Home সাধারণ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে কাদিয়ানীরা লজ্জিত কেন?

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে কাদিয়ানীরা লজ্জিত কেন?

0

কাদিয়ানী সম্প্রদায় দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এতটা লজ্জিত কেন?

কাদিয়ানীদের অন্যতম শুভাকাঙ্ক্ষী শেখ হাসিনা সরকারের পতন হল। তিনি দেশ ছেড়েও পালিয়েছেন। তার পালিয়ে যাওয়ার পরপরই, একে একে তাদের অন্যান্য প্রায় সকলেই এখন নিয়মিত কট খাচ্ছেন। কাদিয়ানীদের অন্যতম সহযোগী জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু, রাশেদখান মেনন আর এখন সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিক-ও। ডক্টর কামাল হোসেন এবং তার কন্যা বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের ব্যারিষ্টার সারা হোসেন-ও কাদিয়ানীদের অন্যতম সহযোগী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রুবাইয়াত ফেরদৌস সহ কাদিয়ানীদের পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নেয়া অসংখ্য কথিত সুশীল বুদ্ধিজীবীর চেহারাগুলোও কারো অচেনা নয়। গাদানিক প্রধান শাহরিয়ার কবির, সুলতানা কামাল, খুশি কবিরদের কথা আর না হয় না-ই বললাম। খুবই আশ্চর্য ব্যাপার, আল্লাহর রাসূলের খতমে নবুওয়তের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহকারী কাদিয়ানীদের সহযোগীরা হঠাৎ যেন বাতাসে মিশে গেছে!

কাদিয়ানীরা স্বৈরাচারী আ’লীগ সরকারের প্রভাব এবং ক্ষমতা খাটিয়ে বহু ফায়দা নেয়। সেই ইতিহাস আজ আর কারো অজানা নয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে গত ১৫ বছর ধরে “মসজিদ” নাম দিয়ে যে পরিমাণে “কাদিয়ানী উপাসনালয়” তারা নির্মাণ করেছে, কল্পনারই বাহিরে। গাজীপুরে (রাজবাড়ী মাঠ সংলগ্ন গাজীপুর মহিলা কলেজের পূর্ব পাশ হয়ে সাফা টাওয়ারের দক্ষিণে) ইতিমধ্যে তারা ৫ কাঠা জমির উপর মসজিদ নামে তাদের বিশালাকৃতির ৫ তলা কমপ্লেক্স ও মিশনারী হেড কোয়ার্টার করার উদ্যোগও নিয়েছে। কিন্তু এ খবর কয়জনই বা রাখে! তাদের প্রতি আ’লীগ সরকার নাগরিক অধিকারের নামে এত অন্ধ ছিল, স্থানীয় মুসলমানদের কোনো যৌক্তিক দাবী কিংবা প্রতিবাদের সামান্যতমই তোয়াক্কা করেনি। বরং স্থানীয় মুসলমানদের নির্বিচারে গুলিতে আহত এবং নিহত করা হয়। গত ২০২৩ সালের ৫ ই মার্চ এবং ২৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারিতে পঞ্চগড়ের (সদর) আহমদনগরের স্থানীয় মুসলমানদের বিরুদ্ধে ও কাদিয়ানীদের পক্ষে সেই সময়কার স্বৈরাচারী প্রশাসনিক মনোভাব আর রক্তক্ষয়ী সংঘাতের চিত্রগুলো ইন্টারনেটে আজো ভাসছে।

এদেশের কথিত সুশীল বুদ্ধিজীবীরা কি জানে যে, কাদিয়ানী সম্প্রদায় নিজেদের বাহিরে কোনো মুসলমানকেই “মুসলমান” মানেনা! বরং পরিষ্কার করে কাদিয়ানী লিটারেচার গুলোতে অ-কাদিয়ানী মুসলমানদের “অমুসলিম” এবং “কাট্টা কাফের” বলে লিখে রাখা হয়েছে, এমনকি মুসলমানদের নাবালক শিশুদের জানাযাতেও অংশগ্রহণ করতে কড়া নিষেধ করা হয়েছে। আর কারণ হিসেবে তাদেরই দ্বিতীয় খলীফা মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ (মৃত. ১৯৬৪ ইং) লিখেছে,

“আমাদের জন্য ফরজ হচ্ছে, আমরা যেন গয়ের আহমদীদেরকে (অ-কাদিয়ানীদেরকে) মুসলমান মনে না করি এবং তাদের পেছনে সালাত না পড়ি। কেননা আমাদের দৃষ্টিতে তারা খোদাতালার একজন নবীকে অস্বীকারকারী। এটি ধর্মীয় মু’আমালা, এতে কিছু করার মত কারো কোনো এখতিয়ার বা সুযোগ নেই।” (আনওয়ারে খিলাফাত ৯৩ নতুন এডিশন, আনওয়ারুল উলূম ৩/১৪৮, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

উক্ত উদ্ধৃতিটির প্রামাণ্য স্ক্যানকপি নিচে দেখুন

উল্লেখ্য, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ ছিল ভন্ডনবী গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর পুত্র ও তার জামাতের দ্বিতীয় খলীফা এবং কথিত ‘মুসলেহ মওউদ’ উপাধিপ্রাপ্ত। নিচে তার একটি ছবিও প্রদর্শন করা হল।

স্বৈরাচারী আ’লীগ দুঃশাসনের পতন হবার আগে কাদিয়ানী ন্যাশনাল আমীর আব্দুল আউয়াল খান সাহেব নিজেকে শেখ পরিবারের অন্যতম হিতাকাঙ্ক্ষী ও আত্মীয় বলেও পরিচয় দিতেন এবং জায়গামত মুসলমানদের বিরুদ্ধে তৎকালীন সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহার করতেন। এর ভুরি ভুরি প্রমাণ আমাদের নিকট রেকর্ড রয়েছে। আজ আর সেই আত্মীয়ের আত্মীয়রা দেশ-ছাড়া। আখের আস্তে আস্তে ঝুঁকতে শুরু করেছেন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ডক্টর আসিফ নজরুল স্যার সহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়জন উর্ধতন ব্যক্তিবর্গের দিকে। আফসোস! ক্ষমতা পালাবদলের সাথে সাথেই এদের ডিগবাজীও শুরু। কিন্তু নতুন জেনারেশনের কি এদের নিয়ে কোনো খোঁজখবর আছে??

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের কাদিয়ানীদের বর্তমান ন্যাশনাল আমীর আব্দুল আউয়াল খান সাহেবও ইতিপূর্বে “জাসদ” এর রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। আ’লীগ দুঃশাসনকে আজীবনের জন্য বাংলাদেশের মাটিতে প্রতিষ্ঠা করার মনোবাসনা থেকেই তাদের পেয়ারে হুজুর (কাদিয়ানী পঞ্চম খলীফা) মির্যা মাসরূর আহমেদকে দিয়েও ইংল্যান্ডের টিলফোর্ড শহরে অনেক দোয়া করিয়েছেন, যার তথ্য প্রমাণ আমাদের নিকট রয়েছে।

এ পর্যায় জনৈক কাদিয়ানী মিশনারীকে উদ্দেশ্য করে মুসলমান যুবকের প্রশ্নোত্তর নিচে তুলে ধরছি,

আপনাদের শিক্ষার আলোকে নবুওয়তের ধারণাটা কেমন?

যিল্লি নবী হতে পারে, এ ছাড়া আর কোনো ধরনের নবী হবেনা।

যিল্লি নবী হতে পারে কি পারেনা, এ টপিকে পরে আসছি। আগে “যিল্লি নবী” বলতে কী বুঝায় আর “যিল্লি” শব্দটা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের কোন কথায় উল্লেখ আছে দেখান!

…..কোনো উত্তর নেই।

যেহেতু “যিল্লি নবী” এর কোনো কনসেপশনই আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের কোনো কথায় উল্লেখ নেই, সেহেতু এর ধারণাটাই বাতিল। সুতরাং কাদিয়ানীদের “যিল্লি নবী” এর তাবৎ শিক্ষাটাই ভ্রান্ত ও প্রত্যাখ্যাত। ফলে এ শিক্ষাকে ব্যাজ করে যে বা যারা নিজেদের মুসলমান দাবী করবে তারা ভন্ড এবং ইসলামের অবমাননাকারী বলেই সাব্যস্ত হবে।

সূরা নিসার ৭০ নং (মুসলমানদের হিসেবে ৬৯ নং) আয়াত অনুযায়ী আনুগত্যরূপে নবী হতে পারে বলে উল্লেখ আছে!

যদি তাই হবে তাহলে তো মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীই উক্ত আয়াত নিজ দাবীর পক্ষে সবার আগে উল্লেখ করে যেতেন! অথচ আমরা তার রচনায় এমন কোনো আয়াতই উল্লেখ করেছেন, এমনটা দেখিনা!

….. কোনো উত্তর নেই।

মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুক্ত অর্থে শেষনবী নন, তার পরেও নবী আছে। নইলে ঈসা আলাইহিস সালাম পুনরায় আসতে পারেন না।

ঈসা আলাইহিস সালামের পুনরায় আসার কারণে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম “শেষনবী” হবার বিশ্বাসে কোনো ধাক্কা লাগবে না। কারণ, ঈসা আলাইহিস সালামের প্রতি পুনরায় আসার পর নবুওয়ত দ্বিতীয়বার অর্পিত হবেনা। তিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের পূর্বেই জেরুজালেমে অবস্থানকালে যেই নবুওয়ত প্রাপ্ত হয়েছিলেন সেই নবুওয়তের ক্রমধারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে চিরতরে খতম বা শেষ হয়ে গেছে। এ জন্যই পবিত্র কুরআনের সূরা আহযাব, আয়াত নম্বর ৪০ বলছে, ((و لكن رسول الله و خاتم النبيين)) অর্থাৎ কিন্তু তিনি (মুহাম্মদ) আল্লাহর একজন রাসূল এবং নবীগণের ক্রমধারা সমাপ্তকারী।

পবিত্র কুরআনের সূরা বাক্বারা, আয়াত নম্বর ৪ উক্ত বিষয়টি আরও সুস্পষ্ট করে দিয়েছে। যেমন আল্লাহ তালা বলছেন, ((وَ الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡکَ وَ مَاۤ اُنۡزِلَ مِنۡ قَبۡلِکَ ۚ وَ بِالۡاٰخِرَۃِ ہُمۡ یُوۡقِنُوۡنَ)) অর্থাৎ “আর (প্রকৃত মুমিন তো তারাই) যারা ঈমান আনে সেসব বিষয়ে, যা তোমার প্রতি নাযিল করা হয়েছে এবং যা তোমার পূর্বে নাযিল করা হয়েছে। আর আখিরাতের প্রতি তারা বিশ্বাস রাখে।” খুব খেয়াল করুন, উল্লিখিত আয়াতে শুধুমাত্র মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি আর তাঁর পূর্বে গত হয়ে যাওয়া নবী রাসূলগণের প্রতিই নাযিলকৃত বিষয়ের উপর ঈমান আনার কথা রয়েছে। এতে পরিষ্কার হয়ে গেল যে, নতুন করে আর কারো প্রতি আল্লাহর পক্ষ হতে কিছুই নাযিল হবেনা। যেজন্য নতুন করে কেউ এখন নবুওয়তের দাবী করা কুফুরী এবং এমন ব্যক্তি ও তার মান্যকারী সবাই ভন্ড এবং অমুসলিম হিসেবেই সাব্যস্ত। মূলত একই কারণে নবুওয়তের দাবীকারী ভারতের পাঞ্জাবের অধিবাসী মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী আর তার অনুসারী সমস্ত আহমদীয়া তথা কাদিয়ানী সম্প্রদায় অমুসলিম। যারা তাদের অমুসলিম মানতে নারাজ, বা তাদের পক্ষে বুঝেশুনেই সাফাই গেয়ে যাচ্ছে তাদের প্রত্যেকের উপর তাকফীরী ফাতাওয়া আরোপিত হবে।

…. কোনো উত্তর নেই।

চলবে

লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক
প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

Previous article ঈমান কি বাড়ে কমে? আমল কি ঈমানের অন্তর্ভুক্ত?
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! এটি সম্পূর্ণ দ্বীনি ও অলাভজনক একটি ওয়েবসাইট। প্রতি বছর এটির ডোমেইন ও হোস্টিং ফি হিসেবে আমাকে এর ব্যয় বহন করতে হচ্ছে। যদি উক্ত ব্যয় বহন করতে অপারগ হই তাহলে এই সাইটটি নিশ্চিত বন্ধ হয়ে যাবে। সেহেতু আপনাদের সবার নিকট আবেদন থাকবে যে, আপনারা সাইটটির উক্ত ব্যয় বহনে এতে বিজ্ঞাপন দিতে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করবেন এবং নিজেরাও সহযোগিতায় এগিয়ে আসবেন। বিনীত এডমিন! বিকাশ : ০১৬২৯-৯৪১৭৭৩ (পার্সোনাল)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here