স্বাধীন মুসলিম দেশ “মালি” এর গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারের অন্যতম অংশ ‘HAUT COUNSEL ISLAMIQUE DU MALI CONFERENCE NATIONAL DES OULEMAS (মালির ইসলামিক সুপ্রিম কাউন্সিল, স্কলারদের জাতীয় সম্মেলন)’ এর আবেদনে সাংবিধানিকভাবে দেশটি কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা দেয় (ভিডিও)। উলামা কাউন্সিলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক কমিটির প্রধান (গ্র্যাণ্ড মুফতি) ডক্টর সাইয়েদ মুহাম্মদ। ৮ ই আগস্ট ২০২২ ইং রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী মহলের সাথে উলামা কাউন্সিলের প্রধানের সভাপতিত্বে রুদ্ধদ্বার মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উলামা কাউন্সিলের পক্ষ হতে দেশটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী মহল বরাবর লেখিত সুপারিশনামা হস্তান্তর করা হয়। যেখানে আরবী ভাষায় প্রায় ১-৯টি পয়েন্টে কাদিয়ানীদের অমুসলিম হবার প্রধান প্রধান কারণগুলো প্রমাণসহ তুলে ধরা হয়। উক্ত সুপারিশনামায় المجلس الاعلى الاسلامى فى مالى বা HAUT COUNSEL ISLAMIQUE DU MALI-এর প্রধান ডক্টর সাইয়েদ মুহাম্মদ এবং সেক্রেটারি ডক্টর ইব্রাহিম মুস্তফা জাবি (ভিডিও) উভয় স্বাক্ষর করেন (কিছু ডকুমেন্ট)।
হাইকোর্টের রায়ে কাদিয়ানীদের প্রকাশিত বই বাজেয়াপ্ত
তথ্যসংগ্রহকারী, শিক্ষাবিদ ও গবেষক মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ