আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় হাবীব মুহাম্মদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষার বিপরীতে কাজ্জাব মির্যা গোলাম কাদিয়ানীর মতবাদ!
মির্যা কাদিয়ানী ঈসা (আ.)-কে মৃত আখ্যা দিয়ে এবং তাঁর পুনঃ আগমন অস্বীকার করে অর্থাৎ আকাশ থেকে ঈসা (আ.) এর নাযিল হবার ইসলামী অথেনটিক শিক্ষার বিরোধিতা করে লিখে গেছেন যে,
“কেউ আকাশ হতে অবতীর্ণ হবেনা।” (তাযকিরাতুশ শাহাদাতাঈন-৭৯, রূহানী খাযায়েন ২০/৬৭)।

ইসলামী অথেনটিক শিক্ষা :
খাতামুন নাবিয়্যীন তথা শেষনবী মুহাম্মদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
(ক) “শপথ সেই সত্তার যার হাতের মুঠোয় আমার প্রাণ, নিশ্চয়ই ইবনু মরিয়ম (ঈসা) অচিরেই নাযিল হবেন।” (সহীহ বুখারী হা/৩২০৫, কিতাবুল আম্বিয়া)।
(খ) “মরিয়ম পুত্র (ঈসা) এসে হজ্জ করবেন।” (সহীহ মুসলিম হা/২৮৯৬)।
(গ) তখন ঈসা ইবনু মরিয়ম দু’জন ফেরেশতার দু’ বাহুর উপর আপনা দু’হাত রেখে দামেস্কের পূর্বপ্রান্তে শুভ্র মিনারার নিকটে অবতরণ করবেন।” (সহীহ মুসলিম হা/৭০৭৬, অধ্যায় কিতাবুল ফিতান ওয়া আশরাতুস সা’আহ)।
(ঘ) “অত:পর ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.) আকাশ থেকে নাযিল হবেন।” (মুসনাদে বাজ্জার, হা/ ৯৬৪২)।
বিজ্ঞ পাঠক ও সত্যান্বেষী ভাই ও বোনেরা!
তাহলে এখানে কার কথা সত্য? এখানে মুসলিম উম্মাহার বিশ্বাস ও ঈমান হচ্ছে, আল্লাহর প্রিয় হাবীব মুহাম্মদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই সত্য। বিপরীতে মির্যা কাদিয়ানী আপনা উক্ত মতবাদ ও শিক্ষায় অবশ্যই একজন নিকৃষ্ট মিথ্যাবাদী ও কাজ্জাব! তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
সম্পর্কিত আলোচনা :
সর্বাধিক হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী হযরত আবূ হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) বলেছেন
ثُمَ يَنْزِلُ عِيْسَى بْنُ مَرْيَمَ مِنَ السَّمَاءِ
অর্থাৎ ‘অতপর মরিয়ম পুত্র ঈসা আকাশ থেকে নাযিল হবেন।’ দেখুন মুসনাদে বাজ্জার, হাদীস নং ৯৬৪২; বিশিষ্ট হাদীসবিশারদ ইমাম নূরউদ্দীন আল হাইছামী (রহ.) উক্ত হাদীসের সনদ সম্পর্কে লিখেছেন
وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيْحِ غَيْرُ بْنُ الْمُنْذِرِ وَ هُوَ ثِقَةُ
অর্থাৎ হাদীসটির সূত্রে উল্লিখিত সকল বর্ণনাকারী সহীহ (বুখারী)’র, শুধু ‘আলী ইবনে আল মুনযির’ ছাড়া, তবে তিনিও একজন বিশ্বস্থ বর্ণনাকারী। (দেখুন, মাজমাউয যাওয়ায়েদ খ-৭ পৃ-৩৪৯)।

এভাবে একাধিক সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণ করা যাবে যে, আগমনকারী ঈসা ‘রূপক’ কেউ নন, বরং তিনি মরিয়ম (আ.)-এর সন্তান হযরত ঈসা, যার সম্পর্কে স্বয়ং হযরত মুহাম্মদ (সা.) দুইজন ফেরেশতার মাধ্যমে শামের (সিরিয়া, জর্ডান, ফিলিস্তিন সহ বৃহত্তর প্রাচীন এরিয়া) পূর্বপ্রান্তে অবতরণ করবেন বলেই ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন।
অন্য আরেকটি হাদীসে বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবূ যর গিফারী (রা.) হতে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) বলেছেন
اَلشَّامُ أَرْضُ الْمَحْشَرِ وَ اْلمُنْشَرِ وَ بِهَا يَجْتَمِعُ النَّاسُ رَأسًا وَاحِدًا وَ بِهَا يَنْزِلُ عِيْسَى بْنُ مَرْيَمَ الخ
অর্থাৎ ‘শাম পুনরুত্থিত ও একত্রিত হওয়ার ভূমি। মানুষ সেখানে সারিবদ্ধ হয়ে একত্রিত হবে এবং সেখানে মরিয়মপুত্র ঈসা নাযিল হবেন এবং সেখানেই আল্লাহতালা মসীহে দাজ্জালকে হত্যা করবেন।’ (ইবনু আসাকীর সংকলিত ‘তারীখে দামেস্ক’ ১/১৭০ দ্রষ্টব্য, শায়খ আলবানীর তাহকীক, হাদীসের সনদ সহীহ)।
স্ক্রিনশট

কাদিয়ানী সহ আরও যারা হযরত ঈসা (আ.) এর পুনঃ আগমন সম্পর্কে সংশয়ে লিপ্ত তাদের জন্য পবিত্র কুরআন থেকে স্রেফ একখানা আয়াত বিশুদ্ধ সনদে তাফসীর সহ নিচে তুলে ধরছি,
ইমাম ইবনু কাসীর (রহ.) ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ কিতাবে সূরা নিসা আয়াত নম্বর ১৫৮ উল্লেখ পূর্বক একখানা বিশুদ্ধ বর্ণনা উঠিয়ে ধরেছেন এভাবে,
قال ابن جرير في تفسيره: حدثنا ابن بشار، حدثنا عبد الرحمن، حدثنا سفيان، عن أبي حصين، عن سعيد بن جبير، عن ابن عباس: وإن من أهل الكتاب إلا ليؤمنن به قبل موته. قال: قبل موت عيسى ابن مريم. وهذا إسناد صحيح، وكذا روى العوفي، عن ابن عباس.
তাফসীরে তাবারীতে এসেছে, হযরত আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবনু জারীর আত তাবারী (রহ.) বিশুদ্ধ সনদে সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন,
“ইবনু বাশশার, আব্দুর রহমান, সুফিয়ান, আবূ হোছাইন, সাঈদ বিন যোবায়ের, ইবনু আব্বাস থেকে, (আল্লাহতালা বলেন) “আহলে কিতাবীদের প্রত্যেকেই তাঁর মৃত্যুর পূর্বেই তাঁর প্রতি ঈমান আনবে” (সূরা নিসা) এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, ঈসা ইবনু মরিয়ম আলাইহিস সালামের মৃত্যুর পূর্বে। (তাবারী ৯:৩৮০, সূরা নিসা)। ইমাম ইবনু কাসীর (রহ.) উল্লিখিত হাদীসটির সনদ সম্পর্কে বলেছেন,
وهذا إسناد صحيح
অর্থাৎ এটি সহীহ সনদ। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, কিতাবুল ফিতান ওয়াল মালাহিম)।
প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য

সংক্ষেপে।
লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী