আলোচ্য বিষয় ২টা, এ দুটি আলোচ্য বিষয় নিয়ে আজকে মুসলমান Vs কাদিয়ানী দ্বিপক্ষীয় সংলাপ চলুক!
(বলে রাখা দরকার, কাদিয়ানীরা কখনোই উসূল বা নিয়ম মেনে বিতর্ক করবেনা, তারা এক প্রসঙ্গ থেকে আরেক প্রসঙ্গে দৌড়ায়…আর ঈসা আলাইহিস সালামকে ❝মৃত❞ সাব্যস্ত করতে নিজেদের পুরনো কাসুন্দিতেই চলে যেতে চায়…তাই প্রথমেই মূলনীতি ঠিক করা হল এবং সে আলোকেই ডিবেট/সংলাপ…)।
মুসলমানঃ ১ মুসলমানদের জন্য মির্যা কাদিয়ানীর ❝মূল দাবী❞ কী কী? ২ মির্যা কাদিয়ানীর ❝ইমাম মাহদী❞ দাবী কোন দলীলের ভিত্তিতে ছিল?
কাদিয়ানীঃ যুগ ইমাম, মুজাদ্দিদ, মসীহে মওউদ, ইমাম মাহদী ও উম্মতিনবী ইত্যাদি।
মুসলমানঃ মির্যা কাদিয়ানীর ❝মসীহে মওউদ❞ দাবীটা মুসলমানদের জন্য ছিলনা!
কাদিয়ানীঃ তাহলে কাদের জন্য ছিল? প্রমাণ কী?
মুসলমানঃ মির্যা কাদিয়ানীর ❝মসীহে মওউদ❞ দাবীটা শুধুই খ্রিস্টানদের জন্য ছিল, যেমনভাবে আর্যদের (হিন্দুদের) জন্য সে নিজেকে ❝কৃষ্ণের অবতার❞ হওয়া দাবী করেছিল! প্রমাণ এই, মির্যা কাদিয়ানীর পুত্র ও তাদের জামাতের দ্বিতীয় খলীফা মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ তার পিতা সম্পর্কে লিখেছেন, ❝অতএব হে হিন্দু ভাইয়েরা! এই যুগের অবতারও কোনো জাতি বিশেষের নয়। তিনি প্রতিশ্রুত মাহদী, কারণ তিনি মুসলমানদের মুক্তির বার্তা নিয়ে এসেছেন; ‘তিনি খ্রিস্টানদের জন্য ঈসা, কারণ তিনি তাদের পথ প্রদর্শনের উপকরণ এনেছেন।’ হে হিন্দু ভাইয়েরা! তিনি নিষ্কলঙ্ক অবতারও বটে, কেননা তিনি পরম পিতা পরমেশ্বরের পক্ষ হতে আপনাদের জন্য প্রেমের উপহার এনেছেন।❞ (রেফারেন্স- তিনিই আমাদের কৃষ্ণ, মূল মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ; ভাষান্তর মোজাফফর উদ্দিন চৌধুরী, প্রকাশকাল জানুয়ারী ২০১২ ইং)।
এখানে তিনি পরিষ্কার করে লিখে গেছেন, মির্যা কাদিয়ানীর ❝ঈসা❞ দাবীটা খ্রিস্টানদের জন্য, সে মুসলমানদের জন্য শুধুই “ইমাম মাহদী”। কাজেই আপনাদের সাথে শুধুমাত্র “ইমাম মাহদী” টপিকেই মুসলমানদের বিতর্ক করা উচিত! বলাবাহুল্য যে, মির্যা কাদিয়ানীর বইতে ঈসা (আ.) সম্পর্কে লিখা আছে, ❝এতে বুঝা গেল যে, মসীহ’র (খ্রিস্টীয়) উম্মতগণের অযাচিত কর্মকাণ্ডের দরুন মসীহ’র রূহানীয়তের জন্য এটাই স্থির ছিল যে, তিনি তিনবার দুনিয়াতে নাযিল হবেন।❞ (রূহানী খাযায়েন ৫/৩৪৬)। এখন মির্যার এ সমস্ত কথার ব্যাখ্যা চেয়ে প্রশ্ন করতে পারেন শুধুমাত্র ওরাই, যাদের জন্য তিনি ঈসা (আ.) হয়ে আসার দাবী করেছেন!
কাদিয়ানীঃ…. (আর কোনো সদুত্তর নেই)।
মুসলমানঃ মুসলমানদের জন্য মির্যা কাদিয়ানীর অন্যতম একটা দাবী ছিল ❝ইমাম মাহদী❞। তাই আমার জানার ইচ্ছে, তিনি নিজেকে ইমাম মাহদী দাবী করলেন কোন সোর্সের ভিত্তিতে?
কাদিয়ানীঃ হাদীসে এসেছে, ইমাম মাহদীর যুগ নিদর্শন হবে, তার সময় একই রমাযানে চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ হবে। ১৮৯৪ সালে এধরণের চন্দ্র সূর্য গ্রহণের ঘটনা ঘটেছিল।
মুসলমানঃ আপনি বললেন ❝হাদীসে এসেছে❞….। অথচ আমি দেখতে পেলাম যে, চন্দ্র সূর্য গ্রহণের ঐ বর্ণনাটি ইমাম বাকেরের (আসল নাম মুহাম্মদ বিন আলী বিন হুসাইন বিন আলী) নিজেস্ব একটি বক্তব্য মাত্র, যেটির সনদে উল্লিখিত দুইজন রাবী-ই মিথ্যাবাদী হিসেবে অভিযুক্ত। আপনি জানতে চাইলে তখন পুরোপুরি প্রমাণ আপনাকে দেয়া হবে। এখন আপনাকে আমার প্রশ্ন, তাহলে আপনি এধরণের কোনো বর্ণনাকে ❝হাদীস❞ বলতে পারেন কিভাবে? এটা তো হাদীসের সংজ্ঞার সাথে যায় না! তারপর এর সনদে দুইজন রাবী-ই মিথ্যাবাদী হিসেবে অভিযুক্ত হওয়ায় কিভাবে নিশ্চিত হতে পারলেন যে, এটি ইমাম বাকের (রহ.)-এর বক্তব্য-ও হতে পারে? অথচ এধরণের রেওয়ায়েত হাদীস বিশারদদের সর্বসম্মতিক্রমে ❝জাল❞ ও বানোয়াট।
কাদিয়ানীঃ (….আর কোনো সদুত্তর নেই, আর কোনো হাদীসও উল্লেখ করেননি)।
মুসলমানঃ হয়ত আপনি আর কোনো হাদীস উল্লেখ করার সাহস পাচ্ছেন না। আর তা না পারারও কথা। কেননা, মির্যা কাদিয়ানী স্বভাবতই ছিল নিকৃষ্ট একজন মিথ্যাবাদী ও প্রতারক। এর বহু প্রমাণ দেয়া যাবে। আমি এখানে মির্যা কাদিয়ানীর রচনাবলী থেকে প্রধান প্রধান কয়েকটি উদ্ধৃতি কোড করছি। মির্যা কাদিয়ানীর বইতে লিখা আছে, ❝মাহদী ও প্রতিশ্রুত মসীহ সম্বন্ধে আমার ও আমার জামাতের বিশ্বাস এই যে, মাহদীর আগমন সংক্রান্ত এ ধরণের হাদীসসমূহ কোনো মতেই আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্য নয়। আমার মতে এই গুলোর উপর তিন ধরণের আপত্তি আছে।❞ (হাকীকাতুল মাহদী [বাংলা] পৃষ্ঠা নং ০৭; অনুবাদক সালেহ আহমদ, মুরব্বী সিলসিলাহ্ আলীয়া আহমদীয়া। প্রকাশকাল, অক্টোবর ২০০১ ইং)। তার অন্য আরেক বইতে লিখা আছে, ❝অন্যদিকে মাহদীর হাদীসসমূহের এই অবস্থা যে, ইহাদের কোনোটিই ক্রুটিমুক্ত নহে। কোনোটিকেই সহী হাদীস বলা যায় না। অতএব যেভাবে ভবিষ্যদ্বাণী প্রকাশিত হইয়াছে এবং যাহা কিছু প্রতিশ্রুত মীমাংসাকারী ফয়সালা করিয়াছেন উহাই সঠিক।❞ (হাকীকাতুল ওহী পৃ-১৭৩ বাংলা)। এখন আমার জিজ্ঞাসা, এমতাবস্থায় মির্যা কাদিয়ানীর ❝ইমাম মাহদী❞ দাবী (Claim) করার অথোরিটি কোথায়?
কাদিয়ানীঃ (এর-ও কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি, শুধু এলোমেলো কিছু প্রসঙ্গ টেনে আনার চেষ্টা করা হল)।
(জনৈক কাদিয়ানী মু’আল্লিমের সাথে আমার অনলাইন ডিবেট এর চম্বুকাংশ তুলে ধরলাম)।
লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী
ইমেইল nabifeni44@gmail.com
এডমিন www.markajomar.org